বনে বাদাড়ে সময় কাটানো / শিকার (২)

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি
লিখেছেন প্রকৃতিপ্রেমিক (তারিখ: সোম, ২৪/০৬/২০১৩ - ৩:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জুন ২৩, ২০১৩।

সবুজ সাগরের তীরে ছোট্ট শহরটি ঝিমিয়ে আছে। চারদিক গরমে পুড়ছে। আর আমি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে। সাথে দুই মেয়ে--একটা স্ট্রলারে বসে আরেকটা তাকে ঠেলছে। আমার কাঁধে একটা বড় ঝোলা, আর গলায় একটা অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়ে পাখি সহ অনেক কিছু শিকার করা যায়। আজকাল ছবি তোলার কথা বলতেও ভয় লাগে, পাছে বানর খেতাব পেয়ে যাই।

লেখাটা নিতান্তই নিজের জন্য লেখা। কেউ পড়লে, দুয়েকটা মন্তব্য করলে সেটা হবে অতিরিক্ত পাওয়া। আজ কয়টা ছবি তুললাম তাই ভাবলাম কিছু একটা লিখি। কিন্তু কিছু একটা লিখতে বসে কিছুই লেখা হচ্ছে না। যা হোক, গিয়েছিলাম বাড়ির কাছের অভয়ারণ্যে। ছোটখাটো একটা চিড়িয়াখানার মতো। আছে এনিম্যাল রিহ্যাব কেন্দ্র। যাদের কেউ নেই, তাদের জন্য এরা আছে। বিনা খরচায় চিকিৎসা, থাকা-খাওয়া সব কিছুর ব্যবস্থা আছে। কয়দিন আগে পরিত্যক্ত এক খরগোশের বাচ্চাকে সেখানে দিতে গিয়েছিলাম। একেবারে দুধের বাচ্চা। কিভাবে যেন আমার পার্কিং স্পটে এসে পড়েছিল। পাশেই মা খরগোশটা বসে আছে আর একটু পর পর শুঁকে দেখছে। কিন্তু বেচারাকে নিতে পারছে না। এরা বোধহয় ঘাড়ে কামড়ে নিতে জানে না। পুরো সন্ধ্যাটুকু পেরিয়ে গেলও ওটাকে যখন কেউ নিলনা, আমি সেটাকে তুলে এনে রাতের মতো একটু জায়গা দিয়েছিলাম সবার অজান্তে। পরদিন ভোরে তাদের অফিসে গিয়ে একটা ফরম পুরণ করে সেটাকে বুঝিয়ে দিয়ে একটু শান্তি পেয়েছিলাম।

আজ গিয়েছিলাম বাচ্চাদের একটু প্রকৃতির মাঝে ঘুরিয়ে আনতে। গিয়ে দেখি জলপ্রপাতের পাশে উদবিড়াল দুটি বসে বসে রোদ পোহাচ্ছে। একটা বড় আরেকটা ছোট। থুলথুলে দেহ, বড় বড় লোমে ভর্তি। অসম্ভব দক্ষ সাতারু। এদের কয়েকটা পোর্ট্রেট।

১) বড় উদবিড়ালটির ক্লোজআপ
River Otter

২) বড় উদবিড়াল মজায় আছে
River Otter

৩) ছোট উদবিড়ালটি অলস সময় কাটাচ্ছে
River Otter

৪) ছোট উদবিড়ালটি হাই তুলছে, ঘুমাবো বোধ হয়
River Otter Yawning

উদবিড়ালের খাঁচার একটি খাঁচা পরেই আছে পুমা বা পাহাড়ি সিংহ বা মাউন্টেন লাওন (Mountain Lion / Puma). দেখতে সিংহের মতো বলেই নাম এমন। নামে সিংহ হলেও আদতে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করে। আকারে বড় কুকুরের সমান বা তারচে একটু বড় হবে।

৫) দুপুরের গরম আর রোদ থেকে বাঁচতে একটুখানি আড়ালে ঝিমুচ্ছে পুমা
Mountain Lion / Puma

৬) কোথায় একটু শব্দ হতেই কান দুটো খাড়া হয়ে গেল। এলার্ট মোডে পুমা
Mountain Lion in Alert Mode

পুমার খাঁচা পেরিয়ে একটু দুরে প্রেইরির মতো জায়গা। বুনো জংগল আর ঘাসে ভরে আছে চারপাশ। এরই মধ্যে দেখা গেল স্যান্ডহিল ক্রেন (Sandhill Crane)। আকারে বিশাল এই পাখি ব্যাপক শব্দ করতে পারে। ক্রেন পাখির বাংলা হলো সারস। আকারে প্রায় হাড়গিলার সমান। এদের বাংলা নাম কি জানি না। নাম দিলাম ধূলাটিলা সারস।

৭) ধূলাটিলা সারস
Sandhill Crane

৮) ধূলাটিলা সারস (সুন্দর না?)
Sandhill Crane

৯) বুনো ফুলের উপর বোলতার হাসি, হা হা হা..
Wild Flower

আজকের মতো বিদায়।

পুনশ্চ:
ধুসর গোধূলির মতে এর নাম হওয়া উচিত বাইল্যাটিলা। খারাপ না। দেশী দেশী ভাব আছে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

"আজকাল ছবি তোলার কথা বলতেও ভয় লাগে, পাছে বানর খেতাব পেয়ে যাই।"
- হ, পুরাই ঠিক কথা!
খরগোশের বাচ্চাটা আশ্রয় পাওয়ায় ভাল লাগল।
সরস লেখা, সুন্দর ছবি। শেষ ছবিটার clarity খুব ভাল লেগেছে।
- একলহমা

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

Emran  এর ছবি

শুধু খরগশের বাচ্চাকে আনলেন, আর মা-কে ফেলে রেখে আসলেন?!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মা তো থাকবেই, মা'কে তো আর ধরা যাবে না। ও তো তার ডেরায় থাকবে।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার ভয় নাই, আমরা ক্যামেরাওয়ালারা ওসব বানরের প্রোপাগাণ্ডায় কান দিই নে। আপনি নির্বিঘ্নে এইরকম ভালোছেলের মত ছবি পোস্টাতে থাকুন। দেঁতো হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ধন্যবাদ।

বন্দনা এর ছবি

খোরগোশের ছবি কই পিপিদা। বোলতার ছবি বেশি ভালু পাইলাম।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

খরগোশের ছবি ভয়েই তুলিনি, যদি বাচ্চাটার কোন ক্ষতি হয়!

