রঙ্গমঞ্চ

মৃদুল আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন মৃদুল আহমেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৭/০৪/২০০৮ - ১:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাবার হাত ধরিয়া মেলায় আসিয়াছিল মেয়েটি। দুপুরের প্রচণ্ড রোদে মানুষের কণ্ঠতালু শুকাইয়া ছিঁড়িয়া যাইবার উপক্রম, কিন্তু মেয়ে ফাতিমার মেলা দেখিতে কোনো ক্লান্তি নাই। চারিদিকে রঙবেরঙের পোশাক পরা মানুষ আর হরেক জিনিসের পসরা দেখিয়া খানিক পর পরই তাহার শুভ্র দাঁতগুলি এই ঝাঁজালো রোদে ঝিক ঝিক করিয়া উঠিতেছে।
মুখখানা শুকনো দেখাইতেছিল বাবা সোরাব আলির । প্রায় দুই ক্রোশ পথ হাঁটিয়া আসিয়াছে এই রোদের মধ্যে। মাঝেমধ্যে ফাতিমাকে কাঁধে তুলিয়া হাঁটিয়াছে। বারো বছরের মেয়ের পক্ষে এতটা পথ নিজেই হাঁটিয়া আসা অসম্ভব। কিন্তু তাহার মুখ শুকনা দেখাইবার কারণ অন্য।
লুঙ্গির খুঁটে দশ টাকার একখানা নোট ছাড়া আর কিছু নাই। ঐ একখানাই তাহার সম্বল।
মেয়ে আবদার ধরিয়াছে এবং একমাত্র মেয়ে, না পারিয়াই তাহাকে মেলায় আনিয়াছে। সেরকম কিছু কিনিতে চাহিলে কিনিয়া দিবার সাধ্য নাই এবং কিছু কিনিতে তো চাহিবে তো অবশ্যই, সেই মুহূর্তে ঘটনাখানা কী দাঁড়াইবে চিন্তা করিয়াই তাহার শুষ্ক মুখে আর রসের সঞ্চালন ঘটিতেছিল না।
ফাতিমা চুড়ির দোকান দেখিয়াই ঝাঁপাইয়া পড়িল। রঙবেরঙের চুড়ি দোকানির কাছ হইতে চাহিয়া নিল, হাতে রিনঝিন করিয়া বাজাইয়া বাপের দিকে তাকাইয়া কহিল, বাজান, ভালো লাগতিছে কিনা, কও দেহি?
সোরাব আলি শুকনো মুখের কাঠ চিরিয়া যেন হাসি বাহির করিল, মন্দ কিসে? নে না দেহি একগাছি!
বলিল, কিন্তু বুকের ভেতরটা ধুকপুক করিয়া উঠিল!
ফাতিমা চুড়িগুলি আরো খানিকক্ষণ নাড়াইয়া চাড়াইয়া দোকানিকে ফিরাইয়া দিল। বলিল, নাঃ চুড়ি সেইরকম লয় গো! মনে ধরলে আবার আসবানে!
আরো খানিকক্ষণ সামনে গিয়া লাফ দিয়া পড়িল ডলপুতুলের দোকানে। সুন্দর সুন্দর প্লাস্টিকে তৈয়ারি সব ডলপুতুল, সারে সারে সাজানো। একটা পুতুল তুলিয়া কোলে শোয়াইয়া খানিকক্ষণ চুঁ চুঁ করিয়া ঘুম পাড়াইল। মাথার চুল ঠিক করিয়া দিল।
দোকানদারটা অভদ্র গোছের। আচকমা ফাতিমার হাত হইতে পুতুলটা টান দিয়া ছিনাইয়া নিয়া চোখ পাকাইয়া বলিল, যেখানে সেখানে হাত দিস কেনে রে ছেরি? একেকটা পুতুলের দাম জানিস নিকি?
ফাতিমা অবাক হইয়া প্রথমে তার বাবার দিকে তাকাইল, তারপর দোকানদারকে ঝাঁঝাইয়া উঠিল, ভারী তো এক্কেরে তোমার পিলাসটিকের পুতুল! সোনা দিয়া বান্দায়েছ নিকি?
সোরাব আলিও চোখ গরম করিয়া বলিল, মিয়া, লোকটা তুমি যে বড় বদমুখো দ্যাখতেছি! অ্যাই ফাতিমা, নে তর যে কয়ডা মন চায়!
দোকানদার সন্দেহের চোখে তাকাইয়া বলিল, একেকটার দাম পঞ্চাশ টাকা!
