অ্যামেন্ডমেন্ট ওয়ান

সজল এর ছবি
লিখেছেন সজল (তারিখ: শুক্র, ১১/০৫/২০১২ - ২:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১। ধান ভানতে শিবের গীত
ওয়েভার স্ট্রিট ধরে হেঁটে যাচ্ছি, ফুটপাথে দেখি এক প্ল্যাকার্ড, বলছে "vote against amendment 1"। কদিন ধরে নর্থ ক্যারোলাইনার যেখানেই যাই একই ঘটনা। ফেসবুক থেকে মাস দুয়েকের ছুটি নেয়ায় একটা ভালো ব্যাপার হয়েছে, বই পড়া, ডকুমেন্টারী দেখা ইত্যাদি "ভালো" অভ্যাসগুলো ফিরে এসেছে। নোভার "জাজমেন্ট ডেঃ ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন ইন ট্রায়াল" দেখছিলাম। বায়োলজি ক্লাসে বিবর্তনের অলটারনেটিভ হিসেবে "ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন" নামে সৃষ্টিতত্ত্ব পড়ানোর পায়তাড়া করছিলো স্কুলবোর্ড। অ্যামেন্ডমেন্ট ১ এর ভায়োলেশন হচ্ছে এই দাবী করে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করে দেয় এক অভিভাবক।

অ্যামেন্ডমেন্ট ওয়ান কি জানার জন্য নড়ে চড়ে বসলাম। যা বুঝা গেলো, "কোন ধর্মকে প্রমোট করে এমন কোন আইন পাশ করা যাবে না", এই হচ্ছে বক্তব্য। মামলায় ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনারের সৃষ্টি বান্দারা হেরে যায়, এই জন্য অবশ্য বিবর্তন সমর্থকদের খুব খাটাখাটনি করতে হয়নি, আইডিওয়ালাদের মূর্খতা আর স্টুপিডিটিই ব্যাপারটাকে সহজ করে দেয়।

২। অ্যামেন্ডমেন্ট ওয়ান

নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের সাথে আমার সম্পর্ক বছরে একবার ট্যাক্স ফাইল করা অবদিই। স্টেটের কোন আইডি পর্যন্ত করাইনি, এমনকি অভ্যন্তরীন ফ্লাইটে চড়ার সময়ও আমার দেশী পাসপোর্ট দেখিয়ে কাজ সেরে নেই। তাই অ্যামেন্ডমেন্ট ওয়ান যে এই স্টেইটের নিজস্ব ব্যাপার সেটা জানতে একটু সময় লেগে যায়। এই অ্যামেন্ডমেন্ট ওয়ান, আগের প্যারাগ্রাফে উল্লেখ করা অ্যামেন্ডমেন্ট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একদল সমাজ হৈতেষী ব্যাক্তি নর্থ ক্যারোলাইনার সংবিধান সংশোধন করে সমলিঙ্গ ব্যাক্তিদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ করার আহবান জানিয়ে এই বিল এনেছে। তারই উপর ভোটাভুটি হবে।[৩]

৩। অ্যামেন্ডমেন্টের পক্ষে যুক্তি

তাদের উল্লেখ করা যুক্তিগুলো খুবই মনোহর এবং আনন্দদায়ক। ধরা যাক নিউইয়র্কে গে ম্যারেজ নিষিদ্ধ, তাই সেখান থেকে যদি কেউ পালিয়ে এসে নর্থ ক্যারোলাইনায় আশ্রয় নিতে শুরু করে তাহলে এই স্টেইট একেবারে ভেসে যাবে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট চুলায় যাক, আগে তো নৈতিক আর সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে হবে।[৪]

এটা বুঝতে কারোই তেমন কষ্ট হওয়ার কথা না, স্বীকার করুক আর নাই করুক, অধিকাংশ হোমোফোবিকদের মূল প্রেরণা আসে তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকেই। সদোম আর ঘমোরায় দেবদূতদের বেইজ্জতির সেই করুণ কাহিনী কোন ধর্মপ্রাণ মুমিন ভুলে যেতে পারে? যে ভুলে যেতে পারে, সেই পাষণ্ডের জন্য ঈশ্বর নিশ্চয় আলাদা অর্ডার দিয়ে নরক বানাবেন! আরো কিছু যুক্তির মুখোমুখি হয়েছি, যেমন গে ম্যারেজকে আইনী বৈধতা দিলে তাতে মানুষ উৎসাহিত হয়ে আরো বেশি করে গে হয়ে যাবে, আর তাতে মানব জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। যাকে বলে চেক মেট।

৪। হোমো সেক্সুয়ালিটিঃ একটি বাজে অভ্যাস/মনোরোগ, যা সারিয়ে তুলা সম্ভব?

সমাজের নৈতিকতা আর মূল্যবোধের সোল এজেন্সি হচ্ছে ধর্ম, আর ধার্মিকেরা হচ্ছে এক্সিকিউটিভ। তাদের মতামত হচ্ছে, হোমো সেক্সুয়ালিটি পরিবেশের প্রভাবে মানুষের মাঝে আসে, এটা তার জন্মসূত্রে প্রাপ্ত কোন বৈশিষ্ট্য না। তাই, আইন করে, জোর করে কি মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে একজন হোমো সেক্সুয়ালকে স্ট্রেইট বানিয়ে ফেলা সম্ভব। দেখা যাক, এই বিষয়ে বিজ্ঞান কি বলে।

বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির মাঝে হোমো সেক্সুয়ালিটি খুঁজতে গিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন যে সেটা অন্য প্রাণীদের মাঝে মানুষের চেয়েও বেশি হারে দৃশ্যমান। ব্যাপারটা বুঝা শক্ত নয়, এই জিনিস সব প্রাণির মাঝেই আছে, অন্য প্রাণীরা ভাগ্যবান যে তাদের মাঝে সবজান্তা তালেবর কোন নৈতিক পুলিশ নেই, তাই তারা যা, সেটাই থেকে যেতে পারে, কোন অভিনয় ছাড়াই।

আরেক দিকে দেখা যায়, মানুষের সেক্সুয়ালিটিকে ঠিক হোমো আর হেটারো এই দুইভাগে ভাগ করে ফেলা যায় না। টেকনিক্যাল টার্মে এড়িয়ে বলা যেতে পারে, একজন মানুষ একই সাথে তার বিপরীত লিঙ্গ আর সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। মোটা দাগে কোন দিকে আকর্ষণ বেশি সেটাই তার বাহ্যিক পরিচয় গড়ে দিতে পারে। একটা স্কেলে ফেললে, তার দুই বিপরীত প্রান্তে পাওয়া যাবে হোমো সেক্সুয়াল আর হেটারোসেক্সুয়াল।[১, ২]

হোমো সেক্সুয়ালিটির জন্য দায়ী কোন একক জিন পাওয়া যায়নি, তবে এটা অনুমান করা হয় হয়ত অনেকগুলো জিনের মিলিত প্রভাবে এই ব্যাপারটা ছোটবেলাতেই কারো মাঝে তৈরী হয়ে যায়। কারণ যাই হোক, "এটি কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মনোরোগ, তাই চিকিৎসা করে একে সারিয়ে ফেলার কোন উপায় নেই", এটা অ্যামেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের মতামত।[১, ২]

সব মিলিয়ে এটুকু বলা যায়, সমকামিতা মানুষের প্রকৃতিগত, এটাকে সারিয়ে তুলার কোন উপায় নেই।

৫। বিবর্তনের হাত ধরে

ফেসবুকে একজনের সাথে তর্ক হচ্ছিলো। তার যুক্তি ছিলো, এই ব্যাপারটাকে বৈধতা দিলে সমাজে সমকামীদের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে এক সময় শতভাগ হয়ে যাবে, আর মানুষের অস্তিত্ব তখন বিপন্ন হয়ে যাবে। হাইস্কুলে জীববিজ্ঞান পড়া থাকুক বা নাই থাকুক, মানুষের প্রজনন সম্পর্কে ধারণা সব প্রাপ্তবয়স্কের মাঝেই থাকে, এটা আমার ধারণা ছিলো, তবে এই যুক্তি দেখার আগে।

সে যাই হোক, গে কাপলেরা তো আর সন্তান উৎপাদন করে না, তাহলে এত মিলিয়ন বছরের বিবর্তনের পরেও আমাদের মাঝে সমকামীদের পরিমাণ প্রায় ১৪ শতাংশে পৌঁছাল কীভাবে? সন্তান উৎপাদন করার মাধ্যমেই জিনের প্রোপাগেশন ঘটে, আর তাই এই অনুৎপাদনশীল খাতে এই বিশাল বিবর্তনীয় বিনিয়োগের কারণ কী?

একটু উইকি ঝেড়ে দেখলাম। একটা কারণ হতে পারে, গে আঙ্কেলরা স্ট্রেইট পুরুষেরা শিকারে যাওয়ার সময় শিশুপালনে মেয়েদের সাহায্য করত বলে এটা একটা বিবর্তনগত সুবিধা হিসাবেই দেখা দেয়। আবার এমনো হতে পারে, যেসব জিন হোমোসেক্সুয়ালিটির জন্য দায়ী, তারা আবার অন্য পরিস্থিতিতে স্ট্রেইট পুরুষদের জন্য নারী সঙ্গিনী পাওয়া সহজ করে দেয়, আর তার ফলে এই জিন ন্যাচারাল সিলেকশনের সুনজরে পড়ে টিকে যায়। আবার হয়ত এর কোন উপযোগিতাই নেই, বিবর্তনের বাই প্রোডাক্ট হিসাবে টিকে গেছে।[১]

৬। ব্যাক্তিপছন্দ বনাম সমাজের কল্যাণ

কারণ যাই হোক (অভ্যাস অথবা জেনেটিক), সমকামিতা কি সমাজের জন্য ক্ষতিকর? মানুষের মাঝে ৮৬ শতাংশ বিষমকামী (স্ট্রেইট), সেটা প্রায় ৫০০ কোটির মত। যদি শুধুমাত্র তারাই প্রজননে অংশ নেয়, তাহলে বর্তমান বৃদ্ধিহারে, প্রতি জেনারেশনে ১৪ শতাংস সমকামী বাদ দিয়েও কিন্তু আমরা ধনাত্বক বৃদ্ধিহারই পাই। তাই সমকামীদের অস্তিত্ব আমাদের প্রজাতির বিলুপ্তির জন্য কোন কারণ নয়। মনে রাখতে হবে, আফ্রিকা ছেড়ে বেড়িয়ে আসা মানুষের দল সংখ্যায় ৫ হাজারও ছিলো না। আর গত বরফযুগে সে সংখ্যা ৫০০ এরও নীচে নেমে এসেছিলো, তাও আমরা টিকে গেছি। আর এখন এই ৫০০ কোটি নিয়েও আমরা টিকতে পারব না?!

দুইটা মানুষ বিয়ে করে এক সাথে থাকবে, তাতে আমার বা আপনার কি? সে কি আপনাকে টেনে নিয়ে সমকামী বানিয়ে দিচ্ছে? সমকামিতার পক্ষে জিনগত সমর্থনই বেশি[১], তাই দেখে শিখার ব্যাপারটা ঠিক হালে পানি পাচ্ছে না। তাহলে, তারা সমাজের আর কোন ক্ষতিটা করছে?

