বহিরঙ্গ ||| ১ |||

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/১২/২০০৯ - ৯:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভৈকম মুহম্মদ বশীর (২১জানুয়ারী ১৯০৮- ৫জুলাই ১৯৯৪)

ভৈকম মুহম্মদ বশীর কেরালার লেখক। লেখার ভাষা মলয়ালম। মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা তাঁর শ্রেষ্ঠ গল্পের অনুবাদ বইটা কিনেছিলাম বছর পাঁচেক আগে। পড়ে খুব ভালো লেগেছিল। পরের দিন আজিজে গেলাম আবার। ভৈকমের আর কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখতে। পেলাম “পাতুম্মার ছাগল” আর “নানার হাতী”। এই দুটা বড় গল্প।অথবা বলা যায় ছোট উপন্যাস।তবে শ্রেষ্ঠ গল্প বইটাই বেশি ভালো লেগেছিল।

ভৈকমের ভাষা নির্ভার। হালকা চালে লেখা। কিন্তু স্যাটেয়ারের এঙ্গেল মারাত্মক। মানবেন্দ্র কবুল করেছেন- বশীরের এতো সহজ ঢংয়ে লেখা সবকিছু কিন্তু অনুবাদ করতে গেলে মজা টের পাওয়া যায়। তবে অনুবাদকের কথা থেকে জানতে পারলাম না- বাংলা অনুবাদের উৎস কোথা থেকে - মলয়ালম না ইংরাজি ?

ভৈকম বশীরের খানিক পরিচয় দিই। ভারতের কেরালার থালায়োলাপারাম্বুতে তাঁর জন্ম ১৯০৮ সালে। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন নাই। কিশোর বয়েসে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন, জেল খাটেন। লেখালেখির ক্ষেত্রে নিজের স্বতন্ত্র একটি গদ্যভঙ্গি আবিষ্কার করেন। অপ্রাসঙ্গিক অসংলগ্ন বাৎচিতের মধ্যে মারাত্মক কিছু বলে ফেলার অভিনবত্ব – ভৈকমের লেখায় হরহামেশা দেখা মিলে। তাঁর বেশির ভাগ গল্পই নিজের আত্মকাহিনী। নোবেলজয়ী বিখ্যাত ইদিশ ছোট গল্পকার বাশেভিচ সিঙ্গারের সাথে ভৈকমের ভাবের মিল পাওয়া যায়। সিঙ্গারের ছোটগল্পগুলো ও নিজের জীবনের টুকরা টুকরা স্মৃতি। ভৈকম বিয়ের পর দুবার মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হন। মানসিক হাসপাতালে থাকার সময় লেখেন “পাতুম্মার ছাগল”।

বইয়ে আছে বশীরের একটা বড়োগল্প আর সতেরোটি ছোটগল্পের অনুবাদ। প্রথম গল্প ‘প্রেমপত্র’। কেশবন নায়ার ভালোবাসে প্রতিবেশী স্যারাম্মাকে। একখানা প্রেমপত্র লিখে প্রেমিকার উদ্দেশ্যে। স্যারাম্মা সৎমায়ের সংসারে না থাকার জন্য কেশবনের কাছে চাকুরি খোঁজে। নায়ার বেটা তাঁর হৃদয়ের মধ্যে যে চাকুরি খালি আছে তা স্যারাম্মাকে দিতে চায়। এমনকি নিজের বেতনের অর্ধেক তাকে দিয়ে দিতে রাজি হয়। স্যারাম্মা নানান মুলো ঝুলিয়ে শেষ পর্যন্ত কেশবনের কাছে ধরা দেয়। গল্পে মেল শোভিনিজমের ব্যাপারটা হাসি মশকরার মধ্যেও বেশ ভালো করে ফুটে উঠে। … মেয়েদের মাথার মধ্যে শুধু চাঁদের আলোই পোরা থাকে। … কোনো পুরুষকে ভালোবাসা ছাড়া মেয়েদের আবার কাজ কি? ভগবান তো মেয়েদের সৃষ্টিই করেছেন ভালোবাসা দেবার জন্যে- ভালোবাসা পাবার জন্যে। … স্যাটায়ার তৈরিতে ভৈকমের ভঙ্গি আনপ্যারালেল। স্যারাম্মা প্রথমে কেশবনের প্রেমপত্র পেয়ে দলামোচা করে ফেলে দেয়। পরে জানায় সেটা সে কুড়িয়ে নিয়ে দাঁতের মাজনের গুঁড়া রেখেছে। ভবিষ্যতে বিয়ের পর বাচ্চা হলে তার নাম কী হবে সেটা নিয়ে … কেশবন নায়ারের কল্পনা বল্গাহীন ছুটে বেরিয়েছে, সে একটার পর একটা নাম বলে গেছেঃ ‘ভারতবর্ষ। প্রেমপত্র। ছোটগল্প। তুফান। সাহারা। আকাশ। চন্দ্রালোক। মুক্তো। প্রতীকীবাদ। তাল। লজেনচুষ। নবনাট্য। সাগর। চিংড়িচোখো। গদ্যকবিতা। পোখরাজ। অগ্নিশিখা। অধ্যাত্মবাদ। তারা-’ … শেষে লটারি করে নাম উঠলো লজেনচুষ আকাশ।