যে টাকাই হোক, অ্যাই ফাতিমা...
ফাতিমা চোখ ঘুরাইয়া বলিল, এই বেয়াদ্দপের কাছ থিকা পুতলা কিনবা বাজান? পাগল নিকি তুমি?
ফাতিমা টানিতে টানিতে বাপকে সেই দোকানের সামনে হইতে সরাইয়া আনিল! সোরাব আলি রাগে গরগর করিতেছিল, হারামজাদা বেয়াদ্দপ...
এইরকম তাহারা আরো কয়েকখানা দোকান ঘুরিয়া বেড়াইল। ফাতিমা তাহার পছন্দমতো যাহা কিছু পাইল, নাড়িয়া চাড়িয়া শুকিয়া পাগল হইল। সোরাব আলি তাহাকে প্রত্যেকবারই কিছু না কিছু কিনিতে বলিল, কিন্তু ফাতিমা কোনো জিনিসেই মন স্থির করিতে পারিল না। ফলে কিছু কেনাও হইল না।
সোরাব আলির লুঙ্গির খুঁটে দশ টাকার নোটখানা অক্ষুণœ রহিল।
দুপুর পড়িয়া আসিয়াছে। ফাতিমা বলিল, চল বাজান, বাইত যাই!
সোরাব আলি উৎকণ্ঠিত গলায় বলিল, কিসুই তো কিনলি না! তোর পসন্দের জিনিস কি পালি না কিসুই?
ফাতিমা ঘাড় বাঁকাইয়া মাথা নাড়িয়া অসহায় ভাব দেখাইয়া বলিল, ত্যামন কিসুই পালাম না তো!
ক্ষুধায় সোরাব আলির পেট ঝাঁ ঝাঁ করিতেছিল। সেই দুপুরের শুরুতে কখানা শাক-ভাত মুখে গুঁজিয়া তাহারা রওনা হইয়াছিল, ক্ষুধা না লাগিবার কোনো কারণ নাই। মেলার কাছেই এক জায়গায় গরম পুরি-জিলাপি ভাজা হইতেছিল, সেদিকে আঙ্গুল দেখাইয়া সোরাব আলি মেয়েকে কহিল, খাই দেহি চল কয়ডা পুরি!
ফাতিমার মুখখানা ক্ষুধায় বহু আগেই শুকাইয়া গিয়াছে। সে ক্ষিপ্রগতিতে মাথা নাড়িয়া জানাইল যে তাহার ক্ষুধা নাই। তবে খানিক তেষ্টা পাইয়াছে। মেলার এক ধারে একখানা চাপকল, সেইখানে লাইনে দাঁড়াইয়া তাহারা একজনের কাছ হইতে ঘটি চাহিয়া নিয়া পেট ভরিয়া ঠাণ্ডা পানি খাইল।
ফাতিমা হাসিয়া বলিল, পানিডা কি মিষ্টি, না বাজান?
সোরাব আলির গলা দিয়া কোনো শব্দ বাহির হইল না! চুপচাপ পানি খাইয়া মেয়েকে কাঁধে ওপর তুলিয়া বাড়ির পথে রওনা হইল।
লাল মাটির ঢেলা মাড়াইতে মাড়াইতে মাঠ পার হইয়া যখন তাহারা বাঁধের ওপর গিয়া উঠিল, তখন দক্ষিণ দিক হইতে মৃদুমন্দ হাওয়া বহিতেছে। যেন কাহার দীর্ঘশ্বাস বহুদূর পথ পার হইয়া তাহাদের গায়ের ওপর আসিয়া পড়িতেছে।
যে খণ্ড নাটকখানি পিতা আর কন্যার ভিতরে ঘটিয়া গেল, তাহার কোনো সাক্ষী নাই, সাবুদ নাই। এইরূপ নাটকে হরদম অভিনয় করিতে তাহারা অভ্যস্ত বলিয়া এই কাহিনী হয়ত তাহারা নিজেরাও কয়দিন পর ভুলিয়া যাইবে। এই বিশাল পৃথিবীর কোথাও এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নাটকগুলির কোনো চিহ্নও পড়িয়া থাকিবে না।
কেবল ঐ দীর্ঘশ্বাসের মতো হাহাকারভরা বাতাস সারা মাঠ জুড়িয়া ধানের শিষগুলাকে নাড়াইয়া দিয়া, গাছের পাতায় ভীরু কম্পন তুলিয়া গ্রামকে গ্রাম ভাসিয়া বেড়াইবে। সেই হুহু বাতাসে সকলেরই শরীর জুড়াইবে, কিন্তু তাহার মনের কথা কেহই বুঝিবে না!


