মনুষ্যজাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস- অধ্যায়ঃ ১ (১/২)

নিটোল এর ছবি
লিখেছেন নিটোল [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৬/০৪/২০১৫ - ৭:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইউভাল নোয়া হারারি ইতিহাস পড়ান হিব্রু ইউভার্সিটি অব জেরুজালেমে। তাঁর রচিত বেস্টসেলার Sapiens: A Brief History of Humankind সম্প্রতি বেশ আলোড়ন তুলেছে। এরই মধ্যে এই বইটি প্রায় ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বইটিতে লেখক মানব জাতির বিবর্তন থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের নানা বিষয় অত্যন্ত দারুণভাবে বর্ণনা করেছেন। সবচেয়ে আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার হলো, বিভিন্ন বিশ্লেষণে তিনি ব্যবহার করেছেন বিবর্তনীয় জীববিদ্যার নানা সিদ্ধান্ত। বইটির বাংলা অনুবাদ শুরু করার দুঃসাহস দেখিয়েছি। অনুবাদ নিয়ে সকলের মতামত কামনা করছি। যে কোনো ধরনের ভুলত্রুটি শুধরে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।


একটি গুরুত্বহীন প্রাণী

আজ থেকে প্রায় ১৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে, বিগ ব্যাং নামক এক মহাজাগতিক ঘটনার ফলে বস্তু, শক্তি, সময় এবং স্থানের উদ্ভব ঘটেছিল। আমাদের মহাবিশ্বের এসব মৌলিক প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করে জ্ঞানের যে শাখা- তার নাম পদার্থবিদ্যা।

বিগ ব্যাং এর প্রায় তিন লক্ষ বছর পর, বস্তু ও শক্তির পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ায় পরমাণু নামক জটিল কাঠামো তৈরি হতে থাকে; কিছু পরমাণু পরবর্তীতে একত্রিত হয়ে অণুতে পরিণত হয়। এই পরমাণু, অণু এবং তাদের পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার গল্প শোনায়- রসায়ন।

প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে, পৃথিবী নামক গ্রহে, কিছু নির্দিষ্ট অণুর বিক্রিয়ায় কিছু বৃহৎ ও জটিল কাঠামো গঠিত হলো; জন্ম নিলো প্রাণ। প্রাণ ও জীবের গল্পটি হলো জীববিদ্যা।

৭০,০০০ বছর আগে, হোমো সেপিয়েন্স নামক একটি প্রজাতি বিস্তৃত সামাজিক কাঠামো গড়ে তুলতে শুরু করে; যাকে বলা হয় সংস্কৃতি। মানুষের সংস্কৃতির ক্রমবিকাশই গড়ে তুলেছে ইতিহাস।

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লব ইতিহাসের গতিপথকে আকার দিয়েছে: (১) বৌদ্ধিক বিপ্লব; ৭০ হাজার বছর আগে যার ফলে আধুনিক মানব-ইতিহাসের সূচনা হয়। (২) কৃষিজ বিপ্লব; যা শুরু হয়েছিল ১২,০০০ বছর পূর্বে; (৩) বৈজ্ঞানিক বিপ্লব; যা মাত্র ৫০০ বছর আগে ঘটেছে, যে বিপ্লব টেনে আনতে পারে ইতিহাসের সমাপ্তি কিংবা জন্ম দিতে পারে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছুর। আলোচ্য তিনটি বিপ্লব কিংবা আন্দোলন কীভাবে মনুষ্য প্রজাতি এবং তার সঙ্গী জীবজগতকে প্রভাবিত করেছে- এই গ্রন্থ সেই গল্পটিই বলছে।

ইতিহাসের সূচনালগ্নের বহু আগে থেকেই মানুষ পৃথিবীতে ছিল। সর্বপ্রথম মনুষ্য আকৃতির প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে। কিন্তু আদি মানবেরা অগণিত প্রজন্ম ধরে হাজারো প্রজাতির জীবের সাথে নিজেদের আবাস ভাগাভাগি করে নিলেও বাকিদের চাইতে খুব একটা স্বতন্ত্র ছিল না।

আপনি যদি আজ থেকে ২ মিলিয়ন বছর আগের পূর্ব আফ্রিকায় বেড়াতে যান, তাহলে কিছু পরিচিত মনুষ্য চরিত্রের মুখোমুখি হয়ে যেতে পারেন, যাদের মধ্যে থাকতে পারে: শিশুকে বুকে চেপে রাখা উদ্বিগ্ন মা; কাঁদায় খেলে বেড়ানো উচ্ছৃঙ্খল ছেলেপেলে; সমাজের কর্তৃত্বে বিরক্ত মেজাজি যুবক; ক্লান্ত বুড়ো যারা একটু শান্তিতে থাকতে চায়; কোনো সুন্দরীর আকর্ষাণার্থী বুক চাপড়ে বেড়ানো পেশিবহুল পুরুষ; এবং জীবনের সব দেখে ফেলা বৃদ্ধ কর্ত্রী। এইসব আদি-মানবেরা ভালোবাসতো, খেলত, তৈরি করতো বন্ধুত্ব; আবার ক্ষমতা ও মর্যাদার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। কিন্তু শিম্পাঞ্জী, বেবুন এবং হাতিরাও তো তা-ই করতো। এসবের মাঝে অসাধারণ কিছুই ছিল না। সে যুগের পৃথিবীর কারো কাছে বিন্দুমাত্র ধারণাই ছিল না যে এই প্রাগৈতিহাসিক মানবদের উত্তরসূরিরা ভবিষ্যতে কোনো একদিন চাঁদে হেঁটে বেড়াবে, বিভাজিত করবে পরমাণু, উপলব্ধি করবে জিনের সংকেত এবং লিখবে ইতিহাসের বই। এমনকি আদি মানবেরাও হয়ত নিজেদের নিয়ে এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষা রাখত না। প্রাগৈতিহাসিক মানবদের সম্পর্কে যে বিষয়টি জানা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো- এরা ছিল তাৎপর্যহীন ও গৌণ প্রাণী-গোষ্ঠী যারা তাদের প্রতিবেশে কোনো গরিলা, জোনাকিপোকা কিংবা জেলিফিশের চেয়ে খুব একটা বেশি প্রভাব রাখতে পারে নি।

