রসে-বশে -০১

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: রবি, ৩১/০১/২০১০ - ১০:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দোহাইঃ প্রথমেই বলে নেই এটা কোন ধারাবাহিক লেখা নয়। একই ধরণের লেখার জন্য প্রতিবার নতুন নতুন নাম খোঁজার ঝামেলা এড়াতে শিরোনামের পরে ক্রমবাচক সংখ্যা বসানো হয়েছে। অনিয়মিত এই সিরিজের প্রত্যকটি লেখা মাসুদ রানার মত স্বয়ংসম্পূর্ণ। পাঠকের পক্ষে আমার “নতজানু মনন, অপচিত মেরুদণ্ড” সিরিজের সাথে এই সিরিজের মিল পাওয়া আশ্চর্যের কিছু না। এই লেখাটি এর আগে আমার ফেসবুকে নোট হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে পাঠকদের অনুযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লেখাটা সচলে পোস্ট করা হল। মডারেটরদের প্রতি অনুরোধ, এতে যদি সচলের নীতিমালা লঙ্ঘিত হয় তাহলে জানাবেন। সেক্ষেত্রে আমি লেখাটি নীড়পাতা থেকে সরিয়ে দেব।

সম্ভবতঃ ১৯৯৯ সালের কথা। গানওয়ালা সুমন চট্টোপাধ্যায় ঢাকায় এসেছেন। তখনও তিনি কবীর সুমন হননি, সাবিনা ইয়াসমীনকে বিয়ে করেননি, তখনও তাঁর আজকের এই অধঃপতন হয়নি। জাতীয় যাদুঘরের মিলনায়তনে তাঁর অনুষ্ঠানে গেছি। কথায় কথায় সুমন বললেন তিনি “রসে-বশে কম্যুনিস্ট”। এই রসে-বশে কথাটার মানে কী? এর মানে দাঁড়ায় তিনি কমিউনিজমের মহিমায় আছেন ত্যাগে নেই, গ্লানিতে নেই। বিপদ দেখলে সেদিক থেকে দূরে বা কোথাও আয়েশের সুযোগ দেখলে তিনি সেদিকে দৌড় দেবেন। কিন্তু নিজের পরিচয়ের সাথে কম্যুনিস্ট তক্‌মাটা তিনি রাখবেন। নয়তো যে নিজেকে প্রগতিশীল বলে দাবী করা যায় না! নিজেকে প্রাগ্রসর ভাবনার মানুষ বলে দাবী করা যায় না! উঠতি যুবকদের মধ্যে নিজের বাজারটা টিকে থাকেনা! সুমন চট্টোপাধ্যায়কে যারা চেনেন তারা সবাই সুমনের এই “সুবিধাবাদী প্রেমিক” চরিত্রটির কথা জানেন। “রসে-বশে কম্যুনিস্ট” বলতে সুমন আসলে রাজনৈতিকক্ষেত্রে তাঁর “সুবিধাবাদী প্রেমিক” চরিত্রটির কথাই বুঝিয়েছেন। সুমন নেহাত ভদ্রলোক, তাই তিনি ঘোষণা দিয়েই “রসে-বশে কম্যুনিস্ট”।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গটা অনেকদিন ধরে সচেতন নাগরিকরা বলে আসলেও এতদিন তা হালে পানি পায়নি। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ “তারা নির্বাচিত হলে এই ব্যাপারে জেহাদ ঘোষণা করবে” জাতীয় হুঙ্কার দিলে বিষয়টা লাইম লাইটে আসে। স্বতঃবিশ্বাসপ্রবন এই দেশের সাধারণ নাগরিকেরা এই হুঙ্কারে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগকে বুক উজাড় করে ভোট দেন। আওয়ামী লীগের অবশ্য সুদূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এই হুঙ্কার তোলা ছাড়া উপায় ছিলনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ব্যাপারটা যেহেতু অন্তিম পর্যায়ে (পলাতক খুনীদের ধরে এনে শাস্তি দেয়া শুধু বাকী), তাই আরেকটা জজ্‌বা জারী রাখতে না পারলে স্থানীয় সরকার ও পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ভোট চাওয়ার জন্য কোন ট্রাম্পকার্ড হাতে থাকেনা। খুব স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ সরকার এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে “অতি ধীরে চলো” নীতি গ্রহন করেছে। আওয়ামী লীগ এই সত্যটা জানে যে, গত ৩৯ বৎসরে বহু রাজাকার, বর্ণচোরা রাজাকার, জ্ঞানপাপী তাদের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে আওয়ামী লীগে ঢুকে গেছে। নিজের দলের কেউ অপরাধী হলেও জেনে হোক বা না জেনে হোক তাকে বাঁচাবার একটা এঁড়ে প্রবনতা আওয়ামী লীগের মধ্যে আছে। ব্যক্তির অপরাধের জন্য দল যে দায়ী হতে পারে না এই বোধটা তাদের নেই। এমনকি দলের পেটোয়া বুদ্ধিজীবির দলও তখন সেই “কালো ভেড়া”টিকে বাঁচানোর সপক্ষে কুযুক্তি দেয়া শুরু করে। তাই এই বিচার কাজ বিস্তারিতভাবে শুরু হলে দলে লুকিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের জন্য দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে এই বিবেচনাটা তাদের আছে। আবার হুটহাট করে দুই/তিন বৎসরের মধ্যে বিচার শেষ হয়ে গেলে তার দুই/এক বৎসর পর নির্বাচনে ভোট চাওয়ার জন্য তারা নতুন কোন ইস্যু আনবেন? এমন ঝামেলা বাঁধানোর চেয়ে ধীরে চলাই তাদের জন্য উত্তম পন্থা।

