আশীবিষে ধ্বংসিল যারে : বড়শি কবিতানামা

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১১/০৭/২০১২ - ৯:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পৃথিবীতে সমকালে তিনটি ঘটনা ঘটেছে।
এক. হিগস-বোসন বা ঈশ্বর কণা আবিস্কৃত হয়ে গেছে। ঘটনাচক্রে এই বোসন বাবু বাংলাদেশ ভূখণ্ডেরই।
দুই. কবি রাজু আলাউদ্দিন বাংলাদেশের সাহিত্য-রাজনীতির দুর্বৃত্তদের ঠিকুজি খোলাসা করে দিয়েছেন।
তিন. কবি মাসুদ খান এই সাহিত্য-রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের বন্দনা করেছেন।

এই তিনটি ঘটনাতেই কোনো না কোনো ভাবে ঈশ্বর উপস্থিত।

কবি তুমি কে: ঈশ্বর না শয়তান---------
হিগস-বোসন কণা নিয়ে লেখা হয়েছে। হচ্ছে। হবে। এটা বিজ্ঞানীদের সেক্টর। বিজ্ঞান রহস্যে বিশ্বাস করে না। রহস্য উদ্ঘাটন করাই তার কাজ। আর যাদু বিদ্যা রহস্য ছাড়া অচল। এ কারণেই চিরকাল যাদু বিদ্যা বিনোদন এবং প্রতারণার ব্যবহৃত হয়েছে।

বাংলাদেশে এরকম একটি রহস্যজনক বিষয় নিয়ে অলস-দুপুর নামে একটি অন্তর্জাল পত্রিকায় কবি রাজু আলাউদ্দিন কথা বলেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশে সাহিত্য-রাজনীতি আছে—সেখানে দুর্বাত্তায়নটাও ঘটেছে। সাক্ষাৎকারগ্রহণকারী এই দুর্বৃত্তদের চাঁইদের একটি তালিকা তাঁর সামনে হাজির করলে তিনি কোনো রাখোঢাকো না করে সোজা বলে দিয়েছেন, হ্যা, এরাই বাংলাদেশের সাহিত্যিক দুর্বৃত্ত। কবি মাসুদ খান আবার একই সময়কালে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে এই দুর্বৃত্ত তত্ত্বের প্রবক্তা হিসেবে তাদের ঈশ্বর রূপে প্রতিনিধিত্ব করে ফেললেন। তার এই ঈশ্বরমহিমার জোরালো একটা সমর্থন পাওয়া যায় মাহবুব মোর্শেদ সম্পাদিত অন্তর্জাল পত্রিকা সাময়িকীতে।

দুর্বৃত্ত কবিতালিকা---------
কবি দুর্বৃত্তদের একটি তালিকাটা এইরকম : মাসুদ খান-সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-সাজ্জাদ শরিফ- মজনু শাহ্ এবং হালের সোহেল হাসান গালিব। এরা সবাই কবি। এর মধ্যে আরও কয়েকটি নাম হয়তো বাদ পড়েছে।

এদের মধ্যে মাসুদ খান কথা কম বলেন। তার হয়ে অন্যেরা বলেন। সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ প্রচুর কথা বলেন। সাজ্জাদ শরীফ চিন্তা এবং তৎপরতার দিকে থেকে সাহিত্যরাজনীতির একটি সূতো ধরে আছেন। মজনু শাহ কবিতা লেখেন। চিন্তার দিক থেকে মাসুদ-সাজ্জাদ সূতোর ভেতরে-বাইরে থাকেন। ফাইনালি সেই সূতোর দোলানীতেই ফিরে যাওয়া ছাড়া তাঁর উপায় থাকে না। সোহেল হাসান গালিব এই সূত্রোক্ত সন্ত্রাসের নব্য মাকড় হিসেবে নিজেকে তৈরী করছেন-- বোঝা যায় তার অতি তৎপরতায়। এ তালিকায় ব্রাত্য রাইসু নামের একজন বাদ পড়েছেন। হয়তো তাকে দুপুর মিত্র বা রাজু আলাউদ্দিন কবি বলে মনেই করেননি।

কবিরাজ এবং কবিপ্রজা-----
আশির দশকের কবি মাসুদ খান। কবিতা লেখার বয়স তিরিশ পার করে দিয়েছেন। কবি রাজু আলাউদ্দিন তাকে শুধু কবি নয়—গুরুত্বপূর্ণ কবি হিসেবেই দেখেন। রাজু আলাউদ্দিনের ভাবনার জগৎটা কুয়ো থেকে সাগরে আছে। সে কারণে তিনি সাহিত্যের দুর্বৃত্তায়নের কথা বলতে গিয়েও একদেশদর্শীর মত কবি মাসুদ খানের কবিকীর্ত্তিকে বাতিল করেননি। তাকে গুরুত্বপূর্ণ কবি হিসেবে বিবেচনা করে রাজু আলাউদ্দিন নিজের অরাজনৈতিক অবস্থানটাই পরিস্কার করে দিয়েছেন। তবে তাঁর বিশ্বপরিমণ্ডলের কাব্য ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে মাসুদ খানকে শুধু সেরা কবি বলতে নারাজ। সেরার ধারণাটাই রাজু আলাউদ্দিন বাতিল করেন। তিনি মনে করেন,

‘আমাদের একটা আধি হচ্ছে একজনের বেশি মেনে না নেওয়া। অন্য দেশের উদাহরণ না দিয়ে আমাদের দেশের ছয়ের দশকের কবিদের কথাই ধরুন। মান্নান সৈয়দ, রফিক আজাদ, মুহাম্মদ নুরুল হুদা, আবুল হাসান, নির্মলেন্দু গুণ -এরা সবাই কিন্তু কবি হিসেবে কেউ কারো চেয়ে খাটো নন। এদের প্রত্যেকের প্রবণতাও ভিন্ন, ভাষাভঙ্গীও আলাদা। এদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেয়া এবং প্রধান হিসেবে দেখানো মানে হয় আমাদের রুচির বিস্তারের অভাব অথবা নিহিত দুর্বৃত্তপনা ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাংলা ভাষায় আর কোন নজির নেই যিনি তাঁর সমকালের অতুলনীয় প্রধান কবি হিসেবে ছিলেন। এগুলো হচ্ছে হীনম্মন্যতা ও মুর্খতা থেকে উত্থিত বিষয়।‘

মাসুদ খান তার সাক্ষাৎকারে উল্লেখযোগ্য কবিদের তালিকা প্রদান করেছেন সেখানে অনেকেই বাদ পড়েছেন। অনেকের মতো কবি রাজু আলাউদ্দিনের নাম না আসাটাই স্বাভাবিক। মাসুদ খান কবি তালিকায় নাম নিয়েছেন এমন কিছু কবিদের—যারা একটি মৌলবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেন। এই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর লোকজনের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার মধ্যে দিয়ে কবি মাসুদ খানও নিজের রাজনৈতিক-সাহিত্যিক আদর্শের পরিচয়টি প্রকাশ করেছেন।

তাহলে মাসুদ খান একটি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কবি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে কি করে কবিদের রাজা অর্থে কবিরাজ হতে পারেন? পারেন। সে যোগ্যতা তাঁর নিজের কাছে আছে। যোগ্যতার মানদণ্ডটি তিনি নিজেই বলেছেন সাক্ষাৎকারে। এটা তাঁর সাক্ষাৎকারে বিকল্পভাবে বিবৃত হয়েছে যে, আশির বাঁকবদলের কারণে তাঁকে কবিরাজ গণ্য করা ছাড়া এই কৌমের কোনো উপায় নেই। তাহলে আশির বাঁক বদলই আসল ঘটনা। ঘটনাটি কী আশির বাঁক বদলের?

বাঁক কাঁধে বাক-ফেরীঅলা---------------------
নদীর বাঁক বদল হয়। এখন কবিতা বা সাহিত্যেরও বাঁক বদল হতে পারে। বাংলা ভূখণ্ডে সাহিত্যে বাঁক বদল শব্দ রবীন্দ্রনাথই প্রথম ব্যবহার করেন। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এই শব্দটিকে লাইম লাইটে নিয়ে আসেন সাজ্জাদ শরীফ। সাজ্জাদ শরীফ কে? সাজ্জাদ শরীফ প্রথম আলো নামে বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক ছিলেন। এখন আরও উঁচু পদে বসে বদলে যাও বদলে দাও-এর বাঁক কাঁধে করে ফেরী করছেন। তাঁর একটি কবিতার বই আছে। নাম ছুরি চিকিৎসা। সেখানে ২২টি কবিতা আছে। তাঁর চুল পাকা বয়স অব্দি এই ২২টি কবিতাই তিনি বাংলাদেশের আঞ্চলিক কাব্যাকাশে উপহার দিয়ে রেখেছেন। তিনি মনে করেন, আশিতে গাণ্ডীব নামে একটি লিটিল ম্যাগাজিন করে বাংলাদেশের কবিতার গাঙটির বাঁক বদল ঘটিয়ে মরা সোঁতাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এটা তারা না করলে বাংলাদেশের কবিতা আশিপূর্বের আশীবিশে দংশিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যেত। তিনি হলেন সেই বিখ্যাত গাণ্ডীবের পঞ্চপাণ্ডবের এক পাণ্ডব।

গাণ্ডীব এবং পাণ্ডবের : পাঁচটি ছেলের ছয়টি বাপ---------------------
গাণ্ডীব শব্দটার মধ্যে কিছু রহস্য আছে। এটা মহাভারতের বীর অর্জুনের ধনুকের নাম। সেকালে ধনুকই ছিল মারনাস্ত্র। মানুষ মারার কাজেই ধনুক ব্যবহার করা হত। সভ্যতা নির্মাণে ধনুকের কোনো অবদান আছে বলে জানা যায় না।