জীববিজ্ঞানীরা জীবজগতকে বিভিন্ন প্রজাতিতে শ্রেণিবদ্ধ করেন। যেসব প্রাণী নিজেদের মধ্যে যৌনমিলনের মাধ্যমে উর্বর উত্তরসূরির জন্ম দিতে পারে তাদেরকে একই ‘প্রজাতি’র (species) অন্তর্ভূত প্রাণী হিশেবে গণ্য করা হয়। যেমন, ঘোড়া ও গাধার রয়েছে সাধারণ পূর্বসূরি এবং তাদের মধ্যে প্রচুর শারীরিক মিলও খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু তারা পরস্পরের সাথে যৌনমিলনে আগ্রহী নয়। তবে বাধ্য করা হলে তারা মিলিত হবে- কিন্তু জন্ম নেবে অনুর্বর সন্তান। যে কারণে গাধার ডিএনএতে ঘটা পরিব্যক্তি কখনো ঘোড়ার ডিএনএ’র সাথে মিশ্রিত হতে পারে না। এই দুই ধরনের প্রাণীকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টি প্রজাতির সদস্য গণ্য করা হয় কারণ বিবর্তনের পথ ধরে বহুকাল আগেই এরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অন্যদিকে, একটি বুলডগ ও একটি স্প্যানিয়েল দেখতে যতোই ভিন্ন হোক না কেন তারা কিন্তু একই প্রজাতির প্রাণী; তারা অনুরূপ ডিএনএ সেটের অংশীদার। অত্যন্ত আনন্দের সাথে তারা পরস্পর মিলিত হবে এবং তাদের বাচ্চাকাচ্চা বড় হয়ে অন্য কুকুরের সাথে মিলিত হয়ে আরো সন্তান-সন্ততি উৎপাদন করবে।

যেসব প্রজাতি অতীতের একটি সাধারণ পূর্বসূরি থেকে উৎপত্তি লাভ করে কালক্রমে বিবর্তিত হয়েছে তাদেরকে ‘গণ’(Genus) নামক দলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাঘ, সিংহ, চিতা এবং জাগুয়ার প্রত্যেকে ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী হলেও প্রত্যেকে ‘প্যানথেরা’(Panthera) গণের অন্তর্ভুক্ত। জীববিজ্ঞানীরা প্রতিটি জীবকেই একটি দ্বিপদী ল্যাটিন নাম দিয়েছেন; যার প্রথমটি নির্দেশ করে গণ, পরেরটি প্রজাতি। উদাহরণস্বরূপ, সিংহের বৈজ্ঞানিক নাম হলো ‘প্যানথেরা লিও’(Panthera leo), যেখানে ‘Panthera’ ও ‘leo’ যথাক্রমে গণ ও প্রজাতিকে নির্দেশ করছে। স্বাভাবিকভাবেই, এই বইটি যারা পড়ছেন তাদের সবাই-ই ‘হোমো সেপিয়েন্স’(Homo sapiens) প্রজাতির প্রাণী। এখানে ‘Homo’(মানব) হলো গণের নাম এবং ‘sapiens’(জ্ঞানী) হলো প্রজাতি।

আবার বেশ কিছু গণের প্রাণী একত্রিত হয়ে গঠন করে ‘গোত্র’ (Family); যেমন- বিড়াল গোত্র (সিংহ, চিতা, সাধারণ বিড়াল), কুকুর গোত্র (নেকড়ে, শৃগাল, খেঁকশিয়াল), হাতি গোত্র (হাতি, ম্যামথ, মাস্তডন) ইত্যাদি। প্রতিটি গোত্রের সদস্যই অতীতের কোনো এক কালে একটি সাধারণ পূর্বসূরি থেকে উৎপত্তি লাভ করে বিবর্তিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের বাড়িতে বসবাস করা সাধারণ বিড়াল থেকে শুরু করে আফ্রিকার ভয়ংকর সিংহ, প্রত্যেকেরই একটি সাধারণ পূর্বসূরি রয়েছে যারা আজ থেকে ২৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে চরে বেড়াত।

হোমো সেপিয়েন্সও একটি নির্দিষ্ট গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। তবে এই সাধারণ তথ্যটি ছিল মানুষের ইতিহাসের সবচেয়ে গুপ্ত রহস্যগুলোর একটি। আমরা, মানুষেরা, সর্বযুগেই নিজেদেরকে প্রাণিজগৎ থেকে একেবারে আলাদা একটি জাতি হিশেবে বিবেচনা করেছি; যেন আমরা পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ, আমাদের নেই কোনো জ্ঞাতি ভাইবোন কিংবা দূর সম্পর্কের আত্মীয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, ব্যাপারটি সত্য নয়। আপনি পছন্দ করুন বা না-ই করুন, আমরা সকলেই একটি বিশাল এবং বিশেষভাবে গোলমেলে গোত্রের অন্তর্ভুক্ত প্রাণী; গোত্রের নাম ‘মহান বানর’ ( The Great apes)। আমাদের কাছের আত্মীয়ের মাঝে এখনও বেঁচে আছে শিম্পাঞ্জী, গরিলা এবং ওরাংওটাং। বেঁচে থাকা আত্মীয়দের মধ্যে শিম্পাঞ্জী আমাদের সবচাইতে নিকটবর্তী । মাত্র ৬ মিলিয়ন বছর আগে, কোনো এক নারী এপের (Ape) দু’টো কন্যাসন্তান জন্মেছিল; যাদের একজন পরিণত হয়েছিল সকল শিম্পাঞ্জীর পূর্বসূরিতে, অন্যজন হলো আমাদের সবার আদি মাতামহ।


