বহুজগত

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ২৪/০৯/২০১১ - ৪:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
প্রফেসর দরবেশ মন দিয়ে বিস্কুট খাচ্ছিলেন, চায়ে চুবিয়ে। সব কনফারেন্স শেষেই তিনি সংলগ্ন ক্যাফেতে ঢুকে তাদের চা আর বিস্কুটের মান পরখ করেন, তারপর মনে মনে একটা রেটিং দেন। যেসব ক্যাফের চা ভালো, যাদের বিস্কুট চায়ে চুবানোর পর ঠুস করে গলে ভেঙে চায়ে ডুবে আত্মহত্যা করে না, সেসব ক্যাফের সাথে সংশ্লিষ্ট কনফারেন্স এবং আয়োজকদের প্রতি তিনি প্রসন্ন থাকেন। যেসব কনফারেন্সে গিয়ে সাথের ক্যাফেতে, বলাই বাহুল্য, সুবাসিত চা এবং বলিষ্ঠ বিস্কুট মেলে না, সেসব কনফারেন্সকে তিনি তুচ্ছজ্ঞান করেন। বিজ্ঞান কোনো না কোনোভাবে এগিয়ে চলবেই, কিন্তু দুবলা বিস্কুট সরবরাহকারী ক্যাফে মানবজাতিকে সবসময় পেছনদিকে টেনে নিয়ে যায়।

চায়ে চুবিয়ে বিস্কুট খাওয়ার কাজটাকে কিছুটা ঐকান্তিক মনে করেন প্রফেসর দরবেশ, অনেকটা প্রেমিকার সাথে ফিসফিস আলাপের মতোই। এ সময়ে কেউ কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকলে দুটো কাজেই ব্যাঘাত ঘটে।

"ডক্টর দরবেশ?" একটা পিলে কাঁপানো ভারি কণ্ঠস্বর মেঝের ছয়ফুট ওপর থেকে হেঁকে ওঠে।

প্রফেসর দরবেশ প্রচণ্ড বিরক্ত হন, কারণ সিক্ত বিস্কুটের একটা টুকরো তার হাত থেকে ফসকে পড়ে গেছে চায়ের কাপে। তিনি মাথা উঁচিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিশালদেহী কৃষ্ণাঙ্গ লোকটির দিকে তাকালেন। একেবারে কুচকুচে কালো একটা মুখ থেকে হীরার মতো ঝকঝকে দুই সারি দাঁত বেরিয়ে আছে হারমোনিয়ামের চাবির মতো। লোকটার পরনে ধবধবে সাদা শার্ট, একটা চলনসই টাই, কোটটা হাতে ভাঁজ করে রাখা।

"হ্যাঁ।" খ্যাঁক করে উঠলেন প্রফেসর দরবেশ।

"আপনার সাক্ষাত পেয়ে প্রীত বোধ করছি প্রফেসর দরবেশ!" জাঁক করে বললো ব্যাটা। "আমার নাম ম্বাবাটু, ম্যাক্স ম্বাবাটু।"

"উম্বাবাটু? আচ্ছা ... তা কী করতে পারি আপনার জন্যে, জনাব উম্বাবাটু?" প্রফেসর দরবেশ টুসকি মেরে সুশ্রী ছিপছিপে ওয়েট্রেস মেয়েটিকে ডাকলেন। আরেক কাপ চা দরকার। বিস্কুটগলা চায়ের চেয়ে বদখদ আর কিছুই হতে পারে না।

ম্বাবাটু একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো, তবে খুবই সন্তর্পণে, যেন একটা বেড়াল এসে বসলো মখমলের গদিতে। "মৃতবিন্দু নিয়ে একটা ভাবনা আপনার সাথে শেয়ার করতে চাই স্যার।"

প্রফেসর দরবেশের মুখে একটা বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠে ঝুলে রইলো। মৃতবিন্দু নিয়ে তাঁর সাথে ভাবনা ভাগ করার মতো সাহস এখনও খুব বেশি পদার্থবিদের হয়নি। কিন্তু যেখানে ফেরেস্তা ঘেঁষে না, সেখানে বোকচন্দররা তেড়ে যায়।

"বেশ ... আমি এক কাপ চা দিতে বলেছি। সেটা শেষ করা পর্যন্ত সময় পাচ্ছেন আপনি।" খনখনে গলায় বললেন প্রফেসর দরবেশ।

"মানে পাঁচ মিনিট ছত্রিশ সেকেণ্ড, আঠারো সেকেণ্ড স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন ধরে?" ম্বাবাটু সহজ গলায় বললো।

প্রফেসর দরবেশ এবার একটু মনোযোগ দিলেন ম্বাবাটুর দিকে। লোকটা সম্ভবত নিরক্ষীয় আফ্রিকার কোনো দেশ থেকে এসেছে, চেহারায় বুদ্ধির ছাপ আছে, এবং সে যে বাহরাম দরবেশের মতো একজন প্রথম সারির জ্যোতির্পদার্থবিদের ওপর লম্বা সময় ধরে নজর রাখছে, সে কথা জানাতে ম্বাবাটু পিছপা নয়। কী চায় ব্যাটা?

"কতদিন ধরে?" ওয়েট্রেস মেয়েটাকে ট্রে নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে নতুন করে চায়ের তৃষ্ণা অনুভব করলেন প্রফেসর দরবেশ।

"প্রায় বছর ঘুরতে চললো স্যার।" ম্বাবাটু আবার হারমোনিয়ামের চাবি মেলে ধরলো।

"বেশ ... কিন্তু এক কাপ চা পর্যন্তই সময় পাবেন। এরপর আমি হোটেলে ফিরে যাবো।" প্রফেসর দরবেশ মনে মনে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।

ম্বাবাটু হাত বাড়িয়ে দিলো, "আপনার আজকের প্রেজেন্টেশনটা দারুণ হয়েছে স্যার।"

প্রফেসর দরবেশ বেজার মুখে করমর্দন করলেন ম্বাবাটুর সাথে। "সময়টা কাজে লাগান জনাব ম্বাবাটু। মিষ্টি মিষ্টি কথা বাদ দিন। আমার সব প্রেজেন্টেশনই দারুণ হয়।"

ম্বাবাটু ওয়েট্রেস মেয়েটাকে নিচু গলায় এক কাপ কালো কফির অর্ডার দিয়ে ঝুঁকে বসলো। "মৃতবিন্দু নিয়ে ভাবনার কথা বলার আগে আমার পরিচয়টা দিচ্ছি স্যার। আমি একজন বিজ্ঞান লেখক।"

প্রফেসর দরবেশের মনটা এবার বিতৃষ্ণায় ছেয়ে গেলো। "কল্পকাহিনী লেখেন?"

ম্বাবাটুর মুখটা আরো এক পরত কালো হয়ে গেলো। "না স্যার, ভুল বুঝলেন। কল্পবিজ্ঞান লেখক নই আমি। বিজ্ঞান লেখকরা বিজ্ঞান আর গবেষণা নিয়ে লেখালেখি করে। আমার আগ্রহের বিষয় জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা ... বুঝতেই পারছেন ... আমি সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো নিয়ে একটা বই লিখছি।"

প্রফেসর দরবেশ বললেন, "আমার সাক্ষাতকার নিতে চান?"

ম্বাবাটু বললো, "না স্যার। আপনি ব্যস্ত মানুষ, সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে আপনাকে জ্বালানোর স্পর্ধা করি না। শুধু একটা আইডিয়ার কথা আপনাকে জানাতে এসেছি স্যার। শুধু যদি আপনি আমার পুরোটা ভাবনা মন দিয়ে শোনেন, তবেই আমি কৃতার্থ হবো।"

প্রফেসর দরবেশ চায়ের কাপে এক মারাত্মক চুমুক দিলেন। ম্বাবাটুর জন্যে এই ইশারাই কাফি হওয়ার কথা, এমন মর্মান্তিক চুমুকের পর চায়ের কাপ অর্ধেক খালি না অর্ধেক ভরা, তা নিয়ে আশাবাদী আর নৈরাশ্যবাদীর মধ্যে তুমুল তর্কের জায়গা প্রশস্ত হয়।

ম্বাবাটুর কফি চলে আসে, সে কফির কাপ হাতের মুঠোয় ধরে বলে, "মৃতবিন্দু থেকে এই যে মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন হচ্ছে, এমন কি হতে পারে না স্যার, এটা একটা সিগন্যাল?"

