বুনিয়া জেগে উঠছে

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৯/১১/২০১০ - ৮:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জমে থাকা ছোপ ছোপ রক্তের
কালচে দাগ মুছে
বুনিয়া জেগে উঠছে
নিকশ কালো আঁধারের বুক চিরে
দলে দলে বেরিয়ে আসছে মানুষ
কালো মানুষের দল

শরনার্থী শিবিরের তাবু ছিঁড়ে ফুঁড়ে
আশার খড়কুটো জড়ো করে ভুঁই খুঁড়ে
ঢাকের দ্রিমিকি দ্রিমিকি তালে
বেরিয়ে আসছে মানুষ
যুথচারী কালো মানুষের দল

আজ মৃন্ময় স্বপ্নের বীজ বুনা হবে
কঙ্গো অববাহিকায়
আজ অনলস জুম চাষ
সবুজ পাহাড়ের গায়

এখানে বনষ্পতির নিবিড় প্রহরায়
ছিল কৃপণ আলোর অন্তঃপুর
এলো মানুষ ধরার দল
নিয়ে সেই বিপন্ন বিবেকের ভার
আজো কাঁদে জাঞ্জিবার

এখানে শূশ্রূষা ছিল
মমতায় হার্দ্র ছিল পাথরের গৃহকোণ
জাম্বেসীর পথ ধরে আলো জ্বেলে জ্বেলে
হেঁটেছিলেন মহাত্মা লিভিংষ্টোন
এখানে ঝরণার জলে ধুয়ে নেয়া
স্নিগ্ধ সবুজ বন আর নিগ্রো যুবতীর মন

এখানে নখর, থাবা
এখানে প্রেতের দাবা
এখানে প্যাট্রিস লুমুম্বার বিদীর্ণ হৃদয়
এখানে কপোতের বুক ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলা
অসংখ্য সাদা সাদা দাঁতের কুটিল হিংস্রতায়

বাড়ি উঠছে ঘর উঠছে
গাড়ি ছুটছে হাঁড়ি ফুটছে
গরম ভাতের ঘ্রাণ ছুটছে
তালে তালে পাড়া কুঁদছে
বুড়ো শান্তিতে চোখ মুদছে
শিশু হাসছে যীশু আসছে
জীবন নদীতে চর ভাসছে
ধারা ঝরছে কারা নড়ছে
স্বপ্ন বিলাসে মন ভরছে

নক্ষত্ররা অবাক হয়
শিশুর দুই চোখে জোনাকীর রংয়ে রংয়ে
যে ভবিষ্যত আঁকা হয়
জেনে গেছে আগামীর দিকচক্রবাল
সে তো হীরে নয়, হীরের সকাল।


মন্তব্য

অস্পৃশ্যা এর ছবি

আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি এখন রয়েছে বুনিয়ায়, দিন-রাত কাটে প্রার্থনায়...
কবিতা ভাল লেগেছে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বোন,
আপনার ও আপনার প্রিয়তম মানুষটির জন্য রইল শুভকামনা। আপনার নিশিদিনের ভালোবাসায় ও প্রার্থনায় ঝরুক জ্যোৎস্নার ফুল তাঁর চাতক হৃদয়ে! ভালো থাকবেন।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার কবিতা ভালো লাগে। কারণ, আপনার কবিতা শুধু ভালো নয়, বেশ ভালো বলে মনে হয়। এই কবিতার ষষ্ঠ অনুচ্ছেদ থেকে একে কিছুটা motivated বলে মনে হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকলে কবির স্বাধীনতা কি থাকে? কবির স্বাধীনতা না থাকলে রচিত পদ্যভাষা কি ভালো কবিতা হয়ে ওঠে? যেমনটা মনে হলো বললাম, অকবির এই স্পর্ধা ক্ষমা করবেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভাই,

আপনার কবিতা ভালো লাগে। কারণ, আপনার কবিতা শুধু ভালো নয়, বেশ ভালো বলে মনে হয়।

সবটুকু ভালোলাগা আপনার মনের শেফালি-শুভ্রতাজাত, আমায় ঋণী করে।
এই কবিতার ষষ্ঠ অনুচ্ছেদ থেকে একে কিছুটা motivated বলে মনে হয়েছে।

পাঠকের বিচারই চুড়ান্ত, এ আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।
স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকলে কবির স্বাধীনতা কি থাকে? কবির স্বাধীনতা না থাকলে রচিত পদ্যভাষা কি ভালো কবিতা হয়ে ওঠে?