লুকিয়ে থাকা ফসিল

হোমো সেপিয়েন্স দারুণ রোমাঞ্চকর আরেকটি তথ্য লুকিয়ে রেখেছিল। আমাদের যে বেশ কিছু দূরবর্তী আত্মীয় রয়েছে শুধু তা-ই নয়, বহুকাল আগে আমাদের অল্প কিছু ভাইবোনও ছিল। আমরা সাধারণত মনে করি যে, আমরাই পৃথিবীর একমাত্র মনুষ্য প্রজাতি, কারণ ১০ হাজার বছর ধরে কেবলমাত্র আমাদের প্রজাতিই পৃথিবীতে বিচরণ করেছে। যদিও ‘মানব’ শব্দের সত্যিকারের অর্থ হলো “Homo গণের অন্তর্গত প্রাণী”। তাই বলা যায়, হোমো সেপিয়েন্স ছাড়াও উক্ত গণের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীও একসময় পৃথিবীতে ছিল। উপরন্তু, এই বইয়ের শেষ অধ্যায়ে আমরা দেখব যে, অদূরবর্তী কোনো ভবিষ্যতে আমাদেরকে হয়ত ‘সেপিয়েন্স’ ভিন্ন কোনো মানব প্রজাতির সাথে যুঝতে হবে। একটি বিষয়ে স্পষ্ট করে বলি- এখন থেকে আমি হোমো সেপিয়েন্সকে নির্দেশ করতে প্রায়ই শুধুমাত্র ‘‘সেপিয়েন্স’’ শব্দটি ব্যবহার করব; আর ‘মানব’ বা ‘মানুষ’ দিয়ে নির্দেশ করব ‘Homo’ গণের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য মানব প্রজাতিকে।

প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে, পূর্ব আফ্রিকায় বসবাসকারী ‘অস্ট্রালোপিথেকাস’ নামক লেজবিহীন বানরের গণ থেকে বিবর্তিত হয়ে আদি মানবেরা সর্বপ্রথম পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়। প্রায় ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে, এই প্রাগৈতিহাসিক মানবদের একটি দল তাদের জন্মভূমি ছেড়ে নানান দিকে যাত্রা শুরু করে এবং ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে উত্তর আফ্রিকা, ইউরোপ আর এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। যেহেতু উত্তর ইউরোপের তুষারাচ্ছন্ন এলাকায় বেঁচে থাকার জন্য যে ধরনের বৈশিষ্ট্যাবলী জরুরী সেগুলো ইন্দোনেশিয়ার প্লাবিত বনভূমিতে প্রয়োজনীয় গুণাবলীর তুলনায় ভিন্ন, সেহেতু বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত মানবগোষ্ঠীর বিবর্তন নানা বিচিত্র দিকে মোড় নেয়। যার ফলে পৃথক পৃথক কিছু মানব প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। বিজ্ঞানীরা এদের প্রত্যেকের জন্যই আলাদা বৈজ্ঞানিক নাম বরাদ্দ করেছেন।

আদি মানবদের যে দল ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা অঞ্চলে স্থায়ী হয়েছিল তারা কালক্রমে বিবর্তিত হয়ে ‘Homo neanderthalensis’ ( ‘নিয়ান্ডার উপত্যকার মানব’) প্রজাতিতে পরিণত হয়। এদেরকে সাধারণভাবে শুধুমাত্র ‘নিয়ান্ডারথাল’ (Neanderthal) নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ইউরেশিয়ার নিয়ান্ডারথালরা বরফযুগের শীতল জলবায়ুতে খুব ভালোভাবে অভিযোজিত হতে পেরেছিল। ওরা ছিল সেপিয়েন্সের তুলনায় বিশাল এবং অধিক পেশিবহুল। অন্যদিকে, এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে জনবসতি গড়ে তুলেছিল মানুষের আরেক প্রজাতি- ‘Homo erectus’, যার অর্থ ‘খাড়া মানব’। হোমো ইরেক্টাস হলো পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘসময় বেঁচে থাকা মানব প্রজাতি; ওরা প্রায় ২০ লক্ষ বছর পৃথিবীতে বিচরণ করেছে। এই রেকর্ড খুব সম্ভবত অক্ষত থাকবে। কারণ আমাদের নিজ প্রজাতি ‘হোমো সেপিয়েন্স’ আগামী ১০০০ বছর বেঁচে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে; ২০ লক্ষ বছরের পথ পাড়ি দেয়া আমাদের সাধ্যের বাইরে।

ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে এক মানব প্রজাতি বাস করত যারা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে অভিযোজিত হতে পেরেছিল। ওদের নাম দেয়া হয়েছে ‘‘Homo soloensis’ (‘সোলো উপত্যকার মানব’)। ইন্দোনেশিয়ার আরেকটি ছোট দ্বীপ ফ্লোরেসে (Flores) আদি মানবদের একটি দলকে এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় যার ফলে তারা হয়ে পড়ে খর্বাকৃতির। আদি মানবদের প্রথম দল যখন ফ্লোরেস দ্বিপে পৌঁছায় তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের স্তর অনেক নিচে ছিল। পরবর্তীতে যখন সমুদ্রতলের উচ্চতা বেড়ে যায় , তখন কিছু মানুষ সেই সম্বলহীন দ্বীপে আটকা পড়ে। বিশাল-দেহী মানুষ, যাদের বেঁচে থাকার জন্য বেশি খাদ্যের প্রয়োজন ছিল, তারা সবার আগে মারা পড়ে। তুলনামূলক ছোট মানুষেরা বেঁচে যায়। পরবর্তী প্রজন্মগুলোতেও একই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এভাবে অনেকগুলো প্রজন্ম অতিবাহিত হবার পর ফ্লোরেস দ্বীপের মানুষ ‘‘খর্ব মানবে’’ পরিণত হয়। এই অনন্য প্রজাতির মানবদের, বিজ্ঞানীরা যাদের নাম দিয়েছেন ‘Homo floresiensis’ , উচ্চতা ছিল সর্বোচ্চ এক মিটার এবং ওজন কোনোভাবেই ২৫ কেজির বেশি নয়। খর্বাকৃতির মানব হওয়া স্বত্বেও এরা পাথরের নানা সরঞ্জাম তৈরি করতে পারত, এমনকি মাঝে মাঝে দ্বীপের হাতিও শিকার করতে পারত। যদিও সত্যি বলতে কি, ওই দ্বীপের হাতির প্রজাতিও ছিল খর্বাকৃতির।

২০১০ সালে, বিজ্ঞানীরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া আরেক সহোদরকে বিস্মৃতি থেকে উদ্ধার করেন যখন তাঁরা সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা দ্বীপের একটি গুহায় একটি প্রস্তরীভূত আঙ্গুলের হাড় খুঁজে পান। জিন-তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয় যে, এই হাড় এযাবতকালের পরিচিত কোনো মানব প্রজাতির নয়। অজানা এই মানব প্রজাতির নাম দেয়া হয় ‘হোমো ডেনিসোভা’ (“Homo denisova”)। কে-ই বা জানে, আমাদের আরো কতো হারানো আত্মীয় আবিষ্কৃত হবার অপেক্ষায় আছে কোনো দ্বীপ, গুহা কিংবা ভূখণ্ডে!