আমি সুমন চট্টোপাধ্যায় বা আওয়ামী লীগকে নিয়ে চিন্তিত নই। সুমন চট্টোপাধ্যায় পঁচলেন না কি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করল তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমি সাধারণ মানুষ - আম-জনতা, আমার ভাবনা তাই আম-জনতাকে ঘিরেই। এই জীবনে নানা পরিস্থিতিতে দেখেছি আম-জনতা সুমন চট্টোপাধ্যায়ের মত সুবিধাবাদী প্রেমিক। কেমন করে? একটা উদাহরণ দেই। আপনি আজ ঢাকার প্রেস ক্লাবের সামনে একটা বিরাট সাদা কাপড় আর মার্কার পেন নিয়ে দাঁড়িয়ে ঘোষনা করুন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আবেদন পাঠানো হবে, আপনারা সবাই এখানে স্বাক্ষর করুন”। দেখবেন হুড়াহুড়ি করে সবাই স্বাক্ষর করতে লেগে যাবে। অনেকেই দেখবেন কাপড়ের উপর জ্বালাময়ী সব বক্তব্য লিখে যাচ্ছেন। সবাই জানেন যে গোটা ব্যাপারটাই একটা অর্থহীন উদ্যোগ। তবু সবাই এতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন, কারণ এতে কোন ঝুঁকি নেই। কিন্তু যদি বলেন, “অমুক যুদ্ধাপরাধীর বিরূদ্ধে মামলা করা হবে, এই ব্যাপারে যারা যারা সাক্ষ্য দিতে পারবেন বা এভিডেন্স দিতে পারবেন তারা এগিয়ে আসুন”। দেখবেন কেউ আসবেননা। কেউ কেউ আপনাকে কিছু টাকা সেধে বলবেন, “তুমি যে উদ্যোগটা নিয়েছ সেটা খুবই ভাল ব্যাপার। কিন্তু দেখো আমারতো এসবে জড়ানোর সময় নেই তাই তোমাকে কিছু টাকা দিচ্ছি। মামলা-মোকদ্দমা, দৌড়াদৌড়ি এমন হাজারো কাজেতো তোমার টাকা লাগবে, তাই একটু সামিল হয়ে গেলাম আরকি”। আপাত দৃষ্টিতে শেষের জনকে মহৎ ব্যক্তি মনে হলেও তিনি আসলে তা নন্। তিনি ভিখেরী তাড়ানোর মতই এই সমস্যাটা থেকে টাকা দিয়ে বাঁচতে চান। যুদ্ধাপরাধীর বিচার হওয়া না হওয়া নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য কাপড়ে স্বাক্ষর করার মত আপনি যত গ্ল্যামারাস, অর্থহীন, হাউ-কাউ মার্কা উদ্যোগ নেবেন দেখবেন পাবলিক তত বেশি আপনার সাথে লাফাচ্ছে। সাথে সাথে তারা “রাজাকারগো শোয়ায় ফালামু”, “দালালগো জবাই কইরা ফালামু” জাতীয় হায়দরী হাঁক ছাড়বেন। ঝামেলার নূন্যতম গন্ধ পেলে এই মর্দে-মুজাহিদরা ল্যাজ তুলে পালাবেন। একটু বুদ্ধিমানেরা কোন হাঁক না ছেড়ে “আমিও আপনের লগে আছি” বলবেন। অবশ্য তারা যে কার “লগে”(সাথে) নাই তাও গবেষণার ব্যাপার।

