পৃথিবীর পথে (প্রথম পর্বঃ দ্বিতীয় কিস্তি)

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১৩/১২/২০১০ - ৭:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


(লেখকের কৈফিয়তঃ
পাঠক, প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নেই এত ছোট ছোট কিস্তিতে লেখাটি এগিয়ে নেবার জন্য। সত্যি বলতে কি, ভেবেছিলাম হ্যারি পটারের মতো ম্যাজিক ব্রুম চড়ে অবলীলায় উড়তে পারবো। কিন্তু গদ্য লেখা যে কত কঠিন সেটি হাড়ে হাড়ে টের পেলাম এই লেখাটি লিখতে গিয়ে। ইতিমধ্যে রাতঃস্মরণীয় ভাইয়ের কল্যাণে আপনারা ভালোমতোই পরিচিত হয়েছেন মাসাই মারার সাথে। ভালোই হলো, অন্ততঃ সে দায় এড়িয়ে আমি একটু ভিন্নসুরে লেখাটি এগিয়ে নেবার সুযোগ পেলাম।)

শেষাবধি একটি স্যুভেনির কিনতেই হলো। কিনবো না কিনবো না করেও। সোপষ্টোনের উপরে গ্রেট রিফট ভ্যালির খোদাইচিত্র। দেখে যেন মনে হয়, বহু শতাব্দী আগের কোন প্রস্তরখণ্ড। গায়ে নখের আঁচড়ে আঁচড়ে আঁকা ছবি। মাউন্ট সাসওয়ার প্রকৃত উচ্চতা ৭৭৩০ ফুট। খোলনলচে দেখে পর্বতশৃঙ্গ বলে ভ্রম হলেও আসলে এটি একটি শিল্ড ভলকানো। মাউন্ট লঙ্গনট আরেকটু উঁচু, ৯১০৮ ফুট। কেঁচো খুড়তে গিয়ে এখানেও সাপ পাওয়া গেল। সুপ্ত আগ্নেয়গিরি, শেষবার ফুঁসে উঠেছিল ১৮৬০ তে। মাসাই ভাষায় ‘ওলুনঙ্গট’ অর্থাৎ ম্যালা চড়াইয়ের পাহাড়। ঘোড়সওয়ারের জুতোর স্পারের মতো অনেকগুলো খাড়া চড়াই। স্যুভেনিরের দোকানি খুব গর্বভরে উচ্চারণ করেছিলো ‘লঙ্গনট’ স্যাটেলাইট ষ্টেশনটির কথা। আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম পুরো সাফারি জুড়ে সাফারিকম কাজ করবে জেনে। গ্রেট রিফট ভ্যালি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাতটি লেকের মতোই আমরা তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছি একটি হুড খোলা মাইক্রোবাসের ভেতর দিলখোলা মন নিয়ে।

জকি ট্যুরস এর জর্জ আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড। কি হাসিখুশি আর আন্তরিক এই মানুষটি! স্থির হাতে স্টিয়ারিং ধরে অবলীলায় পেরিয়ে যাচ্ছিলেন একটির পর একটি বিপদজনক বাঁক। চেনা পথ, তাই গতির চ্যারিয়ট একটু বুঝি লাগামছাড়া। আমাদের মাঝে সবচেয়ে লম্বা ছেলেটি শঙ্কিত কণ্ঠে বলে উঠে, ‘পোলে, পোলে’। জর্জের শান্তস্বরের উত্তর পাই, ‘হাকুনা মাতাতা’। আমাদের বুঝতে আর বাকী থাকে না, প্রাগৈতিহাসিক প্রস্তরখণ্ডে বর্তমানের নখের আঁচড় ইতিমধ্যে আমাদের কিছু শিখিয়েছে। পাঠশালার নামতা পড়ার মতো করে সবাই সমস্বরে বলে উঠি, ‘আসান্তে’।

