যুদ্ধাপরাধের বিচার ও অন্যান্য ভাবনা

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৫/১১/২০০৭ - ৭:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে নিরুৎসাহী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার করবার জন্য আবেদন নিবেদন এবং বিশেষ কমিশন গঠনের আব্দার কতটুকু যুক্তিসংগত এটা নিয়ে আমার দ্বিধা থাকলেও শাহরিয়ার কবির এনং মুনতাসির মানুন উৎসাহী, তাদের এ আশাবাদ আমাকে স্বস্তি দিচ্ছে না। সহযোগিতার জন্য যারা হাত বাড়াতে প্রস্তুত তাদের আন্তরিকতা নিয়েও আমার সংশয় নেই, তবে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ সংক্রান্ত জনমত সংগঠনের যে পরিকল্পনা নিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সেটাকে মৌন সমর্থন দিবে এটা আমার মনে হয় না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা এবং প্রয়াত মানিক মিয়ার সন্তান জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং একই মাত্রায় না হলেও জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল অন্য একজন উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপদেষ্টা আনোয়ার সাহেব এবং সচিব পর্যায়ে অনেক জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তির উপস্থিতি আমাকে ঘোর সংশয়বাদী করেছে।

জামায়াতের হঠাৎ জাগরনের পেছনে যে ক্ষমতাধর গোষ্ঠির উপস্থিতির সন্দেহ করা হচ্ছে সেখানে নাম এসেছে আওয়ামী ঘারানার রাজনীতিবিদদেরও- তারাও রাজনৈতিক ফায়দার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচারে উদাসীন এমন অভিযোগ রয়েছে। বি এন পিতে রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাবে এবং তাদের নবগঠিত দলের প্রতি সহানুভুতিশীল নির্বাচন কমিশনও সন্দেহ তালিকার বাইরে থাকছে না। যদিও নানা রকমের আশাবাদ কেউ কেউ দেখছে তবে আমার মনে হয় না নির্বাচন কমিশন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের পক্ষে। যদিও বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের হাতে এমন ক্ষমতা আছে তবে তারা ক্ষমতার প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক এমন সব বিষয়ে যেখানে অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার সম্ভবনা আছে- তারা শেকল বাধতে চান, নিগড়ে বাধতে চান রাজনৈতিক দলকে তবে একটা বিষবৃক্ষ তারা উপরে ফেলতে নারাজ।

জামায়াত বর্তমানে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করছে আসলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। ইসলামের নামে রাজনীতি জায়েজ করবার প্রক্রিয়ার তাদের সহায়ক শক্তি নির্বাচন কমিশন, ইসলামী গণজাগরনের স্বপ্ন দেখা কতিপয় ছদ্ম বুদ্ধিজীবি এবং ইসলাম ও সমাজতন্ত্রকে এক করে ফেলবার প্রচেষ্টায় নিবিষ্ট এক উল্লুক ফরহাদ মজহার। এ লোকটাও বাংলাদেশের জন্য একটা ভয়ানক ব্যধি, এমন ব্যধিগ্রস্ত্র একটা অবস্থায় আদতে জামায়াতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

