নিজামী-জিল্লুর রহমান-এর করমর্দন সমর্থন করা যায় কি?

মূর্তালা রামাত এর ছবি
লিখেছেন মূর্তালা রামাত (তারিখ: রবি, ০৭/০৯/২০০৮ - ১:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকালের দেশের বিভিন্ন দৈনিকে ফলাও করে দুটি ছবি ছাপা হয়েছে। একটিতে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমির হোসেন আমু, জাতীয় পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদ, বিএনপির মহসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান, বায়তুল মোকাররমের খতিব ও জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী পাশাপাশি বসে আছন। অপরটি হলো নিজামী ও জিল্লুর রহমানের করমর্দনের দৃশ্য।

দুটো ছবিই দেশের রাজনৈতিক মহলে তুমুল ঝড় তুলেছে। বিশেষ করে চিহ্ণিত রাজকার নিজামীর সাথে জিল্লুর রহমানের করমর্দনকে প্রগতিশীল চিন্তধারার কেউই মেনে নিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগ এর আগে জামায়াতের উপস্থিতিময় যেকোন অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিলেও গত ১৫ জুলাই তারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দাওয়াতে মার্কিন দূতাবাসে এক সভায় যোগ দেয়। সেই সভায় অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও জামায়াতের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এবারও তারা সৌদি রাষ্ট্রদূতের অমন্ত্রণে জামায়াতের সাথে ইফতার পার্টিতে যোগ দিলো।

এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল মসজিদের উদাহরণ টেনে বলেছেন মসজিদের নামাজের কাতারে জামায়াতের লোকজন থাকলে কী সেখানে অন্যেরা নামায পড়বে না! সমালোচকেরা তার যুক্তি মেনে বলেছেন নামায পড়ার পরে করমর্দনের প্রয়োজন আছে কি?নিজামী-জিল্লুর-এর করমর্দনকে সমর্থন করে আবার অনেকে বলেছেন যে, কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে কেউ হাত বাড়িয়ে দিলে সৌজন্যতার খাতিরে অন্যকেও হাত বাড়াতে হয়, এতে দোষের কী আছে!

অবশ্যই দোষের কিছু নেই। কিন্তু কথা হলো যেখানে জামায়াত ও আওয়ামী লীগের নৈতিক অবস্থান দুই মেরুতে এবং যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর সাথে আওয়ামী লীগ একাত্ম সেখানে নিজামী-জিল্লুর-এর এই করমর্দন আওয়ামী লীগের সেক্যুলার বৈশিষ্ট্যের জন্য কতোটা যৌক্তিক? ৭১' এ যারা রাজাকারদের তান্ডব দেখেছেন বা এই সময়ের যারা জামায়াতের হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছনার মর্মন্তুদ দৃশ্য দেখেছেন, নিজামীর সাথে জিল্লুর এর হাত মেলানোর এই দৃশ্যটি কি তাদের ব্যথিত করেনি?

ভোটের খাতিরে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পূত্র তারেক রহমান যখন কুখ্যাত গোলাম আযমের সাথে উন্মুক্ত মঞ্চে কোলাকুলি করেন তখন অনেকই আক্ষেপ করে একে দেশের জন্য অশনী সংকেত হিসেবে বলেছিলেন। নিজামী -জিল্লুর যে কারণেই হাত মেলাক না কেনো প্রগতিশীলদের জন্য তা হতাশাজনকতো বটেই দেশের ভবিষ্যতের জন্যও অশুভ ইঙ্গিতবহ।

