রাপুখাপাং-২

সবুজ বাঘ এর ছবি
লিখেছেন সবুজ বাঘ (তারিখ: শুক্র, ০৯/০৭/২০১০ - ১:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

টেবিলের নিচে মাথা দিয়ে হাঁটু না ভেঙে উবু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটাই ছিল আমাদের চার ভাই বোনের জন্য বাবার বরাদ্দ সবচে’ ছোট শাস্তি। তৎসঙ্গে পুচ্ছে বিধ্বংসী ছড়িকাঘাত- এরচে’ ইকটু বড় ধরনের শাস্তি হিসাবেই পরিগণিত ছিল আমাদের কাছে।

তবে দু’পায়ের পেছন দিয়ে হাত গলিয়ে কান ধরে ভাইয়্যা ব্যাঙ সাজানোটা ছিল বাবার বরাদ্দ কঠিন শাস্তিগুলোর অন্যতম। কিংবা দেয়ালে দু’পা রেখে হাত দুটোকে পা বানিয়ে মাটিতে ভর দিয়ে মাথা উঁচু রাখা- যতক্ষণ না নাক বেয়ে রক্ত গড়ানোর উপক্রম হয় ঠিক ততক্ষণ।

প্রথম শাস্তিটা আমরা প্রায় হজম করে ফেলেছিলাম। বাবা একটু তফাৎ হলেই হাঁটু ভেঙে জিরিয়ে নিতাম। আরেকটু বেশি সুযোগ পেলে টেবিলের চার কোণে বন্দি চার খাটাশ নিজেদের এ হেন করুণ দশা দেখে নিজেরাই ফিক ফিকিয়ে হাসতাম আর মাথা ঢিফাঢিফি করতাম।

কিন্তু সমস্যা হতো ধলাবিলাইকে নিয়ে। আমার ইমিডিয়েট বড় বোন। বিদিশিদের মতো গায়ের রং হওয়ায় ওর পারিবারিক নাম ধলা বিলাই আর সামাজিক নাম উলা বিলাই হয়ে যায় সঙ্গত কারণেই। তো ও একবার হাসি শুরু করলে সহজে থামতে পারতো না। মুখের ব্রেক সময়ের আগেই ঢিলা হয়ে যাওয়ায়।

আর বাবাও বোধহয় এই সুযোগটারই অপেক্ষায় থাকতেন। কোত্থেকে উড়ে এসে পুচ্ছে জোরে জোরে বেত্রাঘাত করে আমাদের ‘উরে বাবারে.... উরে মারে...’ বলে কাঁদিয়ে দিতেন। যারপরনাই। তারপর কান ধরে টেবিলের নিচ থেকে মাথা বের করে হিড় হিড়িয়ে টেনে নিয়ে যেতেন উঠানে। ভাইয়্যা ব্যাঙ সাজাতে।

আমরা তখন বিস্তর মোরগফুল ফোটা ছোট্ট উঠানে খাখা রোদ্রের মধ্যে নিজ নিজ স্থানে গিয়ে ভাইয়্যা ব্যাঙ সাজতাম। এবং ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ করে গুঙাতাম। আর অপেক্ষা করতাম প্রতিবেশী দুঃসাহসী কোনো খালাম্মার আগমনের তরে। যিনি গত তরশুর তুমুল ঝগড়া ভুলে এগিয়ে আসবেন আমাদের রক্ষাকল্পে।

‘ভাইজান আফনে মানুষ না। বেলী ফুলের নগাল বাচ্চাগুইনারে মাইনষে এমনে জংলির নগাল পিটায়? এই তুমরা ছাড়ো ছাড়ো’ বলে আমাদের ছাড়িয়ে দিতেন জঘন্য টাইপের ফাটকা চেঙ্গি থেকে। কিন্তু খালাম্মা আজকে আর আসেন না। আমাদেরকে আর বাঁচান না ভাইয়্যা ব্যাঙের খোং থেকে।

সময় পেরিয়ে যায়, ঘামে জবজবিয়ে ঘামি। মনে মনে ভাবি, তরশু যদি রিপনের পেটে ঘুষিগুলো না বসাতাম, তবে এবারকার মতো হয়তো বেঁচে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারতো। রিপনের আম্মার সমূহই সম্ভাবনা ছিল আমাদেরকে বাঁচানোর। কিন্তু রিপনকে মেরেই আমরা সে সম্ভাবনাকে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছি। অবশ্য রিপনকে না মেরেও উপায় ছিল না। রিপন আমাকে ‘কিয়ারের পুলা’ বলল কেন?

আমার মা কেয়ার অফিসে চাকরি করে। কিন্তু আমার বাবা তো কেয়ার অফিস কেন, কোনো অফিসেই চাকরি করে না। সারাদিন টই টই করে ঘুরে বেড়ানো আর আমাদের পেটানো ছাড়া বাবার আর কোনো কাজই নেই। আর থাকলেই কী? আমরা কি কিয়ারের পেট থেকে বেরিয়েছি?

