কবিতা আর কোন এক রাতের গল্প

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/১০/২০১১ - ৯:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আমাদের দেশে জীবন শুরু হয় খুব ছোটবেলায়। হয়তো কেউ ছোটবেলায় নিজের পরিচয় হারায়, কেউ হারায় তার বাবা-মাকে,আবার কেউ জানে না তার জন্ম কোথায়। কেউ কেউ খুব ছোটবেলা থেকেই নিজের পরিচয়ের পরিবর্তন দেখে।কেউ ছোটবেলায় বিয়ের পিড়িতে বসে, কেউ তার আপনজনদের হাতে হারায় সম্ভ্রম। আবার কেউবা এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে রেহাই পেলেও আশেপাশের কলুষিত জীবন দেখে কষ্ট পায়।

এইটুকু লিখেই আর ভালো লাগল না। সাড়ে নয়টা বাজে, ছবি দেখতেও মন চাইছে না। ফ্যান চালানো, তারপরও শরীরে ফতুয়াটা ভিজে জবজবে হয়ে লেগে আছে। শিরিন কালকে দেখলে নিশ্চয়ই বলবে, ‘একদিনেই ফতুয়াটার কি হাল করলে? দাম দিয়ে তোমাকে কোন কিছু কিনে দেবার কোন মানেই হয় না!’

এই গরমে আমার সবচেয়ে যেটা ভালো লাগে সেটা হল এক কাপ চা। গরম চা । অবশ্য গরম চা খেলে আজকাল বুকে হালকা ব্যথা হচ্ছে, সেটা সিগারেটের জন্যও হতে পারে। সিগারেটের কথা মনে পড়তেই আমি মনোয়ার ভাইকে বললাম, ‘মনু ভাই, গোল্ড লীফ আছে?’

বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, আমার কথা শুনলেন বলে মনে হল না। আমি ওনার টেবিলে খোঁজাখুঁজি করলাম, পেলাম না। ইদানীং মনু ভাই (মনোয়ার ভাইকে আমরা মাঝে মাঝে মনু ভাই বলি) সিগারেট কম খাচ্ছেন। সুখে আছেন বোধহয়। আজকাল মুখে গুনগুণ করে গান গাইতে দেখি। সবচাইতে বড় কথা, মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলছেন। প্রেমে পড়ে গেল মনে হয়।

মনিটরের স্ক্রিনে আবার তাকাই। কি সব লিখছি খোদাই মালুম। মনে হচ্ছে রিপোর্ট লিখছি। কেটে দিব? নাহ, আরেকটু লিখে দেখি, কি দাঁড়ায়।

কারো কারো বাবা-মা এগুলো ছোঁয়াচ থেকে তাদের সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে তাদেরকে করে রাখেন একঘরে। তারা বড় হয় অন্য রাজ্যে, হয় পড়াশোনা করার যন্ত্রে পরিণত হয়, মানসিক হীনমন্যতায় ভোগে; অথবা নিশ্চুপ নীরবতার মাঝে থেকে থেকে অসামাজিক আচরণে পরিপূর্ণ জীবনযাপন করে।

একটা সময় ছিল যখন এগুলোর বালাই ছিল না। সময় আমাদের বদলে দিয়েছে। জীবন আরও দ্রুত ছুটে চলেছে। বাদুড়ঝোলার মতো আমরা বাসে ঝুলছি, আমাদের জীবন ঝুলে আছে নানারকম সমস্যার জালে, অসহায়ের মত অনিশ্চয়তায় দুলছি আমরা। আমরা কষ্ট পাচ্ছি জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে, জৈবিক চাহিদা পূরণের নামে নিজেদের সাথে করছি প্রতারণা। অন্যের মূল্যবোধের সমালোচনা করতে গিয়ে নিজেদের মূল্যবোধের যে অবনমন ঘটছে তা বোঝার ক্ষমতা ফেলেছি হারিয়ে।

মনোয়ার ভাই এতক্ষণে বারান্দা থেকে ভিতরে ঢুকলেন। হাতে সিগারেটের প্যাকেট।আমি কিছু না বলে হাতের থেকে প্যাকেটটা নিয়ে একটা সিগারেট নিলাম। উনি একটু চমকে গেলে বটে, কিছু বললেন না। উলটো তার মুখে হাসি দেখে আমি একটু অবাক হলাম। আমি তিন বছর ধরে তার রুমমেট, এই হাসির পূর্বে যে অস্তিত্ব ছিল না, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। এই হাসছেন,এই সুর ভাজছেন (তাও পত্রিকার শেয়ার বাজারের পাতা উল্টাতে উল্টাতে), বিছানার চাদর ঠিক করছেন...পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে ভূতের আছর করার মতো মনে হল।

