পারিবারিক কোষ্ঠকাঠিন্যে আন্তর্জালিক সাহায্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ১৮/০৩/২০০৮ - ৮:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অতীতে ঘটে নাই বলে ভবিষ্যতেও ঘটবে না এমন কথা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না, শুধু আশা করতে পারি যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। এই জায়গায় গাঞ্জা-সাধুরা একটা মুচকি হাসি দেবেন। দিয়ে বলবেন যে, মৃত্যুও মানুষের জীবনে আগে ঘটে না, যখন ঘটে তখন সবকিছুর ওপর পর্দা টেনে দেয়।

আশংকা ছিল না এমন নয় তবে আশাটা অনেক বড় ছিল। সেসব আশা বন্যায় ডুবিয়ে আমাদের বাসার কমোডটা অকস্মাত্ গতকাল মৃত্যুবরণ করলো। এমন না বয়সের ভারে এক পা কবরে এমন অবস্থা ছিল। মাত্র গত সপ্তাহে কিনে আনা ঝা চকচকে জিনিস। সাতদিন কাজও করলো ঠিক ঠাক। হালকা বোতাম চাপতে না চাপতেই ঝর ঝর পানি ছুটে সব ময়লা পরিষ্কার হয়ে যেত। অথচ পুরনো কমোডের চেয়ে পানি ব্যবহার হতো কম। খুবই কার্যদক্ষ যন্ত্র। সেই যন্ত্র শিশু-মৃত্যুর শিকার হবে তা বিক্রেতার গ্যারান্টিপত্র দেখলে আজ্রাইলও ভাববে না।

বাসায় অতিথিরা বেড়াতে এসেছে বাথ থেকে। কাজাখ মেয়ে কারিমা তার ছোট্ট মেয়ে ইমানকে নিয়েই ঢুকেছিলো টয়লেটে। বের হয়েই জানালো আমাদের সদ্য কেনা কমোডের ইহকাল ত্যাগের দু:সংবাদ। নাক-মুখ চেপে উকিঁ দিলাম। সে এক মর্মান্তিক দৃশ্য। দেখি ভরা বর্ষার নদীর মত থই থই করে দেহ ছেড়ে দিয়ে বসে আছে আমাদের ডিজাইনার্স কালেকশন কমোড। তখন রাতের খাবার খাওয়া হয়ে গেছে। সবাই এখন শোয়ার ঘরে ছুটলেও সকাল হওয়ামাত্র এই ছোট্টঘরের দরকার বড় হয়ে দেখা দেবে তা নিশ্চিত। অতিথি সেবার দায়-দায়িত্ব স্মরণ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলাম আমি আর রেহনুমা।

দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটের একমাত্র কমোড। এই প্রবাসে তো আর পাশের ফ্ল্যাটে নক করে বলা যায় না, আমরা ও আমাদের অতিথিরা আপনাদের টয়লেট ব্যবহার করতে পারি কি? ঘোর সংকট।

নানা চিন্তা-ভাবনার পর সিদ্ধান্ত নিলাম রাসায়নিক আক্রমণ চালানোটাই সঠিক হবে। কেন জানি কেমিক্যাল আলীর ফাঁসির কথা মনে পড়লো। বাসায় জোরদার কেমিক্যাল আছে। একেবারে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যবহারের জন্য তৈরি ‘ওয়ান শট’। বিক্রির সময় বাঙালি দোকান মালিক (বন্ধুর বড়ভাই) আশ্বাস দিয়েছিলেন, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ব্যবহার হয় – একবার দিলেই সব সাফা। লেবেল পাঠ করে দেখলাম এ আসলে নির্ভেজাল সালফিউরিক এসিড। সাধারণ আনব্লকারে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড থাকে – এতে উল্টা চিকিত্সার ব্যবস্থা। এক লিটারের মোটা প্লাস্টিকের বোতলের গায়ে ব্যবহারের কিছু নিয়ম-পদ্ধতি আছে। সেসব মেনেই যুদ্ধে নামলাম।