যখন ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে বসবাসরত মানুষ বিবর্তিত হচ্ছিল, তখন কিন্তু পূর্ব আফ্রিকায় বিবর্তনের চাকা থেমে থাকে নি। মনুষ্যজাতির সূতিকাগার নতুন নতুন অনেক প্রজাতির জন্ম দিয়ে গেছে; যেমন- “Homo rudolfensis” (“লেক রুডলফের মানব”), “Homo ergaster” বা “কর্মঠ মানব”, এবং অবশেষে আমাদের নিজস্ব প্রজাতি, যাদেরকে আমরা খুব নির্লজ্জভাবে নাম দিয়েছি “Homo sapiens”, বা “জ্ঞানী মানব”।

এই প্রজাতিগুলোর সদস্যদের কেউ কেউ ছিল আকারে বিশাল এবং অন্যেরা খর্বাকৃতির। কেউবা ছিল হিংস্র শিকারি, আবার কেউ নেহাতই নিরীহ ফলমূল সংগ্রহকারী। কেউ বাস করত শুধুমাত্র একটি দ্বীপে, আবার কেউ কেউ পুরো মহাদেশজুড়ে। কিন্তু তাদের সকলেই ছিল ‘হোমো’ (Homo) গণের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি। ওরা সবাই ছিল মানুষ।

প্রজাতিগুলোর উৎপত্তির ক্রমকে সরলরৈখিক হিশেবে কল্পনা করাটা একটা সাধারণ হেত্বাভাস; যেমন- ইরগেস্টার জন্ম দিয়েছে ইরেক্টাসের, ইরেক্টাস থেকে জন্ম নিয়ে নিয়েছে নিয়ান্ডারথাল, এবং নিয়ান্ডারথাল থেকে বিবর্তিত হয়ে আমরা এসেছি। এই ধরনের সরলরৈখিক মডেল এমন একটি ভ্রান্ত চিত্রকল্প প্রদান করে যাতে মনে হয় যে ইতিহাসের কোনো নির্দিষ্ট একটি সময়ে শুধুমাত্র একটি মানব প্রজাতিই পৃথিবীতে বসবাস করত। সত্যটি হলো এই যে, প্রায় দুই মিলিয়ন বছর পূর্ব থেকে মোটামুটি ১০ হাজার বছর আগে পর্যন্ত আমাদের এই পৃথিবীতে একই সময়ে একাধিক মানব প্রজাতির নিবাস ছিল। এবং কেন নয়? বর্তমানে শিয়াল, ভালুক কিংবা শুকরের একাধিক প্রজাতি আমরা দেখতে পাই; তাহলে মানুষের কেন নয়? এক লক্ষ বছর আগের পৃথিবীতে মানুষের অন্তত ছয়টি ভিন্ন প্রজাতি একই সময়ে পৃথিবীতে বিচরণ করেছে। তবে বহু-প্রজাতিসম্পন্ন অতীত নয়, আমাদের প্রজাতির একচ্ছত্র আধিপত্য-সম্পন্ন বর্তমানই বরং অদ্ভুত, এবং সম্ভবত দোষাবহও। শীঘ্রই আমরা দেখতে পাবো যে, আমাদের সহোদরদের স্মৃতি অন্তরীণ রাখার পেছনে সেপিয়েন্সের হাতে বেশ ভালো কিছু কারণ ছিল।


চিন্তাশক্তির মাশুল

নানা পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, সব মানব প্রজাতিরই কিছু লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, অন্য প্রাণীদের তুলনায় মানুষের মস্তিষ্ক অস্বাভাবিকভাবে বড়। যেসব স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওজন ৬০ কেজি তাদের মস্তিষ্কের গড়পড়তা আয়তন ২০০ ঘন সেন্টিমিটার। আড়াই মিলিয়ন বছর আগের সবচেয়ে প্রাচীন মানব নর-নারীর মস্তিষ্কের আকার ছিল প্রায় ৬০০ ঘন সেন্টিমিটারের কাছাকাছি। আধুনিক সেপিয়েন্সের মস্তিষ্কের গড় আয়তন ১২০০ থেকে ১৪০০ ঘন সেন্টিমিটার। নিয়ান্ডারথালদের মস্তিষ্ক ছিল আরো বড়।

আমাদের মনে হতে পারে যে, বিবর্তনের চাকা বড় মস্তিষ্ককে বেছে নিয়েছে- এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। আমরা আমাদের উচ্চ বুদ্ধিমত্তা কর্তৃক এতোটাই মোহিত হয়ে থাকি যে, আমরা স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিই- মস্তিষ্কের আকার যতো বড় এবং শক্তি যতো বেশি হবে ততো ভালো। কিন্তু এমনটাই যদি সত্যি হতো, তাহলে দেখা যেত বিবর্তনের পথে বিড়াল গোত্র থেকে এমন বিড়াল জন্ম নিচ্ছে যারা ক্যালকুলাস পারে। তাহলে পুরো প্রাণীজগতের মাঝে কেবল ‘হোমো’ গণের প্রজাতিগুলোর মাঝেই কেন এতো বিশাল ‘ভাবনা-যন্ত্র’ জন্ম নিয়েছে?