‘নীল আলো’ গল্পটিকে ভৌতিক গল্প মনে হতে পারে। উত্তম পুরুষে লেখা গল্প। নতুন বাড়িতে ওঠার পর লোকমুখে শোনা গেল, সে বাড়িতে ভার্গবী কুট্টি নামে এক মেয়ে কুয়োতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। সেই মেয়ের ভূত ওই বাড়িতে হানা দেয় মাঝে সাঝে। কিন্তু ভাড়া দেয়া হয়ে গেছে। বললেই তো আর বাড়ি ছাড়া যায় না। উত্তম পুরুষের বয়ানে আমরা শুনতে থাকি ভার্গবীর সাথে তার সলিলাকুই। ভার্গবীর সাথে একটা সমঝোতা করে সে বসবাস করতে চায়। … অত কথা বলবার পর আমি হঠাৎ চুপ করে গেলাম। এ-সব আমি বলছি কাকে? মুখ হা-করা এক কুয়োকে, যে কিনা সবকিছু গেলার জন্যে তৈরি হয়ে আছে? কাকে বলছি? গাছপালাকে, বাড়িটাকে, ছমছমে আবহাওয়াকে, আকাশ বা মাটির পৃথিবীকে? কাকে? … যত দিন যেতে থাকে, ততো ভার্গবীকে আমি একটু একটু করে ভুলতে শুরু করলাম। মানে, আমি আর তার সাথে তত কথা বলি না। মাঝে মাঝে তার কথা আমার মনে পড়ে যায়। এইটুকুই। এই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই অগুনতি, লক্ষ-কোটি নারী-পুরুষ মারা গেছে। তারা সব ধুলোর সাথে মিশে গিয়ে এই পৃথিবীরই মাটি হয়ে উঠেছে। আমরা সবাই সে কথা জানি। ভার্গবীই যেন তাদের সবার স্মৃতি হয়ে র‌য়ে গেছে। আমার অন্তত এভাবেই তার কথা মনে পড়ে। … এভাবে চলতে থাকে। ভার্গবীর কোন দেখা মিলে না। গল্পের শেষদিকের কথা বলি। একদিন লন্ঠনের আলোতে কাজ করার সময় দেখা যায় কেরোসিন শেষ।ফলে সলতে নিভে যায়। বাইরে বেরিয়ে কেরোসিন নিয়ে আসার পর দেখা গেলো নিভে যাওয়া লন্ঠন থেকে জ্বলছে দুই ইঞ্চি নীল শিখা। ভৌতিক! ভৈকমের সাথে আমাদের বুঝে নেয়ার একটা দ্বন্দ্ব লেগে যায়। উত্তম পুরুষের জবানে ছাড়া ভার্গবীর কোন উপস্থিতি পুরো গল্পে নেই। তাহলে! মজার ব্যাপার এই গল্প নিয়ে সিনেমা হয়েছে। ভৌতিক গল্প ভেবে নিয়েই।

‘জন্মদিন’ গল্প লেখক জীবনের দৈন্যের কষ্ট নিয়ে। গল্প কিছুটা লিখে ভৈকম থার্ড ব্র্যাকেট দিয়ে নিজের কথা পেরেছেন … [আর কিছু লিখবার আগেই এ-কথাটা আমার স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল ভাবে বলে দেয়া উচিতঃ এখন মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। অনেকক্ষণ এ-শহরটায় এলোমেলো ঘুরে বেড়িয়েছি আমি; ঘর ছেড়ে আমি বেরিয়েছিলাম কাগজ-কলম হাতে নিয়ে। এমনিতে তার কোন বিশেষ কারণ ছিল না, তবে আমি দিনপঞ্জিতে একেবারে সূচনা থেকে শেষ অব্ধি সারাদিনটার কথাই লিখতে চেয়েছিলাম। এর মধ্যে নিশ্চয়ই মোটামুটি অন্যরকম কোন ছোটগল্পের খোরাক জুটে যাবে। কিন্তু আমার ঘরে লন্ঠনটায় কোন তেল নেই, অথচ অনেক কিছু লিখবার আছে। সেজন্যে আমি খাট থেকে নেমে ঝিলের ধারে বাতিটার তলায় এসে বসেছি, মনে সবকিছু টাটকা থাকতে থাকতেই লিখে ফেলতে শুরু করেছি] … উত্তম পুরুষে লেখা এই গল্পে লেখক নিজের জন্মদিনে দিনপঞ্জি লিখে লিখে কথা আগায়। সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত গল্পের সময়কাল। পুরা দিন খেতে না পেয়ে শেষমেষ চুরি করে খেয়ে উদর পূর্ণ করে সে ঘুমাতে যায়। গুডনাইট।

‘দেয়াল’। ভৈকমের সবচেয়ে বিখ্যাত গল্প। এর কাহিনী নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন আদুর গোপালকৃষ্ণণ।এই সিনেমা বেশ কিছু জাতীয় আর আন্তর্জাতিক পুরষ্কার কব্জা করে। গল্প হাজতবাস নিয়ে। এখানেও উত্তম পুরুষের বয়ান। জেলের ভেতর হাঁটতে হঠাৎ তার নাকে এসে লাগে দুনিয়ার সবচেয়ে নেশা ধরানো গন্ধ। মেয়েমানুষের গন্ধ। পরে জানা যায় দেয়ালের ওপাড়ে জেনানা ফটক।এভাবে দিন যায়। কেমনে কেমনে জানি নারায়নী নামের এক মহিলা কয়েদীর সাথে প্রেম হয়। মাঝে সেই দেয়াল যথাস্থানে রেখেই। ডেটিংয়ের বন্দোবস্ত পর্যন্ত ঠিক হয়ে যায়। বিষ্যুৎবার। বেলা এগারোটায়। হাসপাতালে। চিনবা ক্যামনে? ডান গালে কালো তিল। মাগার বিষ্যুৎবার সকাল সকাল বয়ানকারীর হাজতবাসের ইতি ঘটে। আবে, স্বাধীনতা চায় কোন হালায়?

