সচলায়তনে আমার আবির্ভাব কাজীদা মানে কাজী আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে। কী, অবাক হচ্ছেন? ফেইসবুকে এক বন্ধু লিংক দিয়েছে শুভ জন্মদিন কাজীদা। ঐ লিঙ্কে ক্লিক করে পেলাম সচলায়তনে অণুদার চমৎকার একটি লেখা। অনেক কমেন্ট দেখে ইচ্ছে হলো আমিও একটা কমেন্ট দিই। আর এই সূত্রেই সচলায়তনে যোগদান। যাই হোক, অণুদার লেখায় অন্যদের কমেন্ট পড়তে পড়তেই অনেকটা এই লেখাটা লেখার অণুপ্রেরণা পেলাম।
আমি জানিনা সেবা প্রকাশনীর ইদানীং কী হয়েছে - বর্তমানে অনুবাদের মান তলানীতে এসে ঠেকেছে। গত মাস পর্যন্ত (সী হক, অনুবাদ সম্ভবত সায়েম সোলায়মান) প্রকাশিত সেবার সবকয়টি অনুবাদ আমি পড়েছি। কিন্ত বিগত দুই/তিন বছরের অনুবাদগুলো আমাকে সন্তষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমি শেষ ভালো অনুবাদ (সেবা প্রকাশনীর) পড়েছি বোধহয় "মন্টেজুমার মেয়ে"। এর পরের কোন অনুবাদই মনে দাগ কাটতে পারেনি। ছেলেবেলায় পড়া তিন মাস্কেটিয়ার, কালো তীর, রবিনহুড, আইভানহো কিংবা সাগরতলে বা আশি দিনে বিশ্বভ্রমণের সেই আবেদন এখনকার কোন অনুবাদে পাই না। এটা কি বড় হয়ে যাওয়ার ফল? না মনে হয়, কারণ মন্টেজুমার মেয়ে (অনুবাদ কাজী আনোয়ার হোসেন) তো আগের মতই লেগেছে। একটা কারণ কি অনুবাদক পরিবর্তন হয়ে যাওয়া? হতে পারে, কারণ কাজী আনোয়ার হোসেন, রকিব হাসান, শেখ আবদুল হাকিম, রওশন জামিল, শওকত হোসেন কিংবা নিয়াজ মোর্শেদের সেই জাদুকরী ভাষা আসলেই এখনকার সায়েম সোলায়মান, টিপু কিবরিয়া কিংবা কাজী মায়মূর হোসেনের লেখায় পাই না, পাই না সেবার প্রতিষ্ঠা করা সহজিয়া মনকাড়া সেই ভাষাশৈলী।
শুধু অনুবাদই নয়, এ কথা প্রযোজ্য কম-বেশী সেবার সব বইয়ের ক্ষেত্রেই। সাম্প্রতিককালের মাসুদ রানা পড়ে আগের সেই অনুভূতিগুলি ফিরে আসে না। অগ্নিপুরুষ পড়ে চোখের কোল বেয়ে নেমে আসা দুই ফোঁটা অশ্রু, কিংবা রডরিকের সাথে গলামিলিয়ে "আই লাভ ইউ, ম্যান" বলতে গিয়ে আবিষ্কার করা গলা বুঁজে গেছে অথবা দ্বারোকার কামানে বোমা বাঁধার পর টের পাওয়া যে এতক্ষন দম আটকে রেখেছিলাম - কই, নতুন বইগুলোর একটারও ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনা কেন?
আলেয়ার পিছেতে যে এরফান জেসাপের সাথে পরিচয়, ডেথ সিটি বা আবার এরফানের পাতায় পাতায় যার দুর্ধর্ষতার নিয়ত প্রমাণ, সেই এরফান যেন কোথায় হারিয়ে গেল - অ্যারিজোনায় এরফান বা পরের বইগুলিতে তাকে আর সেইভাবে পেলাম না। টান টান কাহিনি আর পাতায় পাতায় উত্তেজনায় ভরা সেই ওয়েস্টার্নের কোন টানই যেন পাই না এখন। আগেকার হুয়ান কর্টেজ ওরফে সাবাডিয়া, সাডেন শেভলিন, ড্যান ও'হারা প্রভৃতি চরিত্রদের পাশে এখনকার চরিত্রগুলো বড়ই পানসে।
সবচেয়ে হাস্যকর পরিবর্তন বোধহয় হয়েছে তিন গোয়েন্দায়। সাইকেল চালিয়ে বেড়ানো দুরন্ত কৈশোরের প্রতীক সেই তিন গোয়েন্দা নাকি এখন ভূত ঠেকাতে আর ভিন-গ্রহবাসীদের নিয়ে ব্যস্ত!
