টুকরো টুকরো লেখা ২০

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ০৩/০৩/২০১০ - ৩:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে আঙ্গুল গুলিও খুলি খুলি করতাছে। আসলেই খুলছে কিনা বুঝতে আরো মাস খানেক লাগবো। গত মাসের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি বলতে সচল খুইলা ভুদাই হইয়া চাইয়া থাকার বদলে কিছু এক্টা লেখার জন্য মাথার লগে আঙ্গুলেও কিছু কুচুরমুচুর। এইটা যুবকের না ভামের অ্যাপেটাইট সেইটা হয়তো ভোলে বাবা জানতে পারে, আমি শিওর না।

১.

শিবিরের পোলাপান ঠোলার হাতে ধরা খাওয়া শুরু করছে। ক্যান জানি মনে হইতেছে একটু দেরী হইয়া গেলো। এই মনে হওয়াটা ভোটের পলো দিয়া ধরা যাইবো না। দুইটা ব্যাপার, এক হইলো এতে শিবিরের বিরুদ্ধে ক্রিয়াশীল হিসাবে শুধুমাত্র ছাত্রলীগরে দেখানোর একটা ফরম্যাট আছে। যেইটা ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক। আওয়ামী লীগ ৬২টা সীট পাক আর ২৩০টা সীট পাক ছাত্রলীগের পাবলিক ইমেজ জ্যামিতিক হারে নিম্নগামী। ছাত্রলীগের জন্য জনগণ আপ্লুত হবে এইরকম চিন্তা গাঁজার লগে ভাংপাতা আর ইউনক্টিনের জুস মিলাইয়া তার লগে তিনপেগ ব্রাস্কা মাইরাও কেউ কইবো না। এইটা আমি ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা থিকা কৈতে পারি। আওয়ামী ভক্তরা প্যান্ট খুলার আগে জাইনা রাখেন ছাত্রলীগের ভালুপুলা বলতে আপনারা যাগো কথা কইবেন তাগো আমি চিনি। শুধু চিনি না জানিও। তয় তারা সংখ্যায় মাইর খাইয়া যায়। কারণ কমিটিতে পোস্ট পাইতে গেলে যা করতে হয় তাতে আমি যা কৈলাম তার অ্যান্টোনিম দাঁড় করানো যায় না। ছাত্রলীগ একটা ড্রাগন। এইখানে কোন বিতর্ক নাই। কেমনে তারা ভালো হইতে পারে সেইটা তারা বুঝবো। আমার তাতে বালও আসে যায় না। আমি যে ছাত্রলীগরে চিনি সেইটা একটা লুম্পেন সংগঠণ ছিল। খবরের কাগজে যা পড়ি তাতে তাগো সেই অবস্থানের কোন রকম কোন পরিবর্তন হইছে বইলা মনে হয় না।

দুই হইলো, ঢাকা আর জাহাঙ্গীরনগরে শুধুমাত্র গণপ্রতিরোধের জোরে শিবির ঠেকানো হইছিল সেইটা ছিল এই শুয়োরগো আইনের ফান্দে ফালানোর হাই টাইম। তাইলে ঠোলাগো যেকোন অ্যাকশানই একরকমের পপুলার লেজিটিমেশান পাইতো। এখনো যে পাইতেছে না সেইটাও জোর দিয়া বলতে পারি না। তবে আমি জাহাঙ্গীরনগরের যেই যূগের ছাত্র সেই যূগের মূল্যবোধ ছিল রাষ্ট্রের আইনের অপেক্ষা না কইরা সোজা লাত্থি মাইরা শিবির খেদানো। শিবির ঠেকানোর ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগরের মডেলটাই একমাত্র সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য। যাইহোক রাষ্ট্র হয়তো সেইভাবে আগাইতে পারে না। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রয়োগের প্রক্রিয়াটাতে যেহেতু জনগণই গিনিপিগ সুতরাং জনগণের অবস্থানের প্রতিক্রিয়া রাষ্ট্রের থিকা আলাদাই হইবো। এখন দ্রুত রাজাকার-আলবদরগো বিচার শুরু না করলে আমি যেই আশঙ্কা কইরা দেরী হইয়া গেলগা বলতেছি সেইটাই হৈবো। এই আর কি। আমার আর এই জীবনে জনগণের অবস্থান ছাড়া সম্ভব হইবো কিনা জানি না।

২.

