পূনরুত্থান

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: শুক্র, ০৫/১১/২০১০ - ৪:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রুলটানা ধবধবে সাদা কাগজে বাংলায় হাতে লেখা অপ্রত্যাশিত এই চিঠিটা; নাকি ‘কল্যাণবরেষু’ - এই সম্বোধনটা আমাকে বেশি অভিভূত করল ঠিক বুঝতে পারলাম না। তবে চমৎকার ঝরঝরে হাতের লেখায় বিশাল এই চিঠিটা অনেকবার পড়লাম, ফিরে গেলাম যেন শৈশবের এবং কৈশোরের সেই দিনগুলোতে।

নাভিদ আহমেদ চৌধুরীর সাথে আমার যোগাযোগটা কিছুটা নাটকীয়ই বলা যায়। শৈশবে কিংবা কৈশোরে জনাব চৌধুরীর নাম শুনেছি – বাবার একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে, কিছুটা রহস্য মেশানো চরিত্র হিসাবে, অথবা খোদ যুক্তরাজ্যের ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হিসাবে। তারপর নাভিদ আহমেদ চৌধুরীটা নামটা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়।

এই বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংককে আর্কিওলজির উপর একটা বই কিনতে গিয়ে লেখক হিসাবে নাভিদ আহমেদ চৌধুরীর নামটা আবার দেখতে পাই। ইন্টারনেটে অনুসন্ধানে চৌধুরীর বেশ কিছু তথ্য পাই, এমনকি cam.ac.uk আইডির একটা ইমেইল ঠিকানাও পাই। দ্বিধা নিয়ে ছোট্ট একটা ইমেইল লিখি নিজের পরিচয় দিয়ে। ইমেইল সিগন্যাচারে দেয়া ফোন নাম্বারে সন্ধ্যায়ই ফোন পাই। কয়দিন প্রতিদিনই তিনি ফোন করলেন। তারপরই এই চমৎকার চিঠিটা।

বিলেতবাসী নাভিদ চৌধুরীর বয়স এখন সাতাত্তর। অনেক দেশ ভ্রমন করলেও ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাড়ার পর আর দেশে ফিরে আসেননি। মৃত্যুর আগে আর আসতেও চান না। এটা কি একধরণের প্রভল্‌ভতা? আর্কিওলজিতে দীর্ঘ দিনের অধ্যাপনা শেষে তিনি এখন অবসর জীবনযাপন করছেন।

কথাবার্তায় কিছু স্ববিরোধিতা আছে বলে মনে হল। বিলেতে বাঙালি কমিউনিটির সাথে তিনি কখনও তেমন একটা যোগাযোগ রাখেননি। ফরাসি এক রমণীকে বিয়ে করেছিলেন, এক মেয়েও আছে, তবে স্ত্রীর সাথে অনেক আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। চার দশক ধরে দেশে আসেননি একটি বারের জন্যও, কিন্তু শৈশব, কৈশোর কিংবা যৌবনে বাংলাদেশের স্মৃতিকে গভীর মমতায় ধরে রেখেছেন। বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিকে কিংবা অর্থনৈতিক ব্যাপারে তাঁর জানার পরিধি দেখে অবাক হলাম।

অবাক হয়ে আমি শৈশবের অনেক শোনা গল্প আবার শোনলাম। ষাটের দশকে চৌকিদার শফি মিয়ার কান বাঘের থাবায় ছিড়ে গেছল যার জন্য সে সবসময় মাফলার ব্যবহার করত, কিংবা অলীপূরের বনবিবির থানে ‘পাহাড় থেকে বের হয়ে থাকা’ যে পাথরটাকে পুজা করা হয়, সেটার আধ্যাত্মিক কোন মূল্য থাক বা না থাক, পাথরটার ‘অরিজিন প্রি-হিস্টরিক’। কিংবা ধরুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিওলজি বিভাগ যখন চালু করা হয় তখন ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অধিনে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলিপ চক্রবর্তীকে আনার জন্য তার প্রচেষ্টা।

সবচেয়ে যে জিনিসটা আমার মনে গভীর রেখাপাত করল তা হল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে তার গভীর শ্রদ্ধা। তবে সব ব্যাপারে কথা বললেও নিজের ব্যাপারটা সবসময়ই এড়িয়ে গেলেন নাভিদ চৌধুরী।

