আমার গুরু ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা...

কাজী আফসিন শিরাজী's picture
Submitted by nuhinkas [Guest] on Tue, 18/08/2009 - 5:45pm
Categories:

গুরুতত্ত্বকে কোনদিন প্রশ্রয় দেইনি আগে। মানুষের এতটা ভালোবাসায় ঠাসা আনুগত্য ভালো লাগত না কখনো। যদিও গুরুকে পেয়েই গুরুতত্ত্বের গুরুত্ব বুঝেছি। আমার প্রথম গুরু ফকির লালন, আমার ধারণা মতে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল জীবন হল সাধকের জীবন। সাধক মানে সন্ন্যাসী বা বনে আত্মগোপনকারী ভণ্ড জিপসী নয়, সাধক হল সবচেয়ে উন্নত মানসিকতার মানুষ। ফকির লালনের কাছে প্রথম যে শিক্ষা পেয়েছি তা হল কীভাবে প্রশ্ন করতে হয়। ধর্ম নিয়ে দীর্ঘ দিনের অনুসন্ধানের যাত্রাপথে উত্তর না পেয়ে যখন দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাসে দিশাহারা তখন লালন ফকির শিখিয়ে দিলেন কীভাবে প্রশ্ন করতে হবে, সেইখান থেকেই আমার বদলানোর শুরু। ধর্ম নিয়ে একটা পোস্ট লিখব লিখব করে লিখিনা। কখনো লিখব পরে (হয়ত)। আমার দ্বিতীয় গুরু স্টিভেন ডারউইন, আমার ইউনিভার্সিটির এক অন্যতম শিক্ষক, যুগে যুগে অনেক অনন্যের বাস কিন্তু অন্যতম খুবই বিরল। স্টিভেন এমনই একজন অন্যতম, ভীড়ের মধ্যেও যিনি হারিয়ে যাননা, খুব ভিন্নভাবে তাকে আলাদা করা যায়।

তিনি আমাদের যে বিষয়ে পড়াতেন তার নাম 'নলেজ ম্যানেজমেন্ট'। বর্তমান যুগে করপোরেট শাস্ত্রের বেশ জনপ্রিয় একটি শাখা। এই যুগে খনিজ সম্পদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী মনে করা হয় নলেজ ইকোনমীকে। সে নিয়েই তিনি পড়াতেন আমাদের। স্টিভেনের যে ব্যাপারটা প্রচণ্ড ভালো লেগেছে তা হল, তিনি কিছুটা হুমায়ুন আজাদের মত সব সাময়িক যুগকে ছাড়িয়ে গেছেন, এ যুগের মানুষ তার গুরুত্ব তাই সেভাবে বুঝবে না। উনি একজন ভিশন লিডার। তিনি মনে করেন, ইউনিভার্সিটি প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসছে, আমেরিকাতে এখনই মনে করা হয় ইউনিভার্সিটির প্রয়োজনীয়তা নেই। গুগল সার্চ থেকে মানুষ এর চেয়ে ঢের বেশি শিখছে। তিনি যুগের পরিবর্তন দেখিয়ে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন এ যুগের মানুষ টেকনলজি থেকে জ্ঞান লাভ করতে ভালবাসে। বর্তমান যুগে দুই প্রজাতির মানুষের বাস; একদল হল ডিজিটাল মাইগ্রেন্ট (যারা ডিজিটাল প্রযুক্তি সৃষ্টি করেছেন বা জীবনের একটি পর্যায়ে এসে টেকনলজীর সাথে পরিচিত হয়েছেন) আরেক দল হল ডিজিটাল ন্যাটিভ (যারা ডিজিটাল যুগে টেকনলজির সাথে বেড়ে উঠছে)। এই দুইটি যুগের মানুষের জেনারেশন গ্যাপটা আরো ভালো লক্ষ্য করা যায় যখন বাস স্টপে মানুষকে মনোযোগ দিয়ে দেখবেন। ডিজিটাল মাইগ্রেন্টরা সময় দেখে ঘড়িতে আর ডিজিটাল ন্যাটিভরা সময় দেখে মোবাইল বা আইপডে। তাই ডিজিটাল মাইগ্রেন্টদের নকশা করা সমাজ কাঠামো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে ডিজিটাল ন্যাটিভরা ঢুকে বেকায়দায় পরবে। তিনি বার বার একটা কথাই বলেছেন-

