কল্পনায় ভাসে কবিতা, মনে বাজে গান

শেখ জলিল এর ছবি
লিখেছেন শেখ জলিল (তারিখ: শুক্র, ১৮/০৩/২০১১ - ১২:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লোকেরা বলাবলি করে এডমন্টন শহরের মানুষ নাকি খুব ধনী! কথাটা মিথ্যে নয়। পুরো আলবার্টা প্রদেশ চলে তেলের টাকায়। কানাডার সবচেয়ে বেশি তেলসমৃদ্ধ প্রদেশ আলবার্টা। রাজধানী এডমন্টনের শহরের লোকেরা বেশিভাগ চলাফেরা করে গাড়িতে। বাস, ট্রেন, মেট্রো বা সাবওয়ের ধার ধারে না। এখানকার ট্রানজিট ব্যবস্থাও বোধ করি কানাডার অন্যান্য বড়ো শহরের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে আছে।

আমি এখানে নতুন মানুষ। জীবিকার তাগিদে নিজ দেশ ছাড়া হয়েছি প্রায় দশ মাস। সম্বল বলতে নিজের মেধা আর শরীর। প্রকৃত কানাডিয়ানদের মতো চলাফেরা কি আমার সম্ভব? আমার একমাত্র ভরসা বাস, ট্রেন। কাজে যেতে, স্কুলে যেতে বাস-ট্রেনই আমার চলাফেরার বাহন। এখানকার ট্রানজিট ব্যবস্থাকে এরা বলে ইটিএস (এডমন্টন ট্রানজিট সিস্টেম)। ইটিএস-এর বয়েছে বাস আর এলআর টি(লাইট রেল ট্রানজিট)। এলআরটিগুলো কোথাও কোথাও মাটির নীচ দিয়ে আবার কোথাও বা মাটির উপর দিয়ে চলে। এই দ্বৈত ব্যবস্থার ছোট্ট ট্রেনকে অবশ্য কেউ কেউ পছন্দ করে না। তবে আমার কাছে বাস-ট্রেন দুটোই সোনায় সোহাগা। আরামে বসে ভ্রমণ আর বই-পত্রিকা পড়া আমি বেশ উপভোগ করি। বাসের জন্য পাড়ার ছোট্ট স্টপেজে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাটাও আমার খারাপ লাগে না।

দেশ ছেড়ে অনেক দূরের এই শীতপ্রধান দেশে প্রথম শীতটা কেমন যাবে খুব চিন্তায় ছিলাম। মাঝে মাঝে -৩০ বা -৪০ এ জমে যাবার উপক্রম যে হইনি তা নয়, সবই কপাল! তবে মনে হয় প্রথম শীতটাকে বেশ ভালোভাবেই মোকাবেলা করেছি। বিশেষ করে এডমন্টনের মতো শহরে নিজের গাড়ি ছাড়া বাইরে বেরুনো কারো কারো কাছে যখন প্রায় কল্পনার বাইরে। বাজার করা, স্কুলে যাওয়া, কাজে যাওয়া কোনো কিছুই আমার থেমে থাকেনি এখন পর্যন্ত।

প্রয়োজন ছাড়া রাস্তাঘাটের মানুষের সাথে কথা বলা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। তার উপর ইংরেজি আমার দ্বিতীয় ভাষা। এখনও বাংলার রেশ মন থেকে বিদায় হয়ে যায়নি। বাস-ট্রেনে বই-পত্রিকা পড়ে বেশ ভালো সময় কাটে আমার। তারপরও মাঝে মাঝে নস্টালজিয়ায় ভুগি। নিজের পুরনো অভ্যাস বদলাতে পারি না কখনও। কল্পনায় ভাসে কবিতা, মনে বাজে গানের সুর। একাকী দাঁড়িয়ে পাড়ার বাসস্টপে কতোদিন যে উচ্চস্বরে গান গেয়ে উঠেছি বলতে পরবো না। তবে শীত ভুলে থাকার জন্য এরকম ভাবনা বা গান আমার বেশ উপকারে দিয়েছে। জীবনে বেঁচে থাকাটাই এখন সত্যিকারের উপহার। ইদানীং লেখা আমার দুটো গীতিকবিতা তুলে দিলাম।

১.
কখনো বা আশা, কখনো হতাশা
শূন্যের উপর বাড়ি
চন্দ্রিমা রাতে মেঘের সাথে
স্বপ্নেরা নিয়েছে আড়ি।।

কখনো বা হাসি, বাজে মন-বাঁশি
বিনিদ্র প্রহর
করে ঘোরাফেরা হৃদয়চোরা
নিদারুণ রাতভর।

কখনো বা সুখ করে ধুকপুক
একটু ছোঁয়ায়
যাকে চেয়ে দেখি আসল না মেকি
থাকি ধোঁয়াশায়।

কখনো বিরহ কী যে দুঃসহ
কাটে নাকো ক্ষণ
কে তারে খোঁজে কী মনে বাজে
উন্মত্ত বন্ধন।

এই তো জীবন যখন যেমন
স্বপ্ন ও বাস্তব খেলা
কিছু কিছু সুখ, কিছু কিছু দুখ
দুলছে যাপন ভেলা।

শেখ জলিল ২৬.০২.২০১১

২.
তোমাকে ছাড়া ফুটবে না বনে
কোনো সুবাসিত ফুল
তোমাকে ছাড়া ভাসবে না জলে
সুখের দু'কূল
তোমাকে ছাড়া পৃথিবীতে আজ
পড়ে যাবে হুলস্থুল
তুমি স্বপ্ন চোখে হৃদয়ের চাওয়া
মনটা ব্যস্ত ব্যাকুল।।

দেখলে তোমায় জ্বলবে আঁধারে
পূর্ণিমা চাঁদ
ভাবলে তোমায় চলে যাবে সব
মনে অপবাদ
তোমাকে ছাড়া গাইবে না গান
কোনো উদাস বাউল
তুমি গানের কোকিল ফাগুনের বন
রাঙা পলাশ-শিমুল।।

ডাকলে তুমি উঠবে হেসে
ঐ শিশুরা অবুঝ
আসলে তুমি রাঙাবে আলোক
ঐ ভোরের সুরুজ
তোমাকে ছাড়া হারাবে পথ ঐ
যতো পথিক বেভুল
তুমি পূর্ণতা প্রাণ না-পাওয়ার দিশা
আবার ভুলের মাশুল।।

শেখ জলিল ০৬.০২.২০১১


মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

চলুক

শেখ জলিল এর ছবি

ধন্যবাদ।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

দুর্দান্ত এর ছবি

বাহ!

শেখ জলিল এর ছবি

শুকরিয়া!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

অসাধারণ লিখেছেন জলিল ভাই। এ যেন হৃদয়ে লতিয়ে উঠা কোন নিভৃততম গানে শুশ্রূষা তার লিখে নাম অবিরাম।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

শেখ জলিল এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ রোমেল।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

স্বাধীন এর ছবি

চলুক

শেখ জলিল এর ছবি

ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো জলিল ভাই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।