ঘুঘুহীন নীরবতা!

তানিম এহসান এর ছবি
লিখেছেন তানিম এহসান [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৭/০৯/২০১১ - ২:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘুঘু নেই; ঘুঘু ডাকে কবিতার নাড়িছেঁড়া নীড় কবিতায়,
কবিতা পাঠের শেষে, কয়েকটি অ-বিরল ঘুঘু খুঁজে পায়
কোন এক ডানা তার ডানাহীন, তারপর উড়ে যেতে চায়
পথহারা পথ ধরে ফেলে আসা গাবগাছ, জামের শাখায় -
তবুও ঘুঘুরা ডাকে - সকাতর অন্ধচোখ - চোখের ভাষায় -
ব্যথাহীন হৃদয়ের নীরবতা সব তার, অকাতরে হায়
বলে যায় সব ব্যথা! অথচ ঘুঘুর কথা কাব্যের খাতায়
লিখে ফেলে যদি কেউ, তবু তার সবটুকু কথা থেকে যায়!!

- ঢাকা, ০৩/১৬.০৯.২০১১


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

থাকুক, তোমার একটু স্মৃতি থাকুক
একলা থাকার খুব দুপুরে একটা ঘুঘু ডাকুক। -- রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

তানিম এহসান এর ছবি

রুদ্র, প্রিয় কবি, প্রিয় কবিতার লাইন, তবে রুদ্র এবং তার ’অন্তর বাজাও’ গানের দলের কথা কেউ বলেনা আর!

সুমন তুরহান এর ছবি

হাততালি

কবিতা চমৎকার লেগেছে।

তানিম ভাই, খুব দ্রুতই আপনি ছন্দ রপ্ত করে ফেলছেন। শাবাশ, এই অনুশীলন চলুক।

ঘুঘু নেই; ঘুঘু ডাকে / কবিতার নাড়িছেঁড়া / নীড় কবিতায়, = ৮ + ৮ + ৬
কবিতা পাঠের শেষে, / কয়েকটি অ-বিরল / ঘুঘু খুঁজে পায় = ৮ + ৮ + ৬
কোন এক ডানা তার / ডানাহীন, তারপর / উড়ে যেতে চায় = ৮ + ৮ + ৬
পথহারা পথ ধরে / ফেলে আসা গাবগাছ, / জামের শাখায় - = ৮ + ৮ + ৬
তবুও ঘুঘুরা ডাকে / - সকাতর অন্ধচোখ / - চোখের ভাষায় - = ৮ + ৮ + ৬
ব্যথাহীন হৃদয়ের / নীরবতা সব তার,/ অকাতরে হায় = ৮ + ৮ + ৬
বলে যায় সব ব্যথা!/ অথচ ঘুঘুর কথা / কবিতার খাতায় = ৮ + ৮ +
লিখে ফেলে যদি কেউ, / তবু তার সবটুকু / কথা থেকে যায়! = ৮ + ৮ + ৬

'অন্ধ' শব্দটির ব্যবহারে হয়তো খুব বেশি সমস্যা নেই। তবে পুরো কবিতাটিতে এটিই একমাত্র যুক্তাক্ষর, এড়িয়ে গেলে ভালো হতো বোধহয়।

'কবিতার খাতায়' - এসে একটি মাত্রা বেশি পড়ে গেছে। ঠিক করে নিতে পারেন।

দুয়েকটি নিতান্তই ক্ষুদ্র প্রসঙ্গ -

'ঘুঘু-হীন' 'অ-বিরল' না লিখে 'ঘুঘুহীন' 'অবিরল' এভাবে লিখলে দেখতে ভালো লাগে।

আর শিরোনামে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন যথাসম্ভব এড়িয়ে গেলে ভালো। যদি দিতেই হয় তাহলে একটি দিন, দু'টি বাহুল্য মনে হয়। কবিতার শেষেও দু'টি না দিয়ে একটি আশ্চর্যবোধক চিহ্ন দিলে পরিমিতি বজায় থাকে।

