বারবিকিউ

মূর্তালা রামাত এর ছবি
লিখেছেন মূর্তালা রামাত (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/১১/২০১২ - ১২:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক, জীবিত বা মৃত কারো সাথে চরিত্রগুলোর মিল খুঁজে পেলে তা নেহাতই কাকতালীয় ব্যাপার)

মাঝরাতে ফোনটা এলো। থাই সুন্দরীর মোম গলে পড়া স্তনের মাখন থেকে মাথা তুলে কলটা রিসিভ করলেন মাহমুদ হাসান। মুখের একটা পেশিও না নড়িয়ে ওপাশের বক্তব্য নিরবে মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তারপর ঠিক আছে, আমি দেখছি বলে ফোনটা রেখে একটা সিগারেট ধরালেন।

মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে নিজের মনেই নিজেকে বললেন তিনি। এরচেয়ে ভয়াবহ বিপদ তিনি তার পয়তাল্লিশ বছরের জীবনে মোকাবেলা করেছেন। একবার দুবার নয় অসংখ্যবার। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার পেছনে তার ঠান্ডা মাথায় বিপদ মোকাবেলার এই গুণটির অবদান অনেক। বিপদ আসার আগেই তিনি বিপদের গন্ধ পান। নিজে থেকেই অনেক বিপদ তিনি তৈরি করেছেন বলেই হয়তো বিপদে তার সিক্সথ সেন্স দারুণ কাজ করে। যেমন এই বিপদটি তার নিজেরই তৈরি করা। পরিকল্পনা মতোই কাজ হয়েছে। শুধু সময়টা উল্টোপাল্টা করে ফেলেছে গবেটগুলো। তাতেই গুবলেট হয়ে গেছে সব। চীন থেকে আমদানী করা ৫০০ টন সুতা, দামী কাটিং মেশিন, সেলাই মেশিনের পাশাপাশি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১২৪ জন মানুষ।

মানুষ নিয়ে তিনি চিন্তা করেন না। গার্মেন্টস এ কাজ করে ছোটলোক ফকিরণীগুলো। ওরকম দু চারহাজার পোকামাকড় মরলে তার কিছুই আসে যায় না। জনসংখ্যার ভারে দেশটা রসাতলে যাচ্ছে। গিজগেজে মানুষের চাপে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে মুভ করাই দায়। ছোটলোকের বাচ্চাগুলো মরলে বরং ভালোই হয়। রাস্তা পরিষ্কার থাকে। সমস্যা হলো মিডিয়াকে নিয়ে। ১০ বা ১২ জন ছোটলোকের বাচ্চা মরলে এরা নাকে কাঠি দিয়েও হেঁচতো না। তার চেয়ে বরং এক পা কবরে যাওয়া অবসরপ্রাপ্ত কোন সামরিক অফিসার, বা আতেল বুদ্ধিজীবী বা নুনু ঝুনো হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক নেতার অকাল মৃত্যু নিয়েই তারা সরব থাকতো বেশি। ছোটলোকেরা স্রেফ একটা সংখ্যা মাত্র। এই সংখ্যা কম থাকলে সমস্যা নেই, বেশি হলেই ঝামেলা। পাবলিকের চোখ মন তখন সব ম্যাগনিফাইং গ্লাস হয়ে ওঠে। পাবলিক বেচেই খেয়ে পরে টিকে আছে মিডিয়া । আগুনে ঘি ঢেলে জনমত উস্কে দিতে তারা ওস্তাদ। লাশের সংখ্যা যখন শয়ের ঘর ছাড়িয়েছে, ছোটলোকগুলোকে এখন তারা তাদের ক্যামেরায় মানুষ হিসেবে দেখিয়ে মায়াকন্না জুড়ে দেবে। পাবলিককে গোগ্রাসে স্টোরি গিলতে বাধ্য করবে। সরকার নড়েচড়ে বসবে, পাবলিকের সেন্টমেন্ট বলে কথা! তিনি খবর পেয়েছেন ইতিমেধ্যেই চ্যানেল সিটিএন ঘটনার লাইভ সম্প্রচার করা শুরু করে দিয়েছে! নাহ, তিলকে তাল বানানোর আগেই অ্যাকশনে নামতে হবে, মনস্থির করে ফেলেন মাহমুদ হাসান। আধখাওয়া সিগারেটটা অ্যাসট্রেতে গুজে রেখে তিনি অভ্যস্ত হাতে ফোনের বাটন টেপেন।