সিপিবি আর ওয়ার্কার্স পার্টি অবশেষে জোড়া লাগছে। ২০০১ সালে একবার শোনা গেছিল। তখন কী মনে কইরা আর হয় নাই। এইবার ঠিক ওয়ার্কার্স পার্টি না রনো'র লগে কিছু লোক আইসা যোগ দিছে। এরা রনো-মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির কত শতাংশ কে জানে। তাতে অবশ্য তেমন কিছু আসে যায় না। কারণ এক্সপায়ারী ডেইট পার হইয়া যাওয়ার পরে যতই খান ভিটামিন তখন পোতাইনা মুড়ি। গত সপ্তাহে সিপিবি-ওয়ার্কার্স পার্টির যৌথ ঘোষনায় রনো'র মুখে ঐতিহাসিক ভূলের কথা শুইনা গইড়াইয়া হাসলাম কতক্ষণ। সোভিয়েত রাষ্ট্র পতনের বিশ বছর আর গণচীনের ঐতিহাসিক ডিগবাজীর বত্রিশ বছর পরে ঐতিহাসিক ভূল স্বীকারের কাহিনি ঐতিহাসিক রসিকতার মতনই লাগে। এই ঘটনাটাই বিরাট একটা এক্সপোজার পাইতো যদি এইটা আপনারা ১৯৯১-৯২ তে করতেন। সেইটা না কইরা আপনেরা গত বিশ বছর ধইরা সবাই কখনো সামনের কখনো পিছনের দরজা দিয়া আপনেগো ভাষায় "বুর্জোয়া" রাজনীতির দালালি করছেন। এখন ঐতিহাসিক ভূলের গুল মারলেই পাবলিক তা বিশ্বাস করবো এই ভরসা পাইলেন কৈ থিকা?

তবে একটা দরকারি কাজ এক্সপায়ারি ডেইট পার হওয়ার পরেও কখনো কিছু গুরুত্ব রাখে। সেইমতো ভদ্রতা কইরা তাগো একটা ধন্যবাদ দেওয়া যাইতারে। শুধু ধন্যবাদ না মোটামুটি একটা অভিনন্দনও দেওয়া যাইতে পারে। মরনোত্তর পুরস্কারের মতন। মাথায় তাওয়া দিয়া বাড়ি মাইরা অপটিমিস্টিক থাকার চেষ্টা কইরা সেই অভিনন্দনটাই দিলাম। এর বাইরে যা মনে আইতাছে সবই রং তামাসার কথা। সেগুলি এখন বাদ দিলাম ২০০১ সালে কাস্তে মার্কায় ভোট দিছিলাম বইলা। কাঁচি মার্কায় ভোট দেওয়ার মূলে ছিল নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত। ঘটনা চক্রে সেদিন ভোট কেন্দ্রে গেছিলাম। ঢাকা ৯ থিকা খাড়াইছিল মকবুল আর খন্দকার মাহবুবউদ্দিন। দুইজনের একজনেরও আমার ভোট পাওয়ার যোগ্যতা ছিল না। নৌকাধানেরশীষ বাদ দিয়া তাই কাস্তে মার্কায় সীল মারলাম। তবে এইটাও ভুইলা গেলে চলবে না যে ঐ সীল মারার উদ্দেশ্য ছিল ভোটটা নষ্ট করা। ঐ ভোটটা জেনুইন পাইতে যা করা লাগে তা করার অন্তত নিয়ত আপনাগো আছে এরকম কথা ভাবার মতো কল্কি কি আপনারা সাজতে পারবেন? পরিসংখ্যানের গুষ্টি মাইরা ধইরা নিলাম থাকলেও থাক্তারে। সেই সম্ভাবনার জাগা থিকা অভিনন্দন। তবে বাম হাত মুঠ কইরা উপরে তুললাম না। সেইটা তুলুম না তুলুম না তার জবাব ভবিষ্যতই দিবো।

৩.