‘আশ্চর্য বিড়াল’। বইয়ের একমাত্র বড়গল্প। শুরুটাই অসাধারণ। ভৈকমীয় শুরুয়াত ... এখানে যে কাহিনীটি বর্ণনা করা হচ্ছে সে আসলে এক চমৎকার মার্জারজাতকের কাহিনী। স্মরণাতীত কাল থেকেই জগতে কত কী আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। এটাকে অবশ্য এমনতরো কোন গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বলা যাবে না। কারণ আশ্চর্য বিড়াল জন্মেছিলো অতিসাধারণ এক বেড়াল হিসেবেই। তাহলে কেমন করে সে আশ্চর্য বিড়াল হয়ে উঠলো? … আবারো ভৈকমিক উত্তম পুরুষ। বক্তা একজন লেখক। গল্পের পাত্র-পাত্রী? লেখক। বউ। তাঁদের পাঁচ বছর বয়েসের মেয়ে।সাদা ধবধবে লেগহর্ন ম্যাচোম্যান মোরগ আকা রাতাকুরা। তার সতেরজন পরমাসুন্দরী বিবি। মেয়ের একাকীত্ব কাটানোর জন্য বাসায় আসে মার্জার শাবক।… এইভাবে অবশেষে আমার মেয়ের একজন খেলার সাথী জুটলো। খাশা আছে সব। এখন আমি মহৎ রচনার কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারি। … পাড়ার মহিলারা একসাথে বসে বেড়াল ছানার মুসলমানি নাম রাখে। কাইসু কাইসুম্মা কাইসুমোল। বেড়াল ছানাটা মেনি- এ খবর শোনার পর লেখকের আঁতে ঘা লাগে। … এ বাড়িতে মেয়েদের সংখ্যা বড্ড বেশী। সতেরোটা মুরগী, চারটা গাইগরু, একটা কুক্কুরী, মেয়ে, মেয়ের মা। এখন আবার একটি মেনি বিড়াল। … গল্পে সমান্তরাল ভাবে দেখানো হয় লেখকের সাথে এক সন্ন্যাসীর আড্ডা। তাঁদের মধ্যে নানা ধরণের কথাবার্তা চলে। … ‘মানুষ হচ্ছে মলমূত্রের এক চলন্ত কারখানা,’ সন্ন্যাসী আরো বলেন, ‘ মানুষের মধ্যে আছে জীবাণু আর কৃমিকীট, তার মাথাটা উকুনে গিসগিস করছে। তার মুখে দুর্গন্ধ,তার শরীরে বদবু। মানুষের মতো নোংরা প্রাণী আর নেই। আপনি এ সম্বন্ধে কি বলেন,স্বামীজি?’ ইনি যে আমায় ‘স্বামীজি’ বলে সম্বোধন করলেন, এর কোনোই মানে নেই। মানুষ এর আগে আমাকে কতো নামেই তো ডেকেছেঃ কুত্তা, শুয়োর, গাধা, বাঁদর, মোষ। এদের প্রত্যেকেরই আত্মা আছে। মানুষেরও আত্মা আছে একটা।… স্লাইস অভ লাইভ কেমন করে লিখতে হয় ভৈকমের স্বাভাবিক বর্ণন ভঙ্গিমায় সেটা পুরা পরিষ্কার হয়… আমার মেয়েটা ঘেমে-নেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে, মশারিটা একটু তুলে পাখাটা তার দিকে চালিয়ে দিই। বেড়ালছানাটা তার পাশে রেশমের বলের মতো গুটি পাকিয়ে শুয়েছিলো , সে এবার তার চোখ খোলে। মাঝরাত্তিরে আমার একটু খিদে পায়। একটা বিস্কুটের প্যাকেট খুলে আমি খেতে থাকি। বেড়ালছানাটা উঠে পড়ে আমার কাছে ঘনিয়ে এসে মিউ মিউ করে ডাকে। সেটা মেয়েকে জাগিয়ে দেয়। -‘তুমি কি খাচ্ছো,তাত্তো?’ সে শুধায়। আমি বেড়ালছানা ও মেয়ের সাথে বিস্কুটগুলো ভাগাভাগি করে নেই। তখন আমার স্ত্রী উঠে পড়ে চিল্লাচিল্লি লাগিয়ে দেন। ‘একে পাখাটার গর্জন, তায় মাঝরাতে খাওয়ার পালা। আমাকে শান্তিতে এক ফোঁটাও ঘুমুতে দেবে না দেখছি।’ তাঁকে শান্ত করার জন্য তাঁকেও আমি কয়েকটা বিস্কুট দিই। বিস্কুটগুলো সাবাড় করে ঢকঢক করে এক গেলাস জল খেয়ে নিয়ে অবশেষে তিনি মুরগিদের সম্বন্ধে তাঁর উৎকন্ঠা প্রকাশ করেনঃ ‘কোনো শেয়ালের ডাক শুনেছো নাকি?’ … এরপর বেড়ালের কান ফুটো করতে গিয়ে আবিষ্কার হয় মেনি হুলো হয়ে গেছে। পাড়ার মহিলারা বলেন লেখক কোন ভোজবাজি করে এর লিঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলেছেন। বাড়িতে পুরুষের সংখ্যা বাড়াতে। লেখক যতোই বলেন- লোকে সদলবলে গণবিভ্রম করে। মহিলারা গা করেন না। আদরের কাইসুর নাম পাল্টে রাখা হয় নীলন্দন। নিজের মেয়ে পর্যন্ত বলে উঠে- ‘ আমি কোনো হুলো বেড়াল চাইনে,তাত্তো।’ কাইসুর প্রতি সবার দরদের ভাটা পড়ে যায়। অতিসাধারণ এক বেড়াল হয়ে উঠে আশ্চর্য বিড়াল ।এদিকে সন্ন্যাসীর সাথে উত্তম পুরুষের আলোচনা জমে উঠে। আরো তুমুলভাবে। বিষয়ের কোন শেষ নেই। ধর্ম। খাদ্যাভ্যাস। নবীগিরি। কেশভিত্তিক-ধর্ম।মহাজাগতিক তকমা। সহিজঙ্গনামা। … ‘অলৌকিক বা ভোজবাজি বা ভেলকি ছাড়া কোনো ধর্মই টিকে থাকতে পারে না।’ ‘এমন কোন ধর্ম কি আছে যার চুল দাড়ি রাখার নিজস্ব কোন রীতি নেই?’ ‘না। সেজন্য আমি এগুলোকে কেশভিত্তিক ধর্ম বলি।’ … ‘তাহলে এই শত্রুতা কেন? লোকে সব ভাই-ভাই, আর ভগবান ভগবানই, যে নামেই তাঁকে ডাকা যাক না কেন ভগবানই সমস্ত সৃষ্টির শাশ্বত রক্ষক। তিনি তো আর বিশেষ কোন ধর্মের একচেটিয়া সম্পত্তি নন।’ … ‘স্মরণাতীত কাল থেকেই কতই তো প্রবক্তা পেয়েছি আমরা। মোজেস, ডেভিড, জিসাস ক্রাইস্ট, মুহম্মদ নবী- তাঁদের বেলায়ই বা কী? কাকে অনুসরণ করবে মানুষ? তাঁদের মধ্যে কে ছিলেন সত্যিকার ভগবানের দূত, সত্যিকার প্রবক্তা?’ … ‘আরেকটা সমাধান আছে। জনসংখ্যার সাথে সাথে পৃথিবীর সীমাও বাড়িয়ে দিন।’ … ‘ঈশ্বর যাতে পৃথিবীর আয়তন বাড়িয়ে দেন, এ জন্যে তাঁর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে পৃথিবীর সব ধর্মের লোকদের বলে দিন।’ … ‘মানুষ যখন এত কিছু খেয়েই বেঁচে থাকতে পারে, গম বা চাল, বেড়াল বা কুমির, তখন তার সত্যিকার আহার কাকে বলবো?’ ‘মানুষ এককালে মানুষও খেতো। সে ছিল নরখাদক। এখনো কেউ কেউ হয়তো মানুষের মাংস খায়।’ … ‘মানুষ সম্বন্ধে আপনার কি ধারণা?’ ‘মানুষ হলো এমন এক আমিষখোর প্রাণী যে মাংসের লোভে এবং খেলাচ্ছলে অন্য প্রাণীদের বধ করে থাকে।’ … এলিয়টের বিখ্যাত কবিতা ‘দা ওয়েস্ট ল্যান্ড’ য়ের মতো ভৈকম ও এই গল্প শেষ করেন ‘ওঁম। শান্তি।শান্তি।শান্তি।’ বলার মাধ্যমে।