‘মনু ভাই?’
পেপারটা পড়তে পড়তেই বললেন, ‘হুম?’
‘ভাল আছেন?’
‘হ্যাঁ, ভাল আছি । তুমি কেমন আছ শিবলি?’
‘আমি ভাল আছি ভাই। বেশ আছি। আপনার চাকুরী কেমন চলছে?’
‘ চাকরি? ফ্যান্টাস্টিক, খুব ভাল। এবারকারটা বেশ ভালই হল, বেতন আর অ্যালাউন্স মিলিয়ে ভালই পাচ্ছি। আর এদের যা নেটওয়ার্ক, তাতে মনে হয় এরা বেশ ভালই করছে। আমার অবশ্য এত চিন্তা নেই, কাজ করে ঘরে ঢুকতে পারলেই আমার শান্তি। সে দিক থেকে এদের এখানেই বোধহয় সবচে’ বেশি আরাম’।
‘ ও। তাহলে তো ভালই। এবার তাহলে আর মেসে থাকার কি দরকার, বিয়ে-টিয়ে করে ফেলেন...’

বিয়ের কথা বলাতে মনোয়ার ভাই মনে হয় খুশিই হলেন, লজ্জাও পেতে পারেন, আমি অতো ভাল মুখ দেখে বলতে পারি না কে কি ভাবছে। তবে খুশি যে হয়েছেন তার পরের কথায় বুঝলাম, ‘ বিয়ে? বিয়ে একটা করা দরকার, ঠিকই বলেছ। তবে এই জমানায় মনের মত মেয়ে পাওয়া যায় নারে ভাই। যাও পাওয়া যায়, তাও ধরা যায় না...’।
‘পেয়েছেন নাকি এমন কাউকে? মনোয়ার ভাই...!’
‘আহা, এমন কর কেন শিবলি? হলে বলব তোমাকে বুঝছ?’

হুম, পাওয়া গেছে। যা ভেবেছিলাম, তাই হয়েছে মনোয়ার ভাইয়ের। আমি ভাবলাম আরেকটু ঘাটাই ওনাকে, দেখি, মেয়েটা কে। তার আগেই দেখি উনি বাথরুমে ঢুকলেন, মনে হয় গোসল করবেন। আমি আর কি করার, আবার একটু লেখা শুরু করলাম।

প্রতিদিনের এসকল দুঃখময় জীবনবোধের কথা শুনতে শুনতে আমরা বিরক্ত। হব না কেন, এসকল ন্যায়বার্তা কোন কাজে দেয় না, কেবল আমাদের কষ্টকে বাড়ায়। এগুলোকে মনে হয় দুঃসময়ে দুঃস্বপ্ন দেখানোর মত অস্পর্ধা। আজকে কেবল ভয় বাড়ে একটা জিনিষ নিয়েই, ‘কাল বেঁচে থাকব তো?’

শুরু করেছিলাম জীবনের সূচনা দিয়ে। একটা গল্প বলি। আমাদের সাথে পড়াশোনা করত একটা ছেলে, সঙ্গত কারণেই নাম বলতে পারছি না। তার ফ্যামিলি নিয়ে গর্বের সীমা ছিল না। প্রায় প্রতিদিনই তার পাশে বসা মানে একগাদা গল্প শোনা; সুখের গল্প, প্রাপ্তির গল্প। কোনদিন শুনতাম তার বাবা তার জন্য গাড়ি কিনেছেন, ছেলের পাঁচ মিনিট হেটে স্কুলে আসাটা কষ্টের ভেবে। কোনদিন শুনতাম কোরবানির হাটে সবচেয়ে বড় গরু...গুলি তার বাবা কিনেছেন। এগুলো কোনটাই মিথ্যে নয়, সত্যবাক্য ছিল।

‘ধুৎ! শালার কারেন্টটাই চলে গেল। ইউপিএসটা আবার চিৎকার শুরু করে দিল। আমি লেখাটা একটু সেভ করে দিয়ে কম্পিউটার বন্ধ করে দিলাম। পৌনে দশটায় গেল, তার মানে ঠিক পৌনে এগারোটায় আসবে। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে বারান্দায় গেলাম’।

এত গরম পড়েছে, এক ফোটা বাতাস নেই। বারান্দায় দাড়িয়েও ঘামতে লাগলাম। সিগারেট আরেকটা ধরাব?