জয় আওয়ামী লীগে যোগ দিছে। তারে আবার বিএনপিও অভিনন্দন জানাইছে। এগুলা কোন ঘটনা না। ঘটনা হইলো জয় সাহেব দেশে ফিরাই জ্ঞানের পোটলা খুইলা বইছেন। পরিবারতন্ত্রের পক্ষে রীতিমতো তত্ত্ব ঝাড়ছেন। পৈড়া খুব ভাল্লাগলো। এমন ভালো লাগলো যাতে বলা যায় যে "ভাল্লাগসে".........

৪.

চন্দ্রবিন্দুর গান জাহাঙ্গীরনগর যূগ থিকাই শুনছি টুকটাক। শুইনা অন্য আর দশটা ব্যান্ডের মতোই লাগতো। কিন্তু কেমনে কেমনে জানি চন্দ্রিলের গানগুলি বাদ পইড়া গেছিল। শুইনা মনে হইলো আঁতেল ভট্টাচার্যের এরকম বিলম্বিত আবিস্কারের জন্য আমার আদি গঙ্গায় ডুইবা মরা উচিত। চন্দ্রিলের একটা গানই শেয়ার করলাম শেষ মেষ :

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

কাগুগো ঐতিহাসিক ভুলের বক্তিমাটা চোখে পড়েনাই আগে । আগে থিকা মক্কা ঠিক কৈরা সেই দিকে সেজদা দেওনের ফল আগে তারা পাইতো । একদল চায়নিজ কলা আরেকদল রুশিচ মুলো নিয়ে দিন গুজরান করছে । সেইটার সাপ্লাই যে নাই এইটা বুঝতে তাগোর বিশ বছর লাগলো । তয় সেইটা ঠিক বুইঝা কি করতেছে তারা সেইটা নিয়া একটু আগ্রহ আছে । এই ভুলটা নিয়া তারা তাগো নিজেগো সংগঠনের মধ্যে কি করতেছে ? বিভিন্ন লেভেলের প্রকাশনা/সমাবেশ/পাঠচক্রগুলাতে এইটা নিয়া কথাবার্তা হৈতেছে ?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সিপিবি'র পরবর্তী কংগ্রেসের আগে তো আর তাগো "থিসিস" পাওয়া যাইবো না। তখন জানা যাইবো তারা দ্বৈপায়ন হ্রদে কোন মতলব ছাপায়া থুইছে .....



অজ্ঞাতবাস

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শিবিরের পুলাপান ঠোলাগো হাতে ধরা খাইতাছে, এই পর্যন্ত ঠিকাছে। কিন্তু ইদানিং গণহারে শিবিরের চিহ্নিত নেতাগো জামাতে পদত্যাগে আমার কেমন কেমন জানি মনে হৈতাছে! আমার কাছে এইটা ক্যান জানি "পরিকল্পিত" মনে হৈতাছে।

কী জানি, হৈতে পারে আমার মনে ময়লা। কিংবা জামাত-শিবির কিরা কাইটা, তওবা কৈরা বল কেলাডা ছাড়ার ঘোষণা দিলেও সেটায় বিশ্বাস করার কিছুই নাই, কারণ অরা "জামাত-শিবির"!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এই মার্চ মাসটা খিয়াল কৈরা .....



অজ্ঞাতবাস

হাসিব এর ছবি

আইজকা পত্রিকায় দেখলাম কয়েগ্জন সোনার ছেলে তাগোর ভুল বুস্তে পারসে ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ভুল বুঝা ভালো্ তবে বুঝলেই যে পিঠ বাঁচবো এমন না ...



