অ্যাঙ্গলিসাইজড বাংলা, ভাষার পরিবর্তনের ধারা, বানান সমস্যা এবং আমার অ্যাগ্রি করা...।

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: সোম, ০৯/১১/২০০৯ - ১০:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মনে আছে মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র হিসাবে ইংরেজিভাষী আতিথির সাথে কথা বলার সময় বাংলা বাক্যগুলিকে প্রথমে মনে মনে ইংরেজীতে অনুবাদ করে নিতাম। উচ্চ মাধ্যমিকে উঠে ভেবেছিলাম ইংরেজিভাষী কারো সাথে কথা বলার সময় যদি ইংরেজীতে চিন্তা করতে পারি তবে হয়ত আমার ইংরেজী ভাষা শেখার ব্যাপারটা অনেকটা এগিয়ে যাবে। আর এখন আমি বাংলা শব্দের মানে বুঝি ইংরেজীতে। স্বীকার করতেই হবে ভাষা শেখার ব্যাপারে আমার বেশ উন্নতি হয়েছে!

ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য জনাব কলিম খানের(১) লেখা থেকে একটা উদাহরণ দেই। উন্নতি বা উন্নয়ন কথাটার মানে কী? মানে খুব সহজ - development। সমার্থশব্দ। জনাব খান বলছেন ভাষাস্রষ্টাদের কাছে এদু’টি শব্দের মানে ভিন্ন ছিল। উন্নয়ন শব্দটি তৈরী হয়েছে ‘নী’ ক্রিয়া দিয়ে; উন্নতি শব্দটি তৈরী হয়েছে ‘নম্‌’ (নত হওয়া) ক্রিয়া দিয়ে। তার মানে, খেটেখুটে অর্জন বাড়িয়ে নিজেকে (বা নিজেদেরকে) উপরে তুলে আনতে পারলে উন্নয়ন হয়; কিন্তু উন্নতি হয় কারো নত হওয়ার উপর নির্ভর করে। তার মানে, উন্নতির জন্য অর্জনবৃদ্ধির পরিশ্রম করতে হয় না, অন্যদের নত হওয়ার ব্যবস্থা করলেই চলে। দু’টি শব্দের অর্থ ভিন্ন, প্রয়োগও ভিন্ন। আরেকটা উদাহরন দেয়া যেতে পারে। যোগ্য এবং উপযুক্ত শব্দ দু’টি বলতে আমরা বুঝি eligible, এবং সমার্থশব্দ হিসাবেই ব্যবহার করি। কিন্তু আসলে শব্দ দুটিতে পার্থক্য আছে। যাকে যোগ করা যায় তিনিই যোগ্য। কিন্তু এখনো যিনি পূর্ণ যোগ্য নয়, তবে কাজে লাগিয়ে দিলেই বাকিটা শিখে ফেলবে, তাকে যুক্ত করে দিলেই তিনি উপযুক্ত। এতে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটছে। তারপর আছে ধরুন অনুপস্থিতিতে এবং অবর্তমা্নে, দুটোই in absence। কিন্তু অর্থে ভিন্নতা আছে।

সম্পূর্ন বাক্যকেও আমরা অ্যাঙ্গলিসাইজড করছি। হয়ত অর্থের পরিবর্তন হচ্ছে না। যেমন টিভি চ্যানেলগুলোতে বহুল ব্যবহৃত বাক্য, ‘আপনি কি আমাকে শুনতে পারছেন?’ (can you hear me?)। অথচ এক সময় বাক্যটি ছিল, ‘আপনি কি আমার কথা শুনতে পারছেন?’ মানুষের নামও অ্যাঙ্গলিসাইজড প্রক্রিয়ার বাইরে নাই। Ajay নামধারী ব্যাক্তিকে অজয় বলায় আরেকজন অবাক হয়েছিল – নামটা নাকি এজেয়।

বাংলার এই অ্যাঙ্গলিসাইজড প্রক্রিয়ার বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে আমার এ বিষয়ে লেখার কারনটা ব্যাখ্যা করা দরকার। ইদানিং কালে শ্রদ্ধেয় মাহবুব লীলেনের একটা আসাধারন ব্লগ এবং কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই আমার এই লেখা। লীলেন ভাই যখন ভাষা সম্ভন্ধে কিছু বলেন তখন আমি পুরোপুরি প্রভাবিত হই, এবং তা বিনা-বিতর্কে গ্রহন করি। তবে ব্যাপারটা পুরোপুরি মেনে নেয়ার শেষ প্রান্তে পৌছুতে কয়েকটা ঝাঁকি খাই। আলোচনাটা তারই আলোকে।

লেখাটা খুব ভেবেচিন্তে করা হয়নি, তার জন্য কিছুটা অনুতপ্ত। অ্যাঙ্গলিসাইজড প্রক্রিয়ার সাথে অন্যান্য সাইজড প্রক্রিয়া এনে ব্যাপারটাকে জটিল করলাম না। (তিন বছরের আধো-আধো কথা বলা, হাতোরি নামক কার্টুন ছবির ভক্ত মেয়েটা যখন তার বড় বোনকে পেছন থেকে দাড়ানোর জন্য চিৎকার করে ‘রোক, রোক’ বলে, তখন বেশ লাগে।)

আমার মতে এই ইংরেজিকরণ প্রক্রিয়া তিনভাবে হচ্ছে।

১। বাংলা শব্দের মানে ইংরেজীতে বুঝা
উপরের উদাহরন থেকে বুঝা যাচ্ছে বাংলা শব্দের মানে ইংরেজিতে বুঝার মানে কী। ইদানিং আমরা অনেক শব্দ ইংরেজিতে প্রথমে চিন্তা করে তারপর বাংলাটা খোঁজ করি। এতে কি কোন সমস্যা আছ? দেখি জনাব খান কী বলছেন। তাঁর কথায়, ‘বাংলাভাষার শব্দগুলি যেহেতু ক্রিয়াভিত্তিক ভাষাপ্রযুক্তিতে গঠিত হয়েছে, তাই একই শব্দের অনেক অর্থ হয়’। আমি যেটা বুঝতে পারলাম, ভাব প্রকাশের জন্য বাংলাভাষা একটা অতি সমৃদ্ধ ভাষা। কিন্তু ইংরেজি প্রতীকী ভাষাপ্রযুক্তি এবং প্রায় ক্ষেত্রেই একটি শব্দের একটি মানে, দ্যোতনা কম। তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘বাংলাভাষার এই মণিমুক্তোর মত শব্দভান্ডার ফেলে ইংরেজির একটি মাত্র শব্দ নিয়ে বাংলাভাষাকে নিঃস্ব করে দেয়া হচ্ছে’। তিনি আরও বলেছেন, ‘পশ্চিমের হাতে আছে শ্রেষ্ঠ প্রতীকী ভাষাপ্রযুক্তি, খন্ডজ্ঞান। কিন্তু তাদের বহু-অর্থবাচক শব্দসম্ভার নেই, অখন্ডের দুনিয়ায় তারা অসহায় এবং (রেফারেন্স সহ বলেছেন) সে কারনে তাদের বিজ্ঞানীদের দুঃখের সীমা নেই’। পড়লে মন ভাল হয়ে যায়।

