মুহম্মদ জুবায়ের স্মারকগ্রন্থঃ তাঁর বন্ধুরা এবং যুগান্তর

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি
লিখেছেন লুৎফর রহমান রিটন (তারিখ: সোম, ২৯/০৯/২০০৮ - ১২:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটু আগে ফরিদুর রেজা সাগর জানালেন মুহম্মদ জুবায়েরকে নিয়ে চ্যানেল আইতে বসেছিলেন তাঁর বন্ধুরা। মুহম্মদ জুবায়ের স্মরণে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের পরিকল্পনায় সাগর ভাইয়ের সঙ্গে আফজাল হোসেন ইমদাদুল হক মিলনসহ আরো কেউ কেউ আছেন।সাগর ভাইকে আমি সচলায়তনের কথা বললাম।সন্ন্যাসীর লেখার লিংকটা তিনি চাইলেন।আমি পাঠাচ্ছি এক্ষুণি।

জুবায়ের ভাই যখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তখন সাগর ভাইই আমাকে বলেছিলেন একটা নিউজ পাঠাতে আমাদের সময়ে।সাগর ভাইকে বলেছিলাম--জুবায়ের ভাই এইসব পছন্দ করেন না। আর নিউজ করে কীইবা হবে? সাগর ভাই বলেছিলেন আর কিছু না হোক কিছু মানুষ জুবায়েরের জন্যে দোয়া তো করতে পারবে।সাগর ভাইয়ের কথায় প্রাণিত হয়েই রিপোটর্টি করেছিলাম আমি। জুবায়ের ভাই একটু সুস্থ হয়ে আইসিইউ থেকে কেবিনে ফিরে এলে আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছিলেন শাহীন ভাবী।জুবায়ের ভাই আমাকে বলেছিলেন রিপোর্টটির কথা তিনি শুনেছেন এবং আমি কাজটা ঠিক করিনি।
‘আমার কাজে খবরদারি করার আপনি কে, আমি কি আপনার চাকরি করি
নাকি?’
আমার আচমকা আক্রমনে একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে জুবায়ের ভাইয়ের সহাস্য প্রশ্ন ছিলো—‘করেন না কেনো?’
জুবায়ের ভাইয়ের প্রস্থানের সংবাদটি পাওয়ার পর যন্ত্রচালিতের মতো প্রথমে মুর্শেদকে এবং তারপর সাগর ভাইকে ফোন করি। ঢাকায় তখন মাত্র সকাল হয়েছে। সাগর ভাই সঙ্গে সঙ্গে চ্যানেল আইয়ের সকালের খবরে এবং একটু পর পর শীর্ষসংবাদে জুবায়ের ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদটি প্রচারের উদ্যোগ নিলেন। প্রথমে জুবায়ের ভাইয়ের ছবি ছিলোনা নিউজে। সাগর ভাই আমাকে ফোন করে বললেন দ্রুত ছবি পাঠাতে।আর জুবায়ের ভাইকে নিয়ে আমাদের সময়ের রিপোর্টটি প্রকাশের তারিখ জানাতে বললেন। আমি তারিখটি বলি। অশ্রুসজল নয়নে আমি ছবিও পাঠাই।কয়েক মিনিটের মধ্যেই সাগর ভাইয়ের ফোন—নিউজটা এখনই ছবিসহ যাবে, দেখো।আমি আমার প্রিয় জুবায়ের ভাইকে দেখি। আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।এই মানুষটি আর আমার সঙ্গে টেলিফোনে গল্প করতে করতে রাত পার করে দেবেন না!

মুহম্মদ জুবায়ের কলাম লিখতেন যুগান্তরে। ৬ সেপ্টেম্বর আমাদের সময়ের ব্যাক পেজ-এ গুরুত্বের সঙ্গে তাঁর অসুস্থতার খবরটি তিন কলামব্যাপী ছবিসহ প্রকাশিত হবার পরেও যুগান্তর এ বিষয়ে নিষ্পৃহ থেকেছে। এমনকি মুহম্মদ জুবায়েরের মৃত্যুসংবাদটি চ্যানেল আইতে বারবার প্রচারিত হবার পরেও যুগান্তর এ বিষয়টিকে কোনো “খবর” বিবেচনা করেনি।এখন সেই পত্রিকাটিতে চাকরিরত জুবায়েরের বন্ধুরা শোকস্তম্ভ লিখে ভরিয়ে ফেললেও আমি বিস্মিত হবোনা।