৭। উপসংহারঃ অরণ্যে রোদন

সদোম আর ঘমোড়ায় নির্যাতিত দেবদূতদের আহত মর্যাদা আর অনুভূতির কথা ভুলে নিজ প্রজাতির একটা মানুষের অনুভূতির কথা একটু ভেবে দেখুন। সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন যাই হোক না কেন, সবার মানবিক অনুভূতি একই। আপনার আচরণ অন্য একটা মানুষকে নিয়ত আহত করছে কিনা ভেবে দেখে আপনার নিজের আচরণের নৈতিকতা যাচাই করে দেখুন।

পরিশিষ্টঃ ভোটের ফল

ত্রিশতম অঙ্গরাজ্য হিসাবে নর্থ ক্যারোলাইনা গে-ম্যারেজ কে নিষিদ্ধ করেছে। পক্ষে বিপক্ষে ভোটের পরিসংখ্যান হচ্ছে ৬১‌.০৪% বনাম ৩৮.৯৬%।[৫] অ্যামেরিকা দিনে দিনে ঈশ্বরের রাজ্যে পরিণত হচ্ছে। ঈশ্বর আমাদের সহায় হোন। আমেন!

তথ্যসূত্রঃ

১। Biology and Sexual Orientation

২। সমকামিতাঃ একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান

৩। amendment 1

৪। Balotpedia

৫। ভোটের ফল


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সহজ ভাষায় সমসাময়িক এই বিষয়টি তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের মধ্য যুক্তি আর ড়্যাশনাল বুদ্ধি কাজ করুক। আর বিষয়টিতে মানুষের বোধের উদয় হোক এই কামনা করি।

সজল এর ছবি

ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই।

আর বিষয়টিতে মানুষের বোধের উদয় হোক এই কামনা করি।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

চলুক

নর্থ ক্যারোলিনার অ্যামেন্ডমেন্ট ওয়ান কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টের বিপক্ষে যাচ্ছে না? গে ম্যারিজ নিষিদ্ধ করার ভিত্তিটাই তো ধর্মীয় ধারণা।

সজল এর ছবি

জাজমেন্ট ডে এর ডকুটা দেখে যা বুঝলাম বলি। যারা বিলটা এনেছে তারা ধর্মের নামে বিলটা আনেনি। কিন্তু এর সাথে যে ধর্মের যোগ আছে এই বিষয়টা উল্লেখ করে কাউকে কোর্টে যেতে হবে। সেখানে প্রমাণ করতে হবে, এই আইনের পেছনে ধর্মকে প্রমোট করার ব্যাপার আছে। প্রমাণ করা গেলে, কোর্ট সেই আইন বাতিল করে দিবে।

ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের মামলায়, বাদীকে দুইটা বিষয় প্রমাণ করতে হয়েছিল। ১। ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন কোন বিজ্ঞান না, তাই একে বিজ্ঞান ক্লাসে পড়ানোর কিছু নেই। ২। আইডি পড়ানোর পেছনে ধর্মকে প্রমোট করার মোটিভ আছে।

২ নিয়ে বাদীরা সংশয়ে ছিলেন, কারণ প্রেসিডেন্ট বুশ ছিলেন আইডি সমর্থক, আর বিচারক ছিলেন বুশের নিয়োগ দেয়া। তবে আইডিওয়ালাদের কিছু স্টুপিড মিসটেক সেটাকে সহজ করে দেয়। যেমন একটা ধর্মীয় সংস্থা ক্রিয়েশনিজমের উপর মূল স্ক্রিপ্ট তৈরী করে, পরে এটাতে ওয়ার্ড রিপ্লেস করে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বসানো হয়। কিন্তু প্রমাণ থেকে যায় "creationists" > cintelligent design proponents এই ধরনের স্টূপিডিটিতে, ওরিজিনাল টেক্সটের সাথে মিলাতে তাই কোন বেগ পেতে হয়নি।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

চরম উদাস এর ছবি

চলুক দেশ বিদেশের ছাগলেরা নামে একটা লেখা শুরু করেছিলাম। আগে ভাবতাম ছাগল শুধু আমাদের দেশেই আছে। যত দিন যায় বুঝি, এইখানেও কম না।

সজল এর ছবি

আর ছাগলদের জন্য কাঠালপাতারও কোন অভাব হয়না কোথাও।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তাসনীম এর ছবি

চলুক

অ্যামেরিকা দিনে দিনে ঈশ্বরের রাজ্যে পরিণত হচ্ছে। ঈশ্বর আমাদের সহায় হোন। আমেন!

সেটাই দেখছি দিন দিন। কাজকর্ম সব ভারতবর্ষ আর চিনে পাঠিয়ে দিয়ে এরা ঝাড়া হাত-পা হয়ে ঈশ্বরকে ডাকবে বলে মনস্থির করেছে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সজল এর ছবি

সেই। কবে যে এই দেশ সত্যিকার অর্থে সেক্যুলার হবে!

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

স্বাধীন এর ছবি

দারুন লেখা চলুক

অ্যামেরিকা দিনে দিনে ঈশ্বরের রাজ্যে পরিণত হচ্ছে। ঈশ্বর আমাদের সহায় হোন। আমেন!

আমেন!