দু’বার রিং হতেই ওপাশে সাদেক আলীর পিএস ফোন ধরে। মাহমুদ হাসান নিজের পরিচয় দেবার সাথে সাথে “জ্বী স্যার এখুনি বসকে দিচ্ছি” বলে সে ফোনটা ডাকসাইটে মন্ত্রী সাদেক আলীকে দিতেই পরিচিত গলা শোনা যায়, কী মিয়াভাই এতো দেরী! ঘটনাতো বিরাট আকার নিতাছে। কী করবেন এখন?
আপনি থাকতে আমার আবার চিন্তা কী!
চিন্তা আছে বুঝলেন। হাফ সেঞ্চুরী হইলেও কথা আছিলো না। চোখের পলকে সিচুয়েশন সাইজ কইরা ফেলতাম। কিন্তু অবস্থাতো বেগতিক। লাশের হিসাব ডাবল ছাড়াইয়া যায় যায়।
১২৪ জন শুনলাম, মাহমুদ হাসান সন্দেহের সুরে বলেন।
ঠিকমত গোনা শুরু করলে কইলাম ক্যালকুলেটরেও কুলাইবো না, ওপাশ থেকে জবাব আসে।
ও, তাই নাকী! সংখ্যাটা তাহলে ১২৪ এ রাখারই ব্যবস্থা করেন।
ঝামেলার কাজ বুঝছেন। পাবলিক সেন্টিমেন্টাল হয়ে উঠছে। প্রাইমিনিস্টারও খোঁজখবর নিতাছে। পুরাই চাপের মধ্যে আছি।
সমস্যা কী! আপনিতো টপ মন্ত্রীদের একজন। আপনার ক্ষমতা আর কেউ না জানুক আমি জানি। আপনি চাইলে বাংলাদেশের নামও পাল্টিয়ে ফেলতে পারেন।
পাম দেন, তাই না! ওপাশে হালকা হাসির আওয়াজ শোনা যায়। শোনেন, গাড়ি যতো বড়ো তেল ততো বেশি লাগে বুঝছেন?
তেল নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না। উপরে আল্লাহ নিচে আমি। আপনি খালি ১২৪ রে আর বাড়তে দিয়েন না। পারলে কমান।
ওকে, দেখি কতদূর কি করতে পারি। হাজার হইলেও আপনি কাছের লোক। সামনে আবার ইলেকশন। আপনার মত ব্যাবসায়ীগো খেপাইলে ফান্ড পামু কেমনে, হা হা হা।
ভালোই বুঝেছেন। এজন্যই রাজনীতিতে আপনাকে কেউ ঠেকাতে পারে না। যাই হোক, শোনেন বেশি দেরি না করে আগেভাগেই একটা তদন্ত কমিটি বানিয়ে ফেলেন।
সেটাতো মাস্ট। এত্তো বড় দূর্ঘটনা। কমিটি না করলে পাবলিকে আস্ত রাখবো। তাছাড়া কেউ আবার স্যাবোটাজ করলো কীনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে, কী বলেন?
আপনিতো দেখি আমার থেকে ফার মাইলস অ্যাডভান্সড! ব্রাভো! তা কমিটির প্রধান করবেন কাকে?
কেন! অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কফিলউদ্দীন। যেমনে রিপোর্ট বানাতে বলমু তেমনেই বানাইবো।
না না, উনার বয়স হয়ে গেছে। ক্যামেরার সামনে উল্টাপাল্টা কথা বলেন। সেবার দেখলেন না শেয়ার মার্কেট নিয়ে সরকারকে কেমন বিব্রত করলো! তার চে’ ব্যারিস্টার মনসুর মোল্লাকে হেড বানান। মিডিয়ার প্রিয় মানুষ। মিষ্টি করে হেসে হেসে কথা বলে হাতি ঘোড়া না মেরেও দান জিতিয়ে দেবে।
খারাপ বলেন নাই। সেকী রাজি হইবো?
সেটার ভার আমার উপর ছেড়ে দেন। কচি গেলমান আর শিভাস রিগাল, মনসুর মোল্লা কুপোকাত।
তাই নাকী! মানুষের ঘরের খবরও রাখেন দেখতেছি!
রাখতে হয় । না হলে কী আর ব্যবসা করা যায়! এনিওয়ে রাখি তাহলে। পরে কথা হবে। বাই, মাহমুদ হাসান কল কেটে দিয়ে নিজের মনেই হাসেন, টাকা কীনা হয়। মন্ত্রী বলো, নেতা বলো, আর নেতার বাপই বলো সবাই টাকার গোলাম। অথচ উপরে উপরে লোক দেখানো কত গলাবাজি! কতো দেশপ্রেমিক সবাই! যতোসব ভন্ডের দল, দেশটাকে লুটেপুটে খেলো, মাহমুদ হাসান নিজেকেই নিজে বিরক্তি দেখিয়ে সেকেন্ডের ভেতরেই আবার নিজেকে সামলে নেন । এবার কাকে? সুলতানকে? হ্যা সুলতান আহমেদকেই ফোন দিতে হবে।

