ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে |২০| আসন: জানুশিরাসন।

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: বুধ, ১৪/০১/২০০৯ - ১১:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আসন অবস্থায় মাথা হাঁটুর উপর রাখতে হয়, তাই আসনটিকে বলা হয় জানুশিরাসন (Janushirasana)| এ আসনের একাধিক পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে।

# জানুশিরাসন-(ক)

পদ্ধতি:
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। ডান পায়ের হাঁটু ভেঙে গোড়ালি দু’পায়ের সংযোগস্থলে রাখুন। ডান পায়ের পাতার নিচের দিকটা বাঁ উরুর সঙ্গে লেগে থাকবে। বাঁ পা পূর্বাবস্থায় সামনের দিকে ছড়িয়ে থাকবে এবং হাঁটুর নিচের দিকটা মেঝের সঙ্গে লেগে থাকবে। এবার দু’হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। এখন কোমর থেকে শরীরের উপরাংশ নিচু করে কপাল বাঁ পায়ের হাঁটুতে এবং দু’ কনুই বাঁ পায়ের দু’পাশে মেঝেতে রাখুন। বাঁ হাঁটু যেন না ভাঙে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন।
এবার হাত আলগা করে আস্তে আস্তে সোজা হয়ে বসুন। ডান পা সামনের দিকে ছড়িয়ে দিন। এখন বাঁ পায়ের হাঁটু ভেঙে গোড়ালি দু’পায়ের সংযোগস্থলে রেখে দু’হাত দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে কোমর থেকে শরীরের উপরাংশ নিচু করে কপাল ডান পায়ের হাঁটুতে এবং দু’ কনুই ডান পায়ের দু’পাশে মেঝেতে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে পূর্বের মতো ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এভাবে পা বদল করে করে আসনটি ৪ থেকে ৬ বার করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

প্রথম প্রথম দু’একদিন হয়তো কপাল ও কনুই ঠিক জায়গায় যাবে না। সহজভাবে যতটুকু হয় ততটুকুই করুন। দু’চার দিন অভ্যাসের পর ঠিক হয়ে যাবে। ভালোমত অভ্যাস হয়ে গেলে প্রতিবার অভ্যাসের সময় বাড়ানো যেতে পারে, তবে কোন মতেই যেন এক মিনিটের বেশি না হয়। এ আসনটি অভ্যাসের আগে বা পরে এমন একটি আসন করা উচিৎ যাতে মেরুদণ্ড পেছনদিকে বাঁকানো যায়।
auto

উপকারিতা:
আসনটি মেরুদণ্ড ও পেটের জন্য বিশেষ উপকারী। এ আসন অভ্যাস রাখলে মেরুদণ্ডের হাড়ের সংযোগস্থল নমনীয় থাকে এবং মেরুদণ্ডসংলগ্ন স্নায়ুমণ্ডলী ও দু’পাশের পেশী সবল ও সক্রিয় থাকে। মেরুদণ্ড সুস্থ ও নমনীয় থাকলে গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্রের কাজ স্বাভাবিক থাকে। বিশেষ করে অগ্ন্যাশয়, মূত্রাশয়, প্রজনন প্রভৃতি গ্রন্থিগুলো সতেজ ও কর্মক্ষম থাকে। বহুমূত্র রোগীর আসনটি করা অবশ্য দরকার। আসনটি হাত, পা, পেট ও বস্তিপ্রদেশের পেশী ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে, জঠরাগ্নি বৃদ্ধি করে, অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, বহুমূত্র, স্বপ্নদোষ, অর্শ প্রভৃতি রোগ কোনদিন হতে দেয় না। উপরন্তু উরুর সংযোগস্থলের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে এবং পেট ও কোমরের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমিয়ে দেহের গড়ন সুন্দর করে। কিশোর-কিশোরীদের লম্বা হতে সাহায্য করে। এ অভ্যাস রাখলে কোনদিন কোন বাত বা সায়টিকা হয় না, আর থাকলেও অল্পদিনে ভালো হয়ে যায়।

নিষেধ:
যাদের হার্নিয়া বা এ্যাপেণ্ডিসসাইটিস রোগ আছে, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আসনটি করা উচিৎ নয়। আর যাদের প্লীহা, যকৃৎ রুগ্ন বা অত্যধিক বড়, তাদের অতি সতর্কতার সঙ্গে আসনটি করা উচিৎ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