এইবারের রিপাব্লিকান দলের মন খারাপ দেখে মনে হয় জামাতের আমেরিকা শাখার বক্তৃতা শুনছি

সজল এর ছবি

ধন্যবাদ স্বাধীন ভাই। ধর্ম বিক্রি করা রাজনীতির জন্য প্রায়শই লাভজনক।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তুহিন মেহেদী  এর ছবি

জামাতের আমেরিকা শাখার বক্তৃতা গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

স্বনাম এর ছবি

নিরপেক্ষ আলোচনা ভালো লাগলো। আমি এ বিষয়টা নিয়ে যতবার সামনে আসে ততবার ভাবি। আমার চিন্তাগুলোও একটু বলি।

সমকামিতাকে উৎসাহিত করা উচিৎ কি না? বৈধতা দানে উৎসাহ বাড়বে না, তা শতভাগ নিশ্চিত কি না? বা বৈধতা দানপূর্বক প্রাকৃতিক সমকামীদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা যায় কী না অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষে বৈধতা বিষয়টা কেমন হতে পারে? প্রধান শর্ত এরকম হতে পারে "সমকামিতায় অন্যকে কিছুতেই কোনভাবেই বাধ্য না করা।"

উৎসাহিত করলে যারা প্রাকৃতিকভাবে সমকামী তাদের দ্বারা (সাময়িকভাবে হলেও) যারা স্ট্রেইট তারা জোড়পূর্বক যৌন-আক্রান্ত হবেন না তার নিশ্চয়তা রাষ্ট্র দিতে পারে কি না?

উপযুক্ত সমকামী সঙ্গী প্রাপ্তি সহজ না হলে কী হবে, রাষ্ট্র কীভাবে সাহায্য করবে? আবার যৌনাক্রমণের সম্ভাবনা কিন্তু চলে আসে।

শারীরিকভাবে প্রাকৃতিক সমকামীরা কি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হন কী না আমার জানা নাই। স্বাভাবিক মানুষের পায়ুপথ যৌনাঙ্গ ধারণের জন্য অভিযোজিত নয়, এতে পায়ুপথ তথা শারীরিক স্বাভাবিক কার্যাচরণ(পয়ঃনিষ্কাশন-প্রণালী, চলাফেরা, বসা) বিঘ্ন হবার কথা। সমাকমীদের কী ভিন্ন বৈশিষ্ট্য? ( আমি জানি না, তাই জিজ্ঞেষ করছি।)

যদি ভিন্ন বৈশিষ্ট্য না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বিজ্ঞান তাদের জন্য যৌনক্রিয়া কতটা স্বাভাবিক (প্রতিক্রিয়ামুক্ত) করতে পারবে বা পেরেছে? না পেরে থাকলে বিজ্ঞানীদের এইদিকটায় দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ। নতুবা জটিল ও অনিরাময়যোগ্য কোন রোগ হতে পারে?

সমকামীদের ঘৃণা করার প্রশ্নই আসে না। তাদের সামাজিক স্বীকৃতি দরকার। তবে আমি এই নিশ্চয়তা টুকু চাই তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে এবং অসমকামীদেরও জোড় করবে না! অর্থাৎ বৈধতাদানের পাশাপাশি রাষ্ট্রের উচিৎ ঐচ্ছিক-প্রাকৃতিক সমকামীদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে সমকামিতাকে নিরাপদ আচরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করা। অবশ্যই সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য মানুষকে বা মানুষের আচরণকে সংগায়িত করা খুব কঠিন।

শুভেচ্ছা।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সমকামী তাদের দ্বারা (সাময়িকভাবে হলেও) যারা স্ট্রেইট তারা জোড়পূর্বক যৌন-আক্রান্ত

বিষমকামীদের যৌন-আক্রমন তথা ধর্ষণ নিয়ে যেমন আইন আছে এক্ষেত্রেও তেমন হবে। একে বলা হয় বিষয়ান্তর - স্ট্র ম্যান। এটা একটা অপ্রাসঙ্গিক, অবান্তর বিষয়।

শারীরিকভাবে প্রাকৃতিক সমকামীরা কি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হন কী না আমার জানা নাই। স্বাভাবিক মানুষের পায়ুপথ যৌনাঙ্গ ধারণের জন্য অভিযোজিত নয়, এতে পায়ুপথ তথা শারীরিক স্বাভাবিক কার্যাচরণ(পয়ঃনিষ্কাশন-প্রণালী, চলাফেরা, বসা) বিঘ্ন হবার কথা। সমাকমীদের কী ভিন্ন বৈশিষ্ট্য? ( আমি জানি না, তাই জিজ্ঞেষ করছি।)

খুবই নিরিহ টাইপের "আমি জানিনা" ধরণের অবস্থান নিয়ে আপাত ইনভোক করা প্রশ্ন দেখে বিরক্ত বোধ করছি। এই বিষয়টি জানা মূল ইস‌্যুটির সাথে কিভাবে সর্ম্পকযুক্ত বুঝতে পারছি না।

সজল এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। এই বিষয়ে আমার খুব বেশি জানা নেই, তবু চেষ্টা করি উত্তর দেবার।

১। সমকামিতাকে উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিত কোনটাই করা উচিত না। একই ব্যাপার বিষমকামিতার ক্ষেত্রেও। সোজা কথা সমাজের জন্য ক্ষতিকর না হলে কারো সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন নিয়েই আমাদের মাথা ঘামানো উচিত না (যেমন শিশুকামিতা, জোরপূর্বক সেক্স ইত্যাদি)।

২। সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনে প্রভাবিত হওয়ার কোন ব্যাপার নেই। এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যাপারটা জন্মগত কিংবা অল্পবয়সে তৈরী হয়ে যাওয়া বিষয়। কারো প্রভাবে একজন বিষমকামীর সমকামীর হওয়ার কিছু নেই, কিংবা একজন সমকামীর একজন বিষমকামীতে পরিণত হওয়ার সুযোগ নেই। আর আমার লেখায়ই দেখুন, মানুষের মাঝে এমন সুষ্পষ্ট দুইটা ভাগ করে ফেলা যায় না।

৩। কিছুটা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে, আমার দেয়া ১ নাম্বার রেফারেন্সটা দেখুন। জটিল আর অনিরাময়যোগ্য কোন রোগের কথা কখনো শুনিনি। এক সময় বলা হত এইডস এর কারণ সমকামিতা। কিন্তু সেটা এইডস সংক্রমণের একটা মাত্র উপায়, বিষমকামীদের মাঝেও কিন্তু এইডস ছড়ায়। তাই বলে কি বিষমকাম আইন করে বন্ধ করে দিব?

