এক অফিসের হালচাল

কীর্তিনাশা এর ছবি
লিখেছেন কীর্তিনাশা (তারিখ: বিষ্যুদ, ২১/০৮/২০০৮ - ৬:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ম্যানেজার হালাকু খাঁ তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলেন - আবুল সাব! এই আবুল সাব!!
আবুল তার ডেস্কে বসে মনিটরের দিকে তাকিয়ে কিবোর্ডে আঙুল চালাচ্ছিল টুক টুক করে। আর মাঝে মাঝে আনমনে নাকের লোম ছিঁড়ছিল। ডাক শুনে সে 'জ্বি সার !' বলে তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। তারপর ছুট লাগালো হালাকু খাঁ'র রুমের দিকে। আবুলের সহকর্মীরা মনে মনে প্রমাদ গুনলো - আবুলের কাম সাড়ছে আজকেও।

রুমে ঢুকতেই হালাকু খাঁ তার ছোট ফ্রেমের চশমাটা নাকের ডগায় নামিয়ে, তার উপর দিয়ে আবুলের দিকে তাকালেন, কুঁতকুঁতে চোখে। তারপর বললেন - আবুল সাব, আপনে কি ইদানিং অফিসে কাজকাম কিছু করেন নাকি বইসা বইসা খালি বা...., মানে মাথার চুল ছিঁড়েন ?

আবুল আমতা আমতা করে নামতা পড়ার মতো বলল - না সার, আ-আপনার মতো বসের আন্ডারে থেকে কেউ কি ফাঁকি দিতে পাড়ে ?

হালাকু খাঁ : তাইলে এইটা কি তৈরি করছেন ? আপনের মাথা না আমার মাথা ?
আবুল : না সার মাথা হতে যাবে কেন? গত তিন দিন তিন রাত খেটে খুটে একশ পাতার এই প্রজেক্ট প্রোফাইলটা দাঁড় করিয়েছি। তিন দিন ধরে সার অফিসেই আছি, বাড়িতে যাই নাই।
হালাকু খাঁ : আগে কাজ তারপর বাড়ি। কাজ থাকলে বাড়ি যাইবেন কেন? কিন্তু সেইটা কথা না। কথা হইলো এইটা কোন প্রজেক্ট প্রোফাইল হয় নাই। এইটা একটা বুলশিট্ হইছে, বাংলায় যারে বলে বালছাল। (তারপর আবুলের দিকে এক তাড়া কাগজ ছুঁড়ে দিয়ে) নিয়া যান আপনার এই বালছাল । এইগুলারে টয়লেট পেপার হিসাবে ব্যাবহার করা ছাড়া আর কোন কাজে আইবো না। আর নতুন কইরা একটা আসল প্রজেক্ট প্রোফাইল নিয়া আসেন, বুঝছেন ?!
আবুল কাঁদো কাঁদো স্বরে : সার, গত তিন দিন একটানা কাজ করে এটা তৈরি করেছি। এখন যদি আবার নতুন করে করতে হয় তাহলে আবারো সেই রকম খাটনি দিতে হবে।
হালাকু খাঁ : দিতে হলে দিবেন। আপনের যা কাজ তা তো ঠিক মতো করতে হবে নাকি? আর যদি না পাড়েন বলেন, আমি নতুন লোক দেখি।
আবুল : (চাকরি হারাবার ভয়ে, ভিত স্বরে) না সার পাড়বো না কেন। অবশ্যই পাড়বো। কিন্তু এবার কিভাবে করবো তার যদি একটু গাইড লাইন দিতেন!
হালাকু খাঁ : কি কইলেন আমি গাইড লাইন দিবো! তাইলে তো আমিই এই কাম করবার পাড়ি। আপনেরে মাসে মাসে এত টাকা বেতন দেই কেন ! তাড়াতাড়ি গিয়া কাম শুরু করেন। দুই দিনের মধ্যে আমার প্রজেক্ট প্রোফাইল চাই।
আবুল : জ্বি আচ্ছা সার, ঠিক আছে।

আবুল ম্লান বদনে এসে নিজের ডেস্কে বসলো। অন্যরা তার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালেও কিছু বলল না। সবাই তটস্থ এবার কার সমন আসে। ওদিকে হালাকু খাঁ আবার চেঁচানো শুরু করেছেন - কুদ্দুস সাব ! এই কুদ্দুস সাব!

কুদ্দুস বসে আবুলের সামনের ডেস্কে সে লাফিয়ে উঠে ছুটলো - জ্বি সার, আসছি !!


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

হা হা !! সবখানেই চেইন রি-একশন।

=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

কীর্তিনাশা এর ছবি

একদম ঠিক।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

খাইছে, আমার আবার কখন ডাক পড়ে ।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

কীর্তিনাশা এর ছবি

খাইছে আপনেও কি এমন বসের আন্ডারে কাজ করেন নি? তাইলে তো মরছেন!!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

খাড়ার ওপর পাঁচ!

কীর্তিনাশা এর ছবি

ধন্যবাদ আমার তরফ থেকে। কিন্তু যারা এমন বসের আন্ডারে কাজ করে তাদের তরফ থেকে কিছু দিতে পাড়লাম না।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

কীর্তিনাশা এর ছবি

ইয়া হাবিবি!!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আহারে! মন খারাপ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমিও সমব্যাথি এইসব ক্রিতদাশদের প্রতি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍এমন বসের কর্মচারিদের নরকতূল্য ইহজীবনের কারণে পরকালে আল্লাহপাক তাদেরকে বেহেশতে স্থান না দিলে সেটা হবে চরম অবিচার চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

কীর্তিনাশা এর ছবি

সন্ন্যাসীজির সহিত সহমত ব্যাক্ত করিলাম।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।