একটা সময় তিনি বেশ দ্বিধা নিয়েই জানালেন বাংলাদেশের কোন ‘চ্যারিটিতে’ কিছু টাকা দিতে চান, আমি যদি কিছুটা সাহায্য করতে পারি তবে তাঁর ভাল লাগবে। অনেকদিন থেকে ধীরে ধীরে তিনি টাকাটা জমিয়েছেন। কিছুটা সঙ্গত কারণে আমি ডিফেন্সিভ হলাম, ব্যাপারটাকে একধরণের ধৃষ্টতা বলেই মনে হল। কিন্তু তাঁর আকুতিও আমাকে স্পর্শ করল। একটা স্পর্শকাতর কথাও বললেন, ‘আমার সমসাময়িক সবাই তো চলে গেল, কতদিন আর বাঁচব বল’?

কোন চ্যারিটিতে টাকা না দিয়ে আমি অন্য দুটা সম্ভাব্য অপশনের কথা বললাম। একটা ট্রাস্ট করা যেতে পারে, অথবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিওলজি বিভাগে কথা বলে দেখা যেতে পারে তাদের কোন সাহায্যে আসা যায় কিনা?

ট্রাস্টের ধারণাটা তাঁর খুব পছন্দ হল। বৃহত্তর সিলেটের তার জন্মস্থান থেকে বেশকিছুটা দূরে উত্তরায়ণ নামের একটা জায়গার জন্য কিছু করতে চান তিনি। ট্রাস্টের জন্য একটা নামও প্রস্তাব করলেন, ‘রোজালিন ট্রাস্ট’, যদিও এই নাম আমার মোটেই পছন্দ হল না। একবার মনে হল তাঁর মেয়ের নাম রোজ়ালিন কি? তবে তাঁর আকুতি যেহেতু আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে, আমি কথা দিলাম সাধ্যের মধ্যে থেকে সাহায্য করব।

পরের সপ্তাহেই শৈশব থেকে আমার বড় হয়ে উঠার সেই স্থানের পরিচিত অশীতিপর এক বৃদ্ধার সাথে দেখা করতে গেলাম। দেখা যাক নাভিদ চৌধুরীর ব্যাপারে কতটুকু জানা যায়। কথায় কথায় একসময় জানতে চাইলাম বাই অ্যানি চান্স ‘রোজ়ালিন’ শব্দটা তাঁর কাছে পরিচিত কিনা। জানতে পারলাম নাভিদ চৌধুরীর শৈশব এবং কৈশোরের গৃহশিক্ষক স্টিফেন হালদারের মেয়ের নাম ছিল রোজালিন হালদার। এও জানলাম যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় রোজালিন এবং তার ভাই ফ্রান্সিস দুজনেই মারা যান। অসুস্থ পিতা স্টিফেন হালদারও সত্তর কিংবা আশির দশকে মারা যান।

এই একঘেয়ে বৈচিত্রহীন জীবনে সম্ভবত যেকোন রটনাই আমাদের আকৃষ্ট করে। রোজালিন হালদার এবং খ্রিষ্টান অধ্যুষিত উত্তরায়ণে নাভিদ চৌধুরীর চ্যারিটি ফান্ডের ইচ্ছার ব্যাপারটায় গল্পের গন্ধ পাই আমি। জানতে পারি উত্তরায়ণে খ্রিষ্টান পরিবার এখন খুব একটা নেই। এটাও জানতে পারি যে সেখানে বসবাসরত ফিলিপের পরিবারের সাথে স্টিফেনদের ঘনিষ্ঠতা ছিল।

উত্তরায়ণে ফিলিপের বাসায় যাই। তিনি বেঁচে নেই, তাঁর অশীতিপর এক বোনের সাথে কথা হয়। যা জানতে পারি তাতে আমার আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়। রোজালিন আসলে বেঁচে আছেন, বেশ অনেকদিন ভারতে ছিলেন। এখন দেশেই অনেক বছর ধরে কোথাও কোন একটা এনজিওতে কাজ করছেন। আরও কয়জনের সাথেও কথা বললাম। কথা বললাম বংশপরম্পরায় ডাকহরকরার কাজ করা বশির উদ্দিনের পরিবারের সাথে।

