দেশের বর্তমান অবস্থা: একটু ভিন্ন আঙ্গিক থেকে (৩)

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: রবি, ২৬/০৮/২০০৭ - ১১:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
এখন কথা হলো, রাজনৈতিক দলগুলো যে এই প্রাথমিক জনরোষের উপর ভর করে একটা আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিল, তাতে তাদের দোষ কতটুকু? সহব্লগার হাসান মোরশেদের যুক্তিটা ধার করে বলছি, এটাই রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। কোথাও লেখা নেই যে একটা রাজনৈতিক দলকে কোন আন্দোলন গোড়া থেকেই শুরু করতে হবে, যেকোন অবস্থার সুবিধা তারা নিতেই পারে। সে সরকারপক্ষের দলই হোক, আর বিরোধীপক্ষের দলই হোক। একই অধিকার বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, সুযোগের সদ্ব্যাবহার তারাও করার অধিকার রাখে। সত্যি বলতে কি, ওয়ান ইলেভেনে তাদের ক্ষমতায় আসাটাও তো তাই ছিল, সুযোগের সদ্ব্যব্যহার করেছে ইন্টারন্যাশনাল মোড়ল আর দেশের সেনাবাহিনী।

যা হোক যে প্রসঙ্গে ছিলাম, এই যে ২২ তারিখে ঘটে যাওয়া জনরোষ, সেটাকে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবহার করেছে, যেটা আমার ব্যাক্তিগত মত, এবং এই ব্যবহারে যে দোষের কিছু নেই সেটাও আমি মনে করি। তাহলে সমস্যা কোথায়?

২.
সমস্যা মার্ক করতে পেরেছি দুটো,

প্রথমতঃ, আন্দোলনটির ধারক ছিল যারা, অর্থাৎ, একেবারেই সাধারণ ছাত্ররা যাদের কোন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নেই, তারা বিষয়টা কিভাবে নিয়েছে। তারা কি রাজনৈতিক দলগুলোর এই ইউটিলাইজেশনকে একটা "গঠনমূলক হস্তান্তর" হিসেবে নিয়েছে, নাকি তারা এটাকে "ছিনতাই" হিসেবে নিয়েছে?
এই প্রসঙ্গে কোন সিদ্ধান্ত আসলে আমাদের মতো কম্পিউটারের-সামনে-কফি-গিলতে-গিলতে-ব্লগারদের পক্ষে দেয়া সম্ভব না; তবে যেটুকু ধারনা করতে পারি তাহলো, সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে এনিয়ে মতবিরোধ আছে, কেউ হয়ত খুশী রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে আন্দোলনের মাত্রাবৃদ্ধির কারণে, কেউ হয়ত হতাশ। এখন এই যে দ্বিধাবিভক্তি, বা এই যে সমন্বয়হীনতা ছাত্রদের মধ্যে, এটার দায় ছাত্রদের গায়েই পড়ে, অন্যকথায় পরে স্বতঃস্ফুর্ত যেকোন আন্দোলন ফুঁসে উঠার মেকানিজমের উপর। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের যেকোন একটা আন্দোলনের মেকানিজম হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন যে সেটা হঠাৎ করেই ফুঁশে উঠে, কোন দাবীটার পেছনে ছাত্ররা ছুটছে সেটা খেয়াল না করেও অনেকে জড়ো হয়, "আগে জড়ো হই তারপর দেখা যাবে কি করা যায়" -- এমনটাই এরকম আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি। এসমস্যাটা ছাত্র-আন্দোলনে আজ নতুন না, বলতে গেলে এটাই হয়ত সাধারণ ছাত্রদের দ্বারা সংঘটিত আন্দোলনের সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য মেকানিজম, কারণ তারা তো ঐ আন্দোলনের সময় ছাড়া বাকীটা সময় একই প্লাটফর্মে একই রকম মূল্যবোধ নিয়ে চলাফেরা করেনা। কেউ হয়ত বাম রাজনীতির সমর্থক, কেউ গোঁড়া গণতন্ত্রবাদী, কেউ হয়ত আধুনিক পুঁজিবাদকেই উত্তরণের একমাত্র উপায় ভাবে, ক্যারিয়ার গড়নে মন দেয়।