আজ প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে এড়িয়ে গেলেন তাতে আমার বিশ্বাস অন্তত আগামী এক বছরে যতই রাষ্ট্রদ্রোহীতামূলক বক্তব্য দিক না কেনো জামায়াতের নেতারা তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে গররাজি প্রশাসন। কাদের মোল্লা যে বক্তব্য দিয়েছে এবং গণ মাধ্যমে তা যেমন আলোড়ন তুলেছে এর পর মামলা হয়েছে এবং সরকার ধীরে বহে মেঘনা ভূমিকা প্রহন করেছে, এই কীটকে আটক না করে বলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত চলছে। আশ্চর্য বিষয়!!! কাদের মোল্লা যা বলেছে সেটা প্রতিটা দৈনিকে এসেছে এর পরও আসলে তদন্ত কি প্রয়োজনে? কাদের মোল্লাকে হেনস্তা করবার জন্য কেউ এই অপপ্রচার চালিয়েছে?
আজ বিকেলে কেন্দ্রীয় দপ্তর জবরদখলের পর সাইফুর রহমানের বক্তব্য, তারা বিশ্বাস করেন না এই নোটিশ এসেছে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে এবং একই সুর সরকারের কণ্ঠে- আদতেই কি কাদের মোল্লা এসব কথা বলতে পারে? জামায়াতের মতো বাংলাদেশের প্রতি নিবেদিত একটি দলের নেতা হয়ে কাদের মোল্লা এ কথা বলতে পারে? উনার বিরুদ্ধে এটা নিতান্তই অপপ্রচার। এমন একটা ভঙ্গিতে শুরু হওয়া তদন্ত - এবং এই তদন্ত প্রতিবেদনের ফলাফল সরকারের মনোভাবকে প্রদিফলিত করবে এটাই বিশ্বাসযোগ্য। কথা হলো যদি তদন্ত কমিটি এটাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা না ভাবে তাহলে কি করনীয়? আমরা কি নাগরিকত্ব বাতিলের আহ্বান জানাবো? নিজেদের নাগরিকতা প্রত্যাহার করে ফেলবো? আসলে এমন যুদ্ধাপরাধী এবং রাষ্ট্রদ্রোহীকে কোন ভাবে দমনের চেষ্টা না করে তাকে জিইয়ে রাখবার প্রয়াসে একটা সত্যই প্রকাশিত হচ্ছে- বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সময়ের সাথে নিকেই যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতা বিরোধি এবং এ অপরাধে লিপ্ত মানুষের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে।

যুদ্ধাপরাধী প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখছে অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ছদ্মবেশী জামায়াত মনোভাবাপন্ন শিক্ষকেরা সাদা দল করতো এখন তারা প্রকাশ্যেই এসেছে এবং তারা এখনও পৃথক বর্ণ ধারণ না করলেও গতপরশু তারা জামায়াতের প্রতি সহানুভুতিশীল শিক্ষকদের সংগঠনের একটি বক্তৃতায় প্রচার করবার চেষ্টা করেছে- আদতে যুদ্ধটা ভারত পাকিস্তানের- বাংলাদেশের জন্ম নেহায়েত একটা দুর্ঘটনা। অবশ্য এই একটা রাস্তা খোলা ছিলো , অনেক রাস্তা খোঁজার পরে কাদের মোল্লার উদ্ধত্ব এবং আব্দুল হান্নানের বক্তব্যের জের ধরে এ অবস্থান নেওয়াটাই সাম্ভাব্য পথ ছিলো তাদের। তাহলে অবশ্য জামায়াতের এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়-

যুদ্ধাপরাধের দায় ধেকে মুক্তি পেতে পারে তারা- কারণ যুদ্ধটা যেহেতু ভারত পাকিস্তান তাই বাংলাদেশের কেই তাদের যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা অধিকার রাখে না- এবং একই সাথে এটাও প্রতিষ্ঠিত হয় যে ১৯৭১ এ তাদের অবস্থান সঠিক ছিলো এবং আসলে মুজিব এবং আওয়ামী লীগ একাত্তরে ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তান ভাগের চক্রান্ত করছিলো- এবং জামায়াতের তৎকালীন অবস্থান আসলে ভারতের চক্রান্ত রোধ করবার অবস্থান। এই দাবিটা তারা করছে এবং ক্ষুদে কর্মীদের পাখি পড়া করিয়েছে।

আমাদের নিশ্চুপ থাকা তাদের সহযোগিতাই করবে পক্ষান্তরে। আমাদের প্রতিবাদের পন্থা কি হবে এ বিষয়ে বিবেচনার প্রয়োজন আছে- তবে এই বিবেচনা যেনো জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের বিবেচনায় পরিনত না হয়। কয়েক দিন আগে জানলাম ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত তারা যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিলো সেটার ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে এখনও তারা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে নি- তারা এখনও পর্যালোচনা করছে তাদের ভুমিকা। অবশ্য ১৯৭১ তাদের কিছু সংগঠনের ভুমিকা নিয়ে তারা সিদ্ধান্তে এসছে এবং তাদের সিদ্ধান্ত চীনপন্থী নেতাদের এ অবস্থান তখনকার প্রেক্ষিতে সঠিক ছিলো না- তবে জামায়াত আরও শ্লথ তারা এখনও কোনো সিদ্ধান্তে চৌঁছাতে পারে নি তবে তারা এখনও ৭১ এ তাদের ভুমিকা সঠিক ভাবছে।