আর উপন্যাস বা গল্প সংকলনের কথা তো বলাই বাহুল্য। আত্মহত্যা, বন্দিনী, হলো না রত্না, বিদেশযাত্রা, পঞ্চরোমাঞ্চ, ছয়রোমাঞ্চ, ছায়া অরণ্য, অষ্ট আতংকের মত বই তো দূরের কথা, গুন্ডা বা শোধ নেবে? এর মতও বই পেলাম না বহুদিন। বলতে ইচ্ছে করে - মাথাই নেই তার আবার মাথাব্যথা!
প্রায় তিন দশক ধরে ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকা এবং জীবন, ভাষা ও সাহিত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া সেবা প্রকাশনীর বর্তমান হালে আমি বড়ই মর্মাহত।
- অয়ন
মন্তব্য
ভালো লাগলো লেখাটা। যদিও আরো বড় ও তখ্যসমৃদ্ধ হতে পারতো।
তিন গোয়েন্দা শেস পড়েছি মনে হয় মেট্রিক পরীক্ষার আগে। সো এখন কি অবস্থা বলতে পারি না। মাসুদ রানা এখনো পড়া হয়। তবে এখন আর সব বই আগের মতো না। লাস্ট পড়ার মধ্যে হ্যাকারটা জোশ করেছে। তারপর "সেই কুয়াশা" তে মাসুদ রানা ও কিংবদন্তী কুয়াশা কে এক মলাটে আনা.. পড়ার আগে অনেক এক্সপেকটেশন ছিল। তার ৬ আনাও মিটে নাই। পুরাই হতাশ এরকম আয়োজন বিহীন সাদামাটা একটা মাইলস্টোন তৈরী করার জন্যে।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
'হ্যাকার' যতদূর জানি, কাজীদা'র মৌলিক রচনা।
আমি শিওর না বস! যতদূর মনে হয় মৌলিক না। ডন ব্রাউন এর ডিসেপশন পয়েন্ট বা ডিজিটাল ফরট্রেস এর সাথে বেশ অনেক অংশে মিল। বই গুলো বেশ আগে পড়া, তাই মেমরী থেকে বলা। যেটাই হোক, হ্যাকার দারুন ছিল।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
আমিও যতদূর জানি হ্যাকার মৌলিক রচনা। - অয়ন
উহু, ওইরকম কিসু না, এইটা অন্য কাহিনী, তয় রানা একটু মেরু অঞ্ছলে গেসিল এই বইয়ে যেটা ডিসেপশন পয়েন্ট এর কাহিনীর অন্যতম ঘটনাস্থল
কয়দিন আগেই পড়লাম 'হ্যাকার'। আগের সেই টানটান উত্তেজনা নাই, বাট বর্তমানের অন্যগুলার চেয়ে একটু ভাল, তবে মৌলিক বলে মনে হইল না কেন জানি
ধন্যবাদ। আসলে এটি আমার জীবনের প্রথম ব্লগ, তাছাড়া ক্ষনিকের তাড়ায় লেখা, তাই বড় করা হয়নি। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে লেখার। - অয়ন
আপনার লেখার সাথে পুরোপুরি একমত।
সেই রানা, সেই এরফান জেসাপ, সেই রবিন, কিশোর, মুসা - কেউই আর নেই আগের মতো। সেই এক্সাইটমেন্ট আর পাওয়া যায় না নতুন বইগুলোতে। অথচ একসময় কি ভীষণ বুঁদ হয়ে থাকা বইগুলোতে...