আরেকটা সমস্যা হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর এই "আন্দোলন ছিনতাই"র পর কিভাবে তারা সেটা পরিচালনা করে, অর্থাৎ সাধারণ ছাত্রদের একটা নিঃস্বার্থ ধরনের আন্দোলনকে যখন তারা নিজেদের অধীনে নিয়ে নেয় তখন তারা কি পদ্ধতি অনুসরণ করে। সেখানেই সমস্যাটা ঘটে যেটা দ্বিতীয় পর্বে বলেছি, যে পুলিশের দায়িত্বের এক্সপ্লয়টেশনের একটা সুযোগ তারা পায়। সেটা তারা করে, এবং সেটা যে নিন্দনীয় এব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। সেই নিন্দা থেকেই "লাশের রাজনীতি" নামক একটা টার্ম আমাদের পলিটিকাল সায়েন্সে ঢুকে গেছে, অন্যান্য দেশে হয়ত " পলিটিক্স অভ কর্পস" বললে তারা বুঝবেনা, "পলিটিক্স এক্সপ্লয়টিং কর্পস" বললে হয়ত অর্থটা বুঝবে কিন্তু তারপরেও হা করে তাকিয়ে ভাববে সেটা কিভাবে হয়!

৩.
এই যে এক্সপ্লয়টেশনের সুযোগ রাজনীতিবিদরা করে নিয়েছে, এটাকে কখনই ক্ষমতাসীন সরকারগুলো ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারেনা। তারা সবসময় "যেমন কুকুর, তেমন মুগুর" পদ্ধতি ফলো করে, মুগুর ধরা হাতটাকে মস্তিষ্ক বলে যে জিনিসটা চালনা করে সেটাকে নিয়ে তারা প্রায়ই উদাসীন থাকে, সেটার বইষয়ে ইল্যুশনে ভোগে হয়ত। বিশেষ করে, জলপাই তেলের গন্ধে সেই ইল্যুশনটা আরো কড়া হয়।

এবারের ক্ষমতাসীনদের প্রথম থেকেই একটু আলাদা, একটু আশাজাগানিয়া মনে হয়েছিল; আমি বুদ্ধিবৃত্তির নিচু স্তরের প্রাণী, যেকোন ঘটনাকে সহজ সরল ব্যাখ্যা দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তাই এদের নানান কাজে যদিও প্রচুর কন্সপিরেসী থিওরীর জন্ম হয়েছিল, আমি ব্যাক্তিগতভাবে শুধু "মাইনাস টু" থিওরীটাকেই গ্রহন করেছিলাম।
বিদেশে থাকলেও, সাম্প্রতিককালে বেশ কয়েকবার দেশে যাওয়া হয়েছিল, বন্ধুবান্ধবরা অধিকাংশই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে দেশবিদেশে, দেশে গেলে তাই পরিবারের বাইরে আমার কথা বলা হয় রিক্সাওয়ালা, সিএনজি ওয়ালা এদের সাথে। বোঝা গিয়েছিল মাইনাস টু থিওরীতে দেশের আপামর জনসাধারণের তেমন কিছু যায় আসেনা, তারা নির্ভেজালে খেয়ে পরে বাঁচতে চায়। মননশীলতা নাই, চিন্তার স্তর নীচু এরকম অনেকভাবেই এদেরকে হয়ত বিশেষায়িত করা হবে এখন, তবে এটাই বাস্তবতা; তাও সেটা শুধু গরীবের দেশ বাংলাদেশেই নয়, নানান দেশের নানান মানুষের সাথে সৌভাগ্যক্রমে কথা হয়েছে, বোঝা যায় দুনিয়াজুড়েই চিন্তাভাবনাটা তেমন।

