মায়া দিয়ে লেখা

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: রবি, ১৩/০১/২০০৮ - ৪:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনন্তের দিক থেকে যাত্রা শুরু করে ফের ক্রমশ অনন্তে
চলে যাওয়ার মধ্যিখানে কেবল মায়াই সত্য

শৈশব ফেলে কৈশোরে যাই, মায়া থাকে
কৈশোর ফেলে প্রৌঢ়ত্বে, মায়া
প্রৌঢ়ত্ব থেকে বার্ধক্যে, সেখানেও মায়া
মায়াজন্ম এ জগতে অবিরাম ঘটেই চলেছে

সংসার ভেঙে যায়, থাকে মায়া
সম্পর্কে ফাটল ধরে, ভেঙে যায়, মায়া রয়ে যায়
স্বজন হারাই, মায়া এসে সামনে দাঁড়ায়

গ্রাম ছেড়ে আমরা শহরে আসি
মায়া পড়ে থাকে
ফের শহর বদল করি
মায়া সঙ্গে আসে

মায়া ঘুমে, মায়া তন্দ্রাচ্ছন্নতায়
মায়া সর্বত্র ছড়ানো
মায়ায় মায়ায় ভরা এ জগৎ

মায়াই আঁঠার মতো লেগে থেকে
এ জগৎ অখণ্ড রেখেছে
...................................................................
মায়া (মায়াবাদ বা মায়াসভ্যতা অর্থে নয়, মমতা অর্থে) বিষয়ে একটা ছবি খুঁজলাম কবিতাটার সঙ্গে যুক্ত করবার জন্য। কিন্তু সুবিধা করতে পারলাম না। শেষে ছবি ছাড়াই পোস্টালাম। ইংরেজিতে মমতা অর্থে মায়া শব্দটার অর্থ করা হয় affection, attachment, fascination, infatuation, compassion ইত্যাদি। কিন্তু এর একটিও মায়ার বিকল্প হতে পারে না।

এই শব্দগুলো দিয়ে চাইলে গুগলে ছবি যা আসে তার প্রায় সবই শরীরের সঙ্গে শরীরের টান বা এ জাতীয় কিছু বুঝাতে চায়। ভূমির প্রতি, গাছের প্রতি, বয়সের প্রতি, সময়ের প্রতি... মানুষের বা অন্য কোনো প্রাণীর যে টান তার সবটাকে উপরোল্লিখিত কোনো ইংরেজি শব্দ দিয়েই ঠিকঠাক ধরা যায় না, ছবির কালেকশনও তাই বলছে। এসব ঘটনা বাংলা শব্দের অর্থ ধারণ ক্ষমতার পরিধির বিশালত্ব বিষয়ে আমার ধারণাকে দিন দিন আরো পোক্ত করে দিচ্ছে, আকর্ষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে কলিম খানীয় ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধির প্রতি।


মন্তব্য

ধূপছায়া এর ছবি

...বাংলা শব্দের অর্থ ধারণ ক্ষমতার পরিধির বিশালত্ব বিষয়ে আমার ধারণাকে দিন দিন আরো পোক্ত করে দিচ্ছে, আকর্ষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে কলিম খানীয় ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধির প্রতি।
..সত্যিকারের উপলব্ধি।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

বাংলা শব্দের অর্থ ধারণ ক্ষমতার পরিধির বিশালত্ব

কথাটা বলতে বাঙলা ভাষার প্রতি তোমন কোনও মায়া না থাকলেও চলে, কথাটা উপলব্ধি করারও ব্যাপার মনে হয়।

কবিতা নিয়ে মন্তব্য করার মতো সাহস কর‌্যি না, পড়তে ভালো লাগলো, এটা বলতে লিখলাম।

কলিম খানীয় ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধির

উদাহরণ?

মুজিব মেহদী এর ছবি

কথাটা বলতে বাঙলা ভাষার প্রতি তোমন কোনও মায়া না থাকলেও চলে, কথাটা উপলব্ধি করারও ব্যাপার মনে হয়।

প্রধানত উপলব্ধি করারই ব্যাপার এটা। আর মায়া না থাকলে আত্যন্তিক উপলব্ধি আসে কি?

