অখণ্ড ধারাবিবরণী পোস্ট: মুরগি রান্না!!

জি.এম.তানিম এর ছবি
লিখেছেন জি.এম.তানিম (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৫/০৯/২০১১ - ১১:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সেদিন প্রথম আলোতে না কোথায় যেন দেখলাম যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ছয় জনে একজন নাকি গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট। উপাত্তের সত্য মিথ্যা জানি না, কিন্তু আরও অনেক উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশগামীর মতো আমিও এই দেশে এসে পড়লাম জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে। জ্ঞান অর্জনের জন্য আজকাল চীনের লোকেরাও এই দেশে চলে আসে, আমি তো কোন ছার। সে যাই হোক, নতুন দেশে এসে জীবনে প্রথম বারের মতো অনেকখানি স্বাবলম্বী হতে হচ্ছে। তার একটা প্রধান ধাপ হলো রান্না বান্না। আজকে ঠিক করেছিলাম মুরগি রাঁধবো, আর সেটা নিয়েই এই পোস্ট। মুরগি রান্না শুরু করে দেখলাম মাঝে কিছু কিছু ফ্রি টাইম পাওয়া যাচ্ছে। তাই ভাবলাম রেসিপিটা লিখে রাখি। কোনো মতে খেতে ভালো হলে, পরে এইটাই কপি পেস্ট করে রাখা যাবে।

প্রথমে ফ্রিজ থেকে মুরগির প্যাকেটটা বের করে ফেললাম। এবার এটাকে একটা বড় পাত্রে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভিজিয়ে না রাখলে প্যাকেট থেকে মাংস আলাদা করা সম্ভব হবে না। এবার মাংস রান্নার সবচেয়ে জটিল অংশটি, অর্থাৎ পেঁয়াজ কাটা। দুইটা বড় আর একটা মাঝারি সাইজের পিঁয়াজ নিলাম। সেটাকে কুঁচি কুঁচি করে কাটলাম। মাংস আলাদা হতে মনে হচ্ছে আরও সময় লাগবে। এবারে তাই একটু বিরতি নেই। বিরতির সময়ে ল্যাপটপে সেট করে দেই সেই প্রিয় গান: আমি যখন রানতে বসি বন্ধু বাজাও বাঁশী, রান্নাবাড়া রেখে আমি কেমন করে আসি। চলুন দেখে ফেলি সেই গানের ভিডিও:


(আধা ঘণ্টা পরে...)

মাংস প্যাকেট থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু একটা দারুণ আবিষ্কার করেছি। ভুলে মুরগির প্যাকেটের বদলে গরুর মাংসের প্যাকেট বের করে ফেলেছিলাম। খুব সলিড স্টেটে থাকায় আর অভিজ্ঞতার অভাবে পার্থক্য বুঝতে পারি নি। এখন দু’টো উপায়। হয় এই গরুর মাংসই রান্না করতে হবে, অথবা এটা সুন্দর করে প্যাকেট করে, আবার মুরগির মাংস বের করে, সেটা ভিজিয়ে প্যাকেট থেকে বের করে সেটাকে রান্না করতে হবে। যথেষ্ট সময় চলে গিয়েছে, তাই সেটা করতে গেলে আজকের ক্লাস মিস হয়ে যাবে। সেই কারণে প্ল্যান বি এর থেকে প্ল্যান এ-ই বেশি উপাদেয় মনে হলো। তাহলে মুরগি রান্নার নামে এখন গরুর মাংসই রান্না করি। মাংসের গায়ে রক্ত লেগে আছে। সেটা ভালো করে ধুয়ে নিলাম। তারপরে মাংসটা একটা বাটিতে রাখলাম।

প্রথমে একটা পাত্রে কিছু তেল নিলাম। সেটা একটু গরম করি। গরম হয়ে গেলে কাটা পিঁয়াজের সবটুকু দিয়ে দিলাম। একটু নেড়েচেড়ে দেই। কিছু সময় পরে তাতে দেড় চামচ রসুন বাটা, আর আড়াই চামচ আদা বাটা দিলাম। বলে রাখি, এটা টেবিল চামচ। এবার আবার নেড়েচেড়ে ভালো করে মাখিয়ে দিলাম। চুলার আঁচ হাইয়েস্ট। এবার পিঁয়াজ কিছুটা নরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি।

পিঁয়াজ কিছুটা লালচে হয়ে গেলে সেটাতে পুরো মাংসটা দিয়ে দিলাম। তারপরে এটাতে এক চামচ হলুদ, এক চামচ মরিচের গুঁড়া, কোয়ার্টার চামচ জিরা, আধা চামচ ধনিয়া, ৫-৬টা তেজপাতা, ৫ টা এলাচ, আর কিছু দারুচিনি দিয়ে দিলাম। তারপরে এক দফা ঘুঁটা ঘুঁটা। ওহ আসল জিনিস দিতেই ভুলে গিয়েছিলাম। লবণ। ২-৩ চামচ লবণ দিলাম। আবারও ঘুঁটা দিয়ে ঢাকনি লাগিয়ে রেখে দিলাম।