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

অসাধারণ! অসাধারন! অসাধারন লেখা আপনার। পরিমিতিবোধ এত প্রবল, কোথাও সামান্যও বাড়াবাড়ি নেই। মুগ্ধ হয়ে গেলাম মৃদুল। অম্লাবদনে সর্বোচাচ রেটিং!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

খেকশিয়াল এর ছবি

অসাধারন ! অসাধারন ! আর কোন কথা নেই !

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

লজ্জা পাচ্ছি!

ৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎ
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মুশফিকা মুমু এর ছবি

মৃদুল আহমেদ ... কিভাবে যে বলব কি অসাধারণ হয়েছে আমি ভাষা খুজে পাচ্ছিনা। আমার চোখে পানি এসেগেছে। আপনার ভক্ত লিস্ট এ আমিও এ্যাড হলাম দেঁতো হাসি

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ! গল্পটা আপনাকে এতটা স্পর্শ করেছে দেখে খুব ভালো লাগল! কিন্তু কী জানেন, এই চিরন্তন দুঃখের গল্পগুলোর ধারা এখনো বয়ে চলছে আমাদের চারপাশে। এই তো সেদিনই কে যেন লিখছিলেন, তার চোখের সামনে এক রিকশাঅলা অনেকক্ষণ কাকুতিমিনতি করেও সাড়ে পাঁচ টাকা দামের ডিম পাঁচ টাকা দিয়ে কিনতে পারল না!
আমাদের কাছে এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা, আর ঐ লোকটার কাছে জীবন!

ৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎ
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মুশফিকা মুমু এর ছবি

ইসস মন খারাপ । আসলেই খুবি কষ্টকর মন খারাপ

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দুর্ধষ বর্ণনা স্টাইল

একেবারে সাপ ধরার মতো
খেলতে খেলতে- দুলতে দুলতে খপ করে সাপের গলা পেঁচিয়ে ধরা...

সদ্য সচল মৃদুলের মুন্সিয়ানা দুর্দান্ত

নিয়মিত পড়তে চাই
আর বছর শেষে বই চাই...

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

মনে মনে আপনার মন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করছিলাম! লগ-অফ করে বেরিয়েই দেখি আপনার কমেন্ট! তাড়াতাড়ি আবার লগ-ইন করলাম আপনার জবাব দেয়ার জন্য...
বছর শেষে বই চেয়ে একটা ব্যথার জায়গায় হাত দিয়ে বসেছেন মশাই! প্রকাশকরা খালি পয়সা চায় বই ছাপতে! পয়সার পরিমাণ খুব সাঙ্ঘাতিক কিছু না, কিন্তু বিষয়টা ভারী অপমানজনক! তারপরও দেখি, সামনের বইমেলায় যদি কিছু নামাতে পারি, অবশ্যই জানাব!

ৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎৎ
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি একটু দ্বিমত করি এই জায়গায়
প্রকাশকদেরকে দোষ দেবার পক্ষপাতি আমি না
কারণ লেখকের কাছে যা সাহিত্য প্রকাশকের কাছে তা কিন্তু মাল
সে হিসেব করে অত টাকার মাল কিনে কিংবা বানিয়ে আমি কতটাকা পাবো। কারণ সে চ্যারিটি করে না সে করে ব্যবসা
যেখান থেকে তাকে ঘরভাড়া বিলটিল হাবিজাবি মিটিয়ে তারপর কিনতে হয় ভাতের জন্য চাল

সে কনফার্ম না হয়ে ইনভেস্ট করবে এটা আশা করা বেশি রোমান্টিকতা হয়ে যায়
সে যখন কনফার্ম হবে যে একে দিয়ে আমার পেটের ভাত জুটবে তখনই সে এগোবে
এটা শুধু নতুন লেখকদের জন্য না। বাংলাদেশে অন্তত ১০০জন প্রকাশক আছে যারা নিজেরাই লেখক
তারা কিন্তু তাদের নিজের বইও করে না। কারণ জানে ওই বই থেকে তার পেটে ভাত আসবে না

আমরা কিন্তু ভুলে যাই যে প্রকাশক একটা ক্যাপিটাল খাটায় ভাতের জন্য
সে আমার বই ছাপিয়ে ব্যবসায় লাল বাত্তি জ্বালাবে এটা আমি কী করে আশা করি?
যেখানে আমার বই বিক্রি হয় না ১০০ কপি?

০২
বাংলাদেশের খুব কম প্রকাশকই আছে যাদের আলাদাভাবে মার্কেটিং করার ক্ষমতা আছে। সুতরাং প্রকাশক কাউকে প্রমোট করবে এটাও আশা করা ঠিক না

০৩
লেখকদের কিছু কিছু ন্যাকামি দেখলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়
একজন লেখক বছরে যত টাকার বিড়ি খায় তা দিয়ে কিন্তু দুটো বইয়ের পয়সা হয়ে যায়

অথচ প্রতি সপ্তায় এরা মদের বিল দেয তিন বইয়ের দামের সমান
কিন্তু বইয়ের প্রসঙ্গ আসলেই মনে করে প্রকাশক এসে তার হাতে পায়ে ধরে বলবে- দ্যান স্যার আপনের বইটা দয়া করে আমারে দ্যান

০৪
অনেক লেখক আছে প্রায় ভিক্ষা করে লিটল ম্যাগাজিন ছাপায়
কিন্তু নিজের বইয়ের বেলায় এসে করে সেই পুরানা ঘাউড়ামি
এটার কারণ আমার মাথায় ঢোকে না

০৫
নিজের বই নিজে টাকা জোগাড় করে করলে কি গায়ে ফোসকা পড়ে?

০৬
নিজের রক্ত পানি করা টাকায় পাবলিককে দাওয়াত করে খাওয়ানো যায়
মদ বিড়ি গাঁজা হেরোইন খাওয়া যায়
ধার কর্য করে টাকা জোগাড় করে বেশ্যাপাড়ায় যাওয়া যায়
নিজের বই করলে কী হয়?