একজন কবি কবিতায় যা বলতে ব্যর্থ হয়েছেন, তখনই তার দেউলিয়াত্বের চুড়ান্ত প্রকাশ ঘটে যখন তিনি কবিতার বাইরে এসে তা বলতে চান। শুধু এটুকু বলি, ঢাকের দুন্দুভির তালে তালে যুথচারী নৃত্যে মেতে উঠা ছেলে-মেয়ে-বুড়ো-নর-নারী-শিশু-গৃহপালিত পশু-ঘর-চারপাশ সব নিয়ে পুরো কঙ্গোলীজ কিম্বা মাসাই পল্লী যে ছন্দে দুলতে থাকে তাকেই সততার সাথে বিম্বিত করতে চেষ্টা করেছি, সেখানে 'কোনো সাধ নাই মোর ফসলের তরে', অর্থাৎ কাব্যমান শিল্পমূল্যের তুলাদন্ডে উত্তীর্ণ হলো কি না, বিবেচনা করিনি।
অনেক অনেক শুভকামনা!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তাসনীম এর ছবি

দারুণ...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

তাসনীম ভাই,
অসংখ্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভালো লাগলো। বিশেষ করে শেষের টোন---

__________________
হামিদা আখতার

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বোন,
তোমার ভালোলাগা ভাইয়ের শার্টে বুনে দেয়া মুক্তোর বোতাম যেন।
--------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কৌস্তুভ এর ছবি

ভালো লাগল রোমেল ভাই। সচলে কবিতা খুব বেশি একটা পড়া হয় না, তবুও আপনারগুলো প্রায়ই পড়ি।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

কৌস্তুভ ভাই,
এ আমার পরম সৌভাগ্য!
উত্তরাধুনিক ধাঁচে অনেকেই মাঠ কাঁপাচ্ছেন। আমার উত্তরাধুনিক বিষয়ে অনেক মতদ্বৈততা ও ভিন্ন বিবেচনা আছে, তাই আপাততঃ লিখছি না। এ বিষয়ে একটা দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছি। বহুদিন ভেবেছি, সার-সংক্ষেপ করে সচলের পাতায় দেব। কিন্তু আমার নেশা ও পেশা যে পরস্পরের অব্যর্থ শত্রু! বিবেচনায় স্থিরতা মিললে উত্তরাধুনিক লেখা হয়তো বা কোনদিন লিখবো, যদি হয়রান সূর্য হাঁটতে রাজী হয় আরো দু'চার কদম।
শুভপ্রীতি!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ কবিতা।

ভিন্ন প্রসঙ্গ : রোমেল ভাই হাচল হয়ে গেসেন দেখছি। অভিনন্দন। হাসি

কুটুমবাড়ি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভাই,
কবিতাটি আপনাকে আনন্দ দিতে পেরেছে যেনে খুশী হলাম।
জানতাম যে 'অচল' ও 'সচল' হবার মাঝে 'হাচল' নামে আরো একটি ধাপ আছে, কিন্তু 'হাচল' হবার পরে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। তবু নিঃসন্দেহে এই উত্তরণ সম্মানের, এর কৃতিত্ব অল্পটাই আমার, বেশীটাই পাঠকের। আপনার শুভকামনা আমায় ঋণী করে রাখলো।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নির্বাসন এ একা  [অতিথি] এর ছবি

খুবই ভালো লেগেছে।

নক্ষত্ররা অবাক হয়
শিশুর দুই চোখে জোনাকীর রংয়ে রংয়ে
যে ভবিষ্যত আঁকা হয়
জেনে গেছে আগামীর দিকচক্রবাল
সে তো হীরে নয়, হীরের সকাল।

বাংলার মানুষের দিন বদলের পালা দেখার অপেক্ষায় আছি সেই কবে থেকে, আসলে কি হীরের সকাল আসবে আমাদের জীবনে?

সুন্দর কবিতার জন্য ধন্যবাদ।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

হীরের সকাল আসবেই, আমরা করবো জয় একদিন, নিশ্চয়ই করবো!
কবিতাটি আপনাকে আনন্দ দিতে পেরেছে জেনে খুব ভালো লাগছে!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

দাদা,
আপনার মন্তব্যখানাও খাসা, শুভপ্রীতি জানবেন!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

বইখাতা এর ছবি

খুব ভাল লেগেছে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

পাঠকের ভালোবাসাই যে প্রকৃত অর্জন, আপনার মন্তব্য পেয়ে সেটি নোতুন করে উপলব্ধি করলাম!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কিশলয় এর ছবি

ামার কােছ খুব ভালো েলেগেছ । আরও লেেখন ।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

নিশ্চয়ই লিখবো, এমন ভালোবাসা পেলে পাথরেও যে পদ্ম ফোটে!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ফকির লালন এর ছবি

ভালো লাগলো, বুনিয়া চলে গেলাম কবিতার সাথে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

কবি,
আপনার মন্তব্য আমায় সম্মানিত করে, আমি হাজার বছর ধরে পথ হাঁটার প্রেরণা পাই!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।