প্রফেসর দরবেশ চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে চোখ বুঁজলেন। তার মনটা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে গেলো পনেরো বছর আগে, যেদিন ডেড স্পট নিয়ে তাঁর প্রথম পেপারটা সায়েন্স-এ ছাপা হয়েছিলো। একটা বাজে সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি, ক্যারিয়ারটা কাদায় আটকা পড়েছিলো, ডেড স্পট তাঁকে এক হ্যাঁচকা টানে ফিরিয়ে নিয়ে আসে আলোচনায়।

অথচ কী নিতান্ত ফালতু এক প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। চিলির আতাকামা মরুভূমির এক চিপায় এক অতিকায় দূরবীণ প্রকল্পে যোগ দিয়ে চাঁদের একটা অবজারভেটরির সাথে যোগাযোগের জন্যে স্থাপিত মাইক্রোওয়েভ সংযোগের কোয়ালিটি পরীক্ষার মতো বিরক্তিকর কাজে দিন কাটছিলো তাঁর। সতেরো বছর আগে এক দিন রাতে হঠাৎ লুনার স্টেশন থেকে বার্তা আসে, স্টেশনের টেলিস্কোপে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। একটা কালো বিন্দু দেখা যাচ্ছে পৃথিবী বরাবর।

এবং কিমাশ্চর্যম, আতাকামার সেই স্টেশনের প্রকাণ্ড ভিএলটি-তেও চাঁদের বরাবর একটা কালো বিন্দু দেখা গেলো। প্রফেসর দরবেশের চোখে প্রথম ছবিটা এখনও ভেসে ওঠে মাঝে মাঝে, লুনার স্টেশন বরাবর একটা আশ্চর্য অন্ধকার বিন্দু।

হিসেব কষে দেখা গেলো, বিন্দুটার ব্যাসার্ধ ৫০ মিটারের মতো, এবং সেটি নিখুঁত বৃত্তাকার।

অনেক পুরনো একটা কথা সেদিন নতুন করে মনে পড়েছিলো প্রফেসর দরবেশের, ত্রুটিহীনতা একটা বার্তা। জরুরি, বড় বার্তা। প্রকৃতিতে ত্রুটিহীন বৃত্ত খুব বেশি নেই। মহাকাশে একটা গোল কালো বিন্দুর তাৎপর্য অন্যরকম।

লুনার স্টেশন থেকে আরো বার্তা এলো, গত ছয় মাস ধরে যে মৃদু নয়েজ পাওয়া যাচ্ছিলো মাইক্রোওয়েভ রিসিভারে, সেটা সম্ভবত এই কালো ছোপের কারণেই।

কেন কেউ আরো আগে এই কালো ছোপটাকে শনাক্ত করেনি, সেই প্রশ্নটা তৎক্ষণাৎ কারো মাথায় আসেনি। মহাকাশে মাত্র পঞ্চাশ মিটার ব্যাসার্ধের একটা কালো বিন্দু শনাক্ত যে হয়েছে, এটাই ভাগ্যের ব্যাপার।

সেই থেকে শুরু। এরপর প্রফেসর দরবেশ দুই বছরের নির্ঘুম অক্লান্ত গবেষণার পর প্রমাণ করলেন, ঐ কালো বিন্দুটি মহাজগতবিদ্যার গবেষণায় এক মারাত্মক সংযোজন। ডেড স্পট বা মৃতবিন্দুর ধারণাটিও তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন তার গবেষণাপত্রে। এ এমন এক ইয়ে, যা আলোকে বিকর্ষণ করে। কৃষ্ণবিবরের মহাকর্ষ থেকে যেমন আলো মুক্তি পায় না বলে তাকে কালো দেখায়, ডেড স্পট বা মৃতবিন্দু আলোকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না বলে তা কালো দেখায়। পশ্চাদপটে উজ্জ্বল কোনো কিছু থাকলে ব্যাপারটা স্পষ্ট বোঝা যায়, একটা ছোটো কালো বিন্দু ফুটে ওঠে তখন।

সময়ের সাথে প্রফেসর দরবেশ আরো প্রমাণ করেন, এই ডেড স্পট চাঁদকে প্রদক্ষিণ করছে, খুব মন্থর গতিতে। এবং শুধু আলো নয়, কোনো কিছুই এর কাছে ঘেঁষতে পারে না। এই ডেড স্পটকে লক্ষ্য করে পাঠানো প্রজেক্টাইলগুলো একে একে বেঁকে ছুটে গেছে দিগ্বিদিক, দৃশ্যমান আলোর মতো এক্স রে, মাইক্রোওয়েভ আর বেতার তরঙ্গও বেঁকে গেছে। এক আশ্চর্য অস্পৃশ্য প্রপঞ্চ হয়ে মন্থর গতিতে চাঁদকে ঘিরে পাক খাচ্ছে ঐ বিন্দুটি। একে বোঝার উপায় আপাতত একটিই, এর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা অতি মৃদু মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ। এবং এই গবেষণায় প্রফেসর দরবেশ আপাতত গোটা পৃথিবীতে অগ্রণী।

"কী বলতে চাইছেন?" মনের কলার ধরে আবার ক্যাফেতে ফিরিয়ে আনলেন প্রফেসর দরবেশ।

ম্বাবাটু কফিতে পরিমিত চুমুক দিয়ে বললো, "আমি বলতে চাইছি স্যার, এমন কি হতে পারে না, যে এই বিকিরণের মধ্যে আসলে প্রচুর তথ্য আছে?"

প্রফেসর দরবেশ আনমনে ছোটো একটা চুমুক দিলেন চায়ের কাপে। "কী ধরনের তথ্য?"

ম্বাবাটু হাসিমুখে বললো, "তার আগে বলুন স্যার, বহুজগত নিয়ে কিছু বললে আপনি চটবেন কি না?"

প্রফেসর দরবেশ ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন, "দেখুন ম্বাবাটু, আপনি বোধহয় জানেন, আমি এই বহুজগত তত্ত্বটাকে কল্পগল্পের চেয়ে বেশি কিছু মনে করি না। ছোটো বাচ্চাদের কমিকের জিনিসপত্রে আমার আগ্রহ এককালে ছিলো, যখন আমি নিজে ছোটো ছিলাম। এখন আর নাই।"

বহুজগত তত্ত্ব নিয়ে কসমোলজিস্টদের হাউকাউ শুনলে প্রফেসর দরবেশ বিরক্ত হন। অতি অতি অতি ক্ষীণ সম্ভাবনার ওপর ভরসা করে যারা বিজ্ঞানের গরু গাছে ওঠাতে চান, তাদের প্রতিও তিনি চরম বিরক্ত।

বহুজগত তাত্ত্বিকদের এক দল বলছেন, মহাজগতের কোথাও না কোথাও আমাদের পৃথিবী বা সৌরজগত বা ছায়াপথের হুবহু কপি রয়েছে, এবং সেই কপির সংখ্যাও অনির্দিষ্ট রকমের বড় হতে পারে। সেই কপি-পৃথিবীগুলো মূল পৃথিবীর সমসাময়িক না-ও হতে পারে, হয়তো সেখানে মোটে এককোষী প্রাণের উদ্ভব হয়েছে, কিংবা হয়তো সেখানে প্রাণের বিবর্তনের চরমতম অধ্যায় চলমান, নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু কোনো এক কপি-পৃথিবী আমাদের সমসাময়িকও হতে পারে।

প্রফেসর দরবেশ বাঁকা হেসে বললেন, "আপনি কি জানেন, কীরকম দূরত্ব পার হলে আপনি ঐ ছেঁদো বহুজগত তত্ত্বের প্রমাণ পাবেন?"