০৭
আমি সারা বছর এর ওরে ধরে বইয়ের টাকা জোগাড় করি
তারপর বই করি ইচ্ছা মতো
আমার প্রকাশক আমাকে গালাগালি করে বেশি টাকা খরচ করার জন্য
আমি বলি- আমার সব টাকাই হয় যায় টয়লেটে না হয় বিড়ির ধোঁয়ায়
না হয় পাবলিকের পকেটে

একমাত্র এই কয়টা টাকা আমাকে বলে- লীলেন আছি
তোকে ধরে আছি তোর তৈরি করা আবর্জনার ভেতরে

০৮
আমার বেশিরভাগ বন্ধুবান্ধবই বাড়ি গাড়ি করে ফেলেছে আমার থেকে অনেক কম সুবিধার জায়গা থেকে
দেখা হয়ে যখন তারা তাদের বাড়ি- গাড়ি- জায়গা জমির কথা বলে

তখন আমি বলি- আমি অতটা বইয়ের মালিক
তোদের বাড়িগাড়ি তোদের পরে বারো ভূতে খাবে
কিন্তু আমার মালিকানা ঈশ্বরের মতো অনির্দিষ্টকালের....
এই আবর্জনাগুলো আমারই তৈরি করা । এবং এই আবর্জনাগুলোতে আর কারো নাম যুক্ত হবে না কোনোদিন

০৯

আমার একটা সোজা হিসেব আছে। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে তারা বছরে একটা বই প্রকাশের টাকা নিজের পকেট থেকেই ম্যানেজ করতে পারে
আর না পারলেও অসুবিধা নেই। লোকজনকে বই প্রকাশের কথা বললেই টাকা দেয়

কিন্তু আমরা বিয়ে করার জন্য লোকজনের চাঁদা চাই। বই করার জন্য চেয়েছি কি কোনোদিন?

১০
বইটা যদি আমার হয়
তাহলে অন্য কেউ কি আচরণ করলো তাতে আমার সম্মান যাবে কেন?
আমি কি আমার লেখাগুলোকে সম্মান করছি?
আমি কি মনে করি আমার লেখাগুলো ছাপানো দরকার?

১১
পৃথিবীতে কয়টা লেখক আছে যার প্রথম বইগুলো প্রকাশকরা ছাপিয়েছে তাদের পয়সায়?

১২
আজিজ সুপার মার্কেট স্টাইলের ন্যাকামি ছেড়ে নিজের পয়সায় বই ছাপান। যদি মনে করেন যে লেখাগুলো আপনার

উদাস এর ছবি

বলার ভাষা নেই। সকাল বেলা উঠেই এই লেখাটা পড়লাম। সকালও না, ভোর ৫ টায় উঠে ল্যাব এসে কাজ করছিলাম। CMU এর কোন শালা প্রফেসর লেকচার দিবে আর তার আগে আমার ল্যাব ভিজিট করবে। ভোর থেকে বসে তাই বেজার মুখে নানা যন্ত্রপাতি সেট আপ করছি। এখন ওই বেটার জন্যে অপেক্ষা করতে করতে আপনার লেখাটা পড়লাম। পড়াও শুরু করেছিলাম বেজার মুখে, মনে মনে এই ভেবে যে এই ব্যটা দুইদিন আগে সচল হইছে কি আর লেখবে। কিন্তু লেখাটা পড়ে আসলেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম এবং মনটাও অসম্ভব ভালো হয়ে গেলো। সাধু ভাষার বর্ণনা আর একটু প্রাচীন ষ্টাইল, সব মিলিয়ে আসলেই চমতকার।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

দূর্দান্ত!

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

কনফুসিয়াস এর ছবি

খুব ভালো লাগলো।

------------ -----------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতিথি লেখক এর ছবি

দূর্দান্ত!
অভিনন্দন মৃদুল আহমেদ

জনৈক "বেক্কল ছড়াকার"

জাহিদ হোসেন এর ছবি

কি আর বলবো লেখাটি সম্পর্কে? এত ভাল যে আমি অধিক শোকে পাথর। পাথর কি কোনদিন কথা বলে?
গল্পের একদম শেষটা যেন রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের মতো করে লেখা।

বই প্রকাশের ব্যাপারে আপনার মতামতটিও পড়লাম, এবং একমত পোষণ করলাম। আমারও একই রকম মনে হয়েছে। তারপরেও যদি কোন সহৃদয় প্রকাশকের সন্ধান পান, তবে তা জানালে খুশী হবো।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

স্বপ্নাহত এর ছবি

পুরা গুরু টাইপের লেখা...

