বাহাত্তরের সংবিধানে প্রত্যাবর্তন (শেষার্ধ)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: বুধ, ২৮/০১/২০০৯ - ১০:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাহাত্তরের সংবিধানে প্রত্যাবর্তন (প্রথমার্ধ)

৪। সংবিধানের শুরু থেকে “বিসমিল্লাহ” ও মূলনীতি থেকে “আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা” বিয়োজনঃ

সংবিধানের শুরুতে “বিসমিল্লাহ” সংযোজন জেনারেল জিয়ার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। এই সংযোজন রাষ্ট্রের মূল চরিত্র পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। ফলে মূলনীতিতে “আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা” সংযোজন সহজ হয়ে যায়। এই দুই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের সংবিধান মানার জন্য মুসলিম হওয়া একটা পূর্বশর্ত হয়ে যায়। “হিন্দু মানেই পাকিস্তানবিরোধী - হিন্দুস্তানের দালাল, সুতরাং হিন্দুদের আর তাদের সহযোগীদের কতল করা জায়েজ” এই কথা যারা বলত তারা পাকিস্তানী হওয়ার জন্য মুসলিম হওয়াকে পূর্বশর্ত বোঝাত। সংবিধানের এই পরিবর্তনের দরুন সরাসরি বলা না হলেও আইনগত ভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার জন্য মুসলিম হওয়া পূর্বশর্ত হয়ে যাচ্ছে। কোন রাষ্ট্রের নাগরিক হবার জন্য কোন বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্য হওয়া যখন পূর্বশর্ত হয়ে যায়, তখন সেই রাষ্ট্র আর যাই হোক “গণপ্রজাতন্ত্র” থাকে না। রাষ্ট্রের গণপ্রজাতান্ত্রিক চরিত্রটি অক্ষুন্ন রাখার জন্য এধরণের পুর্বশর্ত না থাকা উচিত। তবে তার জন্য বাহাত্তরের সংবিধানে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা আগের পয়েন্টে উল্লেখিত সমস্যাই তৈরি করবে। এর জন্যও প্রয়োজন ভিন্ন সমাধাণ।

৫। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠণ করার পথ বন্ধ করণঃ

কোন রাজনৈতিক সংগঠণের গঠণতান্ত্রিক ভিত্তিতে কোন বিশেষ ধর্ম থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তা আর রাজনৈতিক সংগঠণ থাকে না - ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীতে পরিনত হয়। ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ড তাদের ধর্মাচরনেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। এদের সার্বজনীন সংগঠণের ভেক ধরতে দিলে বা রাজনীতি করতে দিলে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষদের রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুন্ন হবার আশংকা থাকে। একই সাথে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মানুষকে “ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল” করার আশংকাও থাকে। নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক সংগঠণ রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত আইনটি একটু সংশোধন ও কার্যকর করলে এই সমস্যাটির সমাধাণ করা যায়। রেজিষ্ট্রেশনবিহীন দলসমূহের রাজনৈতিক কার্যক্রম অবৈধ ঘোষনা করলে ব্যাপারটি আরো সহজতর হয়। সে জন্যও কোন জটিল পথ অবলম্বনের দরকার নেই।

৬। সামরিক শাসনামলসমূহ বৈধকরণ সংক্রান্ত সংশোধনীসমূহ বাতিলকরণঃ

সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সংশোধনীর বলে দুই জেনারেলের সামরিক শাসন বৈধ করা হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে প্রত্যাবর্তন করলে ঐ সংশোধনীগুলোর কার্যকারীতা থাকে না। তবে এতে সামরিক আমলে জারী করা বিধি ও অধ্যাদেশসমূহ অবৈধ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ঐ সময়কালে সাংবিধানিক শুন্যতাও তৈরি হয়ে যায়। এর ফলে রাষ্ট্রের বিরূদ্ধে লক্ষ লক্ষ মামলা করার অপশন তৈরি হয়ে যায়। সাংবিধানিক সংকট তৈরি না করেও নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসন জারী করাকে বেআইনী হিসাবে গন্য করার উপায় বের করা সম্ভব এবং তার বিচার করাও সম্ভব। এর জন্য উচ্চতর আদালতের ব্যাখ্যার সাহায্য নেয়া যেতে পারে। মুন সিনেমা হল সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ে গত জোট সরকারের আমলে সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্ন সাপেক্ষ হয়ে পড়েছিল। ঐ মামলার রায়ের Consequence নিয়ে আলোচনা না করেও বলা যায় উচ্চতর আদালতকে সহায়ক হিসাবে ব্যবহার করে এই ধরণের জটিল বিষয় সংবিধান সংশোধনী ছাড়া সমাধাণ করা সম্ভব। এতে ভবিষ্যতে সরাসরি সামরিক বা সিভিকো-মিলিটারী ধাঁচের অরাজনৈতিক শাসন জারীর পথ বন্ধ করা যায়। পদ্ধতিটি ফুলপ্রুফ নয়, কারন পাকিস্তানে আমরা উচ্চতর আদালতের সহায়তা নিয়ে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা সামরিক সরকারকে বৈধতা দিতে দেখেছি। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে কোন না কোন পর্যায়ে রাষ্ট্রের এ সব প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করার বিকল্প নেই।

বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল হলে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী, ভারতের কাছে বেরুবাড়ি হস্তান্তর সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনীও অকার্যকর হয়ে যায়। এতে ঘরে-বাইরে সব ক্ষেত্রেই সংকট তৈরি হয়ে যায়। সুতরাং ইতিহাসের চাকাকে পেছনে ঘোরানোর চেষ্টা সমস্যা কমানোর চেয়ে বরং সংকট বাড়াবে বলেই মনে হয়।

তাহলে উপায় কী?

বাংলাদেশের সংবিধানের বড় সমস্যা হচ্ছে একে প্রায় Complete code for the state করার চেষ্টা করা হয়েছে। বস্তুতঃ সংবিধান এত বিশদ হবার প্রয়োজন নেই। আমরা জানি, যুক্তরাজ্য, নিউ জীল্যাণ্ড ও ইসরাইলের সংবিধান লিখিত নয়। সে সব দেশে সংসদে ইতিপূর্বে পাশ করা বিলসমূহ, রাষ্ট্রে বিদ্যমান আইনসমূহ (ফৌজদারী, দেওয়ানী, পেনাল, কোম্পানী ইত্যাদি), সর্বোচ্চ আদালতে মিমাংসীত রায়সমূহ, ইতিপূর্বে করা সরকারের চুক্তিসমূহ ইত্যাদি রাষ্ট্র ও সংসদের গঠণ, পরিচালন কর্মের ভিত্তি হিসাবে গণ্য হয়। এসব ক্ষেত্রে সংসদ পরিচালনা, বিল উত্থাপন-সংশোধন-পাশ, অধ্যাদেশ জারী, আইনের পরিবর্তন-পরিবর্ধন-পরিমার্জন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রের মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে Norms, Ethics, দেশের ও জনগণের স্বার্থ এবং সময়ের প্রয়োজন (তা অবশ্যই দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরূদ্ধে নয়)।

যেহেতু বাংলাদেশ লিখিত সংবিধানের পথে ৩৭ বৎসর হেঁটে ফেলেছে তাই তাকে আর অলিখিত সংবিধানের পথে নেওয়া সম্ভব নয়। আমার পাপী মন বলে তা সঙ্গতও নয়। তবে যে সকল বিষয় অন্য আইনে, অধ্যাদেশে বা সংবিধানের অন্য অনুচ্ছেদে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে সংবিধানকে সে সমস্ত অহেতুক বোঝা থেকে মুক্ত করা যেতে পারে। যে সকল অনুচ্ছেদ পরস্পর বিরোধী সেগুলোর ব্যাপারে সংসদে আলোচনা করে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো বাদ দেয়া যেতে পারে। এতে আমাদের সংবিধান Slim and trim একটা চেহারা পেতে পারে। রাষ্ট্র, সরকার, আদালত ও জনগণ অনেকগুলো জটিলতার হাত থেকে বাঁচতে পারে। বিশেষ প্রয়োজনে উচ্চতর আদালতের কাছ থেকে বিধির বিশদ ব্যাখ্যা নেয়া যেতে পারে।

লিখিত সংবিধান প্রনয়ণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের চরিত্রটি কী হবে, রাষ্ট্রের দর্শনটি কী হবে, রাষ্ট্রের লক্ষ্য কী এই বিষয়গুলো থাকা প্রয়োজন। তাহলে পরবর্তীতে যে কোন আইন প্রনয়ণের ক্ষেত্রে আইনটির চরিত্র ও সীমা নির্ধারণ সহজতর হয়ে যায়। আমাদের সংবিধানের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো স্পষ্ট নয় বলে পরস্পর বিরোধী অনুচ্ছেদ সংযোজন বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আইন প্রনয়ণ করা সম্ভব হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশের ক্ষেত্রে সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন থাকা জরুরী। গত ৩৮ বৎসরে এব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে গেছে দেশের জনগণ রাষ্ট্রের চরিত্র-দর্শন-লক্ষ্য কি রূপ চায় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে তারা কী বোঝেন। উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া মূলনীতি বা বিধান নয়, বরং দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিই সংবিধানের ভিত্তি হওয়া উচিত। সংবিধান আসমানী কিতাব নয়, এটির প্রয়োজনীয় আকার ও রূপ পরিবর্তনের জন্য নির্বাচিত সংসদই যথেষ্ঠ। সেক্ষেত্রেও সংসদ সদস্যদের ও সরকারের সংবেদণশীলতা ও সুবিবেচনা কাম্য। কথাগুলো কেতাবী শোনালেও সংসদীয় গণতন্ত্রে এর বিকল্প নেই।