উত্তম পুরুষের জবানে বলা বশীরের পরের গল্পগুলো হলো ‘সোনার আংটি’, ‘একটি ক্ষুদ্র পুরাতন প্রণয়কথা’, ‘নিঃসঙ্গতার মহাতীর’, ‘আম্মা’ এবং ‘গজকেশর’। ‘সোনার আংটি’ এক সন্তানের জন্ম হওয়া নিয়ে কাহিনী এগিয়েছে। হালকা চালে লেখা। কাহিনী নানান অপ্রাসঙ্গিক দিকে এগিয়ে গেছে। লাগামছাড়া ভাবে। ভৈকম এক কারণেই ভৈকম। গল্পহীন গল্পের এক আলাদা জগৎ তৈরি করে ফেলেন তিনি অনায়াসে। খুব ভালো করে পড়লে বোঝা যায়- মূল প্রসঙ্গ থেকে গল্প এক চুল সরে নি। কিন্তু সারা গল্পে তিনি আমাদের জ্বালিয়ে মেরেছেন। এভাবেই লেখক তার পাঠকের মাথার মধ্যে ভাবাগোনার জগৎ খুলে দেন।

‘একটি ক্ষুদ্র পুরাতন প্রণয়কথা’ তে এক বিপ্লবীর কথা পাড়া হয়েছে। সাথে প্রেম। আর স্যাটায়ার। ‘নিঃসঙ্গতার মহাতীর’ বেশ কাব্যিক গদ্যে লেখা গল্প। ‘আম্মা’ গল্পে পুরা ভৈকম জবানী। স্কুল ছেড়ে দিয়ে কিভাবে বিপ্লবে জড়ালেন, জেলে গেলেন আর পরে ছাড়া পেয়ে মায়ের কাছে ফিরলেন তার নির্মেদ বর্ণনা। … আমি কিছু বললাম না। ভীষণ একটা নাড়া খেয়েছি আমি তখন, দম বন্ধ হয়ে যেতে চাচ্ছে। সারা জগৎ ঘুমিয়ে আছে! শুধু আমার মা, আমার আম্মু, একা একা জেগে আছেন। আম্মা এক বালতি জল নিয়ে এসে আমায় হাত-মুখ ধুয়ে নিতে বললেন। তারপর আমার দিকে বেড়ে দিলেন ভাতের থালা। আমাকে একটা প্রশ্ন ও করলেন না। আমি স্তম্ভিত। ‘আম্মু, তুমি জানলে কি করে যে আজ আমি আসবো?’ আম্মা বললেন, ‘ ওহ,..আমি তো ভাত রেঁধে রোজ রাতে তোর অপেক্ষা করে থাকি।’ … বইয়ের শেষ গল্প ‘গজকেশর’। গল্পটি পড়তে আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি। শেষ করতে পারি নি। এর মূলে আমার আলস্য। দেখি আজকে পড়বো। পুরাটা।

