অলখ আমেরিকা - ওবামার ভবিষ্যত

সাইফ শহীদ এর ছবি
লিখেছেন সাইফ শহীদ (তারিখ: বুধ, ১৩/১০/২০১০ - ৬:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকালে অফিসে যাবার সময় দু'টো ফ্রিওয়ে ধরি - ফলে ১২ মাইল রাস্তা ১৫ থেকে ১৮ মিনিটে পার হতে পারি। শহরের মধ্যের রাস্তা ধরলে রাস্তাও লম্বা হতো এবং সময় লাগতো অন্তত আধা-ঘন্টা। আমেরিকাতে আমরা সবাই সময়ের দাস। এই ১৫ মিনিট গাড়ী চালাবার সময়টা ব্যয় করি প্রথমে কিছুটা খবরের হেড লাইন শুনে আর তারপর শহরের ট্রাফিকের অবস্থা জেনে। এরপর গাড়ীতে ফিট করা মোবাইল রেডিও অন করি। ঐ সময়ে ২ মিটার ব্যান্ডে একটা নেট পাওয়া যায়। দু'টো রিপিটার ষ্টেশনের সাথে সংযুক্তির ফলে এই নেট বেশ অনেকটা দূরত্ব কভার করে। এখান থেকে ৬০ মাইল দূরের সান্তা-ফে শহরের সাথে যেমন যোগাযোগ করা যায়, তেমনি প্রায় ২০০ মাইল দূরের ফার্মিংটন শহর, যেটা কলোরোডা, নেভাদা, এরিজোনা ও নিউ-মেক্সিকো - এই ৪টি ষ্টেটের বর্ডারে অবস্থিত - তার সাথেও সহজে যোগাযোগ করা যায়।

রেডিও অন করার পর শুনলাম দু'জনে কথা বলছে। যদিও সাধারনত এমেচার রেডিওতে রাজনীতি ও ধর্মের আলোচনা করতে মানা করা হয়, তবু কোন বিষয় যদি জন সাধারনের স্বার্থে বলা হয় তবে সেটাতে কেউ একটা আপত্তি করে না।

- শুনলাম আজ বেলুন পাইলটদের যে প্রাক্টিস ফ্লাইটের ব্যবস্থা ছিল তা নাকি বন্ধ করা হয়েছে।
- ঠিক বন্ধ না, তবে এয়ার-পোর্ট আর শহরের উপর তাদেরকে উড়তে মানা করা হয়েছে। ওবামার প্লেন এই সময় নামার কথা।
- তার প্লেনের জন্যে শহরের উপর কেন বেলুন উড়তে পারবে না? এটা কি কোন কথা হল?

বেশ মজা পেলাম তাদের এই কথা বার্তা শুনে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার 'সাফল্যজনক আমেরিকা সফর' শেষ করে যখন ঢাকায় ফিরেছেন, তখন এয়ার-পোর্ট থেকে ঢাকা যাবার রাস্তা সাধারনের জন্যে কয়েক ঘন্টা বন্ধ রাখার কারণে যে দূর্দশা সাধারন মানুষকে সহ্য করতে হয়েছে তার কিছুটা বিবরণ খবরে ও বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে জেনেছিলাম। অন্য দিকে পৃথিবীর সবচাইতে পরাক্রমশালী রাষ্টের রাস্ট্রপতি তারই দেশের এক অন্তর্গত ষ্টেটে সফরে আসছেন - সেই উপলক্ষে কোন রাস্তা বন্ধ করা হয়নি, এমনকি কোন ট্রাফিককে বিকল্প পথ ধরতে আদেশ জারী করা হয়নি। শুধু সামান্য কয়েকজন বেলুন পাইলটকে, যারা প্রাক্টিস ফ্লাইটে উড়তে যাচ্ছিল, তাদেরকে শহর বা কাছের এয়ার-পোর্টের উপর দিয়ে উড়তে মানা করা হয়েছে - তাতেই এই ক্ষোভ। আসলে এই মানা করার মধ্যে যথেষ্ট যুক্তি আছে। বেলুন নিজের শক্তিতে উড়ে না, বাতাসের উপর নির্ভর করে ভাসতে থাকে। 'এয়ার-ফোর্স ওয়ান'-এর (প্রেসিডেন্টের বিমান) পক্ষে সামনে কোন বেলুন হঠাৎ এসে পড়লে সহজে পাশ কাটানো সম্ভব নাও হতে পারে। তবু কেন এত ক্ষোভ এদের কথায় - বেশ কিছুটা অবাক হলাম। এমেচার রেডিওর এই নেটে যারা অংশ নিচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেই 'ভেটেরান' - অর্থাৎ যারা আগে মিলিটারিতে ছিল এবং এখন অবসর নিয়েছে। এরা সবাই গভীর দেশ-প্রেমিক। অনেকের ছেলে মেয়েরা মিলিটারীতে যোগ দিয়ে এখন ইরাক বা আফগানিস্তানে অবস্থান করছে একাধিক এসাইনমেন্টে যোগ দিয়ে।

ওদের কথা শেষ হবার পর যখন নেট-কন্ট্রলার ডাক দিল আর কেউ অপেক্ষা করছে কিনা - তখন আমি বা-হাত ষ্টেয়ারিং-হুইলে রেখে ডান হাতে ধরা মাইক্রোফোনের বোতাম টিপে আমার কল-সাইন জানালাম। যেহেতু আমি প্রায় নিয়মিত এদের সাথে কথা বলে থাকি তাই আমার কল-সাইন (KF6WJZ) শুনেই আমাকে চিনে ফেললো কন্ট্রলার।

- গুড মর্নিং সাইফ। কেমন দিন যাচ্ছে তোমার?
- খুবই ভাল। এত সুন্দর সকাল। চমৎকার আবহাওয়া - আর কি চাই।
- আজ সন্ধ্যার 'পট-লাক গেট-টুগেদার'-এর কথা মনে আছে তো?
- হ্যাঁ, আমি চেষ্টা করবো কাজের পর সোজা সেখানে যেতে।
- যদি তোমার কিছু দেরীও হয়, চিন্তা করো না। তোমার জন্যে কিছু খাবার উঠিয়ে রাখবো আমরা।

'পট-লাক গেট-টুগেদার' হচ্ছে - সবাই তার নিজের পছন্দ মত কিছু খাবার নিয়ে আসবে কোন এক স্থানে - তারপর সবাই মিলে ভাগ করে খাবে সেই খাবারগুলি। এই ব্যবস্থার ফলে কারও উপর একক ভাবে চাপ পরে না। আমার ভালই লাগে এই ব্যবস্থা। যে বিল্ডিং-এ এই অনুষ্ঠান হচ্ছে সেখানে আমি আগে কখনো যাইনি। অফিসে এসে এক ফাকে চট করে গুগল সার্চ করে জায়গাটা দেখে নিলাম। আমেরিকার অধিকাংশ শহরের গুগল ম্যাপে 'সাইট-ম্যাপ' বলে একটা জিনিস আছে - যার ফলে শুধু যে উপর থেকে সাটেলাইট থেকে তোলা ছবি দেখা যায় তা না - রাস্তা থেকে দেখলে সেই বাড়ী বা আশে-পাশের বাড়ীর ছবিও যেমন দেখা যাবে তা দেখা যায়। দেখে নিলাম যায়গাটার ছবি, যাতে করে বিকালে সেখানে পৌঁছালে খুঁজে বের করতে কোন অসুবিধা না হয়।

