প্রাণের মেলায় ৩

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: সোম, ০৭/০২/২০১১ - ১২:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত দুদিন ভীড়, আগামীকাল হরতাল, আজকে তাই মেলা একেবারেই শান্ত। লোকজন নেই বললেই চলে।

অনেকেই অভিযোগ করেন মেলায় যতো মানুষ যায়, বইয়ের ক্রেতা ততো না, এরা খালি ঘুরে ফিরে আড্ডা মারে প্রেম করে। প্রকৃত ক্রেতা কম। ভীড়ের চাপে প্রকৃত ক্রেতারা তাই সুযোগ পায় না। এই নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করে দেখি। বিদেশে বইমেলা নাকি একেবারেই শুধু ক্রেতাদের জন্য। টিকিট কেটে ঢুকতে হয়, বই দেখার জন্য শুধু, কেনাকিনি নাই। আমার মনে হয় ভালো লাগবে না।
আমার একুশে বইমেলাই ভালো লাগে। বইমেলাটা একটা উৎসব, লোকজন ঘুরতে আসছে, পরিবারের সবাই মিলে মাসে একদিন বইয়ের রাজ্যে আসছে ভালোই লাগে।

মানুষ মেলায় ঘুরতে যাবে, প্রেম করতে যাবে, সময় কাটাতে যাবে... আর এরই ফাঁকে হুট করে পছন্দ হয়ে গেলে বই কিনে ফেলবে একটা দুটো।
পরিবার নিয়ে মেলায় যাবে, বাচ্চারা আব্দার করবে একটা দুটো কেনার জন্য, কিনে দেবে। এটাই মেলা।
যুগলেরা যাবে, 'দেখ আমি কতো জ্ঞানী' ভাব নেবার জন্য প্রেমিক দুটো বই কিনে ফেলবে, এটাই বইমেলা। অথবা প্রেমিকাকে কিনে দেবে একটি কোনো বই... এটাই মেলা...
ভার্সিটির ক্লাসের অবসরে আইবিএ ক্যান্টিনে না গিয়ে বন্ধুরা দল বেঁধে মেলায় যাবে, আড্ডা মারতে মারতে কিনে ফেলবে একটা দুটো বই। এটাই মেলা। সেইসব আড্ডার মেয়েদের সঙ্গে টাঙ্কি মারতে যাবে অসহায় ছেলেদের গ্রুপ। তারাও মেয়েদের দেখিয়ে দেখিয়ে দুয়েকটা বই কিনে ফেলবে। এটাই মেলা।
হু.আ, ই.হ.মি, আ.হ... উনাদের চাঁদবদন দেখবে আর অটোগ্রাফ নেবার উছিলায় দুটো বই কিনবে... এটাই মেলা।
শুধু পণ্ডিত গোছের লোকজন গম্ভীর মুখে মেলায় যাবে আর বই কিনবে। কাগজ উল্টানোর খসখস ছাড়া আর কোনো শব্দ হবে না। এই মেলা হওনের চেয়ে না হওয়াই ভালো।

পাঠক তৈরি হয়ে মেলায় আসবে না। বইমেলা তৈরি করবে পাঠক। এটা আমি মনে করি। উল্টো মনে করি যারা রেগুলার বই কেনেন, তারা পড়ার তাগিদে এমনিতেই কিনবেন। সারাবছরই কিনবেন। তাদের বই কেনার জন্য মেলার দরকার নাই। মেলাটা হওয়া উচিত আমজনতার।
শুধু বইক্রেতা আর পাঠকদের জন্য বইয়ের দোকান আছে। মেলা হচ্ছে আমজনতার জন্য। এটাই সত্য।

এবার মেলায় ব্লগারদের বইও কম। গত দুইবার ব্লগারদের প্রচুর বইয়ের ভীড়ে এবার একটু কম।

অনেক বইয়েরই শেষ কপিটা কিনছি। এটা কাকতাল কী না বুঝতে পারছি না। আজকেও কিনলাম এরশাদের আত্মজীবনীমূলক একটা বই "সময়ের কথা এবং আত্মবিশ্লেষণ" এক হাজার কপি ছাপা হইছিলো, শেষ কপিটা আমি কিনলাম, তবে তারা আবার ছাপবে এই বই...
আর কিনলাম রশীদ করিমের উপন্যাস সমগ্র। তুলনামূলকভাবে দাম অনেক বেশিই কম।

আসলে একেবারেই নিরীহ বইমেলা গেলো আজকে। তবে মেলাটা ঘুরে দেখছি ভালো করেই। নিধির আজকে দুষ্ট বালিকার কান্ধে শওয়ার হইছিলো, আমি চামে মেলাটা আরাম করে খুঁটায়া খুঁটায়া দেখলাম। বই দেখলাম। মেলায় একটা চিলড্রেন্স কর্নার আছে। সেটা দেখলে কান্দা পায়। ছোটদের বই কতো সুন্দর হতে পারতো, কতো স্বপ্নে ভরা থাকতে পারতো... দুঃই লাগে।

যাহোক... আজকে ফাঁকী দেই। যাই, একটু তরল খেয়ে আসি... আজকে ছবিও তুলিনি তেমন। কালকে বিরাট পোস্ট আর অনেকগুলো ছবি দিমুনে...