অজ্ঞাতবাস

দুর্দান্ত এর ছবি

দল ছেড়েছে, নাকি সামনে বড় একশান আছে বুঝে বেশী বেতনের দরকষাকষি চলছে? আমি তো শুনলাম মাছের মাথার ভাগ পায়নি, তাই বেড়ালেরা ঘাড়-ন্যাঁজ ফুলিয়ে ফ্যাঁচ-ফ্যাঁচ করছিল। এখন দেখ, বেড়ালগুলো আবার মিউ মিউ বলে মজলিশের কোলে উঠতে চাইছে। আমার তো মনে হয় বাটিতে দুধ পড়েছে।
যেগুলো ফেরত এলো, তাদের কাছ থেকে মজলিশ বড় কিছু আদায় করে নেবে।

সুতরাং, সুমন যেমন বলল, মার্চ মাসটা চোখে চোখে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এত সুন্দর করে সমকালীন রাজনীতি নিয়ে আপনি লেখেন যে আফসোস হয় কেন এই কলামটা (রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা-বিষয়ক) নিয়মিত লেখেননা। সচলায়তনে এই দিকটাতে বিরাট এক শূন্যতা আছে। আপনার কাছ থেকে মাঝেমধ্যে এরকম লেখা কি আশা করতে পারি? আপনিই শুধু নন, আর যারা রাজনীতির খোঁজখবর রাখেন তাদের কাছেও আমার একই প্রশ্ন।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আপনার এই মন্তব্যটাই হয়তো সামনে আমার ফুয়েল হিসাবে কাজ করবে। দেঁতো হাসি



অজ্ঞাতবাস

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শিবির ঠেকানোর ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগরের মডেলটাই একমাত্র সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য।

দয়া করে এই মডেলটা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করুন, প্রয়োজনে ভিন্ন পোষ্ট দিন। এটা অত্যন্ত জরুরী বিষয়। যারা জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলনের ইতিহাসের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখেন না, বা যারা একেবারেই জানেন না তাদের উপকার হবে। পরীক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত রণকৌশল নিলে অনেক ক্ষেত্রেই কাজ সহজ হয়ে যাবে। একটু সময় করুন, প্লিজ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

সুমন জাবি মডেল নিয়া বিস্তারিত কৈতে পারবো । (তবে কৈয়া আদৌ কিছু হয় কিনা এইটা শিওর না । অরাজনৈতিক পাবলিকেরা নব্বুইয়ের পর ছাত্ররাজনীতির ভালো অংশটারে তুচ্ছজ্ঞান কৈরা হুটহাট রাজনীতি বন্ধ কৈরা দিতে চায় ।)আমি ওগো ঐখানে মাঝে মাঝে পিকেটিং করতে যাইতাম । জাবি মডেলের একটা ছোট অংশের পুনরাবৃত্তি হিসেবে গতকাইলের একটা ঘটনা পড়েন । নিজেগো ভিত্রে হিডেন শিবির খুইজা বের কৈরা গদাম দেওনের এই রীতিটা জাবিতে প্রথম দেখছি। ঐ সময় এমনকি আমার নিজের সার্কেলের একজন এরকম ধরা খাইছিলো । ধরার পর তারে পত্রপাঠ ইউনিভার্সিটি ছাড়তে হৈছিলো ।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

জাবির মডেল সম্ভবত 'মাইরের উপ্রে ওষুধ নাই' ফর্মূলায় নির্মিত। জামায়াত শুঁয়োর পাবলিককে ডরায়, পাবলিকের মাইরকেও ডরায়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