লীলেন ভাই ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের উদহরন দিলেন, যিনি কালচার এর প্রতিশব্দ করেছিলেন সংস্কৃতি। আরও বললেন, “ড. চট্টোপাধ্যায় এর ব্যাখ্যা দিলেন- যা সংস্কার করে গৃহীত হয়েছে তাই সংস্কৃতি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আমরা সংস্কৃতি শব্দটাকে ব্যবহার করেই সংস্কৃতির সংস্কার বিরোধীতার মতো গোড়ামি করে বসি হামেশাই...”। পান্থ রহমান রেজা বললেন, “যা কিছু প্রবহমান তাই যে সংস্কৃতি তা অনেকেই বুঝতে চায় না”। আমি সংস্কৃতির এই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনকে মেনে নেই, সারভাইভ্যাল অভ দ্য ফিটেস্ট থিওরীকে অস্বীকার করতে পারিনা।

এর ভাল দিকটা হল, বিশ/ত্রিশ বছর পর ছেলেমেয়ে দের বলতে পারব দেখ আমাদের কেমন রিচ একটা ভাষা ছিল একদিন। এবং এই দাবীটার স্বপক্ষে শক্ত হিসাবে প্রমান থাকবে কলিম সাহেবদের বইগুলি। (অন্যান্য ক্ষেত্রে অতীতের সোনালী দিনগুলির প্রমান বেশ কঠিন…।)

২। অ্যাঙ্গলিসাইজড উচ্চারণ
অ্যাঙ্গলিসাইজড উচ্চারণের ব্যাপারটা পাঠক টেলিভিশনে দেখে থাকবেন অথবা রেডিওতে শুনে থাকবেন। রেডিও, টিভিতে নয়, প্রতিনিয়ত আমার এধরনের উচ্চারণ সরাসরি শুনবার সৌভাগ্য হয়। প্রথমে প্রথমে ব্যাপারটা পছন্দ হত না। এখন গ্রহন করে নিয়েছি। মনে হচ্ছে নতুন উচ্চারণের ধ্বজাধারী এই জেনারেশন বাংলার উচ্চারণে অন্যরকম একটা পরিবর্তন আনবে। বাংলা ভাষাটা গ্লোবাল ভাষা হিসাবে পরিচিত ইংরেজি ভাষার সাথে মোর অ্যালাইন্ড হবে। একবার কনফিউজড হয়ে গেছলাম অবশ্য, কার জন্য এ ভাষা তৈরী হচ্ছে। মাহবুব লীলেন ভাই ব্যাখ্যা করলেন, ‘ভাষা সব সময়ই শ্রেণীকেন্দ্রিক কমিউনিটিকেন্দ্রিক এবং স্তরভিত্তিক। এটা তৈরিও হয় এইভাবে। ব্যবহৃতও হয় একইভাবে। সিলেটের লোকরা সিলেটের লোকদের সাথে যোগাযোগের জন্যই তৈরি করেছে সিলেটি উপভাষা, চট্টগ্রামের লোকরা চট্টগ্রামের ভাষা’। অ্যাগ্রিড।

শুধু একটা পয়েন্ট, আমরা এখনো অজপাড়া গাঁয়ে (এই কথাটারও অর্থ বদলে গেছে) গিয়ে এখনো কথাবার্তা বলতে পারি। আমার ছেলে মেয়েরা হয়ত সেই সব বাসিন্দাদের সাথে এত ভাল ভাবে কমিউনিকেট করতে পারবে না। লীলেন ভাই তারও সমাধান দিয়েছেন, ‘... আর পৃথিবীর কোনো ভাষা কিংবা উপভাষাই সবাইকে কমিউনিকেট করার জন্য তৈরিও হয় না। ব্যবহারও হয় না’। অ্যাগ্রিড।

৩। অযাচিত প্রচুর ইংরেজী শব্দ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে
দিস ট্রেন্ড আগেরটার সাইড বাই সাইড ইউজ হয়। দেখা যাচ্ছে সুন্দর বাংলা শব্দ থাকা সত্ত্বেয় ইংরেজি শব্দ দৃষ্টিকটু ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আস্থে আস্থে এটাই স্থায়ী রূপ পাবে। (যেমন টিভি উপস্থাপনায় দর্শকমন্ডলী আস্থে আস্থে হ্যালো ভিউয়ার এ রূপান্তরীত হচ্ছে।) কোন সমস্যা আছে? না।

এই জেনারেশনের নিজের জন্য হয়ত একটা জগাখিচুরী উপভাষা তৈরী হবে। অ্যাগ্রিড।

পরিবর্তন
আমার মত যারা ভাষা-শিল্প-সংস্কৃতির থেকে অনেক দূরে, কিন্তু বাজার-বটমলাইন-করপোরেট-ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদির কাছাকাছি, তাদের কাছে পরিবর্তন (change) কথাটা খুব সহজাত। বুঝলাম সংস্কৃতিও ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডসের মত সবসময়ের জন্য পরিবর্তনশীল। কিন্তু বাজার-করপোরেট দুনিয়ার পরিবর্তন হয় গাইডেড, রেগুলেটেড। এমনকি চরম বাজার অর্থনীতিও প্রত্যক্ষ (রেগুলেশন, অ্যাক্ট) বা পরোক্ষ (ফিসক্যাল পলিসি)ভাবে গাইডেড, রেগুলেটেড। বুঝা গেল ভাষা-শিল্প-সংস্কৃতির গাইডেড পরিবর্তন সম্ভব নয়।

তাহলে? ভাষা-শিল্প-সংস্কৃতি কি তাহলে অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের ইন্টারেকশনের প্রক্রিয়ায় পরিবর্ত্ন হবে? হয়ত তাই।