ম্বাবাটু মৃদু হেসে বললো, "জানি স্যার। গত মাসেই এ নিয়ে লেখা আমার একটা নিবন্ধ ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। সংখ্যাটা বেশ ... বড়, আমি জানি।"

প্রফেসর দরবেশ বললেন, "আমাদের দৃশ্যমান জগতে উপপারমাণবিক কণাগুলোকে কতভাবে সাজানো সম্ভব, জানেন?" পকেট থেকে একটা কলম বার করে টিস্যু পেপারে বড় করে একটা ২ লিখলেন তিনি, তারপর তার ঘাতের জায়গায় লিখলেন ১০১১৮ । "দেখুন।"

ম্বাবাটু হাসিমুখেই বললো, "এর সাথে গুণ করতে হবে আমাদের দৃশ্যমান জগতের ব্যাস। ১০২৬ মিটার স্যার, জানি আমি।"

প্রফেসর দরবেশ বললেন, "ঐ গুণফলের সমান দূরত্ব পার হলে হুবহু আরেকটা পৃথিবী পাওয়া যেতে পারে, যেখানে আমি আর আপনি ক্যাফেতে বসে চা আর কফি খাচ্ছি, তাই তো?"

ম্বাবাটু মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেই বললো, "মমমম না স্যার। ঐ পৃথিবীতে হয়তো আমি এখনও ক্যামেরুনের কোনো জঙ্গলে বাঁদর শিকারে ব্যস্ত, আর আপনি হয়তো কোনো ট্রেন স্টেশনে পান-বিড়ি বিক্রি করছেন।"

প্রফেসর দরবেশ ঠাণ্ডা চোখে ম্বাবাটুর দিকে তাকিয়ে বললেন, "পান-বিড়ি?"

ম্বাবাটু হাসিমুখে মাথা দুলিয়ে বললো, "কিংবা কলা।"

প্রফেসর দরবেশ বললেন, "আমার একটা কপিকে অন্য দুনিয়ায় পান-বিড়ি বেচাতে হলে যে বিরাট দূরত্ব পার হতে হবে, সেই দূরত্ব পার হবার সময় আপনার বা আমার কারোই নেই। এ কারণেই, এই তত্ত্বে আমার কোনো আগ্রহ নেই। এসব জিনিস বিজ্ঞান লেখকদের বিজ্ঞান বিজ্ঞান খেলার জন্যে, আমার অন্য কাজ আছে।"

ম্বাবাটু আহত হলো না একটুও, অন্তত আহত হলেও তার চেহারায় সেই ছাপ পড়লো না। "কিন্তু স্যার, চিন্তা করে দেখুন, হয়তো স্থানকালের চাদরটা আমরা যেমন ভাবছি, সেরকম চাদর নয়। হয়তো দলা পাকানো, মোচড়ানো, হয়তো আমাদের চেনা তিন মাত্রায় অতিক্রম করতে গেলে একটা বিন্দু থেকে আরেকটা বিন্দুর দূরত্ব ওরকমই বড় হবে। কিন্তু যদি অন্য কোনো মাত্রায় এরা খুব কাছাকাছি চলে আসে ...।"

প্রফেসর দরবেশ আবার চায়ের কাপে বজ্রকঠোর চুমুক দিলেন। "ওয়ার্মহোল? আমি দুঃখিত, ওটাও কল্পবিজ্ঞান। কমিকের খোরাক। আর কিছু বলবেন?"

ম্বাবাটু হাসিমুখেই বললো, "আপনি যে মৃতবিন্দু নিয়ে কাজ করছেন স্যার, ওটা কি একটা একমুখী ওয়ার্মহোলের এক প্রান্ত হতে পারে না?"

প্রফেসর দরবেশ চায়ের কাপটা ধীর হাতে নামিয়ে রাখলেন। "তাই? পারে?"

ম্বাবাটু ঝুঁকে পড়ে বললো, "কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউণ্ড তো কোনো কমিকের খোরাক নয় স্যার। আমরা সেই বিগ ব্যাঙের আমলের বিকিরণ শনাক্ত করতে পেরেছি। এমনকি হতে পারে না স্যার, যে এই ডেড স্পট আসলে একটা একমুখী সুড়ঙ্গের মাথা? এর অন্য প্রান্ত হয়তো খোলা, যেদিক দিয়ে আলো ঢুকতে পারে। যদি সুড়ঙ্গটার দৈর্ঘ্য আমাদের পরিচিত তিন মাত্রার হিসেবে অনেক, অনেক বেশি হয়, তাহলে সেই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে সেই আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বাড়তে বাড়তে সেটা এক সময় মাইক্রোওয়েভে পরিণত হতে পারে, যে মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ নিয়ে আপনি আজকে পেপার পড়লেন স্যার। আপনারই নকশা করা মাইক্রোওয়েভ টেলিস্কোপ চাঁদকে ঘিরে চক্কর কাটতে যাচ্ছে বছর খানেকের মধ্যে, তাই না?"

প্রফেসর দরবেশ চায়ের কাপে ছোটো চুমুক দিয়ে বললেন, "ম্বাবাটু, আপনার উৎসাহ আছে, আমি টের পাচ্ছি। কিন্তু বিজ্ঞান একেবারেই ছেলেখেলা নয়। হুট করে একটা ফিকশনের ওপর ভর করে আমরা, বিজ্ঞানীরা, এগোতে পারি না।"

ম্বাবাটু কফিতে চুমুক দিলো হাসিমুখে। "আমার আইডিয়াটা এমনই স্যার। আপনি তো জানেন, মহাজগতে একটা তথ্য প্রাচীর আছে। পাশের গ্যালাক্সিতে যদি আজ আমরা একটা বার্তা পাঠাতে যাই, সেটা ওখানে পৌঁছুতে পৌঁছুতে পঁচিশ লক্ষ বছর পেরিয়ে যাবে। সেই বার্তার কোনো উত্তর যদি পাঠানো হয়, সেটা পৌঁছবে আজ থেকে পঞ্চাশ লক্ষ বছর পরের কোনো প্রজন্মের হাতে। কিন্তু স্যার, কোনো না কোনো চোরাগলি কি এই মহাজগতে থাকতে পারে না, যেখানে অন্তত আরো অনেক অল্প সময়ের মধ্যে তথ্য বিনিময় হতে পারে? আপনার এই মৃতবিন্দু হয়তো সেরকমই যোগাযোগের একটা মাধ্যম?"

প্রফেসর দরবেশ বললেন, "তা ঐ সুড়ঙ্গের খোলা মাথাটা কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?"

ম্বাবাটু বললো, "তা ঠিক জানি না স্যার। হয়তো খুব স্বাভাবিক এক টুকরো জায়গা। হয়তো আমাদের এই ক্যাফেটাই ওরকম কোনো সুড়ঙ্গের খোলা মাথা। আমাদের এখান থেকে আলো সেই সুড়ঙ্গ বেয়ে অন্য কোনো পৃথিবীর মৃতবিন্দু দিয়ে মাইক্রোওয়েভ হয়ে বেরোচ্ছে। হয়তো সেই মাইক্রোওয়েভ সিগন্যালকে দৃশ্যমান আলোতে রূপান্তরের কোনো ফিল্টার কাজে লাগিয়ে আমরা কী করছি, সেটা দেখছে কেউ।"

প্রফেসর দরবেশ বললেন, "তার মানে, পৃথিবীতে প্রাইভেসি বলে কিছু নেই?"

ম্বাবাটু হাসিমুখে বললো, "কারো কারো জন্যে হয়তো নেই স্যার। আসি, আমার কফি খাওয়া শেষ। আপনার চা-ও মনে হয় শেষের দিকে। শুভেচ্ছা জানাই স্যার, আমার আইডিয়াটা একেবারে যদি ডাস্টবিনে না ফেলেন, সেটাই হবে আমার বড় পাওয়া। বিদায়।"

প্রফেসর দরবেশ শুষ্ক কণ্ঠে বললেন, "বিদায়।"

২.

