জ্যাকসন পোলক আর ফ্র্যাকটাল ইম্প্রেশনিজম

অবনীল এর ছবি
লিখেছেন অবনীল (তারিখ: বুধ, ২০/০২/২০১৯ - ১০:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মনে করুন আপনি একজন চিত্রশিল্পী। যেমন তেমন শিল্পী না, চিত্রাঙ্কনের জটিল সব প্রক্রিয়া আপনার নখদর্পনে। যেকোন লোকের চেহারা বা যেকোন জিনিস হুবহু এঁকে ফেলা আপনার কাছে কোন ব্যাপারই না। রং, আলো-ছায়ার ব্যবহার, দর্শানুপাত, গঠনপ্রকৃতি, মাধ্যম এসব আপনি গুলে খেয়েছেন। যে যেটাই আপনার কাছে এঁকে দেবার আবদার করুক না কেন, আপনি এঁকে ফেলতে পারেন। এখন ভাবুন আপনি এমন একটা ছবি আকতে চান যাতে কোন "কিছু"-র উপস্থিতি থাকবে না। ধরা যাক, আপনার উদ্দেশ্য দর্শকের কাছে আপনি আপনার গতিপ্রকৃতি, আপনার চলাফেরা, স্থানপরিবর্তনের যে গতিধারা তা তুলে ধরতে চান। কিন্তু কোন ধরনের গতিশীল কিছু বা স্থানান্তর বিষয়ক কোন ঘটনা চিত্রায়িত না করেই আপনি তা করতে চান। কোন কিছু থাকা মানেই কিন্তু সেটা আপনার উদ্দেশ্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়ে হবে। কারণ তাতে কোন ঘটনা বা বস্তুর সাপেক্ষে সেই গতিধারার বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। যেটাকে আপনি উপস্থাপনের মূল বিষয় করতে যাচ্ছেন তা হয়ে যাচ্ছে আরেক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। আপনি শুধুমাত্র সেই গতিপ্রকৃতিকেই চিত্রবন্দি করতে চান। কিভাবে করবেন?
small
ছবিঃ সিগারেটমুখে ক্ষরণচিত্র এঁকে চলেছেন পোলক। পোলকপ্রেমীর কাছে এক পরিচিত দৃশ্য।

জ্যাকসন পোলক আর তার ক্ষরণচিত্র বা গতিচিত্র (drip painting / action painting), যে অভিধা-ই দেওয়া হোক না কেন, বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদ অন্দোলনের একটা উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। যে আন্দোলনের লক্ষ্য ছিলো এমন সৃজনশীল শিল্প সৃষ্টি করা যা গতানুগতিক ব্যাখ্যার বাইরে বিচরন করে। একজন বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদী চায় না আপনি তার কোন এক সৃষ্টি দেখে বলে ওঠেন, " ও, এটা ত একটা অমুক।" কোন শব্দ দ্বারা তার শিল্পকে বোঝা সম্ভব নয়। শুধু দৃষ্টিক্ষেপণের মাধ্যমেই তা উপলব্ধি করা সম্ভব। অন্যভাবে বলতে গেলে, চিত্রটাই একটা "কিছু", সেটা কোনকিছুর চিত্র নয়। বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদ এর ধারণাগুলো সেই সময়কার মনঃসমীক্ষন সংক্ক্রান্ত ধারণা থেকে প্রসূত - ইড, ইগো আর অবচেতন সংক্ক্রান্ত যাবতীয় ধারনা যার অন্তর্ভুক্ত। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সিগমুন্ড ফ্রয়েড আর কার্ল ইয়ুং ছিলেন সাংঘাতিক জনপ্রিয়। শিল্পীরা তখন বলতে শুরু করলো, শিল্প যদি অবচেতনে প্রবেশ করতে পারে, তাহলে সেটাই সতন্ত্র পরিচয় পেতে পারে। যখনই আপনি শব্দ ব্যবহার করছেন চিত্রটিকে ব্যাখ্যা করতে বা কোন বস্তু ব্যবহার করছেন তখন আপনি সেটাকে সচেতন স্তরে তুলে আনছেন। যদি আপনি অবচেতন বা ইড-কে নাড়া দিতে চান, তাহলে আপনাকে চিরাচরিত চিত্রায়নের ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এই ধারনা থেকেই এইসব বিচিত্র রঙের বিশাল সব ক্যানভাসের উৎপত্তি। এসব চিত্রকলা কোন "বিষয়"-এর উপর ভিত্তি করে আঁকা না। এদের একমাত্র ব্যাখ্যা হলো, এদের দিকে তাকালে আপনার ভিতর যে অনুভূতির সৃষ্টি হয়, সেইটাই।