লেখা ভালো লেগেছে। লিখতে থাকুন।
কিন্তু অয়ন, এখানে লিখতে গেলে আপনাকে এই নামটা বাদ দিয়ে বোধহয় অন্য কোনো নিক নিতে হবে। আমাদের অলরেডি একজন অয়ন আছে। যদিও বেশিরভাগ সময়েই ডুব দিয়ে থাকে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমার মনে হয়, ঠিকই আছে। নাম হারানোর ভয়ে ওই অয়ন যদি এবার নিয়মিত হয়
হাহাহা
ঠিকাসে তাহলে।
তবে ওই অয়ন এখন আছে কই?
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আসলে আমি ব্লগিং এর জগতেই নতুন। সচলায়তনে রেজিস্ট্রেশন করি দিন দুয়েক আগে, অয়ন নামে। আমি জানতাম না অয়ন নামে আরো কেউ আছেন। তবে আমাকে অয়ন নামে রেজিস্ট্রেশন করতে কোন সমস্যা দেখায়নি। - অয়ন
তাহলে নো সমস্যা, অয়ন।
আপনাকে ভয় দেখিয়ে থাকলে স্যরি।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
তিন গোয়েন্দা অনেক নিম্ন মানের হয়ে গেছে।
কিন্তু, মাসুদ রানা এখনো সে-ই একই রকম লাগে।
আপনার অনুভূতির প্রতি সম্মান রেখেই দ্বিমত পোষণ করছি। ইদানিংকালের মাসুদ রানা পড়লে দস্যু বনহুরের কথা মনে হয়। নতুনগুলোতে এতো অসঙ্গতি, এগুলোর ভাষা আর বর্ণনা এতো আড়ষ্ট। অথচ এখনো পুরনো মাসুদ রানাগুলো পড়লে তার রূপান্তরের মান, ভাষার সাবলীলতা, তথ্য প্রদানের চমৎকারিত্ব দেখে মুগ্ধ হই। কাহিনী বিন্যাস দেখে রুদ্ধনিঃশ্বাসে পড়ি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হয়তো আপনার কথাই ঠিক। কিন্তু, সামগ্রিকভাবে মাসুদ রানা পড়ার অনুভূতিটাই এমন যে - ভালোলাগাটা একই রকম মনে হয়
পাণ্ডব, আমার মনে হয় মাসুদ রানার সাথে পাঠকের একটা মনস্তাত্ত্বিক যোগসূত্র তৈরী হয়ে আছে। ব্যাক্তিগতভাবে আমি মাসুদ রানা যতোটা না পড়ি তার থেকে বেশি অনুভব করি, ঠিক সেই যখন মাসুদ রানা পড়ার শুরু সেই সময়কার অনুভূতি। তোমার সাথে দ্বিমত নেই, মানের বিচারে সেই সময়ের মাসুদ রানা আর পরবর্তীকালের মাসুদ রানায় অনেক ফারাক। তবে অনুভূতির জায়গায় মাসুদ রানা পড়া এবং জীবনে প্রথম প্রেমে পড়া- দুটোয় বেশ মিল দেখি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হ্যাঁ, মাসুদ রানা তুলনামূলকভাবে এখনো কিছুটা ভালো আছে। - অয়ন
অনুবাদের স্বাদ কমে যাওয়াটা আমারও খানিক মনে হয়েছে। তবে তি-গো বা রানা আসলে পড়বার বয়স মনে হয় ফেলে এসেছি, তাই আর টানে না
ঘড়ির গোলমাল বা কাকাতুয়া রহস্য, কি রক্তচক্ষু এইগুলা তো আমি এখনো ঘুরে ফিরে পড়ি। আমার বাপ ৪০ বছর বয়সে এসে তিন গোয়েন্দা পড়া ধরলেন। ১০০ নাম্বার বইটার পর থেকেই মান পড়ে গেছে, ছায়া অবলম্বনের জন্য ভালো বিদেশী গল্প সংগ্রহে ভাটা পড়েছে বলে হয়ত।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হুমম, হতে পারে। - অয়ন
হুম তিন গোয়েন্দা আর আগের মত নাই আসলেই। অন্যান্য বই অনেকদিন পড়া হয়নি।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আমার কেন যেন কুয়াশাকে বেশ ভালো লাগতো রানার চেয়ে, কিন্তু কুয়াশার অল্প কিছু বই পেয়েছিলাম।আমাদের সময় রানার ভীড়ে কুয়াশার বই বাজারে খুঁজে পাইনি খুব একটা।