আশেপাশের বাসাগুলোয় আলো জ্বলছে। আইপিএসের আলো। চার বছর আগে যখন এদিকটায় দাঁড়াতাম, তখন নিকষ অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখা যেত না। কিন্তু কেন যেন ওটাই আমার কাছে বেশ লাগে । আমার চোখটা শান্তি পেত ।একটা ঘুম ঘুম ভাব আসত মনে। আশেপাশে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর ফাকে পাশের বাড়ির জানালাগুলোর দিকে তাকাতাম কৌতূহলী চোখে। হয়তো কোন ফাকে দেখা যত একমনে পড়তে থাকা কিশোরীকে, কিংবা সামনের বাসার বারান্দায় বসে থাকা দাদুটিকে। কোন কোনদিন সামনের এপার্টমেন্টের ছাদে এক তরুণ-তরুণী যুগলকে দেখেছি একসাথে বসে গল্প করতে। নিষিদ্ধ কৌতূহল জেগে উঠলেও দুঃখের কথা, কিছুই দেখি নি। আমার এক ছোট মামা বলতেন ‘সব সিনেমা টিকেট না কেটে দেখা যায় না’। এই ক্ষেত্রে মনে বিষয়টা সঠিক।

নাহ্ ফতুয়াটা খুলে ফেলা দরকার। গরম লাগছে। খালি গায়ে বারান্দায় দাঁড়ালে বাড়িওয়ালা কিছু বলবে? নাহ্, এই রাতের বেলা আমাকে দেখার প্রশ্ন আসে না। এই ব্যাটা দূরবীন না লাগালে খালি চোখে ছয় তলার ছাদে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবে বলে মনে হয় না।

সেরেছে। এতগুলো মিসড কল! শিরিনকে ফোন দিলাম,‘হ্যালো?’
‘হুম, বল’।
‘ফোন দিসিলা নাকি?’
‘তোমার ফোনে স্ক্রিন নাই নাকি?

পালটা প্রশ্ন। মাথা চুলকে বললাম, ‘কি জন্য ফোন করলা?’
‘তেমন কিছু না। আজকে আমাকে দেখে গেছে, আংটি পরিয়ে দিয়ে গেল। বিয়ের তারিখ ঠিক হয়নি’।
কিছু বললাম না। একপাশ থেকে হালকা বাতাস বওয়া শুরু করেছে। আমি চুপচাপ ওই পাশে গিয়ে বসলাম।
‘কিছু বললা না যে?’
আমি খুব ভাবছি এমন একটা ভাব করলাম। ‘হ্যাঁ?’
‘তুমি কি এই জগতে আছ?’
‘হুম, আছি। তুমি আংটি পরিয়ে গেল, কিছু বললা না?’
‘কাকে বলব? কি বলব? তোমার কথা বলব? বলব যে আমি আমার ক্লাসমেট শিবলী হালদারকে পছন্দ করি। তার সাথে আমার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, তাকে ছাড়া ঘরকন্না করা আমার পক্ষে সম্ভব না’।

শিরিন রেগে গেছে। আমি সান্ত্বনা দেই, ‘আহা, রেগে যাচ্ছ কেন? চিন্তা করে লাভ নেই, যা হবার হয়ে গেছে…’
‘হ্যাঁ, হয়েই তো গেল। কি আর করার আছে? আমি এখন প্রেম করলাম তোমার সাথে, আর ঘর করবো কোন এক টাকলুর সাথে!'

টাকলু? হেসে দিলাম। 'ওই ব্যাটার মাথায় টাক আছে?'।
‘আছে নাতো কি? বিশাল মাথা, আর সেই মাথায় মিরপুর স্টেডিয়াম’।
‘তাহলে আর চিন্তা কি…? তুমি তোমার বাবাকে বলে দাও এই টাকলুকে তুমি বিয়ে করতে পারবা না…’।
কারেন্ট চলে এলো। আমি রুমে চলে এলাম। কিছু খাওয়া দরকার। ‘শিরিন খেয়ে নিও’।
'খুব ভাল। তুমি আরাম করে জিরোতে থাক। আর ভাবতে থাক নতুন কাউকে পটানো যায় কিনা’।
শিরিন ফোন রেখে দিল। আমি আবার কম্পিউটার চালু করলাম।

আমার শুনতে ভালো লাগত। কারণ আমার পরিবারের পক্ষে এগুলোর কোনটাই সম্ভব ছিল না। আমি শুনতাম, আর শুনে শুনে স্বপ্ন দেখতাম, বাবা কোনদিন হয়তো কোন শান্তি আমাদের একটা গাড়ি কিনবেন, আমি হয়তো বাবার সাথে গিয়ে হাটের সবচেয়ে বড় গরুটা কিনবো। আমাদের আর বাসা ভাড়া করে থাকতে হবে না, এসির ঠাণ্ডা বাতাস খাওয়ার জন্য মার্কেটে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে হবে না।