জাহাঙ্গীরনগরে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই বামপন্থী ছাত্র রাজনীতির আধিপত্য ছিল। যার তলানিটা আমি, আয়েশা, শশাঙ্ক, যূথচারী, সবুজ বাঘরা পেয়েছি। ফারুক ওয়াসিফ, জামাল ভাস্কর যথাক্রমে ছাত্র ফেডারেশন এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। কর্ণজয় বহুদিন ডুব দিয়েছে। ও আমাদের থেকে আরো খানিকটা ভালো সময় দেখেছে। বিশেষ করে শিবিরের সাথে প্রধাণ মুখোমুখি সংঘাতের সময়গুলি। জিয়াউর রহমানের আমলে হালাল হওয়ার পরে সব ক্যাম্পাসের মতো জাবিতেও শিবিরের কার্যক্রম শুরু হয় এবং সেটা এরশাদের আমলেও অব্যহত থাকে। তবে অন্যসব সংগঠণের সাথে ওদের গোলমাল লেগেই থাকতো। ১৯৮৯ সালের অক্টোবর/নভেম্বর মাসে (তারিখ ভুলে গেছি) জাবি'র বর্তমান শহীদ মিনারের সামনের রাস্তা যে জায়গাটায় কামালউদ্দিন হলের দিকে বাঁক নিয়েছে সেখানে শিবিরের ক্যাডাররা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের হাবিবুর রহমান কবীরকে কুপিয়ে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে সেই সময়ে বিশাল ছাত্র অভ্যুত্থান ঘটে এবং সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের সিদ্ধান্ত অনুসারে ক্যাম্পাসে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা যতদূর জানি আজও বহাল আছে। নিষিদ্ধ হবার পরে ১৯৯২,১৯৯৪,১৯৯৫ এবং সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের ২২ জুলাই শিবির সামরিক কায়দায় ক্যাম্পাস আক্রমণ করে। প্রতিবারই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্র আফম কামালউদ্দিন হলকে তারা টার্গেট করেছে। সেই সময় অন্যসব হলের পুরুষ এবং নারী ছাত্ররা সমবেত ভাবে ধাওয়া করে শিবিরকে ক্যাম্পাস ছাড়া হতে বাধ্য করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকেও সে সময় কিছু সহায়তা পাওয়া গেছে। তবে মূল শক্তি ছিল ঐ জনস্রোত। প্রতিবার শিবির তাড়াবার পরে হলের ভিতর সাধারণ ছাত্রদের উদ্যোগে উৎসাহে শিবিরের সন্ধানে চিরুনি অভিযান চালানো হতো। এই অভিযানগুলির একতরফা শিবির বিরোধী অবস্থান নিয়ে অনেকে নানারকম উত্তরাধুনিক ত্যানা প্যাচালেও ঐ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমতের চাপ শেষ পর্যন্ত জাবি ক্যাম্পাসকে শিবিরমুক্ত রাখতে পেরেছে। জাবি ক্যাম্পাসে শিবির বিরোধিতার মাত্রা এমন পর্যায়ে ছিল যে জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যখন জামাতের সাথে সমঝোতায় গেছে বা ঐক্য করেছে জাবির ছাত্র লীগ ছাত্রদল সেই সময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছে বা নিতে বাধ্য হয়েছে। লীগদলের মধ্যে আমাদের সময় পর্যন্ত ক্যাম্পাসে যতগুলি গ্রুপিং হয়েছে তাতে শিবির প্রশ্নটা বরাবরই খুব প্রধাণ সূচকের জায়গায় ছিল। জনমতের চাপে বাধ্য না হয়ে স্বত:স্ফুর্তভাবে শিবিরের সাথে লড়াই করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠণগুলি আর জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট।

আনবায়াসড ইতিহাস কাকে বলে জানিনা। তবে অ্যাকাডেমিক পর্যবেক্ষণের জায়গা থেকে এই হচ্ছে জাবিতে শিবির প্রতিরোধের অতিসংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো শিবিরের বিরুদ্ধে এই জনস্রোতের আদর্শিক চালিকা শক্তিটি শুধু ১৯৭১ সালে তাঁদের ভূমিকার কারণে না বরং আরো অনেক বেশী করে বর্তমান শিবিরকে ক্যাম্পাসের জন্য একতরফা ক্ষতিকর বলে মনে করা। জাবি ক্যাম্পাস যতটা সুন্দর, যে কারণে সুন্দর তার সবটাই শিবির ক্যাম্পাস দখল করলে ধ্বংস হবে এইটাই শিবির তাড়ানোর প্রধাণ স্পিরিট হিসাবে আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি।