ল্যাডেল -গভীর থেকে তরল তোলার হাতা
প্রথমেই শহীদ হয়ে গেল সুপ তোলার ল্যাডেল। কমোডে আটকে থাকা পানি কমানোর জন্য লম্বা হাতলওয়ালা চামচটাই যুত্সই মনে হলো। সাথে দুই লিটারের খালি আইসক্রিমের বাক্স। অম্লের কার্যকারিতা বাড়াতে একটা জলশূন্য পরিবেশ দরকার। ‘ওয়ান শট’-এর বোতলটা খালি করে দিয়ে টানটান হয়ে বসে থাকলাম বিশ মিনিট। তারপর মুচকি হাসি দিয়ে ফ্লাশের বাটনটায় চাপ দিলাম। বিস্তৃত হওয়ার বদলে হাসি মিলায়ে গেল দ্রত। আবার সেই বন্যা। টয়লেটের ভেতর ফারাক্কা বাঁধ খাড়া হয়ে গেছে।

পদ্মার পানির মতো চুঁইয়ে চুঁইয়ে একটু একটু যাচ্ছে জল, তবে পানির স্বাভাবিক উচ্চতায় নেমে আসতে সময় লাগছে পাক্কা বিশ মিনিট। নিরাশ না হয়ে রেহনুমা শুরু করলো গরম পানির চিকিত্সা। বালটি দুয়েক ঢালার পর বুঝা গেল এতেও কোনো কাজ হবে না। এই শীতের রাতে গরম পানি পেয়ে ফাজিল কমোডটা হয়তো আরামেই আছে। এদিকে ঘুমে আমাদের অবস্থা ইয়েলতসিন, যেকোনো সময় ঢলে পড়ে যাবো।

কাজে লাগতে পারে এমন কোনো রাসায়নিক পদার্থ বাসায় নাই। রান্নাঘর খুজেঁ বের হলো রাইস ভিনেগারের এক বোতল। ভিনেগারের বহুমুখী ব্যবহারের নানা প্রশংসা পড়েছি ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপনে, শপিং চ্যানেলের বক্তিমায়। দশ পাউন্ড দিয়ে এর ওপর একটা বই একদিন কিনেই ফেলছিলাম প্রায়। আজ এর যোগ্যতা পরীক্ষার দিন। দিলাম পুরা বোতল উল্টায়ে। মিনিট পাচেঁক অপেক্ষা করে বুঝলাম স্বচ্ছ জলে খানিকটা রং যোগ করা ছাড়া বিশেষ কোনো কাজে আসে নাই এই বিস্ময়-তরল।

সিদ্ধান্ত নিলাম রসায়ন ছেড়ে এবার পদার্থবিদ্যা প্রয়োগের সময় এসেছে। দেশি লোকরা এরকম জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য রাবার-কাঠের একটা যন্ত্র কেনে – দূর থেকে দেখে প্রায়ই মুচকি হেসেছি। একটা কাঠের হাতলের মাথায় রাবারের একটা অর্ধেক বল। পরে জেনেছি যন্ত্রটার নাম প্লান্জার। যন্ত্রটা বাসায় নাই। রোববার রাতে কাছাকাছি কোনো দোকানও খোলা আছে বলে মনে হয় না।

কাপ প্লান্জার: প্লান্জার হাতে সাধারণ প্রবাসী বাঙালিদের দেখলেই আগে হাসি পেত। মনে হতো এরা যেমন খায় তেমন ত্যাগও করে।কাপ প্লান্জার: প্লান্জার হাতে সাধারণ প্রবাসী বাঙালিদের দেখলেই আগে হাসি পেত। মনে হতো এরা যেমন খায় তেমন ত্যাগও করে।