প্রথম রিং হবার পরেই সিটিএন এর চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ ফোন ধরলেন। এটি তার একান্ত ব্যক্তিগত নম্বর। কেবল খুব অল্প কিছু মানুষ এই নম্বরটি জানে। মাহমুদ হাসান বলছিলাম।
আরে মাহমুদ সাহেব যে, কী খবর?, কৌতুকের সাথে বললেন সুলতান আহমেদ।
খবরতো আপনার চ্যানেলে সুলতান সাহেব। যা শুরু করেছেন। এক্কেবারে লাইভ দেখাচ্ছেন! নিউজের আকল পড়লো নাকী!
সুলতান সাহেব হাসেন, নিউজতো আভি বাকি হ্যায়। লাশ গণনা শুরু হলো মাত্র..
লাশ গোনা চলুক, আপনার চ্যানেলও চলুক, আমরাও চলি, কি বলেন?
হা হা, তা কী করে হয়!, সুলতান সাহেবের গলায় রসিকতার সুর।
কী করে হয় তা আপনিও জানেন, আমিও জানি।
তাতো অবশ্যই, সুলতান সাহেব হাসেন। তবে পাবিলক যেভাবে হুমড়ি খেয়ে লাইভ দেখছে বুঝলেন স্পনসরদের লাইন লেগে গেছে..
আমাকেতো আপনি চেনেন সুলতান সাহেব। কথার বরখেলাপ আমার ধাতে নেই। আপনার অ্যাকাউন্ট নম্বরটা আমার কাছে আছে। ঘন্টাখানেক পরেই চেক করে দেখবেন।
হা হা হা, সুলতান সাহেব দরাজ দিলে হাসেন। চেক টেক করার দরকার নেই বুঝলেন। আপনার সাথে কী আর এক দিনের সম্পর্ক ! দেখি কী করতে পারি।
কী করতে পারেন আমি বলে দিচ্ছি, মাহমুদ হাসান যেন আগেই থেকেই সব মূখস্থ করে রেখেছিলেন, গড়গড় করে তিনি বলতে থাকেন। অদিতি সাহাকে বলেন সে যেন পুরো লাইভের ব্যাপারটা নিজে হ্যান্ডেল করে। মার্জিনা গার্মেন্টস অ্যান্ড কোম্পানি দেশে কত বড় এবং কত গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিষ্ঠান, কত কোটি বৈদেশিক মূদ্রা আমরা এ যাবৎ দেশের জন্য আয় করেছি তা,কতো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা আমারা এ যাবৎ পেয়েছি, কতো গরিব লোকের রুটি রুজির যোগান আমরা দিয়েছি তার পরিসংখ্যান লাইভের ফাকে ফাকে তুলে ধরতে থাকুক। ফ্যাক্টরি পুড়ে যাওয়ায় আমাদের গোডাউনে থাকা চীন থেকে আমদানী করা ৫০০ টন সুতোসহ হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ যে ছাই হয়ে গেছে সেটাও মানুষের সামনে তুলে ধরা চাই। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের নিয়ে এই ঘটনার উপরে টক শোর আয়োজন করতে পারেন। দেশের অর্থনীতির কী বিশাল একটা ক্ষতি হয়ে গেলো তা নিয়ে সেখানে আলোচনা চলুক। নাশকতার ইস্যুটিও সামনে নিয়ে আসতে পারেন, পাবলিক সাসপেন্স পাবে।
দারুণ আইডিয়া! সুলতান সাহেব বাহবা দেন।
থ্যাঙ্কস। যেভাবে পারেন এবারের মতো আমাকে উদ্ধার করেন। ইট উইল বি হাইল অ্যাপ্রিশিয়েটেড।
হা হা হা, কী যে বলেন!
রাখি তাহলে। ভালো থাকবেন। স্লামালাইকুম।
অলাইকুম...সুলতান সাহেবের গলা অর্ধেকেই কেটে আবার ফোনের বাটন টেপেন মাহমুদ হাসান, অদিতি?
কে বলছিলেন, প্লিজ?
মাহমুদ হাসান।
মাহমুদ ভাই কোথায় আপনি? ঘটনা শোনার পর থেকেইতো আপনাকে খুঁজছি।
দেশের বাইরে আছি। শোন তোমার চেয়ারম্যানের সাথে এইমাত্র কথা হলো।
তাই নাকী! উনিতো আমাকে আগুন লাগার স্টোরিটাকে আপ টু বটম তুলে ধরতে বলেছেন।
এখন আপ টু বটম এটাকে অন্য স্টোরি বানাতে বলবেন, রেডি হও।
আই অ্যাম অলওয়েজ রেডি।
আই নো। দিস ইজ দ্যা কোয়ালিটি অব এ রিয়েল জার্নালিস্ট দ্যাট দে আর রেডি ফর এনি সিচুয়েশন। নাউ, হোয়ান কেন ইউ ডু ফর মি?