আপনি একবার বলেছিলেন আপনি কবিতা একটানে লিখেন, ঘষামাজা করা পছন্দ করেন না। এই কবিতাতে এসে মনে হলো আপনি অবশেষে খনিশ্রমিকের মতো পরিশ্রম করে শব্দ-বাক্য তুলে নিয়ে এসেছেন। একজন কবির কবিতা লেখার প্রক্রিয়ায় এই পরিশ্রমটাও কিন্তু জরুরী। আপনি সেটা করা শুরু করেছেন এবং দেখুন তাতে কিন্তু আপনার সহজাত স্বত:স্ফুর্ততা একটুও মারা যায়নি, বরং গাঁথুনি আরো টেকসই হয়েছে।

-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী

তানিম এহসান এর ছবি

হ্যা, সুমন ভাই, এটা নিয়ে আমি প্রচুর সময় কাটিয়েছি, বাইশ মাত্রায় বসিয়েছি, একটা জায়গায় (কবিতায়) একটা মাত্রা আসলেই বেশী হয়ে গেছে, আজবতো, খেয়াল করিনি!

অন্ধচোখ! প্রথমে “চোখহীন সকাতর” ছিলো কিন্তু ভালো লাগছিলোনা দেখে অন্ধচোখ করেছি আবার, এখন মনে হচ্ছে চোখহীন সকাতরই ভালো লাগছে :-)। ঘুঘুহীন ঠিক করে দিচ্ছি কিন্তু অ-বিরল এইভাবেই থাকুক, এই অ-বিরল মানে “বিরল” নয়, অন্তত কবিতায় এসে সে বিরল থাকছেনা আর; অবিরল শব্দটির ভিন্ন অর্থও হয়!

বাহ! বেশ ভালো লাগছে, এই সম্পাদনা করতে আমি গর্ব অনুভব করবো হাসি ভালো থাকুন !

বন্দনা কবীর এর ছবি

ধন্যবাদ সুমন, আপনার এই আলোচনা না পড়লে হয়তো জানাই হতনা যে এমন অক্ষর গুনে গুনেও কবিতা লেখা যায়!
আমি তো এম্নি-ই ছন্দ মিলিয়েই লিখে গেছি এতোকাল। মিটার টিটারও মাপিনি মনে হয় খাইছে

জানার কোনোই শেষ নেই...হাসি

কর্ণজয় এর ছবি

ধন্য কবিতা আর কবিতার আলোচনা

তানিম এহসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা,

তাপস শর্মা এর ছবি

সুন্দর। আর কি বলব।

তানিম এহসান এর ছবি

আগরতলার মানুষকে শুভেচ্ছা হাসি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

হে রাতঃস্মরণীয় রাতের কাণ্ডারি, আপনাকে শুভেচ্ছা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

কবিতার চমৎকারিত্ব, ছন্দ ও ছোটখাট দু’একটি মাজাঘষা নিয়ে সুমন তো খুব চমৎকার করে বলেই দিয়েছে। আমি আর সেদিক ঘেঁষে না এগুই।

আমি যেটি বলতে চাই তা হলো, এ কবিতায় একটি চমৎকার বাইনারি চাল লক্ষ্য করি। ‘আছে’ আর ‘নেই’, এই দু'য়ে ঘিরে এই কবিতায় কবির মন-দ্বৈরথ সদা সঞ্চরণশীল। জীবনানন্দের অজস্র কবিতায় যেমন পংক্তি থেকে পংক্তিতে আলো-অন্ধকারের পর্যায়ক্রমিক আবর্তন দেখে অভিভূত হই, অনেকটা তেমনি।

উদাহরণ দিয়ে বিষয়টিকে পরিস্কার করতে চাই। আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁর ‘শুদ্ধতম কবি’ গ্রন্থের ২০৪ পৃষ্ঠায় জীবনানন্দের ‘সুচেতনা’ কবিতাটি ঘিরে দ্বন্দ্ব ও দ্বন্দ্বোত্তরণ পর্বের এমনই একটি ফিরিস্তি দিয়েছেন আলো ও অন্ধকারের প্রতিভাসে। তিনি দেখিয়েছেন,