রংচংগুলো এবং অপ্রাসঙ্গিক প্রচুর তথ্য বাদ দিয়ে যে চিত্রটা দাঁড়া করানো গেল তা মোটামোটি এরকম –

নাভিদ চৌধুরী এক প্রভাবশালী এবং সম্পদশালী পরিবারের একমাত্র সন্তান, ষাটের দশকে দিল্লী এবং ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিওলজিতে পড়াশোনা করেছেন। আরোপিত আভিজাত্যের গোলকধাঁধা পার হয়ে তিনি সাধারন মানুষের সাথে মিশতে পেরেছিলেন এবং খেলাধুলায় ভীষন আগ্রহী ছিলেন। ষাটের দশকের শেষভাগে তিনি শৈশবের সর্বসময়ের গৃহ শিক্ষক স্টিফেন হালদারের মেয়ের সাথে প্রণয়ে জড়িয়ে পরেন, যা পরিবার কখনও মেনে নিতে পারেনি। (বনবিবির পীঠে গিয়ে পাথর ছোঁয়ে বিয়েও করেছিলেন এমন কথাও শুনলাম।) পেশা বেছে নেয়ার ব্যাপারেও পিতার সাথে তার ভুল বোঝাবোঝির সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সম্ভবত পিতার সাথে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে তাঁর পিতা শফি আহমেদ চৌধুরীর ভুমিকা বেশ বিতর্কিত ছিল। নাভিদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে ভুমিকা রাখেন এবং একসময় দেশে ফিরে এক নম্বর সেক্টারে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।

শফি আহমেদ চৌধুরী একসময় সরাসরি পাক-বাহিনীকে সাহায্য করেন। পাক-বাহিনীর হাতে স্টিফেন হালদারের ছেলে ফ্রান্সিসের মৃত্যু এবং রোজালিনকে অপহরণের সাথে শফি আহমেদ চৌধুরীর সরাসরি হাত আছে বলে ধারণা করা হয়। ৭১ সালের ডিসেম্বরের দিকে রোজালিন ফিরে এলেও শফি আহমেদ চৌধুরী তার পিতা স্টিফেনকে বাধ্য করেন রোজালিনকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে এবং তার মৃত্যুর খবর প্রচার করতে।

মুক্তিযুদ্ধের পরপর চৌধুরী পরিবারে ঠিক কী হয়েছিল জানা যায় না। তবে ১৯৭৩ এর দিকে নাভেদ আহমেদ চৌধুরী শেষবারের মত দেশ ছেড়ে যান, এবং পিতামাতার সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখেননি। ধারণা করা হয় রোজালিনের অপহরণে পিতার সম্ভাব্য ভূমিকার ব্যাপারটা নাভিদ চৌধুরী হয়ত আঁচ করতে পারেন। ৭৬ সালের পরে শফি আহমেদ চৌধূরী আবার প্রভাবশালী হয়ে উঠেন এবং সরকারের প্রভাব বলয়ের খুব কাছাকাছি চলে আসেন। রোজালিন যাতে নাভিদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করতে না পারে সে জন্য রোজালিনেরও খোঁজ করেন, কিন্তু খোঁজ পেতে ব্যার্থ হন। তখন তিনি নাভিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বিলেত প্রবাসী সিলেটিদের সাহায্যও নেন, কিন্তু ব্যার্থ হন। এমনকি বিলেতে তখনকার হাই কমিশনার জনাব আবুল ফাতেহ্‌ নিজে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।

প্রচুর সম্পদের একমাত্র উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও নাভিদ চৌধুরী কখনও পিতা কিংবা পরিচিত কারও সাথে যোগাযোগ রাখেন নি, কিংবা দেশেও ফিরে আসেননি। বৃদ্ধ বয়সে শফি চৌধুরী নাভিদের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যাকুল হয়ে উঠেন কিন্তু কখনই যোগাযোগ করতে পারেন নাই। একটা ব্যাপার সবাই বলল, নাভিদ আহমেদ চৌধুরী নাকি আশির দশকের প্রথমদিকে গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছেন।

এও জানতে পারি যে আশির দশকের শুরুতে শফি আহমেদ চৌধুরী বিলেত থেকে একটা চিঠি পান এবং তারপরই তিনি খুব অস্থির হয়ে উঠেন। তখন একবার বিলেতেও গেছেন। তারপরই নাভিদ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়। শফি আহমেদ চৌধুরী আশির দশকের শেষদিকে মারা যান।