ডিসেম্বর মাস বাদ দিলে মার্চ থেকে নভেম্বর এটা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই ছিলো। এবং যদিও অনেক মানুষই পাকিন্তান নামক রাষ্ট্রটিকে ঘৃনা করে তবে এটাও সত্য যে বেলুচিস্তান- এবং প্রাদেশিক শাসনের দাবিতে আন্দোলন করা আরও কিছু পাকিস্তানের প্রদেশের মানুষেরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে ছিলো। এর পেছনে কোনো আবেগ নয় বরং ক্রিয়াশীল ছিলো তাদেও আঞ্চলিক রাজনীতি এবং তাদেও নিজস্ব স্বাধীকারের দাবি পুরণে মুজিব সহায়ক হতো।

মূলত ক্ষমতার লড়াইটা ছিলো ভুট্টো এবং মুজিবের ভেতরে কে হবে প্রধান মন্ত্রী এ নিয়ে। এবং ভুট্টো এ কাজে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অনেক সদস্যই সে সময় এই আগ্রাসনের বিপক্ষে ছিলো। তাই আমি ঢালাও ভাবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও ঘৃনার পক্ষপাতি না। রাজনৈকিত মিত্রতা গঠনের সম্ভবনা সত্ত্বেও ১৯৭১ এ যে অচলাবস্থা কাটে নি এবং এর ফলশ্র“তিতে যে গণহত্য হয়েছে এবং এখানে যারা জড়িত তাদের ভেতরে যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং যারা এদের সহযোগী হিসেবে যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের সবারই শাস্তির দাবিতে আমার সমর্থন আছে।

যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা মতে যুদ্ধে পরাজিত এবং বিজয়ী উভয় পক্ষেরই যারা নিরস্ত্র নাগরিক এবং বেসামরিক স্থাপনায় লুটপাট- অগ্নিসংযোগ এবং নারী নির্যাতন এবং শিশু ও নারী হত্যায় জড়িত তারা সবাই যুদ্ধাপরাধী- এমন কি যে যোদ্ধা আত্মসমর্পণ করেছে এবং অস্ত্র ত্যাগ করেছে তাদের হত্যা করাও যুদ্ধাপরাধ। যদিও বিষয়টা আবেগের সাথে জড়িত এবং স্পর্শকাতর তবে যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা মেনে নিয়েই বলছি মুক্তিযোদ্ধারাও যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং এই যুদ্ধাপরাধ কোনো নারী বা শিশুহত্যার মতো বর্বোরোচিত না হলেও তারা আবেগের বশে বেশ কয়েকবার আত্মসমর্পন করা সৈন্যদের হত্যা করেছে। এমন কি কাদের সিদ্দিকির জনতার আদালত তৈরী করে স্বল্প সময়ের বিচারে বেয়ানেট দিয়ে খুঁচিয়ে রাজাকার মারবার দৃশ্যটাও আমাকে আহত করে। বিষয়টা আবেগের নয়, সব কিছুরই নিয়মতান্ত্রিক পন্থা আছে। হুট করে কোন জনসমাগমকে জনতার আদালত করা যায় না এবং তারা বিচার এবং রায় ঘোষনার অধিকার রাখে না। তাই কয়েকজন মিলে একটা আদালত তৈরি করে সেটাকে জনতার আদালত ঘোষনা দিয়ে সেখানে মৃত্যুদন্ড দেওয়াটা আইনসম্মত কিনা এটাও বিবেচনা করতে হবে। সামাজিক শৃঙ্খলার স্বার্থেই এটা নিয়ন্ত্রন কার প্রয়াজন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার হলে এদেরও বিচারের দাবি সামনে আসবে। এটাই ন্যায় বিচার হবে। যদিও আমাদের আবেগ এটাকে দোষনীয় ভাবছে না তবে এখন ভাবতে হবে আমরা আসলে কতটুকু আন্তরিকতা নিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারে আগ্রহী। আমাদের হয়তো কয়েকজন মানুষ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হতে পারে- এমন কি যদি দায় এড়াতে তাদের বেসামরিক বাহিনীর সদস্য বলা হয়- যদি বলা হয় তারা নিজস্ব বিবেচনায় এ কাজ করেছে তবে সেটা যুদ্ধাপরাধের বাইরে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক নিধনে পরিনত হবে। এ বিষয়েও একটা নীতিমালা আছে জাতিসংঘের এবং বাংলাদেশ যেহেতু এসব শর্ত মেনেই এই দলিলে সই করেছে তাই বাংলাদেশের নৈতিক দায়িত্ব এটা পালন করা এবং শর্ত পুরণ করা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো এ সনদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া।