আমি আগেও দেখেছি, ফুলের উপর পতঙ্গের ছবি অনেকের কাছেই ভালো লাগে। তেমনটা ভেবেই ছবিটি দিয়েছি। আমার বেশী ভালো লেগেছে ৮ নাম্বারটা।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মনি শামিম এর ছবি

এত সুন্দর সুন্দর সব ছবি, বাপরে! কিন্তু আপনার ছবির শিরোনাম গুলি পড়া যায়না, বাগে খেয়ে ফেলেছে মনে হচ্ছে। একটু দেখবেন?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এটা ব্রাউজারের সমস্যা। আপনি নিশ্চয়ই ক্রোমে দেখছেন? ক্রোমে সংখ্যার পরে দাড়ি দিলে এরকম বাক্স বাক্স দেখায়। ঠিক করে দিলাম।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সুন্দর- ছবি ও লেখায়!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

৭ আর ৮ নম্বর দারুণ হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

গুরু গুরু

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ধূলা হলো ডাস্ট, আর স্যান্ড হলো বালি। টিলা ঠিকাছে। ধূলাটিলা নামটা শুনতে অনেক সুন্দর হলেও অনেক কঠিন গো পিপিদা, উচ্চারণ করতে কষ্ট হয়। আমার জিহ্বা মহাশয় উপরে নিচে কয়েকবার বাড়িবুড়ি খেয়ে শেষমেশ যে শব্দ আউটপুট দেয় সেটা দাঁড়ায়, 'বাইল্যাটিলা'। মন খারাপ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ঠিক বলছেন। বাইল্যাটিলা একেবারে দেশী নামের মতোই হইছে।

চরম উদাস এর ছবি

হাততালি
জটিল লাগলো, বিশেষ করে পুমা আর উদবিড়াল এর ছবিগুলা।

আজকাল ছবি তোলার কথা বলতেও ভয় লাগে, পাছে বানর খেতাব পেয়ে যাই।

চিন্তিত
- কে আপনাকে ভয় দেখায়, খালি নাম ঠিকানা দিবেন, বাসায় গিয়ে সাইজ করে আসব নগদে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ইয়ে, মানে... নাম তো বলা যাবে না।

ছাইপাঁশ  এর ছবি

সব গুলো ছবি সুন্দর। উদবিড়াল বেশি ভালো লেগেছে! ছবির ক্যাপশনও ভালো লেগেছে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ধন্যবাদ।

ঈয়াসীন এর ছবি

চমৎকার

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হাসি

মরুদ্যান এর ছবি

খুব সুন্দর ছবি পিপি ভাই হাসি

বহুদিন ছবি তুলিনা মন খারাপ

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মহুয়া  এর ছবি

ভালো লাগলো বেশ । হাসি

আশালতা এর ছবি

কী দারুণ! মুগ্ধ হয়ে গেলাম। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

রণদীপম বসু এর ছবি

পিপি দা'র জন্য হিংসা ! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার দেখি বাড়ির পাশে আড়শীনগর সেথা এক ঘর পড়শী বসত করে!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক অণু এর ছবি

শেষের ছবিটা জোস!

সারস দেখতে চাই বুনো পরিবেশে

স্যাম এর ছবি

ভালো লাগল। শিকার চলুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ছবিলিপিটাও ভালো লাগসে।

আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগসে ধূলাটিলার দ্বিতীয় ছবিটা। এইটা আসলেই বেশী সুন্দর। অবশ্য আমার কাছে ধূলাটিলা নামটা পছন্দ হয় নাই। আমাকে নাম রাখতে দিলে রাখতাম সিঁদুরসারস।

ফুলের ছবিটা দেখে মনে হইতেসে বোলতাটা এতোখন পিছু পিছু আসছে এই ছোট্ট পোকার, আর এক্ষুণি খপ করে ধরে ফেলবে ওকে। ( বোলতা তো মধুখেকো, যদ্দূর ধারণা। তাহলে অবশ্য এই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নাই। )

পিউমার প্রথম ছবিটার চাউনি দেখে মনে হইতেসে, পাড়ার গুণ্ডা বসে বসে আয়েশ করতেসে। আর দ্বিতীয় ছবিটা দেখে মনে হইতেসে তার পছন্দের মেয়ে পিউমা ওকে পাত্তা দেয় নাই বলে মন খারাপ ওর।

ভোঁদরের প্রথম ছবিটা দেখে মনে হইতেসে, সে কোন কারণে গোমড়ামুখে বসে আছে, কিন্তু কারণটা কাউকে বলবে না ( সম্ভবত সে "ভোঁদরজাতির কাছ থেকে এর চেয়ে বেশী আর কি আশা করবো" ভাবতেসে। ) আর তৃতীয় ছবিটা দেখে মনে হইতেসে, কোন অপরিচিত প্রাণীকে তার বাড়ির সীমানার ভেতর দেখসে সে, আর এক্ষুণি "কে যায় রে?" বলে হাঁক দিবে একটা।

..................

প্রশ্ন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।