হোয়াট ডু ইউ এক্সপেক্ট দিস টাইম?
এভরিথিঙ। আই নিড ইয়োর ফুল সাপোর্ট ।
অ্যান্ড?
অ্যান্ড ইউ নো হোয়াট আই হ্যাভ অলরেডি গিভেন টু ইউ অ্যান্ড হোয়াট আই ক্যান। দিস টাইম হোয়াটয়েভার ইউ ওয়ান্ট...
আ ব্লাঙ্ক চেক, হাও ডাজ ইট সাউন্ড?
শিওর, আই সেইড ইউ হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট।
খিল খিল করে হেসে ওঠে অদিতি সাহা। জাস্ট একটু মজা করলাম মাহমুদ ভাই। গেলোবার গুলশানে যে ফ্লাটটা দিলেন, ও মাই গড, হোয়াট আ কিংডম ইট ইজ! হাও কাইন্ড অ্যান্ড লাভলি ইউ আর...আই নো.... আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট
নট অনলি বেস্ট। বেস্ট’স বেস্টটা এবার আমি চাই।
ডোন্ট ওরি মাহমুদ ভাই। আপনি খালি গভমেন্ট আর দৈনিক সকালকে সামলান।
ভালো কথা বলেছো। দৈনিক সকালটা বেশ বেয়াড়া। ওর সম্পাদক আমার ক্লাসমেট ছিল। ওর সাথে কথা বলে দেখি।
তাহলেতো রাস্তা পুরো ক্লিয়ার।
হুম। অদিতির সাথে কথা বলে মাহমুদ হাসানের নিজেকে চাপমুক্ত মনে হয়। সবদিক প্রায় ম্যানেজ হয়ে এসেছে। অদিতি সাহা মিডিয়ার অঘোষিত মাফিয়া। যে খবর গেলায়, পাবলিক তাই গেলে। অদিতি সাহা তার পক্ষে রিপোর্ট করলে পাবলিক বুঝ মানতে বাধ্য। সুতরাং নো চিন্তা ডু ফূর্তি। বাকি থাকলো কেবল সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সকালের ফরিদুর রহমান। শালা আবার লেফটিস্ট, চরম আদর্শবাদী। আদর্শ না ছাই, একদিকে কোটি টাকার পাজেরোয় চড়ে, হাভানা চুরুট ফুকে অন্যদিকে কথায় কথায় মার্কস অ্যাঙ্গেলস আউড়িয়ে পুঁজিবাদের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে! তিনি আর এমন কী, এরাই আসল মাল! স্টান্টবাজি করে পাবলিকের সামনে দেবতা ইমেজ দাঁড়া করিয়ে ফেলেছে। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে সিগারেট কোম্পনির স্পন্সরে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে তারপরও পাবলিক এদের কিছু বলে না, দৈনিক সকালের জনপ্রিয়তা এতোই! ফরিদকে ফোন করলে নিশ্চয়ই এখন গাইগুই করবে। নীতি আদর্শের বুলি কপচাবে। তবুও বন্ধু হিসেবে তার একটা দাবী আছে এই ভরসায় মাহমুদ হাসান তাকে কল করলেন, ফরিদ? মাহমুদ বলছি।
কোন মাহমুদ?
মার্জিনা গার্মেন্টস অ্যান্ড কোম্পানির চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান।
সরি মাহমুদ আমি কোন রিকোয়েস্ট রাখতে পারবো না, ফরিদুর রহমান দৃঢ় কণ্ঠে বলেন।
আরে ধূর, আমি কি আবদার নিয়ে এসেছি ! আমি তোকে জাস্ট কিছু ইনফরমেশন দিতে চাই।
যেমন?
যেমন আমার অনেক বড় ক্ষতি হওয়া স্বত্তেও , প্রতিটি মানুষ যারা আগুনে পুড়ে মারা গেছে তাদেরকে আমি এক লাখ টাকা করে দেবো। আহতদের পঞ্চাশ হাজার। আমাদের ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে দেয়া হবে আরে এক লাখ করে।
নিজে পুড়িয়ে মেরে আবার একন নিজেই ক্ষতিপূরণ দিচ্ছিস! ভালোই ধান্ধা তোদের।
আমি পুড়িয়ে মারতে যাবো কেন? অ্যাক্সিডেন্ট ইজ অ্যাক্সিডেন্ট।