জায়গাটা ছিল একটি 'ব্যাপ্টিস্ট চার্চ'। খৃষ্টানদের মধ্যে যে এত বিভিন্ন ভাগ এবং এত ধরনের চার্চ আছে তা আমি আগে ঠিক জানতাম না। অনেক খৃষ্টান মদ খায় না, অনেক খৃষ্টান রোজা রাখে, অনেক খৃষ্টান মাংস খায় না, অনেক খৃষ্টান একাধিক বিয়ে করে - গোত্রভেদে তাদের যে এই বিভিন্নতা - সে সম্পর্কে আমার আগে তেমন কোন ধারনা ছিল না। এর আগে যে দুবার কোন চার্চে গেছি তা ছিল আমার পরিচিত কারও শেষ কৃতাদিতে যোগ দিতে। এবার যাচ্ছি নিছক ভোজন সমাবেশে যোগ দিতে। জায়গাটি ছিল আমার শহরের পাশের আর এক শহরে - প্রায় ৩০ মাইল দূরে।

যদিও বন্ধুরা আমাকে বলেছিল যেহেতু আমি একা এবং এতটা পথ অতিক্রম করে যাচ্ছি - আমাকে কোন খাবার সাথে নিতে হবে না। তবু পথে এক 'ওয়াল-মার্ট' দেখে সেখান থেকে একটা বেশ বড় চকলেট কেক এবং কিছু 'ওনিয়ন রিং' (৪-৫ ইঞ্চি আকারের বড় বড় পিয়াজের রিং মশলা মাখিয়ে গরম তেলে ভেজে নেওয়া - খেতে বড় মজা) সাথে নিলাম। চার্চে পৌঁছে বেশ কতগুলি পরিচিত মুখ দেখলাম। চার্চের ঠিক বাইরে দেখলাম লুপিতা একটা পোর্টাবল গ্রীলে বার্গার গ্রীল করছে। লুপিতা থাকে সান্তা-ফে শহরে - অর্থাৎ প্রায় ১০০ মাইল ড্রাইভ করে এসেছে সে। তার স্বামী আমাদের বিদ্যুত কোম্পানীতে বিভিন্ন জেনেরেটিং ষ্টেশনে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতো এক সময়। অবসর নেবার পর 'আলজাইমার' রোগের কবলে পড়ে এবং কয়েক বছর হলো মারা গেছে সে। তাকে আমি কখনও দেখিনি, কিন্তু আমি ঐ একই বিদ্যুত কোম্পানীতে কাজ করি শোনার পর থেকে লুপিতার সাথে একটা সহজ বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে গেছে। স্বামীর পেনশনের টাকায় তার চলতে অসুবিধা হয়না, তবুও এখানে সুস্থ মানুষ কেউ ঘরে বসে থাকতে চায় না। বর্তমানে লুপিতা 'ডগ-সিটিং' করে। 'ডগ-সিটিং' হচ্ছে 'বেবী-সিটিং'-এর মত, শুধু মানুষের বাচ্চা দেখা শুনা করার বদলে এটা হচ্ছে কুকুর বা তাদের বাচ্চাকে দেখা শুনা করার কাজ। বছরের এই সময়টাতে অনেকে 'ভেকেশন'-এ যায়। সাথে পোষা কুকুর নেওয়া হয়তো অসুবিধা। তখন তারা 'ডগ-সিটার' নিয়োগ করে।

চার্চের নামাজ-ঘরের পাশে আর একটা বড় হল ঘরে আমাদের সমাবেশ। এখানে ডাইনিং টেবিল পাতা অন্তত গোটা ৩০-৪০ মানুষের জন্যে। এখানে প্রায় সবাই স্থানীয় এবং তাদের পরিবার-পরিজন সহকারে এসেছে। ভিতরে ঢুকে প্রথমেই জর্জের স্ত্রী আইলিনের সাথে দেখা হলো। বয়স্ক স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই আমাকে বেশ পছন্দ করে। তারা আমাদের বাড়ীতে এসেছে এবং আমার স্ত্রীর সাথে পরিচিত। কেক এবং ওনিয়ন রিং আইলিনের হাতে গছিয়ে দিলাম - ঠিক মত টেবিলে সাজিয়ে রাখার জন্যে। জিনিসগুলি টেবিলে রেখেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো আইলিন। বেশ অনেকদিন পরে দেখা তার সাথে। এক ধরনের রোগের কারনে বেশ রোগা হয়ে গেছে সে, এবং শুনেছি হাটতেও তার অসুবিধা হয় । কিন্তু আজ দেখে মনে হল সে বেশ ভাল বোধ করছে। দেখে ভাল লাগলো।

- জর্জ কোখায়? - আইলিনকে জিজ্ঞাসা করলাম।
- ঐ তো ঐ টেবিলে, একা বসে আছে।
- আচ্ছা বলতো, তুমি এ রকম মানুষের সাথে এত বছর ঘর করলে কি করে? - ঠাট্টা করার সুযোগ ছাড়তে চাইলাম না আমি।
- আর বলো না। মাঝে মাঝে সকালে উঠে যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখি, তখন মনে হয় সব কিছু ছেড়ে দিয়ে আবার নতুন করে শুরু করি।

হাসতে হাসতে জর্জের টেবিলে যেয়ে তার পাশে বসলাম। জর্জ এক সময়ে রেলওয়েতে ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করতো। এখন অবসর নিয়েছে। পাশের টেবিল থেকে ফ্রাঙ্ক উঠে এসে আমাদের সাথে যোগ দিল। পেশায় ফ্রাঙ্ক এক জন ট্যাক্সী ড্রাইভার। অথচ এমেচার রেডিও তার হবি। এই হবি শুরু করতে মোটামুটি ভালই টাকা ব্যয় করতে হয়। একটা রেডিও (ট্রান্সিভার) ৫০০ থেকে ১৫০০ ডলার, এন্টেনা ও রোটেটরসহ মাস্ট লাগাতে আরও এক দুই হাজার ডলার সহজে খরচ হতে পারে। তবে আমেরিকাতে পেশা দিয়ে মানুষের সামাজিক অবস্থা বিচার করা হয়না। প্রথমে এটা বুঝতে আমার বেশ কিছুটা সময় লেগেছে। আমরা বাংলাদেশীরা বড়ই অহেতুক সামাজিক সচেতনা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি।