অর্জুনের পিতার নাম পাণ্ডু। পাণ্ডুর নামে পাঁচটি ছেলে ছিল। ঘটনাচক্রে তিনি ছিলেন সন্তানউৎপাদন ক্ষমতাহীন বা বাজা। সেকালে সকল স্ত্রী লোককেই গরুর মত মনে করা হত। প্রয়োজনে স্ত্রীদেরকে ভীন্ন পুরুষের অঙ্কশায়িনী করানো হত। পাণ্ডুর নিজের সন্তান উৎপাদন করার ক্ষমতা নেই বলে পাঁচটি পুরুষ বলশালী পুরুষকে ডেকে আনলেন। এই বলশালী পুরুষ পাঁচজন হলেন—ধর্ম, বায়ু, ইন্দ্র, অশ্বিনীকুমাবংশের দুজন। তাঁরা পাণ্ডুর দুই স্ত্রীর গর্ভে পাঁচটি সন্তানের বীজ প্রদান করল। এই পাঁচটি সন্তানের নাম যথাক্রমে যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। মাহারাজ পাণ্ডুর নামে এই পাঁচটি ছেলেকে পঞ্চপাণ্ডব বলা হত। একটির‌ও আসল পিতা পাণ্ডু নন। তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের জন্মদানকারীর নাম ইন্দ্র। ইন্দ্র স্বর্গের রাজা। তার চেয়েও বড় পরিচয় তিনি নারীলোলুপ। এক নারীর অভিশাপে তার দেহ সহস্রযোনীচিহ্ণিত হয়েছিল।

গাণ্ডীব পত্রিকার নামটির পৌরাণিক ভাষ্য এই রকম। যে কোনোভাবেই হোক না পাঁচজন কবি গাণ্ডীব নামে একটি পত্রিকা বের করেছিলেন। তারা নিজেদেরকে পাণ্ডব বলে গর্ব বোধ করেন। গাণ্ডীব পত্রিকার ইশতেহার লিখেছিলেন সাজ্জাদ শরীফ। সেখানে এই বাঁক বদলের ইঙ্গিতটি দিয়েছিলেন। সাজ্জাদ শরীফের এই ইশতেহার লেখার ঘটনাটি আমাদের মনে পড়ায় একটি প্রবাদ যে, আসম রব বাংলাদেশের প্রথম পতাকা তুলেছিলেন—আর বাঁশটি কেটেছিলেন আরেকজন। এর আগে পরে আর কিছুই নেই।

ইশতেহার মেনে কি কবিতা হয়? শিল্প হয়? যদি হয় সেটা কবিতা নয়। শিল্পও নয়। সেটা একটি চেতনাবিরোধী মিশন। এই চেতনার নামটি মুক্তিযুদ্ধ হতে পারে কিনা ভাববার যথেষ্ট কারণ আছে।

সাজ্জাদ শরীফ পশ্চিমবঙ্গের একজন কবি রনজিৎ দাশকে নিয়ে দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিতা নামে একটি বই সম্পাদনা করেছিলেন। সেখানে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, বাংলাদেশের কবিতা আশিপূর্ব আর আশিউত্তর—এই দুইভাগে ভাগ করতে হবে। আশিপূর্ব কবিতা রাজনীতির দায় মিটিয়েছে। সেগুলো আসলে কবিতার নামে গলাবাজি। পাকিস্তানপন্থা-সামরিক শাসক-যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। সেটা সহ্য করা কঠিন। ফলে তিনি বা তারা--পঞ্চপাণ্ডব গাণ্ডীব পত্রিকার মধ্যে দিয়ে কবিতার এই অসহনীয় বাঁকটিকে মেরে-কেটে একটা ভীন্ন দিকে চালান করে দিয়েছেন। ফলে কবিতা রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশের কবিতা কবিতার দিকে ফিরেছে।

বাঁক তো একটি নয়—বহু বাকের সমাহার----------------
সাজ্জাদ শরীফদের এই বাঁক বদলের বয়ানটি বাংলাদেশের কবিতার ইতিহাস নয়। হতে পারে না। সাহিত্যের ইতিহাসে দশক বা বাঁক বদল বলে থাকার কথা নয়। এটা দশক বা বাঁক বদল শব্দগুলির আড়ালে নিজেদের জন্য একটা এপিটাফ রচনা যে, হ্যা, আমরাও ছিলাম। আমরা যেন মান বিবেচনার প্রশ্নে বাদ না পড়ে যাই। কবিতা না থাকুক-- আমাদের নাম যেন কবিসভায় থাকে।

বাঁক বদল কোনো সামরিক-ক্যুকর্ম নয়। নয় কোনো আধিভৌতিক ঘটনা। পঠন-পাঠন-জ্ঞান-প্রযুক্তি-দর্শন-রাজনীতি স্থির কোনো বিষয় নয়। নিয়ত পরিবর্তিত হয়ে বিকশিত হচ্ছে। ফলে বাঁক বদলের কোনো তকমা থাকার কথা নয়। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাঁকা চোখে না দেখে সোজা চোখে দেখলে একটি নয়—বহু বাঁকের সন্ধান মেলে।

বাঁক বদল যদি বলতেই হয়—বাংলা সাহিত্যে সব সময়েই বাঁক বদল হয়েছে। তালিম হোসেন-গোলাম মোস্তাফা-ফররুখ আহম্মদরা যখন পাকিস্তানী ধারার হিজাবি কবিতা লিখেছেন, তখন শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হকরা শুদ্ধ প্রেমের কবিতা লিখে একটা বাঁক বদল ঘটিয়েছেন। একই সময়ে আব্দুল মান্নান সৈয়দ, শহীদ কাদরী, সিকদার আমিনুল হক আরও বিশুদ্ধ ধারায় চলে এসে উপরিতল থেকে নিম্নতলেও ডুব সাঁতার দিয়েছেন। সেগুলোও তো একটি বড় বাঁক ছিল।

আবার আবুল হাসান, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, দাউদ হায়দার, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, মোঃ নূরুল হুদা তো আরেকটু উচ্চস্বরে কবিতা নিয়ে এগিয়েছেন। সেটাও একটা বাঁক। এদের মধ্যে আবুল হাসান, মোঃ রফিক কি রাজনীতি থেকে একটু বেশী দূরে থেকে সত্তরের নিজেদের মধ্যে বাঁক বদল করেন নি? আশিতে এসে খোন্দকার আশরাফ হোসেন, রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, মুহাম্মদ সাদিক, ইকবাল আজিজ, শামীম আজাদ, সৈয়দ তারিক, জাহিদ হায়দার, আলতাফ হোসেন, মারুফ রায়হান, সাইফুল্লাহ মামুদ দুলাল কি পূর্বসূরীদের চেয়ে ভীন্নভাবে লেখেন নি? লিখেছেন। এটাও ছিল বড় ধরনের বাঁক। সেক্ষেত্রে আমাদের আত্মপরিচয়, ইতিহাস, আন্দোলন, সংগ্রাম, ভাষা, দর্শনকে নিয়েই তারা জীবনের গভীর থেকে কবিতা তুলে এনেছেন। কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন এজন্য লিটিল ম্যাগাজিনও করেছেন শুধুমাত্র কবিতাকে কেন্দ্র করে। সে সময়টিতে শুধু আধুনিকতা নয়—উত্তরাধুনিকতাসহ সমকালের দর্শন ও সাহিত্যের ডিসকোর্সগুলোও আলোচনা করেছেন। সে পত্রিকাটি এখনো চলছে—নাম একবিংশ। যদি আশির বাঁক বদল বলতেই হয়—তাহলে তার পুরোধাঁ হিসেবে গাণ্ডীবের পাণ্ডব সাজ্জাদ শরীফ নয়, মাসুদ খানও নয়, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজও নয়—বলতে হবে কবি-সম্পাদক খোন্দকার আশরাফ হোসেনের নামটি। মাসুদ খান এই উজ্জ্বল কবির নামই বলেন নি। কারণ খোন্দকার আশরাফ হোসেন মাসুদ খানের রাজনৈতিক ধারার লোক নন। তাঁর নাম নিলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নাম নেওয়া হয়ে যায়। নির্মোহভাবে কবিতার ইতিহাস বিচার করলে দেখা যায় এই রকম অনেক উজ্জ্বল বাঁকের মধ্যে সাজ্জাদ শরীফ-মাসুদ খানদের ক্ষুদে বাঁকটিই হারিয়ে যায়।

সে সময়ে শুধু গাণ্ডীব নয়—কবিতা নামে একটি উজ্জ্বল কবিতাপত্রিকা ছিল। সম্পাদনায় ছিলেন আবিদ আজাদ। সহ-সম্পাদক কাজল শাহনেওয়াজ। লিরিক, নিসর্গ, শিল্পতরু, অচিরা, অনিন্দ্য, সংবেদ, চিহ্ণ, উঠপাখি পত্রিকার অবদান কি কম আছে এদেশের কবিতার ইতিহাসে? একাত্তরের পরে আবুল হাসনাতের সম্পাদনায় প্রকাশিত গণসাহিত্য পত্রিকাটি সে সময়ের উজ্জ্বল কবিতা প্রকাশ করেছে। তরুণদের কাছে কবিতার সর্বশেষ অগ্রগতিটা তুলে ধরেছে। মাসুদ খানের এই বাঁক বদলের তফসীরে এদের নাম নেই।

