বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ১ : এ হমিজ টু দ্য রেইন গডস

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/০৫/২০০৮ - ১০:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বর্ষা মাথায় নিয়ে পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার সঙ্গে লাইভ পারফর্মেন্সে ইউকের পাম্পরুমে থাকতে পারা, এক অসাধারণ আবেগ জাগানিয়া ঘটনা। সাক্ষাতের শুরুতেই ত্রিশ মিনিট ধরে সনতুরে তিনি বর্ষা আবাহন করেন, পরের বিশ মিনিট ধরে বর্ষাস্তুতি এবং সবশেষে বর্ষানামা আরো বিশ মিনিট ব্যাপে। কল্পনায় হলেও এই শেয়ারযোগ্য অনুভূতিমালার ভার সতত চালিত হতে থাকে সাঁইজির ওই জগৎজিজ্ঞাসার দিকে যে, 'কে গো জানতে পায় রসের রসিক না হলে ?' যেকোনো নিষ্ঠ মেঘমল্লারেই আদপে গুঁড়িয়ে যেতে হয়। কেননা তখন 'পররূপে কাতরতা জাগে মৃদু-মৃদু'। ফোঁটায় ফোঁটায় কোটিধা বিভক্ত হয়ে যাওয়া নিজঅস্তিত্ব জানান দিতে তখন প্রিয়ার সন্ধানে ব্যাপৃত হয়ে যায় মন ও মানস। ওদিকে আকাশের সজলতা কী বাতাসের খ্যাপা প্রবণতা এসে ঘাঁই মারতে থাকে উড্ডয়নরত 'খাঁচা'রূপী ইনফ্রাস্ট্রাকচারে। তখন মাসুদ খানের মতো অনুভূতি হয়। মনে হয় 'বর্ষাই মূল পাঠ্যকৃতি, মূল আখ্যানপাত্র/ আর সব ঋতু পাঠসহায়িকা/ টীকা-টিপ্পনীমাত্র।'

পাম্পরুম থেকে বেরিয়ে ভিজতে ভিজতে আমরা লবণাক্ত ও বিস্বাদ সমুদ্রের দিকে হাঁটতে থাকি। লোনাবৃষ্টিতে সঙ্গীর কৃষ্ণকুন্তলঝাড়ের দিকে এগিয়ে যাই। চোখমুখকান ঢেকে যায় কৃষ্ণ আশীষে। এরপর চোখ বুজে মনের মাপে ভিতরদৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে যাই টিলা-ট্যাঙ্গর, নদী-হ্রদ পেরিয়ে। ক্রমে আনুপূর্ব ঘেমে উঠি। উবু হয়ে বসে পড়ি মোহনার কাছে, সমস্ত লবণ যেখান থেকে পরিবাহিত হয় বন্দরে বন্দরে। ওই বৃষ্টিশীলতার ভিতরে যে উষ্ণ-নুনতা স্বাদ থাকে, কখনো কখনো তা সুমিষ্ট ও সুপেয়ও বটে, আগে তা একদমই জানা ছিল না। নবজ্ঞানের ওই ভারে সৈকতের ভেজা বালিতে আমরা পরস্পর লীন হতে থাকি। সূচনার বৈতালিক লীনগতি ক্রমশ একতাল তিনতাল হয়ে খেমটায় এসে ঠেকে। উত্তরসমুদ্রের ঝাউগাছের ওপারে তখন ধ্বনিত হতে থাকে পণ্ডিত যশোরাজের সুমিষ্ট স্বর 'বরষা ঋতু আয়...ঋতু আয়...'। আর সিমুলটেনিয়াসলি পূর্বপ্রান্তের পাথরগুচ্ছের ধার ঘেঁষে সাজানো হার্ডড্রিঙ্কসের দোকানিরা অজয় চক্রবর্তীর কণ্ঠে কাউন্টার দিচ্ছিল 'মেঘমেদুর বরিষায়...' বাজিয়ে। এককেন্দ্রীক অথচ দ্বিমুখী এহেন সুরে বুঁদ বজ্রধর ইন্দ্র স্বীয় পুরীতে বসে তার সহস্রমুখী বজ্রাস্ত্র পৈথানে রেখে নেপথ্যে তখন অনবরত তাল ঠুকে যেতে থাকেন। সুরতালের মহামূর্ছনাজনিত ওই দূষণমধ্যে আমরা তখন লবণজলে পা ভিজানোকে গৌণ ঠাউরিয়ে আকাশঢালা জলের কাছে এমনকি গায়ের টুকরো বস্ত্রতক সঁপে দিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে যাই।


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনাকে হিংসা হতো যদি আমারও ঐ দুজনের লাইভ পারফর্ম্যান্স দেখার সৌভাগ্য না থাকতো হাসি তবে এটা ঠিক, সেটা এমন বর্ষণমুখর দিনে ছিলো না - অতএব আপনার হোমেজ জাস্টিফাইড !

মুজিব মেহদী এর ছবি

আমাকে হিংসে করবেন কী, আপনাকেই তো এখন হিংসে হচ্ছে আমার। কারণ সত্যি সত্যি আপনি ওই পারফর্মেন্স দেখেছেন। আমি কল্পনা করে আপনার অভিজ্ঞতাটাই হয়ত লিখতে চেয়েছিলাম!
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

শাহীন হাসান এর ছবি

একটা ভাল-লেখা পড়লাম। বর্ণনশৈলী চমত্ কার! ধন্যবাদ।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এইটা কল্পনা? কল্পনা এতদূর ছুঁতে পারে? জটিল... আমি ভাবছিলাম সত্যি বুঝি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।