তবে আমাদের এই বাজার-কেন্দ্রী উচ্চ শিক্ষার অভিজ্ঞতাটা ভাল না। কিছুটা গাইডেড হওয়া সত্ত্বেয়। তাই বোকার মত ভয় পাই।

বাংলা বানান
মাস পাঁচেক আগে যখন সচলায়তনে প্রথম লিখেছিলাম, বানানের ব্যাপারে মন্তব্য ছিল। লজ্জিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বাংলা লিখি বা না লিখি বাংলা বানানের ব্যাপার সাবধান হতে চেষ্টা করব। বইয়ের বাজারে দেখা গেল ভারতীয় বানান-বিধি এবং অবশ্যই বাংলা একাডেমির বাংলা বানান-বিধি নিয়ে বই পাওয়া যায়। ভাবলাম ইংরেজি ভাষাতে যেমন ব্রিটিশ বানান-বিধি এবং আমেরিকান বানান-বিধির ব্যাপার আছে, ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম। কিন্তু না। ব্যাপারটা আরেকটু জটিল। একটা উদাহরন দেয়া যাক। ভারতীয় বানান-বিধি বলছে ইতিমধ্যে কথাটি লিখুন, ইতোমধ্যে লিখবেন না। বাংলা একাডেমি বলছে শুদ্ধ বানান হল ইতোমধ্যে, ইতিমধ্যে না। যখন এই নিয়ে ধন্দে আছি, মাহবুব লীলেন ভাই বোমা ফাটালেন,

বানানের জন্য লেখক না লেখকের জন্য বানান?
বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো বানান আছে যা ৯৯% অন্য বানানে লেখে (সূত্র অনুযায়ী যাকে বলা হয় ভুল বানান)। এক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয় তথাকথিত শুদ্ধ বানানটাই বরং তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে
কারণ মানুষ তাকে আর বদার করে না...

এদিকে মুলত পাঠক বদরু খাঁ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে...। মিস হয়ে গেলে পিছনে আছে বদরু বাহিনী।

বানান নিয়ে কী করব?
__________________
১ স্বীকার্য্যে কোনই দীনতা নেই যে জনাব কলিম খানের ব্যাপারে আমি খুব একটা কিছু জানিনা। ২০০৫-০৬ দিকে ভারতীয় একটা পত্রিকার সাপ্লিমেন্টারিতে তাঁর একটা আর্টিক্যাল আমাকে খুবই আকৃষ্ট করেছিল। তিনি বাংলাভাষার উপর বইও লিখেছেন। গূগলে অনেকভাবে সার্চ করেও তাঁর আর্টিক্যালটা পেলাম না কিংবা তাঁর ব্যাপারে কিছু জানাও গেল না। নিজের সীমাহীন অজ্ঞতা নিয়েও জনাব খানের এই আর্টিক্যালের বলে বলীয়ান হয়ে পরদিন বাংলাভাষার সম্পদ নিয়ে ভাষার একমাত্র অ্যাম্বাসেডর হয়ে একদল ব্রিটিশ বালক-বালিকার কাছে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছিলাম। উদাহরনগুলি মনে থাকার কারন এটাই।


মন্তব্য

দুর্দান্ত এর ছবি

উপাদেয়। হাতে, মুখে যেটা প্রকাশ পায় সেটার ভুল যেভাবে ধরিয়ে দেয়া যায়, মগজের গতিকে সেভাবে ঠিক করে দেয়া যায় কি? ইংরেজীতে লিখতে-লিখতে আর পড়তে পড়তে একসময় আরসব কিছু ওটার প্রেক্ষিতেই যদি ভাবা শুরু হয় তা ঠেকানোর ফন্দিটা বেশ জটিলই হবে। কি বলেন?
--
পিচকিদুটোকে 'ভাল' বাংলা শেখানোর তালে আমরা টোনাটুনি তেনাদের কথাফোটার সময় থেকে 'ভাল'বাংলায় কথা শুরু করলাম। ফল হল তেনারা এখন ওলন্দাজ উচ্চারনের সীমার ভেতরে রেখে শহুরে বাংলায় কথা বলেন (চেষ্টা করেন)। তবে দাদা-নানার গন্ডী পেরিয়ে একটু দুরের আত্মীয়রা যখন কুমিল্লা-ভোলার সুগন্ধ মিশ্রিত বোলে কুশলাদি জিগান, তখন আমার মেয়েরা ফেল ফেল করে তাঁকায়। জাফর ইকবাল পড়তে পারে, কিন্তু ঠাকুরমার ঝুলি পড়তে পারে না। গুপিগাইন বোঝে কিন্তু ফারুকি বোঝে না। বুঝতে চায়, কিন্তু বোঝে না। বুঝলেও বলতে চায়, কিন্তু পারে না।
--
লিলেনদার কোন লেখাটা, লিঙ্ক দেয়া যায়?

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ। অনেকটা বাধ্য হয়েই ইংরেজীতে লিখতে-লিখতে আর পড়তে পড়তে অন্য সবকিছু ওটার প্রেক্ষিতে ভাবা ঠেকানো হয়ত সম্ভব না। হয়ত তার দরকারও নাই।

আপনার পিচকি দুটো যে বাংলায় কথা বলে, অথবা ঠাকুরমার ঝুলি অথবা আঞ্চলিকতা মেশানো ভাষা বুঝতে যেটুকু কষ্ট করতে হয়, ঢাকায় বড় হওয়া দুটো পিচকির ব্যাপারেও তেমন কোন পার্থক্য হবে না।

লীলেন ভাইয়ের লেখার লিংকটা আমার লেখায় দেয়ার কথা ছিল, ভুল হয়ে গেছে।
লীলেন ভাইয়ের লেখাটা।

মামুন হক এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার লেখা নৈষাদ।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আলিএ কালিএ বাট রুন্ধিলা
তা দেখি কাহ্নু বিমন ভইলা
কাহ্নু কহি গই করিব নিবাস
যো মন গোঅর সো উয়াস

তে তিনি তো তিনি তিনি হো ভিন্না
ভনই কাহ্নু ভব পরিচ্ছন্না

ঝম্ফি ঘন গরজন্তি সন্ততি
ভুবন ভরি বরি খন্তিয়া
কান্ত পাহুন কাম দারুণ
সঘন খরশর হন্তিয়া

কুলিশ শত শত পাতামোদিত
ময়ুর নাচত মাতিয়া
মত্ত দাদুরি ডাকে ডাহুকি
ফাটি যাওত ছাতিয়া