অনেক খাবারের ব্যবস্থা ছিল। আমি সামান্য কিছু শুধু বেছে বেছে আমার প্লেটে উঠিয়ে নিলাম। খেতে খেতে রাজনীতির কথা শুরু হয়ে গেল। কাউকে ওবামার সপক্ষে ভাল কিছু বলতে শুনলাম না। আমেরিকার হিসাবে এই শহরের অধিকাংশ মানুষ নিম্ন-মধ্যবিত্ব। ওবামা চেষ্টা করছে এদের অবস্থা উন্নত করার। অন্য দিকে এদের ধারণা যে ওবামা এই সরকারকে আরও বড় বানিয়ে যাচ্ছে এবং ট্যাক্স বাড়াবার তালে আছে। বিদেশের কাছে নতজানু হয়ে আমেরিকার স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে। 'স্ট্রং আমেরিকাকে' ক্রমেই দুর্বল করে দিচ্ছে। এসবই যেন ওবামার দোষ। এক জন আর থাকতে না পেরে এক ধরনের 'রেসিয়াল' মন্তব্য করে ফেললো। আমাকে বাদ দিলে এখানে আর অন্য কোন কাল বা বাদামী মানুষ ছিল না। আমাকে এতদিন তাদের মাঝে দেখে দেখে তারা আর আমাকে 'বেশী অন্য রকম' ভাবে না। আমি যে জন্মগত সূত্রে মুসলমান, সেটা নিয়ে তাদের কোন চিন্তা নেই - অথচ ওবামা মুসমান কিনা সে ব্যাপারে সবারই যেন এক একটা অভিমত রয়ে গেছে। প্রতিটা ৫ জন আমেরিকানের মধ্যে ১ জন এখন বিশ্বাস করে যে ওবামা মুসলমান। যদি এখন কেউ 'Is Obama a Muslim' লিখে গুগল সার্চ করে তা'হলে প্রায় ৬ হাজার হিট দেখা যাবে।

আমার এক সহকর্মী মহিলার সাথে একবার এই নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। সেও দেখলাম পুরাপুরি বিশ্বাস করে যে ওবামা আসলে মুসলমান। একবার ভাবলাম ঠাট্টা করে তাকে বলি কি করে পাকি আর্মিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় খুঁজে বের করতো কেউ মুসলমান কিনা। কিন্তু আমার ঠাট্টা না বুঝে যদি আবার আমার বিরুদ্ধে 'সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট'-এর অভিযোগ তোলে, তবে আবার চাকরী নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু আমি অবাক হই কি করে এই সব শিক্ষিত, জ্ঞানী-গুনী লোকজন কত সহজে ভুল ধারনা পোষন করে ফেলে।

এখন যে অবস্থা আমেরিকাতে - তাতে মনে হয়না সামনের নির্বাচনে ওবামা আবার সহজে নির্বাচিত হতে পারবে। অথচ ওবামার মত চিন্তাশীল এবং সমঝোতাকারী প্রেসিডেন্ট আমেরিকার ইতিহাসে এ পর্যন্ত কমই দেখা গেছে। অর্থনৈতিক একটা বড় দূর্যোগ সে ঠেকিয়ে উঠেছে। মধ্য-প্রাচ্যের দু'টি যুদ্ধ থেকে সে চলে আসার চেষ্টা করছে। বিরুদ্ধ দলের সাথে সহযোগিতার হাত অনেকবার বাড়িয়ে দিয়েছে - কিন্তু তবু যেন তার জনগন তার প্রতি তেমন সন্তুষ্ট নয়। কিন্তু কেন? এটা কি তাদের অন্তর্নিহিত মনের এক ধরনের রেসিষ্ট ধারনার ফল?

অন্য দিকে ওবামা প্রেসিডেন্ট হবার ফলে অধিকাংশ মাইনরিটির গ্রুপের লোকজনের তেমন কিছু সুবিধা হয়নি। বুশের আমলে যে ব্যাক্তি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিল, তাকেই বহাল রেখেছে ওবামা। ভবিষ্যতের উপর ধার নিয়ে ট্রিলিয়ন ডলারের উপরে খরচ করে বসে আছে তার সরকার - যে টাকার অধিকাংশ গেছে ব্যাঙ্ক ও বীমা কোম্পানীকে ধার দিয়ে। অথচ এই ওয়াল-ষ্ট্রিটের প্রায় সবাই ওবামার উপর চরম ক্ষ্যাপা। ওবামার নিজের দলের তরুন সমার্থকরা, যারা পরিবর্তনের আশায় তার নামে জোয়ার উঠিয়েছিল - তারা আজ হতাশা গ্রস্থ। চোখে দেখার মত কোন পরিবর্তন দেখতে পারছে না তারা।

নোবেল কমিটি খুব আশা করে ওবামাকে শান্তি পুরস্কার দিয়ে ছিল, আশা করেছিল এর ফলে যুদ্ধ বন্ধ করতে ওবামার হাত শক্তিশালী হবে। অথচ পুরস্কার গ্রহন করার পরে আরও অতিরিক্ত সৈন্য পাঠিয়েছে সে আফগানিস্তানে।

মধ্য প্রাচ্যে আপাততঃ আশাপ্রদ কিছু দেখা যাচ্ছেনা। আগামী দুই বছরের মধ্যে তেমন কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কেমন করে এমন হল - এই কথা আমি ভাবছিলাম গাড়ীতে করে বাড়ী ফেরার পথে। দুই বছর আগের নির্বাচনে ওবামা পেয়েছিল মোট ভোটের শতকরা প্রায় ৫৪ ভাগ ভোট আর রিপাবলিকান জন ম্যাকেইন পেয়েছিল ৪৬ ভাগ ভোট। আগামী দুই বছর পরের নির্বাচনে ওবামার পক্ষে এমন ফলাফল রক্ষা করা দুরূহ হবে বলে মনে হচ্ছে এখন।

প্রথম আমেরিকান নির্বাচনে ভোট দিয়ে ওবামাকে জয় লাভ করতে দেখে খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম আমি। আমার এক বন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে লিখেছিলাম যে ওবামার নির্বাচনের মাধ্যমে আমেরিকাতে পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু পরিবর্তন এখনো কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। সমঝোতার উপরে যেন বেশী সময় ব্যয় করছে এই সরকার। দু'বছর আগে ওবামা নির্বাচনে জয়লাভ করার পর আমি লিখেছিলাম - "ওবামার ২০ বছরের ধর্মগুরু রেভারেন্ড রাইটের সপক্ষে দেওয়া তার প্রথম বক্তৃতা শুনে আমি বিমুগ্ধ হয়েছিলাম এবং পরে যখন ওবামা রেভারেন্ড রাইটের উপর থেকে তার সমর্থন উঠিয়ে নিয়েছিল - তখন তেমনি আশাহত হয়েছিলাম আমি। তেমনি ভাবে তালিবানদের বিপক্ষে তার আফগানিস্তান যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াও আমি পচ্ছন্দ করিনি। যে যুদ্ধ ব্রিটিশ বা রাশিয়ানরা জয় করতে পারেনি - তেমন যুদ্ধে আরও জড়িয়ে পরা ওবামার উচিৎ হচ্ছে না।"