কাপড়ের আলমিরা থেকে একটা স্টিলের হ্যাংগার জোগাড় করলাম। প্লাস্টিকের যুগে বড় দুর্লভ জিনিস-কিন্তু ভীষণ কাজের। আগের বাসায় টিভি-এ্যান্টেনার কাজ এরকম একটা স্টিলের হ্যাংগার দিয়েই চালিয়েছি। হ্যাংগারটা খুলে সোজা করলাম। মাথার মধ্যে ঢাকা শহরের মিউনিসিপ্যালিটির কর্মীদের ছবি ঘুরছে। তাদের থাকে জোড়া দেয়া লম্বা লম্বা বাশেঁর ফালি। সেগুলো তারা ম্যানহোলের ভেতরে ঢুকিয়ে খোঁচাখুচিঁ করতো একসময়। সে বোধহয় স্টর্ম স্যুয়ারেজ হওয়ার আগের পদ্ধতি। আমিও লম্বা করে ফেলা হ্যাংগারটা কসরত করে কমোডের ওয়াটার ট্রাপ (ইংরেজি জে অক্ষরের মতো বাঁকানো অংশ) পার করে ঢুকিয়ে দিয়ে নানা দিকে মোচড়াতে লাগলাম। খোঁচা, ঘুঁটা ইত্যাদি নানা পদ্ধতিতে হ্যাংগারটাই কুঁকড়ে গেল। ফারাক্কা বাধেঁর কোনো সমাধান হলো না।

রাত তিনটা বাজে। লড়াই স্থগিত রেখে ঘুমাতে গেলাম। অতিথি-সেবা যথার্থ হচ্ছে না এই দুশ্চিন্তায় ঘুম ঠিকমত হলো না। অতিথিরা ঘুম থেমে উঠেছে টের পাওয়া মাত্র তাদেরকে নিয়ে বাসার সামনের সুপারমার্কেটে গেল রেহনুমা। টয়লেট, বাথরুম ব্যবহার শেষে ফেরার পথে বিশ্ববিখ্যাত টয়লেট আনব্লকারের দুইটা বোতল নিয়ে ফেরত এলো সে। সেসব ঢেলেও বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা গেল না। রসায়নের ওপর ভরসা হারালাম। সার্জারি আমার অপছন্দ কিন্তু মেডিসিনে কাজ না হলে উপায় কী।

ভাগ্য ভালো যে অতিথিরা মধ্যাহ্নের আগেই বিদায় নেবে। নিজে খালাস হওয়ার চেয়ে অন্যের খালাস নিবির্ঘ্ন করার দায়িত্ব অনেক ভারী। অতিথিদের ট্রেন ধরিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে বুঝলাম নির্ঘুম রাতের ক্লান্তি পেয়ে বসেছে। কিন্তু ঘরে জলাবদ্ধ কমোড রেখে কেউ কখনও শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছে বলে মনে হয় না। জলাবদ্ধতার ধ্বনাত্মক দিকগুলো ভেবে মনকে শান্তনা দিতে চেষ্টা করলাম। চাইনিজ বাস্তুবিদ্যা ফেং-সাই বলে বাথরুম ও টয়লেট চলে জলপ্রবাহের শক্তিতে। আর জল হচ্ছে সম্পদ, সমৃদ্ধি, পেশা ও উত্তম অর্থ-আগমনের প্রতীক। টয়লেটকে তাই রাখতে হয় বাড়ির পেছনে আর কমোডের ঢাকনা সব সময় নামিয়ে রাখতে হয় – যাতে সম্পদের অপচয় না হয়। ভাবলাম আমাদের কমোডের যা অবস্থা তাতে ভালো-মন্দ কোনো জিনিসই উস্পার হওয়ার উপায় বন্ধ। কিন্তু এই পন্থায় সমৃদ্ধি নিশ্চিত হলেও ঘুম নিশ্চিত হয় না।

যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে তাদের মেজাজ সদা-সর্বদা তিরিক্ষি থাকে। সে তো ব্যক্তির ব্যক্তিগত সংকট। ফ্ল্যাটের একমাত্র কমোড আটকে যাওয়া মানে পুরো পরিবারের, সব বাসিন্দাদের কোষ্ঠকাঠিন্য। সারানোর জন্য পেশাজীবি কারিগর (প্লামার) ডাকা যায়। কিন্তু তাতে ঘরে দুর্ভিক্ষ লেগে যেতে পারে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য স্থায়ী হয়ে যাওয়ার আশংকা ব্যাপক। প্রথমত: প্লামারদের শিডিউল পাওয়া খুব কঠিন। তিনদিনের আগে কাউকে পাওয়া হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো বাস্তবতা। বিলাতে তারাই সবচে দুষ্প্রাপ্য তারকা। আর মজুরি কমসে কম ঘন্টায় ১২০ পাউন্ড। ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে শুরু করবে তারা দরজায় কড়া নাড়ানো থেকে। তারপর তারা পরীক্ষা করবে, বসে ভাববে, জল বা কফি পান করবে, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কেনার জন্য দুলকি চালে দোকানের দিকে যাত্রা শুরু করবে – এই সব অহেতুক সময়-যাপনের জন্য মানিব্যাগ হাতড়াতে হবে নিজেকে। কমোড হয়তো জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে। কিন্তু পুরা মাসের বাজেট আধাদিনেই খালাস হয়ে যাবে। বাকী মাস কোষ্ঠকাঠিন্যের মেজাজ নিয়ে আধাপেট খেয়ে গুজরাতে হবে।

আধা-সামন্ত ব্যবস্থার বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সময় কতো মহান চিন্তায় যায়। এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তিলমাত্র সময় খরচ করতে হয় না। একটা ছোটো-খাটো নোট ছুড়েঁ দিলেই কত লোক দৌড়ে এসে সারিয়ে দিয়ে যাবে।

আমি এবার বসলাম প্রাযুক্তিক সহযোগিতায় জ্ঞানার্জনে। ডু-ইট-ইয়োরসেল্ফ পদ্ধতিতেই আগাতে হবে। ইন্টারনেট আঁচড় কাটতেই দেখি গুগল হাজির পাতা ভর্তি করে। কমোডের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ যে জ্ঞানের জগতে এতো বড়ো আলোড়ন তুলেছে আগে জানার সুযোগ হয় নাই। কি নাই আন্তর্জালে। প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ফটো-ফিচার, রিসার্চ পেপার, ম্যানুয়াল থেকে শুরু করে ভিডিও গাইড পর্যন্ত। সংসারের যাবতীয় হাউ-টু নিয়ে পেলাম একটা চমত্কার সাইট – ভিডিও জাগ। । একেবারে লাইফ এ্যাক্সপ্লেইন্ড, অন ফিল্ম। আমার জিনিসও সেখানে আছে হাউ টু আনব্লক এ টয়লেট । ভিডিও দেখেই শিক্ষা নিলাম। তবে ভিডিওর নিচে দেয়া মন্তব্যগুলোও ভীষণ জরুরি। ভিডিওতে যে সুক্ষ্ম বিষয়গুলো আসেনি সেগুলো মন্তব্য পড়ে স্পষ্ট হয়ে গেলো।

‘ক্যাম্নে কি’ - তার একটা তালিকা এখানে দিতেই হয়। নতুবা এতক্ষণ ধরে যারা কথামালা পড়ে এলেন তাদের কোনো কাজেই লাগবে না এই পোস্ট। কমোডের জলাবদ্ধতা মুক্তিতে কারিগর ডাকার আগ পর্যন্ত আপনার হাতে আছে নিম্নোক্ত উপায়গুলো:

. নানারকম রাসায়নিক পদার্থ। (আগেই ব্যবহার করেছি। বড় বিপদে কাজে লাগে না বলেই মনে হচ্ছে।)
. প্লান্জার (কাঠের হাতলওয়ালা অর্ধেক বল লাগানো বাতাসের চাপ প্রয়োগ করার যন্ত্র।)
. কোট-হ্যাংগার (ব্যবহার করে যুত্ পাই নাই তেমন।)
. ফ্লেক্সিবল স্টিলের শলা (যাতে আঁকাবাঁকা পথে ঢুকে ঠিক জিনিসটায় গুঁতা দিতে পারে। কমোডের চেয়ে বেসিন আটকে গেলে এটা বেশি কাজে দেয় বলে ধারণা হলো। তবে স্টিলের ঘষাঘষিতে টয়লেটে দাগ পড়ে যাওয়ার আশংকা। ধাতব গুড়া বা টুকরাও ভেঙে থেকে যেতে পারে ভেতরে।)
. রাবার দিয়ে ঢাকা স্টিলের শলা (সাপের মতো বলে এগুলোকে প্লামারস্ স্নেইক বলে। বাসার নিচের ইন্ডিয়ান গলাকাটা ডিআইইউ শপে দেখলাম ২০ পাউন্ড দাম। খুব একটা ভরসা পেলাম না বলে বাদ দিলাম।)

প্লামারস্ স্নেইকপ্লামারস্ স্নেইক

বুঝতে পারছিলাম বেশি করে টয়লেট রোল ফেলে এই কান্ড বাধিয়েঁছে কারিমা। শুকনা টিস্যু কোথাও জমাট হয়ে ফারাক্কার অভিনয় করছে।

যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করার পর ঠিক করলাম প্লান্জারটাই (এর একটা বাংলা প্রতিশব্দ দরকার) কাজে আসবে বেশি। কিন্তু সাধারণ প্লান্জারে (একে কাপ প্লান্জার বলে, দামও সস্তা ১ পাউন্ড মাত্র) যেটুকু বাতাসের ফাঁদ তৈরি হবে তার শক্তিতে আস্থা রাখতে পারছিলাম না। মাস্টার প্লান্জার পাওয়া যায় দেখলাম। প্লাস্টিক বা রাবারের ভাঁজের পর ভাঁজ তৈরি করে হারমোনিয়ামের কৌশলে বাতাস দেয়ার চেষ্টা। কিন্তু দাম ১০ পাউন্ড।

মাস্টার প্লান্জার: ছবির চেয়ে আরো বেশি ভাজযুক্তও পাওয়া যায় দোকানে

বন্ধুর বড় ভাইয়ের দোকান বারগেইন জোনে ফিরে এলাম। তাদের দোকানের বাইরে সারি সারি কাপ-প্লান্জার ঝুলছে। কিন্তু বড়ভাইকে সমস্যা খুলে বলাতে উনি দেখালেন পাম্পার সহ প্লান্জার। দাম চার পাউন্ড। দেখেই পছন্দ হয়ে গেল। মনে হলো, নির্মাতা বেশ মাথা খাটিয়েছে।

পাম্পারযুক্ত প্লান্জার

রাবারের গ্লাভস আর প্লান্জার নিয়ে ফেরত এলাম যুদ্ধক্ষেত্রে। রেহনুমা ততক্ষণে আশা ছেড়ে দিয়েছে। নতুন কমোডের অকস্মাত্ মৃত্যুতে নতুন ধরনের মন খারাপ হয়েছে ওর। ওকে ভরসা দিলাম। বললাম, এবার প্রাকৃতিক শক্তিকে কাজে লাগানো হবে। বাতাসকে ফাদেঁ ফেলে জলকে দেয়া হবে ধাক্কা, সেই চাপে কাগজের মন্ডের বাঁধ সুড়ুত্ করে পাইপ বেয়ে নেমে যাবে। এরপর আমাদের প্রাকৃতিক কর্মে আর কোনো বাঁধাই থাকবে না।