কলিম খান দেখিয়েছেন, বাংলাভাষা শুরু থেকেই ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি দ্বারা শাসিত ছিল। সংস্কৃতও তাই। তিনি বলছেন, 'শব্দের এইপ্রকার অর্থ কারও স্বকপোলকল্পিত নয়, শব্দটির ভিতরেই তা পাওয়া যায়। যে সকল বর্ণকে নিয়ে শব্দটি গড়ে উঠেছে, তারাই ঐরূপ অর্থ ধারণ করে রেখেছে। যেমন 'শাস্ত্র' শব্দের অর্থ শাসনসাধন, অর্থাৎ যার দ্বারা শাসন করবার কাজটি সাধন করা যায়।' শাস্ত্র শব্দটির বুৎপত্তিতেই এ অর্থটি নিহিত আছে। (মূলের চিহ্নটা দেয়া গেল না)শাস্+ত্র (ষ্ট্রন্)ণ। 'শাস্' ক্রিয়াটি এ শব্দের অর্থের জননী।...'শব্দ থেকে অর্থ নিষ্কাশনের এই বিধি অতি প্রাচীন এবং ভারত যখন এই বিধি প্রয়োগ করতে শুরু করেছিল ইউরোপ তখনো nomad race।...ইংরেজি গ্রিক জার্মানি ইত্যাদি কোনও ভাষাই এরূপ ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থিবিধির দ্বারা শাসিত নয়।' তিনি দেখিয়েছেন, সারা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যেসব ভাষা, সেসব ভাষার শব্দের মানে কনভেনশনাল, অ্যাকসিডেন্টাল, প্রতীকী। এসব ভাষার শব্দের মানে আরোপিত।

কলিম খান কর্তৃক অনুসন্ধানকৃত এই বিধি দ্বারা দেখলে ভারতের প্রাচীন শাস্ত্রসমূহের নতুন নতুন উজ্জ্বল মানে সামনে এসে দাঁড়ায়। এখনো এভাবে অর্থ করে সব ভাষাতাত্ত্বিক প্রাচীন শাস্ত্রকে দেখছেন না বা দেখাচ্ছেন না, কলিম খানই প্রায় একা একের পর এক নমুনা পাঠ হাজির করে যাচ্ছেন।
আমাদের ওই জানালা দিয়ে তাকাবার সময় এসেছে।
..................................................................................
শোনো, বীণা আমি বাজাইনি প্রতিবারই নিজে, এমনও হয়েছে
বীণায় রেখেছি হাত, নিজেই উঠেছে বীণা বেজে!

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সুমন চৌধুরী এর ছবি

মায়া কেবল মায়া রহিয়া গেল.......................



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার অনুরনণ
মায়াই জড়িয়ে থাকি ,ভুল সর্বক্ষণ ।।।।।
---- ফকির ইলিয়াস

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কুরুক্ষেত্রে অর্জুন একবার বিচলিত হয়ে দেখল, সবই তার পরিজন_যাদের বিরুদ্ধে সে লড়ছে। তার মায়া হলো। সে আর হত্যায় মাততে চাইল না। তখন কৃষ্ণ তাকে বললেন, ‌'তুমি যা দেখছ সব মায়া। তুমি ওদের কী মারবে! আমি ঈশ্বর আমি তো ওদের আগেই মেরে রেখেছি'।
এভাবে অর্জুনের মায়া আর কৃষ্ণের মায়া পৃথক থেকে কাটাকুটি করে বিভ্রান্তি আনলো। এই ভ্রান্তিকেও মায়া বলে। বলে না যে, ‌'মায়ার বশ', মায়াজাল, মায়া হরিণ। অর্জুন পরিজনের প্রতি মায়ার টান ছিঁড়ে কৃষ্ণের মায়ার জালে ধরা পড়ল।
একসময় মায়াকে চালিকা কারণ ভেবে কুণ্ঠিত হয়েছিলাম। ব্যাপারটার সঙ্গে আধুনিকতা ও যুক্তিবাদ যায় না ভেবে। কিন্তু মায়া যে তবুও টানে!
সেই যে, কমলকুমার মজুমদার লিখেছিলেন, ‌'তবুও কোথায় যেন মায়া রহিয়া গেল।'
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।