সচলে নতুন হতে পারেন ইনি,কিন্তু তার কলমটা যে বহু দিনের পুরোনো সেটা বোধকরি বলার প্রয়োজন নেই...

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ধুর মশাই !
এই রকম নাড়া দেয়া লেখা কেউ লেখে?
বুকের ভেতর এখনো কষ্ট হচ্ছে।
অদ্ভুত সুন্দর লেখা আপনার !

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

হিমু এর ছবি

গল্পটা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এতক্ষণ মেজাজ খারাপ ছিলো। এখন মন মেজাজ দুইটাই খারাপ।

আপনি গিয়ার নামাবেন না। এই গিয়ারে থাকুন। পরের গল্পের অপেক্ষায় দাঁত মেজে রাখলাম।


হাঁটুপানির জলদস্যু

তানভীর এর ছবি

হ আমিও দাঁত মাজলাম দেঁতো হাসি । অনেক দিন এমন লেখা পড়ি নাই।

(বিপ্লব)

=============
"আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍এতোদিন ছিলাম আপনার ছড়ার ভক্ত। এখন আপনার গল্প পড়ে সক্রেটিসের মতো ভাবছি: which is better...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজেকে জয় করার অর্থ বিজয় না পরাজয়? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ভালো লেগেছে ।

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

কি বলব বলেন তো--------- আমি আসলে লিখতে পারছি না------কি ভাল যে লাগল-----এর পরের কথাগুলো আপনি লিখে নিয়েন নিজের কাছে------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

রানা মেহের এর ছবি

সাধু ভাষায় লেখা দেখে বিরক্ত হয়েছিলাম।
কেন যেন মনে হয়
দুর্বল রম্যলেখকেরা সাধুভাষায় রম্য করার চেষ্টা করে।