Quote:
ব্রেক দ্যা নর্ম

তিনি খাঁচা ভাঙ্গার আভাস দিয়েছেন প্রতিবার। আমাদের একেকটা লেকচারের গ্যালারীগুলোতে প্রায় ২০০+ ছাত্র একসাথে ক্লাস করে। তার মতে ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে জ্ঞানের খনি যেন তিনটা টাচ স্ক্রীন কম্পিউটারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লেকচারার। একই জ্ঞান তিনি সবার মধ্যে বিলাচ্ছেন কিন্তু ক্লাস শেষে সবাইকে প্রশ্ন করা হলে দেখা যাবে গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশাল তফাত। তিনি মনে করেন এইসব সময়ের নষ্ট, যেখানে জ্ঞানের বিনিময় নাই সেখানে প্রকৃত জ্ঞান নাই। আলোচনায় জ্ঞান কো-কস্ট্রাক্ট হয়। তিনি লেকচার নোট তৈরি করে আনতেন না। তার মতে ৬ মাস পুরাতন লেকচার নোট অনেক বেশি পুরাতন। ৬ মাসে পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। তাই তিনি ক্লাসে বসে পাওয়ার পয়েন্টে আলোচনার সাপেক্ষে লেকচার নোট তৈরি করে আমাদের অনলাইন ক্যাম্পাসে আপলোড করে দিতেন। স্টিভেনের মতে ৫-৭ বছর পুরাতন বই ছাত্রদের পড়ানোর কোন মানে নেই। কারণ প্রথমত, বইয়ের বিদ্যা অনেক দূরের দুর্বোধ্য কিছু একটা; দ্বিতীয়তঃ, পৃথিবী অনেক বদলে গেছে, এই সময়ে বসে ২০০২ সালের পৃথিবীকে জানার মানে নেই। রিসেশনে বসে শক্তিশালী অর্থনীতির মোটা বই পড়ার কোন মানে হয় না। ব্যাপারটার সাথে আমিও একমত, বই পড়ে সাইকেল চালানো শিখা যায় না। কিছু জিনিস চারপাশ থেকে শিখতে হয়। স্টিফেন তার চমকপ্রদ কিছু নতুন কাঠামো প্রস্তাব করেছিলেন। সব বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই বলেছে চমৎকার কনসেপ্ট কিন্তু কেউ রিস্ক নিবে না। স্টিভেন বার বার বুঝাতে চেয়েছেন, চাকুরীক্ষেত্রে নবীনদের দিয়ে পরিবর্তন আনা হোক, ওরা এখনই তৈরী করুক ভবিষ্যতের পোট্রেট।

