মনের ব্যকরণ

রেজুয়ান মারুফ এর ছবি
লিখেছেন রেজুয়ান মারুফ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১২/০৮/২০০৯ - ৩:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি আউলা ঝাউলা টাইপ লিরিক লেখি হঠাত হঠাত। সেইগুলি কবিতার মতো পড়ি একলা একাই। তেমন কাউরে দেইনা এখন আর। কখনো সখনো আমার বোনদের পইড়্যা শুনাই। খুব ঘনিষ্ট যারা গানবাজনা নিয়া আছে, তারা মাঝে মধ্যে লিরিক চায়। আমি নিজেরে ধন্য মনে করি। 'সুজন বুঝিয়া তোরা প্রেম করিস' এর মতো 'গায়ক বুঝিয়া তুই গান দিস' নীতি অবলম্বন করি।
কিন্তু এক সময় এই রকম কঞ্জুস ছিলাম না আমি। তখন কলেজে ঢুকছি সবে, চারিদিকে ব্যান্ডের ছড়াছড়ি। দুইটা ব্যান্ডের এ্যালবামে আমার তিনটা গান গীত হইয়া গেছে অলরেডি! গীতিকার হিসেবে জীবন আমার আপাত ধন্য! রাত্রে ঘুম আসেনা! রাইত তিনটার সময় উইঠা টেপরেকর্ডার চালায়া নিজের লেখা গান শুনি। যখন পাবলিকে গান চায় - তখন পারলে আমি শূণ্যে উড়ি অবস্থা! কেউ একটা গান চাইলে তিনটা দিয়া বলি- যেইটা পছন্দ হয় সেইটা গাইয়েন। ভাবটা নিজের মনে কইরা নিয়া যান ভাই! গীতিকার হিসেবে রেডিওতে তালিকাভূক্ত হইতে ৬০ টা গান লাগে, আমি ৮০টা গান রেডি করি জমা দিবার জন্য!
বাড়ির সামনে রাস্তায় এক চক্কর দিয়া আসলেই একটা গান লেখা হইয়া যায়! পড়ার বই বন্ধ কইরা জানালার পাশে বইস্যা গীত রচনা করি। মনে মনে ছুডু রবীন্দ্রনাথ! এইবার কই একটা করুণ কাহিনী- একবার এক ব্যান্ডের ভোকালিস্ট লিরিক চাইলো, যথারীতি তিন/চাইরটা দিলাম। মকসুদ জামিল মিন্টু সাহেব সুর করলো এবং কীবোর্ড বাজাইলো , সঙত দিলো লাবু, পিয়ারু খান এরা। রেকির্ডং এর সময় একদিন গেলাম তাদের সাথে মুলাকাত করতে। ফিরা আইস্যা পূনরায় রাত্রে ঘুম হারাম! ফিডব্যাকের লোকজন আমার লিরিকস নিয়া কাজ করতাছে! আমি কেমনে ঘুমাই কন? হোক না অইটা তাদের খ্যাপের কাম! অবশেষে একদিন প্রতীক্ষার অবসান হইলো ,শুনলাম সারগাম থেইক্যা সেই এ্যালবাম বাইর হইছে। টাকা নিয়া দৌড়ায় গেলাম ক্যাসেটের দোকানে। চমতকার কাভার! গীটার-কীবোর্ড-ড্রামস সহযোগে সেইরকম পোজ দিয়া ব্যান্ড মেম্বাররা দাঁড়ায়া আছে প্রচ্ছদে। মাঝখানে সৌম্যকান্তি ভোকালিস্ট মহোদয়! সেই দিকে তিন সেকেন্ড চাইয়াই ক্যাসেট উল্টাইলাম আমি - দেখি ক্যাসেটে আমার গান আছে। শুধু গীতিকারের জায়গায় আমার বদলে সেই ভোকালিস্টের নাম। আমি ক্যাসেট না কিইন্যা দোকান থেইক্যা বের হইয়া আসলাম। কয়দিন পরে সেই ভোকালিস্ট (গায়ক না) এর সঙ্গে দেখা হইতেই সে আমারে সরফরাজ এর নাসিরুদ্দিন শাহ'র মতো জড়ায়া ধরলো - মারুফ রে ভাই, মিসটেকলি তর নামটা বাদ পইর‌্যা গেছে । আমরা ঠিক করছি নেক্সট এ্যালবামে তর ছয়টা গান আমরা গাবো। এইবারের গানগুলি কিন্তু একটু স্যাড হইতে হবে। আমি তারে বললাম - এরচে স্যাড আর কি হইতে পারে কন?
এরপর থেইক্যা আমি তেমন কাউরে গান-টান দেইনা। নিজেও পারিনা গাইতে তাই কবিতার মত পড়ি। বলতে পারেন গান আবৃত্তি করি।
আমার দুইটা বন্ধু আছে ভালো গান -সুর করে। একজন ঢাকার সানী যুবায়ের আরেকজন লন্ডনের আকাশ সুলতান। এরা দুই জনে আমার দুই/তিনটা গান সুর কইরা আমারে মুগ্ধ করছে! আমি জানি সচল পরিবারে অনেক গুনী লোকজন বাস করে, আপনেদের জন্য একখান গীতিকা পেশ করলাম। সচল পরিবারের কেউ কি সুর কইর‌্যা আমারে কৃতার্থ করবেন? আমি সুর করতে পারলে কেউরে কইতাম না কিন্তু!