আমাদের মা, যিনি কেয়ারের একজন ডাকসাইটে স্বাস্থ্যকর্মী, সুপারভাইজর থেকে আগামী মাসে যার এপিও হওয়ার চান্স আছে। অথচ তার প্রাক্কালেই রিপন আমাকে কিয়ারের পুলা বলে গালি দিয়ে বসলো।

ফলে মাথাটা আপনাতেই রাগের বাগে চলে গেল। কান ফান ঝাঝা করতে লাগলো প্রচণ্ড লজ্জার গরমে। তারপরও চেষ্টা করলাম শালাকে না পেটাতে। যদিও খুব ইচ্ছা করছিল ওর থোতনাটা উড়িয়ে দেই। কিন্তু ওর থোতনায় বড় সাইজের একটা পিকওয়ালা ফোঁড়া থাকায় হাতটা ঠিকমতো উঠতে চাইলো না। যে কারণে আমিও আর জোরাজুরি করলাম না হাতটাকে একটানে পাকা ফোঁড়ার উপর হামান দিস্তার মতো চালিয়ে দিতে। বরং রাগটাকে আপনার বাগে আনতে থির থিরিয়ে কাঁপতে লাগলাম।

কিন্তু রিপন শুধু কিয়ারের পুলা বলেই ক্ষান্ত হলো না। বম বম করে মোটর সাইকেলে স্টার্ট দেওয়ার অভিনয়ও করে বসলো। এরপর আর পিকওয়ালা ফোঁড়া টোঁড়ার কথা চিন্তা করার টাইম পেলাম না। যা থাকে কপালে, আতাভুতা ঘুষি হাঁকিয়ে বসলাম। অন্ধ রাগের ঘুষি, তাই ঠিকমতো লাগলো না। নাভির ইঞ্চি পাঁচেক দূরে ফ্যাপরার উপরে স্লিপ কাটলো। কিন্তু বাঁ হাতের দ্বিতীয় ঘুষিটা রিপনের তলপেটে হান্দিয়ে যেতে কসুর করলো না।

ওয়াও ওয়াও শব্দে রিপন বার কয়েক চিল্লিয়ে উঠার চেষ্টা করলো। কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দই বেরলো না। ফ্যাপরা থেকে হাওয়া বেরিয়ে যাওয়ায়। আমিও আর শব্দ বেরনোর অপেক্ষা করলাম না। ঝেড়ে দৌড় কষিয়ে সোজা মধুপুর গড়ে।

চলব?


মন্তব্য

নিবিড় এর ছবি
দুর্দান্ত এর ছবি

ভালো লাগলো যে বাঘাদা ফিরে এসেছে।
লেখার শুরুটা ভাল লেগেছে।
শেষের দিকের দৃশ্যটা আগেও দেখেছি এমন মনে হল। ফুটবল খেলার মাঠে প্রতিপক্ষের পকেটের লেজ ওয়ালা ছুরির ভয় পেরিয়ে তার পেটে ঘুষি মারার গল্প। মনে পড়ে?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কেমুন যেন আউলামাড়া মুনে হইল?
শুরু আছে শুরু নাই
শেষ আছে শেষ নাই

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক।

সুমিমা ইয়াসমিন

রণদীপম বসু এর ছবি

হুম, চলতে পারে....

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চলুক।

আপনার লেখার এবং তদসংক্রান্ত বির্তকের উপর ভিত্তি করে আমার একটা অবজার্ভেশন আপনাকে বলব বলব করে বলা হয়ে উঠছে না। সময় করে জানাবো।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মুস্তাফিজ এর ছবি

রাপুখাপাং অর্থ কী?

...........................
Every Picture Tells a Story

খেকশিয়াল এর ছবি

রা পু খা পাং
পু রা পাং খা
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ওয়াও... জট্টিল অর্থ তো !!!

চলপো বাঘাদা... তয় একটু কম জমসে এই পার্ট...

_________________________________________

সেরিওজা

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পুরা পাংখা আবার আসছে, 'totally fan' বা 'I am totally your fan now' এই ধরণের কথামালা থেকে। রাপুখাপাং সামহোয়ারইনে প্রথমদিকের ব্লগারদের আবিষ্কৃত শব্দমালার একটা।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মুস্তাফিজ এর ছবি

আচ্ছা, বুঝলাম। ধন্যবাদ।

...........................
Every Picture Tells a Story

সুমন চৌধুরী এর ছবি

কয়েক্টা বিষয় :

১. এইখানে পাংখা শব্দের অর্থ টাল দেঁতো হাসি

২. রাপুখাপাং কথাটার প্রকৃত ব্যুৎপত্তি যেখানেই হোক, বাংলাব্লগে ইহা কয়েন করছিলাম আমি....এইটা ভুইলা যাওয়ার জন্য মুর্শেদের তিনমাসের জেল আর সাতদিনের ফাঁসি



অজ্ঞাতবাস

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দেঁতো হাসি কুতায় গেল সেই দিনগুলি। মন খারাপ

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শাফি [অতিথি] এর ছবি

আরে বাই চোলবই ত। আলবাত চোলবো।

অবশ্য আমার ক্ষেত্রে উল্টাটা। আম্মুর হাতে বহুত মাইর খাইছি.....হে...হে...পরে কাহীনি কমুনে।

শাফি।

খেকশিয়াল এর ছবি

চলুক চলুক

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

বইখাতা এর ছবি

চলুক।

দময়ন্তী এর ছবি

চলুক ......
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

রোদ রোদ লাগতেসে ...
__________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পুরা পাংখা!

চলতে থাকুক।

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক! কোথায় গেল ছেলেটা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।