সাক্ষাৎকারে মাসুদ খান তাঁর সোলেমানী তরবারী দিয়ে খান খান করে দিচ্ছেন শামসুর রাহমানকে। পক্ষান্তরে পতাকার মত উর্দ্ধে তুলে ধরছেন দুজনকে। এই দুজনের একজন আল মাহমুদ। অন্যজন ফরহাদ মজহার। আল মাহমুদ ষাটের দশকের উজ্জ্বল কবি। তাঁর একটি রাজনৈতিক বিশ্বাস আছে। সেটা জামায়াতি ইসলামীর সঙ্গে যায়। কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে এই মানবতাবিরোধী রাজনৈতিক আদর্শটি প্রচার করেন নি। তার চেয়ে নারীপ্রেম-দেহাকাঙ্ক্ষার কবিতাই লিখেছেন বেশী। কিন্তু ফরহাদ মজহার রাজনৈতিক আদর্শ ও তৎপরতার সঙ্গে জামায়াতে গভীরতর কাফেলার শরীক। তার গদ্য-পদ্য-বক্তব্য সবই এই মৌলবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটা প্রকাশ করে। তার এই মৌলবাদী-পাকিস্তানপন্থার প্রকাশ্য কাব্যকীর্তির প্রথম নামটি এবাদতনামা। মাসুদ খান এই এবাদত নামাকে শ্রেষ্ঠ কবিকৃতি বলে ঘোষণা করেন। অথচ এবাদতনামা আদতে পাকিস্তানপন্থার তমুদ্দুনীয় চিন্তার আশীবিষ ছাড়া আর কিছুই নয়।

বাংলাদেশের কবিতার ইতিহাস : আশি থেকে নয়---------------
বাংলাদেশের কবিতার ইতিহাসটি বায়ান্ন থেকে ধরা যেতে পারে। এই সময় থেকেই বাঙালীর আত্মপরিচয় সুস্পষ্ট হতে থাকে। পাকিস্তানী প্রতিক্রিয়াশীল শাসনশোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবীটি প্রবল হতে থাকে। একাত্তরে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তি যুদ্ধ করেই পাকিস্তানপন্থাকে কবরে পাঠিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়। এই মুক্তিযুদ্ধে কবি-সাহিত্যিকরাও বড়ো ভূমিকা রেখেছিলেন। কবি রফিক আজাদের মতো অনেকেই অস্ত্র হাতে হাতে নিয়েছিলেন। অনেকই তাদের কলমকে অস্ত্র বানিয়েছিলেন। শামসুর রাহমান লিখেছেন বন্দী শিবির থেকে নামে অবিনাশী কবিতাগুলো। এই কবিতাগুলির একটি শব্দও কি বাহুল্য ছিল? অতিকথন ছিল? এই অভিযোগ টেকে না। এই কবিতাগুলোর মধ্যে দিয়েই আমাদের ইতিহাসটি উজ্জ্বলভাবে জেগে আছে। এটা অমোচনীয়।

রাজনীতির বাঁক বদল: কবিতার বাঁক বদলের হদিস--------------
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে এদেশের রাজনীতিকে আবার পাকিস্তানপন্থার দিকে প্রাতিষ্ঠানিক বাঁক বদল করানোর চেষ্টা করা হয়। বন্দুকের নল দিয়ে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বাঙালি জাতির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে—চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। কবিতা বা সাহিত্যের ক্ষেত্রে একই দশা ঘটে।

কিন্তু নির্মলেন্দু গুণ নামে এক কবি এই কঠিন সামরিক শাসনের কালে সরকারী অনুষ্ঠানেই একটি কবিতায় বলে ফেলেন—আমি শেখ মুজিবের কথা বলতে এসেছি। এই কবিতার মাধ্যমেই পনেরই আগস্টের পাকিস্তানপন্থা ভয় পেয়ে যায়। তারা বুঝতে পারে কবি-লেখকদের বদলানো সহজ নয়। কোনো না কোনো ফাঁকে তারা আবার বাংলাদেশ পন্থাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। বঙ্গবন্ধু আসবে। বায়ান্ন আসবে। গণঅভ্যুত্থান আসবে। তাদের সংখ্যা বিপুল। এরা এলে পাকিস্তানপন্থা অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে পাকিস্তানপন্থা-ক্যুদেতাপন্থা মনে করে যে, সাহিত্যের সবচেয়ে সরব অংশ হিসেবে কবিতায় একটা বাঁক বদল করা দরকার।

এই বাঁক বদলটির কথা কবি মাসুদ খান বলছেন। আর করে ফেলছেন সাজ্জাদ শরীফরা আশির দশকে। আশি দশকটি অংকের হিসাব ধরে একটু সার্কাসটিকভাবে বলা যায় ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত গণ্য করতে হবে। তারা আশিপূর্ব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাতিল করার চেষ্টা করলেন বাঁক বদলের কথা বলে। কবিতার ক্ষেত্রে তারা বিরাজনীতিকরণের নামে পাকিস্তানপন্থাকে সুকৌশলে আমদানী করে ফেললেন। এটা যে তাদের একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল সেটা পরবর্তীকালে তাদের পীরবুজুর্গগণের ফিকিরফোকরে টের পাওয়া যায়।

এদের কবিতায় তাই মুক্তিযুদ্ধ বা বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের মত মহৎ ঘটনাবলীর চিহ্ণ দেখা যায় না। মাসুদ খানই তার বড়ো উদাহরণ। এক চোখার মত তার আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণাকারী কোনো কবির নাম নেওয়া থেকে তিনি বিরত থেকেছেন। যাদের নাম নিয়েছেন, যেমন শামসুর রাহমানকে নিয়েছেন—তাঁকে কবিতার দুষ্টলোক হিসেবে চিহ্নিত করে ছিন্নভিন্ন করতেই নিয়েছেন। শামসুর রাহমানকে অভিযুক্ত করেছেন—তিনি কবিতায় রাজনীতি, অতিকথন, ফেনানো, তালিকাবদ্ধতা, পুনরাবৃত্তি, শিথিলতার দোষে দুষ্ট।

কবি শামসুর রাহমান জীবনে বহু কবিতা লিখেছেন। কবিতা এক রকম নয়—বহু রকম হয়। তিনি বহু রকম কবিতা লিখেছেন। বহুভাবেই তিনি আলোচিত হবেন এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁকে বাতিল করা যাবে না। কবিতা বিচারের বহুপন্থা আছে। একভাবে তাঁকে বাতিল করলে অন্যভাবে তিনি জেগে ওঠেন। কারণ তিনি বাঙালির জীবনযাপন, আন্দোলন সংগ্রাম আনন্দ বেদনা প্রেম অপ্রেমকে ধারণ করেছেন। বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট ও সোচ্চার। সে কারণে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মৌলবাদীদের হামলার শিকার হয়েছেন।

শামসুর রাহমান বিরোধিতার নামে মাসুদ খানের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থানটি স্পষ্ট হয়। এবং যতদূর মনে করা যায়—মাসুদ খানের একটি কবিতাও খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মুক্তিযুদ্ধ আছে। কবিতায় বিরাজনীতিকরণের নামে মাসুদ খানরা আসলে মুক্তিযুদ্ধবিহীন করার পয়তারা করেছেন। এটাই এদের বাঁক বদলের পেছনের কাহিনী। এটা আসলে গাঙের বাঁক বদলের মতো ব্যাপার নয়—এটা বাংলাদেশ পন্থা থেকে পাকিস্তানপন্থার অভিমুখে বাক বা বাক্য বদল করা।

এই বাক বদলকারীদের শ্রেণীভাগ--------------------------
বাংলাদেশে এই বাঁকবদলকারীদের মধ্যে দুটো ধারা ছিল। একটার নেতৃত্ব দিতেন কবি-গবেষক আব্দুল মান্নান সৈয়দ। এঁরা যতো না রাজনীতিক তার চেয়ে অনেক বেশী কবিতালগ্ন। অপর ধারাটি এই গাণ্ডীব ওরফে পঞ্চপাণ্ডবগণ। এক্ষেত্রে কয়েকটি ঘটনা বিবেচনায় আনা যেতে পারে। এক. আশির দশকে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম পাকিস্তান থেকে ফিলে এলো সামরিক শাসকদের প্রশ্রয়ে। দুই. মার্কিন দেশ থেকে এসে গেলেন কবি হুমায়ূন কবীরকে হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত চিনাপন্থী ফরহাদ মজহার। এই দুব্যক্তিই একই পরিকল্পনার দুই কারিগর। গোলাম আযম ও মজহারের অর্থের কোনো অভাব হয়নি। গোলাম আযম স্বশরীরে রাজাকারদের সংগঠিত করতে শুরু করে। আর মজহার বাঁকবদলকারীদের নেতৃত্বগ্রহণ করে।

ফলে গাণ্ডীব থেকে কিছু পাণ্ডব খসে গেল। কেই পাগল হয়ে গেলেন। কেউ সুইসাইড করলেন। কেউ কেউ ড্রাগ এডিক্টেড হলেন। কেউ কেউ হারিয়ে গেলেন। টিকে থাকলেন অর্জুনের অস্ত্র হাতে সাজ্জাদ শরীফ। অস্ত্রটির নাম সাহিত্য সম্পাদনা। তিনি মজহারের দক্ষিণ হস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। ঢুকে পড়লেন— দৈনিক পত্রিকায়। দ্বায়িত্ব নিলেন সাহিত্য সম্পাদকের। পরিকল্পনা করলেন, কবিতা থেকে রাজনীতি বাদ দিতে হবে। কোন রাজনীতিকে বাদ দিতে হবে? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। অথচ পাকিস্তানপন্থার সংখ্যাগরিষ্ঠ-সংখ্যালঘিষ্ঠদের ধারাণাকে বাতিল করেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। সাজ্জাদ শরীফ বাংলাদেশে ক্ষুদে একটি জঙ্গীবাদী কবিগোষ্ঠী সৃষ্টি করে ফেললেন। এদের সংখ্যা হাতে গোণা। সংখ্যাবাড়ানোর জন্য তারা নানা কায়দায় কবি শিকার করার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু তাদের সংখ্যা ঐতিহাসিকভাবে স্বল্পই থেকে যায়। ফলে নানা মাধ্যমে এদের হাতে গোণা স্বল্প সংখ্যক জঙ্গীবাদী কবিদেরকে অস্তিত্ব রক্ষা করতে অতি মাত্রায় সরব থাকার চেষ্টা হয় নামে ও বেনামে। এই সরবকর্মটি তাই প্রায়শই কোলাহলে পরিণত হয়।

