পাষাণপুরী

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৩/০২/২০১৩ - ১২:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গভীর রাতে গ্রামের বাড়ির কাঠের জানলায় ছন্দ করে দুবার টোকা দেবার খটখট শব্দ। রিনা ঘুমনোর জন্য কেবলই শুয়েছিল। কিন্তু, এই শব্দ তার কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সে বিচলিত হয়ে তারাতারি উঠে পড়ল। জানালা খুলল। নিঝুম অন্ধকারে চারিদিকে ঝি ঝি পোকার শব্দ।

রিনা, কেমন আছো ?
ভাল। এতরাতে তুমি ? ভিতরে আসো।
না। আসতে পারব না। তোমার কথা মনে পড়ল। তাই তোমাকে দেখতে আসলাম। বাবু কি করে ?
বাবু এতরাতে কি করবে ? অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। একবার দেখে যাও। ও তোমাকে অনেক দিন কাছে পায় না।
আজ না। পড়ে কোন একদিন আসব। কিছু কাজ আছে। আমি যাই। আবার দেখা হবে।
তুমি কোথায় আছ ? আমার খুব চিন্তা হয়। রাতে ঘুমাতে পারি না।
আমি বাড়ির আশেপাশেই আছি। আমার দুজন সহচরও সঙ্গে আছে। তুমি চিন্তা করবে না। আল্লাহ আমাদের সাথেই আছেন। আমার কিছু হবে না।
আশেপাশে ? আশেপাশে কোথায় ?
বাড়ির পেছনের বাঁশবাগানের শেষ প্রান্তে একটা নতুন কবরে।
তুমি কবরে থাকছ ? এসব কি বল ? ওটা তো নাদের আলীর কবর। একমাস হল মারা গেছে।
তার ছিল। কিন্তু এখন আর সে কবরে নেই। তাকে পাশের নদীতে একরাতে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম। এখন ওর কবরে আমরা থাকে। রাতে দুজন ভেতরে থাকলে, একজন বাইরে পাহারায় থাকি। সমস্যা হয় না। ভালই ঘুম হয়। একটু গরম, এই আর কি ?
হায় আল্লাহ!! এমন পাপের কাজ তুমি কেন করলে? মুর্দা মানুষকে কবর থেকে বের করে দিলে।
ভয় নেই। পাপ হবে না। নাদের আলী বেঁচে থাকলে, আমাদের সাথেই থাকত। বেঁচে থেকে সে দেশের জন্য কিছু করতে পারি নি। মরনের পরে পারলো। এমন ভাগ্য কয় জনের হয়। সে মরনের পড়ে শহীদ হল।
তুমি সাবধানে থাকবে। আর খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করবে।
ঠিক আছে তুমি ঘুমাও। আমি যাই।
যায় বলতে নেই। বল আসি।
আচ্ছা। আসি।
আবার কবে আসবে ?
জানি না। তুমি বাবুকে নিয়ে সাবধানে থেকো। আর আমাকে কেউ খুঁজতে আসলে, বলবে, কাজের জন্য ঢাকা গিয়েছিল, আর ফিরে আসে নি।
মনে থাকবে। বলা লাগবে না।
আফসার চলে গেল। রিনা জানলা বন্ধ করে, কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। তারপর হারিকেনের আলো কমিয়ে বাবুর পাশে শুয়ে পড়ল। চেষ্টা করল, ঘুমানোর। কিন্তু, কিছুতেই তার ঘুম আসছে না। সালটা যে ১৯৭১। দেশের কোন মানুষেরই এখন ঘুম হয় না। ঘুমের ঔষধেও তেমন একটা কাজ হয় না। ভয় ঘুম কেড়ে নেয়।