‘পুবন পঝম’ বা ‘পুবন কলা’ অসাধারণ একটি গল্প। স্কুল ফাইনাল অব্দি পড়া আবদুল কাদের বড়লোকের গ্র্যাজুয়েট মেয়ে জামিলা বিবিকে বিয়ে করে ফেলে। মেল শোভিনিজম কি বস্তু এতো সংক্ষেপে আর কারো লেখায় পড়েছি বলে মনে পড়ে না। আর আমাদের মেয়েরা সেটা কিভাবে মেনে নেয় তার নির্ভার নিকুচি সারা হয়েছে গল্পে। … আবদুল কাদের সাহেব আর জামিলা বিবি থুরথুরে বুড়ো হয়ে পড়লেন। দাঁত পড়ে গেলো তাঁদের, চুল সাদা হয়ে গেলো, মেরুদণ্ড বেঁকে নুয়ে গেলো তাঁদের। বুড়োতে বুড়োতে নানা নানী হয়ে গেছেন। কিন্তু এখনো পুরোনো দিনের অনেক কথাই মনে পড়ে যায় তাঁদের। আবদুল কাদের সাহেব মুচকি হেসে জামিলা বিবিকে সুধোনঃ ‘ বেগমসাহেবা, মনে পড়ে সেই যে একবার তুমি পুবন পঝম চেয়েছিলে, সে রাতে আমি তোমার জন্য সাঁতরে নদী পেরিয়ে কি নিয়ে এসেছিলাম?’ জামিলা বিবি ও মৃদু হেসে বলেন, ‘পুবন পঝম’। আবদুল কাদের মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করেন, ‘কেমন দেখতে ছিল সেগুলো?’ ‘গোল, কমলার মতো’ জামিলা বিবি বলেন। … কমলাকে কেমনে কলা ঠাউরাতে হয়, বুঝে নেন।(জামিলা নাম নেয়ায় মনে পড়লো, কিরগিস্তানের লেখক চেঙ্গিস আইমাতভের জামিলা পড়তে পারেন। ব্যাপক ভালো গল্প। )

শুকনা দাদওয়ালা বিখ্যাত সাহিত্যিক মহোদয়কে নিয়ে প্রায় অণুগল্প ‘যুদ্ধ যদি থামাতে হয়’। বার বার তাঁকে ত্যক্ত করা হয় এক প্রশ্ন দিয়ে, যুদ্ধ থামবো ক্যামনে? শেষমেষ তার মুখ থেকে উত্তর আসে … ‘যুদ্ধ যদি থামাতে হয়।’ বিখ্যাত সাহিত্যিক খস খস করে শুধু চুলকেই চললেন, তাঁর মুখটা আরামে আর তৃপ্তিতে কি রকম জ্বলজ্বল করছে। তিনি ঘোষণা করলেনঃ ‘আজকের পৃথিবীর যত রাজনৈতিক নেতা আছে, ধর্মগুরু আছে, যত চিন্তাবিদ আছে, সেনাবাহিনীর যত লোক আছে- এক কথায় পৃথিবীর যত নরনারী আছে- সকলকেই শরীরে আমার মতো শুকনো বিদ্‌ঘুটে দশাশই একখানা দাদ বসিয়ে রাখতে হবে। এমন একখানা দাদ যেটা দিনরাত্তির সবাইকে যেন জ্বালায়, সারাক্ষণ যেন চুলকোয়।’

‘আয়না ও সাপ’। গা বেয়ে সাপ উঠার গল্প। এক হোমিওপ্যাথির ডাক্তারের মুখে কাহিনী বসিয়েছেন বশীর সাহেব। … ‘ আমি লাফিয়ে উঠিনি। থরথর করে কাঁপিনি। ভয়ে চেঁচিয়েও উঠিনি। এতসব করার কোন অবসরই ছিল না। সাপটা কাঁধ থেকে গা বেয়ে আমার বাঁ হাতে এসে কনুইয়ের ওপরটায় পেঁচিয়ে ধরলো। ফণা তোলা, মাথাটা আমার মুখ থেকে তিন-চার ইঞ্চিও দূরে হবে কিনা সন্দেহ।’ … ‘ সাপটা তার মুখ ঘোরালো। আয়নার দিকে তাকালো সে। নিজের প্রতিবিম্বটা সে দেখতে পেল।এটা আমি দাবি করতে চাই না যে পৃথিবীতে এটাই প্রথম সাপ যে আয়নার দিকে তাকিয়েছে। তবে এ সাপটি যে আয়নায় নিজেকে দেখছে তাতে কোন সন্দেহ ছিল না। সে কি নিজের রূপ দেখে মোহিত হয়ে গেছে?’ … ‘নিশ্চিতভাবে কিছুই আমার জানা নেই। পুং না স্ত্রী- এই সাপটা কী। আমি কোনদিনই জানতে পাবো না। সাপটা আমার বাহুর বাঁধন আস্তে আস্তে খুলে আমার কোলে নেমে এলো, তারপর সেখান থেকে বেয়ে উঠলো টেবিল, আর আয়নার দিকে এগিয়ে গেলো। হয়তো আরো কাছে থেকে সে নিজেকে বাহবা দিতে যাচ্ছে রূপের।’ … ‘সৌন্দর্যের বোধ আছে এমন একটা সাপ ছিলো ও।’ … নিতান্তই গাঁজাখুরি গল্প। কিন্তু ক্ল্যাসিক।(স্নেক আই ভিশন নামে একটা নরমোয়্যার পাওয়া যায়। ফ্রি। লোড করলে দেখতে পাবেন সাপ আপনাকে কিংবা নিজেকে কি চোখে দেখে। ওয়েবক্যাম থাকলে আর কী।)

‘ভুবনবিখ্যাত নাসিকা’ পড়ে পিনোকিওয়ের কথা মনে হয়। ‘লোকটা’ আর ‘ঠ্যাঙাড়ে পানিক্কর’ অণুগল্প।‘হাত ফেরতা’ এক নারীর গল্প। আবারো সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মুখোশে টান।কোন এক জেলহাজতের এক পয়মন্ত কুকুর টাইগারকে নিয়ে গল্প ‘টাইগার’।

ভৈকমের গল্প পরপর পড়া যায় না। একটা গল্প পড়া শেষে পাঠক কিছুটা ভাবিত হন কী পড়লেন এটা ভাবার জন্য। তিনি আমাদের গল্প শোনান নিচুতলার মানুষজনের। আপাতভাবে অনেক অপ্রাসঙ্গিক জিনিসের কথা লেখায় এনে আমাদেরকে পীড়া দেন। খোঁচান। ঠাট্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর বলার ভঙ্গি অন্তরঙ্গ। মায়া-মমতা সমাজ থেকে যে একবারে উবে যায় নি সেটার পরিচয় ও তাঁর লেখায় পাওয়া যায়। ছোটগল্পের স্বাভাবিক পেরিফেরিকে বিভিন্ন দিকে ভেঙ্গে তিনি একটা স্বতন্ত্র গোত্র তৈরি করেছেন।