আমার প্রায়ই মনে হয়, আসলেই কী ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে খুব বেশি কিছু শিখছি! আমাদের লেকচারগুলোতে অনেক চাইনিজ ছাত্র ক্লাসে আসে না, বাসায় বসে বই বা ইন্টারনেটে পড়ে সবাই পাশ করে। অনলাইনে পরীক্ষা দেয়া যায় আর সব রেকর্ডিং করা লেকচার শুনা যায়। তাহলে লেকচার হলে যাওয়ার কী দরকার! যাতায়াতে কত সময় নষ্ট। আর প্রতি বছর একই বই পড়ালে একি লেকচার বার বার দেয়ার কী দরকার! একবার রেকর্ড করে ৪-৫ বছর চালাতে পারবে। শিক্ষা অনেক বেশি মেকী বা সার্টিফিকেট নির্ভর হয়ে গেছে। শিক্ষাকে ভালো না বেসেও মানুষ সার্টিফিকেটের জন্য পড়ছে। হয়ত এমনও দিন আসবে যেদিন মানুষ সম্পূর্ণ ইন্টারনেটে ক্লাস করে ইন্টারনেটে পরীক্ষা দিবে। বাংলাদেশে বসে অক্সফোর্ডে পড়বে আর ডিসকাশন ফোরামে আলোচনা করে জ্ঞানের চর্চা করবে। ওয়েব টু টেকনলজির মত আরো নতুন চমকপ্রদ টেকনলজি বদলে দিবে জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়া, স্টিভেনের তত্ত্বই মেনে নেবে, সময় আর জ্ঞানে অপচয় রোধ করে মানুষ আলোকিত হবে। এই সব মানুষ গৌতম বুদ্ধের মত পরাণের আলোটুকু জ্বালিয়ে দেখিয়ে দিবে অন্ধকারে থাকা যত না দেখা প্রজাপতিগুলো। প্রায়ই বুড়ো স্টিভেনের হাত ধরে বলতে ইচ্ছে করে- চলো ভেঙ্গে ফেলি দুনিয়ার সব জেলখানাগুলো, মানুষকে অন্তত নুন্যতম স্বাধীনতাটুকু দেই। মানুষ সুযোগ পেলে কী করতে পারে সেইটাতো ভাবনার বাইরে।

স্বাধীন দেশে আজো কিছু মানুষ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে! তারাই আমার গুরু!


Comments

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি]'s picture

বেশ উচ্চমার্গীয় আলোচনা, যেখানে আমার বেইল নাই। তাই চলুক দেখায় বিদায় খাইছে

কাজী আফসিন শিরাজী's picture

আবারো কচু দেখালেন!!! আমিও কচু দেখাবো, কিন্তু কেমনে দেখায় জানিও তো না।

প্রকৃতিপ্রেমিক(অফলাইনে)'s picture

আপনার বিষয়ের জ্ঞান হয়তো যেতে পারে, তবে বই না পড়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে সব বিষয়ের জ্ঞান আহরণ করা যায় বলে মনে হয়না। আধুনিক যুগে আমরা শুধু জ্ঞানের ব্যবহারটুকু শিখতে চাই, জ্ঞান আহরণ কেউই করতে চাইনা; জ্ঞানকে নিছক একটা ফ্রেমে বেঁধে ফেলতে চাই, এবং তা করেও ফেলি।

শাহেনশাহ সিমন's picture

পিপিদা, বিশাল আকারের বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, যার বিনিয়োগ খরচ (return on investment) তুলে আনতে হয়ত এ জীবনে সম্ভব নাও হতে পারে। সেখানে কম খরচে বিষয়ের জ্ঞান নিয়ে সেটাকে ব্যবহার/ প্রয়োগ কি বেশি বাস্তবসম্মত নয়?

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

প্রকৃতিপ্রেমিক's picture

মন্তব্য ভালো লেগেছে। প্রায়োগিক দিককে প্রাধান্য দিলে সে সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের পেছনে কম খরচে বেশী (বা প্রয়োজনীয় পরিমানে) রিটার্ন পাওয়ার পদ্ধতি হয়তো অদূর ভবিষ্যতে পলিসিমেকারদের দাবীতে পরিণত হবে। তবে এর জন্য মনোবৈশিষ্ট্যের (মাইন্ডসেটের বাংলা কী?) পরিবর্তনও দরকার।