এই স্পিরিটকে মজহারচক্র হয়তো বলবেন জুজুর ভয়; আমি বলবো রাজনৈতিক চেতনা।



অজ্ঞাতবাস

বাউলিয়ানা এর ছবি

পান্ডব দা'র সাথে একমত।
জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলনের ইতিহাস জানতে চাই।

লেখার জন্য চলুক

সবুজ বাঘ এর ছবি

ছিবিরের নামগুন্দ পাইলেই অইল মাইরা তার ছকেটের আড্ডি ভাইঙ্গা দেওয়া হইত এটফাস্ট। তাহাদে ছাত্ররাই আজরাইলের নাম ভূমিকায় অভিনয় দিয়া হালাইতো। কুনো কতার পুটকি মারামারি হইত না, শব্দ কম মাইর বিশি।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

কোনরকম বিকৃতি ছাড়া ঠিক এইটাই ইতিহাস।

সিনিয়রদের কাছে শুনছি গোআ'র ছোট পোলারে নাকি ল্যাঙটা কইরা কানে ধরাইয়া পুরা ক্যাম্পাস ঘুরাইয়া লাত্থি মাইরা বাইর কইরা দেওয়া হইছিল। সেই ব্যাথায় নাকি সে এখনো কান্দে।



অজ্ঞাতবাস

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ঈশ! ঢাকা শহরের নানান অলিগলির অমুনতমুকের ফ্ল্যাটের এতো এতো গোপন ঘটনার ভিডিও বাইর হয় মাগার এই ঘটনাটার কোনো অডিও ভিজ্যুয়াল নাই ক্যান! মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সুমন চৌধুরী এর ছবি
ওডিন এর ছবি

কুনো কতার পুটকি মারামারি হইত না, শব্দ কম মাইর বিশি।

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

শশাঙ্ক বরণ রায় এর ছবি

পুলিশ দিয়ে শিবির ধরার ব্যাপরটি মনে হয় এবারের মতো শেষ হয়েছে। এছাড়া সরকারের এই কর্মসূচিটা মোটেও শিবির/রাজাকারী/সাম্প্রদায়ীক/সন্ত্রাসী রাজনীতি নির্মূল বা প্রতিরোধের উদ্দেশ্য থেকে গৃহীত হয় নাই। এটাকে বরং ক্ষমতাসীন দলের আহত অহমের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায়। যে কারণে এই ধরনের উদ্যোগ দুদিনেই মিইয়ে যায় এবং মোটেও জনসম্পৃক্ত হয় না। ফলে ঘটনাটির কালগত বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

'জাহাঙ্গীরনগর মডেল'টা অনুসরণীয় হতে পারে শিক্ষাকেন্দ্রের আবাসিক এলাকাগুলোতে, তবে মনে রাখতে হবে এটা মাত্রই 'ঠেকানো'র কৌশল, এবং নির্দিষ্ট কিছু এলাকায়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর যে বিষয়টি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিবিরের অবস্থান। সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় যেসব খবর এসেছে তাতে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে, ছাত্রলীগ-ছাত্র শিবির 'মুখোমুখী', 'আক্রমণাত্মক অবস্থানে', 'ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া', 'দুপক্ষের সংঘর্ষ', 'পুলিশ... থামিয়েছে' ইত্যাদি। অর্থাৎ সেসব এলাকায় ছাত্রলীগ (আক্রান্তের ক্রোধ ও পুলিশী সমর্থন-সহ) শক্তির বিবেচনায় ছাত্র শিবিরের সমকক্ষ অথবা প্রায় সমকক্ষ অবস্থানে রয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাবনার কথা। তবে কি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে শিবির এতটাই শক্তি অর্জন করেছে সারা দেশে?