এই লক্ষ্য পূরণের জন্য দুটি উপায় আছে। এক, নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি সংবিধান রিফর্মেশন কমিটি গঠণ করে বিদ্যমান সংবিধানকে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা। দুই, একটি নতুন সংবিধান প্রনয়ণ করা।

উভয় ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্পর্শকাতর বিষয়গুলো কিছু ঝামেলা তৈরি করবে, যা ক্ষমতাসীন দল ভবিষ্যতের ভোটের কথা বিবেচনা করে সেগুলোতে হাত নাও দিতে চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে সাময়িকভাবে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে বিষয়গুলোকে নন-প্রাকটিসিং করে ফেলা যেতে পারে। যেমন, রাষ্ট্র ধর্মীয় বিষয়গুলো থেকে হাত গুটিয়ে নিলে (সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ও কর্মসূচীগুলোর বাজেট আস্তে আস্তে কমিয়ে কয়েক বৎসরে বন্ধ করে দিলে) রাষ্ট্র গোষ্ঠীগত চরিত্রের হাত থেকে রক্ষা পায়। একই সাথে রাষ্ট্র ও সরকারের উদারনৈতিক চরিত্রের চর্চা সাধারণ জনগণের মধ্যে আস্থা আনতে পারবে। এতে বর্তমানে যে সব বিষয় স্পর্শকাতর বলে বিবেচ্য হচ্ছে নিকট ভবিষ্যতে তা তার স্পর্শকাতরতা হারাতে থাকবে। সংবিধানের কোন ধারাকে নন-প্রাকটিসিং করে ফেলার বড় উদাহরণ হচ্ছে সংবিধানের চতুর্থ মূলনীতি। এটি এখন প্রায় উহ্য এবং বস্তুতঃ অকার্যকর।

সামরিক সরকারের আমলে প্রনীত সব বিধিমালাকে বেআইনী ঘোষনা না করে জনবিরোধী ধারাগুলোকে বাতিল করে এবং শুধু সামরিক শাসন জারীর প্রক্রিয়াটিকে অবৈধ ঘোষনা করে তার বিচার করলে ভবিষ্যতে সামরিক শাসন বা অরাজনৈতিক শাসন জারীর পথ রূদ্ধ করা যায়। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা উচিত যে, এদেশে সামরিক শাসনগুলো শুধু কতিপয় উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তার এবং নীতিহীন রাজনৈতিক নেতাদের পেট ভরিয়েছিল, এতে সাধারণ মানুষদের মত সাধারণ সৈনিকদের কোন লাভ হয়নি, গণতন্ত্রের তো নয়ই। সুতরাং বিচারের নামে অবিচার যেন না হতে পারে।

সংবিধান শুধুমাত্র একটি পুস্তক নয়, এটি সর্ব রোগের মহৌষধও নয়। এর যথাযথ চর্চা এবং সংসদকে কার্যকর করা না গেলে সংবিধান সংক্রান্ত সকল শুভ উদ্যোগ মাঠে মারা যাবে। সংসদকে সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার কেন্দ্রবিন্দু বানাতে না পারলে এই ধরণের রাষ্ট্র ব্যবস্থা জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হবে এবং জনগণ ১/১১ ধরণের কুদরতী দাওয়াইকে হতাশ হয়ে স্বাগত জানাবে। আমরা যতই গালাগালি করি না কেন বিদ্যমান ব্যবস্থায় এখনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর নির্ভর করা ছাড়া গতি নেই। সৎ , যোগ্য ও দক্ষ নেতা নির্বাচনের ক্ষমতা দেশের জনগণের হাতে। নেতা নির্বাচনে জনগণ ভুল করলে সংবিধান যতই নিখুঁত হোক না কেন তা সংসদীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারবে না। বিদ্যমান রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি শক্তিশালী ও স্বাধীন না করলে, প্রশাসনকে দক্ষ, দেশপ্রেমিক ও দলমুক্ত করতে না পারলে সংসদীয় গণতন্ত্রের সুফল কোন দিনই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছুবে না।

বিদ্যমান ব্যবস্থা এবং তার অতীত পর্যালোচনা করে আপনি যদি বলেন, “নয় মণ ঘিও পুড়বে না, আর রাধাও নাচবে না”, তাহলে আমি সবিনয়ে বলব, “আপনিই ঠিক”। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন গোটা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। ঔপনিবেশিক-লুটেরা ধাঁচের রাষ্ট্র কাঠামোকে যতই অজু-গোসল করানো হোক তার চরিত্র পরিবর্তিত হবে না। জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার মূল বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করে উপরিকাঠামোতে যতই পরিবর্তন আনা হোক না কেন তা পরিণামে কোন সুফল বয়ে আনবে না।


মন্তব্য

কীর্তিনাশা এর ছবি

চমৎকার পোস্ট। অনেক কিছু জানা হলো পান্ডব দা।
অসংখ্য ধন্যবাদ।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রণদীপম বসু এর ছবি

চলুক

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।