প্রকৃত ঘটনা হলো, দশাসই মস্তিষ্ক শরীরের জন্য একটি মস্ত ঝামেলা। একে-তো এটি বয়ে বেড়ানো সহজ কাজ নয়, বিশেষ করে যখন একে একটি ঢাউস খুলির ভেতরে আবদ্ধ রাখতে হয়। তার ওপর এর জ্বালানী যোগানোও বেশ কঠিন কাজ। ‘হোমো সেপিয়েন্সের’ মস্তিষ্কের ওজন তার শরীরের মোট ওজনের শতকরা ২-৩ ভাগ মাত্র, কিন্তু শরীরের উৎপাদিত শক্তির অন্তত প্রায় শতকরা ২৫ ভাগই মস্তিষ্ক দখল করে নেয়, এমনকি বিশ্রামে থাকাকালীন সময়েও। অন্যদিকে, অন্যান্য এপের মস্তিষ্ক বিশ্রামকালে তাদের শরীরের উৎপাদিত শক্তির শতকরা ৮ ভাগ খরচ করে। প্রাগৈতিহাসিক মানবদেরকে এই বিশাল মস্তিষ্কের মাশুল দু’ভাবে গুণতে হয়েছিল। প্রথমত, তাদেরকে খাবারের খোঁজে বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তাদের পেশিগুলো ক্রমে ক্ষয়ে গিয়েছিল। অনেকটা সরকার যেভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ শিক্ষাখাত থেকে সরিয়ে সামরিক খাতে নিয়ে আসে, তেমনই মানুষ তার শরীরের উৎপাদিত শক্তির গতি-মুখ বদলে মাংসপেশি থেকে নিউরনে নিয়ে আসে। এটি তখনকার তৃণভূমিতে বেঁচে থাকার জন্য খুব একটা ভালো কৌশল ছিল কিনা তা নিয়ে পূর্ব-সিদ্ধান্তে আসা খুব কঠিন। কেননা একটি শিম্পাঞ্জী কোনো হোমো সেপিয়েন্সের সাথে তর্কে জিততে পারবে না, কিন্তু চাইলে মানুষকে একটি পুতুলের মতো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে পারে।

আজকের দিনে আমাদের মস্তিষ্ক বেঁচে থাকতে দারুণ সাহায্য করছে, কারণ আমরা এই অঙ্গটির সাহায্য নিয়ে গাড়ি ও অস্ত্র তৈরি করতে পারি যা দিয়ে আমরা একটি শিম্পাঞ্জীর চাইতে জোরে ছুটতে পারি, এবং নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে গুলি করতে পারি, কোনোপ্রকার মল্লযুদ্ধে না গিয়েই। কিন্তু গাড়ি ও অস্ত্র- এসবই তো মাত্র সেদিনকার আবিষ্কার। প্রায় দুই মিলিয়ন বছর ধরে, মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের আকার শুধু বেড়েছে আর বেড়েছে, কিন্তু মনুষ্যজাতি এটা দিয়ে খুব বিশেষ কিছু করে দেখাতে পারে নি, কেবল মুষ্টিমেয় কিছু চকমকে ছুরি আর তীক্ষ্ণ বর্শা তৈরি করা ছাড়া। তাহলে দুই মিলিয়ন বছর ধরে মানুষের বিশাল মস্তিষ্কের এই বিবর্তনের হেতু কী? সত্যি বলতে কি, আমরা জানি না।

মানুষের আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এই যে আমরা দু’পায়ে খাড়া হয়ে হাঁটতে পারি। খাড়া হয়ে দাঁড়ালে তৃণভূমিতে শিকার কিংবা শিকারির খোঁজ পাওয়াটা সহজতর হয়। আর সামনের বাহু দু’টো যেহেতু আর চলাচলের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না সেহেতু এগুলোকে অন্য কাজে লাগানো যায়, যেমন- পাথর ছোঁড়া কিংবা সংকেত প্রদান। হাতের ব্যবহারে যারা অধিকতর পটু ছিল, তারা অন্যদের তুলনায় ছিল বেশি সফল। তাই বিবর্তনীয় চাপ আমাদের হাতের আঙুল আর তালুতে স্নায়ুর সমাবেশ ঘটিয়েছে এবং মাংসপেশিতে এনেছে সামঞ্জস্যতা। যার ফলে, মানুষ হাত দিয়ে জটিল সব কাজ সম্পাদন করতে পারে। বিশেষ করে, তারা বানাতে এবং ব্যবহার করতে পারে জটিল সব যন্ত্রপাতি। পাথুরে সরঞ্জাম ব্যবহারের একেবারে প্রাচীন যে প্রমাণ পাওয়া যায় তা প্রায় আড়াই মিলিয়ন বছর পুরনো। নৃতত্ত্ববিদেরা পাথুরে সরঞ্জামের ব্যবহার এবং উৎপাদনের চিহ্ন দেখেই প্রাচীন মানুষদের আলাদা করে চিনতে পারেন।

তবে খাড়া হয়ে হাঁটার কিছু অসুবিধাও আছে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আমাদের পূর্বসূরি প্রাইমেটদের কঙ্কালতন্ত্র বিবর্তিত হয়েছে চার পায়ে হাঁটা প্রাণীদের জন্য, যাদের আছে অপেক্ষাকৃত ছোট মাথা। এই অবস্থায় খাড়া হয়ে দাঁড়ানোটা ছিল বেশ বড় একটি চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে যখন ঘাড়ে একটি অস্বাভাবিক আকৃতির খুলি বয়ে বেড়াতে হতো। মনুষ্যজাতিকে উন্নত দৃষ্টিশক্তি ও কর্মক্ষম হাত পাবার মূল্য চুকাতে হয়েছে পিঠ ব্যথা এবং অনমনীয় ঘাড়কে বরণ করে।

নারীরা মূল্য চুকিয়েছে সবচেয়ে বেশি। সোজা হয়ে চলাফেরার জন্য প্রয়োজন ছিল আরো সংকীর্ণ পশ্চাৎ-ভাগ, যার ফলে জননপথ ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়ে। ব্যাপারটি ঘটেছে ঠিক সেই সময়েই যখন সদ্য জন্ম নেয়া শিশুদের মাথা বড় থেকে আরো বড় হচ্ছে। জন্মকালীন শিশুমৃত্যু নারীদের জন্য একটি বড় বিপত্তি হয়ে দাঁড়ায়। যেসব নারী তাড়াতাড়ি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে, যখন শিশুর মস্তিষ্ক ও খুলি আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট ও নমনীয় থাকে, তাদের বেঁচে থাকা এবং আরো সন্তান জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। প্রাকৃতিক নির্বাচন অপেক্ষাকৃত দ্রুত জন্মদানকে পক্ষপাত দেখিয়েছে। এবং সত্যি বলতে কী, অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় মানুষ অকালেই জন্ম নেয়, যখন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয় না। একটি অশ্বশাবক জন্মের কিছুক্ষণ পরেই হাঁটাচলা করতে পারে; একটি বিড়ালছানা মাত্র কয়েক সপ্তাহ বয়সেই মা’কে ছেড়ে খাদ্যের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে, মনুষ্য শিশুরা থাকে একেবারে অসহায়; তাদেরকে খাদ্য, নিরাপত্তা আর শিক্ষার জন্য বড়দের উপর নির্ভর করতে হয় বছরের পর বছর।