ভোট-টেন্ডার-দখল-চাঁদা নেয়া ছাড়া, অর্থাৎ রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কার্যক্রমে ছাত্রদল-ছাত্রলীগের সক্রিয়তা চোখে পড়ে না। এ বাস্তবতায় শিবিরকে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিরোধ করবে কে - সেটাই প্রশ্ন।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

"জাহাঙ্গীরনগর মডেল" এও কিন্তু জনস্রোতের মধ্যে ছাত্রদল-লীগের বাইরের প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতি ক্রিয়াশীল ছিল। গ্রাউন্ড ওয়ার্কের কৃতিত্ব অনেকটাই তাঁদের। বর্তমানে প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতি বিপর্যস্ত। আমাদের সময়েও বিপর্যস্তই ছিল। কিন্তু গত একদশকে এক দ্রব্যমূল্য আর ডিজুসদের সংখ্যা বাদে আর সবকিছুর মতো বামপন্থী ছাত্র সংগঠণগুলিতেও ক্রমবনতি দেখা গেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপলিটিকাইড "সাধারণ ছাত্র"রা নব্বই দশকে বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে কার্যত বামপন্থীদের নেতৃত্বেই পথে নেমেছিল। এক দশক পরে সেই চেহারায় প্রচুর পরিবর্তন এসেছে। আর প্রান্তিক অবস্থানে থাকা ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলও লুম্পেনাইজেশানের শেষমাত্রায় পৌঁছে গেছে বহুদিন আগে। সুতরাং এখন যদি শিবির আবার সেই নব্বই দশকের প্রথমার্ধের মতো করে ক্যাম্পাস আক্রমণ করে তাহলে কে প্রতিরোধ করবে এবং কতটা রক্তপাতের পরে করবে সেটা সত্যিই ভেবে দেখার মতো। আমি অবশ্যই বলতে চাইছি না যে বাকিদের পতনের বিপরীতে শিবিরের কোনভাবে জনসমর্থন বা সদস্য সংগ্রহমাত্রা বেড়েছে। ওদের ঘরেও আগুন লেগেছে। ঠিক যেভাবে আগুন লাগলে পিষে ফেলা ছাড়া আগুন নেভানো যায় না সম্ভবত সেভাবেই লেগেছে। আমার বক্তব্য ছিলে সেই পেষাটা কে পিষবে? সরকারি দল যদি ছাত্রলীগকে এককভাবে শিবিরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে শিবির দমনের কৃতিত্ব একা খাওয়ার মতলব এঁটে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে আওয়ামী লীগের শিবির নীতি মহিবুল্লাহ-পর্যায় থেকে খুব একটা অগ্রসর হয় নাই।

"জাহাঙ্গীরনগর মডেল" এর মূল শক্তি ছিল জনস্রোত। কোন রকম দ্বিতীয় চিন্তু ছাড়াই "শিবির ধর জবাই কর" ধরণের মনোভাব। সেই মনোভাবটা এখনো "সাধারণ ছাত্র"দের মধ্যে আছে বলে আমার ধারণা। শুধু তাঁদের শক্তিটাকে ব্যবহার করার যোগ্যতার জায়গায় কাউকে সাদা চোখে দেখা যাচ্ছে না।

অফ টপিক : ছাত্র মৈত্রীও কি ছাত্র ইউনিয়নে একীভূত হয়েছে?



অজ্ঞাতবাস

শশাঙ্ক বরণ রায় এর ছবি

আপাতত অফ টপিকেই থাকি: রণো সাহেব আলাদা হওয়ার পর নতুন করে ছাত্র মৈত্রী ভাঙ্গে নাই, মানে ওনার তো ছাত্রদের সাথে কোন মৈত্রীই হয় নাই!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