কাজী আফসিন শিরাজী's picture

বই পড়তে তো তিনি নিষেধ করেননি, বরং তিনি আরো বেশি উৎসাহিত করেছেন, যেটা অতীত ও বর্তমান দুইটাই ধারন করে। খুব সংক্ষেপে লিখেছি তাই ব্যাপারটা খোলাসা হয়নি। আমাদের এসাইনমেন্টে পাশের প্রথম শর্ত ছিল এমন যে, আমাদের এসাইনমেন্ট থেকে যদি তিনি নতুন কিছু না শিখেন তবে কেউ পাশ করবে না।

এত কঠিন শর্ত আর কোন এসাইনমেন্টে ছিল না, তাই শুধু পাঠ্য বই থেকে ব্যাপারগুলো তুলে দিয়ে কেউ পার পায়নি। যারা থিওরির সাথে নিজেদের চিন্তা ও প্রচুর রিসার্চ করে লিখেছে তারাই কেবল পাশ করেছিল। ভাগ্যিস আমি প্রচুর জার্নাল পড়ে সেটা তৈরী করেছিলাম। তিনি বার বার বলেছেন জ্ঞান লাভ করছে মানুষ কিন্তু মানুষের কাজে আউটপুট খুব কম, কারণ সেখানে আরো গবেষণার বাকি আছে, তিনি মখস্ত বিদ্যাকে ঘৃণা করেন। তিনি বলেছেন এমন একটা পদ্ধতি চালু করতে যেটা নাকি আউটপুট আরো অনেক বাড়িয়ে দিবে। জ্ঞান লাভে জ্ঞান শক্তিতে পরিনত করতে হয়না, তারও একটা প্রক্রিয়া আছে।

একটা শিশু ভাষা শিখতে সময় লাগে, এ বি সি ডি শিখতে সময় লাগে, তার চেয়ে দ্রুত তারা রিমোটের ব্যবহার শিখে, মোবাইলের ফোন রিসিভ করতে শিখে। তাই টেকনলজি থেকেই নতুন প্রজন্ম বেশি সহযে শিখছে।

সুলতানা পারভীন শিমুল's picture

তাইলে আমাদের মাস্টারদের কী হবে? চিন্তিত

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

প্রকৃতিপ্রেমিক's picture

তিনটি বিষয় মিলিয়ে হলো জ্ঞান: (১) জ্ঞান অর্জন (২) অর্জিত (জ্ঞানের) সংরক্ষণ (৩) (শিক্ষা দেয়ার) মাধ্যমে তার প্রসারণ। ফলে শিক্ষকের বিকল্প বোধ করি কখনোই সম্ভব নয়; কোন না কোন ফর্মে তার দরকার হবেই।

কাজী আফসিন শিরাজী's picture

শিক্ষকের বিকল্প সম্ভব না কোন ভাবেই। আমি বলেছি, একই লেকচার বছরের পর বছর আর একই লেকচার নোট বছরের পর বছর ব্যবহারের কোন অর্থ নেই। এই কারনেই ক্লাসে না এসেও অনেকে সমান মার্ক পাচ্ছে। তাহলে ক্লাসে যারা যাচ্ছে তারা বাড়তি কী পাচ্ছে, বা না পেলে কেনো পাচ্ছে না তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। শ্রেণীকক্ষকে আরো বেশি কর্মক্ষম করে তোলা উচিৎ। এক তরফা লেকচার থেকে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। স্টিভেনের ক্লাসে সে সবাইকে বাধ্য করতেনকথা বলতে, সেইখানে ছাত্রদের কাছ থেকে অনেক চমকপ্রদ তথ্য আসত।

ওনার আচরণ কিছুটা বাংলাদেশের প্রাক্তন জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের মত। তিনি ক্লাসে পড়ানোর বিষয়ের বাইরেও অনেক কথা বলতেন। ক্লাস মানেইতো শিক্ষা। একাউন্টিং ক্লাসে মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করা যাবে না এইসব সংকীর্ণ ধারণার উর্ধ্বে ছিলেন তিনি। একবার আব্দুর রাজ্জাক ক্লাসে ঢুকে তিনি ছাত্রদের বললেন- আমার লেকচার শুনে কী হইব, বাইরে সরদার (নামটা মনে আসছে না) পুকুর ঘাটে দাঁড়ায় বাক্তৃতা দিতাসে, হেইটা হুনেন কামে দিবো।