বইয়ের শুরুতে অনুবাদকের কথার পর ভৈকম বশীরের লেখালেখির ধরণ নিয়ে একটা ক্রিটিক্যাল ব্যাখ্যা দিয়েছেন জনৈক সমালোচক ( মানবেন্দ্র সাহেব উনার নাম উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন )। ভালো এনালাইসিস। তবে একটু জটিল। সহজ কথা যায় না বলা সহজে।

বহি
১। ভৈকম মুহম্মদ বশীরের শ্রেষ্ঠ গল্প, অনুবাদ মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় , প্যাপিরাস, ২০০২, কলকাতা।
২। Voikom Muhammad Basheer, Poovan Banana and Other Stories, Orient Longman, 1994, India.


মন্তব্য

সুদীপ্ত [অতিথি] এর ছবি

পুরা কাকতালীয় ঘটনা ঘটল। দিন পাঁচেক আগে আমি এই বইটা পেলাম আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে। Arizona য় গেছিলাম এক বন্ধুর বাসায়, সেখান থেকে নিয়ে এলাম। আজ মাত্রর পড়া শেষ করলাম। অসাধারণ সব গল্প রে ভাই। তারপর বাংলায় ভৈকম বশীর দিয়ে সার্চ দিয়ে আপনার লেখা পেলাম। পড়ে এতো ভালো লাগলো। আমার অনেক ভালো লাগার জায়গাগুলোয় আপনার লেখায় সাবলীলভাবে এসে গেছে। আমি খুবই অবাক। আর লেখাটা ছাপানো ও হয়েছে বেশী আগে না। আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ভয়ানক কাকতালীয়!!!! মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ফরিদুর এর ছবি

আপনার ছফাগিরির আমি একজন মুগ্ধ পাঠক। এবার বহিরঙ্গ দিয়ে আবার আমাকে ধরাশায়ী করলেন। এমন রিভিউ লিখলেন ব্রাদার, বইটা হাতে না পেলে শান্তি পাচ্ছি না। আর গুগুলে ইংরেজীটাতে সব পাতা পাওয়া যায় না।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

গুগলে পুরা পাবেন না। আর মন্তব্যের জন্য থ্যাংকস।

হিমু এর ছবি
শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

আলতাফ হোসেন এর ছবি

ভৈকম বশীর-এর গল্প নিয়ে এই আলোচনা দারুণভাবে উপভোগ করেছি। নাম জানা ছিল, আর তাঁর গল্প সম্পর্কে ছিল সামান্য ধারণা। বোঝা গেল, সত্যিই অসাধারণ ভৈকম-এর গল্প। খুঁজব পড়ার জন্য, কারণ বই আছে লাখে লাখে, পড়ার মতো নেই বেশি। পৃথিবীর সমস্যা ভেবে কুল পাই না প্রায়শই, কিন্তু সমাধানের এমন সব উপায় এ বইতে আছে যা ভাববার মতো। একটা তো চুলকানি। সব মানুষের মধ্যে দাদকে কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় । মজার মজার। "আজকের পৃথিবীর যত রাজনৈতিক নেতা আছে, ধর্মগুরু আছে, যত চিন্তাবিদ আছে, সেনাবাহিনীর যত লোক আছে- এক কথায় পৃথিবীর যত নরনারী আছে- সকলকেই শরীরে আমার মতো শুকনো বিদ্‌ঘুটে দশাসই একখানা দাদ বসিয়ে রাখতে হবে। এমন একখানা দাদ যেটা দিনরাত্তির সবাইকে যেন জ্বালায়, সারাক্ষণ যেন চুলকোয়।’ … "
অন্যটি, "ঈশ্বর যাতে পৃথিবীর আয়তন বাড়িয়ে দেন, এ জন্যে তাঁর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে পৃথিবীর সব ধর্মের লোকদের বলে দিন।" ঈশ্বর প্রসঙ্গও কৌতূহলোদ্দীপক : ‘অলৌকিক বা ভোজবাজি বা ভেলকি ছাড়া কোনো ধর্মই টিকে থাকতে পারে না।’ ‘এমন কোন ধর্ম কি আছে যার চুল দাড়ি রাখার নিজস্ব কোন রীতি নেই?’ ‘না। সেজন্য আমি এগুলোকে কেশভিত্তিক ধর্ম বলি।’ … ‘তাহলে এই শত্রুতা কেন? লোকে সব ভাই-ভাই, আর ভগবান ভগবানই, যে নামেই তাঁকে ডাকা যাক না কেন ভগবানই সমস্ত সৃষ্টির শাশ্বত রক্ষক। তিনি তো আর বিশেষ কোন ধর্মের একচেটিয়া সম্পত্তি নন।’ … ‘স্মরণাতীত কাল থেকেই কতই তো প্রবক্তা পেয়েছি আমরা। মোজেস, ডেভিড, জিসাস ক্রাইস্ট, মুহম্মদ নবী- তাঁদের বেলায়ই বা কী? কাকে অনুসরণ করবে মানুষ? তাঁদের মধ্যে কে ছিলেন সত্যিকার ভগবানের দূত, সত্যিকার প্রবক্তা?’