আজকে অনেক রূঢ় রৌদ্রে ঘুরে প্রাণ (অন্ধকার)
পৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতো শ্রদ্ধা
ভালোবাসা দিতে গিয়ে তবু, শ্রদ্ধা
দেখেছি আমারি হাতে হয়তো নিহত (অন্ধকার)
ভাই বোন বন্ধু পরিজন প’ড়ে আছে; (অন্ধকার)
পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন; (অন্ধকার)
মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে। শ্রদ্ধা

কেবলি জাহাজ এসে আমাদের বন্দরের রোদে শ্রদ্ধা
দেখেছি ফসল নিয়ে উপনীত হয়; (অন্ধকার)
সেই শস্য অগণন মানুষের শব; (অন্ধকার)
শব থেকে উৎসারিত স্বর্ণের বিস্ময় (অন্ধকার)

মাটি-পৃথিবীর টানে মানবজন্মের ঘরে কখন এসেছি, শ্রদ্ধা
না এলেই ভালো হত অনুভব ক’রে; (অন্ধকার)
এসে যে গভীরতর লাভ হ’লো সে-সব বুঝেছি শ্রদ্ধা

এবার তানিমের কবিতায় আসি।

ঘুঘু নেই; (নেই) ঘুঘু ডাকে (আছে) কবিতার নাড়িছেঁড়া নীড় কবিতায়,
কবিতা পাঠের শেষে, কয়েকটি অ-বিরল ঘুঘু খুঁজে পায় (আছে)
কোন এক ডানা (আছে)তার ডানাহীন,(নেই) তারপর উড়ে যেতে চায়
পথহারা (নেই)পথ ধরে (আছে) ফেলে আসা গাবগাছ, জামের শাখায় -
তবুও ঘুঘুরা ডাকে(আছে) - সকাতর অন্ধচোখ(নেই) - চোখের ভাষায় (আছে)-
ব্যথাহীন (নেই) হৃদয়ের নীরবতা সব তার, অকাতরে হায়
বলে যায় সব ব্যথা(আছে)! অথচ ঘুঘুর কথা কবিতার খাতায়(আছে)
লিখে ফেলে যদি কেউ,(নেই) তবু তার সবটুকু কথা থেকে যায়(আছে)!!

এই দোলাচল কি কবিমানসের অন্তর্দ্বন্দ্বজাত? সে যাই হোক, আমাদেরও তা মনযোগ কাড়ে ও দোলায়!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

আপনার গভীরদৃষ্টি আর মনন এতটাই মুগ্ধ করলো যে আমি শব্দহীন। প্রতিটি কবিতায়(সে যারই হোক) আপনি এত মমতা দ্যান আর সোনালি ফসল টুকু বের করে আনেন তা অতুলনীয়। আপনার জন্য শ্রদ্ধা, কাব্যবিশারদ।


_____________________
Give Her Freedom!

তানিম এহসান এর ছবি

অদ্ভুততো, গতকাল প্রতিমন্তব্য করেছিলাম কিন্তু এলোনা কেন বুঝতে পারছিনা!

প্রিয় রোমেল ভাই, ”ঘুঘু নেই, ঘুঘু ডাক শোনা যায় কবিতার কবিতায়”- এই লাইনটা মাথায় নিয়ে ঘুরছিলাম বহুদিন ধরে, তারপর ৩ তারিখ ডায়রীতে লিখে ১৬ তারিখ পর্যন্ত কাজ করেছি এর উপর, জীবনের প্রথম এইভাবে ঘষামাজা করা কবিতা হাসি

ঘুঘুর ডাক আমার অসম্ভব পছন্দের, এতো যে বুঝিয়ে বলতে পারবোনা। বহুদিন ঘুঘু ডাক শুনিনা, পথে পথে হেটেছি শুধুমাত্র ডাক শোনার জন্য, ঘুঘুই নেই আবার ডাক শুনবো কিভাবে? কিন্তু আমি আমার মাথার ভেতর, মনে, অনুরননে সেই ডাক শুনি। এই দোলাচলের ভেতর দিয়ে লেখা এটা; আপনার মন্তব্য ধরে দেখলাম “নেই” আছে ৬ বার আর “আছে” আছে ৮ বার! আমি কিন্তু খেয়াল করে এটা করিনি, হয়ে গেছে হাসি