তারপরও এই সরকার এমন আচরণ কেন করল? ফখরুদ্দিন সাহেব অফিশিয়াল প্রথম দিনেই সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের ঘোষনা দিয়েও কেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারেননি? সেটার ফলাফল আমি দোষারোপ করব সেনাবাহিনীর প্রভুসুলভ আচরণ আর সরকারের আমলাতন্ত্রিক আচরণের মিশ্রণের দোষ। প্রথমদিন ঘটনাটা যখন ঘটনাটা ঘটে তখন ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি, দ্বিতীয় দিনেও সরকারীভাবে ঘটনাটা থকে দূরে থাকা হয়েছিল, সরকারী মুখপাত্র মইনুল সাহেব দুপুরের দিকে বললেন তিনি এখনও জানেননা মূল ঘটনা, আকারে ইঙ্গিতে প্রকাশ, এমন ঘটনাকে এত পাততা কে দেবে! সেই গা ছাড়া ভাবটাই কাল হয়ে গেল মাথামোটা এদের জন্য।
আমরা দেখি সামান্য জাতীয় দুর্যোগেও পাশ্চাত্যের সরকারপ্রধানরা কিভাবে সব স্ক্যাজুল বাদ দিয়ে প্রিভিলিজ অর্ডার বদল করেন, সেটার কারণ এমন কিছুনা যে সরকারপ্রধান গেলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, শুধু এটা বোঝানোর জন্য যে সরকার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে, যেটা মানুষের আস্থা বাড়ায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনাকে ফখরুদ্দিনসাহেব আমলেই নিলেননা, তিনি পর্দায় আবির্ভুত হলেন অনেক পরে। বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু ক্রুশিয়াল সেটা বোঝার দরকার ছিল, আর্মি ইন্টেলিজেন্সীর চিফকে পাঠিয়ে 'আমরা জনগনের জন্য না, বরং আমাদের পেছনে জনগনকে বাঁশপ্রদানের জন্য আর্মি আছে' এরকম একটা এটিচিউড তাদের সাম্প্রতিক ঘটনার শুরু থেকেই ছিল। তবে যেটা তারা বুঝতে পারননি, অলিভ-ইল্যুশনের কারণে, তা হলো আস্থা নষ্ট হয়েছে জনগনের, রাজনীতিবিদদের মাঝে যদি আত্নশুদ্ধির মোটিভেশন ছিঁটেফোঁটাও তৈরী হয় সেটা উল্টোপথে যাওয়া শুরু করেছে।

তার ওপর পুরো সিচুয়েশন যখন হাতের বাইরে ফখরুদ্দিন সাহেব তখন ষোলকলা পূরণ করেন কারফিউ দিয়ে। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের ভাষ্যে যতটুকু পাওয়া যায়, পাজামা মিডিয়ার কল্যানে যতটুকু বোঝা যায়, সেটা হলো, কারফিউ দিয়ে "পশ্চাতদেশে লাথি খাওয়ার" যন্ত্রণার প্রতিশোধ আমাদের বীর সেনাবাহিনী নিয়েছে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে।

৪.
এখানে উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পাঁচজন শিক্ষক আর ছাত্রদলের নেতাকে তারা ধরেছেন, রিমান্ডে পাঠিয়েছেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে গোলমাল সৃষ্টির জন্য -- তাদের এই কাজটা যৌক্তিকতার দাবী রাখত। কারণ, আসলেই রাস্তাঘাটে অনেক সরকারী আর পাবলিক এসেটের ক্ষতিসাধন হয়েছে, সেটা যদি কারও সুযোগসন্ধানী এক্সপ্লয়টেশনের কারনে হয়েছে বলে সরকার মনে করে তবে তাদেরকে গ্রেফতারের অধিকার সরকারের আছে। এর সাথে আরো যোগ করা যায় যে, সুনির্দিষ্টভাবে ছয়জনকে ধরা হয়েছে, এলোপাতাড়িভাবে নয় যেটা হয়ত সরকারের এই দাবীটাকেও জাস্টিফাই করে যে গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপারে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এতটুকু পর্যন্ত যদি ঘটত, তাহলে আমি এই গ্রেফতারের বিরুদ্ধে কিছু বলতামনা, অপেক্ষা করার পক্ষপাতি হতাম এই ভেবে যে 'কি ঘটে দেখি'।