চার বছর আগে চা খেতে গিয়ে ম্বাবাটুর সাথে সাক্ষাতের কথা আবার মনে পড়ে গেলো প্রফেসর দরবেশের। সত্যি বলতে কী, লোকটার আইডিয়া তিনি ঝেড়ে ফেলেছিলেন, কিন্তু মাইক্রোওয়েভ টেলিস্কোপের প্রথম দফার সিগন্যাল হাতে পেয়ে ম্বামাটুর কথাই তার প্রথমে মনে পড়েছিলো। মৃতবিন্দু থেকে বেরিয়ে আসা মাইক্রোওয়েভ বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বৈচিত্র্যই এর কারণ।

এর পর দুই বছর প্রায় ষাটজন বিজ্ঞানীর এক দল নিয়ে পশুর মতো পরিশ্রম করে গেছেন প্রফেসর দরবেশ। সম্ভাব্য সব রকম বিশ্লেষণ প্রয়োগ করে শেষ পর্যন্ত একটি ফিল্টার অ্যালগরিদম ফল দিয়েছে, মাইক্রোওয়েভ টেলিস্কোপের আউটপুটে দেখা গেছে একটি ছবি। তাতে কালো মহাকাশে একটি নীল গ্রহের একাংশ দেখা গেছে।

ম্বাবাটুর সাথে যোগাযোগ করা উচিত হবে কি না, তা নিয়ে সামান্য ভাবনা উদয় হয়েছিলো প্রফেসর দরবেশের মনে, কিন্তু সে ভাবনা ঝেড়ে ফেলেছেন তিনি। বিজ্ঞান লেখকদের সাথে পরে কথা বললেও চলবে।

এর পর প্রচুর নষ্ট আউটপুটের পাশাপাশি একে একে আরো বেশ ক'টি অর্থবহ ছবি পাওয়া গেছে। নীল গ্রহটি যে পৃথিবীর ছবি, তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ ছিলো না, তাই সেটি বাস্তব পৃথিবীরই প্রতিবিম্ব কি না, তা স্থির করতে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে। বাস্তব পৃথিবীর ছবি সেটি নয়, কারণ সেই পৃথিবীতে উত্তর আর দক্ষিণ মেরুর বরফ আচ্ছাদন আরো বিস্তৃত, এবং সেই পৃথিবীর চাঁদটিতে উল্কাপাতের গহ্বরের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। ম্বাবাটুর অনুমান ভুল নয়, এটি অন্য কোনো কপি-পৃথিবীর ছবি, যে পৃথিবী বহু দূরে, যে পৃথিবীর বার্তা ভেসে আসছে মহাজগতের এক চোরাগলি বেয়ে। প্রফেসর দরবেশ সেই বার্তার উদ্ধারকর্তা।

চায়ের কাপ হাতে সামনে বিশাল মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছেন প্রফেসর দরবেশ। নতুন শক্তিশালী মাইক্রোওয়েভ টেলিস্কোপ পাঠানো হয়েছে মৃতবিন্দু থেকে বেরিয়ে আসা বিকিরণ বিশ্লেষণের জন্যে, আজ তার প্রথম দফা ছবি আসবে, আগের চেয়ে অনেক বেশি রেজোলিউশনে।

"ডক্টর দরবেশ, ফাইল প্রসেসিং শেষ। স্ক্রিনে পাঠাবো?" হেডফোনে ভেসে এলো এক সহকর্মীর গলা।

"হ্যাঁ, প্লিজ।" বুক ঢিপঢিপ অনুভূতিটা চায়ের কাপে চুবিয়ে মারার সিদ্ধান্ত নিলেন প্রফেসর দরবেশ।

স্ক্রিনে ভেসে উঠলো একটা ছবি। কপি-পৃথিবীর একাংশ দেখা যাচ্ছে স্ক্রিনে, কপি-চাঁদ দৃশ্যমান নয়, আর একটা ছোটো আলোর বিন্দু গোল লাল মার্কার দিয়ে দাগানো।

"জুম করো।" মাইকে বললেন প্রফেসর দরবেশ।

তিন দফা জুম করার পর ছোটো আলোর বিন্দুটি একটি আলোর গোলকে পরিণত হলো।

"করতে থাকো।"

নতুন টেলিস্কোপটি মারাত্মক শক্তিশালী, দফায় দফায় জুম করার পরও ছবির কোয়ালিটির তেমন কোনো হেরফের হয়নি দেখে টের পেলেন প্রফেসর দরবেশ।

আলোর গোলকটি এক সময় গোটা স্ক্রিন দখল করে ফেললো।

নিশ্চিতভাবেই সেটি একটি মহাকাশ স্টেশন গোছের কিছু। গোলকটির একটি অংশ স্বচ্ছ কোনো বস্তুর আবরণে তৈরি, তার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে, গোলকটির ভেতরে আলো জ্বলছে। সেই আলোয় চোখে পড়ছে প্ল্যাটফর্মের মতো একটি কাঠামো, কিছু গোল দরজা, একটি প্রশস্ত কাউন্টার। নিঃসন্দেহে একটা মহাকাশ স্টেশনের ছবি।

হলঘরের ভেতর উত্তেজিত ফিসফাস শুরু হলো। কে একজন হাততালি দিয়ে উঠলো।

প্রফেসর দরবেশ চোখ বুঁজলেন। নোবেল নিশ্চিত, কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু কয়বার দেয়া হবে সেটাই এখন প্রশ্ন। অন্তত দুইবার দেয়া উচিত, তিনবার দিলে বুঝতে হবে নোবেল কমিটির লোকজনের ভদ্রতাজ্ঞান আছে। আর ম্বাবাটুর সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারটা নিয়ে পরে চিন্তা করা যাবে। লোকটা কোনো মিডিয়াভিত্তিক নিম্নবর্গীয়পনা শুরু না করলেই হয়।

হেডফোনে হড়বড় করে কে যেন বললো, "ডক্টর দরবেশ, একটা মানুষ দেখা যাচ্ছে!"

"জুম করো!" হুঙ্কার দিলেন প্রফেসর দরবেশ।

আলোকিত গোলকটির জানালা গোছের প্রান্তে একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে, এবার বোঝা যাচ্ছে পরিস্কার। উজ্জ্বল আলো এসে পড়েছে তার মুখে।

আরো কয়েকবার জুম করার পর লোকটার অবয়ব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠলো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে, হাতে একটা পাত্রের মতো কিছু ধরা।

"জুম, জুম, জুম!" গর্জে উঠলেন প্রফেসর দরবেশ।

আরো কয়েকবার জুম করার পর গোটা হলঘরের ফিসফাস থেমে গেলো।

এবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মানুষটাকে, হাঁটু পর্যন্ত। লোকটা বয়স্ক, মুখে পুরু গোঁফ, মাথায় টাক, চোখে চশমা। তার হাতে ধরা একটা টুকরিজাতীয় পাত্র।

প্রফেসর দরবেশ বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইলেন সেই চেহারার দিকে। চেহারাটা তাঁর পরিচিত, তিনি প্রায়ই এই চেহারাটা কোথাও দেখেন, কিন্তু কোথায় দেখেন, তা কিছুতেই তাঁর মনে পড়ছে না।

আরেক দফা জুম করার পর প্রফেসর দরবেশ চিনতে পারলেন চেহারাটাকে। রোজ সকালে আয়নায় চেহারাটা দেখেন তিনি।

পর্দার ঐ লোকটা কপি-পৃথিবীর কপি-দরবেশ। কিন্তু ওর হাতে কী?

প্রফেসর দরবেশ অস্ফূট গলায় বললেন, "হাতে কী?"