অ্যাক্সিডেন্টাঁ হলো কেন? বেশি মুনাফার লোভে তোদের মতো বুর্জোয়া ব্যবসায়ীরা গরীব মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো কার্পেট চাপা দিয়ে তাদেরকে শোষন করিস। পশুর মতো খাটিয়ে চুষে মারিস। মার্কস এজন্যই বলেছিলেন....
থাক তোর লেকচার থামা। ছাত্রজীবনে তোর কাছে ওসব অনেক শুনেছি। আরেকটা ইনফরমেশন দিচ্ছি শোন। উপর মহলের সাথে আমার কথা হয়েছে। গভমেন্ট একটা তদন্ত কমিটি বানাতে যাচ্ছে, আগুন লেগে এতোগুলো মানুষের মৃত্যুর সঠিক কারণটি তারা চিহ্ণিত করবে।
বাহ, চমৎকার! এই না হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র!
তো, এই কমিটিতে আমি তোর নাম প্রস্তাব করেছি।
মানে?
হ্যা, আমি চাই তদন্ত কমিটিতে তোর মত সৎ, নিষ্ঠাবান কেউ থাকুক। যাতে অন্তত আগুন লাগার আসল কাহিনী মানুষ জানতে পারে।
আরেব্বাস, ভূতের মুখে রামরাম!
আরো আছে। কমিটির সবাই ব্যাক্তিগত বুলেটপ্রুফ গাড়ি পাবে, তারা উন্নত দেশের ফ্যাক্টরিগুলো ঘুরে দেখে ইন্ড্রাসটিয়াল নলেজ বাড়াবে, ফায়ার ডিজাসটারের ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে এড়ানো যায় তা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা সেমিনারে তারা অংশ নেবে, সরকারী খরচে ফাইভ স্টার হোটেলে থাকবে, খাবে দাবে, বেড়াবে, ফূর্তি করবে। ফাকে ফাকে রিপোর্ট লিখবে। কমপ্লিট হলিডে প্যাকেজ। কেমন মনে হচ্ছে।
ফরিদুর রহমানকে তুমি চেনো। সে এতো সহজে লোভে পড়ে না।
ওকে। সেক্ষেত্রে আমি অন্য পথ নেবো। আমাদের ব্যাবসায়িক সমিতির সদস্য কোন ব্যবসায়ীই আর তোমার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবে না।
মানে? তোমার কথায় সব হবে নাকী!
তুমি আমার হোল্ড ভালো করেই জানো বন্ধু। আমার হাত অনেক লম্বা। তুমি আমার বন্ধু মানুষ। তোমার বিপদে আমি পাশে দাঁড়াবো, আমার বিপদে তুমি- এটাই নেচারাল। তা যদি না হয় তবে আমাকেতো যে কোন উপায়ে সারভাইভ করতে হবে। সুতরাং হয় আমাকে সাহায্য করে আরামে দিন কাটাও অথবা নিজের খরচে পত্রিকা চালাও- এই দুইয়ের মাঝখানে কিছু নেই।
মাহমুদ!
ইটস আপ টু ইউ মাই ফ্রেন্ড। আমি যা দিতে পারবো ১২৪ টা ছোটলোকের লাশ তোমাকে তার কিছুই দিতে পারবে না, তুমি তা হাড়ে হাড়ে জানো ফরিদ। তুমি এও জানো যে দুদিন বাদেই সব বরফ হয়ে যাবে। আমার ফ্যাক্টরি আবার চালু হবে, আবার ব্যবসা হবে, আবার দূর্ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারে। বড় দুই দলের ফান্ডে আমি যে পরিমাণ চাদা দেই তাতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক আমার গায়ে ফুলের টোকাও পড়বে না। কিন্তু তোমার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না এলে মালিক তোমাকে সোজা হাইকোর্ট দেখিয়ে দেবে। যতোই তার প্রিয় হও না কেন ব্যবসায় লাভ দেখাতে না পারলে পেটে লাথি মারতে পিছপা হবে না, এটাই বর্তমান ক্যাপিটাল দুনিয়া।
টেনশনে ফেলে দিলে!
সময় নিয়ে ভাবো। চাইলে তোমার স্বপ্নের নায়ক ফিদেল কাস্ট্রোর সাথে তোমার সাক্ষাতের একটা ব্যবস্থা আমি করে দিতে পারি।
সত্যিই পারবে?, ফরিদুর রহমানের কণ্ঠে আগ্রহ ফুটে ওঠে।
কেন নয়! টাকা দিলে এখন চাঁদেও যাওয়া যায়। কোন ব্যাপার না। সময় নাও। তোমার রিপোর্টারদের ঠিকমত গাইড করো। আমিতো আছিই।