ছেলেটা বড় হল, আমিও হলাম। স্বপ্ন দেখতাম বলেই কিনা জানি না, আমার স্বপ্নগুলো একটার পর একটা ভাঙতে লাগল। দুনিয়ার নিয়ম ভাঙ্গার উপায় হয়তো মা শেখাননি। তাই অনিয়মের ভিড়ে আজ পা ফেলার জায়গা পাচ্ছি না। কোথাও কোন কমতি নেই, সবার বাড়তি চাই। সবকিছুর দাম বাড়ন্ত, খালি আমার দামটাই নেই। মধ্যবিত্তের কষ্ট আরও বেশি। সারা মাস শেষে পকেটের দিকে তাকালে যে নিঃশ্বাস বের হয়, তার তোড়ে ভেসে যায় সব আনন্দ। তার উপর কমপ্লান খাওয়া অর্থনীতি আর ঘুষময় চাকরির বাজারে আমার মতো ‘সুপার মিডল ক্লাস’ ছেলেদের আবেগ ছাড়া আর কোন সম্বলই থাকে না।

আর ওই ছেলেটা যথারীতি দেশের সবচেয়ে নন্দিত বিদ্যাপীঠে পড়ছে আর ভাল ফলাফলও করছে বেশ। চাকুরী না পাবার মত ছেলে না, কাজেই না পাবার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। স্বপ্ন দেখার দরকার ছিল না, স্বপ্ন তার হাতের মুঠোয় ছিল। তাই আজ সুপ্রতিষ্ঠিত হবার চাবিকাঠি তার গলায় ঝোলানো; চাইলেই খুলতে পারবে সাফল্যের দরজা।

দরজায় এত ধাক্কাচ্ছে কে? ‘শিমুল, দেখত, দরজায় কে…’।

শিমুলের কোন খবর নেই। নিশ্চয়ই মাল খেয়ে শালা টাল হয়ে আছে। শুক্রবার, কাজেই সম্ভাবনাও বেশি। অগত্যা কি আর করার, আমিই খুললাম।

‘স্লামালিকুম, শিমুল আছে?’

ছোটখাটো একটা মেয়ে, শ্যামলা রঙের হবে। কাঁধে একটা ভ্যানিটি ব্যাগ ঝোলানো। চোখে অসহায় একটা ভাব। আমার বোনের ডিভোর্স হবার পর ঠিক এরকম একটা ভাব ছিল। আপাকে দেখে মনে হত আপা অনেকক্ষণ ধরে সতেরোর নামতা মনে করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না। আশেপাশের সবাই তার এই অবস্থা দেখে আরও খেপে যেত। সবচেয়ে বিরক্ত হতেন মা। মা বুবুকে দেখলেই কেন যেন ঝামেলা মনে করতেন।যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন দেখলেই বলতেন , ‘ কি জন্যে এসেছিস দুনিয়ায়? মরতে? দূর হ হারামজাদি!’

মেয়েটাকে দেখে আমার বুবুর কথা মনে পড়ে গেল।

‘কিছু বলছেন?’
আমি বললাম, ‘কিছু না। আপনি দাঁড়ান, আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি’।

শিমুলের রুমে নীল ডিমলাইটটা জ্বলছে। আলো জ্বালিয়ে দিলাম। শিমুল এই সন্ধ্যাবেলায় অঘোরে ঘুমাচ্ছে। এত ঘুম কোত্থেকে যে আসে জানি না। ভার্সিটি যদি গিয়ে দু’চারটা ক্লাস করত তাহলেও হত। সারাদিন এদিক ওদিক আড্ডা মেরে সোজা বাসায় এসে ঘুমায়। আমি শিমুলকে ডেকে তুললাম। ‘ওই হারামি, ঘুম থেকে ওঠ! আর কত ঘুমাবি?’

শিমুল বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে আবার ঘুমোতে থাকে। আমি এবার ধাক্কা দিয়ে ওকে মাটিতে ফেলে দেই।
মাটিতে পড়েই শিমুল হুড়মুড় করে দাঁড়িয়ে পড়ে। লাল লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এটা কি হইল?’
‘তোর বাল হইল। এখন হাত মুখ ধুয়ে যা, দেখ তোর কাছে কে যেন এসেছে’।
‘এসেছে মানে?’ শিমুলকে একটু সতর্ক মনে হয়, ‘কে এসেছে? চিনিস না?’
‘না। একটা মেয়ে এসেছে, তোদের সাথে পড়তে পারে। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে, দেখা করে আয়’।
শিমুল হাতমুখ ধুতে গেল। আমি আবার কম্পিউটারের সামনে বসলাম।

