। দুই-মেগাপিক্সেল...। রায়েরবাজার টু ধানমন্ডি ।

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/০৯/২০০৯ - ৮:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


১৬ জানুয়ারি ২০০৯, ছুটির দিন থাকায় দুই-মেগাপিক্সেলটা সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য রায়েরবাজার বধ্যভূমি। এর আগে যাইনি কখনো। লোকেশান নিয়ে জানলাম, মিরপুর থেকে ‘শতাব্দী’ টাউন সার্ভিসে ‘শংকর’ নামক জায়গায় নেমে রিক্সায় গন্তব্যস্থল। আমি তো আর চিনি না, গাবর যাত্রী পেয়ে বাসঅলা আমাকে নামিয়ে দিলো পিলখানার রাইফেল স্কয়ারের কাছে। কী আর করা ! বাংলাদেশ রাইফেলস-এর সুদৃশ্য ফটকটি তাক করে দিলাম সাটার টিপে।

.
auto

এরপর এখান থেকেই রিক্সায় উঠলাম। চিপা-চাপা গলি-গালা পেরিয়ে ভেড়িবাধের খা খা শূন্যতায় এসে ঢাকাকে কেমন অপরিচিত লাগলো। দূর থেকে বধ্যভূমি নজরে এলো। ঝিম ঝিম করা দুপুর। কোলাহলহীন অদ্ভুত ফাঁকা পরিবেশ দেখে কল্পনা করার চেষ্টা করলাম ছত্রিশ বছর আগের সেই একাত্তরে এলাকাটা কেমোন নির্জন ভয়াল আর দুর্গম ছিলো।

.

auto

অনেক বড় এরিয়া নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমি। এখানে এলে ভেতরটা সত্যি সত্যি ফাঁকা হয়ে যায়। ইচ্ছেমতো সাটার টিপছি। দুটো উদোম গতরের বাচ্চা ছেলে এসে সামনে দাঁড়ালো। নিজেকে দেখা ও দেখানোর ইচ্ছা মানুষের চিরন্তন। সম্ভবত জেনেটিক কোডেই তা গাঁথা থাকে। এরাও তো এর বাইরে নয়। সাটার টিপলাম তাদের দিকে। একটুকু চাওয়া, মনিটরে নিজেদের চেহারা দেখে সে কী খুশি ! আহা, কতো অল্পেই তুষ্ট এরা !

.

auto

আবার রিক্সায় ফেরা। গলি-গালা পেরিয়ে মূল সড়কে পৌঁছেই হাঁটা ধরলাম। যাবার সময় এদিকে চমৎকার কিছু স্থাপনা চোখে পড়েছিলো। এখনকার লক্ষ্য সেগুলোই। কিন্তু চোখে পড়ছে না একটাও। তাহলে কি ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় আসা যাওয়া ! ইবনে সিনা’র সুদৃশ্য স্থাপনাটা চোখে পড়তেই ক্লিক।

.
auto

এবার সামনে পড়লো ‘ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’। ভাবলাম দেই ক্লিক করে।

.
auto

আরেকটু এগুতেই বাঁ পাশে লেকের লাগোয়া সেই লাল বাড়িটা। জাহাজের আদলে তৈরি বাড়িটার ছবি দূর থেকে অনেককেই তুলতে দেখলাম। আমি আর ভীড়ের মধ্যে না গিয়ে আড়াআড়ি গিয়েই ক্লিক করলাম। একটুকু গাছের আড়াল না হয় থাকলোই !