ফরিদুর রহমানকে দোনোমনোয় রেখে ফোন কেটে দিলেন মাহমুদ হাসান। লোভ এবং ভয়- আদর্শের ধব্জাধারী মাকাল ফলগুলোর ব্যাপারে এই পদ্ধতি আগেও প্রয়োগ করেছেন তিনি। ফলাফল নাইন্টি নাইন পয়েন্ট নাইন পার্সেন্ট পজিটিভ। লোভ দেখালে মাকাল ফলগুলো উপরে উপরে না ভাব দেখায়, ভেতরে ভেতের ফুলে ফেপে ওঠে। তারপর ভয় দেখাতেই লোভটাকে টুপ করে গিলে ফেলে তারা, ভাবখানা এমন যে না পারতে হালাল করতে হলো। কতো দেখলেন। যাই হোক দৈনিক সকাল ১২৪ জনের মৃত্যু নিয়ে বেশি হইচই না করলে অন্যরাও করবে না। দু’একদিনের ভেতরেই অন্য খবরের নিচে এসব খবর পানসে হয়ে যাবে। মাহমুদ হাসান তৃপ্তিতে কাঁচাপাকা ফেঞ্চকাট দাড়িতে হাত বুলান। ক্রমশ লসের দিকে যাওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে যদি ইন্সুরেন্সের টাকা পাওয়া যায় তাতে মন্দ কী। ব্যবসা দেখিয়ে ব্যাংক লোনতো আগেই নেয়া হয়েছে। এখন পোড়া ব্যবসাকে দাঁড় করাতে আবার লোন নেবে তিনি। লাভের ওপরে লাভ। কল্পনায় তিনি কড়কড়া নোট গুনতে থাকেন। টাকার পর টাকা। ১২৪ টা ছোটলোকের জীবনের বিনিময়ে...ভাবনা শেষ না করেই টিভি চালু করেন তিনি...বিবিসির নিউজে বাংলাদেশের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের খবর দেখাচ্ছে, পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া মৃতদেহগুলো সার বেধে রাখা হয়েছে, প্রশাসনের বরাত দিয়ে মৃতের সংখ্যা ১১০ জানানো হচ্ছে....সাবাস মাহমুদ হাসান নিজের পিঠ নিজেই তিনি চাপড়ে দেন। ১৪ জন কমলো মানে তার নিজের ১৪ লাখ টাকা সাশ্রয় হলো, সংগঠনের আরো ১৪, ওয়াও। লাশের সংখ্যা যদি আরো কমে ১০০ হয় তাহলেতো কথাই নেই, পাবলিকও আর অ্যাটেনশন দেবে না; এই কটা মানুষতো দিনে অহরহ বাস ট্রাক চাপায় মারা যায়। ভাবতেই মাহমুদ হাসানের মনটা ঝরনার সুমিষ্ট জল হয়ে ওঠে। পাশে থাই সুন্দরীটি মড়ার মতো পড়ে আছে। একেই বলে প্রফেশনালিজম। তার কথার চোটে মেয়েটা নিশ্চয়ই ঘুমাতে পারেনি। অথচ একটিবারও তাকে ডিস্টার্ব না করে কী সুন্দর সে ঘুমের ভান করে ঘাসফুল হয়ে আছে! নিঃশ্বাসের তালে তালে তার সুগোল স্তনদুটি সুর তুলে ওাঠনামা করছে। রাত জাগার পরিশ্রমে মাহমুদ হাসান নিজের ভেতর তুমুল ক্ষিধা অনুভব করেন। হঠাৎ তার মনে হয় এই মেয়েটি যদি ওই ১২৪ মানে ১১০ জন পোড়া মানুষের ভেতর থাকতো তাহলে কি তিনি তাকে দেখে এতো ক্ষুধার্ত বোধ করতেন? ভাবতে না ভাবতেই মেয়েটি পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া একটি দেহে পরিণত হলো। পোড়া মাংসের কড়া ঘ্রাণ নাকে আসতেই মাহমুদ হাসানের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো, কতোদিন মিয়ামী বিচের ধারে বসে ব্লাক লেবেলে চুমুক দিতে দিতে বারবিকিউ খাওয়া হয় না। আহ! জিভে জল নিয়ে চোখের নিমেষে তিনি মেয়েটার রসালো বুকের উপর গোগ্রাসে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।