আমার মনে হয় আপনার পাঠকের মৃত্যু হয়েছে। ১২ বছর বয়সে যে মুগ্ধতা নিয়ে তিন গোয়েন্দা পড়েছেন, এখন হয়তো সেরকম চোখ নিয়ে দেখছেন না বইগুলা। আর আগে পড়াগুলা আবার পড়তে গিয়ে পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে যাবার সুবাদে ওগুলাকে ভালো লাগছে এখনো।
এই ব্যাপারটা ঠিক ঠিক তুলনা হতো যদি এখনকার কিশোর কেউ সব বই পড়ে বলতো আগেরপরের কোন বইগুলা তাদের ভালো লাগে।
----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম
রাগিব, এখনকার কয়েকজন কিশোরের সাথে কথা বলে দেখেছি। তারা সেবার বইয়ের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেনি। সুতরাং হয় সেবা'র এখনকার লেখকেরা এখনকার কিশোরদের মনোজগতটা ধরতে পারছেন না, অথবা তাদের অনুবাদ-রূপান্তরগুলো আগের মানের হচ্ছে না। আমার মনে হয় দুটো ধারণাই সত্য। অনুবাদ-রূপান্তরের মান বোঝার জন্য কিশোর হতে হবে না, আপনার বয়সী বা আমার বয়সী মানুষ বই পড়েই সেটা বলে দিতে পারবে। সেই হিসাবে দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে সেবার অনুবাদ-রূপান্তরের মান পড়ে গেছে। শুরুর চল্লিশ বছর সেবা বাংলাদেশের কিশোরদের মনের খোঁজ কীভাবে রেখেছে জানি না, তবে সেটা সফলতার সাথেই পেরেছে। আর সেবা তো কেবল কিশোরদের বই বের করে না, বড়দের বইও বের করে। সেগুলোই বা কেন প্রাপ্তবয়ষ্ক পাঠকদের আগের মতো টানতে পারছে না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হয়তো ঠিকই বলেছেন রাগীব ভাই। তবে নতুন কিছু বই এখনো ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ। - অয়ন
দ্বিমত পোষন করছি রাগিব ভাই।
তিন গোয়েন্দার কাহিনির প্রাথমিক সোর্স ছিল রবার্ট আর্থারের 'থ্রি ইনভেস্টিগেটর' এবং এনিড ব্লাইটনের 'ফেমাস ফাইভ'। সিরিজটা শেষ হওয়ার পরে তিন গোয়েন্দা মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। আপনি এখনকার কিশোরদের দিয়ে যে তুলনা করার কথা বলেছেন তা আমি করে দেখেছি। পরের বইগুলো পড়ে এরা বিরক্ত হয়েছে।
মাঝে (সম্ভবত ৯৮-৯৯ এর দিকে) তো তিন-গোয়েন্দার এমনই হাল হইছিল যে এক্স-ফাইলস মুভি সিরিজ থেকে এডাপটেশন করা শুরু করছিল -- তখন কেবল আমি এস.এস.সি. পাশ করি। পড়ে এমনই বিরক্ত হইছিলাম (বলতে গেলে বইয়ের ৫০% স্কিপ করে গেছিলাম) যে তারপর থেকে আর তিন-গোয়েন্দা পড়া হয় নাই। ঐ সময় মাসুদ রানাও পড়তাম কিন্তু তিন-গোয়েন্দার পুরানো কাহিনীগুলাও বেশ ভালই লাগত। আমার মনে "পাঠক মনের মৃত্যু" হয় নাই -- সেবার সেই "পুরানো অনুবাদের ধারা"র মৃত্যু হইছে।
সেবা হলো একটা ভাগ্যবান প্রজন্মের প্রকাশনী। সত্তর আশির দশকে যারা কৈশোর পার করেছে তাদের সাথে সেবার সম্পর্কটা ছিল অন্যরকম। বইয়ের উপর ওই নির্ভরতাটা এই ইন্টারনেট আর স্যাটেলাইট টেলিভিশন নির্ভর যুগে এসে বোঝা মুশকিল আমার মতে সেবার সবচেয়ে আকর্ষনীয় সময় সত্তর আর আশির দশক। নব্বই দশকেও জের অব্যাহত ছিল।