small
ছবিঃ নাম্বার ১। সময়কালঃ ১৯৪৮।

জ্যাকসন পোলকের উদ্দেশ্য ছিলো তার চলমান গতিধারার অনুভূতি দর্শক ভেতরে সঞ্চার করা। রং, বিন্যাস, স্তর, তার মধ্যে ঠেসে দেওয়া সিগারেটের বাঁট, তার রেখে যাওয়া ক্যানভাসগুলোয় গতিময়তার আর পারিপার্শিক অবস্থার অনূভূতি প্রকাশ করে কোন কিছুর চিত্রায়ন না করেই। কেউই কোন শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে আপনাকে তার বর্ণনা দিতে পারবে না। এমনকি পোলকের চিত্রাঙ্কনের সময় তোলা ফটোগ্রাফি থেকেও এই ক্যানভাসগুলোর সত্যিকার ভাবার্থ খুঁজে বের করা যায়না। তার বিশালাকার ক্ষরনচিত্রকর্মের সামনে দাড়ালে মনে হয় যেন শুনতে পাচ্ছি কি গান শুনতে শুনতে রঙের মহাযজ্ঞ সাধন করছিলেন তিনি, নাকে ভেসে আসে ক্যানভাসে সদ্য লেপা রঙের গন্ধ আর সিগারেটের ঘ্রাণ, তিনি এঁকে চলেছেন আর তার জুতোর উপর ছিটিয়ে পড়ছে রঙ আর ছাই বিশ্রিরকমভাবে। এসবি চোখের সামনে ধরাছোয়ার মধ্যে - কিন্তু এক নিজস্য ভংগিমায় ক্যানভাসবন্দি। যেটা শুধু একমাত্র দেখেই উপলব্ধি করা সম্ভব। এটা শুধু কোন ছবি না। কোন কিছুর চিত্রায়নের সাপেক্ষে ব্যাখ্যা না । চিন্তা করুন যে এটা কতটা বৈপ্লবিক যে তিনি রঙ আর ক্যানভাসের সাহায্যে সময়, স্থান আর গতির অনূভূতি প্রকাশ করছেন, কিন্তু কোন কিছুর ছবি না একেই! ক্যানভাসে যেটা অস্তিত্বলাভ করেছে সেটা নিজেই একটা অনন্য "কিছু"। এরকম আর একটা কিছুর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না যেটা একইরকম অনূভূতি সঞ্চার করতে পারে - এটাকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। এমনকি দ্বিতীয়বার যখন দেখবেন হয়ত আপনি পুরোপুরি ভিন্নভাবে সেটাকে অবলোকন করবেন। কোন শব্দগুচ্ছ দিয়ে এর অর্থ তৈরী করা কখনোই সম্ভব ন্য। এটা সৃষ্টিই করা হয়েছিল সেই প্রত্যাশাকে পরাজিত করার জন্য। শুরুতে যেরকম বলেছিলাম, সেভাবে নিজেকে যদি এতক্ষন একজন শিল্পী হিসেবে কল্পনা করে থাকেন, তাহলে এখন কল্পনা করুন কোনকিছুর চিত্রায়ন ছাড়া কোন চিত্রকর্ম, যা ভাষার দ্বারা ব্যাখ্যার অতীত, কিন্তু তারপরো স্বীয় অর্থ নিয়ে বিরাজমান, এরকম কোন শিল্প সৃষ্টি কতটা কঠিন।