এরপরের বাকি কাজ বেশ ট্রিভিয়াল। এবার মাংস থেকে পানি বের হতে দিতে হবে। চুলার জ্বাল বাড়িয়ে ঢেকে রাখলাম। তার আগে মনে পড়লো ফ্রিজে মোজারেলা চিজ আছে। সেটা বের করে কুঁচি কুঁচি করে কেটে মাংসে ভালোভাবে মাখিয়ে দিলাম। এবারে আধা ঘন্টা ধরে মাংস থেকে পানি বের হতে দিলাম। ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি মাংসে আলু দেব না। যাই হোক, সেই পানি শুকিয়ে এলে আবার যে পরিমাণ মাংস নিয়েছিলাম (অর্থাৎ যে বাটিতে আগে মাংস রেখেছিলাম) তার অর্ধেক পরিমাণ পানি দিয়ে দিলাম। আবার ভালো করে নেড়েচেড়ে ঢাকনি দিয়ে রেখে দিলাম। জ্বাল বাড়িয়ে এবার কেবল পানি শুকানোর অপেক্ষা। পানি শুকিয়ে গেলে চুলার জ্বাল বন্ধ করে দিলাম। তৈরি হয়ে গেল মুরগির মাংস... থুক্কু গরুর মাংসের কারি... অথবা তরকারি। ওদিকে রাইস কুকারে ভাত তৈরি হচ্ছে, সেটা হয়ে গেলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে প্লেট নিয়ে। ততক্ষণে এই ছবিটা তুলে ফেললাম। এই হলো সেই রান্নার আউটপুট...

যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরে পদে পদে অনেক কিছু শিখছি। সেসব শিক্ষা নিয়ে ফেইসবুকে একটা সিরিজ চালু করেছিলাম, আমেরিকান লেসন নামে। লেসনগুলো নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে। আজ কেবল সিরিজের ৯ম লেসনটা জানিয়ে যাই... কারণ সেটা এই লেখার সাথে সম্পর্কিত।

“আমেরিকান লেসন ৯: মুরগির মাংস রান্না করতে চাইলে ফ্রিজ থেকে গরুর মাংস বের করলে হবে না।”


মন্তব্য

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

হাহাহাহাহাহাহাহা......দুর্দান্ত বিবরণী হয়েছে তানিম ভাই, হো হো হো হো হো হো হো হো হো আমার হলে থাকাকালীন রান্নার কিছু এমন কাহিনি আছে। যাইহোক, আপনার লেসন পড়ে যে শিক্ষা পেলাম তার সারমর্ম হচ্ছে, এই লেসন নিয়মানুযায়ী লেহন করলে শিরোনামে মুরগী থাক আর যাই থাক, রান্না এবং বিবরণী গরুতে গিয়ে ঠেকতে বাধ্য দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি

অতীত

জি.এম.তানিম এর ছবি

লিখে ফেলেন সেসব কাহিনী। পড়ি!

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হাততালি
আপনে তো যাকে বলে পাকা রাঁধুনি! গরুর মাংস দিয়ে মুরগীর মাংস রান্না করতে পারেন!
রান্না তো হলো, এবার একটা ভালো দেখে বান্ধবী আনেন চোখ টিপি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

জি.এম.তানিম এর ছবি

ঠিকাছে, আপ্নে যখন এত করে বললেন চোখ টিপি

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

আশালতা এর ছবি

উপাদেয় পোস্ট। হো হো হো

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হো হো হো হাহাহাহা খুব মজা পেলাম, আমি বিয়ের পর এখনো গরুর মাংস রাধিনি পারবনা মনে করে, দেখি তুমি যখন পারসো তখন ভরসা পেলাম, আমিও ট্রায় করে দেখব। খাইছে

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

দ্যা রিডার এর ছবি

একে গরুর মাংস , তাহার উপর চিজ ... হার্ট টা মনে হইল কলাপ্স করবে (কিন্তু খাইতে মন চায়) ... চোখ টিপি

নিটোল. এর ছবি

হা হা হা... হো হো হো মজা পেলাম। পোস্ট পড়ে ক্ষিধে লেগে গেল। যাই, খেয়ে আসি!