.
auto

বিকেলের আলো ততক্ষণে মজে এসেছে। ‘ইউল্যাব’-এর স্থাপনাটা যেদিকে, দুই-মেগাপিক্সেল তাক করতে গিয়ে শেষ সূর্যটা ডিসটার্ব করলো। করলে করুক।

.
auto

হাঁটতে হাঁটতে রাইফেলস স্কয়ার পেরিয়ে সিটি কলেজ মোড়ের কাছে এসে ফিরতি বাসে উঠলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা নামি নামি। বাসের জানালা দিয়ে চোখ পড়লো মৃনাল হকের তৈরি আরেকটা ভাস্কর্য ‘অর্ঘ্য’। চলন্ত বাস থেকেই ক্লিক করলাম। হলো না। ওটার জন্য আরেকদিন বাসের জানালায় বসতে হবে।

.
auto

বাসায় ফিরে দেখি স্ত্রীর শ্বাসকষ্টটা উঁকিঝুকি মারছে ফের। কিন্তু ইনহেলারটা কোথায় রাখলো খুঁজেই পাচ্ছে না সে।


মন্তব্য

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

দাদা লাল বাড়িটার ছবিতে ফাঁকি মারলেন কেন? পাশে লেখা না থাকলে বুঝা যেতনা কোনটা লর্ড ক্লাইভ আর কোনটা নবাব সিরাজউদ্দৌলা...........

রণদীপম বসু এর ছবি

আমি কী করমু ভাই ! আমি তো প্রতিটা লেখার নিচে নিচে ছবিগুলা দিছি, কিন্তু পোস্টে দেখি পিঁপড়ার ঝাঁকের মতো লেখা সব একসাথে দলা-পাকাইয়া গেছে !

নেন, ভালো কইরা লাল-বাড়ি দেখেন...

auto

যে ছবি বড় কইরা দেখতে চান, সেই ছবিতে ক্লিক করেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

কি বাত্তি জ্বালাইলিরে মানিক,,এক্কেবারে ফকফইক্কা..। ধন্যবাদ দাদা।
আর একটা কথা আপনার মত করে লেখার মাঝে মঝে কিভাবে ছবি এ্যাড করতে হয় জানাবেন কি প্লিজ ?

রণদীপম বসু এর ছবি

লেখার মাঝখানে ছবি আর এলো কই ! এ ব্যাপারে টেকি সচল ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দুর্দান্ত এর ছবি

যেন মনে না করেন যে আপনার সব পোস্ট এই নেতিবাচক মন্তব্য করি, তার জন্য আগেই বলে নিচ্ছি, আপনার ছবির হাত চমতকার। আপনার সুবাদে ঢাকাকে দেখি, ভাল লাগে, কিন্তু বলা হয় না। এই পোস্টে আপনি যে এলাকায় নিয়ে গেলেন, সেখানে যে আমার শিকড়। আমি রায়ের বাজারে জন্মেছি, ধানমন্ডির ৯এ তে বড় হয়েছি, আমার বাবা মা এখনো ওখানেই আছেন। আপনার সুবাদে এই বহু পরচিত পথের হালনাগাদ ছবি দেখলাম। ধন্যবাদ।

কিন্তু ছবিতে (আর গত কয়েকবার ছুটিতে বাড়ি গিয়ে) যা দেখেছি, তাতে সুখ পাইনি। ছবি ২ ও ৩ এর মন খারাপ করার দাবী একেবারেই আলাদা। এই স্থাপনায় আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবিদের মনে করার উপায় পেয়েছি। তবে এ যায়গাটার আগের সৌন্দর্য অন্যরকম ছিল। এখানে তার কিছু আভাষ পাওয়া যাতে পারে।

ছবি ১, ঠিক এ জায়গাটা মানে বিডি আর এর প্রবেশপথে, তাদেরই ট্রাকের আঘাতে আমার প্রিয় সুজ্জুনানা (আমার নানার অনুজ) মারা যান এরশাদের আমলে। পুলিশ মামলা নেয়নি। আজও তার বিচার হয়নি।

ছবি ৪,৫, ৭ এর ভবনগুলোর এখানে থাকার কোন অধিকার নেই। আপনিই বলেন যখন এক একটি ২ মেগা পিক্সেলের ছবি বা ১০ কাঠার ওপর তোলা ৬তলা বাড়িতে আপনি একটি আস্ত বিশ্ববিদ্যালয় পুরে দিতে পারছেন, তখন কি আর মন ভাল থাকে?