আমি যখন এটা লিখেছিলাম তখন তারিখটা ছিল ৬ই নভেম্বর, ২০০৮ সালে। যদিও আমার কিছু কিছু বন্ধুরা বলার চেষ্টা করছে এখনো দু'টো বছর বাকী আছে - এর মধ্যে অনেক কিছু বদলাতে পারে। অস্বীকার করবো না সে কথা। কিন্তু ইতিহাস বলে অন্য কথা। মানুষ এখনো চার্চিলকে শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করে - কারণ সে তার নিজের বিশ্বাসে সব সময় অবিচল থেকেছে - সমঝোতার পথ খুঁজতে যায়নি।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

ওবামার উপরে বর্ণবাদি কারণে ক্ষিপ্ত বেশীরভাগ আমেরিকান সাউথে বাস করে যাদের প্রতিবেশীদের বেশীরভাগ কৃষ্ণাঙ্গ।

আরোও একটা গ্রুপ যারা নিজেদের এথনিক অরিজিন আমেরিকান বলে তারা এই দলে পড়ে। এদের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এরা মনে করে -

  • বাড়ি বিক্রেতাদের এথনিক অরিজিন অনুযায়ী ডিসক্রিমিনেট করার অধিকার থাকা উচিৎ।
  • আমেরিকা কালোদের উন্নতির জন্য খুব বেশী টাকা খরচ করে।
  • কালোদের জন্য কোন কোটা বা বিশেষ সুবিধা থাকার দরকার নেই, ইত্যাদি।

ঐতিহাসিকভাবে এরা রিপাবলিকানদের ভোট দেয়। তবে এরা খুব বেশী না আমেরিকাতে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে (অর্থাৎ ৬০এর দশক থেকে) রিপাবলিকানরা কখনোই তাদের একটা উল্লেখযোগ্য ফিক্সড ভোট ব্যাংক তৈরী করতে পারেনি যেটা ডেমোক্র্যাটরা করতে পেরেছে।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

সাইফ শহীদ এর ছবি

হাসিব,

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে।

বাড়ি বিক্রেতাদের এথনিক অরিজিন অনুযায়ী ডিসক্রিমিনেট করার অধিকার থাকা উচিৎ।

এটা নতুন কিছু না। রেলরোড তৈরীর সময় অনেক চাইনীজকে নিয়ে আসা হয় আমেরিকাতে। বিশেষ করে প্যাসিফিক কোষ্টের 'গোল্ড রাশ'-এর সময় ১৮৬০ সালে এদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। ১৮৮৮ সালে ফেডারেল আইন হিসাবে পাশ হয় "The Chinese Exclusion Act", যার ফলে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত শুধু চাইনীজ নয়, প্রায় সম্পূর্ন পূর্ব-এশিয়া থেকে আমেরিকায় অভিবাসী হিসাবে আসা প্রায় বন্ধ করা হয়েছিল। পরে রিপাবলিকান পার্টির চেষ্টায় এই আইন বাতিল করা হয়। আব্রাহাম লিঙ্কন ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির লোক। এক সময় এই পার্টিকে বলা হত প্রগতিশীল দল। বড় অদ্ভুত আমেরিকার ইতিহাস।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

দিগন্ত এর ছবি

আমেরিকায় নাগরিকত্ব পাওয়া প্রথম ভারতীয় এ কে মজুমদার স্পোকেন জেলা কোর্টে দাবী জানিয়েছিলেন হিন্দু উচ্চ-বর্ণীয়রা আদপে আর্য, সেই ভিত্তিতেই তাকে মার্কিন নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। ঘটনা বেশ মজার ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিফিও [অতিথি] এর ছবি

শেষ পর্যন্ত সবকিছুর মূলে অর্থনীতি। অর্থনীতি ভাল হলে, চাকরী বাড়লে, বেতন বাড়লে এদের অনেকেই ওবামার প্রশংসায় চলে আসবেন। গত কোয়ার্টারেও আমেরিকা চাকরী হারিয়েছে বেশ কিছু।

ওবামা আশা বেশী দেখিয়েছিলেন বলেই আশাভঙ্গের বেদনাটা হয়ত বেশী। আর হতাশার সময়ই ওবামা আসলে মুসলিম কিনা এই ধরনের ধারণাগুলি আরো বাড়ে। সেই সাথে জন্ম হয় অধুনা "টী-পার্টি" এর মত চরম রক্ষণশীল সংগঠনগুলো।

লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।

কৌস্তুভ এর ছবি

ভাই দিফিও, একটু দ্বিমত প্রকাশ করি।

আমেরিকাতেও কি আর জামাত-সমর্থকদের সমগোত্রীয় লোক নেই? প্রচুর আছে, যাদের কাছে ধর্মই মুখ্য। (রিপাবলিকানদের কৃতকর্ম জামাতদের মত অত ঘৃণ্য নয় নিশ্চয়ই, তবে ধর্ম-হুজুগটা এবং ইগনোরেন্স বোঝাবার জন্য বললাম)। যারা মনে করে ওবামা মুসলমান, তারা ওবামা ভাল কিছু করলেও হয় খুঁত বার করবে, বলবে, নয়ত বলবে, দেখ ব্যাটা আমাদের টুপি পরানোর জন্য এখ ভাল ভাল কাজ দেখাচ্ছে, কিন্ত আমরা ভুলছি না। তাদের কাছে অর্থনীতিটা মুখ্য না।

দিফিও [অতিথি] এর ছবি

আপনার সাথে একমত এই অর্থে যে, একদল লোক আছেন ("জামাত-গোত্রীয়") যারা যেকোনভাবেই ওবামাকে নিয়ে সন্দেহে থাকবেন, অর্থনীতি ভাল হোক আর খারাপ।

কিন্তু অর্থনীতির অবস্থা শ্লথ হলে, চাকরী হারানোর ভয় থাকলে কিন্তু অনেক আপাত-"স্বাভাবিক" লোকের মনেও কিন্তু রক্ষণশীলতা দানা বাঁধে, তাই না? চাকরী হারানোর ভয় অনেককেই অভিবাসন-বিরোধী হয়ে ওঠে, এক ভাবে বলতে গেলে বলা যায় বলির পাঁঠা খোঁজে। এরাই আবার সুদিনের সময় 'স্বাভাবিক' হয়ে ওঠেন। আমি এদের কথাই বলতে চেয়েছি, তাই "এদের অনেকেই" কথাটা ব্যাবহার করেছি, "এদের সবাই" নয়।

টী-পার্টির এই উল্কাসম উত্থান আমেরিকার অর্থনীতির সুদিনে কতটুকু সম্ভব হত, সেটা ভেবে দেখার বিষয়।

ধন্যবাদ!