পুরো লেখাটা পড়লাম।
এতো বিষন্ন সুন্দর লেখা
অনেকদিন পড়িনি

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

লীলেন, আপনার কিছু কিছু কথার ক্ষেত্রে আমি খুব একমত। কিছু কিছু ব্যাপারে একমত হলেও দেখি ভিন্নচোখে। আর কিছু কিছু ব্যাপারে একেবারেই একমত নই।
আমি আপনার মন্তব্যগুলোকে নাড়াচাড়া করতে করতে নিজের মন্তব্যগুলো করছি।
লেখকের কাছে যা সাহিত্য, তা প্রকাশকের কাছে অবশ্যই মাল। ঝামেলাটা কিন্তু এখানেই বাধে। কারণ সাহিত্য শেষপর্যন্ত মাল না। সাহিত্য শেষপর্যন্ত সাহিত্যই। সাহিত্য যদি মাল হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে প্রকাশকের লক্ষ্য হচ্ছে স্রেফ ব্যবসা করা। তাহলে বইয়ের ব্যবসাও তার কাছে যা, মাছের ব্যবসাও তার কাছে তাই। কথা হচ্ছে, মাছের ব্যবসা না করে সে বইয়ের ব্যবসা করতে যাচ্ছে কেন, যেখানে মাছের ব্যবসায় অনেক বেশি লাভ?
এর কারণ একটাই, সে বইকে ভালোবাসে। সে এমন একটি জিনিসের ব্যবসা করছে, যেটার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত চিন্তাচেতনা এবং ভালো লাগার মিল আছে। এক্ষেত্রে বলা যায়, একজন প্রকাশক ঠিক একজন ব্যবসায়ী নন, তিনিও একজন সাহিত্যপ্রেমী মানুষ, যিনি মনে করছেন, প্রকাশক হিসেবে কিছু ভালো বই পাঠকের হাতে তুলে নিজের রুজিরোজগারের পাশাপাশি সাহিত্যের জন্য ভালো কিছু করা। এই চিন্তা যে প্রকাশকের মধ্যে কাজ করে না, তাকে প্রকাশক না বলে ব্যবসায়ী বলাই ভালো। খুব দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রকাশকই ব্যবসায়ী, সাহিত্যের যোগানদার নন।
ভালো বইয়ের যোগান দিতে গিয়ে তিনি ব্যবসায় ফেল মেরে না খেতে পেয়ে মারা যাবেন, এরকমটা বলছি না। বলছি, সাহিত্যের কাছে তার কিছু দায়বদ্ধতা আছে। ব্যবসা করার মতো বই নামানোর পাশাপাশি সাহস করে সম্ভাবনাময় নতুন লেখকের বা শক্তিমান পুরনো অজনপ্রিয় লেখকের বই নামানোর রিস্কে তাকে কিছুটা পা বাড়াতেই হবে, নইলে আর দশটা ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার কোনো পার্থক্য থাকে না। সাহিত্যের শক্তি তো প্রকাশনায়, এখানে যে হাল ধরেছে, তাকে তো এত ভিরু হলে চলবে না!
আগেই বলেছি, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রকাশকই "প্রকাশক ব্যবসায়ী" নন, তাঁরা "ব্যবসায়ী প্রকাশক"! তাদের কাছে ব্যবসা আগে, সাহিত্য পরে। যা মোটেই ভাবতে পারা যায় না। শুধু ব্যবসা করলে মুক্তধারা বা চিত্তরঞ্জন সাহা হত না বাংলাদেশে!
লেখকদের মধ্যেও একই অবস্থা। সবাই হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন আর সমরেশ মজুমদার হতে চায়। কেউ কিন্তু কায়েস চৌধুরী বা শহীদুল জহির হতে চায় না।
নতুন লেখকের প্রথম বই আসলে তার কাছে তার সন্তানের মতো। নিজের গালে চড় সহ্য করা যায়, কিন্তু সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করতে গেলে প্রিন্সিপাল যদি বলে, আপনার বাচ্চাটা ডাল, লেখাপড়ার মাথা নেই, ওকে ভর্তি করতে ডোনেশন লাগবে... সেক্ষেত্রে সন্তানের পিতা হিসেবে আপনার উত্তেজিত হয়ে ওঠাটাই স্বাভাবিক! এটাকে ঘাউরামি বললে ভুল বলা হবে! যার সন্তানের চোখ ট্যারা, সেও তার ছেলের নাম রাখে "নয়ন"! এই ভালোবাসাকে আমরা ঘাউরামি বলব কেন? যদি তার পিতৃত্ববোধকে সম্মানের চোখে দেখি আমরা! ব্যক্তিগত জীবনে সে যেমনই হোক না কেন, আসলে সে তো একজন বিশাল হৃদয়বান পিতা!
