ফুলছড়ানো পথে ৩

মূলত পাঠক এর ছবি
লিখেছেন মূলত পাঠক (তারিখ: বুধ, ০৬/০৫/২০০৯ - ১২:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফুল নিয়ে লেখা ছড়াগুলো ক্রমেই শিশুদের আঙ্গিনা ছেড়ে বড়োদের জগতে ঢুকে পড়ছে। আরেকবার বুঝলাম শিশুর সারল্য অর্জন করা সহজ কর্ম নয়। বিষয় পরিণতমনস্ক হলেও বড়োদের জন্য একচেটে হয় নি এই আশাটুকুই অবশিষ্ট আছে শুধু। ছোটোদের মতামত তো জানতে পারছি না, বড়োরাই জানাবেন কেমন লাগছে। সিরিজের আয়ু সম্পূর্ণভাবেই মন্তব্যনির্ভর।

শিউলি নিয়ে কিছু আকর্ষক পৌরাণিক গল্প পড়লাম, সেটাও শোনাই ছড়ার সাথে।


বিষণ্ণতার গন্ধ ঘনায় সন্ধ্যামণির ঝাড়ে
সূর্য তখন মারছিলো ডুব আকাশনদীর পারে।


শেষরাত্তিরে, যাতে কেউ তাকে দেখতে না পায়
ফুলপরী এক চুিপচুপি আসে, শিউলি কুড়ায়।


দিগন্তজোড়া হলুদ সে নদী, হাওয়া সেথা মারে ঘাই
চক্ষে সরষেফুল দেখে আমি ব্যাপক পুলক পাই!


জাম্বুরাগাছে শতশত ফুল, সুন্দর মনোলোভা,
চেরীফুল নিয়ে আদেখলাপানা ছেড়ে দেখো এই শোভা।


শালুক ফুটেছে পুকুরের জলে, হুস করে সেই ছবি
ছুটে চলে যায়, ট্রেন জানলায় উদাসীন এক কবি

[url=http://bn.wikipedia.org/wiki/শিউলী_ফুল]শিউলি[/url] বা Nyctanthes arbor-tristis-কে পারিজাতও নাকি বলে, এবং স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ স্বর্গ থেকে এই গাছ এনেছিলেন পৃথিবীতে। কৃষ্ণের দুই বৌ রুক্মিনী ও সত্যভামার মধ্যে কাজিয়ে বঁেধে গেলো, কে পাবে এই ফুলগাছ তাই নিয়ে। কৃষ্ণ তখন গাছটা পুঁতলেন সত্যভামার উঠোনে। সত্যভামা তো আহ্লাদে আটখানা। কিন্তু কুরুক্ষেত্র সামলেছেন যিনি তিনি কি আর কাঁচা কাজ করবেন, তিনি গাছটা লাগিয়েছিলেন এমনভাবে যে ফুল হলে তা ঝরে পড়বে রুক্মিনীর উঠোনে। ফুল ফোটার পর সত্যভামা কী পরিমাণ চটেছিলেন এবং তারপর কেষ্টঠাকুরের কোথায় কোথায় কালশিটে পড়েছিলো পুরাণ সে বিষয়ে নীরব।

ভগবান বিষ্ণুর সিংহাসনটিও নাকি একটি পুষ্পিত শেফালিকাতরুতলে স্থাপিত, এবং ভক্তপ্রবর হনুমানেরও বাস তারই ছায়াতে। আরেকটা গল্প আছে এই গাছ নিয়ে। পারিজাত নাম্নী এক রাজকুমারীর একদা প্রেম হয়েছিলো সূর্যদেবের সাথে। প্রেমট্রেম হলো ভালোই, কিন্তু তারপর সূর্যদেব কেটে পড়লেন দুষ্মন্ত-স্টাইলে। পারিজাতের বুক ফেটে গেলো দুঃখে, সে শোকেতাপে খুদকুশি করে ফেললো, ওই যাকে বাংলায় সুসাইড বলে। তার অস্থিভস্ম থেকে গজালো এক শিউলীগাছ। কিন্তু প্রেমিকপ্রবরের বিশ্বাসভঙ্গ সইতে পারে না সেই গাছও, তাই সে ফুল ফোটায় রাতের অন্ধকারে, আর সকালে সূর্য উঠলেই অশ্রুজলের মতো ঝরে যায় সেই ফুল ঘাসের উপর।