৪। সেক্সের ক্ষেত্রে জোর করার ব্যাপারে মনে হয় বিষমকামীদের দুর্নামই বেশী। সমকামীদের ক্ষেত্রে গুরুতর কোন অভিযোগ শুনিনি (চার্চ কিংবা মাদ্রাসার হুজুরদের ব্যাপারটা মনে হয় শিশুকাম কিংবা পারভার্শনের ব্যাপার)। তাই তাদের ক্ষেত্রে আলাদা করে কনসার্ন্ড হওয়ার কিছু নেই, একটা সাধারণ আইন সব মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেই হলো।

৫। সমকামিতা বিপদজনক আচরণ কিনা আমার জানা নেই, যদি হয়েও থাকে সেটার প্রতিকার নিশ্চয় বের করে ফেলা যাবে।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

স্বনাম এর ছবি

১। সঠিক।

২। প্রভাবে হবে না- নিশ্চিত নই।

৩। দেখবো। সেরকম কিছুর সম্ভাবনা না থাকাই ভালো।

৪। ঠিক আছে।

৫। বিপজ্জনক আচরণ আমি বলি নি। বলেছি বিপজ্জনক আচরণ যেন না হয়ে উঠে তার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

আমার পূর্ব মন্তব্যে ক্ষেপে না যাবার জন্য ধন্যবাদ জানবেন। যদিও মুর্শেদ ভাই ক্ষেপে গেছেন, অবশ্য "( আমি জানি না, তাই জিজ্ঞেষ করছি।)" এ অংশটুকু দুর্বলতম ছিল।

সজল এর ছবি

মুর্শেদ ভাইয়ের বক্তব্যের সাথে আমার কোন দ্বিমত নেই। আপনার অনেকগুলো প্রশ্নই এই পোস্টের মূল বক্তব্যের সাথে প্রাসঙ্গিক নয়, শুধু হোমো সেক্সুয়ালিটি শব্দটি ছাড়া।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

স্বনাম এর ছবি

দ্বিমত হবার প্রয়োজন নাই। এজন্যই বলেছি ক্ষেপে যাবার কথা। যদিও প্রাসঙ্গিকতা শাখা প্রশাখায় বিস্তৃত হতে পারে বলে মনে করি। প্রাসঙ্গিকতার সীমা নির্ধারণও কষ্টকর বিষয়। যাই হোক ধন্যবাদ।

সাফি এর ছবি

স্বাভাবিক মানুষের পায়ুপথ যৌনাঙ্গ ধারণের জন্য অভিযোজিত নয়

আপনার এই বক্তব্যের ভিত্তি কী? পুরুষের জি-স্পট কোথায়?

তবে আমি এই নিশ্চয়তা টুকু চাই তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে এবং অসমকামীদেরও জোড় করবে না! অর্থাৎ বৈধতাদানের পাশাপাশি রাষ্ট্রের উচিৎ ঐচ্ছিক-প্রাকৃতিক সমকামীদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে সমকামিতাকে নিরাপদ আচরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করা।

সমকামীদের প্রতি আপনার মনোভাব এই বক্তব্যেই স্পষ্ট। দাঁত আছে, এমন কেউ কখনও আপনাকে কাঁমড়ে দেবেনা এমন আইন আছে? আপনাকে রাষ্ট্রের আওতায় এনে আপনার যন্ত্রপাতি নিরাপদে রাখার প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার মনে হচ্ছে। পাছায় এখন থেকেই বুলেটপ্রুফ প্যান্ট ঝুলিয়ে পড়া শুরু করেন ভাই, নইলে কবে কে আপনার ইয়োগা মেরে দেয়, চিন্তায় আছি।

স্বনাম এর ছবি

ভিত্তিঃ
# Anal sex can hurt like a mofo. The rectum is not built to have things go in; only out. The vagina stretches to let in a penis and give birth, but a rectum does not. Thus he/she can cause searing pain.
# Both of they are equally susceptible to disease with anal sex. The wall of the rectum is very thin and permeable, so safe sex is imperative. Not only will condoms protect them against any stray fecal matter, but it will prevent his/her from having an ass full of semen. Semen can mix with the contents of his/her rectum and can make her sick.

পুরুষের জি-স্পট নিয়ে চিন্তা মাথায়ই আসে নি বা চোখে পড়ে নি। জানতাম না। বিষয়টা বিস্ময়কর। বিবর্তন কি বলে এ বিষয়ে? এটা এখানে কেন? উপযোগিতা কি? পায়ুসংগমই কি?