পাশের গ্রামে অস্থায়ী হানাদার ক্যাম্প। গ্রামটির নাম কাশীপুর। গ্রামটি হিন্দু প্রধান। গ্রামের স্কুল বন্ধ করে, তা ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে। সেই রাতে মেজর জাফর মদ্যপানে ব্যস্ত। দুপেক পেটে না পড়লে, তার মাথা খোলে না। তার মাথা খোলাটা এখন জরুরী।
এই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর উৎপাত ইদানীং রহস্যজনক ভাবে বেড়েছে। মুক্তিবাহিনীরা আশেপাশের এলাকায় ঘাটি করে সংগঠিত হচ্ছে বলে তথ্য আছে। মেজর জাফরের কাধে এখন গুরুদায়িত্ব। যে করেই হোক, পাকিস্তান বিরোধী তৎপরতা কঠোরভাবে দমন করা।
মেজর জাফরের চোখে মুক্তিযোদ্ধারা হল ছারপোকা। ছারপোকাগুলোকে যতদ্রুত সম্ভব খুজে বের করতে হবে। ছারপোকার মত পীড়াদায়ক আর কিছুই হয় না। সারাদিন কোন দেখা খবর থাকে না। দেখাও যায় না। যেই না আলো নিভে যাবে, রাতে একটু শান্তির ঘুম আসবে, ওমনি যেন আকাশ থেকে হাজির হয়।
গতকাল আটজন পাক সেনা ছারপোকা দংশনে পরোপারে পৌঁছে গেছেন। এই বিষয়টি তার উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে। এমন সময় হাফিজের আগমন।
নাম তার হাফিজ খান। পাকিস্তানী নন, আবার পাঠানও নন। তিনি আপাদমস্তক একজন বাঙ্গালী। মাথাতে জিন্না টুপী, মুখে সাদাকালো দাড়ি। খান বংশের গর্বে সে গর্বিত। গ্রামের মুরব্বী। তার অন্য রকম সম্মান। সবাই দেখলে সালাম দেয়। গ্রামে শালিস বসলে, বিচারকের গুরু দায়িত্ব সে পালন করে। যদিও যুদ্ধ শুরুর পর তার অগোচরে গ্রামবাসী একটু ভিন্ন নামেই তাকে ডাকতে শুরু করেছে। কুত্তা হাফিজ।
না। হঠ্যাৎ করে কুত্তার সাথে তার বাহ্যিক কোন সাদৃশ্য গ্রামবাসী আবিষ্কার করে নি। সে দেখতে মানুষের মত ছিল, এখনো আছে। তার মনটা কুত্তার মত কিনা সেটা অবশ্য আলোচনা সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে, পাক মেজর জাফরের প্রতি তার আজ্ঞাবোধ পোষা কুত্তার চেয়ে কোন অংশে কম বলে মনে হয় না। ব্যাপারটা মেজর জাফরকেও মাঝে মাঝে অবাক করে। হাফিজ তার কাছে ক্রান্তি কালীন সময়ে খোদার রহমত।
গ্রামের মা বোনেরা তাকে দেখলে রীতিমত শিউরে ওঠে। সে রীতিমত দূর-ধর্ষ । তার দূরদৃষ্টিই যেন যে কোন নারীর মান ইজ্জতের জন্য এখন এক বড়সড় হুমকি। সময় মাঝে মাঝে বিড়ালের মাঝেও নিয়ে আসে বাঘের ছায়া।
জনাব, ধরে এনেছি দুইটারে ।
আমার সামনে নিয়ে আই।
দুজন যুবককে মেজর হাফিজের সামনে হাজির করা হল। তাদের স্বেচ্ছায় আগমনের কোন কারণ আছে বলে মনে হয় না। পড়নে তাদের ছেড়া লুঙ্গি, গায়ে কিছু নেই। দুজন পাক সৈনিক তাদের রাইফেলদিয়ে গুঁততে গুঁততে মেজর সাহেবের সামনে নিয়ে এসেছেন। তাদের সাথে তারা তেমন একটা ভাল ব্যবহার করেছেন বলে মনে হচ্ছে না। দুজনের মুখে আঘাতের চিহ্ন। একেবারে তাজা। বাঙ্গালী রক্ত ঝরছে। একটু কালচে ধরনের লাল। মেজর জাফর রক্ত দেখলেই আজকাল পার্থক্য ধরতে পারেন। পাক রক্ত এমন নয়। তা শুধুই লাল। পবিত্র রক্ততে কোন ময়লা নেই। বাঙ্গালী রক্ত দুষিত। তাতে কালো ময়লা প্রবাহিত হয়। অনেকটা হিন্দুস্তানের লোকেদের মত।
