যাত্রা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/০৯/২০১১ - ১:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাস্তায় বের হয়েই রোদের ঝাপটায় চোখ কুঁচকে গেল শমির। কড়কড়ে রোদটাকে উপেক্ষা করে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে লাগলো ও। এখন আর কোন কিছুই গায়ে লাগবে না। শমি আর রাহাতের সাড়ে পাঁচ বছরের সম্পর্কটা খুব সম্ভবত আজ শেষ হয়ে গেল। আজকে রোদ-ঝড়-জল সব কিছুকেই উপেক্ষা করবে শমি। ফুটপাথ দিয়ে ওকে একলা হাঁটতে দেখে দু-একটা রিকশা “কই যাবেন আপা?” বলে হাঁক দেয়। উত্তর না পেয়ে চলে যায় তারা। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বখাটে ছেলেগুলো শিস দিয়ে কি যেন বলল। অন্য দিন হলে রাগে গা জ্বলে যেত। আজ যেন অশ্লীল কথাগুলো কানেই গেল না। শমির মাথায় এখন শুধুই রাহাতের চিন্তা।

ছোটবেলার বন্ধুত্বটা কবে যে প্রেমে রুপান্তরিত হয়েছিল তা ঠিক কারোই মনে নেই। টুকরো টুকরো স্মৃতি ভেসে আসে শমির মনে। রাহাতের সাথে প্রথমবার বৃষ্টিতে ভেজা। রিকশার হুডের নিচে জবুথুবু হয়ে বলেছিল, “আজকে বাসায় গিয়ে কপালে দুঃখ আছে আমাদের।” প্রথম যেদিন রাহাত বলেছিল “ভালোবাসি”- “শোন, আমি তোকে ভালোবাসি। খবরদার অন্য কোন পোলার দিকে চোখ দিবি না!” প্রথম যেদিন রাহাত শমির হাত ধরেছিল। রাস্তার মাঝে হাঁটু গেড়ে রাহাত বলেছিল, “দেবী, তোমার হাতটা আমাকে কি একটু ধরতে দেবে”। এইসব আবোলতাবোল স্মৃতি। কেমন করে পারল রাহাত ওকে ছেড়ে চলে যেতে!

রোদের আঁচটা চোখে এসে বিঁধছে। একটা রিকশা নেবে কিনা ভাবল শমি। না থাক। রাহাতের ওপর প্রচণ্ড অভিমান হচ্ছে। আজকে তাই নিজেকে কষ্ট দেবে শমি। রাহাত তো এখন আর মানা করতে পারবে না। কেন চলে গেলে রাহাত! প্রতিদিন ঝগড়া হোত ওদের। কেন ফোন দাও নি। কেন ঘুম থেকে উঠতে দেরী করলে। কেন দুপুরে খাওনি- এইসব ছোটখাট বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। আর দুইদিন পর পর ব্রেক আপ। একটা সময়ে বন্ধুরা বিশ্বাসই করত না যে ওদের ব্রেক আপ হতে পারে। ওরা বলতো- তোদের ডিভোর্স হলেও দেখা যাবে তোরা দুইদিন পর ঠিকই আবার এক সাথে থাকা শুরু করবি। তোরা জীবনে একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারবি না। এখন রাহাত কি করে থাকবে শমিকে ছাড়া!

চোখের ভেতরটা বাইরের রোদের মতোই খর মনে হচ্ছে। স্বাভাবিক অবস্থায় শমির চোখে এখন বাঁধ ভাঙ্গার কথা। আজ কেন যেন চোখে পানিই আসছে না। রাস্তা থেকে চোখ তুলে শমি দেখে পরিচিত এলাকা। এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ও বাসার কাছে চলে এসেছে তা খেয়ালই করেনি। রাস্তা পার হবার জন্যে পা বাড়াতেই দেখতে পেল অপর পাশ থেকে একটা ডাবল ডেকার বাস ছুটে আসছে। শমির ইচ্ছে করলো বাসটার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। কেমন হবে যদি এখন বাসটা ওকেও ধাক্কা মেরে চলে যায়, যেমন করে একটা বাস ধাক্কা মেরেছিল রাহাতকে। তাহলে তো রাহাতের কাছে এখনি চলে যাওয়া যায়। রাহাত নিশ্চয় ওকে ছাড়া অনেক কষ্টে আছে। ও তো শমিকে ছাড়া এক মূহুর্তও থাকতে পারে না। চিন্তাটা মাথায় আসতেই বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠল শমি। ঠিক তখনি যেন রাহাতের কণ্ঠস্বর কানে বাজলো- “এসব আর কখনো করো না শমি। আমার কষ্ট হয়”। রাহাতের সাথে একবার ঝগড়া হওয়ার পর রাগ করে শমি অনেকগুলো চুড়ি হাতের মুঠোয় চাপ দিয়ে ভেঙ্গেছিল। পরে রাহাতের সাথে দেখা হওয়ার পর রাহাতের চেহারায় যে কি কষ্টের চিহ্ন ফুটে উঠেছিল তা শমি কক্ষণো ভুলবে না। শমির হাতটা গালে চেপে ধরে রাহাত ভাঙ্গা কণ্ঠে বলে ছিল- “এসব আর কখনো করো না শমি। আমার কষ্ট হয়”। হে আল্লাহ, তুমি রাহাতকে কেন নিয়ে গেলে।