মন্তব্য

পলাশ দত্ত এর ছবি

আমাদের বেশিরভাগ মানুষই আসলে এমন- যুগান্তরের মতো- তাই না রিটন ভাই?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

না পলাশ, বেশির ভাগ মানুষ নয়,কিছু সংখ্যক মানুষ।
আর মুহম্মদ জুবায়েরের ভালো বন্ধুর সংখ্যাই বেশি।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

পলাশ দত্ত এর ছবি

মুহম্মদ জুবায়েরের ভালো বন্ধুর সংখ্যাই বেশি

একদম ঠিক।।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

তীরন্দাজ এর ছবি

এরা এমনই, একেবারেই অবাক লাগছে না!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

আমি খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

কি বলব বুঝতে পারছিনে, চুপ থাকাই শ্রেয়।
জুবায়ের ভাইকে নিয়ে লেখাগুলো পড়তে পড়তে থমকে যাই।
মাঝে মাঝে ভাবি এই দুঃস্বপ্ন কেটে যাক।
কিন্তু এ দুঃস্বপ্ন তো ঘুঁচবে না কোনওদিন।

--------------------------------------------------------

আরিফ জেবতিক এর ছবি

যুগান্তরের আচরন দেখে রিটন ভাই অবাক হয়েছেন জেনেই বরং আমি অবাক হলাম ।
যে পত্রিকার মালিক বাবুল আর সম্পাদক গোলাম সারওয়ার , সেই পত্রিকার আচরন এর চেয়ে ভালো হবে এমনটা কখনোই আশা করি না ।

অমিত আহমেদ এর ছবি

বিস্মিত হলাম! রাগে গা চিড়বিড় করছে। কিছু মানুষের চামড়া ভেদ করে ভালোবাসা আর ভেতরে পৌঁছায় না।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

ধূসর মানব [অতিথি] এর ছবি

এইসব হাবিজাবি লোকদের গালি দিয়ে Space নষ্ট করার কোনো কারন নেই।

আবু রেজা এর ছবি

অনেক কিছু জানা গেল।
আসলে অনেক ঘটনাই থেকে যায় অন্তরালে।
ধন্যবাদ রিটন ভাই।

যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

রণদীপম বসু এর ছবি

দিক + অন্ত = দিগন্ত

জোঁক + অন্তর = যুগান্তর !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

তারা এখন জুবায়ের যুগ থেকে অন্য কোন অন্তরে। তেমন অবাক হইনি। তবে চ্যানেল আই-এর খবরেই আমি প্রথম শুনি খবরটা। সেজন্য চ্যানেল আইকে বিশেষ ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

জনৈক "শিক্ষাগুরু" দেখলাম সচলায়তনে জুবায়ের ভাইকে নিয়ে সচলদের শোককে শোকের রাজনীতি আখ্যা দিয়ে একটি দর্শনসম্মত অমার্জিত পোস্ট ফেঁদে বসেছেন তার নিজ ব্লগে। কিছু কিছু লোক শেষ পর্যন্ত মানুষ হয়ে উঠতে পারে না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রণদীপম বসু এর ছবি

?...?...?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সবজান্তা এর ছবি

অবাক হই নি। স্বল্প অভিজ্ঞতাতেই দেখেছি, যে মানুষকে যত বড় ভাবি, সে ততো শশব্যস্ত হয়ে নিজেকে ছোট প্রমাণ করে। পান্ডিত্য কিংবা চৌকস বাক্যের মুখোশে নিজেকে আড়াল করা যায় না। সাবলীল গদ্য কিংবা তথাকথিত যুক্তির অন্তরালে ভিন্ন একটি মানসিকতা সবসময়ই কাজ করে যায়।


অলমিতি বিস্তারেণ

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

জনৈক "শিক্ষাগুরু" দেখলাম সচলায়তনে জুবায়ের ভাইকে নিয়ে সচলদের শোককে শোকের রাজনীতি আখ্যা দিয়ে একটি দর্শনসম্মত অমার্জিত পোস্ট ফেঁদে বসেছেন তার নিজ ব্লগে। কিছু কিছু লোক শেষ পর্যন্ত মানুষ হয়ে উঠতে পারে না।

-এই "শিক্ষাগরু টা" কে হিমু?

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনার মন্তব্যটা আগে দেখিনি, এখন মনে হচ্ছে আদৌ না দেখলেই বোধহয় ভালো হতো !!! হয়তো নিরর্থক - তাও অসম্ভব, প্রচন্ড রাগ হচ্ছে!