তাহলে পায়ুসংগম আনন্দদায়ক হবে পুরুষ সমকামীদের জন্য। তাহলে ঠিক আছে।

আসলে আমি এনালসেক্সেরই বিরোধী। সেটা বিষম বা সম কামী যারাই করুক। সমকামীদের ক্ষেত্রে এটা হবার সম্ভাবনা বেশি তাই প্রথম মন্তব্যে এ বিষয়টি উল্লেখ করি।

প্রশিক্ষণ মানে প্রাতিষ্ঠানিক কিছু নয়। বিশেষ শিক্ষাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা, উপযুক্ত সচেতনতা বৃদ্ধির নিশ্চয়তা বুঝিয়েছি। সেটা রাষ্ট্র নিশ্চিত করতেই পারে।

এরকম বহুত ঘটনাই বাংলাদেশেই জানি যেঃ তরল (এলকোহল) বা শুকনা (গাঁজা) র আসরে ৬ জন যুবক পিনিক সপ্তমে উঠলে যে অসমকামী তাকে প্রথমে আপনার ঐ কথিত ইয়োগা মেরে দেয়। ঐ ৫ জন সমকামীকে বিশেষ শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করা গেলে সচেতন করা গেলে অসমকামী জন সে যাত্রাগুলোতে বেঁচে যেত। আমার নিজেরেই একজন বন্ধু আছে যে এই নির্যাতনের ভিতর দিয়ে গিয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে র‍্যান্ডম বা অপরিচিত কারো সাথে শুকনা টানতে না যাওয়াই শ্রেয় পন্থা।

(এই মন্তব্যটির সম্পূর্ণ অংশ এই পোস্টে অপ্রাসঙ্গিক। উপায় থাকলে এটিকে restricted to সাফি করে দিতাম।)

সাফি এর ছবি

যেই সংজ্ঞায় ব্যাথাকে মাদারফাকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তা কতখানি সূত্র হিসেবে গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে নিশ্চিত নই।

আপনি যে উদাহরন দিলেন, সেটা এলকোহলিজমের সমস্যা, সমকামীতার নয়। এলকোহলাসক্ত যুবকরা "সপ্তমে" উঠলে তাদের প্রশিক্ষণের কথা মনে থাকত? ফালতু যুক্তি।

আপনার নিজের দাঁত, নখ, হাত, পা, যৌনাঙ্গ থেকে কি আমরা এই নিরাপদ? এইসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কোন সনদ আছে কি?

স্বনাম এর ছবি

প্র্যাক্টিকাল অভিজ্ঞতা ছাড়া উপায় নাই মনে হচ্ছে। হো হো হো

তারা ব্যক্তিগতভাবে সমকামী না হলে ওরকম কিছু হত না। সুতরাং সমকামিতা সম্পৃক্ত।

হুমম রাষ্ট্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা পাঠ্যসূচির মাধ্যমে আমাকে শিখিয়েছে যে আমি আপনাকে আঘাত করতে পারবো না এগুলোর কোন কিছু দিয়েই। দেঁতো হাসি

সাফি এর ছবি

খেয়াল করে দেখুন আমার মন্তব্যে যৌনাঙ্গের উল্লেখ আছে। সুতরাং রাষ্ট্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠ্যসূচির মাধ্যমে যৌনাঙ্গের অবাধ ব্যবহার (পড়ুন আঘাত করা) নিরুৎসাহিত করে। এটা বিষমকামীর জন্য যেমন প্রযোজ্য সমকামীর জন্য তেমন প্রযোজ্য। বিষমকামের ক্ষেত্রে যার নাম ধর্ষন সমকামের ক্ষেত্রেও তার নাম ধর্ষন। বিষমকামের ধর্ষন ধর্ষিত/তা যেমন উপভোগ করেনা, সমকামেও তাই। উভয় ক্ষেত্রেই এটা নির্যাতন।

স্বনাম এর ছবি

চলুক

ধন্যবাদ।

তানভীর এর ছবি

অ্যামেরিকা দিনে দিনে ঈশ্বরের রাজ্যে পরিণত হচ্ছে।

এটা আন্ডারস্টেটমেন্ট। আমেরিকা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্য তো বটেই, এটা আগাগোড়া একটা খ্রিস্টান রাজ্য। ষাটের দশকে এখানে 'সিভিল রাইটস মুভমেন্ট' না হলে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে যেত। অন্তত সে সুবাদে এখন 'ইকুয়াল অপরচুনিটি/এফারমেটিভ একশন' আইন-কানুন থাকায় গায়ের চামড়া, ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদি ব্যাপারগুলো পাশ কাটিয়ে থাকা যাচ্ছে।

সজল এর ছবি

অ্যামেরিকার ফাউন্ডিং ফাদারদের বেশিরভাগই ছিলেন ধর্মের সাথে রাষ্ট্রের সংযোগের বিরোধী। সে যাই হোক, হয়ত বাস্তবে আপনার কথাই সঠিক। ইলেকশনের ক্যান্ডিডেটদের যেমন ঘটা করে ক্রিস্টান দাবী করতে দেখা যায়!

কিছু ব্যাপারে অ্যামেরিকা সামনের দিকে যাচ্ছিলো, যেমন (প্রকাশ্য) বর্ণবাদের বিলুপ্তি, সমকামীদের অধিকার বৃদ্ধি (একসময় শূন্য ছিলো) ইত্যাদি। গে ম্যারজে বৈধ করেই তো সম্প্রতি এক স্টেইটে আইন পাশ হলো। নর্থ ক্যারোলাইনা আসার আগে, গ্র্যাডদের রিভিউ দেখেছিলাম, সবাই মোটামুটি এই স্টেইটকে নাগরিক অধিকারের দিক দিয়ে প্রগ্রেসিভ এবং উদার বলেছিলো। তাই, এই ব্যাপারটা আমার কাছে পিছনের দিকে যাত্রা বলে মনে হলো আর কি।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

দিফিও এর ছবি

সজলকে ধন্যবাদ সচলায়তনে এই বিষয়ে আলোচনাটা শুরু করায়। মোটের ওপর একমত, তবে ২/১ টা জিনিস যোগ করি:

১) নর্থ ক্যারোলিনা মোটের ওপর খুব কট্টর জায়গা না হলেও, মনে রাখতে হবে, এটা আমেরিকার "বাইবেল বেল্ট"-এরই অংশ, আর হাজার হোক, এরা আমেরিকান সাউথের অংশ, তাই ধর্মীয় রক্ষণশীলতা এখানে বেশী হওয়াটাই স্বাভাবিক, তবে....