এই ব্যাপারটি একইসাথে মানুষের অসাধারণ সামাজিক দক্ষতা নির্মাণে এবং এর অনন্য সমস্যাগুলো তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। একা মায়েরা কখনোই নিজেদের এবং নিজেদের শিশুদের জন্য যথেষ্ট খাদ্য জোগাড় করতে পারতো না। শিশু বড় করে তোলার জন্য প্রয়োজন ছিল পরিবার ও প্রতিবেশীর সহায়তা। একটি শিশুকে মানুষ করে তোলার জন্য প্রয়োজন একটি পুরো গোত্র। স্বাভাবিকভাবেই, বিবর্তন তাদের প্রতি আনুকূল্য দেখিয়েছে যারা শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলতে পেরেছিল। উপরন্তু, মানুষ যেহেতু অপূর্ণভাবে বিকশিত হয়ে জন্ম নেয়, সেহেতু তাদেরকে অন্য যে কোনো প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে শিক্ষিত ও সামাজিক করে তোলা সম্ভব। বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণী জন্ম নেয় অনেকটা মাটির পোড়ার পাত্রের মতো হয়ে, যাকে বাঁকাতে চাইলে আঁচড় পড়তে পারে কিংবা ভেঙেই যেতেই পারে। মানুষ জন্ম নেয় অনেকটা গলিত গ্লাসের মতো; তাদেরকে যেমন খুশি তেমন মোচড় দেয়া যায় কিংবা প্রসারিত করা যায় এবং ইচ্ছেমত আকার দেয়া যায়। এই কারণেই আজকে আমরা শিশুদেরকে খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ হিশেবে বড় করে তুলতে পারি, কিংবা গড়ে তুলতে পারি পুঁজিবাদী কিংবা সাম্যবাদী হিশেবে; এমনকি শান্তিপ্রিয় কিংবা রণ-লিপ্সু হিশেবে।

***

আমরা সাধারণত ধরে নিই যে, বড় মস্তিষ্ক, পাথুরে সরঞ্জামের ব্যবহার, যে কোনো কিছু শিখে নেয়ার উচ্চ ক্ষমতা এবং জটিল সামাজিক কাঠামোর মতো সুবিধাজনক গুণাবলী আমাদেরকে অন্য প্রাণীদের তুলনায় অনেক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। এটা স্বতঃসিদ্ধ বলে মনে হতে পারে যে, এই সকল সুবিধাবলীর কারণেই মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত গুণাবলীই মানুষের মানুষ উপভোগ করেছে প্রায় ২ মিলিয়ন বছর ধরে, তারপরও পুরো সময়েই মানুষ একটি দুর্বল ও প্রান্তীয় প্রজাতি হিশেবেই বেঁচে ছিল। মিলিয়ন বছর আগের আদি মানবেরা, বিরাট মস্তিষ্ক এবং তীক্ষ্ণ পাথুরে অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও, প্রতিনিয়ত শিকারি প্রাণীর ভয়ে তটস্থ থাকত। তারা বড় প্রাণী খুব কমই শিকার করতে পারত; নিজেদের বাঁচিয়ে রাখত মূলত ফলমূল ও পোকামাকড় খেয়ে, মাঝেমধ্যে ছোট প্রাণী শিকার করে এবং অন্যান্য শিকারি প্রাণীর ফেলে যাওয়া শিকারের উচ্ছিষ্ট খেয়ে।

সবচেয়ে প্রাচীন পাথুরে অস্ত্রগুলো সাধারণ যে কাজটিতে ব্যবহৃত হতো তা হলো- হাড় ভেঙ্গে সেখান থেকে অস্থিমজ্জা বের করে আনা। কিছু কিছু গবেষক মনে করে থাকেন যে, এটি মানুষের উদ্ভাবিত একটি মৌলিক কাজ। কাঠঠুকরে যেমন গাছের গুড়ি থেকে পোকা বের করে আনায় দক্ষ, ঠিক তেমনিভাবে আদি মানুষেরা হাড় থেকে অস্থিমজ্জা বের করে আনায় বিশিষ্টতা অর্জন করেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কেন অস্থিমজ্জা বের করে খেত ওরা? ওই সময়ের প্রেক্ষিতে নিজেকে কল্পনা করুন। আপনি দেখতে পেলেন, সিংহের দল একটি জিরাফ শিকার করেছে এবং পেট পুরে খাচ্ছে। আপনি ধৈর্যের সাথে ওদের খাওয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রইলেন। কিন্তু ওরা চলে গেলেও আপনার সুযোগ আসবে না, কেননা তখন হায়েনা আর শিয়ালের পালা, এবং আপনি বুদ্ধিমান হলে ওদের সাথে প্রতিযোগিতায় যাবার সাহস করবেন না। ওরা সিংহের ফেলে যাওয়া শিকারের বাকিটা চেটেপুটে খাবে। ওরা চলে যাবার পরই আপনার এবং আপনার গোত্রের পালা আসবে। আপনি খুব সতর্কভাবে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্টের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলেন কিছু অবশিষ্ট নেই, কেবল কিছু হাড় পড়ে আছে; তখন আপনি সেই হাড় ভেঙ্গে অস্থিমজ্জা বের করে খেতে শুরু করলেন।

এই ব্যাপারটি আমাদের ইতিহাস এবং মনোজগতকে বুঝে উঠার একটি চাবিকাঠি। কিছুকাল পূর্বেও, খাদ্য শৃঙ্খলে ‘হোমো’ গণের প্রাণীদের অবস্থান ছিল মাঝামাঝি। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে, মানুষ ছিল পৃথিবীর ছোট একটি প্রাণী- যারা যা যোগাড় করতে পারত তা-ই খেত; অন্যদিকে প্রায়শই অন্যান্য বড় শিকারি প্রাণীদের শিকারে পরিণত হতো। মাত্র ৪ লক্ষ বছর আগে, মানুষের অল্প কিছু প্রজাতি নিয়মিতভাবে বড় প্রাণী শিকার করতে শুরু করে, এবং মাত্র ১ লক্ষ বছর আগে- হোমো সেপিয়েন্সের উত্থানের পর- মনুষ্যজাতি লাফ দিয়ে খাদ্য শৃঙ্খলের চূড়ায় উঠে।