আরো এক দফা জুম করার পর কানের কাছে হেডফোনে কটকট করে উঠলো একটা গলা।

"কলা, স্যার। পাকা কলা।"


মন্তব্য

মিলু এর ছবি

খাইসে! হিমুদা খেপসে! চলুক

মিলু এর ছবি

"কলা, স্যার। পাকা কলা।"

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

ফাহিম হাসান এর ছবি

লেখার সমাপ্তিটা অনুমান করতে পারছিলাম, তাই হিমুর টুইস্টটুকু পেলাম না।
গল্পটার প্রেক্ষাপট খুব মজার, আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি নন-সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের পাঠকেরা কিভাবে এই গল্পটার সাথে নিজেকে রিলেইট করে।
দরবেশের মনস্তত্ত্বে যেভাবে উঁকি মারতে পারলাম, ম্বামাটুর ক্ষেত্রে তা সম্ভব হল না- ইন্টারেস্টিং চরিত্রটা একটু রহস্যময় বা আন্ডারডেভেলাপড (ইচ্ছা করে?) মনে হল।
কোন সাবটেক্সট ছাড়াই মজাটুকু উপভোগ করলাম।

হিমু এর ছবি

মাথা চুলকাই। কী ধরনের টুইস্ট আশা করেন, বলেন দেখি। একটা পুরো সাইফাই উপন্যাস লেখার প্লট মাথায় চুলকাচ্ছে, সেটাতে হাত দেয়ার আগে টুইস্টের কিসিম নিয়ে সাইফাই পাঠকের প্রত্যাশার সাথে পরিচিত হই।

ফাহিম হাসান এর ছবি

টুইস্ট যে থাকতেই হবে তা না, তবে আপনার বেশ কিছু ছোটগল্পে জব্বর টুইস্ট ছিল। "মাদারচো", আঁচড়, কামড় ইত্যাদি আগে পড়ে আসাতে কোন গল্প জাতীয় পোস্টগুলো পড়ার শুরুতেই আধা-চেতন মনে টুইস্টের প্রত্যাশাটা থাকে। আপনার উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছি না, তবে মুচড়ে দেওয়া সমাপ্তির রেশটা বেশিক্ষণ ধরে থাকে - এই আরকি!

চরম উদাস এর ছবি

দেঁতো হাসি জটিল।

বন্দনা এর ছবি

মেলাদিন পর ফিকশন পড়লাম... খুব ভালো লাগলো, কিছুদিন আগেই ইউটিউবে এই সংক্রান্ত ভিডিওগুলো দেখছিলাম।

ফালতু পাঠক এর ছবি

ভালো লেগেছে চলুক

Kamrul Hasan এর ছবি

দারুন ভাল লাগলো। চলুক

দ্রোহী এর ছবি

"হিমু ফ্লেভার" সাধারণ প্লটের গল্পটিকেও উপভোগ্য করে তুলেছে। চলুক

গঙ্গা এর ছবি

বেশ ভালো লেগেছে............... চলুক

রাবন এর ছবি

সুবাসিত চা এবং বলিষ্ঠ বিস্কুট এর মতোই উপাদেয় হয়েছে

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কোন বস্তুতে আপতিত আলোর পুরোটাই প্রতিফলিত হলে সেটাকে কি কালো দেখাবে, নাকি সাদা?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সজল এর ছবি

অযাচিত ভাবেই একটু চিন্তা করে দেখলাম, দেখেন পছন্দ হয় কিনা হাসি ।পুরোটা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এলে সাদা দেখাবে। কোন বস্তুকে কালো দেখাবে যদি তার থেকে কোন প্রতিফলিত আলো না আসে। এখানে যেহেতু আলো বিকর্ষিত হয়ে যাচ্ছে, তার মানে এই স্পটের উপর কোন আলোই পড়ছে না, তাই প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসারও কোন প্রশ্ন আসে না। ব্ল্যাক হোলের সাথে এই "ডেড স্পটের" পার্থক্য হলো ব্ল্যাক হোলে আলো পৌঁছায়, কিন্তু তারপর আর প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে না, আর এই ডেডস্পটে আলো পৌঁছায় না, তাই প্রতিফলিত হয়ে ফিরেও আসে না। এন্ড রেজাল্ট একই, তাই দুই জিনিসকেই কালো দেখায়।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

স্পর্শ এর ছবি

সাদা বা কালো কোনোটাই না। দেখাবে এক ফোঁটা পারদের মত।

পারদে আলো বাড়ি খেয়ে ফিরে আসে। আর এখানকার মৃত বিন্দুতে ঠিক বাড়ি খেয়ে ফেরে না। একটু দূর থেকেই বেকে চুরে যায় মনে হয়। সেক্ষেত্রে মৃতবিন্দুর প্রকৃত ব্যাসের চেয়ে বড় ব্যাসের একটা পারদের বিন্দুর মত দেখাবে। চকচকে।

তবে মূল কথা হলো, যে জিনিশের কাছে আলো বা কোনো বস্তু পৌছাতে পারে না। সেই জিনিশ থেকে আলো বা মাইক্রোওয়েভ বের হতেও পারবে না। কারণ নিশ্চয়ই ঐ বস্তুর নিকটবর্তী স্পেসটাইমেই কোনো ধরনের 'বিচ্ছিন্নতা' চলে এসেছে।

এইসব প্যাচাল বাদ।

গল্পটা ভালো লেগেছে। খুব সুন্দর একটা প্লট। তবে শেষের 'টুইস্ট' টা প্লটের প্রতি সুবিচার করতে পারে নি। এই প্লট নিয়ে আরো বড় কলেবরে, আরো চমৎকার গল্প আসতে পারে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কল্যাণF এর ছবি

প্রকৃত ব্যাসের থেকে বড় দেখাবে কিন্তু পুরোটা চকচক করবে না মনে হয়। আলো যদি সবই সরে যায় তাহলে মনে হয় পরিধি বরাবর আলোর একটা রিং দেখা যাবে শুধু আর ভেতরে কাল।

স্পর্শ এর ছবি

উহু, যে অংশটুকু আপনি 'কালো দেখাবে' বলে মনে করছেন। ঐ বরাবর আপনার পিছনের কোনো তারা থেকে আসা আলো বাধা পেয়ে (মানে, রিফ্লেক্ট করে) আপনার চোখে এসে পড়বে। আপনি সেইসব তারার কিছুটা বিকৃত প্রতিবিম্ব দেখবেন। তাই ঐ অংশটাও পারদের মতই চকচক করবে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কল্যাণF এর ছবি

আরে তাইত!

হিমু এর ছবি

রিফ্লেক্ট করবে কেন হাসি ? আর যদি রিফ্লেক্ট করেও থাকে, তাহলে ঐ ডেডস্পটের জায়গায় পৃথিবীর একটা অংশের ছবি দেখা যাবে, "পেছনের" কোনো তারার আলো নয় (পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত আলোর পরিমাণ দূরের তারার আলোর চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে)।

ডেডস্পটের ধারণাটা যদিও নিতান্তই কল্পগল্পের খাতিরে বের করা, কিন্তু এরকম কিছু যদি থেকে থাকে, সেটা নিয়ে ব্রেইনস্টর্মিং খুব ইন্টারেস্টিং হবে। জিনিসটা আপতিত আলোকে এক পাশে ঠেলে সরিয়ে দেবে, ফলে "প্রতিফলন" ঘটবে না। যদি অবজারভার আর ডেডস্পটের সংযোজক সরলরেখার বাইরে কোনো আলোর উৎস থেকে আগত আলো বেঁকে গিয়ে অবজারভারের চোখে পড়ে, তাহলে ডেডস্পটের জায়গায় ঐ উৎসের একটা বিম্ব দেখা যাবে। অর্থাৎ, ডেডস্পট রাতের আকাশের একটা ছোটো অংশের স্যাম্পল হিসেবে কাজ করবে। যেহেতু রাতের আকাশের একটা বড় অংশ কালো, সম্ভাবনা বিবেচনা করলে, ডেডস্পটকেও বেশিরভাগ সময় কালো দেখা যাবে।