জায়গামত প্লান্জারের অর্ধেক বলটা বসিয়ে শুরু করলাম পাম্প। ১, ২, ৩, ৪…। নাহ কিছুই হয় না। কোনো ফাঁক দিয়ে বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে নাতো? আবার ঠিকঠাক করে শুরু করি। আরো গোটা পাচেঁক চাপ। হঠাত্ টের পেলাম কমোডের জল স্বাভাবিক সীমার নীচে নেমে গেছে। ফ্লাশ করতেই দেখি দ্রুত নেমে গেল সব, শেষ মাথায় টল টল করছে মিউনিসিপ্যালিটির পরিশুদ্ধ জল।

পারিবারিক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পর সে যে কি শান্তি! যারা ভবিষ্যতে আমাদের মত সমস্যায় পড়বেন তারাই শুধু বুঝতে পারবেন। এই পোস্টের মরতবা যে কি তা এখন যদি না বুঝে থাকেন তাহলে তখন পেশিতে পেশিতে বুঝতে পারবেন।

এতোক্ষণ যারা ধৈর্য ধরে সাথে ছিলেন তাদের অশেষ ধন্যবাদ।


মন্তব্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

যাক ব্লগের কল্যাণে অলৌকিক আগেই জেনে গেল পদ্ধতিগুলো।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এতোক্ষণ ধরে এই একটা কথা বললেন বিগ সি?

এই জিনিষের ব্যবহার আমার প্রায় রেগুলারই করা লাগে যখন ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে যাই!

আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

অনেকে নিয়মিত পরিচর্যার অঙ্গ হিসেবে এটা প্লানজিং করে থাকে মনে হয়।
কিন্তু বাচ্চা-কাচ্চা না থাকাতে আটকে যাওয়ার ঘটনা কখন্ও ঘটেনি। এমনকি বাংলাদেশেও আমি এরকম যন্ত্রণায় পড়িনি।

তোমাকে জিজ্ঞেস যে করবো, তার ইঙ্গিত তো আগে দিতে হবে নাকি। তবে রীমা নামের বনের এক মেয়েকে লন্ডনে পেয়ে তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে খবর দিলো তুমি আর বনে থাকো না।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সবজান্তা এর ছবি

কমোড পরিষ্কার করাতে (বিপ্লব)
-----------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

দিলেন তো বিপ্লব চাঙা করে।
এখন বিপ্লব রহমান আমাকে খুঁজছে।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ঝরাপাতা এর ছবি

জটিল অভিজ্ঞতা।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

শেখ জলিল এর ছবি

নিদারুণ অভিজ্ঞতা! এক দমে পড়লাম। ঝরঝরে গদ্যে বেশ কার্যকরী পোস্ট।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

আরিফ জেবতিক অফলাইন ( যাচাই করে প্রমানিত ) এর ছবি

এই রচনা হইতে নিশ্চিতভাবেই প্রবাসী ব্লগারগন উপকৃত হইবেন , কিন্তু দেশে যখন একশটাকা দিয়া এই যন্ত্রনা হইতে মুক্তির উপায় রহিয়াছে এবং লন্ডন শহরের মতো ছোটঘর একটি নহে, বরং ছোট ফ্ল্যাটেই ছোটঘর একাধিক , তাই বঙ্গীয় ব্লগারদের কোন উপকারে লাগিবে না ।

কিঞ্চিত চিন্তা করিয়া দেখিলাম যে ইহা বঙ্গবাসীদের উপকারেও লাগিতে পারে । বৈদেশে গিয়া যদি প্লামারস জাতীয় পেশাতে লাগিতে পারি , তাহলে শৈন: শৈন উন্নতি দেখা যাইতেছে ।

বিশ্লেষন নিম্নরূপ :

১. প্রতিদিন ৮ ঘন্টা কাজ ১২০ পাউন্ড হিসেবে = ৯৬০ পাউন্ড ।

২. সপ্তাহে সাতদিনই কাজ করিব , মাসে তিরিশ দিন । মোট রোজগার = ৯৬০ ইন্টু ৩০ = ২৮,৮০০ পাউন্ড ।

বছরে ৪ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা !

পাচঁ বছর বাদে দেশে ফিরিয়া ইলেকশন করিয়া মন্ত্রী হইয়া যাইব । দোয়া রাইখেন ।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এই অভিজ্ঞতা যে দেশিভাইদের যে কাজে লাগবে না, তা অবশ্য মূল পোস্টে বলেছি। সস্তাশ্রমের দেশে একটু টাকা থাকলে হাতে অনেক ময়লাই লাগে না।

প্লামার আর বিল্ডাররাই আরামে আছে। ৬ মাসের একটা কোর্স করতে হবে। তারপর পাউন্ডে পাউন্ড।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ধুসর গোধূলি (আমার মন্তব্যকোটা নাকি শেষ) এর ছবি

৫ বছরে খোদার তিরিশ দিন কামলা দিলে আর মন্ত্রী হওন লাগবো না! আমাদের দেশে কোমরব্যাঁকা মন্ত্রণালয় থাকলে অবশ্য কথা আছিলো!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

হুমম।... ঢাকায় আসলে সহব্লগারের খাতিরে ওই সব যন্ত্রপাতি নিয়ে আমার বাসাটা একটু ঘুরে যাবেন প্লিজ। এখানকার আবহাওয়াতেও মুফতে আপনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো দরকার।

সফল হলে তারপর না হয় আমাদের অফিসে। ... চোখ টিপি


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

তানভীর এর ছবি

একই অনুরোধ আটলান্টিকের এপারেও রইল চোখ টিপি

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

মজাদার পোস্ট। এবং জ্ঞানদায়ীও বটে।

হঠাত্ টের পেলাম কমোডের জল স্বাভাবিক সীমার নীচে নেমে গেছে। ফ্লাশ করতেই দেখি দ্রুত নেমে গেল সব, শেষ মাথায় টল টল করছে মিউনিসিপ্যালিটির পরিশুদ্ধ জল।

এই অংশটি পড়ে নিজের লেখা একটি ছড়া (সচলে প্রকাশিত) উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি না হাসি

কমোড থেকে জল খেয়ো না
জল ওখানে নোংরা খুব
ফ্লাশ করে নাও তারপরেতে
কমলে ফেনা দাও চুমুক।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

অছলীল।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নিঝুম এর ছবি

শোহেইল ভাইয়ের অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হলেও পোস্ট টা পড়ে মজা পেলাম।লন্ডনে একবার এ ধরনের বিপদে পড়া মানেই হাজার খানিক পাউন্ডের ধাক্কা ।আর সহযোগী ঝক্কি তো আছেই...

এই পোস্ট পড়ে ফুফাত ভাই ফুয়াদের কথাই মনে পড়ে গেলো।ঢাকায় এসে কিছুতেই সে বাথ্রুমে যায় না।কিছু খেতেও চায় না।শুধু পানি বা পানি জাতীয় খাবারের উপরই তার যত আস্থা।কেননা পানি খেলে ছোটটা পায় ,বড়টার আর চিন্তা না করলেও হয়।

তাকে জিজ্ঞেশ করতেই, মুখে বিরক্তির একটা রেশ নিয়ে উদাস হয়ে বলে,
"না ভাই।এম্নেই খাই না।বাল্লাগেনা।"
আমি বললাম , "কিল্লাইরে??খাস না কিল্লাই?"
উত্তরে ফুয়াদ যা বলল তার জন্য প্রস্তুতি ছিল না।
বিরক্ত হয়ে জবাব দেয়,
"ধুর...ইয়ানো টাট্টি গাঁছ নাই। উঁসা ঊসা এডির মইদ্দে আঁই কাম সাইত্তে হাইত্তাম ন। আরঁ টাট্টিই বালা।"

( টাট্টি গাছঃ গ্রামের বাথ্রুম এক ধরনের গাছ দিয়ে তৈরী করা হয়।যাকে টাট্টি গাছ বলে। ফলে পুরো টয়লেট টাকেই গ্রামে টাট্টি গাছ বলা হয়ে থাকে)

--------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।