এই বিশিষ্ট 'শিক্ষাগুরু'টি কি তিনিই যার অন্যদের 'শিক্ষানবিশ' ভাবার মূর্খ বদভ্যাস আছে? নাকি অন্য কেউ? সরাসরি বলতে আপত্তি না থাকলে, লেখার লিঙ্কটা একটু দেবেন?

অভিজিৎ এর ছবি

হ ঠিকই ধরছ মনে হয়। আমার একটু গুতাগুতি করনের অভ্যাস আছে বইলা বিভিন্ন ডাইমেশনে সার্চ দিয়া 'শিক্ষাগুরু'র লিখাটা পাইয়া গেছি। বিদ্বান মানুষ উনি। মৃত্যু নিয়াও দর্শন কপচাইতে পারেন, জ্ঞানের ফল্গুধারা ছুটাইতে পারেন যত্র তত্র। আমগো মত ছা-পোষা পাব্লিকএর হেইডা না পারনই ভালা।

'জুবায়ের ভার্চুয়াল শোকের চেহারা' লিখা সার্চ দাও - পাইয়া যাইবা।

জুবায়ের ভাই এই গুরু সম্বন্ধে যা কইয়া গেছিলো হেইটাই মনে করি এই আকালের দিনে -

কলহপ্রিয় ভদ্রলোকটি যেন সু-মনের অধিকারী হয়ে ওঠেন একদিন, তাঁর সম্পর্কে আপাতত এর বাইরে কিছু
চাওয়ার নেই।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

স্নিগ্ধা এর ছবি

থ্যাঙ্কস অভি, পড়ে আসলাম লেখাটা। মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষজন বড় বড় জারগন ব্যবহার করার আগে একটু ডিকশনারী দেখার কষ্টটা করে নিলে অন্ততঃ লোক হাসানোর দায় থেকে মুক্তি পেতো!! টেক্সচুয়াল?! টেক্সচুয়ালের মানে শিখলাম আজকে। ভার্চুয়ালেরও!

এবং 'দূরে' থেকে, তথাকথিত নিরপেক্ষ লেখারও সংজ্ঞা বুঝলাম!

"তাঁর ব্যাপারে একটা স্নিগ্ধ অনুভূতি আমার ছিল সবসময়।"
ওরকম একটা লৌকিক শোকজ্ঞাপনের ছদ্মবেশে আক্রমণাত্মক লেখা কিনা সেই "স্নিগ্ধ অনুভূতির" প্রকাশ??!!

আমার নামটা বাংলা বলে বেশ একটা ভালো লাগা ছিলো আমার, কিন্তু যত্রতত্র, যার তার লেখায় 'স্নিগ্ধ' বিশেষণটার ব্যবহার দেখে এখন নিজের নাম নিয়ে শুধু একটাই অনভূতি হচ্ছে - "ওয়াক্‌!!!!"

সুধীর এর ছবি

মৃত্যুশোকের রাজনীতি নিয়ে লেখাই ছিল আমার অন্বিষ্ট

অন্বিষ্ট মানে কি ? আমি এ গুরুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে চাই।

অমিত আহমেদ এর ছবি

স্নিগ্ধা ধরেছেন ঠিক ঠিক!


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হিমু ভাই, লিঙ্ক দিন। জনৈক শিক্ষাগুরুদের চিনে রাখতে চাই।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ব্যাপার না। এদের নিয়ে ভাবনাটাই চিন্তা আর আবেগের অপচয়।

সবজান্তার কথাটা অসম্ভব পছন্দ হয়েছে। আমাদের "শোকের রাজনীতি" নিয়ে এর বেশি আসলেই কিছু বলার নাই।

মুজিব মেহদী এর ছবি

যুগান্তরওয়ালাদের নিউজ সেন্স দেখছি খুবই পোক্ত!!!
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হল, কিই বা বলার আছে! কিছু মানুষ যেন "ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে" কথাটা প্রমাণের জন্য সবসময় মুখিয়ে থাকে!

তবে এটুকুই বুঝি, যোগ্য ও দাবীদাররা সবসময়ই তাঁদের প্রাপ্য সন্মান অবশ্যই পাবেন, কেউ সেটা আটকাতে পারবে না।
__________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আসলে আমরা (কেউ কেউ) সব কিছুতেই স্বার্থ খুঁজি। যেমন আম-কাঁঠালের খোসা আর পচা-গান্ধায় মাছিরা ভিন-ভিন করে।

ব্যাপারটি জেনে খুবই হতাশা বোধ করছি।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।