এই ক্ষুদে জঙ্গী কবিগোষ্ঠীর কাজটিই হল সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাবনার পুনরুত্থান ঘটানো।। তাদের দাবী এই সংখ্যা গরিষ্ঠরা এক সময়ে কোলকাতার ব্রাহ্মণ হিন্দু দ্বারা নিপীড়িত হয়েছিল। সুতরাং এই হিন্দুদেরকে বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান আমলে যে উর্দুজবান আশ্রিত ভাষাটির জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল—সেটাকেই ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ধারার মডেল হিসেবে রাইসুদ্দিন ঢালীকে মাঠে নামিয়ে দিলেন। রাইসুদ্দিন ঢালী লিখে ফেললেন পেয়ারাগাছে দোররা কাউয়া কু কু করে ধরনের কবিতা। তাদেরই এক কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ বলে দিলেন-- এই কু কু করে রে কবিতাটি হল বাংলা কবিতার বাঁক বদলের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন। ফলে কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দের অনুসারী কবিগণ এদের থেকে তফাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁদের অন্যতম কবি কাজল শাহনেওয়াজ লিখলেন তাদের জলমগ্ন পাঠশালা কাব্যগ্রন্থটি। রিফাত চৌধুরী লিখলেন ছোটো ইমেজারী কবিতাগুলো। কিন্তু এঁদের কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ বা প্রকল্প না থাকার কারণে এরা লাইম লাইট থেকে একটু দূরে থেকেগেলেন। মুছে গেলেন না। মুছে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ প্রকৃত কবিতার যে স্বতন্ত্র নির্মাণ-- সেটা কোনো ধরনের ক্যুপরিকল্পনার ‘কু কু করা’ ছাড়াই তাঁরা করে চলেছেন।

রুকু করার প্রশ্ন : দুই রকম কোলকাতা—রাজা কোলকাতা, প্রজা কোলকাতা----
কোলকাতার প্রশ্নে মজহার-সাজ্জাদ নিয়ন্ত্রিত দুরকম আইন আছে। প্রথম আইনঅনুসারে তারা নবীন কবিদের উদ্দেশ্যে আইন জারী করে যে, কোলকাতা হল ব্রাহ্মণ্যবাদীদের শহর। এই কোলকাতার দিকে রুকু করবেন না। কোলকাতা তাদের কিছু দিতে পারে না। সুতরাং বাংলাদেশের কবিদের কোলকাতার দাদা কবিদের কবিতা পড়ার দরকার নেই। ওটা নাজায়েজ।
দ্বিতীয় আইনঅনুসারে মজহার-সাজ্জাদ নিয়ন্তিত গোষ্ঠী নেতারা সেই কোলকাতার কবিদেরই নকল করে কবিতালেখেন। এই ধারায় মাসুদ খান, সুমন রহমান, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজরা কবিতা লিখলেন। মাসুদ খান কবিদের তালিকা করতে গিয়ে ভুলেও স্বীকার করেন না বাংলাদেশের কবি রফিক আজাদ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, মোহাম্মদ রফিক, হুমায়ূন আজাদ, সুনীল সাউফুল্লাহর নাম। তাদের বদলে বিমুগ্ধচিত্তে কোলকাতার উৎপল কুমার বসু, বিনয় মজুমদার, শঙ্খ ঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, মৃদুল দাশগুপ্তর নাম করছেন। এটা মাসুদ খানদের একটা ডাবলস্ট্যান্ডার্ড-- সোজা কথায় স্রেফ একটা প্রতারণা। মজার কাণ্ড হল কোলকাতার জীবিত কবিদের অন্যতম উৎপল, জয়, মৃদুল সঙ্গে এদের পানাহার চলে।

নিউ ইয়র্ক পড়লে ক্ষতি হয় না, প্যারিসের কবিতা নিয়ে গদগদ হওয়া যাবে, বার্লিনের কবিতা পড়লে সুস্থ বোধ করা যায়, পিকিংএর কবিতা পড়লে বাসনা পূর্ণ হয়—তাহলে কোলকাতার কবিতায় আপত্তিটা কেন? এই আপত্তির ভেতরে ফাঁকি আছে। একটু চোখ রাখলেই দেখা যায়-- এই সাজ্জাদ শরীফ, মাসুদ খান, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, ব্রাত্য রাইসু, সুমন রহমান (যার কবিতাকে পাত্তাই দেননি মাসুদ খান, অবশ্য তার কোনও কারণও নাই), কামরুজ্জামান কামুদের কবিতা গুড়ো করে পানিতে গুলিয়ে ফিল্টার করলে তার ভেতর থেকে পাওয়া যাবে পশ্চিম বঙ্গের কবি উৎপল, বিনয়, জয়, মৃদুল, রণজিৎদের কবিতার বদহজমকৃত দেহাবশেষ। নিজেরা এই কোলকাতা ছাড়া আর কিছুই নিতে পারেন নি-- কিন্তু তরুণদের সেই কবিতা পড়তে নিষেধ করে দিচ্ছেন ইশতেহারপন্থীরা। এটা সেই ফল্গুধারায় বহমান সাম্প্রদায়িকতা থেকে উৎসারিত। এটাও সেই পাকিস্তানপন্থারই একটা অবদান। এটাকে তারাই বলছেন কৌমের দেশপ্রেম। এটাও পাকিস্তানপন্থাদের এক ধরনের দেশপ্রেমের ছবক।

গল্পকার-উপন্যাসিক-চলচ্চিত্রকার আনোয়ার শাহাদাতের একটি ভাবগত বিপ্লবের মুখোমুখি নামের গল্পে একজন চিনাপন্থী রাজনীতিক ওরফে নেতা ফরিদউদ্দিন মাহতাবের বয়ানে আমরা এই ছবক প্রপঞ্চের একটি ব্যাখ্যা পেয়ে যাই—

দেশপ্রেম হচ্ছে ধরনের ক্রোধ ও ঘৃণা। নিজের দেশের প্রেম জাগ্রত করতে চাইলে অন্য দেশের প্রতি পূঞ্জীভূত করতে হবে ক্রোধ-ঘৃণা ও ক্ষোভ। কার্যত অন্য দেশের সব কিছুর প্রতি এই অনুভূতি জাগ্রত করতে হবে। প্রশ্ন ওঠে তাহলে শত্রু রাষ্ট্র কী? (নেতা এর উত্তরে বলেন) এটা আপনাকে বুঝে নিতে হবে, এ মুহুর্তে আমাদের শত্রুরাষ্ট্র ভারত, তার ভূখণ্ড, তার সংস্কৃতি, তার ধর্ম, তার গণতন্ত্র ইত্যাদি। অর্থাৎ সেমুয়েল জনসন এই কথাটি এক লাইনে বলেছেন--স্বাদেশিকতা হল খচ্চরের শেষ আশ্রয়স্থল।

প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের হিংসা দিয়ে সাহিত্য হয় না—সাহিত্য করতে হলে শিল্পের তাগিদ লাগে। ফলে এদের কবিতা এরা নিজেরা ছাড়া আর কেউ পড়ে না। নিজেরাই লেখক—নিজেরাই পাঠক—নিজেরাই প্রশংসাকারী। নিজেরাই নিজেদের জন্য কবিরাজ পোস্টটির জন্য নিজেদের জন্য মনোনয়ন দেন। এবং এরা বড়শি কবি। এবং নিজেরাই নিজেদের মধ্যে কলহ করেন জানান দিতে চায়—তারা কবি হিসেবে প্রবলভাবে টিকে আছেন। এদেরকে রাজু আলাউদ্দিন কবি-সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এই কবিসন্ত্রাস বা দুর্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে তাদের আসল চেহারাটি খুলে দিয়েছেন।

বড়শি কবিতার দশ দিগন্ত----------------------------
তাহলে বড়শি কবিতা বলে একটা প্রপঞ্চ আমরা পেয়ে যাচ্ছি।
বড়শি কবিতা বিষয়টি কী জিনিস? মৌলবাদ-বিকৃত কাম-নৈরাজ্যের কবিতা হল বড়শি কবিতা। এটা মাসুদ খান কথিত কবিতা-রাজনীতি গোষ্ঠীর জন্য শিকার ধরার ফাঁদ। এই ফাঁদে যাদের ধরা হয় হয় বা হবে—তাদের জন্য কয়েকটি টোপ আছে। যেমন—
১) দৈনিকে কবিতা ছাপার ব্যবস্থা—(দৈনিক প্রথম আলোর সাময়িকী পাতা)।
২) প্রথম আলো বর্ষ সেরা কবি, নবীন কবি পুরস্কার প্রবর্তন।
৩) পুরস্কারপ্রাপ্তদের নিয়ে কয়েকজন আলোচকদের দিয়ে আলোচনা করা।
৪) বই প্রকাশনার ব্যবস্থা করা (প্রথমা ইত্যাদি),
৫) মিডিয়া হাইসে ঢোকার ব্যবস্থা করা (মুস্তফা ফারুকীর দায়িত্বে),
৬) মদ্য-মাদকের ব্যবস্থা করা,
৭) পরকীয়ার জালে পাঠিয়ে দেওয়া।
৮) দেরীদা-ফুকোদের রচনা থেকে কিছু শব্দ সরবরাহ করা।
৯) কবিতাবিষয়ক দুর্বোধ্য আলোচনার ব্যবস্থা করা
১০) নিজেদের বইগুলো তফসীরসহ বিনামূল্যে হাতে গুজে দেওয়া।