ধর্মের প্রেক্ষিতটাও বুঝতে চেষ্টা করি। পারিবারিক ভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে রোজালিন খুব ধার্মিক ছিলেন। অপরদিকে নাভিদ আহমেদ চৌধুরী ধর্মের ধারকাছ দিয়েও যেতেন না। আরও জানলাম রোজালিন হালদারের পিতামহ পর্তুগীজ ছিলেন, যার ধারাবাহিকতায়ই হয়ত, রোজ়ালিন হালদার ভীষণ সুন্দরী ছিলেন।

আমি ভাবতে থাকি রোজালিন হালদারের খোঁজ কোথায় পাওয়া যায়? খোঁজ করতে গিয়ে শুনলাম হীডে শৈশবের পরিচিত একজনের আছেন, যিনি একসময়ে সান্তাল মিশন নরওয়েজিয়ান বোর্ডের সাথে জড়িত ছিলেন এবং খ্রিস্টান কমিউনিটিতে খুব সুপরিচিত। তাঁর কাছে অনুরোধ করায় তিনি ঢাকায় অনেক যোগাযোগ করে রোজালিন হালদারের খবর বের করলেন। রামুর এক পার্বত্য এলাকায় একটা মিশনারী স্কুল কাম অর্ফ্যানেজে বহু বছর থেকে অবিবাহিত রোজালিন একরকমের নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।

এই এক সপ্তাহে নাভিদ চৌধুরীর কোন ফোন আসল না। ঢাকায় আরকেটা এনজিওর পরিচিত লোকজন ধরে রামুর সেই এনজিওর একটা ‘কানেকশান’ পাওয়া গেল। তারপর কক্সবাজার হয়ে রামুর সেই এনজিও তে গেলাম।

শেষ অক্টোবরের রোদঝলমলে সকালে মোটা ফ্রেমের চশমা পরা ধবধবে সাদা চুলের শীর্ণকায়া রোজালিনকে দেখে মুগ্ধ হলাম। বৃদ্ধাকে দেখেই শ্রদ্ধার ভাব জাগে। হাসিমুখে যখন অভ্যর্থনা করলেন তখন ছোটবেলায় বানান করে পড়তে শেখার বয়সে একটা স্পোর্টস ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে লেখা লাইনটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো – ‘স্মাইল অভ অ্যা কন্টেটেড ওম্যান’। সারাটা দিন প্রকৃতি, অসম্ভব সুখী কিছু মানুষ, এবং মা-বাবা হারিয়ে যাওয়া, কিন্তু ঢাকার বাচ্চাদের মত শৈশব হারিয়ে না যাওয়া একঝাক উচ্ছল শিশুর সাথে কাটিয়ে ভীষণ ভাল লাগছিল। অতীতে যাই থাকুক, রোজালিন হালদারকে আমার ভীষণ সুখী একজন মানুষ বলে মনে হল। চার দশক আগে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি কিছুতেই ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। কিন্তু ঔৎসুক্যের কাছে হার মানল আমার সকল দ্বিধা।

নাভিদ আহমেদ চোধুরীর নাম শোনার পর বৃদ্ধার মুখের কিংবা মোটা গ্লাসের ভিতর তাঁর চোখের অভিব্যক্তি বুঝতে ব্যার্থ হলাম। শুধু তিনি দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলেন এবং কিছুটা বিড়বিড় করেই বললেন, ‘তিনি এখনও বেঁচে আছেন’। ব্যাস, রোজালিন হালদারের কাছ থেকে আর কিছু জানা গেল না।

একবার ভীষণ অপরাধী মনে হল নিজেকে। রোজালিনের এই আনন্দভবনে অতীতের অসহনীয় স্মৃতি ফিরিয়ে আনার আদৌ কি কোন দরকার ছিল।

একটা ব্যাপার নিশ্চিত হলাম, বাংলাদেশর সাথে নাভিদ চৌধুরীর সম্পর্ক ছেদ করার সাথে তাঁর গভীর কোন অভিমানের ব্যাপার জড়িত। অনেকগুলি ব্যাখ্যা দাঁড়া করালাম। তবে এও জানি জীবন আমার চিন্তাভাবনার মত সরলরৈখিক না।