সরদার সাহেব তখন রাজনীতি নিয়ে দেশে বিরাজমান বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তার কাছে মনে হয়েছিল সেই জ্ঞানটা অনেক বেশি জরুরী। এনাদের চিন্তার কাছা কাছিও আমরা পৌছাতে পারি না।

জ্ঞান সংরক্ষনের ব্যাপারে স্টিভেন অনেক কথা বলেছেন, তিনি মনে করতেন একজন লোক যখন অফিস থেকে রিটায়ার্ড করেণ তার অভিজ্ঞতা আর মেধাকে ধরে রাখার জন্য কোন মাধ্যম নেই বর্তমান করপোরেট কাঠামোতে। তিনি যেখানেই জ্ঞান দেখেছেন সেখানেই সেটাকে ধারণ করার জন্য পাত্র ধরতে বলেছেন।

সুলতানা পারভীন শিমুল's picture

বাঁচলাম ! হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর's picture

৯৫এ আমি ঘোষনা দিয়ে একাডেমিক পড়াশোনার ইতি টানছিলাম। আমার একটাই কথা- একাডেমিক পড়াশোনা আমারে পিছায়া দেয় আগায় না কিছু। সেই থেকে আমি আপাত মূর্খ।

এরপরে বহু বছর গেছে। আমি নিজে HSC সার্টিফিকেটধারী হয়ে ঢাবির অনেক মাষ্টার্স ছাত্র ছাত্রীর নোট লিখে দিছি। আমার বউ গত বছর পাশ করছে ঢাবি থেকে, প্রতি পরীক্ষার আগের রাইতে আমার তারে পড়াইতে হইছে।

আপনার এই আলোচনাটা ভালো লাগলো। সত্যিই আমাদের পড়াশোনার একাডেমিক মানটা অনেক প্রাচীন। স্রেফ ৫০ বছর পিছনের।

তবে আমি মনে করি কনটেম্পরারি আলোচনার জন্যও জ্ঞানের অতীতটা জানা জরুরী। রিসেশনে বইসা অর্থনীতির বড় বড় বই কপচাইলে ফায়দা নাই, কিন্তু সেগুলো না পড়লে অর্থনীতিরেই তো বোঝা যাবে না...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রকৃতিপ্রেমিক's picture

নজরুল ভাই, আমার এক নানা'র আপনার মতই কাহিনী আছে। এরকম প্রতিভা কিন্তু বিরল। দেখা যাক সময় সুযোগ মতো সেই কাহিনী বলা যাবে।

কাজী আফসিন শিরাজী's picture

আলোচনার ঘাটতির জন্য হয়ত বেপারটা কিছুটা ঘোলাটে হয়ে গেছে। তিনি বলেন নাই শুধু রিসেশন পড়াতে। তিনি বলেছেন তত্ত্ব আর সমসাময়িকতার সংযোগ ঘটাতেই হবে না হলে সেটা হবে মুখস্ত।

তবে তার একটা বিষয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে ঘাটতি আছে, তিনি ধরে নিয়েছেন সবাই জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে শিক্ষিত হবে। কিন্তু সবার মেধা আর আই কিউ লেভেল সমান না। তাই আমার ধারণা মতে সবাইকে একই ভাবে বিচার করার কোন মানে নেই। এরিসটটলের একটা বিখ্যাত তত্ত্ব আছে আর তা হল-