২) ....এবারের ভোটের পেছনে কারণটা একটু অন্যরকম বলেই মনে হয়। কোনো একটা সামাজিক ইস্যু নিয়ে সমর্থকদের গরম করে তোলা, আর ভোটের বুথে আনার চেষ্টা করা---এটা একটা পুরোনো রিপাবলিকান ট্রিক। এনসিতে আগে যে সমলিঙ্গ বিয়ে বৈধ ছিল, তা কিন্তু না। তাই এই এমেন্ডমেন্টের পিছনের কারণ আসলে ইলেকশন-ইয়ারে সমর্থকদের তাতিয়ে তোলা, এমনটাই ধারণা করছেন বেশীরভাগ লোক।

৩) আমেরিকা সম্বন্ধে তানভীর যা বললেন, সেটা একেবারে শতভাগ খাঁটি সত্য---ইহা একটি খ্রীস্টান রাজ্য। তবে, সাধারণ জনগণের মধ্যে কিন্তু বিশাল পরিবর্তন আসা শুরু হয়েছে। গ্যালাপ পোলে দেখা গেছে, সমলিঙ্গ বিয়ে সমর্তন করে এখন আমেরিকার প্রায় অর্ধেক জনগণ, যেটা আজথেকে মাত্র ১৫/১৬ বছর আগেও ছিল অকল্পনীয় (তখন এটার সমর্থনের হার ছিল মাত্র ২৫ ভাগ)। এবং মোটামুটি বলে দেয়া যায় যে, সমর্থনের এই হার ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।

ওবামা তাই মোটামুটি সবকিছু বুঝেশুনেই নিজের মতামত দিয়েছেন---সমলিঙ্গ বিয়ের প্রতি। দিফিও

সজল এর ছবি

আপনি এই স্টেইটের ভেটেরান, এর সম্পর্কে আপনার ভালো জানার কথা। ১, ৩ এর ব্যাপারে পুরোপুরি বলতে পারছি না, আমার অভিজ্ঞতা খুব বেশি দিনের না, আর আমি খুব বেশি স্থানীয়দের সাথে মিশিনি। তবে, ২ এর ব্যাপারেঃ আগে বৈধ/অবৈধ কিছুই ছিলনা মানে আগের স্ট্যান্ড তুলনামূলক পজিটিভ ছিল। ওবামার অবস্থান ভালো লেগেছে।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

নৈষাদ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং আলোচনা।

বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির মাঝে হোমো সেক্সুয়ালিটি খুঁজতে গিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন যে সেটা অন্য প্রাণীদের মাঝে মানুষের চেয়েও বেশি হারে দৃশ্যমান।

গুরুত্বপূর্ন এই তথ্যটা আমার কাছে নতুন। কিছু দিন আগে এ ব্যাপারে একজনের সাথে বিতর্ক করার সময় তিনি একটা শক্ত যুক্তি দিচ্ছিলেন, ‘অন্য প্রাণিদের মাঝে এটা কখনও পাওয়া যাবে না…’।

সজল এর ছবি

এখানে দেখতে পারেন।
"মানুষের চেয়েও বেশি"টা ওভার স্টেটমেন্ট হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। একটু চেক করে দেখতে হবে।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

মাসুদ এর ছবি

অন্য প্রানীদের মাঝে তো ধর্ষণের হার ও মানুষের চেয়ে অনেক বেশি, এটাও তো প্রকৃতিগত তাই না ? এই রকম সরলীকরণ করলে তো ধর্ষণ বন্ধ করার ও কোনো দরকার নাই !

সজল এর ছবি

"সমকামিতা স্বাভাবিক না বা কারো প্রকৃতিগত না, বরং মানুষের এক ধরনের বিকৃতি" এই ধরনের যুক্তির বিপক্ষে বলা হচ্ছে প্রকৃতিতে অন্য প্রাণীদের মাঝেও সমকামিতা দেখা যায়। বলা হয়নি, অন্য প্রাণী করে, তাই আমাদেরও করতে হবে। জোর করে সরলীকরণ টানছেন কেন? অন্য প্রাণীদের সাথে আমাদের অনেক কিছুই মিলে যায়, কারণ আমরাও প্রাণী, তার মাঝ থেকে শুধু ক্ষতিকর আচরণটাই বাদ দিতে হবে। সমকামিতা কোন ক্ষতিকর আচরণ না, তাই এটা বাদ দেয়ার কিছু নেই, এই হচ্ছে আমার পয়েন্ট।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

বন্দনা এর ছবি

এই ব্যাপারটা নিয়ে কদিন আগে খুব আগ্রহ কাজ করছিল, একটু হাল্কাপাতলা পড়াশোনা ও করেছিলাম। আপনার লিখা দেখে পুরাই ঝাপিয়ে পড়লাম। তবে আপনার লিখায় সোশাল আর লিগাল ইস্যুর প্রাধান্যই বেশি পেলাম। এই ধরনের লিখা মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে।।