murtala31@gmail.com
৭/০৯/০৮
মহাখালী, ঢাকা।


মন্তব্য

অমিত আহমেদ এর ছবি

আমাদের রাজাদের যে নীতি বলে আর কিছু নাই এটাই আবার প্রমানিত হলো। কি করবেন বলেন? বাংলাদেশের কি হবে ভাবলে কেমন জানি অসুস্থ লাগে ইদানিং।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আওয়ামী লীগ এটা করতেই পারে। তার গোটা ইতিহাসেই এই কপটতা পাওয়া যাবে। তারা ছিল মধ্যবিত্তের দল, কিন্তু স্বার্থ দেখেছে বড়লোকের। তারা বলেছে সমাজতন্ত্রের কথা, কিন্তু সমাজতন্ত্রের নামে প্রতিষ্ঠা করেছিল গোষ্ঠীগত ও পারিবারিক শাসন-লুন্ঠন। তারা বলেছে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা, কিন্তু ১৯৭২ থেকেই শক্তিশালী করেছে ইসলামপন্থিদের হাত। তারা করেছে মুক্তযুদ্ধ, কিন্তু রক্ষা করেছে তাদেরই।
বিএনপি-র এই শঠতা নেই। তারা ঘোষিতভাবে যাবতীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার পক্ষে। তাই সমাজের প্রতিক্রিয়াশীলরা তাদের সমর্থন করা নিয়ে দ্বিধায় থাকে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের কপটতা সমাজের প্রগতিবাদীদের বারবার হতাশ করে, প্রতারিত করে বলে, আওয়ামী সমর্থকবলয় স্থিতিশীল থাকে না। তাই নির্বাচনগুলিতে দেখা যায়, আগে বিএনপি ছিল আলীগের প্রতিক্রিয়া এখন আলীগ হয়েছে বিএনপির প্রতিক্রিয়া। তাই বিএনপি-জামাত যুবলেও বারবারই আলীগই তাদের জন্য মাঠ তৈরি করে দিয়ে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো লাফাতে থাকে, কিন্তু দুধের বাঁট তার কপালে আর জোটে না।

এই ঘটনায় দারুণ দেখা গেল যে, প্রভুরা তলব করলে তারা টুপি পরে গিয়ে গম্ভীর ভাবে গু-ও খেয়ে আসতে পারে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সবজান্তা এর ছবি

এই ঘটনায় দারুণ দেখা গেল যে, প্রভুরা তলব করলে তারা টুপি পরে গিয়ে গম্ভীর ভাবে গু-ও খেয়ে আসতে পারে।

এই লাইনটার জন্য (বিপ্লব)


অলমিতি বিস্তারেণ

অনিশ্চিত এর ছবি

আমি অবশ্য খুব এক্টা অবাক হইনি। দলীয় নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং বাইরের কর্মকাণ্ডে দ্বিচারিতার এরকম অসংখ্য উদাহরণ ওদের আছে।

ওদের কাছে বাংলাদেশের সুশীল মধ্যবিত্ত সমাজের একাংশের কোনো এক গোপন চাহিদা আছে বলেই তারা আহত হয়।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

আবু রেজা এর ছবি

ঐ যে আবার সেই একই কথা, চিত্কার করে বলতে ইচ্ছে করে --
আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম ?

যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের ভোট আরো ১০% কমলো। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পরপর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৭০-৭৫% ভোট পেত, দেড়বছরের সময় ক্ষেপনে হিসাবটা ৬০% এ এসে দাড়িয়েছে। (স্ট্যাটের রেফারেন্স চাইয়েন না, এইটা ব্যক্তিগত মতামত) এরকম আরো কিছু করমর্দনের ঘটনা ঘটলে তারা আবারো ললিপপ চুষবে।
--------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আলমগীর এর ছবি

মুর্তালা
ভাল পোস্ট দিয়েছেন। তবে আমার স্মৃতি বলে খালেদাকে হঠানোর জন্য আলীগ আর জামাত এক কর্মসূচীতে হরতাল ডাকত। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলে জলিল তখনও সেরকম কথাই বলত। আমারা আমাদের মতো হরতাল দিছি- এখন জামাত যদি ঐদিন হরতাল ডাকে আমাদের কী করার আছে‍!

রণদীপম বসু এর ছবি

আমরা কঠিন ভাবলে কী হবে, আওয়ামী লীগের চরিত্র যে জলবৎ তরলং এটা এরা বারে বারে আমাদের দেখিয়ে বুঝিয়ে দেয় তাদের প্রতি আমাদের ধারণাটা আসলে কী হওয়া উচিৎ।
এইসব রাজনীতিবিদরা মনে হয় পাবলিককে রামছাগল থেকে আর বেশি কিছু ভাবে না। বলাই দা'র ললিপপই আসলে এদের উপযুক্ত খাবার।
আচ্ছা, খাটাশ নামে কি কোন প্রাণী আছে ? এরা কি ললিপপ খায় ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রাফি এর ছবি

আমার মাঝে মাঝে ভাবতে অবাক লাগে-
মানুষ এত দ্রুত তাঁর অতীতকে ভুলে যায় কীসের নেশায়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

শেখ জলিল এর ছবি

আশ্চর্য হবার কিছু নেই...আ.লীগের আসল চরিত্র এটাই!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

ধ্রুব হাসান এর ছবি

এখন সময় হয়েছে 'না' ভোট দেয়ার অধিকার দাবী করার!