কল্যাণF এর ছবি

ধরে নেই আমি মৃতবিন্দুর দিকে তাকিয়ে আছি, এখন মহাকাশের অসংখ্য আলোর উৎসগুলো মৃতবিন্দুর আশে পাশে, উপরে নিচে পেছনে সব দিকে আছে, আলো এই সব উৎস থেকে মৃতবিন্দুর উপর পড়বে। এবার এই আলো যেমন মৃতবিন্দুর শুধু পেছনে সরে যাবে তাই নয় মৃতবিন্দুর চারিদিকে সরে সরে যাবে। তাহলে আমি আসলে একটা চকচকে কাঁচের বলের মত মসৃণ গোলক দেখতে পাব।

হিমু এর ছবি

আপনার প্রস্তাব যথাযথ হতো, যদি আপনার রেটিনা, বা আপনার ভেরি লার্জ টেলিস্কোপের রিসিভিং মিরর মৃতবিন্দুর চারপাশে একটা গোলকের মতো আবরণ হিসেবে ছড়িয়ে থাকতো। কিন্তু এই দুটো জিনিস যেহেতু মৃতবিন্দু থেকে দূরে একটা সমতলে আছে, কাজেই মৃতবিন্দুর পেছনের আকাশের একটা নির্দিষ্ট রিং আকারের অংশ থেকেই কেবল আলো আপনার চোখে পৌঁছাতে পারবে। সেটা অন্ধকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু আলো আপনি দেখতে পাবেন, সে আলোটা জিনিসটার চারপাশে করোনা হিসেবে থাকবে, মাঝখানে কিছু দেখা যাবে না বলেই কালো মনে হবে, সূর্যগ্রহণের সময় যেমন দেখা যায়।

জিনিসটা ইন্টারেস্টিং। এমন কিছু পাওয়া গেলে মন্দ হতো না হাসি

কল্যাণF এর ছবি

খাইছে হিমু ভাই, তাইলে ১৫ নম্বর মন্তব্যে আমি যে করনা টাইপের রাস্তায় চিন্তা করতেছিলাম ঐটাই ঠিক ছিল? মৃতবিন্দুর আইডিয়া জটিল, আমরাতো মহাকাশের পুরাটা জানিনা এইরকম একটা কিছু হঠাৎ আবিস্কার হইলে বেশ হইত।

স্পর্শ এর ছবি

এই চিত্র থেকে দেখা যায়। মৃতবিন্দু বরাবরও বিভিন্ন দূরবর্তী তারকা/গ্যালাক্সির প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে। পুরো ইফেক্ট টা হবে ওখানে একটা পারদের বল রাখার মত।
এটা ঠিক যে দুপুর বেলায় আমাদের বসার ঘরে এক বিন্দু পারদ যেমন রুপোলী দেখায় তেমন দেখাবে না। কিন্তু সেটার গায়ে রাতের আকাশের তারার প্রতিবিম্ব যেমন দেখানোর কথা তেমন দেখাবে। এখানে অবশ্য পারদের বলটার ব্যাস অনেক বড় ভেবে নিতে হবে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

হিমু এর ছবি

চিত্রে ভুল আছে, নিজেই চেক করে দেখো। মৃতবিন্দু বরাবর দেখানোর জন্যে আলোকে শেষ মুহূর্তে যে হেয়ারপিন বেণ্ড নিতে হয়েছে ছবিতে, সেটার ব্যাখ্যা কী?

মৃতবিন্দুর চারপাশে একটা "প্রভাব গোলক" কল্পনা করো। কোনো আলো এসে এর ওপর পড়লে সে বিকর্ষিত হবে, অর্থাৎ কোনো আলোকরশ্মি এই গোলকের ভেতরে সেকান্ট হিসেবে কাজ করতে পারবে না। অতএব এই গোলকের ওপর আপতিত যেকোনো রশ্মি গোলকের বড়জোর স্পর্শক বরাবর সটকে পড়বে (যদি স্পর্শক বরাবর না গিয়ে সে স্পর্শক রেখারও বাইরে চলে যায়, তখন সেটা প্রতিফলন হবে, যেটা শুরুতেই রুল আউট করে দিচ্ছি আমরা) কাজেই যে কোনো সময়ে পর্যবেক্ষকের চোখে এই প্রভাব গোলকের স্পর্শক আলোকরশ্মি এসে পড়বে কেবল, অর্থাৎ কোনো দূরবর্তী উৎসের আলো দেখা যাবে এই প্রভাব গোলকের পরিধি বরাবর।

স্পর্শ এর ছবি

গ্রাভিটেশনাল ফিল্ডের প্রভাবে যেভাবে ভিতরের দিকে বেঁকে আসে সেভাবে এই মৃতবিন্দুর প্রভাবে বাইরের দিকে বেঁকে যাবে বলে ধরে নিয়েছি। সেই অ্যাজাম্পশন অনুযায়ী চিত্রটা ঠিক থাকে।

এই ডেড স্পটকে লক্ষ্য অরে পাঠানো প্রজেক্টাইলগুলো একে একে বেঁকে গেছে দিগ্বিদিক, ... আর বেতার তরঙ্গও বেঁকে গেছে।

এই কথা থেকে 'বেঁকে' যাওয়ার ব্যাপারটা ভেবে নিয়েছি।

এ এমন এক ইয়ে, যা আলোকে বিকর্ষণ করে

এ কথা থেকেও একটা 'বিকর্ষণ ফিল্ড' কাজ করছে বলেই মনে হয়। তার ফলেও আলোর 'বেঁকে' যাওয়ার কথা। মানে এ ধরনের ফিল্ডের প্রভাবে পরিবর্তন 'কন্টিনিউয়াস' হয়। (ধরে নিচ্ছি ফিল্ডটা কাজ করছে মৃতবিন্দুর বাইরের একটা কল্পিত প্রভাব গোলকের ভিতরে। এবং মৃতবিন্দুর যত কাছে যাওয়া যায় ফিল্ডটা অ্যাসিমটটিক্যালি ততই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে কোনো কিছুই আর মৃতবিন্দুতে পৌছায় না।)

আর বৃত্তের কোনো বিন্দুর স্পর্শক একটাই থাকে। তাই বড়জোর দুইটা সম্ভাব্য দিকে কোনো প্রজেক্টাইলের পক্ষে ছুটে যাওয়া সম্ভব। ওদিকে গোলকের স্পর্শক একটা তল। তাই সেই তল বরাবর ঠিক কোন দিকে ছুটে যাবে সেটাও ডিফাইন করা মুশকিল হয়... (যাকগে সেসব টেকনিক্যাল ডিটেইল) আর ব্যাপারটাকে ঠিক 'বিকর্ষণ' বলা যায় না। 'পিচ্ছল' বলা যেতে পারে। চিন্তিত

আর হ্যা, কোনো একটা স্পর্শক বরাবর ছুটে যাবে ভাবলে মৃত বিন্দু কালোই দেখাবে। চারপাশে একটা গ্লোইং রিং সহ।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কল্যাণF এর ছবি

স্পর্শ ভাই, আলোর বেঁকে যাওয়ার পাশাপাশি একটা আংশ কি সরাসরি প্রতিফলিত হবে? তাহলেতো একটা আভা মানে বিচ্ছুরণ দেখা যাবে মনে হচ্ছে গোলোকের পরিধী বরাবর। আমি কেন যেন মৃতবিন্দুটাকে একটা বলের মত গোলোক কল্পনা করে নিচ্ছি বারবার। আমার অবশ্য পদার্থবিদ্যার পড়ালেখা ইন্টারমিডিয়েটে যতটুকু পড়েছি ওই পর্যন্তই।