বড়শি কবিতার দশ শিকার-----------------------------------
১) মফস্বল থেকে আগত তরুণ
২) মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চিনাপন্থী
৩) কবি যশোপ্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধব্যক্তি
৪) কল্পজীবনে ডিস্টার্বড নারী
৫) আর্থিক দুর্দশাগ্রস্থ কবি
৬) দুশ্চরিত্র কাম অর্থবান প্রবাসী কবি
৭) ছদ্মবেশী জামাতি
৮) মাদকাসক্ত পারভার্টেড যুবক-যুবতি
৯) দুর্নীতিগৃস্থ ক্ষমাতাসীনদের সাহিত্য-সংস্কৃতিবিলাসী সন্তান
১০) বিকৃতকামী মধ্যবয়স্ক যুবক

মাসুদ খান তার নিজের জগতের কবি হিসেবে যেসব কবিদের নাম নিয়েছেন এবং যাদের নামটি নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন (যেমন সুমন রহমান) কোনো না কোনো ভাবে তারা সবাই এই দশ দিগন্ত ও দশ শিকারের অন্তর্গত। এবং এদের মুরশীদ হিসেবে মাসুদ খানের কাছ থেকে যে নামটি পাওয়া যায় সেটি হল বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি ফরহাদ মজহার।

নারীর প্রতি আচরণ দেখে মৌলবাদ চেনা যায়------------------------
লালন ফকিরের নবতর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন ফরহাদ মজহার। এ বিষয়ে বিস্তর বই পত্রও লিখছেন। লালনকে তালেবানপন্থী-মাওবাদী নেতা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। তিনি লালনের সহজ মানুষকে না নিয়ে তার বড়শির আধার হিসেবে নিয়েছেন দেহবাদী কাঠামোকে। তার এই দেহবাদী কাঠামো আর কিছুই নয়—পরকীয়ার অবাধ ব্যবস্থা করা। এটা এমন এক দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া যার মধ্যে দিয়ে তাঁর তরীকাভুক্ত সাহাবীগণের মধ্যে শিকারকৃত নারী কবিদের নিয়ে মাধুর্যভজনের ইশারা পাওয়া যায়। এবং মুরশিদ এই মাধুর্যভজন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তার মুরীদদের মধ্যে ঈর্ষাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে থাকেন। এই ঝগড়া ফ্যাসাদের মধ্যে দিয়েই মুরীদদের তিনি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। পুরুষ কবিরা এই সব মেয়ে কবিদের নামে কবিতা উৎসর্গ করে থাকেন। তাদের সঙ্গ কামনার জন্য আকুল হয়ে থাকেন। তাদেরকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে যে সমরটি সংঘটিত হয় তা আসলে এক ধরনের রহস্যময় ভাষা ও ভঙ্গিতে সাহিত্যবিতর্কের মধ্যে দিয়েই প্রকাশিত। পরকীয়াত্বই এদের গুপ্ত আদর্শ। গোষ্ঠীবহির্ভুত কবিদের দিকে তীর ছোঁড়াই এদের লক্ষ্য। এ বিষয়ে কবি সুমন রহমান নামে এক ব্যক্তির অন্তর্জালীয় কর্মকাণ্ড আদর্শ উদাহরণ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

ফলে এদের কাছে নারী কবিতার ব্যক্তিগত হাতিয়ার হলেও কবি হিসেবে অস্বীকৃত। এবং প্রকারান্তরে নারীরা এদের দ্বারা প্রবলভাবেই শোষিত।

পাশাপাশি মৌলবাদীদের তরিকাঅনুসারে নারীঅধিকারটি স্বীকার করতে তাদের দ্বিধা আছে। একারণেই মাসুদ খান তার সাক্ষাৎকারে কোনো নারী কবির নামই উচ্চারণ করেন নি। এটা তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ থেকেই করেছেন। অথচ বাংলাদেশে নারী কবিদের মধ্যে আয়শা ঝর্ণা, কচি রেজা, জাহানারা পারভীন, ফেরদৌস নাহার, আসমা বীথি, জুনান নাশিত, অদিতি ফাল্গুনী, লুবনা চর্যা, নভেরা হোসেন নেল্লী, রওশন আরা মুক্তা প্রমুখ সুমন রহমানদের চেয়েও অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল কবিতা লিখে থাকেন।

আশি কেন নব্বই, শূণ্যের কবিদের ভয় পায়-------------------------
নব্বই দশক সম্ভবত আশির দশকের চেয়েও সৃজনশীল। মজনু শাহ, মুজিব মেহদী, রাজু আলাউদ্দিন, কামরুল হাসান, মাহবুব কবির, ওবায়েদ আকাশ, কুমার চক্রবর্তী, শামীম কবীর, নভেরা হোসেন, রায়হান রাইন, তুষার গায়েন, খলিল মজিদ, শুভাশীষ সিনহা, আহমেদ মুনীর, বদরে মুনীর, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ, দাউদ আল হাফিজ, মোস্তাক আহমদ দীন, তাপস গায়েন, বায়তুল্লাহ কাদরী, সরকার আমিন, সরকার মাসুদ, আলফ্রেড খোকন, শামীম রেজা, রহমান হেনরী, টোকন ঠাকুর, সুস্মিতা চক্রবর্তী, ফকির ইলিয়াস প্রমুখ কবি পুরো নব্বই দশক জুড়েই সরব হয়ে আশির কবিদের ম্লান করে কবিতা লিখেছেন। আশির কবি মাসুদ খানের চোখে এরা কোনো উল্লেখযোগ্য কবিই নয়।

শূন্য দশকের কবিদের মধ্যেও মাসুদ খান কোনো কবির দেখা পাননি। ফলে তিনি তার কবিতালিকা থেকে সহজেই বাদ দিয়েছেন পিয়াস মজিদ, বিজয় আহমেদ, আন্দালীব আমিন, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, জুয়েল মোস্তাফিজ, নির্লিপ্ত নয়ন, মুয়িন পার্ভেজ, প্রান্ত পলাশ,সফেদ ফরাজী, তারিক টুকু, আপন মাহমুদ, কাজী নাসির মামুন,তুহিন দাস, আবু মকসুদ, সৈয়দ আফসার. পলাশ দত্ত, তনুজা ভট্টাচার্য, সাঈদ জুবায়ের, মেঘ অদিতি, অভিজিৎ দাস প্রমুখ প্রতিভাবান কবিকে। এমন কি মাসুদ খানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সোহেল হাসান গালিবকে কবিদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে নদীকুলে বাস করতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই শূন্যের কবিরা মাসুদ খানকে চ্যালেঞ্জ করেই স্বতন্ত্র মহিমা নিয়ে কবি হয়ে উঠছেন। আশির বাঁককে বদ্ধ কুয়োয় দিকে ছুড়ে ফেলতে সমর্থ হয়েছেন। তারা কুয়োর বদলে সমুদ্রের দিকে যাত্রা করার স্পর্ধা দেখিয়ছেন। এ কারণেই আশির আশীবিষধর মাসুদ খানরা নব্বই ও শূন্যের কবিদের ভয় পান। তাদের নাম উচ্চারণে নীরব থাকেন।

সমু্দ্র নয়—গাঙও নয়—গন্তব্য কুয়ো-----------------
মাসুদ খান উদ্ধৃত কবি গ্রুপটি কৌশলে বাংলাদেশের কবিতাকে কুয়োর মধ্যে ফেলে দিতে চায়। তারা বিশ্বায়নের যুগে একটি আঞ্চলিক সাহিত্যের খোলস দেওয়ার কোসেস করে। তারা চায় এই কবি যেন উন্মুক্ত আকাশের পাখি নয়—কুয়োর ব্যাঙে রূপান্তিরত হোক। তারা সেখানে খুব বেশী হলে মোকাবেলা এবং এবাদাতনামা পড়ে কানার হাটবাজারের একজন রাজাকার হয়ে উঠুক। তারা সাহিত্যের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করুক। তাহলেই তমুদ্দুনপন্থার দিকে আবার ফিরে যাওয়া যেতে পারে।

তাদের এই চাওয়াটা আসলে সোনার পাথরবাটি। এখন ঢাকা যেমন কুড়িগ্রামের অতি নিকটে, কোলকাতাও তাই, নিউ ইয়র্ক আরও নিকটে। টিন ড্রামের লেখক যখন একটি লেখেন সেটা তাঁর দেশ জার্মানীতে প্রকাশিত হয়—একই সময়ে আমরা বাংলাদেশেও পড়ার সুযোগটি পাই। কারো মুখে ঝাল খাওয়ার দিনটি আর নেই। সাহিত্য এখন সীমানাবিহীন হয়ে পড়েছে। তাঁর পাশপোর্ট লাগে না। তাহলে সাহিত্য বা কবিতা কারো নির্দেশনা মানবে কেন? কেন তারা সুনির্দিষ্ট টুপি পরবে? গাণ্ডীবের গান পাউডারে পুড়বে?