আর মানুষের যে এত বড়াই, সেরা নাকি জীব, বশীরের লেখায় দেখুন : "মানুষ যখন এত কিছু খেয়েই বেঁচে থাকতে পারে, গম বা চাল, বেড়াল বা কুমির, তখন তার সত্যিকার আহার কাকে বলবো?’ ‘মানুষ এককালে মানুষও খেতো। সে ছিল নরখাদক। এখনো কেউ কেউ হয়তো মানুষের মাংস খায়।’ …মানুষ যখন এত কিছু খেয়েই বেঁচে থাকতে পারে, গম বা চাল, বেড়াল বা কুমির, তখন তার সত্যিকার আহার কাকে বলবো?’ ‘মানুষ এককালে মানুষও খেতো। সে ছিল নরখাদক। এখনো কেউ কেউ হয়তো মানুষের মাংস খায়।’ …"
খাওয়া প্রসঙ্গে কাফকা-র 'দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট' গল্পটির কথা মনে পড়বেই : বুভুক্ষাশিল্পী বলছে, দ্যাখো, খেতে তো আমি খুবই চাই, কিন্তু কী জানো, পৃথিবীতে এমন কোনো খাবার নেই যা আমি ভালোবাসি। দেয়ার ইজ নো ফুড দ্যাট আই এভার লাইকড্‌।

ভাবনা-জাগানো চমৎকার একটি আলোচনার জন্য শুভাশীষকে অভিনন্দন।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আবেদ এর ছবি

আপনার লেখালিখি এই ব্লগে চল্লিশ দিনের মতো। এর মধ্যেই আপনি বারোজগিরি, ছফাগিরি, ভৈকমগিরির মতো খুবই জটিল কিছু বিষয় নিয়ে লেখা শুরু করে দিয়েছেন। আপনার প্রতিটা লেখায় তথ্যের সহজাত প্রাচুর্য আর সাথে সাথে রয়েছে আপনার নিজস্ব ঘরানায় তার বিন্যাস। আপনার লেখায় পড়ার সাথে সাথে কমেন্ট করা প্রায় অসাধ্য। পরপর আপনার কয়েকটা লেখাও পড়া যায় না। একটা লেখা অনেকদিন ভাবায়। নিয়মিত একের পর এক এতো ভারী পোস্ট দেয়া রীতিমতো ঈর্ষনীয়। আপনি সত্যি মহা কামেল একজন লোক।

গুরু গুরু(গুরু)

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বেশি বেশি লেখা দিচ্ছি। এটা খুব খারাপ হচ্ছে। লেখা কমাতে হবে।

মন্তব্য করার জন্য থ্যাংকস।

আবেদ এর ছবি

আপনি প্রলিফিক কিন্তু আপনার লেখা তো অনেক ভালো আর শ্রমসাধ্য লেখা। মনে যা চায় তা লিখে লিখে ছেপে তো আর দিচ্ছেন না। এক একটা বিষয় নিয়ে তার ভেতরের জিনিস বুঝে আমাদের সাথে শেয়ার করছেন। জোর করে লেখা কমায়েন না, খবরদার। এখন হয়তো আপনার হাতে কিছু অবসর আছে, তাই টানা লিখে যেতে পারছেন। পরে দেখবেন সময় কুলিয়ে উঠতে আপনার কষ্ট হয়ে যাবে , আর তখন লেখা এমনিতেই কমে যাবে।

ছফাগিরির পরের কিস্তি কবে নাগাদ পাবো? এবং বহিরঙ্গ দুই ?

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ছফাগিরি কিস্তি চার লিখবো। এটা নিয়ে পড়াশুনা করছি।

বাশেভিচ সিঙ্গারের একটা বই নিয়ে আসলাম লাইব্রেরি থেকে। 'আ ফ্রেণ্ড অভ কাফকা এণ্ড আদার স্টোরিজ।' বইটার কিছু গল্প আগে পড়া ছিল। পুরাটা পড়বো। এই বই নিয়ে বহিরঙ্গ।।।২।।। লিখবো ভাবছি। এই বইয়ের একটা গল্পের অনুবাদ একটা লিটল ম্যাগাজিনে পড়েছিলাম অনেক বছর আগে। 'পায়রা'। আমার এ পর্যন্ত পড়া সবচে সেরা ছোটগল্প।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধূরো যা, এখন তো পায়রা পড়ার জন্যও হাপিত্যিশ শুরু হয়ে গেলো, কই পাবো বলেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

'পায়রা' গল্পের অনুবাদ পেয়েছিলাম যে লিটল ম্যাগাজিনে তার নাম ভুলে গেছি। ইংরাজি নেটে পেলাম না। বাসেভিস সিঙ্গারের কিছু গল্পের অনুবাদ করে একটা বই বের করেছেন দিলওয়ার। যতোদূর সম্ভব সেখানে 'পায়রা'র অনুবাদ নেই। দিলওয়ারের বইটা এখন আমার কাছে নেই। বইটাতে কি কি গল্পের অনুবাদ হয়েছে জানলে ভালো হতো। তাহলে বাকি যে কয়টা অনুবাদ হয় নাই, সেগুলো থেকে বেছে বেছে কিছু গল্প অনুবাদ করার একটা চিন্তা ভাবনা করতাম।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বইটাতে কি কি গল্পের অনুবাদ হয়েছে জানলে ভালো হতো। তাহলে বাকি যে কয়টা অনুবাদ হয় নাই, সেগুলো থেকে বেছে বেছে কিছু গল্প অনুবাদ করার একটা চিন্তা ভাবনা করতাম।

1.ক্যাফেটেরিয়া
২। একাকী
৩, চাবি
৪। রক্ত
৫। যুবতী ইয়েন্টেলের স্ত্রী ও প্রেম বিষয়ক জটিলতা
৬। স্পিনোজার ভাবশিষ্য
৭। বুদ্ধিজীবির পদস্খলন
৮। দুর্ভাগ্যবতী
৯। ভালোবাসার প্রাণী
১০। তাইবিলি ও তার দৈত্য-প্রেমিক

_________________________________________

সেরিওজা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সুহান,

অনেক অনেক ধন্যবাদ। সিঙ্গারের এক দুটা গল্পের অনুবাদ কিছুদূর কিছুদূর করে শেষ পর্যন্ত করা হয়ে উঠে নি। ভাবছিলাম অনুবাদ করবো পরে দেখা যাবে সেটা দিলওয়ার সাহেবের বইয়ে অনুবাদ করে দেয়া আছে। উনি কোনটা কোনটা করেছেন এটা জেনে খুব ভালো হলো।