২৬/১১/২০১২
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

খাইশুই এর ছবি

চলুক চলুক

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

চলুক চলুক মন খারাপ

এদেশে তো কিছুই অসম্ভব নয়। হয়ত এমনটাই ঘটেছিল আর ঠিক এভাবেই সব ম্যানেজ করে ফেলা হবে। আর আমরাও আম জনতা, চুপচাপ সব ভুলে যাব। আরও একবার তদন্ত কমিটি বসবে, সব ভুয়া রিপোর্ট আর সাক্ষ্য প্রমান ইঁদুর আর আরশোলাতে খাবে। আলু, বেগুন, পটলের মত টাকা দিয়ে মানুষের দাম নির্ধারণ করা হবে কেজি দরে!!!

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ভালো বলেছেন!

মূর্তালা রামাত

অমি_বন্যা এর ছবি

জানিনা আসল ঘটনা কি তবে আপনার লেখার সাথে বাস্তবতার মিল থাকলে অবাক হবার কিছু নেই। এখন হচ্ছেও তাই। একটা ঘটনা ঘটছে আর তারপর দুইদিন হই চৈ । তৃতীয় দিন নতুন কিছু ঘটে ঢেকে যাচ্ছে পুরনো সব। এভাবেই কোন ঘটনার আসল রহস্য আর বের হচ্ছেনা। ১২৪ জনের প্রাণ গেছে পত্রিকায় হেডলাইন হয়েছে বড় করে । তারপর কেন জানি সবাই চুপ হয়ে যাবে। একে অন্যকে দোষ দিয়ে তারপর সবার দায়মুক্তি।
জানিনা এই প্রহসন আর কতদিন ধরে চলবে!

মূর্তালা রামাত এর ছবি

জানিনা এই প্রহসন আর কতদিন ধরে চলবে!