কিন্তু, এখন যদি জিজ্ঞেস করি আসলেই কি কারফিউ দেয়ার প্রয়োজন ছিল? আজিজ মার্কেটের উপরে ফ্ল্যাটগুলোতে যেভাবে প্রতিশোধপরায়ন বীরসেনানীরা ছাত্রদের নির্বিচারে মারল, সাংবাদিকদের 'ব্লাডি সিভিলিয়ান' হিসেবে মারল, সাধারণ জনগনকে যেভাবে পিটালো যেখানে সেখানে, তাতে তাদের কোন চেহারা প্রকাশ পায়? তারা আমাদেরকে অতীতের কোন স্মৃতিগুলোকে মনে করিয়ে দিলেন? আমাদের কি আবার শুনতে হবে, 'ব্লাডি সিভিলিয়ানের দল, থাকতে হলে এদেশে এভাবে লাথিগুঁতো খেয়েই থাকতে হবে!'

ফখরুদ্দিন সরকারের যখন এমন আচরণ, তখন আমি কিভাবে ভরসা করব যে নাশকতার দায়ে যাদের গ্রেফতার করা হলো তাদের উপর অবিচার করা হবেনা?

নির্দ্বিধায় এখন যেটা বলা যায় তা হলো, ছোট্ট এই একটি ঘটনা, অর্থাৎ, কারফিউ জারি আর তার সাথে সাধারন মানুষ, ছাত্রদেরকে নির্বিচারে নির্যাতন -- এটা ফখরুদ্দিন সরকারকে অবশ্যই ২১শে আগস্টের আগে আর পরে দুটো ভিন্ন চেহারায় উপস্থাপিত করেছে।

তার চেয়েও বড় সত্য হলো, ২১শে আগস্টের আগের চেহারায় সম্ভবতঃ ফিরে যাবার আর কোন পথ তাদের খোলা নেই, তাদের যেকোন পদক্ষেপকেই, সেটা ভলো হোক খারাপ হোক, এখন প্রশ্নবিদ্ধ করার একটা সুযোগ তারা তৈরী করে দিলো।

তবে ব্যাক্তিগতভাবে এখন আমার সবচেয়ে বড় যে মাথাব্যাথা, তা হলো এখন আমরা কি করব?


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

মজার বিষয় হচ্ছে যে সরকার ৮২ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে এটা স্বীকার করে নিয়েছে শুধু ঢাকা শহরেই অন্তত:৮২ হাজার মানুষ সেইদিন সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল।

তারপর আর নিজের জনপ্রিয়তা নিয়ে এই সরকারের কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয় বোধহয়।

-----------------------------------
ঢাকার ভূমে ফিরেছে একাত্তর/প্রস্তুতি নে,সময় হলো তোর..