আর আমি ভাঙ্গা বাসে চড়ে বাবার টাকার শ্রাদ্ধ করে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। কষ্ট আরও বাড়তে লাগলো দিনকে দিন। আজ আমি লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি বটে, কিন্তু আমাকে আমার বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে কয়েকটা টিউশনি করতে হচ্ছে, ঠকানোর ব্যবসাতে নাম লেখতে হচ্ছে, কখনো কখনও নিজেও ঠকে যাচ্ছি। আবার লড়ছি। শেয়ারের জালে আমি আটকাইনি ঠিকই, কিন্তু হয়তো কোন একদিন আটকে যাব। এই মাইক্রোওয়েভের মত জ্বলতে থাকা ঢাকায় আমিও জ্বলছি আর আট-দশটা মানুষের মত। আর এই ওভেনের পাওয়ার সাপ্লাই দিচ্ছে ওই ছেলেটার বাবার মতো শিল্পপতিদের দুষিত অর্থ।
হয়তো আর দু-তিন বছর পরে আমার শিক্ষাজীবনের দি এন্ড হবে। আমি এ শহরের সব যুবাদের মতো চাকুরীর খোজে পাগলপ্রায় হয়ে যাব। চাকুরী না পাওয়ার সম্ভাবনা যে প্রবল, তা এশহরের শিক্ষিত জন মাত্রই জানেন। তাই অনেকের মতই দু-চার বছর চেষ্টা করার পর বিদেশের পথে পাড়ি দেব। এ শহরের সব কষ্ট হয়তো রয়ে যাবে, কিন্তু জীবনের গতি থেমে থাকবে না। জীবন চলতে থাকবে, আমিও চলতে থাকব।

‘কিন্তু এখন এটা কি করে সম্ভব? আমি এই মুহূর্তে কোনভাবেই তোমাকে রাখতে পারবো না, অসম্ভব!’

শিমুলের গলা চড়ে গেছে। প্রেম-ঘটিত ব্যাপারস্যাপার তাহলে। শুভ্র এরকম একটা কাণ্ড ঘটিয়েই বাসা ছেড়ে দিয়েছিল। অনেকবার পুলিশ এসেছিল এ বাসায়। আমি এগুলো এড়িয়ে চলি। বাড়িওয়ালা ভেজাল শুনলে দু’ঘণ্টার নোটিশে মাল-সামান সহ বের করে দিবে।

খালি শিমুলের গলাই শোনা যাচ্ছে, মেয়েটা কিছু বলছে না। মনোয়ার ভাই ডাইনিং এ বসে ভাত খাচ্ছিলেন, গণ্ডগোল সামলাতে উঠে এলেন।আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন মুখের দিকে তাকিয়ে বলার চেষ্টা করলেন, বুঝলাম না। আমি খালি বললাম, ‘শার্ট পরে যান’। উনি শার্টের বোতাম আটকাতে আটকাতে চলে গেলেন।

আমি ভাত খেতে ডাইনিং এ ঢুকলাম। বুয়া আজকে আসে নাই, কাজেই আজকে নিচের হোটেল থেকে বিরিয়ানি আনা হয়েছে মনে হয়। কিন্তু ভাতের বোলের ঢাকনা উঠিয়ে একটু অবাক হলাম। খিচুড়ি, সাথে ডিম সেদ্ধ। কে রান্না করলো ভাবতে ভাবতে খেয়ে উঠলাম। এখন সম্ভবত সামনের রুমে যাওয়া নিরাপদ।

শিমুলের রুমে মেয়েটা একা বসে আছে। চোখ ফোলা। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াল। আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম, ‘উঠলেন কেন,বসুন, বসুন’। মেয়েটা শিমুলের বিছানার একগাদা কাপড় সরিয়ে বসল।

শিমুলরা ঘরে নেই। আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘শিমুল কোথায় গেছে?’
‘জানিনা’।
‘ও’। আমি আর কিছু বললাম না।

অস্বস্তিকর মুহূর্ত। কি বলব বুঝতে পারছি না। এই রুমে না আসলেও হত। এখন চলে যাব? না থাক, মেয়েটা একা থাকবে তাহলে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,’আপনি কোথায় পড়ছেন?’
‘আমি পড়াশোনা করি না’।
কথাটা বুঝতে খানিক সময় লাগলো। ‘তাহলে?’
‘তাহলে মানে?’
‘মানে শিমুলের সাথে আপনার পরিচয়…?’
‘আমি শিমুলের চাচাত বোন’।

শিমুলের ফ্যামিলি তো এখানে থাকে না। ‘আপনি গ্রাম থেকে আসছেন?’
মেয়েটা মাথা নিচু করে মাথা নাড়ল।
এই মেয়েটা অনেকদূর থেকে এসেছে, তারমানে…’আপনি কিছু খেয়েছেন?’
কোন জবাব নেই। আমি চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললাম, ‘আমার সাথে আসুন’।

ডাইনিং রুমে যখন প্লেটে খিচুড়ি খেতে দিলাম, তখন মেয়েটা গোগ্রাসে গিলছিল। আমি ওখানে থাকলাম না। মানুষের খাওয়া দেখতে আমার ভাল লাগে না।