তিমির দিগভরি ঘোর জামিনী
অথির বিজুরিক পাঁতিয়া
বিদ্যাপতি কহে কৈছে গোঙায়বি
হরি বিনে দিন রাতিয়া

বাংলা ভাষায় অনুবাদ পড়ে জেনেছি উপরের কবিতাগুলোও বাংলায় লেখা ছিল এককালে

কিন্তু সেই চর্যাপদ কিংবা ব্রজবুলি এখন বঙ্গানুবাদ ছাড়া আমি কিংবা আমার মতো বেশিরভাগ বাঙ্গালই আর বোঝে না

কিংবা ধরেন মধুকবি
কিংবা বঙ্কিম

তাদেরকে পড়তে আজ আমাদের অনেকেরই অনেক জায়গায় বাংলা টু বাংলা ডিকশনারি খুঁজতে হয়

ভাষার এই ট্রেন্ডগুলোর দিকে চোখ রাখলেই আমার মনে হয় যে ভাষা শিখেছি তা ওরকম ছিল না আগে
যে ভাষা লিখছি তা ওরকম থাকবে না এমনিতেই

সময়ের গ্রহণ আর বর্জন। যোগ আর বিয়োগ (মূল শব্দ নাকি ছিল বিযোগ) হতে হতে এক সময় হয়তো আমার একমাত্র জানা বাংলা ভাষার লেখাগুলোই অন্যরা পড়বে অন্য বাংলায় অনুবাদ করে...

০২

যে ভাষাটায় আমি লিখি
সেই ভাষাটাও আমাকে শিখতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ শব্দের অর্থ শিখে
লক্ষ লক্ষ শব্দ লিখতে লিখতে পড়তে পড়তে বছরের পর বছর
এই আয়ত্ব করা ভাষাটার বদলে যাওয়া কতটুকু কষ্টের তা টের পাই যখন বাংলার অর্থ কেউ বাংলাতে জানতে চায়
আর তখনই মনে হয় যারা পড়ার কথা তারাই যদি না বুঝল তখন কাকে বোঝানোর জন্য লেখা?
তার চেয়ে কি এই ভালো না যে যে ভাষায় বোঝে সেই ভাষাতেই তার জন্য লেখা?

ভাষার মালিক পাঠক আর শ্রোতা
লেখক কিংবা বক্তারা ভাষার শ্রমিক

০৩

সাম্প্রতিককালে শিশুদের জন্য অডিও নাটক করছি আমি
বাংলা এবং ইংরেজি দুটো ভাষায়ই
ইংরেজির উদ্দেশ্য ইংরেজি ভাষা শিক্ষা
আর বাংলার উদ্দেশ্য কমিউনিকেট করা

কিন্তু নাটকগুলো নিয়ে যখন আমি গ্রামে গ্রামে স্কুলে স্কুলে ঘুরি
তখন দেখি ইংরেজদের লেখা ইংরেজি আর আমার লেখা বাংলা দুটোই বাচ্চাদের কাছে দুটো বিদেশি ভাষার সমান...
ইংরেজিকে যেমন বুঝিয়ে দিতে হয় বাংলায় তেমনি বাংলাকেও অনুবাদ করতে হয় অন্য বাংলায়

বিশেষজ্ঞরা বলেন ছয় বছর বয়সেই একটা শিশু তার মাতৃভাষায় পুরোপুরি কমিউনিকেটিভ হয়ে উঠে
কিন্তু আমি দেখি আমার বাংলা তাদেরকে অনুবাদ করে দিতে হয়
এর মানে কী?
মানে সম্ভবত এটা যে আমি যা লিখছি তা বর্তমান বাঙালির মাতৃভাষা নয়

০৪

কোটি কোটি নতুন বাঙালিকে আমি পেছনে এসে আমার সাথে এডজাস্ট করতে বলব?
নাকি সময় থাকতে একা আমি এগিয়ে গিয়ে এডজাস্ট করব তাদের সাথে?

কনফিউজড না হলেও নিজের সাহস আর ক্ষমতায় আশংকা হয় আমার

কিন্তু একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত
বাঙালিরা যে ভাষা বোঝে না সে ভাষা এখন আর বাংলা নেই

আর বাঙালি মানে তার সমস্ত পরিবর্তনসহই বাঙালি। বাংলা ভাষার মালিক

নৈষাদ এর ছবি

লীলেন ভাই, আপনার ব্লগটিই কিন্তু এ ব্যাপারে নতুন ভাবে চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ সৃষ্টি করেছ।

কোটি কোটি নতুন বাঙালিকে আমি পেছনে এসে আমার সাথে এডজাস্ট করতে বলব?
নাকি সময় থাকতে একা আমি এগিয়ে গিয়ে এডজাস্ট করব তাদের সাথে?

সহমত। পরিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে না পারলে হয়ত নিজেই পিছনে পরে রইব...। অথবা আমি আমার মত করে ভাবতে পারি, কিন্তু আমার পরবর্তী প্রজন্মকে পরিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে না দিয়ে বিপদে ফেলতে পারি না...।

সচল জাহিদ এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার বিশ্লেষণ। ঢাকার বিদ্যালয় গুলিতে বিতর্কে বিচারকাজ করার শেষে আমরা সাবাই বিতার্কিকদের একটি বিষয় মনে করিয়ে দিতাম আর তা হলো একটি জিনিসের ভাল বাংলা শব্দ থাকা স্বত্ত্বেও তার জন্য ইংরেজী শব্দ ব্যবহার না করা। একবার শরীফ ভাই একটি ভাল উদাহরণ দিয়েছিল। আমরা ইংরেজীতে কিছু বলার সময় মুখ ফসকে যদি বাংলা বলে ফেলি তাহলে যেমন হাস্যকর একটি পরিস্থিতি তৈরী হবে, ঠিক তেমনি বাংলা বলার সময় হঠাৎ করে মাঝখানে অযাচিত ইংরেজী বলে ফেললেও একই রকম পরিস্থিতি হওয়া উচিৎ।

একটি অনুরোধ দিয়ে শেষ করবঃ অ্যাঙ্গলিসাইজড বাংলা, ভাষার পরিবর্তনের ধারা, বানান সমস্যা এই জিনিসগুলি নিয়ে আলাদা আলাদা লেখা দিলে তার ব্যপ্তি বড় হতো ও সমৃদ্ধ হতো বলে আমার ধারণা। আশা করি ভবিষ্যতে এইগুলো নিয়ে আরো লেখবেন।