Quote:
সব সমান কে সমান ভাবে বিচার করতে হবে, আর সব অসমানকে অসমানভাবে।

প্রথমবার শুনলে খুব খটকা লাগে, মনে হয় ব্যাপারটা কেমন! কিন্তু তার এই ধারণার জন্য এখন প্রতিবন্ধীদের জন্য বাসে আলাদা সীট থাকে, আলাদা সুযোগ থাকে সবখানে। আমার মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাইকে সেইভাবে একই শিক্ষা দেয়ার মানে হয় না। কেউ বেশি পড়তে চায়, ভালোবাসে বা কৌতুহল বেশি আর কারো শুধু পাশ করা দরকার। সবার জন্য সমান সিলেবাস। কেউ প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাচ্ছে না, আবার কেউ বেশি তথ্যের ভিড়ে সময় নষ্ট করছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় সিস্টেম লস খুব বেশি। শিক্ষা কখনই বৃথা যায় না, সব শিক্ষাই মূল্যবান। কিন্তু যে ছেলেটা ব্যাচেলার করার জন্য নিজের আগ্রহের বা প্রয়োজনের বাইরে অন্য বিষয়গুলো পড়ছে তাতে সময় আর শ্রমের নষ্ট হচ্ছে। হয়ত এমন এক দিন আসবে। চাকুরীগুলোতে ডিগ্রির বদলে বলবে এই বিষয়গুলো পড়া থাকতে হবে, তখন ছাত্র ছাত্রীরা ঐ বিষয়গুলো ইন্টারনেটে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়তে পারবে। ৩-৪ বছর পড়তে হবে না। মানুষের জীবন অনেক ছোট। পড়ালেখার বাইরেও মানুষের প্রতীভা বিকাশের অনেক সুযোগ আছে। কিন্তু যে ভালো গান গায় সে ব্যাঙ্কে কাজ করছে, যে ভালো ছবি আঁকে সে করছে সরকারী চাকুরী। মেধার অপচয়। সময়ের অপচয়।

আমার ধারণামতে শিক্ষাকে কাসটমাইজ (বাংলা জানি না) করা উচিৎ। মানুষ তাদের ইচ্ছা মত শিক্ষার মাত্রা ও বিষয় নির্বাচন করবে, বিশ্ববিদ্যালয় না।

সবজান্তা's picture

লেখাটা দুর্দান্ত লাগলো !

ইন্টারনেটভিত্তিক লেখাপড়ার সাথে আমি একদম একমত। অন্য বিষয়ের কথা জানি না, কিন্তু আমি নিজেই আমার অসংখ্য বিষয়ের জন্য ইন্টারনেট থেকে অনেক পড়েছি।

ব্রেক দ্য নর্ম - এইটাই চিরকালীন সত্য !


অলমিতি বিস্তারেণ

কাজী আফসিন শিরাজী's picture

ইন্টারনেট থেকেই বেশি পড়ি যতনা বই থেকে পড়ি। ইন্টারনেটে অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যায় আর অনেক বেশি পুরাতন থেকে অনেক বেশি আধুনিক।

আহমেদুর রশীদ's picture

দারুণ...

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

কাজী আফসিন শিরাজী's picture

ধন্যবাদ!

স্বাধীন's picture

চমৎকার লেখা। তবে সমাজে পরিবর্তণ কখনো হঠাৎ করেই আসে না। এ রকম কিছু মানুষ ভিন্ন ভাবে চিন্তা করে বলেই সমাজ এগিয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি পরিবর্তণ হচ্ছে এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, চলতে থাকবেই। কোন সমাজে ধীর গতিতে কোন সমাজে ধ্রুত। আর আপনি যেটি উল্লেখ করেছেন সেটি হল একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে - জ্ঞান লাভের পদ্ধতির উপর। কিন্তু এটি কোন বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা বা সেটার ব্যবহার সব কিছু নির্ভর করছে বর্তমান সমাজ কাঠামো বা পদ্ধতির উপর। যখন সমাজ কাঠামোর পরিবর্তণ চলে আসবে তখন জ্ঞান সম্পর্কিত পদ্ধতি বা প্রয়োজনের পরিবর্তণও চলে আসবে। স্টিভেন এর মত দার্শনিকেরা বর্তমান সমাজে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের কথা বলেন। আবার ভবিষ্যতের সমাজে আরেক স্টিভ আবার নতুন দিনের স্বপ্ন দেখাবেন। এভাবেই সভ্যতা এগিয়ে যায়। আপনার লেখা ভাল লেগেছে। আর আপনার গুরু স্টিভেন কে শ্রদ্ধা।