আলভী মাহমুদ এর ছবি

বিনা অনুমতিতে হামলে পড়ার জন্য দুঃখিত।এতক্ষণ আপনাদের ব্যাখ্যা গুলি পড়লাম (আমার কাছে প্রথমত ব্যাপারটা ওই স্বর্ণপাতের উপর আলফা পার্টিকেল বম্বার্ডমেন্ট এর মাধ্যমে নিউক্লিয়াস বের করার মত মনে হয়েছিল,এখন আবার কেমন প্যাচ প্যাচ লাগতেসে),আচ্ছা পয়েন্টটাকে দেখা কি যাওয়ার কথা?একটা পয়েন্ট সোর্স থেকে আসা আলো যদি আমরা চিন্তা করি,মৃত বিন্দুটা তা বিকর্ষণ করবে এবং বিকর্ষণের ফলে আলোকরশ্মি গুলো পজিশনের ভেদাভেদে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়বে।এখন অব্জার্ভার এর কাছে যখন আলোটা পৌছাবে,এটার উপর ভিত্তি করে বিম্ব যা পাওয়া যাবে তা তো ওই পয়েন্ট সোর্সের হবার কথা না??বিকর্ষণ বলতে আমি যা বুঝি তাতে এটাই হওয়া উচিৎ কারণ ওই মৃতবিন্দুকে এনক্লোজ করে একটা বিরাট এরিয়া এর গ্রাফ নিয়ে সুপার ইম্পোজ না করলে একটা দিক থেকে অবজার্ভ করে কি এটার পেরিমিটার এর আইডিয়া আমাদের পাওয়ার কথা?মাথার মধ্যে মডেল দাড়া করাইতে গেলে ব্যাটা অন্য কথা কইতেসে।ভুল করলাম নাকি?!

আলভী মাহমুদ এর ছবি

ও হ্যা,ক্যাচক্যাচ করতে গিয়ে আসল কথাই ভুলে গেছি।লেখাটা ভাল্লাগ্লো হিমু ভাই,কিন্তু শেষটা একটু প্রেডিক্টেবল মনে হইল ইয়ে, মানে...

জ়াতির বিবেক এর ছবি

চমৎকার লাগলো পড়ে , হিমু ভাইকে স্যালুট ।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমাদের চেনা পৃথিবীতে স্থান কাল পাত্রের যে ত্রিমাত্রিক রূপ, পদার্থের যে চরিত্র, আলোর যে গতি এই সবকিছু ভিন্নমাত্রার জগতে অন্যরকম হতে পারে, তাই না? বহুজগত ধারনাটির সাথে পরিচিত হলাম। এই জাতীয় ফিকশন আবার বরাবরই ভালো লাগে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

শাব্দিক এর ছবি

অসাধারন। চলুক
পুরো লেখাটা একদম নিশ্বাস বন্ধ করে পড়লাম, যদিও শেষ করার পর ভাবলাম এটাই হবার কথা ছিল। কিন্তু পড়ার সময় ভাবার সময় পাইনি।

ঝরাপাতা এর ছবি

ভালো লাগলো.... এরকম প্যারালাল ইউনিভার্সের কনসেপ্ট নিয়ে একটা গল্প লেখা শুরু করেছিলাম... শেষ করা হয়নি...


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

আর্যভট্ট এর ছবি

হুম। টুইস্টের অংশটা জমেনি যদিও।

হিমু এর ছবি

জমে নাই? দ্রান, দেখি পরেরটায় জমানো যায় কি না।

নিটোল. এর ছবি

চমৎকার প্লট। পুরো লেখাটায় মজা পেয়েছি। এন্ডিং কল্পনা করা গেছে, তারপরও অনেক ভালো।

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

বহুত দিন পরে একটা গল্প পড়ে এতো নির্মল আনন্দ পেলাম। সবদিক থেকেই দুর্ধর্ষ। বর্ণনাতেও যেমন, সমাপ্তিতেও কঠিন!

উত্তম জাঝা! উত্তম জাঝা!

হেমন্তের ঘ্রাণ এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু যথারীতি দুর্দান্ত!!!

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বাহ, খাসা গল্প হাসি

সাইফাইয়ের জন্যে প্লটটা কিন্তু খুব চমৎকার। সেক্ষেত্রে এটাকে আরেকটু ঘষামাজা করে আপনি নিজেই তো একটা বড়সড় খাঁটি সাইফাই লিখতে পারেন হিম্ভাই। আর, আম্বাটুর কোন হদিস পেলাম না কেনো গল্পের শেষে ??...

[আর চন্ডীশিরা কো, কো, কো, কো ??]

কল্যাণF এর ছবি

অসাধারন লেগেছে, আপনাকে ধন্যবাদ যে বেশি লম্বা করেননি। গুরু গুরু

বাংলামায়ের ছেলে এর ছবি

ভাই...আপনে বস!!!

দরবেশ বাবার হাতে শেষপর্যন্ত কলাই ধরায়ে দিলেন!!!

আশালতা এর ছবি

চমৎকার।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

বাওয়ানী এর ছবি

লোকটা কোনো মিডিয়াভিত্তিক নিম্নবর্গীয়পনা শুরু না করলেই হয়।

হিমু রকসসস..

বন্দনা কবীর এর ছবি

আমি সাইফাইয়ের ভক্ত। তাই... মন্দ লাগেনি। টুইস্টটা আসলেই হিমুর মত হয় নাই।

হিমু এর ছবি

সহজষড়ল এক ভালুমানুষের কাছ থেকে খালি টুইস্ট চাইলে ক্যাম্নে হবে?

মন_মাঝি এর ছবি

বহুজগত হবে, নাকি 'সমান্তরাল জগত' ? কিম্বা 'প্রতিবিশ্ব' ? আমি যদ্দুর জানি (যেটা প্রায় না জানার সমান) 'মাল্টিভার্স' নামেও একটা তত্ত্ব আছে বিজ্ঞানে/ফিজিক্সে। এই মাল্টিভার্স আর 'প্যারালাল ইউনিভার্স' কি একই জিনিষ ? তা না হলে প্যারালাল ইউনিভার্স-এর বাংলা হিসেবে 'বহুজগত' কি একটু কনফিউজিং হয়ে যায় না ?

হিমু এর ছবি

মাল্টিপল ইউনিভার্সেরই বাংলা করলাম বহুজগত। প্যারালেল ইউনিভার্সের ধারণাটা খুব সম্ভবত অন্যরকম, যে একটা আপাত অলঙ্ঘ্য মাত্রাগত ব্যারিয়ার দিয়ে পাশাপাশি অনেকগুলো সমসাময়িক জগত বর্তমান। আর মাল্টিপল ইউনিভার্স তত্ত্ব (এখানে যা বললাম) বলছে, মহাবিশ্ব অসীম, অতএব আপনি যদি বিরাট একটা দূরত্ব অতিক্রম করেন, হয়তো সেখানে আপনার একটা কপি পাওয়া যেতে পারে। ঐ কপিটাতে আপনি থিওরেটিক্যালি পৌঁছুতে পারবেন, কারণ সেটার সাথে আপনার কোনো মাত্রাগত ব্যারিয়ার নেই।

মন মাঝি এর ছবি

দারুন লাগল গল্পটা !! তাছাড়া টুইস্টওয়ালা গল্প আমার সবসময়ই ভাল লাগে। আপনার আগের অনেক গল্পেও এইসব টুইস্ট দুর্দান্ত ভাবে এসেছে.... সুতরাং আপনার "মাথা চুলকানোর" কারনটা ঠিক বুঝলাম না। হাসি

তবে এই গল্পটার ব্যাপারে আমি উপরে ফাহিম হাসানের মন্তব্যের সাথে একমত। এইবারে টুইস্টটা একটু প্রেডিক্টেবল হয়ে গেছে - আপনি গল্পের মধ্যেই পাঠককে টুইস্ট বা গল্পের পরিনাম সম্পর্কে আগাম সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন। ফলে শেষের টুইস্টটা আর অপ্রত্যাশিত থাকেনি - যা থাকার দরকার ছিল। আমার মনে হয় গল্পের ভিতর সূত্র না দিয়ে, কিম্বা আরো ভাল হয় - বিভ্রান্তিকর সূত্র দিয়ে, তারপর যদি শেষে একদম আনেক্সপেক্টেড পরিণতি বা টুইস্ট দেয়া যায় তাহলে সবচেয়ে ভাল হয়।