সাইফ শহীদ এর ছবি

দিফিও ,

একদল লোক আছেন যারা যে কোন ভাবেই ওবামাকে নিয়ে সন্দেহে থাকবেন, অর্থনীতি ভাল হোক আর খারাপ।

এটা কিন্তু সব কালে এবং সব দেশেই আমরা দেখে থাকি। মানুষ সব সময় যুক্তি দিয়ে তার সিদ্ধান্ত নেয় না।

[ কবে যে কম্পুউটাররা আমাদের হয়ে সব সিদ্ধান্ত নিতে আরম্ভ করবে, সেই দিনের অপেক্ষায় ... ঠাট্টা ]

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

কৌস্তুভ এর ছবি

ভাল লেখা সাইফ ভাই। আমরা আধুনিক শহরবাসী 'সভ্য' লোকেরা অবাক হই, এইসব ভুজুংভাজুং দেওয়া রিপাবলিকানদেরও বিশ্বাস করে, এমন মানুষ কারা? কতটা সহজে বোকা বানানো যায় তাদের? এই 'গ্রাম্য' মানুষদের ছবি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।

ওবামা যে জাদুভাণ্ড নিয়ে আসতে পারেন না, হুজুগে এটা অনেকেই উপলব্ধি করে নি। তাই আজ আশাভঙ্গের অবস্থা। তবে কিছু ক্ষেত্রে ওবামার আরো কড়া হওয়া উচিত ছিল যেটা তিনি হতে পারেন নি।

সাইফ শহীদ এর ছবি

কৌস্তুভ,

অনেক ধন্যবাদ যুক্তিপূর্ণ এই সব মন্তব্যের জন্যে।

তবে কিছু ক্ষেত্রে ওবামার আরো কড়া হওয়া উচিত ছিল যেটা তিনি হতে পারেন নি।

আমার তো মনে হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা মত কাজ করার যতটুকু স্বাধীনতা আছে, সেটা আমেরিকান প্রেসিডেন্টের নেই। সিনেট, কংগ্রেস ছাড়াও শক্তিশালী লবীং গ্রুপদেরকে অতিক্রম করে কিছু করা বড়ই কঠিন।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনার লেখাগুলোর আকর্ষন হল এগুলো অনেক সহজ কথা দিয়ে বেশ শক্ত বক্তব্য প্রকাশ করে। এবারো গতান্তর হল না।

ওবামার প্রেসিডেন্ট হবার পার্টি উদযাপন শেষ হয়ে যাবার পরপরই যখন আসল কাজের সময় আসে, তখন তার থেকে যে নেতৃত্ব বা অবস্থানের দৃঢ়তা আশা করা হয়েছিল, সেগুলো মনে আমেরিকার মানুষ দেখতে পায়নি। অবশ্য এখানে এটা ব্যাক্তি ওবামার ব্যার্থতা, নাকি ওবামা-টিম এর ব্যার্থতা সেটা আলোচনার দাবী রাখে।

আমার ব্যাক্তিগত ধারনা, একজন সাধারন আমেরিকান খানিকটা হুজুগে হয়ে থাকে। আরেকটা বিষয় হল আমেরিকান মানুষ মনের গভীরে যতটাই রক্ষণশীল থাকুক, বাইরে বাইরে তারা নিজেদের একটু প্রগতিশীল ও আধুনিক ভাবতে ভালবাসে। এই প্রগতিশীলতা ও আধুনিকতায় সাধারন আমেরিকানদের মধ্যে একটা প্রতিযোগীতা থাকে, এবং সেখানেই হুজুগ জেঁকে বসে। কার কি পেশা তা দিয়ে মানুষ মাপামাপি হয়তো হয়না। কিন্তু কে কি গাড়ী চালায়, আর কার বারবিকিউ মেশিনে কতগুলো অপশান, অথবা গল্ফ এর কোন ব্রান্ড এর ক্লাব এর নাসা'র প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়েছে (সেটা আদতেই গল্ফ বলের ওপর কোন প্রভাব ফেলুক আর নাই ফেলুক) এগুলো একজন সাধারন আমেরিকানকে বেশী টানে। এগুলো সুধু ইউরোপে বেড়াতে আসা আমেরিকানদের দেখেই মনে হয়নি, আমেরিকায় ঘুরেফিরেও মনে হয়েছে। মোটামুটি সবাই মুখে একটা বড় হাসি দিয়ে হ্যালো বলে হাত বাড়িয়ে দেয় ঠিকই, ওদিকে বড় গাড়ী থেকে না নামলে বা গলায় মোটা স্বর্নের চেন বা বেল্ট এ রুপার বকলেস না থাকলে সে হাসি বেশীক্ষন স্থায়ী হয়না।

যেহেতু ইউরোপের মত রাষ্ট্রীয় ভাবে কেন্দ্রমুখী কোন নিয়ন্ত্রন (পড়ুন লাক্সারী ট্যাক্স বা ফুটানি ট্যাক্স) বা এশিয়ার মত পরিবার বা সামাজিক পিছুটান নেই, তাই এই হুজুগের গতিও অনিয়ন্ত্রিত। এই আছে তো একটু পরেই আর নেই।

দুবছর আগে ওবামাকে সমর্থন করা একটা নতুন কিছু ছিল এবং হুজুগে আম আমেরিকান হয়ে ওবামাকে নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু নির্বাচনে আগের ওবামার চাইতে আজকের ওবামার তেমন কোন পার্থক্য কি আদৌ আছে? ওবামা ওবামাই আছে। সে প্রেসিডেন্ট হবার আগে যেমন বাকপটু বেশী কাজে কর্মে মিডিওকার ছিল, এখনো কিন্তু তাই আছে।

মাঝখান থেকে শুধু পাল্টে গেছে আমেরিকার হুজুগে মানুষের মন। কিন্তু সেখানে তো আশ্চর্য হবার কিছু নেই। আমেরিকান মানুষ তো এমনই।

সাইফ শহীদ এর ছবি

দুর্দান্ত,

তোমার লেখা এবং বোঝবার ক্ষমতা আমার খুব ভাল লাগলো।

এগুলো সুধু ইউরোপে বেড়াতে আসা আমেরিকানদের দেখেই মনে হয়নি, আমেরিকায় ঘুরেফিরেও মনে হয়েছে।

তোমার দেখার ক্ষমতার প্রশংসা করি। ইউরোপিয়ানদের কি ভাবে দেখো?

ধন্যবাদ তোমার এই মন্তব্যের জন্যে।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

যথারীতি ভালো লাগল। আর রাস্তা বন্ধ করার কথা পড়ে আবারো পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আমি থাকতাম বাংলামটর মোড়ে, তাই বাসা থেকে বের হতে গেলেই আমাকে রাস্তা পার হতে হত, কতদিন যে সকালে বিকালে রাতে আধাঘন্টার উপরে বসে থাকতে হয়েছে শুধু ম্যাডাম আসবেন বলে। রাস্তা বন্ধ করার পাশাপাশি পথচারী পারাপার ও বন্ধ করে দিত আমাদের শ্রদ্ধেয় ম্যাডামদের জন্যে।

ওবামা বাবা-মা নিয়ে কিছু বলব না হাসি
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সাইফ শহীদ এর ছবি

সাইফ তাহসিন,

রাস্তা বন্ধ করে সবাইকে কষ্ট না দিয়ে, কিছু ভি,এই,পি হেলকপ্টারে চড়লে পারে, বাকিরা বাসে বা পায়ে হেটে... [ সেদিন কবে আসবে...]