নিজের নিয়মে কবি হওয়ার সময়-----------------
অন্তর্জালের মাধ্যমে প্রকাশনার একটি বিকল্প দরোজা খুলে যাওয়ায় কে বা কাহাদের দাবীকৃত কবিরাজ ধারণাটিই বাতিল হয়ে যায় স্বাভাবিক নিয়মে। মাসুদ খান যখন কবিতা লেখেন কানাডায় বসে—ঠিক একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসে কবি আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর হীরক খণ্ডের মতো লেখা কবিতা পাঠকের কাছে পৌঁছে যায়। কবি কাজল শাহনেওয়াজের কবিতা এখন আর হাতের নাগালের বাইরে থাকে না। কবি জাহানারা পারভীনের কবিতা ভেসে উঠলেই টের পাওয়া যায়—তাকে কারো প্রমোট করার দরকার নেই। রাশিদা সুলতানাকে প্রমোট করতে দেখলে লোকে হাসে। রাইসুদ্দিনের কু কু করে কবিতাটি কখনো কোন ইভটিজারদের মুখে অসভ্যতা হিসেবে ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও থাকতে পারে। সুমন রহমানের দড়ি ছেঁড়া কবিতা পড়লেই যে কেউই বুঝতে পারে দড়ি ছেঁড়া গরুটি উৎপাত করতে বেরিয়েছে।

এটা এখন ভীন্ন কাল। মুক্ত তথ্য-বিশ্বের কাল। জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনের অভিলেখাগার বা আর্কাইভটি সকলের আঙ্গুলের ডগায় এসে পড়েছে। কে কবি--আর কে কবি নয়, কার কবিতা পড়তে হবে--কার কবিতা পড়তে হবে না, কে শ্রেষ্ঠ--কে নিকৃষ্ঠ এইসব নির্দেশদানকারী গুরুবাদ বাতিল হয়ে গেছে। ইচ্ছে করলেই আর কাউকে ওঠানোও যাবে না—নামানোও যাবে না। যে কোন কবি-লেখক নিজের পায়েই দাঁড়াবে। প্রকৃত শিল্পকর্ম স্বমহিমায় টিকবে। ফলে এইকালে ওই ওঠানো-নামানোর বাজীগরদের ভাত মারা গেছে। এখন নিজের নিয়মে কবি হয়ে ওঠার সময় এসে গেছে।

আবু মুস্তাফিজ ওরফে সবুজ বাঘ যখন পিথিমী বলে কবিতা লেখেন তখন এই পিথিমী শব্দটির কাছে তথাকথিত মাসুদিয় বড়শি কবিতা-দোজখটি ভেঙেচুরে গড়িয়ে পড়ে।
বলে, এখন একটি নয়—বহু ঈশ্বরের কাল।

কয়েকটি প্রয়োজনীয় লিংক--------------
১। অর্ধেক পাথর তুমি আজ বালক কবির করতলে]অর্ধেক পাথর তুমি আজ বালক কবির করতলে : অনিন্দ্য রহমান
২। কবি রাজু আলাউদ্দিনের সাথে অনলাইন আলাপ
৩। মাসুদ খানের ভিডিও সাক্ষাৎকার--পার্ট-১, পার্ট-২
৪। আল মাহমুদনামা


মন্তব্য

কালো কাক এর ছবি

বোসন বা ঈশ্বর কণা ? অ্যাঁ

হিমু এর ছবি

সাজ্জাদ শরীসৃপ সম্প্রতি (মানে বছর দেড়েক আগে) ফয়েজ আহমদ ফয়েজের একটি বা দুটি কোবতে উর্দু থেকে তর্জমা করে দৈনিক পেহলে রৌশনিতে পেশ কিয়েছেন। তাই তার মাত্র ২২টি কোবতে, এ তথ্যে গলতি আছে।

ভৈরব থেকে আগত তরুণ দ্বীন মোহাম্মদ কবিদের কলতলায় কলসী কাঁখে আনাগোনা করতে করতে লোম পাকিয়ে এক সময় ঈষাণ জয়দ্রথ আর সুমন রহমান, এই দুই ছদ্মনামের চক্করে ফেঁসে গেলেন। সেদিন দেখি তিনি হুমায়ূনের ইতিহাসবিষ্ঠা নিয়ে ফেসিবাদি জনতার বিরক্ত প্রতিক্রিয়ার সমালোচনায় লিপ্ত। তার মতে, হুমায়ূনের ইতিহাসবিষ্ঠায় ফিকশনের জয় হয়েছে। অথচ যেদিন তিনি পিতৃদত্ত দ্বীন মোহাম্মদ নামখানা প্রমত্তা মেঘনায় জলাঞ্জলি দিয়ে সুমন রহমান ছদ্মনামের আলখাল্লায় নিজের নাঙ্গা সত্ত্বাটি মুড়ে নিলেন, সেদিন থেকেই কিন্তু ফিকশন জয়ী।

রাশিদা সুলতানাকে এখনও প্রোমোট করতে হয় নাকি? সচলায়তনে দ্দীণূ এককালে ব্লগিং করতো, নিজের লেখার ভাঁড়ার ফুরানোর পর রাশিদা সুলতানার লেখা এটাসেটা কপিপেস্ট করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে খুব চোটপাট করতো বেচারা।

কুলদা রায় এর ছবি

আমার তো মনে হয় ফিকশন বিষয়ে দ্দীনুর ধারণাটা পরিস্কার নয়। এই ছেলেটা ব্রিসবেনে টেনে থেকেও মানুষ হল না। কানার হাঁট বাজারের কানাই রয়ে গেল।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

miti এর ছবি

বোসন নিয়ে এই ঘটনার পর ঘরে ঘরে পদাথবিদের আগমন ঘটে গেছে গড়াগড়ি দিয়া হাসি

দ্রোহী এর ছবি

হিগস কণা নিয়ে লেখা বাংলা কবিতা পড়তাম চাই! দেঁতো হাসি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এইটা সবুজ বাঘ বরাবর এক্টা দরখাস্ত করা যায়।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

দ্রোহী এর ছবি

না, না। বাঘাদার কবিতায় চলবে না। নিখিল বঙ্গ কবি সমাজের বজ্জাত শরীসৃপ জাতীয় কোন কবির লেখা কবিতা চাই।

হাসিব এর ছবি

কবিসমাজের মাসকাবারি খিস্তিখেউড় মিস করছিলাম। মাসুদ খান, রাজু আলাউদ্দিনকে ধন্যবাদ এ মাসের বিনোদন যোগান দেবার জন্য।

কবিতা মৃত শিল্প। মানুষ এখন কবিতা পড়ে না। ভবিষ্যতে আরো পড়বে না। বাঁক বদলে উর্ধ্বাকাশে বহু আগেই রওনা হয়েছে কবিতা। যে কবিতা মানুষের কথা বলে না সেই কবিতার জায়গা মানুষের কাছে নেই। উর্ধ্বালোকই চরে বেড়াক সেগুলো।

পঞ্চক এর ছবি

উত্তম জাঝা!

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

লালন ফকিরের নবতর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন ফরহাদ মজহার। এ বিষয়ে বিস্তর বই পত্রও লিখছেন। লালনকে তালেবানপন্থী-মাওবাদী নেতা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। তিনি লালনের সহজ মানুষকে না নিয়ে তার বড়শির আধার হিসেবে নিয়েছেন দেহবাদী কাঠামোকে। তার এই দেহবাদী কাঠামো আর কিছুই নয়—পরকীয়ার অবাধ ব্যবস্থা করা। এটা এমন এক দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া যার মধ্যে দিয়ে তাঁর তরীকাভুক্ত সাহাবীগণের মধ্যে শিকারকৃত নারী কবিদের নিয়ে মাধুর্যভজনের ইশারা পাওয়া যায়। এবং মুরশিদ এই মাধুর্যভজন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তার মুরীদদের মধ্যে ঈর্ষাদ্বন্দ্বের সৃষ্টির দিয়ে থাকেন। এই ঝগড়া ফ্যাসাদের মধ্যে দিয়েই মুরীদদের তিনি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। পুরুষ কবিরা এই সব মেয়ে কবিদের নামে কবিতা উৎসর্গ করে থাকেন। তাদের সঙ্গ কামনার জন্য আকুল হয়ে থাকেন। তাদেরকে নিয়ে যে সমরটি সংগঘটিত হয় তা আসলে এক ধরনের রহস্যময় সাহিত্যবিতর্কের মধ্যে দিয়েই প্রকাশিত।

এই জায়গাটা বান্ধায়া রাখনের মত হইছে।

আমাদের আত্মপরিচয়, ইতিহাস, আন্দোলন, সংগ্রাম, ভাষা, দর্শনকে নিয়েই তারা জীবনের গভীর থেকে কবিতা তুলে এনেছেন। খোন্দকার আশরাফ হোসেন এজন্য লিটিল ম্যাগাজিনও করেছেন শুধুমাত্র কবিতাকে কেন্দ্র করে। যে সময়টিতে শুধু আধুনিকতা নয়—উত্তরাধুনিকতাসহ সমকালের দর্শন ও সাহিত্যের ডিসকোর্সগুলোও আলোচনা করেছেন। সে পত্রিকাটি এখনো চলছে—নাম একবিংশ। যদি আশির বাঁক বদল বলতেই হয়—তাহলে তার পুরোধাঁ হিসেবে গাণ্ডীবের পাণ্ডব সাজ্জাদ শরীফ নয়, মাসুদ খানও নয়, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজও নয়—বলতে হবে কবি-সম্পাদক খোন্দকার আশরাফ হোসেনের নামটি।

বিনয়ের সাথে বলি, আমি যখন ইন্টার পাশ করি, একবিংশকে আমার ৫টা উত্তরাধুনিক-কল্প প্রায়-কবিতা ছাপা হইছিল। এইটা মনে করলাম, কারণ সম্পাদক অধ্যাপক হোসেনকে নানা সঙ্কোচে ধন্যবাদ জানানো হয় নাই। যদিও আমার কবিতা লিখার চেষ্টাটাই একটা ভ্রান্ত ধারমা ছিল হাসি

কবি মাহমুদ বা আল মাহমুদ সম্পর্কে একটা অমূল্য সংগ্রহ ভ্রমণ করতে হবে। মূল পোস্টেও এই লিঙ্কটা সংযোজিত হইলে আরো উত্তম।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কুলদা রায় এর ছবি

সংযোজন করা হল আল মাহমুদনামা।
ইষাণ জয়দ্রথনামা আছে নাকি?