কাছাকাছি চিন্তাভাবনার বলেই আমার এই লেখাটি পড়ার অনুরোধ করছিঃ

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

পড়লাম আপনার ব্লগটা। ভাল লাগল। তবে প্রথম লাইনটা আমার মনের কথা...। জীবন এখানে অনেক যান্ত্রিক, একঘেয়ে, বিরক্তিকর, নিজের কোমল অনুভুতিগুলো কখন যে ভোঁতা হয়ে গেছে তা নিজেও জানিনা। - মাঝে মাঝে আমি কিন্তু সপ্তাহ খানেকের জন্য ডুব দেই।

একবার মনে হয়েছিল বানানের ব্যাপারটা আলাদা করে লিখি যেহেতু আমার আরও কিছু লিখার আছে। এর পরেই মনে হল কোন একটা ব্যাপারে নিজে অজ্ঞ হয়েও সেই বিষয়ে লিখা ধৃষ্টতা কিনা? দেখা যাক।

রাহিন হায়দার এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। লেখাটি আমার চিন্তাভাবনাকে নাড়া দিল। পুরোটা বুঝিনি, তবে কিছু প্রশ্ন যেহেতু আসলো ছোট মাথায়, করেই ফেলি। অন্য অনেক ভাষা না বুঝলেও মন দিয়ে শুনে ধরার চেষ্টা করেছি ক'টা ইংরেজি শব্দ বলা হল, বাংলার মত এত উদারতা আর কোন ভাষার ক্ষেত্রেই চোখে ('কানে') পড়ে নি। বাংলার ক্ষেত্রে এমনটি কেন? কারণটি কি জাতি হিসেবে আমাদের হীনমন্যতা ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা? আমার মতে বাক্যের মধ্যে ইংরেজি শব্দ বললে বক্তার সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়, বা বলা উচিৎ আমরা ধারণা করে নেই। ভাষা এক্ষেত্রে অনেকটা পোষাকের মত। আপনার মতামত আশা করছি।

দিস ট্রেন্ড আগেরটার সাইড বাই সাইড ইউজ হয়। দেখা যাচ্ছে সুন্দর বাংলা শব্দ থাকা সত্ত্বেয় ইংরেজি শব্দ দৃষ্টিকটু ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আস্থে আস্থে এটাই স্থায়ী রূপ পাবে। (যেমন টিভি উপস্থাপনায় দর্শকমন্ডলী আস্থে আস্থে হ্যালো ভিউয়ার এ রূপান্তরীত হচ্ছে।) কোন সমস্যা আছে? না।

এখানেও কিছু কথা আছে। সম্ভবত আপনি শুধু কথ্য ভাষার কথাই বলছেন। প্রথমত, যে বাক্যটির উদাহরণ দিয়েছেন, কতভাগ বাঙ্গালী এভাবে কথা বলে? আর যারা এমনটি বলে, তাদের কতভাগ এ বাক্যটির লেখ্য রূপটিও একইভাবে প্রকাশ করবে? আমি অন্তত মধ্যবিত্তদের মধ্যে এভাবে কাউকে কথা বলতে শুনিনি। আপনার কথা অনুযায়ী যদি ধরে নেই এটিই হবে স্থায়ী রূপ, তাহলে কি ধরে নেব আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এরকম কোন ভাষাতে পত্রপত্রিকা পড়বে, সাহিত্য করবে, গান গাইবে এবং এ যাবৎকালের সাহিত্য পড়তে অনুবাদের আশ্রয় নেবে (যদি আদৌ পড়ে!)? আমার অন্তত লেখ্য ভাষার বর্তমান ঝোঁকটা অতোটা ইংরেজিমুখী মনে হয় না। আর যেসব অনুষ্ঠানে 'হ্যালো ভিউয়ার' শোনা যায়, সেগুলো কোন শ্রেণীর দর্শকের জন্য বানানো?

লীলেন ভাই ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের উদহরন দিলেন, যিনি কালচার এর প্রতিশব্দ করেছিলেন সংস্কৃতি।

আরেকটি প্রশ্ন, উনি (বা অন্য কেউ) যদি এই যুৎসই শব্দটি বের না করতেন, আমরা নিশ্চয়ই 'কালচার' শব্দটিই ব্যবহার করতাম; তাহলে বাংলায় ইংরেজির প্রভাবের জন্য বর্তমান সময়ে আরেকজন ড. সুনীতিকুমারের অভাব কতটা দায়ী?

...............................
অন্ধকারে অন্ধ নদী
ছুটে চলে নিরবধি

হিমু এর ছবি
নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য রাহিন। দ্রুত উত্তর দিতে চেষ্টা করব।

বাংলার ক্ষেত্রে এমনটি কেন? কারণটি কি জাতি হিসেবে আমাদের হীনমন্যতা ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা? আমার মতে বাক্যের মধ্যে ইংরেজি শব্দ বললে বক্তার সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়, বা বলা উচিৎ আমরা ধারণা করে নেই। ভাষা এক্ষেত্রে অনেকটা পোষাকের মত। আপনার মতামত আশা করছি।

আমার কোন মতামত নেই। তবে আমি দেখি বাক্যের মধ্যে ইংরেজি শব্দ সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায় বলে লোকজন ধরে নেয়। আমি এখনো বুঝিনা ২০/৩০ জন বাংলাভাষী লোকের মধ্যে কিছু বলতে বলা হলে আমি ইংরেজিতে বলব এটা আশা করার পিছনে কারন কী। তাই আমি বাংলায় বলি। আমার যেসব ক্ষেত্র আমার আওতার মধ্যে সেখানে মিথ ভাংগার চেষ্টা করি। (যেমন, কমিউনিকেশন স্কিল বলতে ইংরেজি বুঝায় না, সিলেট বা চিটাগাং যে ছেলেটা বিক্রয়ের কাজ করবে তার জন্য ইংরেজি জানার চেয়ে বাংলায় ভালভাবে কথা বলতে পারটা জরুরী...)। ইংরেজির প্রয়োজন যেখানে সেটাও বলি। আমি ২/৩ জন সহকর্মীর সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল যাঁরা অনেকদিন দেশের বাইরে ছিলেন, পশ্চিমে পড়াশুনা করেছে্ন, অথচ এত সুন্দর করে বাংলা ইংরেজির মিশ্রণ ছাড়া বলতেন। এটাকি আপনার প্রশ্নের উত্তরের পক্ষে কোন ইন্ডিকেশন?