আমার রুমে ঢুকতেই দেখি শিমুল মনোয়ার ভাইকে নিয়ে কি যেন আলাপে মগ্ন। আমাকে দেখে শিমুল বলল, ‘বলত এখন আমি কি করি?’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’আমি কি বলব? আমি তো কিছুই জানি না। কোত্থেকে মেয়েটা এলো, আর কি জন্যে তোর কাছে এলো,কিছুই তো জানি না।’
এরপর যা কাহিনী শোনাল, তা আমি শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।

মেয়েটা গ্রামের কলেজে পড়ত। ওখানকার স্থানীয় কোন এক বখাটের সাথে ওর সম্পর্ক হয়। মেয়েটার সাথে ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। কিছুদিন পর ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ছেলেটা। ও রাজি হয় না। ভয় দেখায়, তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে বলে। মেয়েটা তাও বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়না । তখন ছেলেটা ওর রাজনৈতিক প্রভাব খাটায়, ওর বাড়িঘর ভাংচুর করে। বাধ্য হয়ে ওর বাবা ছেলেটার সাথে ওকে বিয়ে দেয়।

বিয়ের পর ছেলেটা মেয়েটার উপর আবারও নির্যাতন শুরু করে। যৌতুকের দাবীতে ওর উপর অত্যাচার করে। সহ্য করতে না পেরে ও শ্বশুড় বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে। ওর বাবা এসব নির্যাতনের কথা শুনে আর সহ্য করতে পারে না, পুলিশের কাছে মামলা করতে যান। পুলিশ মামলা নেয় না। মেয়েটার বাবা থানা থেকে বাড়িতে যাবার আগেই খবর চাউর হয়। ছেলেটা সাথে সাথে তার দলবল নিয়ে মেয়েটার বাবার উপর চড়াও হয়। রাস্তার উপর মেরে রেখে চলে যায় মেয়েটার বাবাকে।

ও বুঝতে পারে তাদের পরিবারের বিপদের কথা। ওর মা আর ছোটভাইকে নিয়ে ও সেদিনই পালিয়ে আসে ঢাকায়। ওর চাচার বাসায় ওদেরকে নিয়ে যায়। চাচা ওর মা আর ভাইকে রাখতে রাজি হলেও মেয়েটিকে রাখতে চায় না। অসহায় মেয়েটা শিমুলের কাছে আসে, একটা আশ্রয়ের জন্য।
শিমুল বলা শেষ করে চুপচাপ বসে থাকল। আমরাও কি বলব ঠিক বুঝতে পারলাম না। এমন ভয়ংকর অবস্থা আমি জীবনে কখনও কল্পনাও করতে পারি না। এরকম কাহিনী কেবল পত্রিকায় পড়েছি। বাস্তবেও তাহলে এমন হয়?

এগারোটা বাজতে চলল। পাশের বাসার আলো নিভে গেছে। গুমোট গরম ভাবটা এখনও কাটেনি, বৃষ্টি হবে মনে হয়। আমি বারান্দায় এসে একটা সিগারেট ধরালাম। মনোয়ার ভাই আমার পাশে দাঁড়ালেন। ‘কি করা যায়, বলত?’
‘একটা সত্যি কথা বলেন তো মনু ভাই? আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি কখনো এইরকম বিপদে পড়েছি?’
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি, ‘সেটা তো আমিও বুঝি, কিন্তু এখন যেই অবস্থা, তাতে কাকে যে সমাধানের কথা জিজ্ঞেস করব সেটাই ভেবে কূল পাচ্ছি না। এর মধ্যে আরেক হয়েছে বিপদ’।

‘কি হয়েছে?’
‘শিমুল ওকে নিয়ে উপরে আসার সময় বাড়িওয়ালা ওদের দেখেছে। কিছুক্ষণ আগে যখন বাইরে গেলাম, তখন বাড়িওয়ালা আমাদের কাছে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন।অবস্থা বেশি ভালো বলে মনে হয় না’।
‘ও।’

ঘরে ঢুকে কম্পিউটারের দিকে তাকালাম। অনেক কষ্টের কথা লেখার ইচ্ছে হয়েছিল। এখন আর কিছুই লিখব না। সব কেটে দিলাম। খালি একটা কথাই মনে আসছে, আমরা সুখে আছি, শান্তিতে আছি।

শিমুল এরই মধ্যে কাঁদো কাঁদো মুখে ঘরে ঢুকেছে। মনোয়ার ভাইকে যা বলল তাতে মনে হচ্ছে আমরা আর এই বাসায় থাকতে পারব না। সকালবেলাই বাসা ছেড়ে দিতে হবে।

আমি নাখালপাড়ায় ছোটখালার বাসায় উঠবো নাহয়। মনোয়ার ভাই কিছুদিনের জন্য বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসবে। শিমুল হয়তো হলে উঠবে। আমাদের থাকা নিয়ে তেমন কোন সমস্যা হবে না।
শিমুলের কাছে আসা মেয়েটার নাম জানা হল না। কি নাম ছিল মেয়েটার?