# জানুশিরাসন-(খ)

auto
পদ্ধতি:
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। ডান পা হাঁটু থেকে ভেঙে জানুশিরাসন (ক)-এর মতো গোড়ালি দু’পায়ের সংযোগস্থলে রাখুন, বাঁ পা বাঁ দিকে ছড়িয়ে দিন। পায়ের নিচের দিকটা মেঝের সাথে লেগে থাকবে। এবার কোমর থেকে দেহের উপরাংশ বাঁ দিকে মোচড় দিয়ে নিচু হয়ে মাথার পেছনধারটা হাঁটুর উপর রাখুন এবং দু’হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। বাঁ হাতের কনুই হাঁটুর ডানপাশে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন।
এরপর মোচড় ভেঙে সোজা হয়ে বসুন এবং একইভাবে বাঁ পা ভেঙে ডান পা ছড়িয়ে আসনটি করুন। ৪ থেকে ৬ বার আসনটি করুন এবং প্রয়োজমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
auto

উপকারিতা:
জানুশিরাসন (ক)-এর অনুরূপ। তবে দেহের উপরাংশে মোচড় পড়ার ফলে ঘাড়, কাঁধ, গলা, বুক, পিঠ, মেরুদণ্ড ও মেরুদণ্ডের দু’পাশের পেশী ও স্নায়ুজালের অল্প সময়ে খুব ভাল কাজ হয়।

নিষেধ:
জানুশিরাসন (ক)-এর অনুরূপ।

# দণ্ডায়মান জানুশিরাসন (Dandayamana Janushirasana)

auto
পদ্ধতি:
সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার ডান পা ভেঙে কিছুটা উপরে তুলে দু’হাত দিয়ে পায়ের পাতা ধরুন। এ অবস্থায় কপাল হাঁটুতে রেখে আস্তে আস্তে ডান পা সোজা করুন। এখন হাতের কনুই ভেঙে হাঁটুর দু’পাশে লাগান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পা বদল করে আসনটি আবার করুন। এভাবে আসনটি ৪ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

উপকারিতা:
জানুশিরাসনের অনুরূপ। এছাড়াও এ আসন দেহের ভারসাম্য বাড়াতে সহায়তা করে।

# বিভক্ত-জানুশিরাসন (Bibhakta Janushirasana)

auto
পদ্ধতি:
সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দু’টো কোমরের দু’পাশে রাখুন। এবার দু’পায়ের পাতা ঘষতে ঘষতে দু’দিকে নিতে থাকুন। পাছা এসে মেঝেতে লাগবে। এখন কোমর থেকে হাত তুলে নিয়ে শরীরের উপরাংশ ডানদিকে নিচু করে মাথা ডান হাঁটুতে ঠেকান। কোনরকম জোর বা ঝাঁকুনি দেবেন না, এতে উরুর সংযোগস্থলে চোট লাগতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১৫ সেঃ থেকে ২০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন।
এরপর হাত আলগা করে সোজা হয়ে বসুন। একটু বিশ্রাম নিয়ে এবার বাঁ দিকে একইভাবে অভ্যাস করুন। দু’দিকে ২ বার করে ৪ বার করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। পা দু’দিকে বেশিক্ষণ ছড়িয়ে রাখতে অসুবিধা বোধ করলে উঠে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিয়ে আবার করতে পারেন।

উপকারিতা:
আসনটিতে জানুশিরাসন ও উষ্ট্রাসনের প্রায় সব গুণ একসঙ্গে পাওয়া যায়। এছাড়াও উরুর সন্ধিস্থলের মাংসপেশী ও হাড়ের জোড় নমনীয় থাকে। ফলে দেহের ক্ষিপ্রতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া আসনটি অভ্যাস রাখলে হার্নিয়া, একশিরা, অর্শরোগ এবং কোন স্ত্রী-ব্যাধি হয় না।

নিষেধ:
যাদের অর্শ বা হার্নিয়া রোগ আছে, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আসনটি করা উচিত নয়।

# বিভক্তপদ-জানুশিরাসন (Bibhaktapada Janushirasana)

auto
এভাবে মাথা নিয়ে হাঁটুতে ঠেকানোর আসন হিসেবে জানুশিরাসনের আরো কিছু কিছু চর্চা রয়েছে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব:[১৯][**][২১]


মন্তব্য

কীর্তিনাশা এর ছবি

এইগুলারে যোগ ব্যায়াম কে কয়?

এইগুলা তো প্যাঁচ ব্যায়াম। শরীরে একবারে কয়টা প্যাঁচ মারা যায় এইটা তারই চেষ্টা। খাইসে আমারে খাইছে

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

এনকিদু এর ছবি

আসনটি হাত, পা, পেট ও বস্তিপ্রদেশের পেশী ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে, জঠরাগ্নি বৃদ্ধি করে, অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, বহুমূত্র, স্বপ্নদোষ, অর্শ প্রভৃতি রোগ কোনদিন হতে দেয় না।

আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে এটাকে ঠিক দোষ বলেনা, গুন বলে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।