২। প্রথমত, যে বাক্যটির উদাহরণ দিয়েছেন, কতভাগ বাঙ্গালী এভাবে কথা বলে? আর যারা এমনটি বলে, তাদের কতভাগ এ বাক্যটির লেখ্য রূপটিও একইভাবে প্রকাশ করবে? আমি অন্তত মধ্যবিত্তদের মধ্যে এভাবে কাউকে কথা বলতে শুনি.........

- খুবই ছোট একটা অংশ এ ভাষা ব্যবহার করে, এবং আমার ধারনা বেশির ভাগই ঢাকা কেন্দ্রীক (বড় বড় শহরে কিছু থাকতে পারে)। তারা বাংলায় লেখে না, কিংবা লেখতে চেষ্টা করলে বাংলিশ হয়ে যায় তার উদাহরণও আছে। (কেউ কেউ এই প্রজন্মকে ডিজ্যুস বা কোকাকোলা জেনারেশনও বলে)। স্থায়ী রূপ বলতে আমি এই জেনারেশনের নিজের জন্য একটা জগাখিচুরী উপভাষা তৈরীর কথা বলছি।

মধ্যবিত্তরা এই ভাষায় কথা বলে না কিন্তু মধ্যবিত্তের পরের প্রজন্ম কিন্তু আস্থে আস্থে সেদিকেই যাচ্ছে, মা-বাবারও কিন্তু চাচ্ছে ভাষায় ইংরেজির মিশ্রন থাকুক। আমি আমার পেশাগত এবং সামাজিক অবস্থান থেকে দেখতে পারছি ইংরেজি নিয়ে কিধরনের মিথ তৈরী হচ্ছে, এবং আগ-পিছ না ভেবে কিভাবে সেদিকে লোকজন ছুটছে। (একটা উদাহরণ দেই। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার পরও কখনো কখনো ছেলেমেয়ের পড়াশুনার ব্যাপারে লোকজন আমার কাছে মতামত চায়। আমি এ ব্যাপারে বেশ সাবধান। একাধিক ক্ষেত্রে আমি মধ্যবিত্ত কোন পিতামাতাকে বলেছি হয়ত ছেলেকে ভাল স্কুলে কিন্তু জাতীয় কারিকুলামে পড়ালে ভাল হয়, উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে তার জন্য দেশে সুযোগ অনেক বেশি থাকবে। খরচের ব্যাপারটা আপনার পক্ষে থাকবে। দেখলাম লোকজন জাতীয় কারিকুলামের বাইরে গিয়ে ইংরেজি মাধ্যমের ব্যাপারে অন্ধ। আমি ইংরেজি মাধ্যম খারাপ বলছিনা, কিন্তু ভবিষ্যতে চিন্তা ভাবনা যখন এক ধরনের মিথ আচ্ছন্ন কিরে রাখে তখনই ভয়...।

হ্যালো ভিউয়ারে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। শুধু দর্শকমন্ডলী কথাটায় কৈশোরের স্মৃতি জড়ানো তাই শুনতে খুব ভাল লাগে...শুনতে ইচ্ছে হয়। আপনার প্রশ্নের উত্তর দেই। টেলিভিশন আমার তেমন একটা দেখা হয়ে উঠে না। হ্যালো ভিউয়ার উপস্থাপকদের আমি মূলধারার উপস্থাপক বলতাম না (ধৃষ্টতা কি?)। কিন্তু ফাওজিয়া ব্রাউনীয়া (নামের বানান ভুল হতে পারে) নাম্নী উপস্থাপিকাকে আমার মনে হয়েছিল মূলধারার। তিনিও দেখি এখন হ্যালো ভিউয়ার বলেন। তারপর দশ বছর পর যখন মূলধারার উপস্থাপকরা চলে যাবে, পরে থাকবে হ্যালো ভিউয়াররা।

ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাপারে কোন মতামত নেই।
আবারও ধন্যবাদ আপনাকে।

হিমু এর ছবি

আমরা যেহেতু উপসর্গের দিকে দ্রুত ঝুঁকি, এই উপস্থাপনায় কিন্তু নতুন প্রবণতা যোগ করা কোনো সমস্যার কাজই নয়। আপনি দেখতে সুন্দর ও আবেদনময়ী একজন উপস্থাপিকাকে (দর্শকের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে বললাম) কোনো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের ভার দিন, যিনি ‌আধো আধো গলায় দুই মিনিট পর পর প্রিয় দর্শক (দঅরশোক) বলে প্রচুর হাঁটাহাঁটি করবেন। এরকম কয়েক চ্যানেলে কয়েকজনকে বসান, দেখবেন "হ্যালো ভিউয়ার"রা প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে কেমন আচরণ করেন।

ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, এই উপস্থাপকরা ঠিক সরাসরি কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস গছানোর চেষ্টা করছেন না, তারা একটা মৃদু পুশ দিচ্ছেন একটা "কাল্ট"-এর দিকে, যে কাল্টে অংশগ্রহণ করতে হলে কিছু প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের দ্বারস্থ হওয়া শেষ পর্যন্ত অনস্বীকার্য হয়ে দাঁড়ায়। জুতোর মাপে পা ছাঁটিয়ে এনে জুতো বিক্রি করার মতো। আপনি এই টেকনিকের জুতসই নামটা জানবেন, আমি জানি না।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

নৈষাদ এর ছবি

হ্যাঁ, এখানে সচেতনভাবে কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস গছানোর চেষ্টা হচ্ছে না এবং যেটা বলেছেন, এই প্রবণতাটা ইচ্ছা করলে প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে দেয়া সম্ভব।

আপনার বলা টেকনিকটা কিন্তু আছে (চাহিদাটাকেই কিছুটা পরিবর্তন করে প্রডাক্টের সামঞ্জস্য করে তোলা) কিন্তু জুতসই একটা নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।

ধন্যবাদ আপনাকে।

রাহিন হায়দার এর ছবি

বাংলার ইংরেজায়ন (চোখ টিপি) বিষয়টি সম্ভবত অনেক কিছুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। চিন্তাভাবনা গুছিয়ে লিখতে পারলাম না।

২/৩ জন সহকর্মীর সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল যাঁরা অনেকদিন দেশের বাইরে ছিলেন, পশ্চিমে পড়াশুনা করেছে্ন, অথচ এত সুন্দর করে বাংলা ইংরেজির মিশ্রণ ছাড়া বলতেন। এটাকি আপনার প্রশ্নের উত্তরের পক্ষে কোন ইন্ডিকেশন?