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা যথারীতি ভাল লেগেছে। ওবামা সম্পর্কে সাধারণ আমেরিকানদের চিন্তা-ভাবনা অনেকটা জানা গেল। বেবী-সিটিং এর মতো যে ডগ-সিটিং ও হয় এইটা জানা ছিলনা। আজব!
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। হাসি

সত্যান্বেষি

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা যথারীতি ভাল লেগেছে। ওবামা সম্পর্কে সাধারণ আমেরিকানদের চিন্তা-ভাবনা অনেকটা জানা গেল। বেবী-সিটিং এর মতো যে ডগ-সিটিং ও হয় এইটা জানা ছিলনা। আজব!
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। হাসি

সত্যান্বেষী

[×restrict:মডু] আগের কমেন্টে 'সত্যান্বেষী' বানান ভুল হওয়ার কারণে অনুরূপ কমেন্ট আবার করলাম। আগের কমেন্ট-টা প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করছি। [/restrict]

সাইফ শহীদ এর ছবি

লেখা ভাল লাগার জন্যে অনেক ধন্যবাদ সত্যান্বেষী।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

কামরুল হাসান রাঙা [অতিথি] এর ছবি

ভালো লাগল।
* ওবামার উপর প্রত্যাশা অনেক বেশী ছিল, প্রাপ্তিটা সে তুলনায় সামান্য; এটা তার জনপ্রিয়তার পারদ নিম্নমুখী হওয়ার কারন।
*"ডগ সিটিং" এর ব্যাপারটা জানা ছিল না, সত্যিই আজব এক দেশ!

সাইফ শহীদ এর ছবি

কামরুল,

সমসাময়িক কালে প্রেসিডেন্ট রেগান-কে বলা হয় সব চাইতে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট। অথচ মিড-টার্মে (অর্থাৎ দুই বছর পরে তার জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছিল আজকের ওবামার চাইওতেও নীচে। সুতরাং এখনও বলা যায় না দুই বছর পরে আম-আম জনতার চিন্তা ভাবনা কোন দিকে প্রবাহিত হবে।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

ফাহিম এর ছবি

ওবামার ভবিষ্যৎ অন্ধকার!!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

দিগন্ত এর ছবি

ক্রিকেটে একটা কথা আছে - captain is as good as his team. ওবামা যে অবস্থায় দেশটাকে হাতে নিয়েছিল, তাতে তার পক্ষে বিশেষ কিছু করে ওঠা সম্ভব হয়নি, মানে আপাতত অবস্থা আরো খারাপ হওয়া থেকে বাঁচানো ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাবার উপায় তার হাতে কমই ছিল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

তেমনি ভাবে তালিবানদের বিপক্ষে তার আফগানিস্তান যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াও আমি পচ্ছন্দ করিনি।

এই মুহূর্তে একটাই কারণ ভাবা হচ্ছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মহলে। যদি মার্কিনিরা আফগানিস্থান ছাড়ে ও তালিবানেরা আবার পাকাপাকিভাবে আফগানিস্থানের দখল নেয়, তাহলে এবার একাধিক ৯/১১ দেখা যেতে পারে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাইফ ভাই, বরাবরের মতোই ভালো লাগলো। ইদানিং কেনিয়ায় একটা হুজুগ শুরু হয়েছে; ওবামার আত্মীয় পরিচয় দেওয়া। ওবামার সৎ-দাদীর স্বামীর (দাদা না কিন্তু! অন্যলোক) অন্যবউয়ের জামাইয়ের ভাগ্নে এখন ওবামার কাজিন পরিচয় দিচ্ছে। কেনিয়া সরকার ওবামার আদি গ্রামে কিছু প্রকল্প নিয়েছে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে ও গ্রামটাকে সাজাতে।

ওবামা বাস্তবে অনিয়ন্ত্রিন কমিটমেন্ট দেয়ার কারনে এখন ধরা খেয়েছেন কমিটমেন্টগুলো পুরো করতে না পারায়। আমার মনে হয় মুসলমান ইস্যুটা আসছে সাময়িক ক্ষোভ থেকে। ওবামার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড মুসলিম তা সবাই জানে, কায়রো ভাষনে তা ওবামা খোলাসা করে বলেছেনও। তবে আমেরিকানরা দেশপ্রেমিক। হাউখাউ যাই করুক, দেশের স্বার্থে এক। তবে ওবামার সামনে এখন কিছু চমক বা কারিশমা দেখানো ছাড়া পরিস্থিতি ম্যানেজ করা কঠিন।

রাতঃস্মরণীয়

সাইফ শহীদ এর ছবি

আমি যদি কেনিয়ান বা ইন্দোনেশিয়ান হতাম তাহলে আমার মনে একটু অভিমান হতো - একটু সময় করে কি ওবামা তার স্মৃতি বিজড়িত এই দেশ দু'টিতে একবার ঢু মারতে পারতো না? এই দুই দেশের লোকেরা কিন্তু বড় আশা করে বসেছিল ওবামার আগমনের। কিন্তু যে কোন কারনেই হোক, কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যাচ্ছে যে ওবামা বড় বেশী আগ-পাশ চিন্তা করছে। ইতিহাসের বড় নেতারা দেখা গেছে অনেক সময় 'পপুলার' নয় এমন সিদ্ধান্ত নিতে পেছপা হয়নি - ফলাফলের চিন্তা না করে।

এই জিনিসটা কেন যেন তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। এটা অবশ্য একান্তই আমার নিজস্ব চিন্তা - ভুল হবার সম্ভাবনা যতেষ্ট।

লেখা ভাল লাগার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

অতিথি লেখক এর ছবি

কদিন আগে লাঞ্চ করতে গিয়ে দেখলাম ফুটপাথে এক পরিপাটি ভদ্রলোক বসে আছেন, পাশে একটা বাক্স। তার গায়ে লেখা "Need Surgery, No Insurance, Need Help" । মনে পড়লো এই ইন্সুরেন্স নিয়ে ওবামা কতটা দৌড়-ঝাপ করেছিল, কিন্তু আদতে তো সে "Change, we need" এ নিজেই বিশ্বাস রাখতে পারেনি। আমি অ্যামেরিকার রাজনীতি নিয়ে কোন ধারণাই রাখি না, তাও মনে হল আপনার কথাই ঠিক, সমঝোতা করে বেশিদূর আগানো যায়না।

সজল

সাইফ শহীদ এর ছবি

সজল,

ইন্সুরেন্স থাকা সত্ত্বেও ঐ ভদ্রলোকের কাছাকাছি অভিজ্ঞতা আমারও আছে। সুযোগ পেলে আলাদা ভাবে সে ব্যাপারে এক দিন লিখবো।

তবে ওবামার উপরে আমি এখনো আশাহত হয়নি। দু'বছরে অনেক কিছু বদলে যেতে পারে।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

তানভীর এর ছবি

ইতিহাসের বড় নেতারা দেখা গেছে অনেক সময় 'পপুলার' নয় এমন সিদ্ধান্ত নিতে পেছপা হয়নি - ফলাফলের চিন্তা না করে।