small
ছবিঃ ফুল ফ্যাদম ফাইভ। সময়কালঃ ১৯৪৭।

১৯৯৯ সালে নেচারে প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়, কম্পিউটারের সাহায্য বিশ্লেষন করে দেখা গেছে পোলকের আঁকা চিত্রাঙ্কনপ্রকৃতির বৈশিষ্টের সাথে প্রকৃতিতে বিদ্যমান ফ্র্যাকটালের বৈশিষ্টের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ফ্র্যাকটাল জ্যামিতিক প্যাটার্নের ধর্ম হলো এর প্রতিটা অংশ এর সামগ্রিক পরিসংখ্যানগত যে বৈশিষ্ট্য তা ধারন করে। যেমন-ফার্ন গাছের পাতা, ব্রকলির প্যাচানো গঠনের পূনরাব্ব্রিত্তি । এই বিশ্লেষন থেকে আন্দাজ করা যায় পোলকের চিত্রাঙ্কনপ্রকৃতি ফ্র্যাকটাল । প্রকৃতির ছায়া এতে বিদ্যমান । এইজন্যেই অনেক শিল্পবোদ্ধা তার আকা চিত্রকে "জৈবিক" বলে বৈশিষ্টায়ন করেছেন। কম্পিউটার বা গানিতিকভাবে সৃষ্ট ফ্র্যাকটাল প্যাটার্ন থেকে শিল্পীদের সৃষ্ট ফ্র্যাক্টাল শিল্প কে আলাদা করার জন্য তাদেকে ফ্র্যাকটাল এক্সপ্রেশনিজম বলে অভিহিত করা হয়। ফ্র্যাকটাল এক্সপ্রেশনিজম আবার ফ্র্যাকটাল সাবলীলতার (fractal fluency) সাথে সম্পর্কিত। ফ্র্যাকটাল সাবলীলতা নিউরোবিজ্ঞানের একটা ধারনা যেটাতে বলা হয়, প্রকৃতিতে বিদ্যমান ফ্র্যাকটাল দৃশাবলীতে অভিযোজিত হওয়ার কারনে মানুষের মস্তিষ্কের দৃশ্য প্রক্রিয়াকরন অংশটি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ফ্র্যাকটাল দৃশাবলী প্রক্রিয়া করতে পারে। এই অভিযোজন বেশ কয়েকটা পর্যায়ে আমাদের ভিজুয়াল সিস্টেমে ঘটে থাকে, চোখের নাড়াচাড়া থেকে মস্তিষ্কের কোন অংশ কার্যকর হয় এসবকিছুর সাথে। ফ্র্যাকটাল সাবলীলতা দর্শককে এমন একটা মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গায় নিয়ে যায় যেটা মানস্পটে নান্দনিক অভিজ্ঞতা প্রদান করে। নিউরোবিজ্ঞানের পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে পোলকের চিত্রাঙ্কনগুলো পর্যবেক্ষকের মানসপটে একিরকম ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যে প্রতিক্রিয়া প্রাকৃতিক বা গাণিতিক ফ্র্যাকটাল অবলোকনের সময় ঘটে থেকে। সহজাতভাবেই, কোনরকম সচেতন প্রচেষ্টা ছাড়া জ্যাকসন পোলক বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত ফ্র্যাক্টাল সৃষ্টি করতেন যেগুলো তার বয়বৃদ্ধির সাথে হতে থাকে জটিল থেকে জটিলতর। এ এক ভয়ংকর রকম সৃজনশীল প্রতিভার দৃষ্টান্ত ছাড়া আর কি হতে পারে?
small
ছবিঃ লুসিফার । সময়কালঃ ১৯৪৭।

গণিতবিদ্গণও নিউরোবিজ্ঞানীদের সাথে সহমত পোষন করে বলেছেন, ফ্র্যকটালের উপস্থিতির জন্যই মানুষের কাছে পোলকের কাজগুলো এত দৃষ্টিনন্দন বলে মনে হয়। যেসব গবেষকরা পোলকের ক্ষরণচিত্র -এর উপর গবেষনা করেছেন তাদের কাছে ব্যাপারটা একইসাথে রহস্যমন্ডিত এবং আনন্দদায়ক যে তার সৃষ্টির মধ্যে ফ্র্যাকটাল বিরাজমান। তুলোর বাজারে দরপতনের উপর গবেষনা থেকে বেনোয়া ম্যান্ডলব্রত ১৯৭৫ সালে ফ্র্যাকটালের ধারনা আবিস্কার করার বহু দশক আগেই তিনি তা ক্যানভাসবন্দী করে চলেছিলেন। আইনেস্টাইনের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে - "জ্ঞানের থেকে কল্পনা বেশী গুরুত্বপূর্ন"। জ্যাকসন পোলকের সৃজনশীল প্রতিভা দেখে বলতে হয়, কথাটা আইনেস্টাইন মনে হয় ভুল বলেননি ।
small
ছবিঃ নিউইয়র্ক মিউজিয়াম অভ মডার্ন আর্ট ২০১৭। পোলকের "ওয়ানঃ নাম্বার ৩১" (১৯৫০) এর সামনে।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