পঞ্চ রোমাঞ্চ, ছয় রোমাঞ্চ, ছায়া অরন্য এই বইগুলো বোধহয় সত্তর দশকের। এখন সেরকম বই কেন বের হয় না সেটা নিয়ে আক্ষেপ করা অনুচিত। যেমন আমি আক্ষেপ করি না আমি কৈশোরে কতো কায়দা করে লেত্তি দিয়ে হাতের তালুতে লাটিম ঘোরাতে পারতাম। প্রত্যেকটা সময়ের মূল্যমান আলাদা। সেবা তার শ্রেষ্ঠ সময়ে যা দিয়েছে তাই যুগযুগ টিকে থাকবে।
একটা জিনিস জানতে ইচ্ছে করে। পঞ্চ রোমাঞ্চ, ছয় রোমাঞ্চ, ছায়া অরন্য এই জাতীয় বইগুলো আমাদের যে আনন্দ দিয়েছিল আজকালকার কিশোরকিশোরীদের কি সেই আনন্দ দেবে?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার ধারনা দেবে - যা চিরায়ত, তা সবাইকে আকর্ষন করে। দেখেন না, রবিন হুড বা তিন মাস্কেটিয়ার সেই কোন আমলে লেখা (মূল ভাষায়), কিন্তু আমাদেরকে তো ঠিকই আনন্দ দিয়েছে। - অয়ন
অয়ন, আপনার লেখা থেকে একটা শব্দ বদলে দিয়ে উদ্ধৃত করি, "সবচেয়ে কুৎসিত পরিবর্তন বোধহয় হয়েছে তিন গোয়েন্দায়। সাইকেল চালিয়ে বেড়ানো দুরন্ত কৈশোরের প্রতীক সেই তিন গোয়েন্দা নাকি এখন ভূত ঠেকাতে আর ভিন-গ্রহবাসীদের নিয়ে ব্যস্ত!"
তিন গোয়েন্দার এই ছন্দ পতন শুরু হয় ৩৫ বা ৪০ পর্বের পর থেকে। আমরা বুঝে ফেলেছিলাম যে সব বিদেশী কাহিনির খনির ওপর ভর করে তিন গোয়েন্দার যাত্রা শুরু হয়েছিল তা ফুরিয়ে গেছে। ফলে তিন গোয়েন্দা পড়া বন্ধ করে দিই। শুধু অর্থ আর সময়ের অপচয় নয়, তিন গোয়েন্দার প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার ভয় ছিল।
তিন গোয়েন্দা প্রথমে ছিলো নিখাদ রহস্য, এরপরে কিছু এডভেঞ্চার এলো- সবশেষে এলো কিছু অদ্ভূতুড়ে কাহিনী, এখন তো পুরোই মহাকাশে চলে তারা। কিন্তু ৩৫-৪০ পর্ব তো একটু বেশ আগে মনে হয়। আমার হিসাবে প্রায় ৯০টার মতো বইয়ের পরে এই দুরবস্থার শুরু হয়। [৫০ নাম্বারে জলকন্যা ছিলো মনে হয়। যুদ্ধঘোষণা মনে হয় ৮৫ বা ৮৬- সেটা ধরে ৯০টার মতন বলা।]
একমত। তবে তিন গোয়েন্দা প্রথম বড় হয়ে গেলো বোধহয় গাড়ীর যাদুকর থেকে - সেই যে ওরা সাইকেল ছেড়ে গাড়ী ধরল আর রবিন মেয়েদের সাথে ঘোরা শুরু করল - অয়ন
অনুবাদ বইগুলোর প্রাণহীনতা কিছুটা খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু করার নাই। সব কিছুরই তো একটা লিমিট থাকে।
তবে আশা করি সেবা এবং কাজী আবার জ্বলে উঠবেন।
সেটাই আশা করি।
____________________________
কাজীদাই একাধিক জায়গায় বলেছেন মূল কারণ রূপান্তরযোগ্য গল্পের অভাব।
এবং সেই সাথে অসাধারণ সব অনুবাদকেরা চলে গেছেন অন্য দেশে বা অন্য পেশায়। এই দুই মিলিয়েই হয়েছে।
আগের বই গুলো প্রায়ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়া হয় , সবই। কিন্তু নতুনগুলো তেমন টানে না।
facebook
ঠিক
____________________________
আজকে সকালেও অগ্নিপুরুষ পড়ছিলাম !