ফরিদুর এর ছবি

সেই লিটল ম্যাগাজিন কই পাবো? আপনার কাছে সেই গল্পের ইংরাজিটা আছে। অনুবাদ করে নামিয়ে দিন না যাতে আমরা সবাই পড়তে পারি। অনেক আগ্রহ নিয়ে কিন্তু বসে আছি।

আর লেখা বরাবরের মতোই ঝাকাস।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দেখি, করবো নে। ভালো থাকেন।

তমিজ উদদীন লোদী এর ছবি

বেশ কয়েক বছর আগে ভৈকমের গল্পগুলি গোগ্রাসে গিলেছিলাম।অসাধারণ সব গল্প।ভৈকম-কে নিয়ে লেখাটি আবারো মনে করিয়ে দিল গল্পগলোর কথা।

লেখাটির জন্য অজস্র ধন্যবাদ!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বইটা পড়া হয় নাই, পড়ে ফেলতে হবে খুব শিগ্গির... ধন্যবাদ...

বহিরঙ্গ সিরিজটা শততম পর্বে যাক নিদেনপক্ষে, তার জন্য আব্দার আর আগাম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখলাম...

আমি মনে হয় দিন দিন আপনার ব্লগের ফ্যান হয়ে যাচ্ছি...

আর কাকতালীয়, আমিও কদিন ধরে ভাবছি বই নিয়ে একটা সিরিজ করবো। যদিও হয়তো আপনার মতো এতো পড়া হয়নি আমার, তবু সামান্য কিছু সম্বল করেই নামার ইচ্ছে ছিলো। তারচে থাক, আপনারই পাঠক থাকি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বিশাল ভালো কমেন্ট। কি বলবো ভাবছি। চিন্তিত

আর আপনি লিখে নামান। আমার লেখা বহিরঙ্গ থাকুক, আপনার কোন বইয়ের অন্তরঙ্গ চলুক।

সোহিনী এর ছবি

আমিও নজরুল ভাইয়ের সাথে একমত। এর মধ্যেই উনার লেখার পাংখা হয়ে গেছি। এতো তাড়াতাড়ি এতো ভারী জিনিস লিখেন কেমনে?

দময়ন্তী এর ছবি

ভৈকম মুহম্মদ বশীরকে বর্তমান মালয়ালম সাহিত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী লেখক বলে অনেকে মনে করেন৷
মানবেন্দ্রবাবুর অনুবাদ যতদুর জানি মূলত: ইংরাজী ও কিছু বাংলা থেকে৷
'নানার হাতি' মুল মালয়লম থেকে নিলীনা আব্রাহামের বাংলা অনুবাদে সাহিত্য আকাদেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল৷ শুনেছি সব কপি ৩-৪ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে৷ নিলীনা আরও কিছু মালয়ালম বই বাংলায় অনুবাদ করেছেন৷ ২০১০ এর বইমেলায় এঁর আরও কিছু বই পাওয়া যাবে বলে শুনেছি৷

আপনার লেখাটা সম্পর্কে আমার একটা কচিমত আপত্তি আছে৷ আপনি অনেকক্ষেত্রেই গল্পটা পুরো বলে দিয়েছেন৷ কোন লেখককে পরিচয় করাতে গেলে আমার মতে গল্প পুরো না বলাটাই বাঞ্ছনীয়৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনার কচিমত আপত্তি যথার্থ। কিন্তু এভাবে না লিখে আমার উপায় ছিল না। আর আমার কিছু বাতিক আছে। সিনেমা দেখার আগে এদিক ওদিক ঘেঁটে জেনে নিই-কাহিনী কী। বই পড়ার আগে বিষয়বস্তুর সামারি জেনে নিই। মূলটা পড়তে আমার তখন আরো ভালো লাগে।

ভৈকমিক আমেজ পাওয়া যাবে তাঁর লেখা পড়লে। অনুবাদে পুরোটা পাওয়া যায় না জানি। কিন্তু উপায় কী। মলয়ালম তো আর জানি না।

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

মানবেন্দ্রবাবুর অনুবাদ যতদুর জানি মূলত: ইংরাজী ও কিছু বাংলা থেকে৷

পুঁচকে বয়েসে আমিও কিছু অনুবাদ করিচিলাম বাংলা থেকে, মনে পড়ালেন সেসব স্মৃতি। মানবেন্দ্র তা'লে এখনও তাই চালাচ্ছেন? আহহারে, লুকটারে বঢ় ভালু পাইতাম!!!
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বুঝতে পারছি, সচলে ঈর্ষা করার মতো আরেকজন লেখক এসেছেন- শুভদা তো ফাটিয়ে দিচ্ছেন...

প্যাপিরাসে খোঁজ নিতে হবে অচিরেই। ... রিভিউ বেশ পছন্দ হৈসে।

_________________________________________

সেরিওজা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

একটু বেশি কওয়া হইয়া গ্যাছে। চোখ টিপি

ঐশী এর ছবি

স্পে ল বা উ ন্ড

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার লেখা পড়ি সবগুলো, যদিও দেরি হয় পড়তে। ভালো লাগে, বলাই বাহুল্য। আজ বহিরঙ্গগুলো শেষ করলাম। চমৎকার হচ্ছে ব্রাদার, চালিয়ে যান। অল্প সমালোচনা ছিলো, সমর সেনেরটায় যেমন, এতো ঊদ্ধৃতি কণ্টকিত না হলে বোধ'য় ভালো হতো, কিন্তু সে তেমন কিছু একটা বড়ো ব্যাপার না।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আমি একটু বেশি কোট করি যাতে লোকে বইয়ের লেখকের লেখার স্বাদ কিছুটা হলেও পায়। বইটা যাতে পড়ে।

তবে আপনার কমেণ্ট আমি মাথায় রাখব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।