‘ইটস টাইম ফর লাঞ্চ’, দি রেড স্পুন রেস্টুরেন্টের নুড়ি পাতা আঙ্গিনায় গাড়ী থামিয়ে বীর দর্পে ঘোষণা করলো জর্জ। সুড় সুড় করে নেমে এলাম আমরা, পেটে তখন ছুঁচোর কেত্তন। তবু গাছের বাকলে আঁকা সুস্বাগত বাণী নজর এড়ালো না, ‘কাবিবু’। (চলবে...)
(আগে যা লিখেছিঃ http://www.sachalayatan.com/nebula/36619)


মন্তব্য

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

"আসান্তে সা-না" রোমেল ভাই। কবিরা গদ্য লিখলে তা সুখপাঠ্য হয় শাব্দিক বৈচিত্রের বিচারে।

তবে আমি এখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি সড়ক পথে না যেয়ে কি মিঁসটা করেছিলাম!

======================================
অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

'জাম্বো' রাতঃস্মরণীয় ভাই,
'কারিবু'!
যে অভিজ্ঞতা বাস্তবে ধরা দেয় নি, সে তো কল্পনার আঙ্গিনায় পিঁড়ি পেতে রেখেছে!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তাসনীম এর ছবি

চলুক, ভালো লাগছে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

তাসনীম ভাই,
অনেক ধন্যবাদ জানাই!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এসব লেখা আমি হিংসাবশত পড়া ছেড়ে দিছি... ঘরের কোনে বসে বসে এগুলো পড়লে মিজাজ খ্রাপ হয়ে যায় মন খারাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

নজরুল ভাই,
আমাদের দেশে 'দুলাহাজরা' যে কত সম্ভাবনাগর্ভা তা নিশ্চয়ই জানেন! কিন্তু আমরা পারিনা কেন? চলুন বেরিয়ে পড়ি আমাদের পথে প্রান্তরে!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

নজরুল ভাই, মিজাজ খ্রাপই হওয়ার কথা। আর আমার মিজাজ খ্রাপ হয় যখন বিদেশে এসব দেখে বেড়াই। খালি দুঃখ, আমার হাতে ক্ষমতা নাই। বাংলাদেশে যা আছে তা যদি ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা করা যেতো আর ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করার মতো স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে মার্কেটিং করা যেতো, অপার সম্ভাবনা।

আবার মিজাজ খ্রাপ হচ্ছে। আমরা কোনওদিন এদেশের মন্ত্রী-মিনিষ্টার হবোও না, আর মিজাজ খ্রাপই হতে থাকবে। সুন্দরবনের করমজলে পুকুরে কতগুলো ইনডিয়ান কুমিরকে আটকে রেখে আর খাচায় কয়েকটা বান্দরকে আটকে রেখে আমরা নাম দিয়েছি স্যাংচুয়ারি। অথচ দেখেন তাই দেখতে লোকে লোকারণ্য। আর যদি একটু অর্গানাইজড করা যেতো এগুলো .....................। সুন্দরবনকে যারা বাঁচাবে-সাজাবে, তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে চোরাই কাঠের, চোরাই মাছের শত কোটি টাকা ভাগা আয় করা। আমাদের ওসমান গণিরা টাকার তোষক-বালিশে ঘুমায়।

সুন্দরবনের কোলঘেষে আমাদের বাড়ি। জামাতের এমপি মুফতি মাওলানা সাত্তারের দুই ছেলে যখন সুন্দরবন উজাড়ের মিশন নিয়ে নেমেছিলো তখন আমার পিতাই "সুন্দরবন বাঁচাও" আন্দোলন শুরু করেছিলেন যার বর্তমান নেতৃত্বে আছেন মেজর জিয়াউদ্দিন (অব.)। যদিও এর কার্যক্রম বর্তমানে কিছু সভাসমাবেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তখন ওই জামাতি চক্র প্রশাসনের সহায়তায় তার উপর হামলা করেছিলো। বন উজাড় করতে করতে আমরা কোনদিন দেশটাকেই উজাড় না করে দেই।

অনেক কিছু ভাবতে হবে নজরুল ভাই। দেশকে বাঁচাতে হবে।

======================================
অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।