আমার মনে হয় অন্য কিছু জিনিস এর জন্য দায়ী।
প্রথম জিনিস হচ্ছে ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ও কম্পিউটার-এর বহুল ব্যবহার। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট-এর মাধ্যমে আজকালকার ছেলে মেয়েরা যে সব জিনিস দেখতে পায় সেটা নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সম্ভব ছিল না। এই জন্য হয়তো আজ কালকের দিনে মানুষকে রহস্য গল্প দিয়ে মুগ্ধ করা কঠিন। যে ছেলেটা হ্যারি পটার দেখে ফেলেছে তার চাহিদা নিশ্চয়ই অনেক বেশি থাকবে।
-নামুস
দুইটা দুই ধরণের বিনোদন। যে বই পড়ে, তার কাছে আগেকার বইগুলো আর এখনকার বইগুলোর মধ্যে কোনটা ভালো লাগবে?
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
____________________________
বিনোদনের বর্তমানে অনেক মাধ্যম সহজলভ্য হওয়ার সেবা মনে হয় সেই ভাবে মান ধরে রাখতে পারছে না, অর্থনৈতিক কারনও হতে পারে। এছাড়াও দক্ষ অনুবাদকের অভাব ও পরিলক্ষিত হয়েছে।
হুমম।
____________________________
কথা সত্যি, সেই সময় সুড়ঙ্গ দিয়েই শুরু তিন গোয়েন্দার অধঃপতন শুরু। যে হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বই এর জন্য অপেক্ষা করতাম, আজ দুই মাস হয়ে গেল তার মেরি বইটা নিয়ে বসে আছি। পড়তেই ভালো লাগছে না
কথা সত্যি!!
ধন্যবাদ।
____________________________
এখনি তিন গোয়েন্দা বন্ধ না করলে কিশোর-মুসা-রবিনের কপালে আরো কত দুর্ভোগ আছে কে জানে?
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
হ্যাঁ, কিশোর-মুসা-রবিনের কপালে দুর্ভোগ, আর সাথে সাথে পাঠক সমাজেরও।
ধন্যবাদ।
____________________________
অনুদার কমেন্টর দুইটা মুল কারনের পাশাপাশি আরেকটা কারন যোগ করি ।
- এ যুগের পাঠকের পাঠাভ্যাস ।
গত ৫ / ১০ বছরে বাংলাদেশের নবীন পাঠকদের পড়ার অভ্যাস এবং ধরনে একটা বিশাল পরিবর্তন এসেছে । কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের হাতের নাগালে পৌছে যাওয়ার কারনে বই পড়া ছেলেমেয়ের সংখ্যা নেয়াতই নগন্য । পড়ার ব্যপারটা ব্রাউজারের এক পেজ থেকে আরেক পেজে ক্লিক করার মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে । ১০ লাইনের চেয়ে বড় ফেসবুক নোটপড়ার মত ধৈর্যও অধিকাংশের নেই । ইন্টারনেট যেখানে পুরো বিশ্বের জানালা খুলে দিচ্ছে , সেখানে অনেকেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে তাদের ভারচুয়াল জগতের বন্ধুবান্ধব এবং বন্ধুবান্ধবের শেয়ার করা কনটেন্টের মাঝে । বই এদের কাছে বিগত প্রজন্মের এক রেলিক ।
এমন পাঠক সমাজে ভালো লেখক, ভালো লেখা কিংবা ভালো অনুবাদ তৈরি হওয়া কঠিন ।
এই পরিবর্তনটা যে কেবল বাংলাদেশেই হচ্ছে তা নয় । বিশ্বের উন্নত দেশেও হচ্ছে । তবে সে সব দেশে নাগরিক সচেতনতা, পাঠক-লেখক- প্রকাশকের সম্মিলিত উদ্যোগ আর অগুনিত লাইব্রেরী এখনো বই পড়ার অভ্যাসটাকে টিকিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টা করছে । আমাদের দেশে এমন উদ্যোগ প্রায় শুন্যের কোঠায় ।
=============
দস্যু ঘচাং ফু
নতুন মন্তব্য করুন