কবির পাপ

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৭/০৬/২০১১ - ১০:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অশ্রুত কথার ছলে চেনা সুরে ক্ষণে ক্ষণে বেজে উঠো তুমি
হানা দাও, খুন করো, মৌনতা চিরে ফেলো নখের আঁচড়ে
রাজর্ষি রাতের জ্বরে পুড়ে যাই রুদ্ধবাক ঘোরের ভিতরে
একটু পাবো কি রেহাই ডুবে গেলে সবটুকু পাললিক ভূমি?
জলবতী মেঘে মেঘে গুণীর মন্ত্রের মতো মাতাল সিম্ফনি
নেব না নেব না আমি নেবুগন্ধী নির্জলা সন্ন্যাসী দিন
বেজে যদি যায় যাক অবিরত শূন্য হাত বিষণ্ণ ভায়োলিন
আমার ক্লান্তির ঠোঁটে রোদ রঙা ভাঙনের নগ্ন পদধ্বনি।

ক্রুরতার হিম তুমি ছুঁড়ে দিতে পারো আজ ক্ষমাহীন মেনকার মতো
স্বর্গলোকে ফিরে যাক উর্ধ্বমুখী ছায়াহীন নিষ্ঠুর অপ্সরী যত!
নিভৃতে নিথুয়া নীলে নিশিরাত নেচে উঠে নিলয়ে আবার
এবার সময় হল সব কিছু পিছে ফেলে সটান সেখানে যাবার
সেখানে যাবার কালে জলসিড়ি ধুয়ে দেবে অস্থির আত্মার প্রদেশ
একটু হিজল ছায়া, একটু সবুজ আর সহজিয়া সলাজ আবেশ
উদাসী কবির পাপে শব্দ কাঁপে, কাঁপে সুর, ছন্দের সুষমা
কোথায় খুঁজবে বলো নিজস্ব নারী আর শুদ্ধতম যোনীর উপমা?


মন্তব্য

রিসালাত বারী এর ছবি

প্রথম অষ্টকে প্রতি লাইনে ২২টি অক্ষর এবং দ্বিতীয় অষ্টকে প্রতি লাইনে ২৫টি অক্ষর আছে। আমার কবিতা বা ছন্দজ্ঞান শূণ্যের নিচে। সংখ্যা ভিত্তিক এই গঠন তাই আমাকে বিস্মিত করে। এর মাঝে আরো কোন সূক্ষ ব্যাপার আছে কিনা বোঝার ক্ষমতা নাই। তবে শুধু অন্তমিল সহ কবিতাটা অসাধারণ লাগলো।

অক্ষর-মাত্রা-অন্তমিলের এতসব খুটিনাটি মাথায় রেখে এইরকম শব্দসম্ভার কিভাবে রচনা সম্ভব? গুরু গুরু

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

লইজ্জা লাগে

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

জটিল হইছে বস্। কবির পাপ নেই। কবির চিন্তা নাবালকের মতোই সরলরৈখিক, সাবলীল। তাই, কবির পাপ হয়না।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

হক কথা! চোখ টিপি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ছন্দের কাজটা দারুণ লাগলো

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

লইজ্জা লাগে

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তানিম এহসান এর ছবি

রোমেল ভাই! সালাম নিবেন ভাই, আমি মুগ্ধ! ব্যকরন মেনে মেনে মনের ভাব, মনের আবেশ সহজে, সরলে অনায়াস প্রয়াসে লিখার সাধ্য যাদের থাকে তাদের জন্য অদ্ভূত প্রণতি। কবিরা ব্যকরন জেনে ভাঙচুর করুক কবিতার ব্যকরন, কবিতা ব্যকরন ছাড়িয়ে যাক কবিতার কাছে। অপেক্ষায় থাকবো আরো কবিতার! লিখে যান আর আপনার ‘ছোট চৌধুরানীর’ জন্যেও শুভেচ্ছা রইলো। শুভেচ্ছা, তানিম

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভাই,
তোমার মন্তব্য পড়ে শক্তি চট্টপাধ্যায়ের 'যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো' কাব্যগ্রন্থ থেকে চয়িত একটি কবিতার কথা মনে পড়ে গেল। অনেক আগে পড়েছি, আবছা আবছা মনে পড়ছে, ভুল চুক হলে ক্ষমা করে দিও।