উইকি-তে শিউলীর বৈজ্ঞানিক নামের ব্যাখ্যা এইরকম দেয়া আছে: Nyctanthes এর অর্থ হচ্ছে সন্ধ্যায় ফোটা এবং arbor-tristis এর মানে হচ্ছে বিষণ্ণ গাছ। সকলে ঝরা ফুলের মাঝে বিষণ্ণভাবে দাঁড়িয়ে থাকে বলে মনে হয় এই রকম নামকরণ।

আজ যাবার আগে একটা তথ্য জানিয়ে যাই: পুষ্পকোষ নিয়ে যঁারা কাজ করছেন তাঁদের জন্য এই সাইটটা কাজে লাগতে পারে।


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

বাংলা উইকি-র লিঙ্ক দিলেই গুবলেট হয়ে যাচ্ছে URL-এ বাংলা থাকায়!

রাগিব কোনো সাহায্য করতে পারেন? পুষ্পকোষের লেখায় পাঠানো আপনার চিঠিতে তো ঠিকভাবেই দেখাচ্ছিলো।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সরাসরি html ব্যবহার করতে পারেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এই একাউন্টটি কোন মডারেটরের নয়। এই একাউন্ট থেকে মডারেশন করা হয়না, কিংবা এই একাউন্টের কর্মকান্ডের দায়ভার সচলায়তন নেবে না।

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ, এস এম মাহবুব মুর্শেদ।

সিরাত এর ছবি

মিয়া আপনে একখান ট্যালেন্ট। কি সুন্দর ফুটফাট ছড়া বানায় বইসা থাকেন। আমারে লাঠি দিয়া পিটাইলে বা পিষ্যা মারলেও এসব বাইর হইবো না। আপনার সব লেখা আমি একাধিকবার পড়ি, তয় এই কবিতা-মবিতা একটু কম বুঝি বইলা মন্তব্যাই কম। যাহোক, চালায় যান।

কোন মডারেটররে জিগান (কমেন্ট করেন) আপনার লিংক ঠিক কইরা দিতে, আজকে সকালে একজন আমার ছবি ঠিক কইরা দিছে।

মূলত পাঠক এর ছবি

হা হা এতোবড়ো প্রশংসা শুনে শরীরে বল পেলাম। এটা জেনে ভালো লাগলো যে আপনি আমার লেখা একাধিকবার পড়েন, আবার খারাপও লাগলো এই ভেবে যে ঐ সময়টা বাঁচলে আপনি আরো অনেক মূল্যবান বই পড়তে পারতেন আর আমরা অনেক নতুন বিষয়ে আপনার লেখা পড়তে পেতাম। দুনিয়ায় অবিমিশ্র ভালো কিছুই নেই বোধহয়। হাসি

ছড়া কাটা বেশি কঠিন কাজ না, যদিও ছড়ার সারল্য অর্জন করা খুব মুশকিল। কবিতায় ফটাফট জটিল সব ভাবনাচিন্তা ঢেলে দেওয়া যায়, ছড়ায় সোজা সরল কথাবার্তা বলতে হবে বলেই কাজটা কঠিন লাগে। তার উপর নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছি নিজেই, প্রথম থেকেই ফুলছড়াগুলো দু-চার লাইনের মধ্যে রেখে। এখন একটা ছবি মাথায় এলেও তাকে ঐ পরিসরে আঁটাতে ঘাম ছুটে যায়।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনি আসলেই ভালো ছড়া লেখেন, দাদা হাসি

ভালো লাগল। সাথে কিছু জ্ঞানও অর্জিত হলো। সব মিলিয়ে ধন্যবাদ আপনাকে। সিরিজ এগিয়ে নিয়ে যান, থামবেন না...

