গোলাপ

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: শুক্র, ১৩/০১/২০১২ - ১১:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ঈশ্বরের সাথে শেষবার দেখা নারায়ণগঞ্জের এক অন্ধকার ঘরে। অবশ্য বেশিক্ষণ অন্ধকার থাকে না তা। ঈশ্বর এসে চুলের মুঠি ধরে নামিয়ে নেয় মাটিতে। তারপর লাথি দিয়ে একেবারে সিঁড়ির শেষ ধাপে। আমাদের সবাইকে এক রুমে বন্দী করে ফেলে। এরপর দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। আমি না চোখের সামনে আর ঈশ্বরকে দেখি না।
দেখি আমাকে, আমার মাকে, আমার নানীকে।


ঈশ্বরের কথা আমার কানে প্রথম যখন আসে তখন আমি মায়ের পেটে।
নানীর কাছে এই গল্প বহুবার শুনেছি।
বাবার মাথায় বন্দুক। মার পেটে আমি। সব শেষ হয়ে যাচ্ছে তবু মা’র আমাকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা। শুধুই আমাকে।


প্রথম যখন দেখি তখন আমার বয়স চার। ভাসাভাসা মনে আছে।
আমি আর মা ঘুমিয়ে ছিলাম।
হঠাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার মুখ নাক বন্ধ হয়ে আসে। আমি হাউমাউ করে কাঁদতে চাই, কিন্তু না. কোনকিছু দেখতে পারি না, বুঝতে পারি না।
যখন চোখ খুলি তখন কানে আসে মৃদু কান্না আর প্রলাপের শব্দ। চোখ খুলেই মার কথা মনে পড়ে। কিন্তু না, মা নেই। দূরে পুড়ে যাওয়া বাড়ির ভগ্নাবশেষ দেখতে পাই। নানীর কন্ঠে তখনও তার নাম।


ঈশ্বরের সাথে দ্বিতীয়বার আমার দেখা শিবালয় স্টেশনে। বয়স আমার তখন দশ। দিনে ভিক্ষা করি আর রাত কাটাই স্টেশনে। নানী আর আমি।
নানী হাঁটতে পারে না, তাকে কাঠের চেয়ারে করে হাঁটি আর ভিক্ষা করি।
সে রাতেও আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম।
ট্রেন আসে আবার চলে যায়।
হঠাৎ কোথা থেকে কতগুলো লোক এসে আমাদের ধরে নিয়ে গেল। নানী কত কাঁদলো ওরা শুনলো না, নিয়ে গেল আমায় আর আমার মত ছোট ছোট বাচ্চাদের। নানী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। ওদের ঢাক্কায় নানী গিয়ে পড়লো রেলের উপরে জানতেও পারলাম না সে বেঁচে আসে কি মরে গেছে।
পরে যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি এক রুমে, আমার পিঠের বাম পাশে ছোট একটা কাটা দাগ। উঠতে কষ্ট হচ্ছে।


ঈশ্বরের সাথে আমার তৃতীয়বার দেখা ঢাকার রাস্তায়। আমি তখন গোলাপ বিক্রি করি আর শাহবাগের এক ছোট্ট কোণায় থাকি।
আলমের সাথে পরিচয় হয় গোলাপ বিক্রি করতে গিয়ে। বয়স তখন ১৮ আমার। আলম স্বপ্ন দেখায় আমিও স্বপ্ন দেখি। বাহারী স্বপ্ন।
ঢাকার রাজপথ তখন উত্তাল। আলম বলে, ‘তোকে নিয়ে অনেক দূরে যাইবার মন চায়। একলা দ্বীপে নোঙ্গর ফেইলা ঘর বাধবার মন চায়।”
একদিন ভোরে আমি আর আলম রওনা দেই। আমার ঈশ্বরের সাথে, ভালবাসার সাথে।
সেদিন রাতে আমি প্রথম বিক্রি হই।


নানী প্রতি রাতে তার গল্প শোনাতো । ঈশ্বরের গল্প।
“ঈশ্বর আছেন আমার মধ্যি, তোর মধ্যি, সবার মধ্যি।”


মন্তব্য

উচ্ছলা এর ছবি
নীলকান্ত এর ছবি

দুনিয়ার তাবত কিছুই সুন্দর।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।


অলস সময়

ফাহিম হাসান এর ছবি

ভালোই লাগলো। ইদানিং কম দেখা যায় আপনাকে, ঘটনা কী?

নীলকান্ত এর ছবি

কোথায় কম দেখলেন ফাহিম ভাই, বুঝি নাই অ্যাঁ


অলস সময়

তিথীডোর এর ছবি

চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নীলকান্ত এর ছবি

হাসি


অলস সময়

তাপস শর্মা এর ছবি

ছোট্ট অথচ অনেক কথা বলা হয়ে যায়... চলুক

নীলকান্ত এর ছবি

জীবন অতি তুচ্ছ জিনিস। একবাক্যেই এর ইতি টানা যায়।


অলস সময়

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

নীলকান্ত এর ছবি

হাসি


অলস সময়

হাসিব এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।