জানিনা কিভাবে ছন্দের বারান্দা ভাঙা হবে
মিস্তিরি মজুদ;
.................................
.................................
বারান্দাও জেনে গেছে ভাঙায় সকলে নয় দড়!
ভাঙারও নিজস্ব ছন্দ আছে
অপরূপ ভাবে ভাঙা গড়ার চাইতেও সুন্দর!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

অ-সা-ধা-র-ণ "কবি"...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এই নিন আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

জহিরুল ইসলাম নাদিম (!) এর ছবি

বিস্ময় জাগানিয়া!
ধন্যবাদ রোমেল আপনাকে এবং অভিনন্দন সাথে.....।

আচ্ছা উঠো> ওঠো হবে কি?

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভাই,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। উঠো > ওঠো কোনটা হবে জানি না রে ভাই!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

ত্রিশের দশকের কবিতার মতো...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটু দ্বিমত, আমার কাছে বরং চল্লিশ-পঞ্চাশ বলে মনে হয়েছে বেশি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমি তো তাহলে চল্লিশের কিম্বা পঞ্চাশের কবি!!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমি ত্রিশের কবি, আমার রক্তে 'কল্লোল'-এর কল্লোল!!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তানিম এহসান এর ছবি

এটা তারপরবর্তী সময়ের লেখার ছাপযুক্ত যখন আল মাহমুদেরা মাইকেলের চতুর্দশ পদাবলি কিংবা জীবনানন্দের সনেট এর বাইশ মাত্রার কাব্য ভেঙে ত্রিশ এমনকি বত্রিশ মাত্রায় পৌছুনোর দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। রোমেল ভাই, অষ্টকে অষ্টকে ছন্দের অন্তঃমিল এ যেমন অনন্যতা আছে তেম্নি আছে গাথুনীর মাধুর্য্য। আপনি কোন গাথুনীর আশ্রয় নিয়েছেন বলবেনকি! শুভেচ্ছা, তানিম এহসান

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

জীবনানন্দ অক্ষরবৃত্তকে দিয়েছিলেন পঙক্তি স্বাধীনতা, তৈরি করেছিলেন অসমান অক্ষরবৃত্ত। অক্ষরবৃত্তের দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর চরণ রচনা করে নিয়মের পীড়ন থেকে বের করে এনে ছন্দমুক্তির ঘুলঘুলিতে পৌঁছে দেবার প্রয়াসী ছিলেন, এই দেখুন ৩০ মাত্রার একটি পঙক্তি,

আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়,― আমার কাতর চোখ― আমার বিমর্ষ ম্লান চুল

এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী জীবনানন্দ সনেট লিখেছিলেন মোট তিয়াত্তরটি। সেগুলোও শিথিলায়ত। যদ্দুর জানি ছাব্বিশ মাত্রা পর্যন্ত টেনে নিয়েছিলেন। উদাহরণ, 'শকুন' ও 'পথ হাঁটা'। তবে কবি আবদুল কাদির সেগুলির একটিও তাঁর 'সনেট শতক' বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেন নি। 'রূপসী বাংলা'-এর কবিতাগুলিকে তাই সনেট না বলে চতুর্দশপদী বলাই বোধকরি বেশী সমিচীন হবে। আল মাহমুদ ত্রিশ কিম্বা বত্রিশ মাত্রায় যাবার সাহস করেছিলেন, তথ্যটি আশ্চর্যান্বিত করলো বটে! তবে উদাহরণ না পেলে বিশ্বাস করছি না। কারণ 'সোনালী কাবিন'-এর চৌদ্দটি সনেটে তো নজরে পড়ল না। বত্রিশ মাত্রার সনেট, অভুতভাবিতই বটে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তানিম এহসান এর ছবি

আমি ক্রমশ আগ্রহী হচ্ছি, কেন যেন মনে হচ্ছে কবিতা নিয়ে আপনার সাথে আড্ডা দিলে চমৎকার সময় কাটবে। আমি ব্যাকরন না জেনে কবিতা লিখা শুরু করা একজন মানুষ, তারপর ব্যাকরন এর কথা শুনে ব্যাকরন পড়া, তারপরও বারবার মনে হয় ’কবিতা ব্যাকরন ছাড়িয়ে যাক কবিতার কাছাকাছি’। ভালো থাকবেন, তানিম