আমি নিজেকে কখনই শাহরিয়ার কবিরের এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করবার তাগিদ পাচ্ছি না। বরং আমার এটাকে জনসম্পৃক্ততাবিহীন মনে হচ্ছে। যদিও প্রতিটা ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ গড়ে আন্দোলন সংগঠনের ডাক দিচ্ছে মুক্তিযোদ্ধ সংসদ হবে একটা বাস্তবতা হলো আমাদের সুশীল এবং বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায়ের সাথে সাধারণ মানুষের বিচ্ছিন্নতা এবং পারস্পরিত অবিশ্বাসের অবস্থান- বুদ্ধিজীবি পর্যায়ের মানুষদের যেমন সংশয়ের চোখে দেখে সাধারণ মানুষেরা এবং প্রতিটা গণজগরণকে তাদের স্বার্থসিদ্ধির নতুন কোনো ফিকির হিসেবে বিবেচনা করে সাধারণেরা তাই এই প্রস্তাবিত গণজাগরণের সাফল্য সম্পর্কে আমি সন্দিহান।

আমার আপত্তির আরও একটা ক্ষুদ্র কারণ আছে- এই মানুষেরা এবং তাদের আন্দোলন ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি হত্যার বাইরে খুব বেশী প্রসারিত হতে পারে নি। মুক্তিযুদ্ধ যে সামগ্রীক বাংলাদেশের সমাজজীবনে এবং এ দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে মারাত্মক ক্ষত এবং বিপর্যয় এনেছিলো এটা কখনই প্রকাশিত হয় না। বরং আন্দোলনের সামনে থাকা মানুষগুলো এবং তাদের ব্যক্তিগত অনুভবগুলো এমন একটা বৈশিষ্ঠ্য দিয়েছে এ আন্দোলনকে যে আদতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ঘাতক দালাল নির্মূলের প্রধান লক্ষ্য এই শহীদ বুদ্ধিজীবি পরিবারের সদস্যদের ন্যয় বিচার দেওয়া এবং তারা ছাড়া আর মাত্র কয়েকজন এই বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে।

এমন অভিজাত তন্ত্রকে সহজভাবে নিতে পারে নি বলেই ১৯৭২ এ মুক্তিযুদ্ধ আমাদের তোমাদের হয়ে যায়। আমরা শিক্ষিত এবং সচেতন তাই আমরা সবার ভাবনাই ভাবি এমন সামন্ততান্ত্রিক গণতন্ত্রের ধারণা থেকে বের হয়ে এটাকে সত্যিকারের গণ আন্দোলনে পরিনত করতে আসলে নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে । এবং এই গন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিবে মাঠ পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধারা যারা স্বাধীনতার বিনিময়ে কিছু চায় নি এবং কিছু পায় নি। এমন সাধারন মানুষদের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে তাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা দেওয়ার মানসিকতা থাকলে শাহরিয়ার কবির এবং বড় বড় মানুষের পারস্পরিক মনোমলিন্যজনিত বিক্ষেপ এবং আক্ষেপ থেকে মুক্ত হবে এই আন্দোলন। বড় বড় মানুষের পারস্পরিক পিঠ চুলকানোর নষ্ট ব্যধি এবং রাজনৈতিক লক্ষ্যকে গনদাবির সামনে রাখার ভুল সিদ্ধান্ত এর আগে ৩ বার এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ব্যহত করেছে। এবার আঁটঘাট বেধে নামতে হবে যেনো এই শয়তানেরা ফস্কে যেতে না পারে।

আর এ জন্য সুশীল এবং অভিজাত মানুষদের জন্যও গ্রহনযোগ্য এবং সাধারন মানুষদের কাছাকাছি একজন নেত্রীকে আমরা তৈরী করতে পারি-

