বন্ধু ভাল থেকো

রেজওয়ান এর ছবি
লিখেছেন রেজওয়ান (তারিখ: সোম, ১২/০৫/২০০৮ - ৫:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই।

বাড়ি ফিরেই খবরটি পেলাম। চ্যানেল আইতে খবরটি দেখিয়েছে। বধু বলল: "তোমাকে ওই সময় ফোন করেছিলাম এটি বলার জন্যেই কিন্তু কষ্ট পাবে বলে বলতে পারি নি। ভালই হয়েছে দেখোনি। আগের জগলুলের সাথে মৃত্যুর পূর্বের জগলুলের কোনই মিল নেই, মনে হচ্ছে বুড়ো কেউ। শুকিয়ে কাঠি, চাপা ভাঙ্গা, চোখগুলো কেমন ঠিকরে বেরিয়ে গেছে,..."। আমার কানে আর কিছু ঢুকছিল না। আমি তখন দশ বছর পূর্বে চলে গিয়েছি।

থিয়েটার স্কুলের কর্মশালায় প্রথম জগলুলের সাথে পরিচয়। তুখোড় আড্ডাবাজ ছেলে; যে কোন গম্ভীর পরিবেশ হালকা করে দিতে পারে নিমিষেই তার হাস্যরসের মাধ্যমে। আর প্রচুর ট্যালেন্টেড। ২৫ বছরের ছেলে, অথচ চুল অধিকাংশই পাকা। আমরা বলতাম ঐটি অভিজ্ঞতালব্ধ। গান গাওয়া, নাটক লেখা, মিউজিক কম্পোজ কিংবা অভিনয় যে কোন কিছুতেই সর্বেসর্বা।

ক্রিয়েটিভ কাজের প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রবল। এর ওর জন্যে প্রথমে বেগার খেটে পরে বিজ্ঞাপন ও নাটকের মিউজিক বানানোই পেশা হিসেবে নিল। মাঝখানে স্কলাস্টিকায় কিছুদিনের জন্যে প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি। আর সাথে তো অভিনয় নেশা হিসেবে ছিলই।

শুধু দলের একজন কর্মী হিসেবে নয় তার সাথে বন্ধুত্বের অন্য কারন হচ্ছে আমাদের 'হুইরে' গ্রুপের কার্যক্রম। এক সাথে আমরা রাতভর আড্ডা, গান গাওয়া, ঘুরে বেড়ানো এসব কত কিছুই না করেছি। রিহার্সেল শেষে রাত নটা-বারোটা মধুমিতায় সিনেমা দেখা অথবা কোরাস গান ধরা "তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা"। তার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল যে অতি সহজেই সবার আপন ও প্রিয় হয়ে যেত এবং এ নিয়ে আমরা হিংসেও করতাম।

সাথী মেহেলীর সাথে তার বিবাহের পর অপার বিস্ময়ে দেখেছি জগলুলকে আলাদা সংসার সামলাতে। বাহবা এই ছন্নছাড়া নিয়ম ভাঙা ছেলে এ পর্বেও হিট।

তার পরেই শোনা গেল সেই শোক সংবাদ। তার দেহে প্রস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়েছে। বজ্রাহতের মতই আচরণ তখন আমাদের, এ মেনে নেয়া যায় না কিছুতেই। আমি তখন দেশ ছাড়ছি। নানা কাজে ব্যস্ত। জগলুলের সাথে অনেকদিন দেখা নেই। সে পালিয়ে বেড়ায় না আমি, বুঝতে পারি না। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয়, স্বাস্থ্য বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়ে। ওদিকে ফান্ড রেইজিং চলছে তার চিকিৎসার বিশাল খরচ যোগাতে। প্লেনে চড়ার আগে শেষ বার যখন দেখা করতে গেলাম তাদের পেলাম না। মেহেলীকে ফোন করে বললাম চেকটি এখনও প্রেজেন্ট হয় নি কেন? জমা করে নিও।

এরপর দুর থেকে মাঝে মধ্যে তার খবর পেয়েছি। তার শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হয়েই যাচ্ছিল, ডাক্তার বলেছিল আর বেশী দিন নেই। মাঝে বেশ কয়েকদিন খবর নেয়া হয় নি। আমরা যেচে পরে দু:সংবাদ শুনতে চাই না।