বুধবারে ঢাকায় ফিরে এসে ভোর চারটা পর্যন্ত অনেকদিন পর কাগজ কলম দিয়ে বিশাল একটা চিঠি লিখলাম নাভিদ চৌধুরীর কাছে। অনেক বিশ্লেষণ, অনেক খবর, এবং সবশেষে তার টাকাটা কিভাবে সবচেয়ে ভালভাবে খরচ করা যায় সেটা নিয়ে আমার মতামত।

রবিবারে অফিসে যোগদিয়ে ভীষণ ব্যস্ত একটা দিন কাটালাম। চিঠিটা অফিসে দিয়ে বললাম আজ সন্ধ্যায় যেন ডিএইচএলে যুক্তরাজ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। অফিস থেকে ফিরব তখনই +৪৪ নাম্বারের ফোনটা এল। নাভিদ আহমেদের কন্ঠ শোনার প্রত্যাশা নিয়ে ফোনটা ধরলাম। কথা বলল তাঁর মেয়ে – ইংরেজীতে। প্রাথমিক কুশলাদির পর খবরটা দিল। বড়সর একটা স্ট্রোকের পর নাভিদ আহমেদ চৌধুরী গত একসপ্তাহ ধরে ‘কোমাতে’ ছিল, গত রাতে মারা গেছেন। ‘হি স্পোক অ্য লট অ্যবাউট ইউ লেটলি, একচুয়্যালি হি স্পোক ভেরি হাই অভ ইউ’। তিনি একটা চ্যারিটিতে কিছু টাকা দেয়ার কথা বলেছিলেন। আমরা আপনার মাধ্যমে টাকাটা দিতে চাচ্ছি।

আমি বেশ নির্লিপ্ত ভবেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম। বললাম টাকাটা তোমরা না হয় ডিএফআইডির মাধ্যমে দিয়ে দিও।

ফিরে এসে চিঠিটা চেয়ে নিয়ে স্র্যাডারে দিয়ে কুচিকুচি করলাম। এটার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। হারিয়ে যাক নাভিদ আহমেদ চৌধুরী আবার বিস্মৃতির অতলে।


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

এটা গল্প নাকি সত্যি ঘটনা? একটা কথা বরাবরই স্বীকার করি যে আপনার লেখার হাত অতি চমৎকার।

আপনার গল্পগুলো পড়তে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি। বাস্তব আর কল্পনার পার্থক্য করতে পারি না। যেমন এ লেখাটা পড়তে গিয়ে একবার মনে হচ্ছে গল্প আবার মনে হচ্ছে সত্য ঘটনা।

চলুক


কাকস্য পরিবেদনা

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

এটা গল্পই - তবে চরিত্র তৈরীতে সত্য ঘটনার ছায়া পড়েছে হয়ত কিছু কিছু স্থানে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বেশ।

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

দুর্দান্ত এর ছবি

কল্পনার চাইতেও সত্য অনেকবেশী চমতকার।
আচ্ছা, নাভিদ সাহেবের দানটি কি রোজালিনের স্কুলের কোন কাজে আসতে পারে?

নৈষাদ এর ছবি

পরস্পর সম্পর্ক নেই এমন কিছু বাস্তব ঘটনা এবং চরিত্রের ভিত্তিতে এটা একটা কল্পকাহিনীই বস। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল রামুতে এমন একটা মিশনারী স্কুল কাম অ্যর্ফেনেজে অক্টোবরের এক রাত এবং দিন কাটিয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।

ধন্যবাদ রইল আপনার মন্তব্যের জন্য।

দুর্দান্ত এর ছবি

তাই বলেন।

...অসমাপ্ত [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার লেখেন আপনি। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটানে পড়ার আগ্রহটুকু বজায় থাকে।
পড়া শেষ করে আবার ট্যাগ দেখে বুঝলাম সম্ভবত গল্প না।

পাচ নম্বর প্যারায়.... "চার শতক ধরে দেশে আসেননি একটি বারের জন্যও,"

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

এটা আসলে গল্পই। শতক আর দশক নিয়ে গোলমাল করে ফেলেছি, ঠিক করে দিলাম।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

সাংঘাতিক! এইরকম লেখা অনেকদিন পরে পড়লাম। কম লিখেন ভালো, তাও এইরকম কিসু লিখেন। শিখি। দিলিপ চক্রবর্তীর ভারতবর্ষের প্রত্নতাত্তিক ইতিহাস নামে একটা বই সম্ভবত পড়সিলাম। সত্য/মিথ্যা/কল্পনা যাচাইয়ে যাইতে চাই না। নাভিদ চৌধুরী আছেন। যেরকম নভেরা বা শহীদ কাদরি ...