হঠাৎ করেই খাদ্য শৃঙ্খলের মাঝামাঝি অবস্থান থেকে চূড়ায় পৌঁছে যাওয়ার প্রভাবটি ছিল বেশ সাঙ্ঘাতিক। অন্যান্য যেসব প্রাণী খাদ্য শৃঙ্খলের একেবারে চূড়ায় ছিল, যেমন- সিংহ, হাঙর; তারা ওই অবস্থান অর্জন করেছে খুবই ধীরে ধীরে, কোটি বছরের বিবর্তনের পর। তাই পারিপার্শ্বিক বাস্তুতন্ত্র সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছে, যার ফলে সিংহ কিংবা হাঙর- কেউই খুব বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে নি। সময়ের সাথে সিংহ ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে ভয়ংকর শিকারি, একই সাথে হরিণের দল বিবর্তিত হয়ে আরো দ্রুত দৌড়াতে শিখেছে, হায়েনার দল নিয়ে নিয়েছে সাহায্যকারীর ভূমিকা, আর গণ্ডারেরা হয়ে উঠেছে বদমেজাজি। অন্যদিকে, মনুষ্যজাতি এতো দ্রুত খাদ্য-শৃঙ্খলের চূড়ায় উঠে পড়েছে যে, পারিপার্শ্বিক বাস্তুতন্ত্র ঠিকমতো অভিযোজিত হবার সময় পায় নি। উপরন্তু, মানুষও ঠিকমতো নিজেকে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে নি। পৃথিবীর বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় শিকারি প্রজাতি যেন একেকটি রাজকীয় প্রাণী। লক্ষ লক্ষ বছরের আধিপত্য তাদের মাঝে এনে দিয়েছে অসম্ভব আত্মবিশ্বাস। সেদিক দিয়ে তুলনা করলে, হোমো সেপিয়েন্স যেন কোনো বেনানা রিপাবলিকের স্বৈরশাসক। কিছুকাল আগেও আমরা ছিলাম সাভানার অসহায় একটি প্রাণী; সেখান থেকে হঠাৎ আজকের অবস্থানে উঠে এসে আমরা যেন নিজেদের অবস্থান নিয়ে ভীত ও চিন্তিত, যা আমাদেরকে করে তুলেছে দ্বিগুণ হিংস্র ও ভয়ংকর। ইতিহাসের অসংখ্য ধ্বংসলীলা, রক্তাক্ত যুদ্ধ থেকে শুরু করে পরিবেশ বিপর্যয়ের পেছনে এই হড়বড়ে উল্লম্ফনের দায় আছে।
(১ম অধ্যায় আগামী পর্বে সমাপ্য- লিংক)

১ম অধ্যায়- [২য় পর্ব]
২য় অধ্যায়- [১ম পর্ব]


মন্তব্য

সত্যপীর এর ছবি

চমৎকার। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

..................................................................
#Banshibir.

নিটোল এর ছবি

ধন্যবাদ। পরের পর্ব শীঘ্রই আসছে। হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

সজীব ওসমান এর ছবি

দারুণ উদ্যোগ। চালিয়ে যান। পড়বো।

নিটোল এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যে উৎসাহ পেলাম। হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

অতিথি লেখক এর ছবি

এমন একটা বই পেলে নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা বেঁচে যেত আক্ষরিক অর্থেই। এত কঠিন করে লেখা থাক সব, বেচারাদের ফার্স্ট ইয়ারে গিয়েই পুরো ‘ধরা খেয়ে’ যেতে হয়। আর বাংলা যে দু’একটা অবশ্যপাঠ্য বই আছে-সেগুলোর চেয়ে ইংরেজি বইও ঢের সোজা ক্লাসের শেষজনের কাছেও। আপনার লেখায় অসংখ্য চলুক । আর ‘বৌদ্ধিক’ মানে তো ‘বুদ্ধিবৃত্তিক’ তাই না? আমার কেন জানি বৌদ্ধিক শব্দটায় এখনও সমস্যা হয় হাসি, বেশ প্রচলিত শব্দ, তবু।

দেবদ্যুতি

নিটোল এর ছবি

নৃবিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য। লেখক এই বইয়ে অসংখ্য নতুন আবিস্কার ও তত্ত্বের সমন্বয়ে ইতিহাসের নানা অধ্যায় বিশ্লেষণ করেছেন।

_________________
[খোমাখাতা]

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশে নৃবিজ্ঞানের পাঠ্যতালিকায় এই বইটি বোধহয় কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। আর বেচারা শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের দেয়া এত এত বইয়ের চাপে নিজেরা বই খোঁজারও সময় পায় না। অবশ্য খুব যে আগ্রহ আছে সবার, তাও না। তবে বইটি অনুবাদ দেখে মনে হচ্ছে, বইটি আসলেই অবশ্যপাঠ্য; কথাটা আপনার অনুবাদের জন্যও হাসি

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের পাঠ্যতালিকায় এই বইটি থাকার সম্ভাবনা কম, কারণ জৈবিক নৃবিজ্ঞান (Biological Anthropology) বিষয়টিকে বাংলাদেশে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে পড়ান হয় না। ব্যাচেলারস লেভেলে হয়ত একটা কোর্স থাকে, এবং বিশ-ত্রিশ বছরের পুরনো বইয়ের ভিত্তিতে দায়সারাভাবে সেই কোর্সটা পড়ানো হয়। জৈবিক নৃবিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের সংখ্যাও যেহেতু বাংলাদেশেও কম, সেহেতু এই বিষয়ের সর্বশেষ গবেষণার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত নন। আর এখন তো নৃবিজ্ঞানে উত্তরাধুনিকতার যুগ; জৈবিক নৃবিজ্ঞান (এবং সার্বিকভাবে বিজ্ঞান) এবং উত্তরাধুনিকতার মধ্যে পরস্পরবিরোধী সম্পর্ক বিদ্যমান। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে জৈবিক নৃবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞানার্জন করাকে আমাদের দেশে একরকম নিরুৎসাহিত করা হয়।