পূনশ্চ: এই গানটা গতকালকে পোস্ট করতে গিয়াও পারি নাই, মনে হয় কোন সমস্যা হইছিলো।

মনের ব্যকরণ

আমার মনের মধ্যে রোদ্দুর নাই
হৃদয় জুড়ে বৃষ্টি
আবার মন শুকাইয়া মরুভূমী
কী যে অনাসৃস্টি
এই মনের ব্যকরণ আমি বুঝতে পারিনা যে
কোন রঙেতে সাজায় সে যে- কোন রঙেতে সাজে।।

(আমার) আলোর বাজার ভঙ্গ হলে
আঁধার করে খেলা
সারা নিশি কান্দে আবার
হেসে কাটায় বেলা
রঙধনু রঙ লুকিয়ে রাখে মনের ভাঁজে ভাঁজে।।
কোন রঙেতে সাজায় সে যে – কোন রঙেতে সাজে...

(আমার) মন যমুনার চপলা ঢেউ
উতলা যে খুব
উজান ভাটি বোঝে না সে
শূণ্যে মারে ডুব
এই মনটা নিয়া তাই তো আমি – সদাই মরি লাজে।।
কোন রঙেতে সাজায় সে য়ে – কোন রঙেতে সাজে....


মন্তব্য

নীল [অতিথি] এর ছবি

ভালোই...

মণিকা রশিদ এর ছবি

গানটা ভালো লাগলো। ট্রাই করে দেখতে পারি সুর করা যায় কী-না।

........................................
......সবটুকু বুঝতে কে চায়!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অনিকেত এর ছবি

আমিও দাখিল হইলাম বস----

অম্লান অভি এর ছবি

সুরারোপিত হোক আর না হোক লেখা চলুক.....গান, কবিতা আর মনের ব্যাকরণ নিয়ে।
(চোরেরা চুরি করে বলে কি আমরা আমাদের প্রিয় আসবাব ঘরে রাখব না!).....
ভালো লাগলো। মনিকা রশিদ এর সুরারোপ সফল হোক।

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আপনার নামটা মনে হয় না, ভুলে বাদ পড়ে গেছে। ধারনা করছি, ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা করেছে। এরকম ঘটনা মিডিয়া জগতে অনেক আছে। আচ্ছা, এরপর কি তাদের সেই ৬টা অতি করুণ রসের গান দিছিলেন?

মণিকাদি আর অনিকেত দা'র কর্মযজ্ঞ সফলতা কামনা করছি।
..................................................................

ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

দুঃখ লাগলো শুনে। এমন ঘটনা প্রায়-ই ঘটে। কারোটা আমরা জানি, কারোটা না।

মণিকা আপা আর অনিকেত ভাইয়ের সৃষ্টি শোনার অপেক্ষায় রইলাম।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দুঃখজনক অভিজ্ঞতা।

গানের কথাগুলো চমৎকার। মণিকাপু আর অনিকেত'দার কাজের অপেক্ষায় থাকলাম।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মনিকাদি আর অনিকেতদা গান নিছে। আশা করি ভালো হবে।

আপনি সানীর বন্ধু? তাইলে আপনারে খুঁজে নিতেছি আড্ডার জন্য... নিজ দায়িত্বে... দেখা হবে... ভালো থাইকেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো তো...আমিও একসময় লেখতাম...আরেকটু নীচুদরের ছাইপাঁশ

সূর্যবন্দী মেঘ...

নাজমুস সামস [অতিথি] এর ছবি

গান হা মনের ব্যকরণ গাতক চিনাইল ঘাতক চিনাইল। আপনার মোবাইল নাম্বারটা কি দেয়া যায় কথা বলতাম, গান গাইতাম!!!!
নাজমুস সামস

রেজুয়ান মারুফ এর ছবি

সময় মতো উত্তর দিতে পারছিনা, এই বদ অভ্যাস তাড়াতে হবে যথা শিগগির।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ! মনিকা আপু আর অনিকেত দা'র অডিও পোস্ট এর অপেক্ষায় আছি ..........

-------------------------------------------------------

আমার জীবন থেকে আধেক সময় যায় যে হয়ে চুরি
অবুঝ আমি তবু হাতের মুঠোয় কাব্য নিয়ে ঘুরি।

আমার জীবন থেকে আধেক সময় যায় যে হয়ে চুরি
অবুঝ আমি তবু হাতের মুঠোয় কব্য নিয়ে ঘুরি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।