যাদের মধ্যে বাঁকা পথে জাতে ওঠার প্রবণতা নেই তারাই সম্ভবত এ কাতারে পড়বেন, তবে যাদের উদাহরণ দিলেন তারা ব্যতিক্রম বলেই আমার ধারণা। এটা আসলে পারিবারিক সংস্কৃতিমনষ্কতার উপরও নির্ভরশীল।


দেখলাম লোকজন জাতীয় কারিকুলামের বাইরে গিয়ে ইংরেজি মাধ্যমের ব্যাপারে অন্ধ।

এটি সবসময় যে ইংরেজিপ্রীতির কারণেই ঘটে তা না, আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার দূর্বলতাও অনেকাংশে দায়ী। ১২ বছর ইংরেজি পড়ে তা বলতে না পারা দুঃখজনক।

কিন্তু ফাওজিয়া ব্রাউনীয়া (নামের বানান ভুল হতে পারে) নাম্নী উপস্থাপিকাকে আমার মনে হয়েছিল মূলধারার।

উনি মূলধারার কিনা জানিনা। আসলে ইংরেজায়িত বাংলা বেশ সংক্রামক বস্তু, তাছাড়া জনপ্রিয়তার ইঁদুর দৌঁড়ে পেশাগত কারণেই হয়তো তার এতে সামিল হতে হয়েছে। তারপরও আপনি কখনও শাইখ সিরাজ বা হানিফ সঙ্কেতকে 'হ্যালো ভিউয়ার' বলতে শুনবেন না, কারণ তাঁদের বানানো অনুষ্ঠানের বিশাল দর্শক শ্রেণী তা গ্রহণ করবে না। আরেকটি ব্যাপার, লক্ষ্য করেছেন কিনা জানিনা, দেশে কোন রাজনৈতিক গোলযোগ হলেই সাধারণ মানুষ কেন যেন বিবিসি বাংলা রেডিও গুরুত্ব দিয়ে শোনে। সুন্দর বাংলার গ্রহণযোগ্যতা যে এখনও হারায় নি এটাই তার প্রমাণ। সুতরাং সর্বসাধারণ্যে 'হ্যালো ভিউয়ার' রাজত্ব কায়েম হওয়ার জন্য দশ বছর খুব কম সময়, আর এ প্রবণতা যাতে কখনোই পুরো বাংলা ভাষাকে গ্রাস করতে না পারে সে চেষ্টা বোধহয় করাই যায়।

হিমু ভাইয়ের সাথে আমি একমত, সঠিক এবং সুন্দর বাংলা শব্দটি খুঁজে বের করার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে এক ধরণের আলস্য আছে। আর অর্থনৈতিক মুক্তি না আসলে আত্মসম্মানবোধও ঠিক রাখা মুশকিল।

...............................
অন্ধকারে অন্ধ নদী
ছুটে চলে নিরবধি

নৈষাদ এর ছবি

রাহিন ভাই, ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার মতামত গুলির ব্যাপারে আমার কোন দ্বিমত নেই...। অথবা এই ইংরেজায়নের ব্যাপারে আমি খুব চিন্তিত তাও না। (তবে কর্মক্ষেত্রে জন্মের পর থেকে ইংরেজিয়ায়িতদের ম্যাচুরিটি এবং সাধারন ভাবে বেড়ে উঠাদের ম্যাচুরিটির ব্যাপারে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। কিন্তু যেহেতু শুধুই পর্যবেক্ষণের পর্যায়ে, এই মুহূর্তে মন্তব্য করছি না।)

তবে... আর অর্থনৈতিক মুক্তি না আসলে আত্মসম্মানবোধও ঠিক রাখা মুশকিল... এর ব্যাপারে কিছুটা দ্বিমত জানিয়ে গেলাম।

হিমু এর ছবি

ভাষার সতেজতা কিন্তু "বিদেশী" শব্দকে গ্রহণ করার মধ্যে নয়, বরং "নতুন" শব্দকে জায়গা করে দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। এই নতুন শব্দ নির্মাণে ইংরেজি ভাষা এখনও খুব উদারভাবে ক্লাসিকাল ভাষাগুলির (ল্যাটিন আর গ্রীক) ওপর নির্ভর করে, আর ঐতিহাসিক কারণে ফরাসীর ওপর। ইংরেজি যেহেতু রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় গোটা পৃথিবীর লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে (রাহিন দ্বিমত পোষণ করবেন জেনেই বলছি চোখ টিপি ), ইংরেজিতে কিন্তু আমরা আশা করতে পারতাম, গোটা পৃথিবীর অন্য ভাষাগুলি থেকে বিপুল পরিমাণে শব্দযোগ হবে। হয়েছে কি? আমার সীমিত জ্ঞান বলে, হয়নি। উল্টোটা ঘটেছে।

বাংলা ভাষাকে সজীব রাখা আমাদের দায়িত্ব, কিন্তু এর মানে কখনোই এমন নয় যে আমরা নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে না লাগিয়ে যথেচ্ছ বিদেশী শব্দ জোর করে ঠেলে গুঁজে ভাষাকে দৌড়ের ওপর রাখবো। আমরা বিদেশী শব্দ যোগ করতে বাধ্য হয়েছি আমাদের নিজেদের আলস্যে। রেডিওর একটি চমৎকার বাংলা আছে বেতার, আমরা ব্যবহার করি না। টিভিকে দূরদর্শন বললে কানে বাজে (যেমনটা বাজে টিভিকে টেলিভিশন বললেও), কারণ আমরা টিভিকে দূরদর্শন বলার কাজটাকে আমাদের সামাজিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে একটু খেলো কাজ ভাবি। জার্মানরা কিন্তু খেটেখুটে ফেয়ার্নজেয়েনই বলে, কারণ তাদের আত্মসম্মানজ্ঞানের কিসিমটা অন্যরকম।

ভাষার অ্যাংলিসাইজড রূপ নিয়ে কথা হলেও, বিদেশী শব্দের বাংলিসাইজড রূপ নিয়েও আমাদের মাথা ঘামানো উচিত। ডিরেকটোরেটের বাংলা আমরা করেছি পরিদপ্তর, সংস্কৃত পরি- উপসর্গ আর ফারসি দফতর নিয়ে, এমন বহু মিশেল আমরা ভবিষ্যতেও ঘটাবো, কারণ আমাদের ঐ সৃজনশীলতাটুকুর ওপর ভরসা রাখতে হবে। আংশিক ইংরেজি ফুটিয়ে জাতে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টায় রত জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র অংশটি পেছনে পড়ে থাকবে, যদি ঐ সৃজনশীলতাটুকু ভাষায় প্রয়োগ করা না হয়।