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

জ্বিনের বাদশা,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন কাটানো আর সরকার বিরোধী আন্দোলন দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি আপনি যে ছাত্রদের হাত থেকে রাজনীতিকদের হাতে আন্দোলন ছিনতাই বা হস্তান্তরের অনুসন্ধান করছেন তার কোনো প্রয়োজন নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ খেলার মাঠে উপস্থিত না থেকেও বুঝতে পারি যে কোনো এক সেনাসদস্যের সাথে তর্ক-বিতর্ক লাগাটা অজুহাত মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সেনা ক্যাম্প থাকাটাই ছাত্রদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ জন্ম দিতে পারে। দেশের ভয়ংকর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ছাত্ররা ছাড়া আর কে বুঝবে বেশি।

আরেকটা কথা, সাধারণ ছাত্রদের মিছিলেও সব সাধারণ ছাত্ররা যায় না। আর যারা নেতৃত্ব দেয় তারা রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত ছাত।

সাধারণ ও রাজনৈতিক পরিচয় ও রাজনৈতিক বা যুথবদ্ধতার শক্তি বিচ্ছিন্ন মানুষ প্রতিবাদ করতে পারবে কি করে? তাহলে আর্মির আত্মীয়ার ছাতার নীচে আশ্রয় নেয়ার দোষে লাশ হয়ে যাওয়া লোকটির স্বজনরাই এর চেয়ে বড় প্রতিবাদ করতে পারতো।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভালো লাগলো। একটা প্রস্তাব আছে। গণআন্দোলনের কোন ম্যানুয়্যাল আছে? না থাকলে আমরা একটি তৈরি করতে পারি না? অনেক আন্দোলনই পথ হারিয়ে ফেলে, আবার অনেক আন্দোলনই হাইজ্যাক করা হয়। এসব ত্রুটি এড়াতে, এবং ভাংচুরের কিছু সৃজনশীল বিকল্প জানাতে এরকম কিছু একটা কি করা যায়? যারা দেশ ধ্বংস করতে চায়, তারা আগাম গুছিয়ে নথিবদ্ধ পাপাচার করতে পারলে দেশ বাঁচানোর জন্য কেন কিছু করা যাবে না? এখানে অনেকেই গণআন্দোলনের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু গাইডলাইন থাকলে মন্দ হত না।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দেশে মানুষ খেয়ে পড়ে বাঁচেত পারলেই খুশী। তারা হয়তো অনেক কিছুই ভুলে যাবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর সেনাবাহিনীর ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার রেশ একদিন না একদিন জেগে উঠবে, এতে আমার সন্দেহ নেই।

সে হিসেবে বলা যায়, ঘটনার শুরু হয়েছে কেবল। সকলে ধৈর্য আর দেশপ্রেমের কথা চিন্তা করে না এগোলে নিকট ভবিষ্যতে কপালে অনেক খারাপি আছে বলেই মনে হচ্ছে।

এখন বসে বসে ব্লগ লেখা ছাড়া আর কোন কিছু করার নেই। তাও ভাল, সচলায়তনে কিছু বলে সবার সাথে শেয়ার করা যাচ্ছে।

কিন্তু সচলায়তন কি কোনকিছুর চাপে পড়েছে? একটা কার্টুন ছিল প্রথম পাতায়, সেটা আর নেই। সেই সাথে দেখছি প্রত্যেকটা লেখার নিচেই 'দায়মুক্তি' টাইপের ইংরেজী লেখা। এটি সব পোস্টের সাথে না দিয়ে মূল সাইটের একেবারে নিচে দিলেই মনে হয় ভাল হত। যাই হোক, সেটা বড়দের ব্যাপার।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আরিফ ভাই, এটা হলো জলপাই খেয়ে রামছাগলে পরিণত হবার মেকানিজম ,, আমাদের তীক্ষ্ণধা আর্মি এখন 'শক এন্ড অ্য' প্র্যাকটিস করছে হাসি

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

শোহেইল ভাই, সমস্যাটা যেখানে সেটা হলো ছাত্ররা যারা অংশগ্রহন করে এরকম আন্দোলনে, তাদের মাঝেই এই হস্তান্তর নিয়ে দ্বিমত থাকে ,,, কারণ দেখা যায় যে আন্দোলনের ইস্যুটা 'হলে ছাত্রনেতা-নেত্রীদের অবৈধ থাকা বন্ধ করতে হবে' থেকে কিভাবে যেন 'ভি,সি'র পদত্যাগ চাই' এ রূপান্তরিত হয় ,,, তখন কিন্তু আন্দোলনে যোগ দেয়া ছাত্রদের একাংশ হতাশবোধ করে ,,, এই হতাশা যখন অনেক ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে, তখন যুক্তিসংগত রাজনৈতিক আন্দোলনেও সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাওয়া যাবেনা ,,, যেজন্য দেখুন, নির্বিচার হলদখলের পরও ছাত্ররা এনিয়ে আন্দোলন করেনা