নজরুল মঞ্চে নিধি


মেলায় একটা ইতথ্যকেন্দ্র চালু আছে। সেখানে বিশাল দুইটা এলসিডি মনিটর, সামনে দুইটা টাচপ্যাড। সেখানে হরদম টেপাটেপি চলে, আমি অপেক্ষায় আছি জিনিসটা কখন নষ্ট হয় সেটা দেখার জন্য


চিলড্রেন্স কর্নারের একাংশ


মন্তব্য

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

পড়ে পড়ে সুখ পাই!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

photography গুলা সুন্দর হয়েছে।লেখাতাও ভাল লাগছে।
---------------------------
Lover of Sadness

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ছোট লেখা হলেও ভাষায় পুষিয়ে দিয়েছেন। কোট করতে গেলে পুরো লেখা কপি হয়ে যাবে।

এই লাইনটা অবশ্য কোট না করেই পারলাম না।

যুগলেরা যাবে, 'দেখ আমি কতো জ্ঞানী' ভাব নেবার জন্য প্রেমিক দুটো বই কিনে ফেলবে, এটাই বইমেলা। অথবা প্রেমিকাকে কিনে দেবে একটি কোনো বই... এটাই মেলা...

দেঁতো হাসি আমি একেবারে একপায়ে একমত। তবে কিনা প্রেমিকারা আমার প্রাক্তন প্রেমিকার মত লক্ষ্মী হলে তারা উল্টো বই কিনেও দেয়। আমি গতবার কিনে নিয়েছিলাম আবুল হাসানের সমগ্র আর শাহাদুজ্জামানের সবগুলো বই। দিয়েছিলাম মাত্র একটা, 'তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা'। দেঁতো হাসি

দুঃখ এইবার আমি মেলায় নাই। আমার প্রেমিকাও নাই মন খারাপ । পরের বার যখন মেলায় যাব তখন বন্ধুবান্ধবের থেকে ধার করে হলেও অন্তত তিন-চারটা প্রেমিকা নিয়ে মেলায় যাব। চোখ টিপি দেঁতো হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

আমি ক্ষণিকের জন্যে ধার পেয়েছিলাম দেঁতো হাসি

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

পাঠক তৈরি হয়ে মেলায় আসবে না। বইমেলা তৈরি করবে পাঠক। এটা আমি মনে করি। উল্টো মনে করি যারা রেগুলার বই কেনেন, তারা পড়ার তাগিদে এমনিতেই কিনবেন। সারাবছরই কিনবেন। তাদের বই কেনার জন্য মেলার দরকার নাই। মেলাটা হওয়া উচিত আমজনতার।

চলুক হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অদ্রোহ এর ছবি

নজরুল ভাই, গেল বছর ঠিক এই সময়েই এই বিষয়ে আপনার সাথে কিঞ্চিত বাতচিত হয়েছিল, ইয়াদ পড়ে কি?

যাই হোক, বইমেলা পাঠক তৈরি করবে এটাই মোদ্দা কথা, এ নিয়ে অন্তত বাহাসের সুযোগ নেই। তারপরও বইমেলাকে ঘিরে ধীরে ধীরে হলেও পাঠকরুচির খানিকটা উত্তরণ হবে, এটুকু চাওয়াতে বোধহয় দোষের কিছু নেই।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

অপেক্ষায় ছিলাম আজকের কিস্তিটার । আপনার লেখা পড়ে বইমেলায় যেতে না পারার আক্ষেপটা মিটাই ।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

নিধির ছবিটা খুব সুন্দর। বাচ্চাটার জন্য শুভকামনা থাকল।

খবরে শুনলাম বইমেলার সামনে কক্টেল ফুটেছে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। -রু

ফাহিম হাসান এর ছবি

পাঠক তৈরি হয়ে মেলায় আসবে না। বইমেলা তৈরি করবে পাঠক।

চলুক

হাসিব এর ছবি

বিদেশী বইমেলাগুলো অমানুষিক রকমের রবোটগন্ধী। একুশে বইমেলার থেকে প্রাণবন্ত বইমেলা আমি কোথাও দেখি নাই।

দ্রোহী এর ছবি

একুশে বইমেলার উপ্রে কিছু আছে নাকি দুনিয়ায়?

নিধি আম্মারে ভালোমত পেলে পুষে বড় করতে থাকেন। দেঁতো হাসি

ওডিন এর ছবি

যারা রেগুলার বই কেনেন, তারা পড়ার তাগিদে এমনিতেই কিনবেন। সারাবছরই কিনবেন। তাদের বই কেনার জন্য মেলার দরকার নাই। মেলাটা হওয়া উচিত আমজনতার।

চলুক

গত দুইদিন যাইনাই, তাই আজকে যামু ভাবছিলাম, কিনতু চব্বিশ ঘন্টা ডিউটির পরে এমন মরার ঘুম দিলাম যে উঠলাম নয়টার দিকে! মন খারাপ মেজাজটাই খারাপ! কালকা আইতাছি! দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

যান যান, আনন্দফুর্তি করেন... রেগে টং

নিলয় নন্দী এর ছবি

ওয়ান টাইম উপন্যাসের মেলা, এটা বললেন না? ইয়াবার আমলে হয় ইয়াবা বিষয়ক উপন্যাস। ইভ টিজিং-এর আমলে হয় ইভ টিজিং বিষয়ক উপন্যাস। ফেব্রুয়ারি হচ্ছে উপন্যাসের ঋতু। রেগে টং
ঘরে ঘরে ঔপন্যাসিক জন্মায় এই সময়ে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।