এই গল্পটা পড়তে গিয়ে আমার আরেকটা প্রিয় সাই-ফাই গল্প জ্যাক ডগলাসের "টেস্ট রকেট"-এর কথা মনে পড়ে গেল। আপনার গল্পটার সাথে কোথায় যেন একটা মিল আছে এই গল্পের। জ্যাক ডগলাসের গল্পের শেষের টুইস্টটা আমার খুব প্রিয় - যদিও মূল গল্পটা আপনারটার মত এত সরস ভঙ্গিতে লেখা নয়।

****************************************

হিমু এর ছবি

টেস্ট রকেট গল্পটা দারুণ লাগলো! ধন্যবাদ।

সুমন তুরহান এর ছবি

কসমোলজি নিয়ে যে কোনো কিছু ভালো লাগে। গল্পটিও ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা গল্পটি ভাবনার খোরাক যুগিয়েছে। মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে আরো লিখুন না হিমু'দা, আপনার হাতে সাই-ফাই চমৎকার আসছে!

-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ম্যালাদিন পরে সচলে পড়তে বসে সবকিছু দেখি মাথার উপরে দিয়া যায়... কাহিনী কিছু বুঝি না ক্যান?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

খুব ভালো লেগেছে, সমাপ্তি অনুমান করা গেলেও। ধন্যবাদ সুন্দর গল্পটির জন্য।

মাশ্রুম মাশ্রুম এর ছবি

গল্পটিকে সাইফাই না বলে, ফ্যান্টাসি যুক্ত রম্য বলা যেতে পারে।ii ডেড স্পট রাতের আকাশের পারদের মত দেখাবে এবং এর চাঁদ কে প্রদক্ষিন করার ব্যাপারএ কিছু সমস্য আছে। ধরেনিচ্ছি ডার্ক ম্যাটার নয়, আন্টিম্যাটার দ্বারা ডেড স্পট নামক ফ্যান্তাসি বিন্দুটি বিদ্যমান, সেক্ষেত্রে আন্টিম্যাটার এর ম্যটার কে প্রদক্ষিন করা ইম্পসিবল।ছেলেমানুষি চিন্তাভাবনা! আন্টিম্যটার আর ম্যটার এর গ্রাভিটেশনাল পুল এক না কখনোই, বিপরীত। তবে রম্য ফ্যান্টাসি হিশাবে ভালো হইছে। স্পর্শের ব্যখ্যা যুক্তি যুক্ত ও সঠিক। রম্য ফেন্টাসি আরও চলুক, , ,

হিমু এর ছবি

ডেড স্পট রাতের আকাশে পারদের মতো দেখাবে বলছেন, কিন্তু কেন?

আপনি যদি "ধরে নেন", ডার্ক স্পট জিনিসটা অ্যান্টিম্যাটার দিয়ে তৈরি, তারপর যদি বলেন অ্যান্টিম্যাটার ম্যাটারকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করতে পারে না, সেটা ছেলেমানুষি চিন্তা, তাহলে কি ধরে নেবো, আপনার ধরে নেয়ার মধ্যেই এই ছেলেমানুষি নিহিত? গল্পের কোথাও তো অ্যান্টিম্যাটার শব্দটাও নেই।

ডার্ক স্পট জিনিসটা একেবারেই মনকলা, জিনিসটা নিয়ে ব্রেইনস্টর্মিং সবাই উপভোগ করছিলাম, আপনার মন্তব্যের মধ্যে সেই উপভোগের মেজাজটা পেলাম না।

মাশ্রুম মাশ্রুম এর ছবি

ভাই, কেন ওয়ার্ম হোল পারদ এর মত দেখাবে সেটা স্পর্শের ডায়াগ্রাম একে দেখানো ব্যখ্যাটি থেকেহ আবার ও ঘুরে আসুন। খুব সহজেই বোঝানো হয়েছে ।
হা আপনি আন্টি ম্যাটার উল্লখ করেননি কিন্তু ফেদেবোসলেন চাদকে প্রদক্ষিনরত ওয়ার্মহোল এর কাহিনী।

"stable versions of such wormholes have been suggested as dark matter candidates.[8][9] It has also been proposed that if a tiny wormhole held open by a negative-mass cosmic string had appeared around the time of the Big Bang, it could have been inflated to macroscopic size by cosmic inflation."

আপনার ডেড স্পট যে ওয়ার্মহোলের নামান্তর মাত্র তা স্বীকারকরে নিলে বুঝতে পারবেন, কেনো ওয়ার্মহোল এর পক্ষে চাঁদ কিংবা অন্য কোন বস্তূ কে প্রদক্ষিন করা অসম্ভব । আর কেনোই বা উহা দেখিতে প্রতিফোলিত পারদ বিন্দুর মত দেখিতে হইবে। তবে ওয়ার্মহোল বা আপনার ডেড স্পট যে বস্তুকে ব চাদকে প্রদক্ষিন করিতে পারিবে এই ধারনারই বা সুত্র কি?
আমি আপনার ব্রেইনস্ত্ররমিং এর পথের বাধা না। ভালো থাকুন।
আর আরো রম্য চাই কিন্তু!

হিমু এর ছবি

আপনি তো দুইদিন পিছিয়ে আছেন দেখি। স্পর্শের ডায়াগ্রামের নিচের মন্তব্যগুলোতে আপনার চোখ দুইটা কি যায় না?

আপনার সমস্যাটা আমি ঠিক ধরতে পারছি না। অবশ্যই আমি কাহিনী ফেঁদে বসেছি। এটা যদি কোনো সায়েন্টিফিক পেপার হতো, তাহলে আপনার টোনটা জাস্টিফায়েড মনে করতাম। আপনি এরপর কী চাইবেন, ম্বাবাটুর সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার? দরবেশের ভোটার আইডি? ফেঁদে বসা কাহিনীতে একটা ফেঁদে বসা প্রপঞ্চ চাঁদকে কেন, আপনার মাথাকে কেন্দ্র করেও ঘুরতে পারে।

আপনি "আমার" ডেড স্পটকে গায়ের জোরে ওয়ার্মহোলের নামান্তর বানিয়ে যদি এটাকে ডার্ক ম্যাটার আর অ্যান্টিম্যাটারের ফিজিক্সের মাপে ছাঁটতে চান, প্লিজ, গো অ্যাহেড, আমার কোনো আপত্তি নাই। আমি স্বীকার করে নিচ্ছি, এই ডেড স্পটের পদার্থবিজ্ঞানগত ভিত্তি প্রোফেসর শঙ্কুর অ্যানাইহিলিন পিস্তলের ভিত্তির চেয়ে একচুল বেশি নয়। আপনি যদি এইখানে চুলের সংখ্যা বাড়াতে কমাতে বলেন, তাও আমি রাজি আছি।

ডেড স্পট শুধু পারদ কেন, মাখন কিংবা আপনার খালাশাশুড়ির মুখের মতো দেখতে হলেও আমার কোনো আপত্তি নাই।

আমি শুধু বিস্মিত আপনার টোনে। ডেড স্পট এইখানে উছিলা মাত্র, আপনি এসেছেন পায়ে পা পেঁচিয়ে কিছু বাঁকা কথা বলতে। আমি এন্টারটেইন করতে পারবো না আপনাকে। ঝগড়া করতে চাইলে কয়েক মাস সময় দিন আমাকে, এখন একটু অসুস্থ। ডিসেম্বরের দিকে আসুন আবার, আপনার ঝগড়াকাম যাতে চরিতার্থ হয়, সেজন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

কল্যাণF এর ছবি

মাশ্রুম মাশ্রুম ভাই, আমরা পদার্থবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের চেষ্টা করতেছি না। ভুল যায়গায় আইসা পড়ছেন মিয়াভাই চোখ টিপি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।