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বোসনটা হিগস-বোসন করে দেন। বোস মশাইয়ের নামটই জড়িত কেবল। ঘটনা আসলে ঘটাইছেন হিগস সাহেবেই। যদ্দুর বুঝি। তারপরও নামে যায় নামে আসে। তুচ্ছ বিষয় হইলেও, মর্যাদার।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আরেকটা বিষয় নিন্মোক্ত তালিকা বিষয়ের মাত্রা অনুসারে সাজানোর দাবী রেখে গেলুম। কেউ করবেন্নাকি?
১) মফস্বল থেকে আগত তরুণ
২) মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চিনাপন্থী
৩) কবি যশোপ্রার্তী অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধব্যক্তি
৪) কল্পজীবনে ডিস্টার্ব নারী
৫) আর্তিক দুর্দশাগ্রস্থ কবি
৬) দুশ্চরিত্র কাম অর্থবান প্রবাসী কবি
৭) ছদ্মবেশী জামাতি
৮) মাদকাসক্ত পারভার্টেড যুবক-যুবতি
৯) দুর্নীতিগৃস্থ ক্ষমাতাসীনদের সাহিত্য-সংস্কৃতিবিলাসী সন্তান
১০) বিকৃতকামী মধ্যবয়স্ক যুবক

আমার টপ ৫ = ২,৭,৩,৯,৪


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"কবি যশলোভী আমলা"-কে তালিকায় ঢোকানোর দাবী থাকলো। এই ক্যাটেগরিতে যারা আছে তাদের নামের লিস্টি বহুত লম্বা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কুলদা রায় এর ছবি

কবি যশোলোভী কবিদের তালিকাও বাদ পড়েছে। আরও কিছু সেক্টর খুঁজে দেখুন। জরুরী কিছু বাদ পড়ল কিনা।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

কুলদা রায় এর ছবি


একটি ঐতিহাসিক ছবি--
দীন মোহাম্মদ ওরফে ঈশান জয়দ্রথের এই জয়দ্রথ নামটির একটি মহাভারতীয় কীর্তি আছে।
জয়দ্রথ হলেন মহাভারতের ভিলেন দুর্যোধনের ভগ্নিপতি। আন্যায় যুদ্ধে কৌরবদের সঙ্গে ছিল। লোকটি ছিল ভয়ঙ্কর পাপিষ্ঠ রকমের লোলপুরুষ। তার চাচতো ভাবী দ্রৌপদীকে পথে একা পেয়ে কিডন্যাপপূর্বক ধর্ষণ করতে গিয়েছিল। দ্রোপদী তাঁকে চপেটাঘাত করে এবং কোনো রকমে নিজেকে রক্ষা করেন। এই অপমানে অর্জুন জয়দ্রথকে নিহত করেন।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

কবি কালিদাস বাচ্চু বিএসসি এর ছবি

নামের কারনে আমাদিগকে নানাবিধ অসম্মানের ভিতর দিয়া যাইতে হয়। বিশ্ববেহায়া এরশাদ ফাসিতে না ঝুলিলেও এরশাদ শিকদার ঝুলিয়াছে। মতিউর রহমান জেলে না ঢুকিলেও মতিউর রহমান নিজামী ঢুকিয়াছে। মাক্সিম গর্কীর মা বাংলার দোকানপাটে দেখা না গেলেও আনিসুল হকের মা ঠিকই ঝুলিতেছে। নামের কারনে ঈশান জয়দ্রথ ওরফে সুমন রহমানদাও পৌরানিক জয়দ্রথের পরিনতি ভোগ করিয়াছেন।

কবি সাজ্জাদ শরিফের স্নেহধন্য লেখিকা শাহিন আক্তার ও সুমন রহমানের মধ্যে গাঢ় বন্ধুত্ব ছিল। সুমন তাহাকে বিশ্বাস করিয়া একটি এনজিওর নিকট একটি প্রকল্পের বুদ্ধি বেচিবার যৌথ পরিকল্পনা করেন। সুমন রাতের পর রাত জাগিয়া হারিকেনের সলিতা খয় করিয়া সেই প্রকল্প প্রস্তাবের খুটিনাটি রচনা করেন। শাহীন সেই শ্রমের ফসলটি স্বীয় বগলে গুজিয়া সেই এনজিওর নিকট বেচিয়া বিল উত্তোলন করেন, এবং সুমনকে তাহার প্রাপ্য পরিশোধ না করিয়া তাহার ভাগের টাকাটি নিজেই লোপাট করেন। শোনা যায় তিনি তাহার পতি জাহিদুর রহিম অঞ্জনের সহিত ভারতে মধুচন্দ্রিমা উদযাপন উপলক্ষে সুমন রহমানের বখরাটি ব্যয় করিয়া ফেলেন। এইরুপে প্রতারিত হইয়া ক্ষুব্ধ সুমন রহমান ইমেইলে একটি বেনামি কুৎসা রচনা করিয়া দখিনে বামে সকলের কাছে প্রেরন করেন। কিন্তু সুমনের কীর্তি পাচকান হইবার পর শাহীন আক্তারের বলিষ্ঠ পতি জাহিদুর রহিম অঞ্জন একদা শাহবাগে সুমনকে নাগালে পাইয়া প্রচন্ড প্রহার করেন। সুমন রহমানকে কখনও নিকটে পাইলে তাহার মুখগহ্বর ভাল করিয়া যাচাই করিলে দেখিবেন, তাহার চোয়ালে কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন দাত অনুপস্থিত। ইহা ষন্ডা অঞ্জনের জয়দ্রথ-প্রহারের ফল।

সুমন রহমানদা খর্বাকৃতি হইলেও তিনি রমনীমোহন পুরুষ। বইমেলায় তাহাকে তাহার অপেক্ষা খর্বাকৃতি রমনীদের বাহুলগ্না করিয়া ইতস্তত ঘুরাঘুরি ও ফটসেশন করিতে দেখিয়াছি। তাই তিনি বুঝিয়া শুনিয়াই নিজের ছদ্মনাম জয়দ্রথ রাখিয়াছিলেন। এরশাদ রাখিলেও চলিত।

স্বপ্নহীন এর ছবি

সুমন রহমানকে কখনও নিকটে পাইলে তাহার মুখগহ্বর ভাল করিয়া যাচাই করিলে দেখিবেন, তাহার চোয়ালে কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন দাত অনুপস্থিত।

দ্দীনূ'দার দাত কমতি আছে নাকি!!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আহাহা কবিদের নরম শইলে এত কঠিন দোররা চালাইলেন। এর প্রতিবাদে তারা যতি আপনার নামে একখান চাবুক কবিতা রচনা করে?

কুলদা রায় এর ছবি

আমার কী এতো সৌভাগ্য আছে লীলেনদা? সত্যি কি আমাকে নিয়ে কবিতা লিখবেন কবিগণ? কবে লিখবেন? ভাবতেই আমার রোমাঞ্চ হচ্ছে।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"ভীন্ন"কে ভিন্ন বানান। শিল্পতরু ও তার সমসাময়িক কালের সাহিত্য পত্রিকাগুলোর ওপর যতদূর সম্ভব বিস্তারিত আলোচনা দাবী করছি। এগুলোর ডকুমেন্টেশন থাকা দরকার। নয়তো বাঁক বদলের ফেরিওয়ালারা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের মতো সাহিত্যের ইতিহাসটাকেও পালটে দেবে।

কবিতা লেখার ক্ষমতাবিহীন, নিঃস্ব, ছ্যাঁচড়া, ঝোলখাওয়া অপদার্থগুলোর জন্য কোন করুণাও আর অবশিষ্ট নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কুলদা রায় এর ছবি

আপনার প্রস্তাবটি সুন্দর। অচিরেই এ বিষয়ে সংযুক্ত করা হবে।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তানিম এহসান এর ছবি