ছবি ৬ এরও এখানে থাকার কথা নয়। এই বাড়িটির সবটুকু জায়গা লেক ভরাট করে তৈরী। এর মালিক খাজা আনোয়ার হোসেন পাগড়ী আর গেরুয়া নেবার আগে মানে ১৯৮৭ পর্যন্ত রায়েরবাজারেই একটি টিনের দোচালা বাড়ির থাকতেন। পাড়ার বেকার যুবকদের কাছে সেই দোচালা বাড়ির পরিচিত ছিল এর অফুরন্ত টাইগার বিয়ার আর জমজমাট তিনপাত্তির আসরের জন্য। 'চিনি জাফর' নামে সুপরিচিত একজনকে প্রাইই দল বল নিয়ে এখানে আড্ডা দিতে আসতে দেখা যেত। লেক হাপিস করা এনার হবি। বনানীতে ওয়ারিদের অফিস ও এর পেছনের লাল ইঁটের বাড়িটিও এনার।

ছবি ৮, মূল ভাষ্কর্য নয়, আমার সমস্য হল আমি এই চত্বরের কৃত্রিম বকগুলো আর শাপলা/পদ্ম গুলোকে সহ্য করতে পারি না। কেন যানি মনে হয় ওগুলো মৃনালের নয়।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ দুর্দান্ত, আপনার অনুভব ও উপলব্ধিগুলোকে আমি টুপি খুলে সম্মান জানাচ্ছি।

আমি তো আপনার মন্তব্যে এই পোস্টের জন্য নেতিবাচক কিছুই পেলাম না ! বরং এই পৃষ্ঠাটাকে আপনি অনেক বেশি অর্থবহ ও সম্মানিত করলেন। আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আমি বিস্ময়করভাবে একাত্ম বোধ করছি ! সম্ভবত এখানেই আলোকচিত্রের গুরুত্ব। আমি আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, আপনার যথাযথ মন্তব্যগুলো আমার ছবি তোলাকে সার্থক করেছে। ধন্যবাদ আপনাকে মন খুলে কথাগুলো বলার জন্য। আমার ছবি পোস্ট দেয়ার উদ্দেশ্যটাই তো তা-ই।

শুধু একটা জায়গায় আপনার মতের সাথে আমার মিল খায় নি। তা হলো, ঐ যে বললেন- ছবির হাত চমৎকার, ওটা। আমার ধারণা, গোটা সচল পরিবার আমার এ গুণ (গাবরের মতো সাটার টিপা) সম্পর্কে অবগত। এক্ষেত্রে আমার বড়ো সুবিধাটা হলো, হায়া-শরম আমার একটু কম। নইলে বাঘা বাঘা ছবিয়ালদের চারণভূমি এই সচলায়তনে এরকম গাবরমার্কা ছবি কেউ দেয় ! হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনে পুরা ঢাকার ছবি তুলে ফেলেন। এইটা একটা ভালো কাজ হবে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

এই সুযোগটা আপনার অনেক বেশি। আপনি তা না করে আমাদেরকে ঠগাচ্ছেন !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি যদি ছবি তুলি তাইলে আইলসামি কে করবো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এই সিরিজটা আমার পছন্দ হইসে। আমিও 'গাবরের মতই শাটার টিপি'- কিন্তু সেইগুলা এরকম গুছানো না। ... রাইফেলস স্কোয়ারের ভেতরের ছবি তুলতেই আমিই বেশি পসন্দ করি দেঁতো হাসি
---------------------------------------------------------------------------

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

রণদীপম বসু এর ছবি

ভেতরের ছবিগুলো আমাদেরকে দেখাচ্ছেন না কেন ! ভেতরটা আমার দেখা হয় নি আজো।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।