ইসলাম ধর্মের মুল কথা ছিল, নিজের শত্রুকে ভালবাসা দিয়ে জয় করা। আজকের মুসলমানেরা এত কিছু বোঝে না। তাদের ধর্ম জ্ঞান আসে, এরওর কাছ থেকে বয়ান বাজী শুনে। চর্চা বা পঠনের মাধ্যমে নয়। উপমহাদেশের কারোরই মাতৃভাষা আরবি নয়। অথচ, অনেক হাফেজ কোরআন মুখস্ত করে জান্নাতের টিকিট নিশ্চিত করে, একলাইন আরবি অর্থ না বুঝে। তাদের কাছে এসব শুধু পবিত্র মায়াবী মন্ত্র। কি হবে, তার মানে জেনে? সব যাদুকরই কি “অব্রাকা ড্যাবরা” যাদুমন্ত্রের মানে বোঝে ?
মেজর জাফর বললেন, এ দুটাকে খতম করিস নি কেন ? এখনই কর। এদের মুখ যেন সকালে না দেখি।
কুত্তা হাফিজ প্রতিবারই মেজর জাফরের বাংলা শুনে অবাক হন। কে বলবে, তার মাতৃভাষা পাশতুন। এত সুন্দর বাংলা সে নিজেও বলতে পারে না। পাশতুনি টানে বাংলা উচ্চারণ। বাঙ্গালীদের চাইতেও শুনতে ভাল শোনায়। হাফিজ জবাব দিল, অবশ্যই জনাব। এই দুই হারামীকে তো মরতেই হবে। তবে, আমার একটা আর্জি ছিল।
বল।
গুলি খরচ করে কি লাভ ? মারবেন যখন একটু কষ্ট দিয়ে মারেন। গুলি করলে তো সাথে সাথেই মরে যাবে। দুই শালাই হিন্দু। দুই শালাই কিছুদিন আগে বিয়া করছে। পাকিস্তানের কষ্টে এগো আনন্দ হয়। এদের খাঁচায় আঁটকে রাখেন। পানি খাইতে দিবেন। কিন্তু, খাবার দাবার দিবেন না। এরপর সব উপরওয়ালার হাতে। কতদিনে মরবে কে জানে ? অন্নবিনা মরনের চাইতে কষ্টের মরন আর নেই।
বুঝলাম।
তয়, জনাব। কিছু হাদিয়া যদি দিতেন। ভাল লাগত।
এই দুটার বউরে তো ইতিমধ্যে আমার অনুমতি না নিয়ে তোমার কাছে নিয়েছ। আবার নতুন করে হাদিয়া চাও ! ওগুলোই তোমার হাদিয়া।
কুত্তা হাফিজ কিছুটা মন খারাপ করল। লজ্জার হাঁসি দিল। কুকুর তার মনিবের পিছে পিছে খাবার জন্য ঘুরছে। মনিব খাবার না দিয়ে বলল, তোকে যে আশ্রয়ই দিয়েছি, এটাই তোর পুরষ্কার। আবার খাবার চাস ? এদিকে ওদিকে যা পাবি, তাই খাবি। খাবার চাইবি না।
হাফিজের অবস্থা অসলেই এখন কুত্তার মত। গ্রামবাসীর মাথায় বিশ্লেষণী ক্ষমতা আছে বলেই মনে হচ্ছে। বাঙ্গালী একেবারে বোকা না। হাফিজের নামকরন সার্থক বলেই মনে হচ্ছে। হাফিজ মাথা নিচু করে চলে গেল।
হাফিজ চলে যাবার পর, মেজর জাফর কিছুক্ষণ থমকে বসে রইলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন, হাফিজের চাইতে বদ লোক তিনি ইহজগতে আর একটিও দেখেছেন কি না। বয়স তো তার কম হল না। কিন্তু, মনে হয় না দেখেছেন। তবে, এমন মানুষ এখন খুবই প্রয়োজন। শিকারির পাশে একটা খ্যাপাতে কুকুর না থাকলে, মানায় না।
একজন পাক সৈনিক জাফরের কাছে জানতে চাইলেন, স্যার, এই দুইটাকে কি করব ?
বাইরে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেল।