আপনার একখানা কথা খুব মানি, মদ-গাঁজা খেয়ে বা বেশ্যালয়ে গমন করে যে পয়সা আমরা খরচ করি, সে পয়সা দিয়ে বই বের করা যায়! আর প্রকাশনার ক্ষেত্রে লেখকের ভূমিকাও থাকা দরকার। যদি সে সেটাকে প্রকাশ করতে চায়। এবং বিশ্বাস করে এই বইটির মধ্য দিয়ে সাহিত্যকে কিছু দিতে পারছে সে। নিজের বইয়ের পেছনে টাকা খরচ করলে গায়ে ফোসকা পড়ে না, বরং সেটা কাজেই লাগে।
তবে ব্যাপারটা কি, সাধারণ চোখে যে নিজের বই নিজের পয়সা দিয়ে বের করে, সবার চোখে সে একজন ব্যর্থ লেখক। সত্যিকারের ভালো সে লিখুক আর না লিখুক। সাধারণ চোখের এই তকমা আঁটা বিশ্লেষণ কিন্তু একদম ফেলে দেয়ার মতো বিষয় না, যেহেতু লেখক বাস করে একটা সমাজে। সবাই ঠোঁট উল্টে বলবে, অ-অ-অ, আপনের বই নিজের ট্যাকা দিয়া ছাপাইতে হয়! বুঝছি, আর কিছু কওন লাগব না!
সব লেখকই এই মন্তব্যে একটুকু হলেও ব্যথিত হয়। এটা মানবচরিত্র। অবহেলার মন্তব্য শুনতে ভালো লাগে না, মানসিক জোর যতটুকুই থাকুক না কেন!
এখন কথা হচ্ছে, নিজের লেখাকে ভালোবেসে এই গরলটুকু আপনি পান করবেন কিনা!
আমার নিজের কথা বলি। আমি যেহেতু মদ-গাঁজা খাই না, সিগারেট ছেড়ে দিয়েছি, বেশ্যালয়ে এখনও পর্যন্ত গমনের অভিজ্ঞতা হয় নি, সেক্ষেত্রে বদভ্যাস ছেড়ে আমার টাকা বাঁচানোর সমস্ত পথ বন্ধ। তারপরও আমার এ তাবত তিনখানা বই বেরিয়েছে, যার কম্পোজ, মেকাপ, ট্রেসিং, কভার এবং ইলাস্ট্রেশনের গ্রাফিক্যাল প্রিন্ট সব তৈরি করে প্রকাশকের হাতে তুলে দিয়েছি! প্রকাশক সেটি ছেপেছে এবং বাইন্ডিং-এর ব্যবস্থা করেছে। আমি বইমেলায় স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে পরিচিতজনদের দিয়ে সেই বই কিনিয়েছি ২০০-এর বেশি কপি! প্রথম বইটি মোড়ক উন্মোচনের দিন নিজেই পুরনো ঢাকা থেকে রিকসায় করে বইমেলায় এনে ঘাড়ে করে বয়ে নিয়ে গেছি স্টল পর্যন্ত! এবং এটা আমার জীবনে একটা অসামান্য অভিজ্ঞতা!
সুতরাং লীলেন, আমি আপনার লাইনেই আছি!
আজিজ সুপার মার্কেটে যেহেতু যাই না, কাজেই সেখানকার ন্যাকামি সম্পর্কে ততটা অবগত নই! কিন্তু লেখায় সেই ন্যাকামি উঠে আসলেও বাস্তবে আমি ততটা ন্যাকা নই, আমার বইগুলোই তার প্রমাণ!
তবে এখন থেকে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকাটাকেই বড় করে দেখব! আপনার উপদেশ মাথায় নিয়ে। এটা সত্য কথা, আমার বইকে আমার চেয়ে ভালো আর কে বুঝবে? দায়িত্বটা আমারই বেশি! প্রকাশক টাকা চাইলে অপমানিত হবার কথাটি ফিরিয়ে নিচ্ছি!
ধন্যবাদ আপনাকে লীলেন!
দেখি, সামনের বইমেলায় যদি আমার চার নম্বর বাচ্চাটাকে নামানো যায়, আপনাদের জানাব বৈকি!

-------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

জিফরান খালেদ এর ছবি

এই লিখাটা ভুলতে পারি নাই।

আপনার ছড়া নিয়মিত পড়া হয়।

এই লিখাকে কি ছাড়িয়ে যাওয়া গেছে?

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

না, এই লেখাটা ছাড়িয়ে যেতে পারি নি।
হয়ত ছাড়িয়ে যেতে চাইও না অবচেতনে।
আমি আসলে এখানে ঠিক গল্পও লিখি নি... এখানে আমি আপনমনে কাঁদছিলাম!

আপনি কথা বললেন যেন আমার ভেতর থেকে কোনো বিবেক কথা বলে উঠল...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।