আমরা জানি বিপ্লবের পথ স্বতঃই গার্হস্থ্যের দিকে বেঁকে যায়। গার্হস্থ্য বিপ্লবীরা দাঁত-নখ-শিঙ হারিয়ে মেষ বনে যান। তারা, যারা বিপ্লবের স্বপ্নও কোনদিন দেখেন না, সেই সব মানুষদের মত কুঁকড়ে যান। তাদের মেরুদণ্ড বাঁকতে বাঁকতে মাথা মাটিতে ঠেকে যায়। তবু অনেকেই নিজের প্রগতিশীল-বিপ্লবী পরিচয়টাকে ভালোবাসেন, নিজেকে অমন ভাবেই জাহির করতে চান। এরাই রসে-বশে কম্যুনিস্ট। এই দেশে এমন সব কম্যুনিস্ট নেতা আছেন যারা সারা জীবন কেবল বুলি কপচিয়ে গেছেন। নিজের কপচানো বুলি কোনদিন কোথাও প্রয়োগ করে দেখানোর সাহস রাখেননি। এনিয়ে কথা বলতে গেলে তেড়ে ফুঁড়ে আসেন। আরো দশটা তত্ত্ব ঝেড়ে আপনি কতটা অজ্ঞ, কতটা ভ্রান্ত তা প্রমাণ করে ছাড়েন।

ঐসব নিরাপদ, বুদ্ধিমান বিপ্লবীদের মত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে আমরা আম-জনতাও রসে-বশেই থাকব। আমাদের নামে যেহেতু মামলা হবার ভয় নেই, তাই আমরা আনন্দেই থাকবো। বিচার হলে ভাল, না হলেও বোধহয় আমাদের ক্ষতি নেই - অন্ততঃ আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি তাই বলে। বাঁচবোই আর বড়জোর বিশ-পঁচিশ বৎসর, এই সময়টা বউ-বাচ্চা নিয়ে একটু স্বচ্ছলতার মধ্যে বাঁচলেই যথেষ্ঠ। কী দরকার উটকো ঝামেলাতে জড়ানোর? জামাত ক্ষমতায় গেলে আমার বেতন কি কমিয়ে দেবে? নাকি আমার চাকুরী চলে যাবে? অবস্থা খুব খারাপ হতে নিলে নাহয় বিদেশ চলে যাব। এখনো অবশ্য আশায় আছি সুযোগ পেলেই কানাডা বা অস্ট্রেলিয়াতে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে চলে যাব। নিজে না পারলে ছেলে-মেয়েগুলোকে যে করে হোক পাঠিয়ে দেব। তখন আমরা বুড়ো-বুড়ির আর কী ভাবনা!


মন্তব্য

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

লেখাটা আপনার ফেসবুকের নোটে পড়েছিলাম। লগে থাকার ব্যাপারটা নিয়ে আপনার ব্যাখ্যার লগে আমি পুরা সহমত।

বাউলিয়ানা এর ছবি

এক বাক্যে সহমত।
লেখার জন্য চলুক

রাগিব এর ছবি

আপনার এই পোস্টের মূল থিম হাড়ে হাড়ে টের পাই উইকিতে প্রতিনিয়তই। ২০০৬ থেকে গত ৪ বছর হাতে সার্চলাইট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন আহবানে সবাই ঠিকই বলেন সাথে আছি, কিন্তু উইকিতে সক্রিয় ইউজার সেই হাতে গোণা কয়েকজনই। স্টেপ বাই স্টেপ কী কীভাবে করতে হবে, কোন নিবন্ধে কাজ করতে হবে, বেশি সময় না দিয়ে দিনে ২/৩ মিনিট দিলেও হবে -- এসব বলেও কাজ হয় না ... সবাই "সাথে আছি", "স্যালুট" ইত্যাদি বলে তার পর গায়েব কিংবা এই সপ্তাহে অমুক কাজে ব্যস্ত আছি, আগামী সপ্তাহে সময় পেলেই সাথে আছি... এসব বলে গায়েব।