রিনাদের গ্রামের বাড়ির নাম রুপপুর। এখন পর্যন্ত এই গ্রামে পাক বাহিনীর কোন ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয় নি। ক্যাম্পের দরকার হয় না। পাশের কাশীপুর গ্রাম থেকে এসে তারা মাঝে মাঝেই টহল দিয়ে যায়।
রিনার বিয়ে হয়েছে দু’বছর। আফসার তখন কেবলই পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় ছোটখাটো একটি চাকরি পেয়েছিল। বিয়ের পর রিনা কিছুদিন ঢাকায় ছিল। আফসারের সাথে একটি বাসা ভাড়া করে তার সংসার জীবন শুরু হয়। কিন্তু, গত বছরের শুরুতে ঘর আলো করে তাদের একটি ছেলে হয়। তখন থেকেই সে গ্রামে, শ্বশুরবাড়িতে থাকে।
রিনার ছেলেকে এখনো সবাই বাবু বলেই ডাকে। দেব দেব করে তার এতদিনেও কোন ভাল নাম দেয়া হয় নি। কিন্তু রিনা মনে করে, তার এখন একটা ভাল নাম দেবার সময় হয়েছে। তা না হলে, সময়ের পরিক্রমায় বাবু একদিন বৃদ্ধ হবে। তখনো তাকে সবাই বাবু বলেই ডাকবে। বিষয়টা অদ্ভুত দেখাবে। বৃদ্ধ বাবু। যদিও সে দিন তিনি থাকবেন না, তারপরও রিনা এ বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবছে। মেয়েরা যে কোন কিছু নিয়ে বহুদূর চিন্তা করে, এটা সে রকমই একটি ব্যাপার।
রিনা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর তার বিয়ে হয়। এরপর আর পড়ালেখা করা হয় নি। এখন সে একবাচ্চার মা।
এক বাচ্চা বললে ভুল হবে। আরো একটি বাচ্চা তার গর্ভে। রিনা রবীন্দ্রসংগীত পছন্দ করে। এই রবীন্দ্রসংগীতও একসময় পাক সরকার নিষিদ্ধ করেছিল। রবীন্দ্রসংগীতকে বলা হয়েছিল হিন্দুর বন্দনা। বাঙ্গালীকে রবীন্দ্রসংগীত শোনার অধিকার পরে অর্জন করে নিতে হয়েছিল। রিনা নিজে গান গাইতে পারে। সময় পেলেই মাঝে মাঝে ছোট একটা ক্যাসেট প্লেয়ার কাছে নিয়ে গান শোনে। যদিও তার শাশুড়ি আগে পছন্দ করলেও, ব্যাপারটা এখন আর পছন্দ করেন না। খারাপ সময় বলে কথা।
রিনাকে তার শ্বশুরশাশুড়ি নিজের মেয়ের মতই ভালবাসেন। ছেলের অনুপস্থিতিতে তারা ভালমতই রিনার যত্ন নেন।
বিকেল বেলা শুয়ে শুয়ে রিনা বই পড়ছে । রুশ বিপ্লবের কাহিনী। এসব বই পড়তে তার খুব একটা ভাল না লাগলেও আফসারের নির্দেশ, এসব বই তাকে পড়তে হবে। তাকে জানতে হবে, পড়তে হবে। জানার বিকল্প নেই। জানতে হবে, সাহসের জন্য। মনে যাতে আশার সঞ্চার হয়, তার জন্য। তেমন একটা মজা না পেলেও তাই সে পড়ছে।
পাশে বাবু তার খেলনা নিয়ে ব্যস্ত। রিনার মাথার কাছে তার প্রিয় ক্যাসেট প্লেয়ার। তাতে অনেক মৃদু শব্দে রবীন্দ্রসংগীত বাজছে। এত আস্তে বাজছে যে ভালভাবে শুনতে পাচ্ছে কি না সন্দেহ।
রিনার শাশুড়ির আগমন।
কি কর, মা ?
কিছু না। আসুন। বসুন।
তোমাকে না কত করে বলেছি রবীন্দ্র গান না শুনতে। কেউ শুনলে সন্দেহ করবো। আজকাল কারো কোন ভরসা নেই। দেয়ালেরও কান আছে।
খুব আস্তে শুনছি, মা। সমস্যা হবে না। আর দেয়ালের কান থাকলে কি হবে ? মুখ তো নেই। কাউকে বলতে পারবে না।