২...
সকালবেলা। সব গোছগাছ করা শেষ। শিমুল আমাদের জন্য দুটা সিএনজি ডাকতে গেল। মনোয়ার ভাইকে কতক্ষণ ধরে ডাকছি, কোন খবর নাই। কই গেল আল্লাহ জানে।

রাতে আসা মেয়েটা আমাদের ঘরে ঢুকল। চোখ লাল, রাতে অনেক কেঁদেছে নিশ্চয়ই। আমাকে দেখে বলল,
‘মনোয়ার ভাইকে খুঁজছেন?’
‘হ্যাঁ, কোথায় গেছে বলতে পারেন?’
‘উনি বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলতে গেছেন, যদি উনি মাফ করেন, তাহলে হয়ত আপনারা আরও কিছুদিন থাকতে পারবেন’। কিছুক্ষণ থেমে আবার বলল, ‘আমার মনে হয়না মাফ হবে। এদেশের বাড়িওয়ালারা একটু খবিশ হয়।’
আমি হেসে দিলাম। 'আপনি ভাড়াবাড়িতে থেকেছেন বুঝি?’
‘না, তবে সবার কাছে একইরকম শুনি তো, তাই’।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘আপনাদের অনেক কষ্ট হল, তাইনা?’

ম্যাট্রেসটা উঠিয়ে দেয়ালের সাথে লাগাতে লাগাতে বললাম, ‘কষ্ট একটু হল তো বটেই। তবে বাড়িওয়ালা এমনিতেই আমাদের বের করে দিত’।
‘কেন?’
বলব? খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, ‘বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল’।
‘ও’, মেয়েটা একটু মুচকি হাসল। মেয়েটা হাসলে ভারী সুন্দর দেখায় তো !
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘হাসলেন কেন...?’
‘মেয়েরা এমনিতেই হাসে সেটা আপনাকে কেউ বলে নাই?’
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম। কেন ফেললাম কে জানে।
‘আমি কি বললাম শোনেন নি?’
‘হুম, শুনেছি।’
‘জবাব কই?’
‘সব প্রশ্নের জবাব আছে?’

মেয়েটা কথাটা শুনে একটু চুপ হয়ে গেল। একটু থেমে বলল, ‘আমাকে দেখে এ কথা বললেন?’
‘হতে পারে’

মেয়েটা হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে গেল। ‘...আমি যাই, শিমুল ভাই এলো কিনা দেখে আসি’। যাবার সময় চোখ মুছতে মুছতে গেল কি? জানি না।

আটটার দিকে আমরা বের হয়ে গেলাম। মনোয়ার ভাই বাসের টিকিট কেটে এনেছেন, যথারীতি বাড়ি চলে যাবেন। শিমুল একটু বিপদেই পড়েছে, মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাবে এখনো বুঝতে পারছে না। মনে হয় মেয়েটার চাচার বাসায় যাবে। নয়তো সোজা ওদের দেশের বাড়ি।

গেট থেকে বের হবার সময় তিনতলার দিকে একবার তাকালাম। শিরিন দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে কি হল জানি না, বারান্দা থেকে চলে গেল। আমি আর তাকালাম না, সিএনজিতে মাল রাখতে লাগলাম।

সিএনজিতে মালপত্র রেখে উঠতে যাব এমন সময় মনু ভাই পেছন থেকে একবার ডাকলেন, ‘শিবলি?’
কি হল আবার? আমি পেছন ফিরে বললাম, ‘ কি মনু ভাই?’

উনি আমাকে একটু দূরে নিয়ে এলেন। নিচু গলায় বললেন ‘...শিবলি, মেয়েটার জন্য আমার মায়া হচ্ছে’।
এই কথা? ‘ হ্যাঁ, আমারও তো হচ্ছে ভাই। কিন্তু কি আর করার আছে...আমরা কি করতে পারি বলেন...’

