যে যায় লংকায়

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: রবি, ২৩/০৩/২০০৮ - ১১:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

টিআইবি তথা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রধান দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার অনেকদিন যাবত। বাংলাদেশ ধারাবাহিক ভাবে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ট্রফি পেয়েছে তার সময়েই- তিনি কয়েকদিন ন্যাম ফ্ল্যাট নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
আমার কাছে তার বক্তব্য গ্রহনযোগ্য মনে হয় নি- তার কাছে সাংসদদের ন্যাম ফ্ল্যাটে নামমাত্র ভাড়ায় থাকবার বিষয়টা নৈতিকতার পরিপন্থি মনে হয়েছে- মন্ত্রীরা যদি না পারেন সাধারণ সাংসদেরা কেনো পারবেন।
অবশ্য আমাদের দেশের পরিস্থিতিই অন্যরকম গত ১৬ মাস ধরে- সংসদের বিলুপ্তির পরে জোয়ালের মতো দেশের ঘাড়ে চেপেছে সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। জনরব আছে এই সরকারকে পেছন থেকে মন্ত্রনা দিচ্ছে প্রাক্তন কিছু রাজনৈতিক। এবং তাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এবং বাঙালিমানসপঠনের অভিজ্ঞতা চমৎকার এবং বাস্তবধর্মী।

বিভিন্ন সময়ে মইন উ আর ফখরুদ্দীনের বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়েছে বাঙালীদের ভেতরে বিচ্ছেদ এবং বাঙালীদের ভেতরের চাপা আক্রোশ আর বাঙালীদের প্রাণের কামণা সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। তাই গত বছর সেনাপ্রধান যেমন আমাদের সঠিক ইতিহাসের পাঠ দিতে শুরু করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় কেউ কেউ ভেবেছিলো এ সরকার অনেক বেশী মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষ।
সেনাবাহিনীর কোনো বিশ্বাস নেই- তারা নিজেদের মতোই চলে আর তাদের ভেতরের উচ্চমন্যতার কমতি নেই- তাই আশাবাদী হতে পারি নি- এমন কি আশংকা ছিলো জামায়াত ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সাথে কৌশলগত মিত্রতার সুত্র অবিচ্ছিন্ন রাখবে তারা-

সেনাবাহিনীর সাথে বাংলাদেশের মানুষের দ্বন্দ্বের সম্পর্কের উন্নতি হয় নি- নানা ভাষণে ভুষণে যতই ন্যাশলান সিক্যুইরিটি কাউন্সিলের কথা বলা হোক না কেনো আদতে সাধারণ জনগণ তথা সিভিলিয়ানরা সামরিক উর্দিকে সংশয়ের চোখেই দেখে-
তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করবে এমন মিথ্যা ভাবনা আমার ছিলো না তবে কেউ কেউ অত্যুৎসাহী হয়ে ভেবেছিলেন আমাদের দিন বদলের দিনের শুরু হলো।

দুর্নীতি দমন কমিশন, অপরাধ নির্মূলের জাতীয় কমিটি সবখানেই প্রাক্তন জলপাইদের স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ- এমন কি বর্তমান সেনাপ্রধানের আমাদের নিজস্ব ধারার গণতন্ত্রের বানী নিয়ে প্রকাশিত পুস্তিকার উদ্বোধন কিংবা মোড়ক উম্মোচনের কাজে ছিলেন আমাদের টিআইবি প্রধান। তার সেখানের ভাষণ পড়েই মনে হয়েছিলো সুশীল চরিত্র বোঝা দায়- এরা পদলেহনের স্বাভাবিক রীতি মেনেই চলবে এবং এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
অনৈতিক, নীতিবহির্ভুত তবে সাংসদদের জন্য নির্ধারিত এসব ভবনে র্যাব কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা এবং সচিব পর্যায়ের মানুষেরা ভাড়া দিয়ে বসবাস করছে- এটা ঠিক কোন নৈতিকতার মানদন্ডে সিদ্ধ হলো জানি না।
ধরা যাক ডিসেম্বরেই নির্বাচন হলো- জানুয়ারীতেই নির্বাচিত সাংসদেরা এখানে বসবাসের জন্য আসতে চাইলেন তখন যদি সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় বসবাসকারী ভাড়াটেরা ছেড়ে যেতে না চায় তাহলে ঠিক কি করবে সরকার।
যদি সাংসদদের এখানে বসবাস, যদিও নির্বাচিত সাংসদ নেই- নৈতিকতার খেলাপী হয় তবে সেটা তাদের নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়াটা কি নীতিসিদ্ধ?অন্য কাউকে ভাড়া দিয়ে দেওয়াটা কি নীতি সিদ্ধ?

ঠিক কোন নীতিতে বৈধ হয় সংসদের জন্য নির্ধারিত মন্ত্রনায়ল কিংবা অফিস থেকে সেনাকর্মকর্তা( অধিকাংশই মেজর পদবিধারী) তাদের ন্যাম ফ্ল্যাট এবং এমপি হোস্টেলের রূমের জন্য এসি এবং অন্যান্য সুবিধার বরাদ্দ নিয়েছেন এ বিষয়টা।
এসব স্থানে যারা বসবাস করছেন তারা রিক্যুইজিশন পেয়েছেন- তবে রিক্যুইজিশনের শর্ত হিসেবে কি তাদের এসব বিলাসদ্রব্য নির্বিচার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে?
তারা যে বিলাসিতা করছেন এটা কি নৈতিকতার পরিপন্থি নয়?

আমার সামরিক বিরোধিতার অভিযোগ মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে এর সাথে আরও কিছু বিষয়ে বলতে চাইছি- দুর্নীতি নির্মূলের মহান বানী দেওয়া সত্ত্বেও দুদক নিজেই দুর্নীতি পরায়ন হয়ে উঠেছে। অপরাধ নির্মূল কমিটির সদস্যরাও এখন জামিন প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়েই ঘুষ নিচ্ছেন।
কদিন আগেই ধানমন্ডীতে গ্রেফতার হয়েছিলেন কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার- তাদের পক্ষ থেকে ঘুষ প্রদান করা হচ্ছে এবং আশংকা( আশা শব্দটাই বোধ হয় তাদের জন্য মানানসই) করা হচ্ছে তাদের অন্তত ২ জন জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন অতিশীঘ্রই।

আমাদের স্বদেশ অবশ্য লংকার মতোই-
হনুমানের আগুনে জ্বলছে- তবে রাবনের কমতি নেই- যেই যাচ্ছে সেই ।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমাদের স্বদেশ অবশ্য লংকার মতোই-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।