ফ্র্যাক্টালের বাংলা এক জায়গায় দেখলাম প্রস্তাব করা হয়েছে "খণ্ডিল"।

অবনীল এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই। আমি আসলে একেবারে প্রচলিত পরিভাষা না হলে বাংলা উচ্চারন ব্যবহারের পক্ষপাতি । পাঠক বোধগম্যতা আমার কাছে মূখ্য। বাংলা বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠ্যবই পড়ে হোঁচট খেতে খেতে এই উপলব্ধি। হাসি

লেখা কেমন হয়েছে সেটা তো বললেন না। হাসি

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

হিমু এর ছবি

লেখা ভালো হয়েছে।

আপনার পক্ষপাতে হাত দিতে চাই না, কিন্তু আপনি যে বললেন,

একেবারে প্রচলিত পরিভাষা না হলে বাংলা উচ্চারন ব্যবহারের পক্ষপাতি

এখানে একটা স্ববিরোধ আছে। ধরুন, ফ্র্যাক্টাল শব্দটা ফরাসি হয়ে ইংরেজিতে এসেছে ১৯৭৭ সালে। আজ ২০১৯ সাল, মানে ৪২ বছর চলে গেছে, কেউ এটার বাংলা করার চেষ্টা করেননি। প্রথম যে চেষ্টাটা হলো, সেটা "একেবারে প্রচলিত" হওয়ার কোনো উপায়ই নেই। প্রচলিত কখন হবে? যখন আপনি বা আমি বা দবির বা কবির সেটা ব্যবহার করবেন। এটা অনেকটা সদ্যস্নাতক চাকরিপ্রার্থীর কাছে চল্লিশ/একশো/চারশো বছরের পূর্ব-অভিজ্ঞতা চাওয়ার মতো একটা ব্যাপার হয়ে যায়।

পাঠকের বোধগম্যতার জন্যে আপনি লেখার নিচে একটা ছোটো নির্ঘণ্ট জুড়ে দিতে পারেন। সচলায়তনে আপনার লেখার পাঠকরা যেমন চমৎকার সব নতুন বিষয় নিয়ে জানতে পারবেন, তেমনই নতুন শব্দের সাথেও পরিচিত হতে পারবেন। সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্কও হবে, এভাবে আমাদের ভাষায় শব্দের ঝুলি ভারি হবে। আমরা সবাই যদি গোঁ ধরে বসে থাকি যে অন্য লোকে খেটেখুটে একটা শব্দ আমাদের জন্যে প্রচলিত করে দেবে, তারপর আমরা সেটা ব্যবহার করবো, তাহলে আমরা শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে আমরা সবাই বাংলা হরফে ইংরেজি লিখে যাচ্ছি।

সবশেষে, আপনার শব্দচয়ন একান্ত আপনারই সিদ্ধান্ত। আমি ওপরের কথাগুলো জনে জনে বলি, আপনাকেও বললাম।

অবনীল এর ছবি

আপনার কথায় যুক্তি আছে। এবং এই পরিকল্পনা অনেক ব্যাপক এবং এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমি চেষ্টা করতে পারি একটা দুটো নতুন শব্দ একটা লেখায় যোগ করতে। এর থেকে বেশী করলে পাঠক নিরুৎসাহিত হতে পারে।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