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভাই,
আমার নেশা ও পেশা পরস্পরের অব্যর্থ শত্রু! সময়ের গ্রন্থিমূলে দৈনন্দিনের বাহুল্য খরচাই জাঁকালো ভিড়ের মতো টিকেট কাউন্টার দখল করে থাকে। শুধু এটুকুই বলি, ছন্দের ব্যাকরণ-জিজ্ঞাসু না হয়ে ছন্দ-রসের দিশারী হওয়াটাই কবির অভীষ্ঠ হওয়া উচিৎ বলে বিশ্বাস করি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তানিম এহসান এর ছবি

পুরোপুরি সহমত! ব্যাকরন বেড়াজালে আটকালে যে আর বের হওয়ার পথ থাকেনা। ধন্যবাদ

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

মনে করি আমি একজন পাঠক, ছন্দোবদ্ধ কবিতাটি কোন মাত্রায় আবদ্ধ তা বের করতে আগ্রহী, ট্রায়াল এন্ড এরর নিয়মে বিশ্লেষণ করি: ধরি এটি কলাবৃত্তে/মাত্রাবৃত্তে আবদ্ধ, দেখি ধৃত সিদ্ধান্ত সঠিক কি না>

একটু(৩) পাবো কি(৩) রেহাই(৩) ডুবে গেলে(৪) সবটুকু(৪) পাললিক(৪) ভূমি(২) = ২৩
জলবতী(৪) মেঘে মেঘে(৪) গুণীর(৩) মন্(২) ত্রের(২) মতো(২) মাতাল(৩) সিম্ ফনি(৪) = ২৪
নেব না(৩) নেব না(৩) আমি(২) নেবুগন্ ধী(৫) নির্ জলা(৪) সন্ ন্যাসী(৪) দিন(২) = ২৩
বেজে যদি(৪) যায়(২) যাক(২) অবিরত(৪) শূন্ ন(৩) হাত(২) বিষণ্ ন(৪) ভায়োলিন(৪) = ২৫

দেখা যাচ্ছে, মাত্রাসাম্য থাকছে না, সুতরাং এটি কলাবৃত্তে রচিত নয়!!

এখন ধরি এটি দলবৃত্তে/স্বরবৃত্তে আবদ্ধ, দেখি ধৃত সিদ্ধান্ত সঠিক কি না>

একটু(২) পাবো কি(৩) রেহাই(২) ডুবে গেলে(৪) সবটুকু(৩) পাললিক(৩) ভূমি(২) = ১৯
জলবতী(৪) মেঘে মেঘে(৪) গুণীর(২) মন্(১) ত্রের(১) মতো(২) মাতাল(২) সিম্ ফনি(৩) = ১৯
নেব না(৩) নেব না(৩) আমি(২) নেবুগন্(৩) ধী(১) নির্ জলা(৩) সন্ ন্যাসী(৩) দিন(১) = ১৯
বেজে যদি(৪) যায়(১) যাক(১) অবিরত(৪) শূন্ ন(২) হাত(১) বিষণ্ ন(৩) ভায়োলিন(৩) = ১৯

দেখা যাচ্ছে, মাত্রাসাম্য থাকছে, প্রতি পঙ্ ক্তি ১৯ বিজোড় মাত্রার, সুতরাং এই স্তবকটি দলবৃত্তে/স্বরবৃত্তে রচিত!!

দ্বিতীয় স্তবকের মাত্রা সংখ্যা দলবৃত্তেই বের করি যেহেতু দলবৃত্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি,