মূর্তালা রামাত

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

আইলসা এর ছবি

ব্যবসায়ী গ্রুপ অলরেডি নেমে পড়ছে মালিকের পক্ষে, মন্ত্রীরা ও ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করতেছে। আর এক সপ্তাহ, এই ঘটনার যারা মালিকদের সমালোচনা করবে, তাদের দালাল বানাইয়া দিবে মিডিয়া। দেশের অর্থনীতির কথা চলে আসছে সুবহে সাদিকে

মূর্তালা রামাত এর ছবি

এইইতো হয়।

মূর্তালা রামাত

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বহুদিন পর একটা মাস্টারপিস পড়লাম।

মূর্তালা রামাত এর ছবি

উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ পিপিদা।

মূর্তালা রামাত

তারেক অণু এর ছবি
মূর্তালা রামাত এর ছবি

চলুক

মূর্তালা রামাত

নীল আকাশ এর ছবি

চলুক

মূর্তালা রামাত এর ছবি

চলুক

মূর্তালা রামাত

সত্যপীর এর ছবি

ঠিক আছে চলুক

..................................................................
#Banshibir.

মূর্তালা রামাত এর ছবি

চলুক

মূর্তালা রামাত

অনিকেত এর ছবি

লেখাটা ভেতর বাহির দগ্ধ করে দিয়ে গেল--

মূর্তালা রামাত এর ছবি

লেখাটা আপনাকে টাচ করতে পেরেছে জেনে নিজেকে স্বার্থক মনে হচ্ছে।

মূর্তালা রামাত

মণিকা রশিদ এর ছবি

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-11-27/news/308674

এইটা দেখেন! মন খারাপ

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

মূর্তালা রামাত এর ছবি

তাহার বক্তব্যে বরাবর হাসি।আাবরও হাসলাম।

মূর্তালা রামাত

অতিথি লেখক এর ছবি

অলরেডি নাশকতা তত্ত্ব হাজির এবং ব্যাবসায়ী সম্প্রদায় সিনে হাজির বন্ধুকে উদ্ধার করার জন্য।

লেখা এককথায় সুপার্ব!

ফারাসাত

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

রসগোল্লা এর ছবি

অসাধারণ চলুক

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

বুদ্ধুজীবি এর ছবি

:'(

তবে অপূর্ব লেখা চলুক

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

rashed এর ছবি

অসাধারণ

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

guest_writter এর ছবি

চলুক

দীপাবলি।

রংতুলি এর ছবি

জীবন্ত গল্প একটা! চলুক মন খারাপ

হীরা এর ছবি

এই গুলিই এখন আমাদের দেশের কতিপয় হাই-প্রোফাইলড নাগরিকদের প্র্যাকটিস্। মাহমুদ হাসান জটিল কিছিমের মানুষ। আর আপনেও কম না(লিখার সিকুয়্যেনস্ হেব্বী হয়েছে)। পইড়া টেস্ট পাইলাম। চলুক

নীড় সন্ধানী এর ছবি

লাশের সংখ্যা নিয়ে মিডিয়ার একটা খেলা গত দুদিন ধরে খেয়াল করছি। গল্পের চেয়ে বাস্তব অনেক বেশী অদ্ভুত আর ভয়াবহ হতে পারে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ধুসর জলছবি এর ছবি

চলুক চলুক মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু

তামান্না ঝুমু এর ছবি

বাংলাদেশের হত দরিদ্র খেটেখাওয়া মানুশগুলি যেন মাছিমশার চেয়েও মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। এরা পুড়ে কয়লা হলেই কী, ঝলসে বারবিকিউ হলেই কী? বাস্তবতা রূপকথাকেও হার মানায়।
তামান্না ঝুমু

বাপ্পীহায়াত এর ছবি

চলুক

বান্ধবী এর ছবি

কোন সুখের পেছনে ছুটতে ছুটতে কিছু মানুষ অমানুষ হয়ে যায় – মাঝে মাঝে চিন্তা করার চেষ্টা করি। কিন্তু ভেবে বের করতে পারি না।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা সাধারণ মানুষ চরম অসহায়; আমাদেরকে নিয়ে যেমন ইচ্ছা তেমন খেলা হচ্ছে । প্রতিবাদ করার কেউ নাই, রক্ষা করার কেউ নাই। মাঝে মাঝে প্রচণ্ড ক্রোধ জাগে কিন্তু সেটা প্রকাশ করারও কোন উপায় নাই। সেটার খানিকটা প্রকাশ এখানে পেলাম । লেখাটা খুব ভালো লাগেছে ।

রনি আতিক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।