এই জিনিসটা কেন যেন তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।

সাইফ ভাই, দ্বিমত প্রকাশ করছি। ওবামা ' পপুলার' নয় এমন অনেক সিদ্ধান্তই এই দু'বছরে নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'হেলথ কেয়ার বিল' যা রিপাবলিকানরা সর্বশক্তি দিয়ে বাধা দিয়েছে। আরো আছে গুয়ানতানামো কারাগার বন্ধ, পোস্টে যেমন বলেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দুই যুদ্ধ থেকে চলে আসার প্রচেষ্টা, স্মরণকালের বৃহত্তম অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকানো ইত্যাদি। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ খাতে ওবামা বিশাল বিনিয়োগ করেছে রিপাবলিকানরা যার সবসময়ই বিরোধী। মাইনরিটিদের কোনো সুবিধা হচ্ছে না- এ বক্তব্যও সঠিক নয়। কালোরা এখন তাদের সামর্থ্য নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি কনফিডেন্ট যেটা সম্ভব হয়েছে ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্যই। বুশ আমলের বব গেটস এখনও প্রতিরক্ষামন্ত্রী এতেও আমি কোনো সমস্যা দেখছি না। এটা বরং ওবামার বিচক্ষণতাই প্রমাণ করে- কারণ, আমেরিকায় ডিফেন্সের সবকিছু রিপাবলিকানদের হাতে। তাদের বশে রাখতে ওবামার গেটসের মতো একজনকেই দরকার। ওবামার সাথে আমি এখানে ম্যান্ডেলার বেশ মিল পাই। ম্যান্ডেলাও যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন বিরোধী দলের নেতাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করেছিলেন। এগুলো তো আমাদের দেশে চিন্তাও করা যায় না। ওবামার সাম্প্রতিক সাফল্য গালফে ডিপওয়াটার হরাইজন স্পিল দক্ষতার সাথে সামাল দেয়া। এরকম আরো অনেক লিস্ট দেয়া যায়।

তবে ওবামা আরেকবার জয়ী হবে কিনা সে ব্যাপারে আমি আশাবাদী নই। গতবার অনেক রিপাবলিকান ওবামাকে ভোট দিয়েছিল কারণ আট বছর বুশের দুঃশাসনের পর তারা আবারও একজন রিপাবলিকানের হাতে দায়িত্ব দিতে স্বস্তিবোধ করেনি। ওবামাকে দিয়ে এখন এদের কাজ হয়ে গেছে- বুশের করে যাওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে উদ্ধার পাওয়া গেছে। তাই আবার তারা ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ওবামা যাই করুক এখন তাদের কিছুই আর পছন্দ হবে না। 'ওবামা মুসলিম' হাবিজাবি এগুলা তাই বানানো ইস্যু।

আপনার অভিজ্ঞতাপূর্ণ লেখাগুলো পড়তে সবসময় ভালো লাগে। আরো পড়তে চাই। হাসি

সাইফ শহীদ এর ছবি

তানভীর,

তোমার কোন বিষয়ের সাথে আমার দ্বিমত নেই। একটু খেয়াল করে দেখো লেখার সময় আমি যথা সম্ভব চেষ্টা করেছি স্বযত্নে সঠিক শব্দ চয়ন করতে। ওবামাকে আমি ভোট দিয়েছিলাম এবং তোমাদের সবার মত তার জয়লাভে উচ্ছাস প্রকাশ করেছিলাম। এবারও আবার ওবামাকে ভোট দেবার আশা রাখি। কিন্তু তার মানে না যে ওবামার সব কাজকে আমি সমান ভাবে প্রশংসা করে যাবো।

আমেরিকা প্রায় সমান সমান ভাবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রাটদের মধ্যে বিভক্ত। তারা সব সময়ই তাদের দলীয় আনুগত্যের অনুসারে ভোট দেয়। কিন্তু শুধু দলীয় ভোটে এখন কেউ জয় লাভ করতে পারবে না। দুই দল ছাড়াও আছে 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট' ভোটারের এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যা। মোটামুটি এদের ভোটই নির্ধারন করবে কে জিতবে।

তুমি নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করেছো ওবামার আবার জয়লাভের ব্যাপারে। তুমি কি মনে করো ক্ষমতা নেবার পরেই সে যদি ঘোষনা করতো যে ইরাক এবং আফগানিস্তান থেকে সে আমেরিকার সৈন্য উঠিয়ে আনছে (এর জন্যে তার কংগ্রেসের কাছে যাবারও কোন দরকার ছিল না) তাহলে তার বর্তমান এই অবস্থার খুব একটা বেশী উনিশ-বিশ কি হতো?

'গিটমো' কিন্তু এখনো বন্ধ করা হয়নি। আর 'হেলথ কেয়ারের' বিজয়টা অনেকটা কাগজে-কলমের ব্যাপার। সময় পেলে এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির আর এক দিন লিখবো। ইতিমধ্যে প্রায় সব স্বাস্থ্য-বীমার প্রীমিয়াম বেড়ে চলেছে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইংল্যান্ড, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা এমনকি আবু-ধাবীতেও যে 'সার্ব্বজনিন হেলথ কেয়ারের' ব্যবস্থা আছে - নতুন নিয়মে তার ধারে কাছেও আমেরিকা পৌছাতে পারবে না।

ওবামার 'ভিশন' আছে, ভাল বক্তৃতা দিয়ে পারে, 'লজিকাল' চিন্তা করতে সক্ষম এবং তার মনও ঠিক জায়গাতে আছে। একই সাথে কখনো বড় এবং 'কমপ্লেস্ক' কোম্পানী চালাবার মত কোন অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ তার হয়নি। এ যেন অনেকটা আমাদের শেখ মুজিবের মত ঘটনা। এত বড় নেতা কিন্তু দেশ চালাবার জন্যে যে ধরনের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার দরকার হয়, সেখানে যেন ঘাটতি রয়ে গেছে।

জানিনা ঠিক ভাবে কথা গুলি গুছিয়ে বলতে পারলাম কিনা। তবে তোমার এই সুচিন্তিত মতামতের জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

হাসিব এর ছবি

আমেরিকা প্রায় সমান সমান ভাবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রাটদের মধ্যে বিভক্ত। তারা সব সময়ই তাদের দলীয় আনুগত্যের অনুসারে ভোট দেয়।

কথাটা ঠিক না। আমেরিকা গড়পড়তা ৪০% ডেমোক্র্যাটিক পার্টিজান। বাকিদের মধ্যে ৩০%এর মতো রিপাবলিকান। বাকিরা অন্য দল এবং সুইং করা ভোটার। এর মধ্যে রিপাবলিকানদের ভোট বেশ ওঠানামা করে। ডেমোক্র্যাটদেরটা করে কম।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

সাইফ শহীদ এর ছবি

হাসিব,

সাম্প্রতিক এক 'গ্যালপ' সমিক্ষা অনুসারে ৪৬% ডেমোক্র্যাটিক আর ৪৫% রিপাবলিকান।


গ্যালপ

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

হাসিব এর ছবি

আপনার স্টেটমেন্টটা জেনারেল ছিলো। কোন সাম্প্রতিক জরীপ দিয়ে আসলে কোন বক্তব্য জেনারেলাইজ করা মুশকিল। তাছাড়া, গালুপের ঐ পোলে ডেমো. রিপা.দের দিকে ঝুকে থাকাদেরও গণনায় আনা হয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের ভোট ব্যাংক আছে আমার এই বক্তব্যের একটা ভিত্তি আছে। নব্বুই দশকের পর থেকে প্রিইলেকশন পোলগুলোতে (ডিবেট শুরু হবার ঠিক আগে থেকে ইলেকশনের আগ পর্যন্ত) ডেমোক্র্যাটরা কখনোই ৪০%এর নিচে নামেনি। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা ওঠানামা করেছে ৩১% থেকে ৫৩% পর্যন্ত। তাদের যদি এতো পার্টিজান সমর্থক থাকতো তাহলে তাদের রেটিং ৩০শের ঘরে নামতো না। তারা আসলে জেতে সাম্প্রতিক ইস্যুগুলোর কাধে চড়ে।