৩৫ বছরের একটি উচ্ছল জীবন এভাবে ঝরে পড়ল। অনেক সম্ভাবনার ইতি ঘটল। আমি নিশ্চিত সে স্বর্গে গিয়ে নিশ্চয়ই সবাইকে আনন্দ উল্লাসে ব্যস্ত রাখছে। কিন্তু ধরিত্রী তো বিষাদে ছেয়ে গেল বন্ধু। তোমার স্মরণ যদিওবা মোক্ষণ করে তার কিছুটা।

ডেইলি স্টারের খবর


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বন্ধ্যা সময়ে সম্ভাবনায় মানুষগুলোর এইরকম চলে যাওয়া,আরো গভীর অন্ধকারের ইংগিত দেয় মাত্র ।
----x----
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুজন চৌধুরী এর ছবি

আপনার লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো।
জগলুলের সাথে আসলে আমার পরিচয় নেহাতই ২দিনের।১টা আমাদের নবীন বরণের সময় কি-বোর্ড প্লেয়ার পাওয়া যাচ্ছিলো না বিপাশা কোথা থেকে ১টা ছেলেকে ধরে এনে বল্লো ও বাজাবে এবং বলতে দ্বিধা নেই ওর জন্যই আমরা উতরে যাই সেবার ,অনুষ্ঠানের পর নাম জানলাম জগলুল । ২য় বার আমার এ্যানিমেশানের মিউজিক করার জন্য লোক খুজচ্ছি রাহুল নিয়ে গেলো ১টা স্টুডিওতে দেখি জগলুল!! চমত্কার কাজ করলো ।
সেই শেষ আর এখন আপনার লেখায় জানলাম ও নাই !!!


লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ

তারেক এর ছবি

সমব্যথী
যেখানেই থাকুন আপনার বন্ধু ভালো থাকুন - এই কামনা করি

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

কনফুসিয়াস এর ছবি

মন খারাপ হলো পড়ে।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হিমু এর ছবি

জগলুলের অসুস্থতার চিকিৎসার জন্যে যখন অর্থসংগ্রহের তোড়জোড় চলছে, দ্বিতীয় প্রজন্মের টিভিচ্যানেলগুলোতে তাঁর শুভার্থীরা বিভিন্ন টক শো-তে খুব হৃদয়গ্রাহী আলোচনা করেছিলেন। কেউ একজন আক্ষেপ করে বলছিলেন, জগলুল এভাবে শেষ হয়ে যাবে?

আমি জগলুলকে চিনি না, কিন্তু খুব বিষাদ নিয়ে অনুভব করছি, কী তুচ্ছ, কী ক্ষুদ্র, কী মূল্যহীন হয়ে যাই আমরা মৃত্যুর পর। শুধু বন্ধু আর সন্তানদের মধ্যে বেঁচে থাকি, স্মৃতির হঠাৎ দংশন ছাড়া আর কিছু রেখে যাই না।

জগলুলের বন্ধু আর পরিবার তাঁকে হারানোর শোকের আঘাত জয় করুন, এই কামনা করি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দীর্ঘশ্বাস...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কাল বেড়াতে গিয়েছিলাম সোনারগাঁও
সকাল বেলা সেখানে নেমেই মোবাইলে মেসেজ পেলাম জগলুল আর নেই...

বিকেলে শিল্পকলায় পুরোটা সময়ই ছিলাম কিন্তু তার মুখ দেখতে যাইনি
কারণ মাত্র মাসখানেক আগে তাকে যেমন দেখেছি আমি আর তাকে দেখতে চাচ্ছিলাম না...

বারবার মনে হচ্ছিল জগলুল চলে যাবে আমরা জানতাম
কিন্তু জগলুল বিশ্বাস করত না
সেজন্যই আগের রাত পর্যন্ত সে কাজ করেছে...

অতিথি লেখক এর ছবি

কষ্ট পেলাম লেখাটা পড়ে।আপনার বন্ধুটির আত্নার শান্তি কামনা করছি।
-নিরিবিলি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।