তাহসিন ফারজানা জিসান এর ছবি

হিহি খুব ই মজা পেলাম পড়ে।

ইস্কান্দর বরকন্দাজ(সাথেই আছি) এর ছবি

হো হো হো

রিশাদ_ ময়ূখ এর ছবি

হা হা হা।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এমন মজার রান্না করলেন, ডাক্তারকে কাঁচকলা দেখায়ে বসে যেতে ইচ্ছে করে।
মুরগী আর গরুর রেসিপি তো একই মনে হয়, নাকি? সারাজীবন খেয়ে গেলাম, রান্নাটা শেখা হলো না। তবে আপনার রান্নার প্রসেসটা পড়ে আধেক শেখা হয়ে গেছে দেঁতো হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

শাব্দিক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি
এমন মুরগি জীবনে খাইনি।

হেমন্তের ঘ্রাণ এর ছবি

দুর্দান্ত বিবরণী !! এক্কেবারে ক্ষিধা লেগে গেছে !! মন খারাপ :(

রুমঝুম ১ এর ছবি

আপনার গরুর মাংস দিয়ে মুরগীর মাংস রান্নার মাঝখানে গানের ক্লিপটাই মনে হয় আসল মশলা!!!

চরম উদাস এর ছবি

আমি একবার গাজর ছাড়া গাজরের হালুয়া আর চাল ছাড়া ক্ষীর বানিয়েছিলাম। খেতে খারাপ হয়নাই। এইসব রান্নাবান্নার রেসিপি নিয়েই নতুন সিরিজ লিখতেছি, ভাবলাম নিজের প্রতিভা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া দরকার। আপনার রান্না চমৎকার, লেখা আরও বেশী চমৎকার হয়েছে। ঝোল দেখে জিভে জল এসে গেলো। পরোটা দিয়ে এই জিনিস খেতে যা লাগবে খাইছে ... ওরে, আমি যাই দেখি ফ্রিজে গরুখাসিমুরগিটার্কি কোন কিছুর গোস্ত আছে কিনা।

দুর্দান্ত এর ছবি

গরুর মাংসের রং অসাধারন হয়েছে। মাংসের পরিমান কতটুকি ছিল?

দুর্দান্ত এর ছবি

গরুর মাংসের রং অসাধারন হয়েছে। মাংসের পরিমান কতটুকু ছিল?

তারেক অণু এর ছবি
আসাদ  এর ছবি

নর্থ আম্রিকার গরুর গোস্ত মনে হয় নরম কিছিমের। সহজেই গইলা যায়। ...রান্না সুন্দর হইছে।

অপছন্দনীয় এর ছবি

হো হো হো

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি
ওরে বাব্বা এত্ত কঠিন রান্না করা!!! আমার বিদেশ যাওন আর হৈতো ন, তানিমদা। দেঁতো হাসি


_____________________
Give Her Freedom!

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

তুমি মিয়া আধাঘন্টা ধরে এই গান বারবার রিপিট ছেড়ে দেখলা? চিন্তিত

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

জি.এম.তানিম এর ছবি

ধন্যবাদ আশালতা, দ্যা রিডার, নিটোল, জিসান, ইস্কান্দর বরকন্দাজ, রিশাদ_ময়ূখ, শাব্দিক, তারেক অণু, আসাদ, অপছন্দনীয়, মৃত্যুময় ঈষৎ, তানিম এহসান।

মুমু, শুরু করে ফেলো...

নীড় সন্ধানী, আমি গরু মুরগি একই ভাবে রাঁধি, কিছু মশলার কম বেশি... কোনো ঠিক ঠিকানা নাই। দেঁতো হাসি

হেমন্তের ঘ্রাণ, রেসিপি দেওয়া আছে, রেঁধে ফেলুন দেঁতো হাসি

রুমঝুম, এত কষ্ট করে রান্নার দাম দিলেন না, সব কৃতিত্ব মশলার? মন খারাপ

চরম উদাস, আপনিও দেখি বস দেঁতো হাসি তবে পরটা খেতে পারি নাই, তার আগেই মাংস শেষ মন খারাপ

যাযাদি, এই গান বার বার শোনা যায়, হাজার বার শোনা যায়... আরেকটা গানও শুঞ্ছি... এখন তো সময় ভালোবাসার... দেঁতো হাসি

দুর্দান্তদা, মাংসের পরিমাণ আমি নিজেও বুঝতে পারি নাই, তবে দেড় কেজির কম না সম্ভবত।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

অল ক্রেডিট গৌজ টু দ্য অনারেবল ইঞ্চার্জ অফ দ্য ধুগো ইন্টারন্যাশনাল। সবাইকে বুঝতে হবে তানিম কোন সাধনাবলে এই অসাধারণ গরুর মাংস দিয়ে মুরগীর মাংস রান্না করে ফেলছে! এইটা লতা হারবালের কেরামতি না। চলুক

munna এর ছবি

হো হো হো হো হো হো

এম আব্দুল্লাহ এর ছবি

এমন মুরগি জীবনে খাইনি। এক্কেবারে ক্ষিধা লেগে গেছে।
ট্রাই করে দেখতে হবে।
এম আব্দুল্লাহ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।