আরেকটা বিষয় হলো এই প্রিইলেকশন বা মিড টার্ম পোলগুলো ইলেকশনে কে জিতবে সেটা ব্যাখ্যা করতে পারে কিনা। সাংবাদিকেরা বা সিএনএন এনবিসির "এক্সপার্টস"রা ধুমধাম এরেওরে জিতিয়ে দিলেও পলিটিক্যাল সায়েন্টস্টরা এই বিষয়ে ভালোরকমে সন্দিহান। গেলমান, কিং (১৯৯৩)এর এই বিষয়ে একটা বিখ্যাত (মানে প্রায় সব ইলেকশন স্টাডিজের পেপারে এই পেপারটার রেফারেন্স থাকে) পেপার আছে। চাইলে এখান থেকে নামিয়ে পড়ে নিতে পারেন।

________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

দুর্দান্ত এর ছবি

এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ খাতে ওবামা বিশাল বিনিয়োগ করেছে রিপাবলিকানরা যার সবসময়ই বিরোধী।

নবায়নযোগ্য জ্বালানীখাত নিয়ে ওবামার প্রাক নির্বাচনী ইশতেহারে অনেক আগড়ম বাগড়ম কথা শোনা গিয়েছিল। এই খাতে ওবামা যে 'বিশাল বিনীয়োগ করেছে', আদতে সেগুলো এই খাতে বুশের আমলে করা বিনীয়োগের সামনে যে কিছুই নয় সেগুলো টেক্সাস/ক্যালিফোর্নিয়ার বায়ুশক্তি/সৌরশক্তিখাতের উন্নয়নের ইতিহাস খতিয়ে দেখলে আরো বোঝা যাবে।

এটা কি সত্য নয় যে ওবামা আসার আগ পর্যন্ত ইলিনয়/পেনসিলভেনিয়ার কয়লা লবি, যা কিনা গত ৩০ বছর যাবত কোন পাত্তা পায়নি, তারা টেক্সাস-ওকলাহোমার তেল লবিকে হটিয়ে এখন ওয়াশিংটনের সবচাইত বড় পান্ডা বনে গেছে? এটাও কি সত্য নয় যে ওবামার নবায়নযোগ্য জ্বালানীখাতের বিনীয়োগের অনেকটাই কয়লাকে গ্রহনযোগ্য করতে কার্বন ক্যাপচার ও কয়লা-গ্যাসিফিকেশান বা কয়লা ভিত্তিক-বিদ্যুতায়নের পেছনে যাচ্ছে?

সুতরাং নির্বাচনের আগে ওবামার পরিবেশবান্ধব নীতির বিরুদ্ধে রিপাবলিকানেরা যতই চিল্লাফাল্লা করুক, কার্যসম্পাদনের কালে যখন সেই পরিবেশ বান্ধব নীতির কেন্দ্রে কয়লা-টাইটগ্যাস আর কানাডার তেল-বালিকে বেনামে উতসাহিত করা হয়েছে, তখন রিপাবলিকানেরা কিন্তু ওবামার পক্ষেই ছিল। আপত্তি বরং এসেছিল পশ্চিম সৈকতের ডেমোক্র্যাট আর একমাত্র সবুজ রিপাবলিকান শোয়ার্জেনেগারের কাছ থেকে। আসলে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে ওবামা ক্রমাগতই ইউ-টার্ন নিচ্ছেন। দুষনের দোষে বড় বড় বিজলী কোম্পানীগুলোর নামে জনস্বার্থের মামলা করার পক্ষে কানেটিকাট সার্কেল ও আপিল কোর্ট এর একটি রায় বেরিয়েছিল। এই রায়টি বাস্তবায়িত হলে একধাক্কায় আমেরিকার পরিবেশ দুষণ অনেকটাই কমে যেত, এবং পরিবেশরক্ষা ও তদারকি খাতে আরো বেশী বিনীয়োগ ও কাজ তৈরী হয়ে যেত। সবাই কে থ' করে দিয়ে ওবামা এই রায় কে রহিত বা ফিরিয়ে নিতে আবেদন জানালো।

ওবামাকে যতটা কলাপাতা সবুজ মনে হয়, তিনি ততটা নন। তবে কয়লাকে যদি তেলের চাইতে বেশী সবুজ ধরে নেয়া যায়, তখন হিসাব অন্যকিছু বলবে।

ওবামার সাম্প্রতিক সাফল্য গালফে ডিপওয়াটার হরাইজন স্পিল দক্ষতার সাথে সামাল দেয়া।

এই কৃতিত্ব ওবামাকে কেন দেয়া হচ্ছে? সে বেঁচে গেছে যে বুশের কাটরিনা'র মত তাকে এই বিষয়টি একমাত্র ইস্যু হিসাবে ছেঁকে ধরেনি। বলতে পারেন সেসময়ে অন্যান্য 'বাঁশ' এর তুলনায় এই হরাইজন বাঁশটি তুলনামুলক মোলায়েমই ছিল। তুলনা করুন চিলি'র সাম্প্রতিক ঘটনাটির সাথে। একটি সাধারন খনি দুর্ঘটনার কাঁধে চেপে একটি জাতির মন কিভাবে জয় করতে হয়, সে বিষয়ে পিনেরা'র কাছে ওবামা'র দু একটা ক্লাস নিয়ে আসা উচিত। তাই বলে বলছিনা যে পিনেরা'র চরিত্র ফুলের মত পবিত্র।

সাইফ শহীদ এর ছবি

দুর্দান্ত,

তুমি খুব সুন্দর ভাবে অনেক কিছু তুলে ধরেছো। আমার লেখার উদ্দেশ্য কিন্তু ঠিক ওবামাকে বিচার করার জন্যে ছিল না। বরং আমার দেখা এক স্নাপ-সটে কিছু 'গ্রাম্য' লোকের মতামত তুলে ধরা। আর ১৮ দিন পরের মিড-টার্ম নির্বাচনের পরে বেশ কিছু বোঝা যাবে পানি কোন দিকে গড়াচ্ছে।

গতকাল যখন চিলির প্রেসিডেন্টকে প্রায় সারাক্ষণ ধরে উদ্ধার কার্যের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম তখন হঠৎ মনে পড়লো ক্যার্টিনার সময়ে প্রেসিডেন্ট বুশের প্লেনে করে চক্কর দেবার কথা।

অনেক অবাক করা জিনিস দেখে যাচ্ছি এই জীবনে।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।