তারামন বিবি বীরপ্রতীক।
এমন কি আমার মনে হয় আরও বেশী প্রতিনিধিত্বশীল হবে এটা যদি আমরা বগুড়ার সেই ৩জন নারীকে এই আন্দোলনের নেতৃত্বে সম্পৃক্ত করতে পারি- ১৯৭১ এ নির্যাতিত এই ৩জন নারী এসেছিলেন জাহানারা ইমামের গঠিত গন আদালতে সাক্ষ্য দিতে এবং তাদের উপরে করা নির্যাতনের প্রমাণ দিতেও তারা বদ্ধপরিকর ছিলেন। তারা ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় বলেছিলেন তাদের উপরে কৃত অপরাধের কথা- আমাদের নষ্ট সমাজ তাদের এক ঘরে করে দেয়। এবং তারা পরিবার পরিজনসহ সমাজচ্যুত অবস্থায় দিন কাটিয়েছেন।

আমার লজ্জিত হতেও দ্বিধা জাগে এখন। তবে আমার নিজের মনে হয় এ সম্মান তাদের প্রাপ্য- এমন অনেক মানুষের ব্যক্তিগত ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি- এবং আমরা তাদের সম্মান দিতে পারি নি। আজ এই গণজাগরনের শুরুতে স্বার্থান্ধ শোনালেও তাদের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন।

আপনারা যদি কখনও আমাদের ক্ষমা করে এখানে নেতৃত্ব দিতে আসেন আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো। আমাদের সম্মিলিত অপরাধ ক্ষমা করে আসুন।
শাহরিয়ার এবং অভিজাতবর্গ তাদের সম্মানে একটু পিছে সরে দাঁড়ান। আপনাদের সুশীল কৌলিনত্ব আহত হতে পারে, এবং যেমন একটা দ্বন্দ্ব ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সেনাবাহিনীতে ক্রিয়াশীল ছিলো, সেই শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের কল্যানে অফিসার হয়ে যাওয়া মানুষদের ভেতরে, তেমন অহংকার গণস্বার্থে বিসর্জন দিয়ে গণআন্দোলনের প্রান্তিক নেতাদের সামনে আসবার সুযোগ দিন।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রবল গনআন্দোলন ব্যাতীত আর সব রাজনৈতিক উদ্যোগকেই আমি সন্দেহ করি ।
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সহমত



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অপ বাক এর ছবি

যখন ফখরুদ্দিন ফৌজদারী মামলা করতে বললো তখনই বোঝা উচিত ছিলো আসলে এইটা নিয়া আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই= আর সংলাপে যখন ঘনঘন প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রয়োজনীয়তা এবং সবাই চাইলে যুদ্ধাপরাধীদের নিষিদ্ধ করবো এমন কথা বলে তখনও বোঝা উচিত ছিলো আদতে একটা মহাপরিকল্পনার অংশ এইটা-

তবে এই সময়েও আশাবাদীদের দেখে ভালো লাগে-

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে নিরুৎসাহী তত্ত্বাবধায়ক সরকার...

দুর্নীতি দমন নিয়া হ্যাগো ঘুম নাই, আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতোন আউল-ফাউল সব প্রসঙ্গ তুইল্যা হ্যাগো কামে ডিস্টার্ব করতাছি আমরা!

শ্শালা!!!!!!!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

চয়ন এর ছবি

যত বাধাই থাক না কেন, অবশ্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে হবে। ভালো একটা কাজের জন্যে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হতেই পারে, বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মত একটি ন্যায্য দাবীর ক্ষেত্রে। তবে এই দাবী প্রাথমিকভাবে শহীদ মূক্তিযোদ্ধাদের এবং তাঁদের স্বজনদের, যুদ্ধোত্তর প্রয়াত কিংবা জীবিত মূক্তিযোদ্ধাদের এবং স্বাধীনতাকামী নিঃস্বার্থ জনগোষ্ঠীর। কোন স্বার্থান্বেশী চক্র যেন এর থেকে ফায়দা নিতে না পারে, সেই কথা ভুলে গেলে চলবে না।