হিমু এর ছবি

তাহলে সেটাই সই।

পাঠক হিসেবে আমার অনুরোধ, আপনি নির্ঘণ্টে শুরুতে তিনটি নতুন বাংলা শব্দ (আপনার উদ্ভাবিত বা সংগৃহীত) রাখুন। গুরুত্ব, প্রাচুর্য বা অন্য কোনো মানদণ্ডের বিচারে এ তিনটিকে বেছে নিতে পারেন (এ লেখায় যেমন ফ্র্যাক্টাল, ইমপ্রেশনিজম আর ড্রিপ/অ্যাকশন পেইন্টিং কেন্দ্রে)। সময়ের সাথে আপনি নিজ অভিলাষে এ শব্দসংখ্যা বাড়াতেও পারেন।

অবনীল এর ছবি

আচ্ছা ঠিক আছে । এর পরের লেখায় ব্যাপারটা মাথায় রাখবো। এই লেখায় ফ্র্যাকটাল ফ্লুয়েন্সি, ড্রিপ আর একশান পেইন্টিং এর জন্য নিজস্ব অনুবাদ ব্যবহার করেছি। এর থেকে বেশী বাংলা পরিভাষা প্রয়োগ করতে চাচ্ছি না। আপনাকে ধন্যবাদ।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ফ্র‍্যাক্টাল নিয়ে আধখানা লেখা বহুদিন সিন্দুকে তুলে রেখেছি। সেটাকে নামিয়ে ঝেড়েপুঁছে নতুন রঙ চড়াবার আগে খণ্ডিল ব্যবহার করব। ফ্র‍্যাক্টাল সম্পর্কিত আলোচনায় আরো প্রচুর তাত্ত্বিক শব্দের আনাগোনা আছে। অনাগত সেই পোস্টের মন্তব্যে কি সেই সংক্রান্ত আলাপ চলতে পারে?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

অবশ‍্যই।

অবনীল এর ছবি

দারুণ ভাই সাক্ষী সত্যানন্দ ! আপনার লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম । এই লেখাটা কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না । হাসি

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ছবিগুলো চমৎকার!

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

তেলাপোকা রংয়ে চুবিয়ে ছেড়ে দিলেও অবশ্য চলত। ড্রিপ পেইন্টিং না বলে তাকে ক্রিপ পেইন্টিং বলা যেতো। হো হো হো

অবনীল এর ছবি

হাহা । চরম উদাসকে মিস করি । কতদিন উনার লেখা দেখি না। সময় করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ মাহবুব ভাই।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বাংলায় 'হিজিবিজি' আঁকা/লেখা'কে কাগের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং বলার প্রচলন আছে। নেতিবাচক অর্থেই। পোলকের ছবি দেখেও হয়ত কেউ কেউ একে কাগের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং বলবে। কৌতুক করে নয়, বাস্তবে। কিন্তু বস্তুত কাগের ঠ্যাং এবং বগের ঠ্যাংও দারুণ শৈল্পিক হতে পারে। অন্তত আমার মনে হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি শিল্পের বিচার করি 'ভালো লাগার' মাপকাঠিতে।

'কাগের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং' অনেক দেখি/দেখেছি (আসল পোলক দেখা হয়নি যদিও)। এসবের একটা বড় অংশে আমার পরিশ্রমের ছাপ চোখে পড়েনা। দায়সারা লাগে। যেন দর্শকের দায় সেখানে শিল্প খুঁজে নেয়ার, না পারলে সে দর্শকের সীমাবন্ধতা। রাজার অদৃশ্য হীরেজহরতের পোষাকের মতো, যেটা কেবল জ্ঞানীরাই দেখতে পাবে! পোলকের কাজে পরিশ্রমের, মগ্নতার, যত্নের ছাপ চোখে পড়ে আমার। সেইজন্য মুগ্ধতা তৈরি হয়। যদিও সেখানে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা থেকে শিল্প ভালো লাগার মতো অযৌক্তিক পক্ষপাত থাকে!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অবনীল এর ছবি

পোলকের কাজে পরিশ্রমের, মগ্নতার, যত্নের ছাপ চোখে পড়ে আমার। সেইজন্য মুগ্ধতা তৈরি হয়।