আর, ছাতার নীচে আশ্রয় নেয়া সাধারণ লোকটির আত্নীয়দের ছাত্রদের মতো অমন তারুণ্যেভরা সাহস, বা ঢাবি'র মতো তেমন পরিবেশ নেই ,,, আজ ঢাবি মাঠে খেলা না হয়ে মতিঝিল মাঠে খেলা হলে সে যত বড় ছাত্রনেতাই হোক, আর্মির সাথে লাগতে যেতনা।
আমার মনে হয়, আপনার শেষ প্যারার তুলনায় পরিবেশটা একটা বড় ফ্যাক্টর।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ইশতিয়াক, ম্যানুয়াল থাকলে ভালো হতো চোখ টিপি ,,, তবে ম্যানুয়াল ম্যানিপুলেশন করা সহজ হাসি
তবে "ভাংচুরের কিছু সৃজনশীল বিকল্প" আসলেই দরকার ,,,বিঃ ছাত্রদের দেশের সবচেয়ে দায়িতৃশীল আচরণ করা দরকার ,,, তাদের দ্বারা রাস্তায় গাড়ী ভাংচুরটা অসভ্যতা!
বিএনপির এমপি নোমানকে জামাতের নেতাদের সাথে দেখা না করতে দেয়ার জন্য ছাত্ররা পথে শুয়ে পথ আটকেছে ,,, ঐ প্রতিবাদটা ভাল লেগেছে ,,
নইলে, ছাত্ররা যখন সরকারবিরোধিতায় ভায়োলেন্ট আচরণ করবে, তখন সরকারও প্রত্যুত্তরে ভায়োলেন্ট হবেই

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিক, ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার পরিণতি আর্মির হোক
এমন হতে পারে যে সরকার কিছু ওয়েবসাইটের উপর এ্যাকসেস কন্ট্রোল চালু করতে পারে ,, সে হিসেবে ডিসক্লেইমারটা সচলায়তনের জন্য যৌক্তিক

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

এস্কিমো এর ছবি

পুরো ঘটনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
প্রথম অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ ছিল ..সেখানে সরকার "ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রুগী মারা গেল" নীতি অবলম্বন করেছে। তা ছাড়াও ছাত্রদের স্বত:স্ফূর্ত মিছিলে জরুরী আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে বিষয়টা লেজেগোবরে করেছে।

সোজাসুজি যদি ঘটনার কয়েকঘন্টার মধ্যেই ক্যাম্প উঠিয়ে নেবার এবং ছাত্রদের ক্যাম্পাসে মিছিলেন সুযোগ দিতো - তা হলে পরের পর্ব আলোচনার দরকার হতো না।

পরে যা ক্যাম্পাসের বাইরে হলো ..তার পিছনে কাদের হাত/পা আছে সেটা সরকারকেই আবিস্কার করতে হবে।

...

তবে অবাক হবার কিছুই নেই...যার যার পরিনতি সেই নির্ধারন করবে ...

লেখতে চাই ..কিন্তু কি লিখবো?

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

এস্কিমো, ধন্যবাদ কম কথায় গুছিয়ে বলার জন্য ,,,একটু যোগ করতে চাই, প্রথম অংশটাকে ঠিকম্তো হ্যান্ডল করতে পারলে, সরকারের সিনসিয়ারিটি প্রকাশ করতে পারলে দ্বিতীয় অংশটা ঘটেইনা

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।