যুদ্ধাপরাধীদের যদি সঠিক বিচার হয়, আওয়ামী লীগের ভোট না বাড়লেও অন্তত জামা’তের কেউ নির্বাচিত হতে পারবে না, আর সে’টা আওয়ামী লীগসহ অন্য যে কোন দলের জন্যে ভালো, এমনকি সাধারণ মানুষেরও কাংখিত। তবে একটা বিষয় আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য করা দরকার যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর ব্যাপারে অরাজনৈতিক গোষ্ঠি এবং রাজনৈতিকদলগুলোর উদ্দেশ্য একেবারেই এক নয়। নানা জটিলতায় বিচার দেরীতে শুরু হতে পারতো, কিন্তু কোন অবস্থায়ই ৩৬ বছরের ফলাফল একেবারেই শূন্য হতে পারে না। ক্ষমতায় আহরণের সাথে সাথে লুটতরাজই হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক সরকারের প্রধাণতম কাজ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা কখনই ছিলো না। তবে এখন কেন এত তোড়জোড়? ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিকে কি সত্যিকার অর্থে কোন সহায়তা করেছিলো রাজনৈতিক সরকারগুলো?

বিশেষজ্ঞদের টি.ভি. আলোচনাগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে আইনজীবিদের সর্বাঙ্গিক সহযোগিতা স্বত্তেহ, বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে দিনের মত স্পষ্ট কিছু কিছু অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা নাও যেতে পারে। ডঃ জহির একজন প্রথম সারির আইনজীবি হওয়া স্বত্তেহ, কর্পোরেট পর্যায় সহ বিশেষ কিছু মামলার ক্ষেত্রে তাঁর নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতার কথা অকপটে স্বীকার করেছিলেন চ্যানেল আই এর তৃতীয়মাত্রায়। ডঃ সা’দাত হোসেন বেশ কিছু প্রাশাসনিক জটিলতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব দূর্নীতিবাজদের বিচার শেষ করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে উল্লেখ করেছিলেন। অন্তর্বতিকালীন সরকার এমনিতেই দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলা আর দ্রব্যমূল্য উর্ধগতি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এবং অনেকাংশেই জনগণের সমালোচনার সম্মুক্ষীন হচ্ছে, তার উপর অন্যকোন জনপ্রিয় দাবীকে আদালতে আনতে পারলে দূর্নীতির মামলাগুলো পিছাতে পিছাতে দুই বছর পার করতে পারলে কেল্লাফতে। অন্যদিকে জনগণের কাছে অন্তর্বতিকালীন সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে অনুৎষাহী প্রমান করতে পারলে লাভের উপর ষোলআনা।

সবার প্রতি আহবান, আমরা যেন এত সহজে স্মৃতিভ্রষ্ট না হই। এই প্রাণের দাবী আরো জোরদার হো’ক, কিন্তু কোন ভাঁওতাবাজ যেন একে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতে না পারে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরপুরুষদের পক্ষে এই দূষন মেনে নেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়।

অপ বাক এর ছবি

বিচার হতে হবে- এটা হয়তো একটা দাবী- তবে সব সময়ই এটা একটা চানাচুর ইস্যু, স্বাদু এবং মুখরোচক, ঘাদানিকের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ নেই- এবং এই যে দুর্নীতিবাজরাই এটাকে প্যাট্রোনাইজ করছে এমন একটা পরোক্ষ ইঙ্গিত প্রদানের বিষয়টাও আমার কাছে আপত্তিকর লাগছে-

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করা হচ্ছে তারা বিচার করে সমাপ্ত করতে পারবে এমন আশাবাদ থেকে না বরং তারা এমন একটা ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থান নিয়েছে তার বিরুদ্ধে, ফৌজদারী মামলা করলেই হয় এরকম একটা বক্তব্য যখন ফখরুদ্দিন দেয় তখন বুঝতে হবে তার ভেতরে এ সংক্রান্ত বোধ অনুপস্থিত-
মইনুল কিংবা আনোয়ারুল কিংবা অন্য যারা যারা এমন কি মইন উ সাহেব- কেউই আসলে আন্তরিক নয়, বরং এটা একটা কৌশলী অস্ত্র- জামাত সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের পা চাটা এবং এই স্বাদু উত্তাপে বোধ হয় কেউ বিঘ্ন ঘটাতে চায় না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।