আপ্নার সাথে একমত। এছাড়াও ইংরেজীতে একোয়ারড টেস্ট বলে একটা কথা আছে। অনেক সময় শিল্প সম্বন্ধে জানতে জানতে ভালো লাগাটা তৈরী হয়। এজন্য যদি আমাদের দেশে বেশী বেশী শিল্প প্রদর্শনী এবং ব্যাপক প্রচার প্রসারের চর্চা থাক্তো তাহলে হয়ত মানুষের মনে সুক্ষ্ম নান্দনিক ব্যপারগুলো আর প্রস্ফুটিত হতো। একবার দৃক গ্যালারীতে পিকাসোর চিত্রকলা প্রদর্শনীর সময়ে একজনকে মন্তব্য করতে দেখেছি "এগুলো আসল তো? " । যেন আসল নকল বুঝতে না পারায় তিনি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারছেন না।
যাহোক, পোলকের চিত্রকর্মের ব্যাপারে বলি। মোমাতে ওর চিত্রকর্মের সামনে সোফা রাখা আছে। দেখি সবসময় সেখানে কিছু মানুষ চুপচাপ বসে আছে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ক্যানভাসের দিকে। এ ব্যাপারটা কেন ঘটে ? আমি বলতে পারি আমারো সেই দৃষ্টি না ফেরাতে পারার অনুভূতি হয়েছে। কিছু একটা ত আছেই এই আকিবুকির ভেতরে , না হলে এরকম লাগবে কেন ? আর গবেষকরা ত সেটা বের করেছেনই যেটা আলোচনা করেছি লেখায়।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শিল্পাচার্য তাঁর ছাত্রদের বলতেন, "রিয়ালিস্টিক ছবি আকো মিঞারা! রিয়ালিস্টিক আঁকা শিখলে পরে নিজেই ফর্ম ভাঙতে শিখবা"। ঢাকায় প্রদর্শনীতে দেখানো চিত্রকর্ম দেখে বেড়াচ্ছি বহুকাল ধরে। এই সময়ে দেখা শিল্পীদের মধ্যে শিল্পাচার্যের পরামর্শ না মানার প্রবণতা সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে বলে মনে হয়। শিল্পী গাছে না উঠতে এক কাঁদি ধরনের হলে তার আউটপুট কাগের ঠ্যাঙ বগের ঠ্যাঙই হবে।

প্রতীতিবাদী চিত্র কর্ম মূর্ত বা বিমূর্ত উভয় প্রকার হতে পারে। তবে বিমূর্ত হলেই তা যা খুশি তাই নয়। ফর্ম ভেঙে ভেঙে মূর্তকে বিমূর্ত করার কৌশল যারা আত্মস্থ করতে পেরেছেন তারাই সেটি করতে পারেন। আর দীর্ঘ সাধনায় শিল্পী যে জ্ঞান অর্জন করেছেন তার আউটপুট শিল্পজ্ঞানবিহীন দর্শক এক মুহূর্তে বুঝে ফেলবেন তা কি সম্ভব!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অবনীল এর ছবি

দীর্ঘ সাধনায় শিল্পী যে জ্ঞান অর্জন করেছেন তার আউটপুট শিল্পজ্ঞানবিহীন দর্শক এক মুহূর্তে বুঝে ফেলবেন তা কি সম্ভব!

হয়ত একেবারে শিল্পজ্ঞানহীন শিল্পরসহীন মানুষের পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। অনেকটা পপ গান শুনতে অভ্যস্ত মানুষের বাখ-মোজার্ট-শপিন প্রথম্বারের মত শুনতে গেলে যেমন হজম করাটা কঠিন হয়ে যায় । এইজন্যই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়তে আর্ট এপ্রিসিয়েশান-এর উপর কোর্স থাকে। কিভাবে শিল্পর রসাস্বাদন করতে হয় সেটাও একটা শেখার ব্যাপার বটে। সুর আর চিত্রকলার তুলনা করতে গিয়ে মনে পড়লো একজায়গায় পড়েছিলাম একজন পোলককে তুলনা করেছিলেন চিত্রশিল্পর জিমি হেন্ড্রিক্স হিসেবে। তুলনাটা দারুন লেগেছিলো আমার কাছে। পোলকের ফর্ম ভাঙার উদাহরন হিসেবে এই তুলনাটাই সেরা।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।