Emran

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এই বইগুলা সম্ভবত পপুলার সায়েন্সের বই। এরকম অনেক বই কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান, জোতির্বিজ্ঞান, রসায়ন বা জীববিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায়ও আছে। বাংলায়ও এই ঘরানার কিছু বই লেখা হচ্ছে বা, অনুবাদ হচ্ছে। কিন্তু যারা অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা করেন তাদের কিন্তু শুধু পপুলার সায়েন্সের বই পড়লে চলে না। পপুলার সায়েন্সের বই অনেকটা গল্পের মতো। সেটা অধিকাংশ মানুষ বুঝতে পারে, বইগুলোও সেভাবেই লেখা হয়। কিন্তু যারা নৃবিজ্ঞান বা বিবর্তনের শিক্ষার্থী তাদের কিন্তু শুধু পপুলার বইগুলো পড়লে হবে না। আরও গভীরে যেতে হবে। আর গভীরে যেতে থাকলেই কিন্তু বিষয়গুলো জটিল হয়ে ওঠে। সেটা তখন আর সহজপাচ্য থাকে না। এই জন্যে কোনো বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এরকম সহজপাচ্য বই পড়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন এই আশা করা সম্ভবত ভুল।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দারুণ হয়েছে অনুবাদ। আমার প্রিয় বিষয়গুলোর একটি। বইটা যোগাড় করে পড়ার ইচ্ছা ছিল। আশা করছি, যে বিশাল কাজ হাতে নিয়েছেন সেটা মাঝপথে থামবেন না। আগ্রহ নিয়ে পড়ব।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নিটোল এর ছবি

আশা করি নিয়মিত চালিয়ে নিতে পারব। হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা - আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি পরের পর্বের জন্য।

কিন্তু একটি প্রশ্ন - কপিরাইট এক্টের প্যাঁচে পড়ে লেখাটা বন্ধ হয়ে যাবে নাতো ? ইংরেজি বইয়ের বাংলা অনুবাদ ওয়েবে প্রকাশের আইন কানুন নিয়ে কেউ যদি একটা পরিস্কার ধারণা দিতেন, তবে হয়ত অনেকেই এগিয়ে আসতো আরো দারুন দারুন বই অনুবাদ করতে।

মরুচারী

নিটোল এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হাসি

কপিরাইট আইন সম্ভবত বইয়ের বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়। এই অনুবাদ থেকে আমি কিংবা সচলায়তন কোনো অর্থ উপার্জন করছে না। সুতরাং, আমি মনে করি এতে কোনো সমস্যা নেই।

_________________
[খোমাখাতা]

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইটা রাইখ্যা গেলাম... (১/২)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নিটোল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_________________
[খোমাখাতা]

উৎপল  এর ছবি

খুবই প্রাঞ্জল অনুবাদ। এক নিঃশ্বাসে শেষ করলাম। পরবর্তী কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম।

সবজান্তা এর ছবি

চমৎকার একটা অনুবাদ শুরু করার জন্য ধন্যবাদ। নৃতত্বের ব্যাপারে আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করে হোঁচট খেয়েছিলাম, মূলত বাংলা ভাষায় লিখিত বইগুলির লেখার স্টাইল এবং বিন্যাসের কারণে। আপনার এই লেখাটাতে সেরকম কোনো অস্বস্তিই বোধ করিনি, বরং বেশ দ্রুত পড়ে ফেলতে পেড়েছি। আপনার অনুবাদও খুব প্রাঞ্জল, একদমই আটকায় না। আশা করবো মাঝ পথে না থেমে নিয়মিত (সম্ভব হলে) প্রকাশ করতে থাকবেন।

নিটোল এর ছবি

মন্ত্যব্যের জন্য ধন্যবাদ। নিয়মিত লেখার চেষ্টা করব। হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

মন মাঝি এর ছবি

টাইম্‌স ও গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এই বইয়ের দু'টি চমৎকার রিভিউ পেলাম এখানেঃ

১। টাইমসঃ http://www.timeshighereducation.co.uk/books/sapiens-a-brief-history-of-humankind-by-yuval-noah-harari/2015984.article

২। গার্ডিয়ানঃ http://www.theguardian.com/books/2014/sep/11/sapiens-brief-history-humankind-yuval-noah-harari-review

****************************************

নিটোল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মন মাঝি। হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

দারুণ হচ্ছে। চলুক। হাসি

নিটোল এর ছবি

ধন্যবাদ। চলবে চলবে। হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

আল আমীন এর ছবি

অসাধারন! এক নিমিষে পড়ে ফেললাম! পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

এক লহমা এর ছবি

মুগ্ধ। আমার ত আর এই নিয়ে পরীক্ষায় পাশ করতে হবে না! তাই মহা আগ্রহে পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নিটোল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। হাসি পরের পর্ব- লিংক

_________________
[খোমাখাতা]

মরুদ্যান এর ছবি

এক টানে পইড়া ফেললাম তো। জুস হইসে। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম
আমি খালি জানতাম কোন এক জায়গায় জানি স্যাপিয়েন্স আর নিয়ন্ডার্থালদের দেখা হইসিল। কিন্তু শিকার প্রতিযোগিতায় স্যাপিয়েন্স রা জিতে যায় বুদ্ধি আর ছোট শরীরের দ্রুততা / ফ্লেক্সিবিলিটির জন্য। নিয়ন্ডার্থাল রা কম খেতে খেতে এক সময় সবাই মরে যায়।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নিটোল এর ছবি

থ্যাংক্যু। হাসি

এই বিষয়টি নিয়ে বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে কিছু ব্যাখ্যা আছে।

_________________
[খোমাখাতা]

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যিই অসাধারণ

আদিকোষ

নিটোল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_________________
[খোমাখাতা]

তারেক অণু এর ছবি

পড়লাম কেবল, দারুণ হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইংরেজি বইটা হাতে আসে নাই এখনো, আপনার অনুবাদেই পড়ে ফেলার আশা করছি-

নিটোল এর ছবি

ধন্যবাদ অণুদা। বইটা আসলেই দারুণ, অসাধারণ ইংরেজিতে লেখা। তবে, আমার অনুবাদে পড়তে হলে অনেকদিন ধরে আস্তে আস্তে পড়তে হবে! হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

তারেক অণু এর ছবি

অপেক্ষায় আছি, কুনু সমস্যা নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

আশা করছি চালিয়ে যাবেন। দারুন বই এবং অনুবাদও ভাল হয়েছে।

নজমুল আলবাব এর ছবি

পড়তে শুরু করলাম, এবং প্রথম পর্বেই জমে গেলাম। চলুক। চলুক

নিটোল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। পড়তে থাকেন। হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।