সবাই দিনে ফেইসবুকে যে পরিমান সময় দেন, তার ২০ ভাগের একভাগ সময়ও যদি উইকিতে দিতেন, তা হলে এতো দিনে বাংলা উইকিতে লাখ খানেক নিবন্ধ থাকতো। দুঃখটা সেখানেই। মন খারাপ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও ঘটনাটা আসলে একই রকমই দাঁড়াচ্ছে।

----------------
গণক মিস্তিরি
মায়ানগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

ওডিন এর ছবি

সবাই দিনে ফেইসবুকে যে পরিমান সময় দেন, তার ২০ ভাগের একভাগ সময়ও যদি উইকিতে দিতেন, তা হলে এতো দিনে বাংলা উইকিতে লাখ খানেক নিবন্ধ থাকতো।

নির্মম সত্যি কথা!

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নৈষাদ এর ছবি

আর কিছু বলার বাকী নেই। সচলে এই প্রথম আমার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করলাম।

সুরঞ্জনা এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

-------------------------------------------------
জগতে সকলই মিথ্যা, সব মায়াময়,
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয় ।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

সিরাত এর ছবি

আমিও ফেসবুকে পড়েছি। ইন্টারেস্টিং।

আমার ধারনা, এটা আসলে তেমন নতুন কোন ফেনোমেনা না। বেশিরভাগ বড় ধরনের বিপ্লব ড্রাইভ করে কিছু ডেডিকেটেড লোক, সে কমিউনিজমই হোক আর আল-ক্বায়েদাই।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও এরকম কিছু হার্ডকোর থাকবেন, এবং তারাই যা করার করবেন। না পারলে কিছু হবে না। বাকিরা অবলিভিয়াস, নিজের মত আরামে থাকবে, পাত্তা দিবে না।

বড় বড় কথা বলে লাভ নাই, আমি নিজেও একজন তা জানি। কি আর করা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় সিরাত

না, এখানে আমি কোন নতুন কথা বলিনি। আমি যা বলেছি তা আমরা সবাই জানি, অনুভবও করি। এই জানা কথাগুলো এই সময়ে বার বার আমাদের আলোচনায় আসা উচিত। এজন্যই আসা উচিত যাতে আমাদের মধ্যে কিছু মানুষের হলেও বোধের পরিবর্তন হয়। তাতে পরিস্থিতিটা কিছুটা হলেও পাল্টাবে। ব্যক্তি পাণ্ডবের কাছে এটি এক ধরণের দ্বায়িত্ব। যদিও তাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে তার মূল দ্বায়িত্ব এতটুকু হ্রাস পায়না।

শুধু আমি না, সচলের যারা আপনার লেখা পড়েছেন তারাই জানেন আপনি যথেষ্ঠ লেখা-পড়া করা একজন মানুষ। আপনি জানতে ও পড়তে ভালোবাসেন। আমি অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে আবিষ্কার করলাম যে, আপনি আল ক্বায়েদাদের কার্যকলাপ আর কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের কার্যকলাপকে এক পাল্লায় বিচার করছেন এবং উভয়টাকেই বিপ্লব হিসেবে মনে করছেন।

সমাজ বিপ্লব মানবতাবিরোধী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ঠিকই কিন্তু তার লক্ষ্য মানবিক সমাজ নির্মাণ। বিপ্লবের সাথে নৈরাজ্যবাদ ও সন্ত্রাসবাদের পার্থক্যটা এইখানে। বিপ্লবের জন্য ডেডিকেটেড নেতা-কর্মী দরকার হয় ঠিকই, কিন্তু বিপ্লবের ভিত্তিটা থাকে জনগণের মধ্যে। যে প্রক্রিয়াতে গণমানুষের অংশগ্রহন নেই, যে ব্যবস্থাতে জনগণের সমর্থন নেই, যে ব্যবস্থা নিপীড়নমূলক, বদ্ধচিন্তার, প্রগতিবিরোধী, মানবতাবিরোধী তা আর যাই হোক বিপ্লব নয়। বিপ্লব চাপিয়ে দেয়া জিনিষ নয়, বরং জনগণের মধ্য থেকে উৎসারিত প্রক্রিয়া। মৌলবাদীদের নৈরাজ্যমূলক কার্যক্রমে অন্ধবিশ্বাসী, আত্মহননপ্রবন, যুক্তিহীন মানুষ দরকার। সেখানে গণমানুষের সমর্থন দরকারী নয়। অমন দশজন অন্ধবিশ্বাসীকে নিয়ে বিশাল ভবন, বিমান বা সেতু উড়িয়ে দেয়া যায়, কিন্তু জনগণের সরকার কায়েম করা যায়না, সমাজটাকে বদলানো যায়না।

আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মানুষ আরাম করতে চাইবেন, ঝামেলায় যাবেননা। কিন্তু তাকেও পরিবর্তনের লড়াইতে আনা যায় যদি তাকে তা ঠিকভাবে বোঝানো যায়। সাধারণ মানুষ যখন লড়াইতে আসেন তখন তারা প্রত্যেকেই এক একজন ডেডিকেটেড যোদ্ধায় পরিণত হন। তখন তারা নেতার ডেডিকেশন, কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে মাথা ঘামান না। সত্যিকারের পরিবর্তন তখনই সংঘটিত হয়। আমার কথা কি আপনার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে? যদি তাই লাগে তাহলে বলব দয়া করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ুন। আপনি অবাক হয়ে দেখবেন এই আরামপ্রিয়, পলায়নপর মানুষগুলো কীভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের ডেডিকেশনে কীভাবে একটা রাষ্ট্রশক্তি শেয়ালের মত পালিয়েছে। আপনিতো ইতিহাস পড়েছেন, আপনি কি বলতে পারবেন পৃথিবীর ইতিহাসে কতগুলো যুদ্ধে মাত্র নয়মাসের মাথায় ৯৩,০০০ প্রশিক্ষিত সৈন্যের সেনাবাহিনী নিয়ে কোন পক্ষ আত্মসমর্পণ করেছে? আমি নিশ্চিতভাবে জানি এমন উদাহরণ ইতিহাসে বিরল।

অমন দেশের নাগরিক হয়ে নিজের দেশের মানুষের উপর আমি অনাস্থায় বা সন্দেহে ভুগিনা। আমি জানি একটা প্রহেলিকা তৈরি করা হয়েছে মাত্র। নিজেদের চামড়া বাঁচানোর জন্যই একদল মানুষ এই প্রহেলিকা তৈরি করেছে। আমাদের কাজ হচ্ছে সেই প্রহেলিকাটা দূর করা। তাহলে পৃথিবী আবার দেখতে পাবে এই দেশের মানুষ আসলে কী করতে পারে।

১৯৭১ সালেও অনেক হতাশা ছড়ানো হয়েছিল, এখনো হতাশা ছড়ানো হচ্ছে। হতাশাগ্রস্থদের দলে না গিয়ে বরং আশায় বুক বাঁধুন, দেখবেন জয় আমাদের হবেই, ১৯৭১-এও আমরাই জিতেছিলাম।

এই লেখাটি ফেসবুকে দিয়েছিলাম অহেতুক বিতর্ক এড়ানোর জন্য। তারপরেও কেন তা সচলে দিলাম তা আগেই ব্যাখ্যা করেছি। আমি এখনো চাইব অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এড়াতে।

ভালো থাকবেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

লেখাটার দরকার ছিল। কিন্তু জবাব দেবার মুখ নাই রে ভাই। আমি নিজেও যে ভেড়া, আমার শিং আগে থেকেই নাই। আর তাছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাথে ভাতের যোগাযোগটা পরিস্কার করে দেখা না গেলে বিপ্লব জমবে বলে মনে হয় না।

হাসিনার সরকার এই ইস্যুটাকে ঘরের কোনার মটকায় রেখে দেবে জিয়ল মাছের মত।

পরে খাবে।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

চলুক (চলুক) চলুক (চলুক) চলুক

-------------------------
ওলো সুজন আমার ঘরে তবু আইলোনা
এ পোড়া মনের জ্বলন কেন বুঝলোনা!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

একমত। আমরা হুজুগে বাঙালি তো তাই।

==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।