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নৈষাদ এর ছবি

সাংঘাতিক মন্তব্য। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অনিন্দ্য।

দিলিপ চক্রবর্তীও বারো বছর বয়সে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন এবং সেই স্মৃতিও তিনি গভীর মমতায় লালন করেন। তবে ডঃ চক্রবর্তীর সাথে এই লেখার একেবারেই কোন সম্পর্ক নেই।

তাসনীম এর ছবি

দারুণ...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

অদ্রোহ এর ছবি

এই ধরনের লেখা আমার একধরনের শ্রদ্ধা মেশানো শিহরণের অনুভূতি হয়।

একটা ছোট্ট প্রশ্ন, নাভিদ আহমেদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু তার বাবা শফি চৌধুরীর ভূমিকা কেমন ছিল সেটা কি কেউ খোলাসা করতে পারেন?

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ অদ্রোহ। শফি চৌধুরীর ভূমিকা তো কিছুটা বলা আছে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ভালো লাগলো!

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

দ্রোহীদার মতই লেখাটা পড়তে গিয়ে একবার মনে হচ্ছিলো গল্প আবার মনে হচ্ছে সত্য ঘটনা। এক কথায় অনবদ্য।


love the life you live. live the life you love.

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

রজত এর ছবি

লেখাটা অনেক ভাল লাগলো ।

আপনার প্রতি শুভ কামনা .................আরো লিখুন ।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বস্‌, এটা গল্প হয়ে থাকলে একে গল্প হিসাবেই ট্যাগ করুন। তবে তাতেও বাস্তবের টাচটা বুঝতে পাঠকের অসুবিধা হবেনা। আপনি ন'মাসে-ছ'মাসে যা ডেলিভারি দেন তাতে স্তব্ধ হয়ে থাকতে হয়। আপনার এমন লেখাগুলোর একটা ছাপানো সঙ্কলনের জন্য ইটা রাইখ্যা গেলাম... রেখে গেলাম।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ বস। দেখা হবে আশাকরি।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

আপনার গল্পগুলো এমনই- পড়ে খানিকক্ষণ 'তব্দা' খেয়ে বসে থাকি! চলুক
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ সিমন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

গল্প লেখার গুণ থাকে অনেকের মাঝেই, কিন্তু গল্প বলিয়ে সবাই হতে পারেন না। আপনাকে আমার একজন গল্প লেখিয়ের চেয়ে একজন গল্প বলিয়ে হিসেবেই মনে হয়। আমি নিজে গল্প লেখিয়েদের চেয়ে গল্প বলিয়েদের খুব ভক্ত। এবং এই স্বভাবজাত কারণেই আপনারও ভক্ত। ভেতরে লালিত একটা গোপন ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করি এইবেলা। আপনার সাথে দেখা হলে পরে সিলেটের কোনো এক দূরবর্তী চা বাগানের বাংলোর বাইরে বসে, রাতের বেলা আপনার কাছে এমন আরও অনেক গল্প শোনার ইচ্ছা পোষণ করি। ওটা হবে, 'নৈষাদ, দ্য স্টোরি টেলার নাইট।'



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 'আড্ডার' প্রত্যাশায় রইলাম।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বাহ। গল্পটা প্রথমে কীভাবে যেন চোখ এড়িয়ে গেছিলো- তাই দেরীতে পড়া হলো।

গল্প সংকলনের অপেক্ষায় থাকলাম ভবিষ্যতে।

_________________________________________

সেরিওজা

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সুহান। দেখা হবে আশাকরি।

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্য দুবার আসাতে মুছে দেয় হল।

রানা মেহের এর ছবি

নাভিদ আহমেদ এর চরিত্র একটু বেশি নাটকীয় মনে হওয়ায়
গল্প ভালো লাগলো না
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নৈষাদ এর ছবি

আন্ডারস্টুড। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মুগ্ধ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।