রিনার শাশুড়ি হাসলেন। মেয়েটা মাঝে মাঝে মজার মজার কথা বলে। শুনতে ভাল লাগে। “আজকাল রবীন্দ্র শুনলে, তারে কাফের কয়। যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রবীন্দ্র বাদ দিয়ে, নজরুল শোনাটা নিরাপদ”।
মা, আপনি খামোখা বেশি বেশি চিন্তা করেন। পাকিস্তানীরা বাংলাই ভাল করে বোঝে না, রবীন্দ্র তো অনেক দুরের জিনিস। আর নজরুল আমার ভাল লাগে না।
চিন্তা কি খামোখা করি ? অনেক ভয় হয়। যে পাখি খাঁচায় বন্দি, তার আবার পছন্দের খাবার ! দেশ স্বাধীন হোক, তখন সারাদিন রবীন্দ্র শুনবা। আমাদেরকে গেয়ে শোনাবা। তোমার শ্বশুর, তোমার গান খুব পছন্দ করে।
মা, আপনি বড্ড বেশি ভয় পান। দেখবেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।
আফসারের জন্য খুব চিন্তা হয়। অনেকদিন খোজ খবর নেই। চিঠি ও পাঠায় না। ওর জন্য তোমার ভয় হয় না ?
না। একদম হয় না। কারণ আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী। মারে আল্লাহ-রাখে কে, রাখে আল্লাহ-মারে কে? আমি নিষ্পাপ না হতে পারি, আমার দেড় বছরের বাচ্চাটা কোন পাপ নেই। খোদা তার বাবার খেয়াল রাখবেন।
আল্লাহ যেন তাই করেন। কিন্তু, ভয় হয় যখন শুনি, গুলি করে পাখির মত মানুষ মারা হচ্ছে। গতরাতে মিলিটারি আসছিল। গ্রামের হিন্দু বাড়িগুলো তছনছ করছে। তারা বলছিল, গ্রামে নাকি মুক্তি আইছে। খোঁজাখুঁজি চলছে।
বলেন, কি ? আমাদের গ্রামে আবার মুক্তি আসলো কবে ?
জানি না। ওরা বলছে, আমাদের গ্রামে নাকি মুক্তি লুকায়ে থাকে। রাতের আধারে পাশের গ্রামের পাক সেনাদের মারে।
ওদের এ খবর কে দিল ?
কে আবার দিবো ? আছে না আবার !! আমাদের গ্রামের মজিদ রাজাকার। ওর লোকেরা নাকি কিছুদিন আগে গ্রামে মুক্তি দেখছে ।
ওই বেটারে দেখলেই, আমার কেমন যেন লাগে। সে কিনা হইছে, গ্রামের মাতবর।
তিনটা বিয়া করছে। তারপরও তার স্বাদ মেটে নাই। আবার নাকি বিয়া করবে। সবচাইতে ছোট বউটার বয়স তের-চোদ্দ হবে। বড়টার বয়স চল্লিশ।
বাবা ফিরেছেন ?
না। এখনো স্কুল থেকে ফেরে নি। আজ নাকি জরুরী কাজ আছে।
রিনার শাশুড়ি চলে গেলেন। রিনা আবার শুয়ে বই পড়তে শুরু করল। কিন্তু এখন তার ভয় হচ্ছে। নিজের জন্য নয়। আফসারে জন্য। তার বাবুর জন্য।

( ভাল লাগলে, পরের অংশগুলো পোস্ট করবো )


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অবশ্যই পোস্ট করবেন পরের অংশ! অনুরোধ রইল।

নীপবন এর ছবি

চলুক চলুক
চলুক।

কল্পনা আক্তার এর ছবি

পরের অংশের অপেক্ষায় রইলাম!


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঔপন্যাসিকের নাম কই? কেমন লাগলো সেটা তাহলে কাকে জানাবো?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রু এর ছবি

ভালো লেগেছে। নাম দিতে ভুলে গেছেন।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

এইটুকু ভাল লেগেছে, পরের পর্ব দিন। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার হয়েছে। পরের পর্ব চাই তাড়াতাড়ি।

-লেজকাটা বান্দর।

রংতুলি এর ছবি

ভালো লেগেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।