এতকিছু! অ্যাঁ

Anwar Shahadat এর ছবি

কুলদা রায়, আমার সিঙ্গেল মল্ট হুইস্কি খেতে খেতে পড়ে ফেললাম আর একবার। এটা 'বাক বদলের' বাক বদলের মাইল ফলক। আমার মনে হয় না এই লেখার পর আর সহসা কেউ বাক বদলের 'চুটকি' বলতে তেমন আস্থা ও স্বস্তি বোধ করবে। কেনোনা এই লেখা প্রমান করেঃ ক্রমাগত এই বাক বদল হয়। মাসুদ খানের ইন্টারভিউটা আমিও দেখেছি, বেশ অস্বস্তি লেগেছে। একাধিক ও অনেক উল্লেখযোগ্য কবিরাই এই কাজ করেছেন তা স্বাভাবিক কবি সত্ত্বা থেকে, কোনও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থেকে নয়। কবিতা শিল্প কর্ম, রাজনৈতিক ইস্তেহারের জায়গা নয়। জীবনান্দ, শামসু্‌ যখন কবিতা লিখেছেন কবিতার জন্য কবিতা লিখেছেন, ইশ্তেহার অনুপ্রানিত কবিতা লেখেন নি, তা লিখলে কিছু হতও না। দেখলাম আশরাফ ভাই বেশ পছন্দ করেছেন। বলছেন চমৎকার, ভন্ড মুখোশ খোলায়! সততা প্রশ্নে তো দেখি রাজু আলাউদ্দিন খাঁটি। শোনেন আর একটা কথাঃ আপনার এইখানে যে ক্লাউন-কবি, ও কবিতার নামে পরকীয়া ও মিস্ট্রেস বিষয় এসেছে সে সম্পর্কে আমি আপনাকে জানাতে পারতাম কিছু। ব্রাত্য রাইসু আমাকে যা জানিয়েছে- ওই ক্লাউনের ও তার মিস্ট্রেস'র পরকীয়া নাকি সমাজ স্বীকৃত এবং তারা নাকি দুজনেই তাদের 'পবিত্র-পরকীয়া'র ডেটিং এর ছবি ওয়ালে রেখে দিয়েছে কবি মুজিব মেহেদী'র এ্যালবাম থেকে। তাতে সকল বন্ধুরা মিলে নাকি আপনার উল্লেখিত ওই কবিতা গ্রুপের 'পরকীয়া ও মিস্ট্রেস' উদযাপন করছে নানাবিধ রসালো মন্তব্যে! শুনেছি স্ত্রীকে মফস্বলে আব্বাজান প্রযত্নে পাঠিয়ে আর স্বামীকে উত্তরা কী বৈদেশ পাঠিয়ে নিজ-নিজ স্বামী বা স্তীর বিছানার চাঁদরে কবিতা লেখা হয় অথবয়া সে কবিতা নিকটস্থ বিল বোর্ডে লেখা হয়! রাইসু আমাকে আরও জানিয়েছে এটা নাম না দেয়া সামাজিক সম্পর্ক, অর্থাৎ পরকীয়া বা মিস্ট্রেস আইডেন্টিটেতি একটা সামাজিক ব্যাপার। সবাই নাকি গ্রহন করে নিয়েছে। এমনকি সাজ্জাদ শরিফ পরিবারও! দুই পক্ষের সশুর-শাশুরীয় নাকি মেনে নিয়েছে। যাক পরে চাইলে আপনার ওই কবিতা ও মিস্ট্রেস বিষয়ে আরও কিছু তথ্য দেয়া যাবে। ক্লাউনের মিস্ট্রেস নাকি তার 'মিস্টারের স্ত্রীর' নারী স্বাধীনতা বিষয়ে খুবই কন্সার্ন! হাসি, এই ঘটনা সুব্রত অ.গো.ও জানে, তারে লেখা ক্লাউনের মিস্ট্রেসের ফরোয়ার্ড করা পত্র আছে যে!ঃ) যাহোক- আমি আমার সিঙ্গেল মল্ট হুইস্কিতে ফিরে যাই! চিয়ার্স!

--আনোয়ার শাহাদাত

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

শিল্প সাহিত্যের এতকিছু বুঝি না। কিন্তু এটা বুঝি যে, শিল্প সাহিত্যের বাঁক বদল হোক আর পরিবর্তন হোক, সেটা সময়ের সাথে, সময়ের প্রয়োজনে এমনিতেই হবে, কোন রকম বাঁক-বদল গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়াই। বিবর্তনের ধারাকে নিয়ন্ত্রন যেমন কেউ করতে পারে না, যারা এরকমটা করছে বলে দাবী করছে তাদের আসলেই কাপড় খুলে চাবকানো দরকার। লেখাটা ভাল লেগেছে, জানিয়ে গেলাম। বাঁক-বলদের দলের কাপড় খুলে যাক।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ক্রেসিডা এর ছবি

ত্রি.ক ভাই " কোন রকম বাঁক-বদল গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়াই। " এটা একটু এক্সপ্লেইন করবেন? কোন গোষ্ঠীর চেষ্টা ছাড়া বা এক্সপেরিমেন্ট ছাড়া কিভাবে পরিবর্তন আসে? ইভেন ভাষাও মনে হয় একটা গোষ্ঠীর সাহায্য ছাড়া পরিবর্তন হয় না। ব্যাপারটাতো এমন নয় যে, আগে পরিবর্তন আসে, পরে মানুষ সেটায় মানিয়ে নেয়। বরং অনেক পরিবর্তন আসে মানুষ বা কোন গোষ্ঠীর হাত ধরে, সেখান থেকে যেই পরিবর্তন এক্সেপ্ট হয়, সেটা চলতে থাকে।

যেমন, কবিতার ছন্দ বা রুল সেটাকে ফলো করা নিয়ে আগেও বেশ কিছু বিতর্ক হয়েছে। শুধু উদাহরনের জন্যে টানা ব্যাপারটা।

রুল গুলা হইলো আফটার ইফেক্ট। অর্থাৎ, আগে আসছে লেখার ভিতর সুর । সেই সুরটা বুঝার জন্য বা মনে রাখার জন্য তৈরি হইসে ছন্দের রুল। তাই আমার কথা হইলো - ছন্দ তৈরি হবে ওই ভিতরের ভাষার সুরটা থেকে - রুল তাকে এক্সপ্লেইন করতে পারে। কিন্তু রুলটা গৌন। ...।

এক সময় রুলটাকে মুখ্য করে অনেক কাজ হইসে। নতুন ছন্দ তৈরির কাজ তো রবীন্দ্রনাথই করসে সবচেয়ে বেশি । তিনি যদি সেটা না করতেন, পরিবর্তন কি আসতো? এমনি এমিন কি বদলায় কিছু? সেটা যদি কোন গোষ্ঠী বা মানুষের চেষ্টায় না আসে?

আপনার বক্তব্য শোনার আগ্রহে আছি।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

ক্রেসিডা এর ছবি

p.s- আপনার উত্তরের পরে যদি আমার কিছু বলার থাকে, এবং উত্তর দিতে দেরী হয়, কিছু মনে করবেন না। মেয়েকে সময় দিচ্ছি পুরোটা, ৬ মাস ওকে ছাড়া থাকতে হবে। সো একটু লেট রিপ্লাই হতে পারে।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ইভেন ভাষাও মনে হয় একটা গোষ্ঠীর সাহায্য ছাড়া পরিবর্তন হয় না

- ভাষা কখনও কোন গোষ্ঠীর দ্বারা 'ইন্টেনশনালি' পরিবর্তন হয় না। এটা একটা স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া, সময়ের সাথে সাথে সব কিছু যেমন বদলাবে, ভাষাও বদলাবে। কিন্তু ফারুকী গ্যাং বা এরকম কোন গ্যাং যখন জোড় করে ভাষার পরিবর্তনটা আরোপ করতে চায়, সেটাকে আপনি কোন গোষ্ঠী দ্বারা আরোপিত বলতে পারেন।

আর এখানে এই লেখার সাপেক্ষে বাঁক-বদল টার্মটা কিন্তু মোটামুটি সংজ্ঞায়িত। সহজ স্বাভাবিক পরিবর্তন কবিতা, উপন্যাস শুধু না শিল্পের যে কোন শাখায়ই ঘটবে। কিন্তু কোন পার্টিকুলার গোষ্ঠী যদি দাবী করে বসে, যে বাংলা কবিতা উত্তরণের ভার তাদের উপর পড়েছে, তাহলে সেটার পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেটার পেছনে কোন বাঁকা কোন উদ্দেশ্য থাকে। এখানে বাঁক-বদল টার্মটা এই লেখার কন্টেক্সটে মোটামুটি পরিষ্কার। এরকম গোষ্ঠী-দ্বারা-বাঁক-বদল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাঁকা উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে।

কবিতা লেখার ক্ষেত্রে আপনি ছন্দের নিয়ম-কানুন মানবেন কি মানবেন না, সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার হতেই পারে, কিন্তু যদি একেবারে বাংলা কবিতার নকশা-টকশা পালটে দেবেন এই উদ্দেশ্যে একেবারে কবি-অকবি সব মিলে অছন্দবদ্ধ অকবিতা লিখে বাংলা সাহিত্য উদ্ধার গোষ্ঠী গড়ে তুলতে চান, আমি প্রশ্ন তুলব বৈকি, গোষ্ঠীর অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটাও ক্ষতিয়ে দেখব।

রবীন্দ্রনাথ কোন গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে বাংলা সাহিত্যের বংশ উদ্ধারের মিশনে নেমেছিলেন কি?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ক্রেসিডা এর ছবি

পরিবর্তনের ভার কারো উপর পড়েছে সেই ভাবনা থেকে কি আসলে এক্সপেরিমেন্ট গুলো আসে? আমি হয়তো এভাবে চিন্তা করি নাই, তবে আপাতত সোজা চিন্তায় মনে হয় আসে না। এক্সপেরিমেন্ট করা.. বা একটু পরিবর্তিত ভাবে লেখা বা উপস্থাপন.. এটা স্বাভাবিক ভাবেই আসে। ম্যাস পারটিসিপেশন হলে সেটা দাড়িয়ে যায়, নতুবা সেটা হারিয়ে যায় ব্যর্থ প্রয়াস হিসেবে। বংশ উদ্ধারের মিশনে যারা নামে বা এরূপ ভাবনা যেসব গোষ্ঠীর, তাদের নিয়ে আলোচনা না.. কিন্তু.. যেকোন পরিবর্তনই কারো না কারো বা কোন না কোন গোষ্ঠীর হাত ধরেই আসে। হ্যাঁ, কোন গোষ্ঠী হয়তো সে পরিবর্তনটা নিয়ে আসতে চায় অস্বাভাবিক ভাবে, কোন গোষ্ঠঅ সেটা নিয়ে আসে খুব স্বাভাবিক ভাবে। এবং সেটা আমাদের মন ও মননের সাথে মিল রেখে চললে মেনে নেই।

অছন্দবদ্ধ অকবিতা এর ব্যাপারে কিছু বলে আহেতুক আর বিতর্ক না বাড়াই।সেটা হয়তো কথনো অন্য কোন কবিতার থ্রেডে আলোচনা হবে।

ভালো থাকবেন।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

মোহাম্মদ নূরুল হক এর ছবি

কুলদা রায় প্রাজ্ঞজন, তার সব মতের সঙ্গে আমি তেমন সহমত পোষণ করি না, আমার সঙ্গে তার ইতোপূর্বে বহুবার মতানৈক্য হয়েছে। কিন্তু একটা বিষয় আমি অস্বীকার করি কী করে, কুলদা রায় অনেক হাঁড়িই হাটে ভাঙতে জানেন!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।