কাজী আফসিন শিরাজী's picture

আমরা যখন খাদ্য আর দূর্নীতি নিয়ে ব্যাস্ত তখন প্রাশ্চাত্যের দেশগুলো জ্ঞান আর বিজ্ঞানে উৎকর্ষ সাধনের সাধনায় মরিয়া। ম্যাজলোর হাইরাকী অফ নিডস- যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন আমাদের সমাজে এত চরিত্রের অধঃপতন কেন। নিচের দিককার চাহিদা পূরণ না করলে মানুষের চারিত্রিক উৎকর্ষ চিন্তাও করা যায় না। খাদ্য নিশ্চিত না করে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রচেষ্টা একটা ভীষণ কৌতুক।

আগে খাদ্য নিশ্চিত করা হোক তারপর শিক্ষা, তারপর বোধের ঘষামাজা। পরিবর্তনের প্রচেষ্টা অনেক পুরাতন একটা চাহিদা। চাহিদাই সকল আবিষ্কারের জননী। হয়ত এভাবে একদিক কেউ সত্যি সত্যি হয়ত বদলে দিবে, দিতেই থাকবে যুগে পর যুগ। তাদের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

দুষ্ট বালিকা's picture

ভাই, অনেক অনেক অনেক বড় এক মন্তব্য লিখে বোতাম টিপলাম আর গনকযন্ত্র ঝাঁকি দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল... মনের দুঃখে বনবাসে যাইতে ইচ্ছা করতেসে এখন... মন খারাপ যখন কথা হবে তখন বলবো... আচ্ছা?

লেখা ভালো হইসে, এইটুকু বলে যাই...

---------------------
নামে কি'বা আসে যায়...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

কাজী আফসিন শিরাজী's picture

ঠিকাসে, বইলো।

কিছু লেখা মুছে গেলেই ভালো। কিছু জিনিস হারায় গেলেই ভালো,খোঁজা যায় নতুন করে। খিক খিক...

সুহান রিজওয়ান's picture

লেখা ভালো হয়েছে। আমাদের দেশে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা জানিনা, অন্ততঃ বুয়েটে এই ধরণের শিক্ষকের খুবই প্রয়োজন।

আমাদের এখানে স্যারেরা কেবল লেকচারার, 'ভিশন লীডার' নন। বরং আমার নটরডেম কলেজে স্যারেরা অনেক বেশী 'গুরু' বলে আমার কাছে বিবেচ্য...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

কাজী আফসিন শিরাজী's picture

গুরুরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বেশি মানানসই। কারণ তারা হলেন মেধা তৈরির মেশিন। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এমন শিক্ষকের প্রয়োজন আছে।

ভুতুম's picture

ভাল্লাগছে লেখাটা।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

মামুন হক's picture

এই লেখাটা বড় বড় কুতুবদের চোখে পড়লনা?
আমি না হয় তিমি ধরতে গেছিলাম দেঁতো হাসি
অবশ্যপাঠ্য দুর্দান্ত একটা লেখা। খুব ভালো লাগল। মামা আরও রাস্তা দেখা, আমার মতো আধ মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা হাসি

অতিথি লেখক's picture

Quote:
গুরুরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বেশি মানানসই। কারণ
তারা হলেন মেধা তৈরির মেশিন। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই
এমন শিক্ষকের প্রয়োজন আছে।

র.নাহিয়েন

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.