সবজান্তা এর ছবি

আওয়ামী লীগের এরকম কাজ শুধু নিজের পায়ে না, তাদের উপর ভরসা রেখে যারা এক সময় সভ্য, ভদ্র বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতো ( এবং এখনো যারা বোকার মত দেখে ) , তাদের সবার পায়েও কুড়াল মারে।


অলমিতি বিস্তারেণ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ঠিক বলেছেন। যখনই মানুষ ধর্মান্ধদের থেকে পরিত্রাণের জন্য আওয়ামী লীগের দিকে ফিরে চায় তখনই তারা এরকম একটা করে কুড়াল মারে। আওয়ামলীগ নিয়ে অনেক আশা ছিল একসময়। ভাবতাম এত পুরানো দল আর এত ডেডিকেটেড সমর্থক-নেতা-কর্মী নিয়ে এরাই হয়তো সত্যিকারের একটা সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবে। কিন্তু সে আশা আর দেখিনা।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সমর্থন করা না করায় কী আসে যায়? ওরা কি আপনার সমর্থনের ধার ধারে? আ.লীগ তথা সকল রাজনীতিবিদরাই নিজেদের দিকে ঝোল টানার সময় সব ব্যাপারকেই বলে "জনগন এটা চায় না" (আসলে জনগন হয়তো সেই বিষয়ে উল্টো মত পোষণ করে)। সেই হিসেবে তারা হয়তো এখন বলবে "জনগন এটাই চায়"।

বস্তত আওয়ামী লীগের এই চরিত্র অনেক পুরানো। ছিয়ানব্বইয়ে জামাতের সাথে বিএনপি হটাও আন্দোলন করেছে। তখন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছে সেটা গ্রহণ যোগ্যও হয়েছিল। যুক্তির তো আসলে কোন অভাব হয়না, অভাব হয় নীতির। সেটা রাজনীতিবিদ-সমর্থক-জনগন নির্বিশেষে প্রযোজ্য।

সেদিন খবরে পড়লাম আ,লীগ এখন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তাদের "দেশ সেবা" গ্রহণের জন্য তাদের দলে যোগদানের আহবান জানিয়েছে। পত্রপত্রিকায় "জলপাই" নিয়ে যারা লেখালেখি করে (তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ হয়তো আওয়ামী লীগের সমর্থক) তারা কিন্তু এটা নিয়ে কিছু বলছেনা। এর নামই রাজনীতি আর এর নামই অন্ধ সমর্থন।

জামাতের সাথে আন্দোলন করা যায়, তাদের সাথে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া যায়, তাদের যুদ্ধাপরাধী বলা যায়, তাদের পেছনে নাকি নামাজও পড়া যাবে-- শুধু তাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার করার কোন পদক্ষেপ নেয়া যাবে না।

এই সব পঁচা গলা নীতিহীন রাজনীতিবিদরা যতদিন আছে ততদিন এমনটাই দেখতে হবে।

ধ্রুব হাসান এর ছবি

আরে ভাই পিছনে দাড়িঁয়ে নামাজ পড়া মানে কিন্তু ইমাম মানা। আর ইমাম মানে হলো নেতা! তো বুঝতেই পারছেন এসব রাজনৈতিক নেতাদের আসল নেতা কারা? তাই এসব আসল নেতারা যুদ্ধাপরাধী হলেও পরকালে ফুলসিরাত পারাপারে হবেন মূল কান্ডারী! আর বেচারা জিল্লুর, এক পা চলে গেছে কবরে, তার তো দোযখের ভয়ডর আছে নাকি?

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

চরিত্রহীনদের কাছ থেকে সাধুতা আশা করাটাই বোকামী।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

তানভীর এর ছবি

এ বিষয়ে ব্লগের আওয়ামী বুদ্ধিজীবিদের বক্তব্য জানতে পারলে ভালো লাগত।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হুম, তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্যগুলো নিশ্চয়ই খুব রসময় হতো। হাসি

সচলে আওয়ামী বুদ্ধিজীবি আছে নাকি কেউ? আমি কাউরে দেখি নাই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হুমম...

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

এ আর এমন কি!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ইফতেখার এর ছবি

এ বিষয়ে ব্লগের আওয়ামী বুদ্ধিজীবিদের বক্তব্য জানতে পারলে ভালো লাগত।
তারা একটা কথা বলে সব জায়েজ করে দেবে, যেমন করমর্দনকারী নিজেই অকাট্য যুক্তি দিয়েছেন। জনগণের সমালোচনায় রাজনীতিবীদরা কান দেয় নাকি?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।