তার মানে মেননের সাথেও বেশ কিছু লোক আছে এখনো।



অজ্ঞাতবাস

শশাঙ্ক বরণ রায় এর ছবি

মেনন-বিমল বিশ্বাস-আব্দুল মতিন-হাজেরা সুলতানা 'মূল ধারার' ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্বে। বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীও তাঁদের সাথেই আছে। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী জন্মের পর টিপু বিশ্বাসরা আলাদা হন গণফ্রন্ট নামে। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী তাঁদের সাথে যুক্ত হয়। নিকট অতীতে সাইফুল হক-খন্দকার আলী আব্বাস-পরেশ সাহা-সহ কয়েকজন ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে আলাদা হয়ে 'ওয়ার্কার্স পার্টি পূনর্গঠন' নামে সংগঠিত হন। তাঁদের কিছুটা সাংগঠনিক প্রয়াস দেখা যায়। সর্বশেষ রনো-আজিজুল হক-সাত্তার মোল্লা-সহ কয়েকজন পার্টি থেকে বেরিয়ে যান এবং রনো অবশেষে চীন-সোভিয়েত দ্বন্দ্বের সমাধান করলেন! তবে তাঁর সাথে থাকা আজিজুল হক-সাত্তার মোল্লা সম্ভবত এখনও ষাটের দ্বন্দ্বে আস্থা হারান নাই। দুয়েকজন রনোর সাথে থেকে থাকতে পারেন। রনো তো অনেক দিন থেকেই মূলত ঢাকা কেন্দ্রিক পার্টি বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা পালন করছিলেন, তাই সম্ভবত দলে সাংগঠনিক প্রভাব তেমন শক্তিশালী ছিল না।

ওয়ার্কার্স পার্টি, বামবিবেচনায়, এখনও বেশ বড় সংগঠন!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইখানে একটা ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন হচ্ছে যারা মেননের সাথে থেকে গেলেন তাঁদের ভাষ্য আসলে কী? আর টিপু বিশ্বাসরাই বা কী বলেন? কেন বলেন? আর সব কিছুর উপরে সিপিবি গত দেড় দশক আওয়ামী ছায়া মুক্ত থাকার কৃতিত্ব দেখিয়েছে সত্য। কিন্তু তারাই বা এইসব "ঐতিহাসিক ভুল" নিয়ে কী বলেন। এই আর কি।

এই প্রসঙ্গগুলাতে কথাটথা তেমন কইতাম না। তোর কমেন্টের কারণে বলা হৈল ...



অজ্ঞাতবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

ভিন্ন প্রসঙ্গ: জার্মান ভাষায় নানান আর্টিকেলের ব্যবহার নিয়ে মহা মুসিবতে আছি। আপনি এক জায়গায় বলেছিলেন, এদের মধ্যে নাকি একটা ব্যবহারের নিয়ম আছে একটু জানাবেন কি?

ধন্যবাদ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। এখানে আসলে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রসঙ্গ থেকে সরে যেতে হবে। তবুও প্রশ্নের সন্মানে জবাব দিচ্ছি দেঁতো হাসি

আর্টিকেলের নিয়মগুলি নিপাতনে সিদ্ধমুক্ত নয়। সুতরাং শুরুতে আপনাকে প্রাথমিক শব্দভাণ্ডার গড়ে তুলতে কিছু জিনিস মুখস্ত করতেই হবে। নিয়মগুলি হচ্ছে বিশেষ্য'র শেষে -er দিয়ে শেষ হলে ৭৫% ক্ষেত্রে তাঁর আর্টিক্যাল হবে der. একইভাবে শেষে -e দিয়ে শেষ হলে তার আর্টিক্যাল হবে 75% ক্ষেত্রে die. বিশেষ্য'র শেষে -chen সাফিক্স থাকলে মোটামুটি ৯৯% ক্ষেত্রে আর্টিক্যাল হবে das. এইভাবে schaft/kraft সাফিক্সের ক্ষেত্রে ১০০% ক্ষেত্রেই die.

আমার বিদ্যার দৌড়ও বেশী নয়। ভালো থাকবেন।



অজ্ঞাতবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

পোস্টের চাইতে মন্তব্যগুলা অনেক বেশি তথ্যবহুল।
এই ধরণের রাজনৈতিক পোস্ট আরো আসুক ভাইয়া, বেশি বেশি আলোচনা হোক। আমাদের জানা প্রয়োজন।
ধন্যবাদ পোস্টের জন্য।

- মুক্ত বয়ান

সুমন চৌধুরী এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।