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ প্রহরী ভায়া। হাসি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

প্রকৃতির দারুণ সব ছবি দেখে পরশু প্রকৃতিপ্রেমিকের এক পোস্টের কমেন্টে বলছিলাম- তিনি নিকের প্রতি সুবিচার করেন।

আপনার এসব লেখা পড়ে বলছি, আপনার নিক-করনের কোনো সার্থকতা নেই। এমন লিখিয়ে কীসের 'মূলত পাঠক'? হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

হা হা অনেক ধন্যবাদ আনোয়ার সাদাত শিমুল। লেখা পড়ে ভালো লেগেছে জেনে আনন্দ পেলাম।

নিক-টা বদলাতে বলেন? কিন্তু নতুন নিক-টা কী নেওয়া যায় একটা সাজেশন দ্যান। হাসি

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

আমিও শিমুল ভাইরে দ্বিতীয় করতাছি, নাম আর কামে মিল্লোনা। মূলত অনেককিছু, গৌণত পাঠক টাইপের নাম লয়া লন।

মূলত পাঠক এর ছবি

আরে না না, ঐ অতকিছু লেখার জন্যই তো পাঠ দরকার হয়। সবই তো ইধার কা মাল উধার, বুসলেন্না?

থাংকু হাসি

আলাভোলা এর ছবি

ছুপা রুস্তম দেঁতো হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

হাটের মাঝে রোজ আইস্যা খাড়া হই মালের ঝুড়ি লইয়া, হের পরেও ছুপা?

হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কিন্তু নতুন নিক-টা কী নেওয়া যায় একটা সাজেশন দ্যান।
"মূলত বিস্ময়" দেঁতো হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

এইবার লজ্জা পাই, কালা অঙ্গ বেগনি হইয়া গেলো, দ্যাখেন না?

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

চেরীফুল নিয়ে আদেখলাপানা ছেড়ে দেখো এই শোভা।

রেসিস্ট কবিতা,পড়ুম না দেঁতো হাসি
... ... হাহাহাহাহা.... আপনার কাব্যগুণ দিন দিন আমার মুগ্ধতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

মূলত পাঠক এর ছবি

আরে মশয় রেসিস্ট কই, আমি তো অ্যান্টি-রেসিজম চালাচ্ছি। ডি সি গিয়া দ্যাখেন, ঐ চেরীফুল লয়্যা কী মাতামাতি করতেসে। আর জাপানিগুলা তো একখান ক্রিয়াপদই বানায়া ফ্যালসে "চেরীফুল দর্শন করা" বইল্যা, ঐ থাবিমাস সুইমাস ইস্টাইলে (এখন সেই কথাটাই মনে আসতেসে না, নাইলে কয়্যা ফালাইতাম)। ক্যান, আমগো জাম্বুরাফুল কম কিসে?

থাংকু, আপনেরা পড়লে মনে বল পাই, শরীলেও।

স্নিগ্ধা এর ছবি

থাকেন তো না ডিসি তে, চেরীফুলের মর্ম আপনি কী বুঝবেন, যত্ত ইয়ে ...... রেগে টং

মূলত পাঠক এর ছবি

ঠিক আছে, আসছে বছর আবার হবে, তখন যদি সর্ষে-ইলিশ আর পুঁই-চচ্চড়ি খেতে খেতে চেরী দেখার ব্যবস্থা না করেছেন তো কি বোল্লাম!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"পারিজাত" সংক্রান্ত একটা সমস্যা। শেফালী ফুলকে পারিজাত বলা হয় এটা যেমন শুনেছি, আবার মান্দার/মাঁদার/পালতে মান্দার গাছকেও পারিজাত বলতে শুনেছি। কোনটা ঠিক? পারিজাত-সূর্যের প্রেমোপাখ্যানও পড়েছি কিন্তু তার কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র পাইনি। তাই বিষয়টি নিয়ে আমার দ্বিধা রয়ে গেছে। এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে দয়া করে কেউ কোন ভাষা-অভিধানের রেফারেন্স দেবেন না। উদ্ভিদবিজ্ঞানের মানুষ বা নিসর্গীদের রেফারেন্স থাকলে দেবেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মূলত পাঠক এর ছবি

আমি নিজেও পারিজাত = শেফালি, এতে কনভিন্সড নই, তবে পড়লাম তাই শেয়ার করলাম। পারিজাত শুনলেই মনে হয় বড়ো সাইজের ফুল, বেশ ব্রহ্মকমল টাইপ, পুঁচকি পুঁচকি শিউলীকে সেই রোলে ঠিক যেন মানায় না। আর পুরাণ-টুরানও এই ব্যাপারে খুব কাজে লাগবে না। কিছু জানা গেলে জানাবো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।