ক্রুরতার হিম(৪) তুমি ছুঁড়ে দিতে পারো(৮) আজ ক্ষমাহীন(৩) মেনকার মতো(৫) = ২০
স্বর্ গলোকে(৪) ফিরে যাক(৩) উর্ ধ্বমুখী(৪) ছায়াহীন(৩) নিষ্ ঠুর অপ্ সরী যত(৭) = ২১
............
সেখানে যাবার(৫) কালে জলসিড়ি(৫) ধুয়ে দেবে(৪) অস্ থির(২) আত্ তার প্রদেশ(৪) = ২০
একটু হিজল(৪) ছায়া, একটু সবুজ(৬) আর সহজিয়া(৫) সলাজ আবেশ(৪) = ১৯
উদাসী(৩) কবির(২) পাপে(২) শব্ দ(২) কাঁপে, কাঁপে(৪) সুর(১), ছন্ দের(২) সুষমা(৩) = ১৯
কোথায়(২) খুঁজবে(২) বলো(২) নিজস্ সো(৩) নারী আর(৩) শুদ্ ধোতম(৪) যোনীর(২) উপমা(৩)? = ২১

কিন্তু মাত্রাবিন্যাস বের করতে পারলাম না।

কলাবৃত্তে দেখি:
ক্রুরতার হিম(৬) তুমি ছুঁড়ে দিতে পারো(৮) আজ ক্ষমাহীন(৬) মেনকার মতো(৬) = ২৬
স্বর্ গলোকে(৫) ফিরে যাক(৪) উর্ ধ্বমুখী(৫) ছায়াহীন(৪) নিষ্ ঠুর অপ্ সরী যত(১০) = ২৮
............
সেখানে যাবার(৬) কালে জলসিড়ি(৬) ধুয়ে দেবে(৪) অস্ থির(৪) আত্ তার প্রদেশ(৭) = ২৭
একটু হিজল(৬) ছায়া, একটু সবুজ(৮) আর সহজিয়া(৬) সলাজ আবেশ(৬) = ২৬
উদাসী(৩) কবির(৩) পাপে(২) শব্ দ(৩) কাঁপে, কাঁপে(৪) সুর(২), ছন্ দের(৪) সুষমা(৩) = ২৪
কোথায়(৩) খুঁজবে(৩) বলো(২) নিজস্ সো(৪) নারী আর(৪) শুদ্ ধোতম(৫) যোনীর(৩) উপমা(৩)? = ২৭

তবে কি এটা কলাবৃত্তে ভাইয়া? মাত্রাবিন্যাসের রহস্যটা যে পুরোপুরি বের করতে পারলাম না রোমেল ভাই!! আমি কি কোথাও ভুল করেছি? আর এভাবেইতো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোন বৃত্তে গ্রথিত? না বোঝার আরো সহঝ উপায় আছে?
____________________________________
কবিতা দারুণ লেগেছে ভাইয়া। আমার কাছে খুবই শক্তিমান লাগল। চলুক

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভাই,
ভেবেছিলাম মুখ খুলবো না। তোমার আগ্রহ আমাকে এত মোহিত করলো যে মুখ খুলতেই হলো। একটু ধরিয়ে দেই, বহু আদৃত এই কবিতাটি পড়ে নাও তো একবার,
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে
৮+৮+৬ এর মহাপয়ার তাইতো!

'কবির পাপ'-এর ৭ টি চরণ একদম এই ছাদের। তবে সবটুকু মিলবে না। কারণ, এখানে ছন্দ যেমন আছে, ছন্দফেরও আছে তেমনি। সঠিক শব্দকে বেছে নেবার জন্য ছন্দফের করার যুক্তিটাও ফেলে দিতে পারবে না। কোন কোন চরণে অক্ষরবৃত্তের ভেতর মাত্রাবৃত্তকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমনটি জীবনানন্দ করেছিলেন তাঁর বহু কবিতায়, একই শব্দে পরিয়েছিলেন দুরকম মাত্রার চুড়ি। উদাহরণ,
নিজের মৎসর নিয়ে নিশানের 'পরে সূর্য এঁকে
চোখ মেরেছিল তারা নীলিমার সূর্যের দিকে।
(জীবনানন্দ দাশ, "লোক সামান্য", সাতটি তারার তিমির )

সূর্য শব্দটি দু'জায়গায় দুরকম মাত্রা আদায় করে নিচ্ছে।

দুটি চরণে (৬ ও ১১ নং) যৎসামান্য অনুপ্রাসের দোলা দেবার চেষ্টা করেছি, লেগেছে কি না জানিনা।

ছন্দ বিচারে মগ্নপ্রাণ না হয়ে কবিতাটি একটি বারের জন্য হলেও মন লাগিয়ে পড়ে জানিও একটি মৌনপ্রিয় প্রতীককে ছুঁতে পারলে কি না! শুভকামনা।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

ধরিয়ে দেওয়াতেই এখন পুরোপুরি বুঝতে পারলাম।

সঠিক শব্দকে বেছে নেবার জন্য ছন্দফের করার যুক্তিটাও ফেলে দিতে পারবে না।

অবশ্যি ভাইয়া, বরং এটাই আমার পছন্দের!