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করলো শমি এখন সে কি করবে। হাসপাতালে ফিরে যেতে পারবে না ও আর। ঐ জায়গাটায় রাহাতের না থাকায় ভরে আছে। ওখানে গেলেই রাহাতের মা’র বুক ফাটা আর্তনাদ শুনতে হবে। রাহাতের ছোট বোনটা শমিকে জড়িয়ে ধরে আবার কান্না শুরু করবে। রাহাতের ঐ তীব্র অনুপস্থিতি আর সহ্য করতে পারবে না শমি। তার চেয়ে বরং বাসায় ফিরে যাওয়া যাক। রাহাতের দেয়া বই, গানের সিডি আর উপহারের মাঝে ডুব দেয়া যাক। তাতে যদি রাহাতকে আবার ফিরে পাওয়া যায়! ধীরে ধীরে ওভারব্রীজের দিকে পা বাড়ালো শমি।


মন্তব্য

সাইফ জুয়েল এর ছবি

ঘটনার গভীরতার অনুপাতে গল্পটা অগভীর হলো। টিনএজ আবেগ মনে হল, আবেগটা মন ছুঁয়ে গেল না। লেখালেখি চলুক।

অর্চি ( অতিথি  লেখক) এর ছবি

মানুষটাই যখন টিন এজ আবেগটাও টিন এজ আবেগ.....লেখালেখিতেও নতুন...অনেক কিছু এখন শেখার বাকি...মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ... হাসি

রিশাদ_ ময়ূখ এর ছবি

সাধারণ হয়ে গেল লেখনী। খুব সম্ভবত থিম অগভীর। যাই হোক, লিখতে থাকুন

আশালতা এর ছবি

যে কোন গল্প পড়তে আমি খুব বেশি উৎসাহ বোধ করিনা। আপনার লেখাটা একটু চোখ বুলিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, পারা গেলনা। একটু একটু করে সবটুকুই পড়ে ফেললাম। তার মানে স্বীকার করতেই হবে পাঠক টেনে রাখার ক্ষমতা আছে আপনার লেখায় হাসি

এত কষ্ট করে লিখলেন, কিন্তু নামটাই যে নেই। আরও লিখুন পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

রাশেদ এর ছবি

আশালতা'র সাথে আমিও একমত -- পাঠক টেনে রাখার বেশ ভালো ক্ষমতা আছে আপনার লেখায়।
চালিয়ে যান "অতিথি লেখক" !!

সাত্যকি. এর ছবি

খুব সহজিয়া চেনা গল্প, তারপরো পড়ে ফেললাম।
যেহেতু আমি গল্প পড়ার সময় গজ ফিতা নিয়ে ডেপথ-ব্রেডথ-লেংথ মাপতে বসি না, তাই ভালো লাগলো।
গল্পের শেষটুকু নিয়ে হয়তো আরেকটু ভাবনার অবকাশ ছিল।

অর্চি ( অতিথি  লেখক) এর ছবি

মানুষটাই যখন টিনএজ আবেগটাও তাই টিনএজার আবেগ হয়ে যায়...লেখালেখিতে নতুন বলে এখনও অনেক কিছু শেখার বাকি...মন্তব্যের জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ... হাসি

সুরঞ্জনা এর ছবি

গল্পটা দুঃখের, কিন্তু হয়তো একটু বেশি পরিচিত গল্প। হাসি

আরো লিখুন।
সচলে স্বাগতম। হাসি

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

হাততালি

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

আপনার বর্ণনা শৈলী ভালো লাগলো। আমিও বলব, গল্পে গভীরতা আসেনি একেবারেই।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

৪ তারা দিলাম।
লিখতে থাকুন

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে, কেবল ঘটনাটা পুরোনো।
আরো লিখুন। সচলয়াতনে স্বাগতম হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মৌনকুহর এর ছবি

ভালো লেগেছে। আর প্রথম লেখা হিসেবে তো দুর্দান্ত!

সচলে স্বাগতম। লিখতে থাকুন প্রাণ খুলে। হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।