হাত কচলাতে কচলাতে উনি পরে যা বললেন, তা শুনে আমি হাতের ব্যাগটা রেখে দিলাম। ‘ আপনি কি বলছেন, বুঝতে পারতেছেন তো?’
উনি একটু রেগে গেলেন। ‘ওই মিয়া তোমার কি আমাকে মাতাল মনে হইতেছে? যা বলছি বুইঝাই বলতেছি। শিমুল কি বলে শুন। ও রাজি থাকলে ব্যবস্থা করে ফেলি।’
আমি বলব শিমুলকে এমন কথা? জীবনেও না। ‘না ভাই, আমি পারব না। আমারে শিমুল কেটে ফেলবে’।
মনু ভাই রেগে গেলেন, ‘ধুর মিয়া, তোমারে দিয়ে কিচ্ছু হবে না’।

এরপর আরও কিছুক্ষণ আমি বুঝালাম। কাজটা ভাল হলেও বিপদ আছে বললাম। উনি বুঝলেন না, নিজের কথায় অটল থাকলেন। আর কি করা। শিমুলকে বলে ফেললাম।
শিমুল কি বুঝল জানি না, খালি আস্তে করে বলল, ‘আমার মাথায় কিছু ঢুকতাসেনা। আর দেরী হইলে আমি এখন হলে গিয়া বসুম, আমারে কেউ নড়াইতে পারবে না। তুই ওরে আগে জিজ্ঞেস কর। ’
আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম। আমাদের দেরী দেখে ব্যাগের উপর বসে পেপার পড়ছে। চোখে সকালের অদ্ভুত সুন্দর আলোর ছটা। আমাকে একমনে চেয়ে থাকতে দেখে হাসল। সেই মলিন হাসি। মলিন তবুও সুন্দর।

৩....
ঠিক বেলা সাড়ে বারোটায় মনু ভাই বিয়ে করলেন। আমি,শিমুল আর মনোয়ার ভাইয়ের দুজন বন্ধু উপস্থিত ছিল। বিয়ের পর দুজনকে মনু ভাইয়ের বড় ভাইয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিলাম।

মেয়েটার নাম কবিতা। বিয়ের সময় জানা গিয়েছিল। আমি যে আগে জানতাম না সেটা বলতে কবিতা হেসেই খুন।‘ নামটা জেনে কোন লাভ হল? এখন তো আমাকে ভাবিই বলতে হবে!’ বলেই আবার সেই হাসি। মিষ্টি হাসি। সে হাসিতে বুবুর সেই কষ্টটা নেই। কেন জানি জিজ্ঞেস করেছিলাম কবিতাকে, ‘সতেরোর নামতা পারেন?’
‘না। কেন?’
আমি হাসলাম ‘এমনি। শিখে নিবেন কিন্তু।’

অবাক হলেও কবিতা আর কিছু জিজ্ঞেস করল না। আস্তে করে বলল ‘আচ্ছা’।

কাজী অফিস থেকে বের হয়ে দু’ঘণ্টা ধরে হাঁটছি। কড়া রোদ, চোখ মেলে রাখার সাধ্য নেই। ঘামে আজ গোসল হয়ে যাচ্ছি, তবুও হেটে যাচ্ছি। আজ একটা নতুন গল্প লিখব। জীবনের নতুন গল্প ।তাতে এই পুড়ে যাওয়া দেহের গল্প থাকবে। আরও একজনের গল্পও থাকবে। আর থাকবে তার হাসির গল্প। মোহনীয় লাবন্যমাখা হাসি।

___________________________

মেঘদুত


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

খুব ভালো লাগলো গল্পটা।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তানিম এহসান এর ছবি

সুতোর ভেতর সুতো, আরো সুতো ...... অশেষ মুগ্ধতা রেখে গেলাম আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- .....

পাঠক এর ছবি

খুব সুন্দর!!!

পাঠক এর ছবি

ইয়েস, ভালো লেখা।

-মেফিস্টো

তিথীডোর এর ছবি

চলুক
বেশ ভাল্লাগলো। হাসি
মেঘদূত, লেখালেখি চলুক নিয়মিত।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

meghdut,মেঘদূত এর ছবি

নামটা ভুলে দেয়া, ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী... হাসি

পাঠক এর ছবি

ভীষন ভালো লাগলো..........যেন সময়গুলো থেকে আপনার সাথে আমিও ঘুরে এলাম.....ভালো থাকুন........

নীরা

Fruhling এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো। গতকাল বিকেলেই (স্হানীয় সময়) পড়া শুরু করেছিলাম। ট্রেন মিছ হবে ভেবে অর্ধেক পড়ে দৌড় দিয়েছিলাম।
গল্পের শেষের জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা হাসি

 তাপস শর্মা (অফ লাইন)  এর ছবি

লেখাটা মিস অয়া গেছল ভাই মেঘদূত, পইড়া ফালাইলাম এখন চলুক

লেখালেখি চলুক। খুব ভাল লেগেছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা হাসি
----------------------------------------------------------------------
চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির

meghdut,মেঘদূত এর ছবি

হাসি... পড়ে ফেলার জন্য... আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।