আর যথারীতি শিখলাম। হাসি

_____________________________

নেব না নেব না আমি নেবুগন্ধী নির্জলা সন্ন্যাসী দিন
বেজে যদি যায় যাক অবিরত শূন্য হাত বিষণ্ণ ভায়োলিন
আমার ক্লান্তির ঠোঁটে রোদ রঙা ভাঙনের নগ্ন পদধ্বনি।

অপেক্ষা, স্মৃতি কাতরতা, অভিমানে প্রথম স্তবকটি বাঙময়.............

একটু হিজল ছায়া, একটু সবুজ আর সহজিয়া সলাজ আবেশ
উদাসী কবির পাপে শব্দ কাঁপে, কাঁপে সুর, ছন্দের সুষমা
কোথায় খুঁজবে বলো নিজস্ব নারী আর শুদ্ধতম যোনীর উপমা?

বিদায়ের আক্ষেপ, কবির সন্দিগ্ধ মন স্পর্শ করে তন্ময় করে গেল শুধু!!! চলুক

তানিম এহসান এর ছবি

বাহ, ব্যাকরন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, চমৎকার! চালিয়ে যান। তবে রোমেল ভাই, আপনি কি ব্যাকরন মেনেই লিখেছিলেন নাকি আগে লিখে তারপর ব্যাকরন মিলিয়েছেন? নাকি অনায়াস সাধ্যে চলে এসেছে পুরোটাই। আমার শেষটাই মনে হচ্ছে। কিছু মনে করবেননা, আমার কৌতুহল সীমাহীন এই ব্যাপারে। আপনার ‘ছোট চৌধুরানী’র জন্যে শুভেচ্ছা রইলো, তানিম এহসান

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভাই,
ব্যাকরণে আমি আকাট মূর্খ! তাঁর একটি কবিতায় দারুণ ছন্দের কারুকাজ দেখে সুভাস মুখোপাধ্যায়কে একবার ছান্দসিক কবিগণ জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিভাবে সম্ভব হলো? উনি উত্তরে বলেছিলেন, দেখো আমি বাপু তোমাদের মতো অত ছন্দ টন্দ বুঝি নে। পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, ধোপার কাপড় ধোয়ার ধপ ধপ শব্দ হচ্ছিল, মন লাগিয়ে শুনছিলুম, পরে সেটাকেই কবিতাতে তুলে এনেছি।

এখন পর্যন্ত আমার জীবনের কোনকিছুই অনায়াসলব্ধ নয়, ভাই! লব্ধ জিনিসের তালিকাটাও যৎসামান্য।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আয়নামতি1 এর ছবি

হাততালি চলুক

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

দেঁতো হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

চলুক রোমেল ভাইয়ের কবিতা বরাবরই ভালো লাগে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যু!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কৌস্তুভ এর ছবি

নাঃ, বুড়ো হয়ে যাচ্ছি মনে হয়, নইলে রোমেল ভাইয়ের কবিতা দুদিন ধরে পড়ে রইল আর আমি খেয়াল করি নি!

দারুণ আলোচনাও চলছে দেখি কমেন্টে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

না রে ভাই, আমার তো মনে হয় বয়স তোমার কমেই যাচ্ছে!

হাঁটুতে টান পড়ছে আমার। বিষণ্ণ যযতির মতো আমারই বরং,
উত্তীর্ণ পঞ্চাশ বনবাস প্রাচ্য প্রাজ্ঞদের মতে
অতঃপর অনিবারণীয়;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ডুপ্লি ঘ্যাচাং

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তিথীডোর এর ছবি

চমৎকার! চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এই "চমৎকার" শব্দটি ভাইয়ের শার্টে লাগিয়ে দেয়া মুক্তোর মতো বোতাম হয়েই থাক!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।