ভালো থাকবেন, দেবশিশুদের জন্য শুভকামনা হাসি

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

তারপর ৩ তারিখ ডায়রীতে লিখে ১৬ তারিখ পর্যন্ত কাজ করেছি এর উপর, জীবনের প্রথম এইভাবে ঘষামাজা করা কবিতা!!! চলুক

এবং তারপর ফলাফলটাও সবার প্রতিক্রিয়া থেকে বুঝতে পারছেন অবশ্যই, প্রিয় তানিম ভাই।


_____________________
Give Her Freedom!

রিশাদ_ ময়ূখ এর ছবি

কবিতাটি তো ভালো লেগেছেই আর কবিতার আলোচনা দেখে মুগ্ধতা আরো বাড়ল

তানিম এহসান এর ছবি

আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা, আপনার লেখা কিন্তু প্রতিনিয়ত পেতে চাই!

বন্দনা কবীর এর ছবি

কবিতা আর আলোচনা দুটোই উপাদেয়...

তানিম এহসান এর ছবি

আপনার কবিতা পড়তে চাই, উপরে একটা প্রতিমন্তব্যের সূত্র ধরে অনুরোধ করলাম, উপাদেয় আলোচনা হবে নিশ্চয়তা দিতে পারি হাসি

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

পূর্ণাঙ্গ একটি কবিতা হয়ে উঠেছে, তাতে কবিতা আছে, ছন্দ আছে, মাত্রাসাম্য আছে, অন্ত্যমিল আছে, আর আছে বিস্ময়!!!


_____________________
Give Her Freedom!

তানিম এহসান এর ছবি

ওহে মৃত্যুময়, তোমাকে ধন্যবাদ, ভালো থেকো আর থিসিস ক্লাসে সচল খুলে ব্লগিং একদম নিষিদ্ধ করা হলো আজকে থেকে রেগে টং

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

হাসি

ইয়ে মানে বড় ভাই যখন বলছেন, যথা আজ্ঞা!!! দেঁতো হাসি


_____________________
Give Her Freedom!

pathok (sam) এর ছবি

tanim - লিখে যান - মন্তব্য হয়তো করা হবেনা - কারন সচলায়তন এ মন্তব্য করা অনেক ঝামেলার - কত ভাল ভাল লেখা পড়ি - কিন্তু বাংলা লেখার অনভ্যাস সাথে সচলায়তন এর ক্যাপচা - দুয়ে মিলে মন্তব্য করার উতসাহ চলে যায় - এখন থেকে সময় পেলে শুধুই পড়ব - মন্তব্য নয়

তানিম এহসান এর ছবি

স্যাম ভাই হাসি, হোক না আমাদের নিজেদের নাম পুরোটা আসেনা তবুও তুমি আমাকে আপনি করে বললে এটা কোনভাবেই মেনে নেবনা। যেখানেই যাই না কেন, যাই হইনা কেন তুমি আমাকে আপনি বললে কোনভাবেই শান্তিপাবোনা বলে গেলাম!

মন্তব্য না করলে হবেনা - তোমার অফিসে, বাসায় এসে প্রতিবাদ করে যাবো হাসি

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

শুধুমাত্র শেষ লাইনটাই একটা কবিতা তৈরি করে ফেলেছে। আরও লিখুন। চলুক চলুক চলুক

অতীত

তানিম এহসান এর ছবি

অশেষ কৃতজ্ঞতা!

মৌনকুহর এর ছবি

চলুক

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

তানিম এহসান এর ছবি

যাক, নিয়মিত মন্তব্য করা মানুষটা এলেন তাহলে হাসি আপনার গুটলু বেত্তান্তচলার কথা ছিলো, চলছেনা কেন ভাই?

মৌনকুহর এর ছবি

দৌড়ের উপর আছি, তানিম ভাই। সিরিজ চলবে নিশ্চয়ই।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।