সজল এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভোটাভুটির ব্যাপারটা ভাবাচ্ছিল বলেই এক বসায় লিখে ফেলা। ঠিক বিজ্ঞানবিষয়ক লেখার প্ল্যান ছিলো না।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

পৃথ্বী এর ছবি

১) সমকামীতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গ আসলে অনেকেই মনে করেন সমকামীতাকে "উৎসাহিত"করা হচ্ছে। স্বীকৃতি আর প্রণোদনা কিন্তু এক জিনিস না। তাছাড়া সমকামীতা কোন "সিদ্ধান্ত" না যে উৎসাহিত করলেই সবাই সমকামী হয়ে যাবে। বিষমকামী মানুষও নিজের যৌনতা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য সমলিঙ্গের কারও সাথে সঙ্গম করতে পারে, কিন্তু চাইলেই কেউ বিষমকামী হয়ে সমলিঙ্গের কারও সাথে বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। প্রেম আর যৌনতা সমার্থক নয়।

২) স্বাস্থ্যগত ঝুকি কোনমতেই অধিকার কেড়ে নেওয়ার যুক্তি হতে পারে না। নিরাপদ যৌনতাকে ঘিরে তো আমার জানামতে একটা পুরো ইন্ডাসট্রিই গড়ে উঠেছে।

৩) সমকামীতা যদি ঐচ্ছিক হত, তাতেও কিছু যায় আসত না। একজনের যৌনতায় আরেকজনের হস্তক্ষেপের কোন অধিকার নেই, রাষ্ট্রের তো নয়ই। যতক্ষণ পর্যন্ত্য সেটা শয়নকক্ষে সীমাবদ্ধ থাকছে এবং রাষ্ট্রের কিংবা ব্যক্তির ক্ষতি করছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত্য এ ব্যাপারে নাক গলানোর কোন গ্রহণযোগ্য যুক্তি থাকে না।

৪) সমকামীদের সন্তান নেওয়াটা পুরোপুরি অসম্ভব না। ইন-ভিট্রো ফারটিলাইজেশন আছে, আর দত্তক নেওয়ার অপশন তো আছেই। সমকামীদের সন্তান অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে, এমন কোন নজিরও নেই। সিঙ্গল প্যারেন্টদের সন্তানরা যদি বড় হয়ে চিকিৎসক-প্রকৌশলী হতে পারে এবং ব্যক্তি জীবনে সুখী হতে পারে, তবে দু'জন বাবা/দু'জন মার সন্তানের সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সমস্যা কোথায়?

৫) প্রকৃতিতে প্রাণীরা সমকামী আচরণ প্রদর্শন না করলেও কিছু যায় আসে না। প্রকৃতিতে অনেক আচরণই আছে যেগুলো প্রজাতি-স্পেসিফিক- যেমন, সিংহ নিজের সন্তান খেয়ে ফেলতে পারে কিন্তু কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এই কাজ করবে না।

তাছাড়া প্রকৃতিতে কোন প্রাণীকেই ধর্মব্যবসা করতে দেখা যায় না। তাহলে কি সব পুরোহিত-মোল্লাদের ধরে বেন্ধে আমরা হেমায়েতপুর পাঠিয়ে দিতে পারি? সেটা করতে পারলে মন্দ হত না।

সজল এর ছবি

গুরু গুরু

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সাফি এর ছবি

তাছাড়া প্রকৃতিতে কোন প্রাণীকেই ধর্মব্যবসা করতে দেখা যায় না। তাহলে কি সব পুরোহিত-মোল্লাদের ধরে বেন্ধে আমরা হেমায়েতপুর পাঠিয়ে দিতে পারি? সেটা করতে পারলে মন্দ হত না।

চলুক

তানিম এহসান এর ছবি

তাছাড়া প্রকৃতিতে কোন প্রাণীকেই ধর্মব্যবসা করতে দেখা যায় না। তাহলে কি সব পুরোহিত-মোল্লাদের ধরে বেন্ধে আমরা হেমায়েতপুর পাঠিয়ে দিতে পারি? সেটা করতে পারলে মন্দ হত না।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আসলে একটা বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে, "সংখ্যাগরিষ্ঠ যা করে সেটাই স্বাভাবিক, আর বাকি সব অস্বাভাবিক।"

আসলে মনে হয় ওদের অবচেতনে এরকম একটা বোধ কাজ করে, "আরে!! আমি তো এর মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারিনা!! এইডা তাইলে কিছুতেই হইতে দিমু না।" খাইছে

গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

স্যাম এর ছবি

দারুন লেখা।

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

দ্রোহী এর ছবি

এই হইলো নর্থ ক্যারোলাইনার শিক্ষা ও অ্যামেন্ডমেন্ট ১ এর ভোটের সম্পর্ক।

সাফি এর ছবি

দেঁতো হাসি

সজল এর ছবি

হাততালি
এই সব প্যাটাররন এত অববিয়াস হওয়ার পরেও ছাগুদের অশিক্ষিত বল্লে রাগ করে।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ভালো মানুষ এর ছবি

কোথায় যেন দেখলাম ওবামা প্রশাষন সমকামীতার পক্ষে একটু নরম সুর বাজাচ্ছে। জানি না এটা কি আসলেই নাকি ভোটের বাজারে নতুন কৌশল?

ভাল লেখা সজল দা
গুরু গুরু

সজল এর ছবি

ওবামার কিছু অব্স্থান প্রশনং্সনীয়, ভোটের জন্য হলেও বল্তে হবে দূরদররশী।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

লেখা ভাল্লাগসে। চলুক

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ধুসর জলছবি এর ছবি

ভাল লাগল হাততালি

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তানিম এহসান এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা।

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।