আমি কমিউনিটি ব্লগিঙের একদম শুরু থেকে সক্রিয়, এবং পরিভাষা গড়ে ওঠার ঘটনাটির একজন আগ্রহী পর্যবেক্ষক। ব্লগের পরিভাষায় একের পর এক সৃজনশীল শব্দমালা যোগ হচ্ছে, যার প্রবণতা দেখে আমরা বলতে পারি, ইংরেজি শব্দকে বাংলিসাইজ করার ব্যাপারে আমরা কোনো অংশে কম দক্ষ নই। ব্লগানো, পোস্টানো, লিংকানো, ফেসবুকানো, ইত্যাদি বহু শব্দ এখন কথ্য হয়ে গেছে। সচলায়তনে আমরা হোমপেইজের বাংলা করেছি নীড়পাতা, কিংবা ডিলিটের বাংলা করেছি ঘ্যাচাং, এগুলি সমাদৃতও হয়েছে পাঠকের কাছে। এই এক পা এগিয়ে নিজের ভাষার মাপে বিদেশী শব্দের চামড়ার জুতা বানানোর খাটনিটুকু করার মন আমাদের থাকতে হবে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এই ব্যাপারে আমরা ব্লগে যারা লিখি বা পড়ি তারা একটা পদক্ষেপ নিতে পারি। কিছু কিছু ইংরাজি শব্দের ভালো বাংলা আমরা করতে পারি নাই। ইন্টারনেটের বাংলা আন্তর্জাল আমার পছন্দ হয় না। এরকম আরো অনেক আছে যেমনঃ টেলিভিশন, কম্প্যুটার, টেবিল, চেয়ার, ডিকন্সট্রাকশান সহ প্রচুর প্রচুর শব্দ। এগুলার বাংলা আছে কিন্তু জনপ্রিয় বাংলা নাই।

সচলে একটা পাতা করা যায় যেখানে অধিক ব্যবহার করা ইংরাজি শব্দের সঠিক বাংলাকরণের উপর আমরা মন্তব্য করতে পারি।

ঘ্যাচাং করে অনেক ভালো বাংলা পেয়ে যাবো চোখ টিপি

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ভাষার সতেজতা কিন্তু "বিদেশী" শব্দকে গ্রহণ করার মধ্যে নয়, বরং "নতুন" শব্দকে জায়গা করে দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়- পুরোপরি সহমত। নিজেদের সৃজনশীলতার কথাও বলেছেন আপনি এবং উদাহরণও দিয়েছেন। নিজেদের সুন্দর শব্দগুলিকে ব্যবহারে আলস্য অথবা এ বিষয়ে সৃজনশীলতার অভাব আমাদের শব্দ গুলিকে হারিয়ে যেতে সাহায্য করছে হয়ত। একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আশির দশকে দেয়া আন্তঃনগর ট্রেনের নামগুলি এখনো আমাকে চমৎকৃত করে (এবং আমি যাদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছি, সবারই ভাল লেগেছে), অথচ সিল্কসিটি টাইপের নামও দেয়া যেত। অথবা উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় চিটাগাংএর যে রেস্তোঁরার নামটা আমার কাছে চমৎকার লাগত - নবান্ন (এখন আর নেই)।

ইংরেজিতে কিন্তু আমরা আশা করতে পারতাম, গোটা পৃথিবীর অন্য ভাষাগুলি থেকে বিপুল পরিমাণে শব্দযোগ হবে। হয়েছে কি? আমার সীমিত জ্ঞান বলে, হয়নি। উল্টোটা ঘটেছে। - স্বীকার করি। কোথায় যেন পড়েছিলাম Oxford Dictionary কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর যে কয়টা শব্দকে ইংরেজি ভাষায় গ্রহন করে নেয়, তা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হয় (কতবার ব্যবহার হয়েছে)। ওয়েবে অবশ্য এ বিষয়ে তথ্য খোঁজে পেলাম না। (তবে এই তথ্য পেলাম যে ফ্রেঞ্চ, জার্মান, স্পেনিশ এবং ইটালিয়ান ভাষায় নতুন শব্দ অফিসিয়্যালি গ্রহণ করে নেয়ার জন্য একটি একাডেমি আছে)।

বাংলিসাইজডের ব্যাপারটা ভাল লাগল। জানিনা বাংলা একাডেমির কোন ভুমিকা আছে কিনা এখানে। থাকলে ভাল। যদিও ব্লগোমন্ডলে অপেক্ষাকৃত নতুন, ব্লগের পরিভাষায় নতুনভাবে যোগ হওয়া সৃজনশীল শব্দমালা (বাংলাসাইজড এবং নতুন) মনযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষক করছি। কিছু কিছু তো দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সাঁই এর ছবি

চমৎকার লেখা। এরকম লেখা আরো চাই।

সাঁই

দময়ন্তী এর ছবি

চমত্কার বিষয়৷ পরে সময়করে বিস্তারিত মন্তব্য করব৷ আপাতত কলিম খানের এই লেখার লিঙ্ক দিয়ে যাই৷
হাসি
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্য এবং লিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ। কলিম খানের লেখা অনেকদিন থেকে পড়তে চাচ্ছি, কিন্তু ওয়েবে খোঁজে পাচ্ছিলাম না।

দুর্দান্ত এর ছবি

খুব সুন্দর একটি লেখার লিন্ক দেবার জন্য ধন্যবাদ। অনেকদিন এমন কিছু পড়িনি।

মূলত পাঠক এর ছবি

চমৎকার লাগলো, আমার দিকে ঐ রকম ভয়ানক ইঙ্গিত সত্ত্বেও। দৌড়ের উপর আছি, পরে ডিটেলসে লিখুমনে।

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ঐ রকম ভয়ানক ইঙ্গিত কিন্তু আপানার প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই এসেছে। অন্যভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।

আহির ভৈরব এর ছবি

লেখা, আলোচনা, সবই খুব ভালো লাগলো, খুবই টপিকাল (এর বাংলা কী হবে?) একটা বিতর্ক এটি। আপনার ১১ নম্বর মন্তব্যের সাথে, এবং তারপর হিমু ভাই কাল্ট বিষয়ে যা বলেছেন তার সাথে বিশেষভাবে একমত।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।