ত্রিপুরার বামপন্থী রাজ্য সরকার, দেশের এনজিও, সরকারের দায় এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ (প্রথম পর্ব)

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: রবি, ১৩/১১/২০১১ - ২:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঈদের সপ্তাহটা কাটানোর পরিকল্পনায় ষষ্ঠ পাণ্ডবের পুরানো এক ফেসবুক-স্ট্যাটাসের ভুমিকা অনস্বীকার্য। ইচ্ছা ছিল অন্তত একটা সপ্তাহ ফোন এবং ইন্টারনেটের সংস্পর্শ ছাড়া থাকব।

তবে ফোন এবং ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে কতটা প্রভাবিত করেছে তা দ্রুতই বোঝা গেল। সন্ধ্যায় ইন্টারনেটে বসা কিংবা ফোনের সুইচ অন করে মিস-কল-এলার্ট দেখে কে কে ফোন করেছিল দেখাটা প্রচন্ড নেশার মতই মনে হল, একেবারে উইথড্রয়াল সিম্পটম সহ। শেষ পর্যন্ত ইন্টারনেটের নেশার কাছেই কিছুটা আত্মসমার্পন করলাম।

ত্রিপুরায় বসে দেশে ‘জাগোর’ কর্মসূচী নিয়ে বিতর্ক মনোযোগ দিয়ে দেখলাম, এনজিওর উপর স্পর্শের একটা ফেসবুক থ্রেডেও কৌতুহলি হলাম। এনজিও নিয়ে কিছু লিখব, তবে কিছুটা প্রাসঙ্গিক হিসাবে ত্রিপুরার বামপন্থী সরকারের ব্যাপারে কিছু আলোচনাও থাকেব।

বর্তমানে ত্রিপুরা ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে বামপন্থী সরকার ক্ষমতায়। আমি যার আতিথ্যে, ষাটোর্ধ সেই ভদ্রলোক সারা জীবন শিক্ষা এবং বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। অবসর জীবনে আরও বেশি সক্রিয়; সরকার মনোনিত এবং নিজস্ব উদ্যোগে চারটি বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। আত্মীয়তা বাদ দিলেও, আতিথ্যকর্তার যাপিত জীবন এবং চিন্তাভাবনা তাঁকে ভীষণ এক শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে দিয়েছে।

ত্রিপুরার বামপন্থী রাজ্য সরকার

‘শুধু খাওয়া-দাওয়া আর ঘুম’ এরকম ইচ্ছে থাকলেও একসময় আমি আমার নিওলিবারেলিজমের প্যানাসিআ নিয়ে আতিথ্যকর্তার মুখোমুখি হই। বামপন্থী রাজ্য সরকারের কর্মকান্ডের প্রতি তাঁর কনভিকশন আমাকে মুগ্ধ করে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র কিংবা অবোধ্য তত্ত্বের ধোঁয়াসার বদলে এই প্রথম মুখোমুখি হই শক্ত তথ্য, পরিকল্পনা এবং দর্শণযোগ্য বাস্তবায়ন এবং প্রমানের। এই স্বল্প সময়ে দেখা ত্রিপুরার বামপন্থী সরকারের কর্মকান্ডের কিছু ব্যাপার আমাকে বলা যায় মুগ্ধ করেছে। গুরুত্বের উলটো ক্রমানূসারে কয়টা ব্যাপারে আলোচনা করব। বলে রাখি এগুলি এনজিওর আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট।

প্রথমত, রাজ্যের যোগাযোগ অবকাঠামোর দর্শণীয় উন্নয়ন। দেখলাম রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামেও পিচ-ঢালা সড়ক চলে গেছে। আন্তঃজেলা কিংবা আন্তঃমহকুমা সড়কগুলি যথেষ্ট মসৃন এবং উন্নত। নতুন কিছু বাইপাস সড়কও হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার জনবহুল দেশগুলোর সড়কের তুলনায় যথেষ্ট ফরওয়ার্ড লুকিং, কারণ কিছু কিছু সড়ক তুলনামুলক ভাবে এখনও যথেষ্ট জনবহুল বলে মনে হয়নি। আমি আন্তঃজিলা/মহকুমা সড়কগুলিতে মোটামোটি দুই ঘন্টায় ৯০/১০০ কিলোমিটার যেতে পেরেছি।

কেউ অবশ্য যুক্তি দেখাতে পারে যে ভারতে যেখান প্রতিমাসে ১৮০,০০০ ইউনিটের মত গাড়ি বিক্রী হয় এবং ভারতীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিশ্বের অনেক বড় গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট-ভেঞ্চারে গাড়ি তৈরীর প্ল্যান্ট তৈরী করছে, সেখানে সড়ক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রিয় সরকারের প্রতি এসব করপোরেটের প্রচ্ছন্ন চাপ থাকতে পারে। তবে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত মনে হয় গন-পরিবহনের উন্নয়ন পরিকল্পনায়। গত ২/১ বছরের রাজ্যের রাজধানী আগরতলা পর্যন্ত রেলওয়ে চলে এসেছে। এখন রাজধানীর আরও দক্ষিণে ৯০ কিলোমিটার দূরের বিলোনিয়া হয়ে ১৬৫ কিলোমিটার দূরের সাব্রুম পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপের ব্যাপারটা। রাজ্যের সবাইকে ন্যূনতম ক্লাস এইট পর্যন্ত শিক্ষাদানের সাফল্য খুব বেশি। রাজ্যে মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক এবং স্নাতক পর্যায়ে বিনা বেতনের শিক্ষা সহ অন্যান্য প্রণোদনার ব্যবস্থা আছে। মানসিক/শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থা/নিবিড় পর্যবেক্ষণ। ব্লক রিসোর্স সেন্টারের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সব শিশুরা যাতে বিদ্যালয়ে যায় সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ড্রপ-আউট রেট ৪০% থেকে সর্বোচ্চ ৩% নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দ্রুতই শূন্যে নেয়া আশা প্রকাশ করা হয়েছে। (ভারতে Education Guarantee Act বলে আইন এবং তার অধিনে রুলস আছে, ব্যাপারটা পরে জানতে হবে।)

তৃতীয়ত দারিদ্র দূরীকরণ। কেন্দ্রিয় সরকারের ‘এন-এম-রেগা’ প্রকল্পের (ন্যূনতম ১০০ দিনের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা) অধিনে সফল ভাবে রাজ্যে দারিদ্র দূরীকরণের কাজ করা হয়েছে। আমি আমার আতিথ্যকর্তার কে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম এই বলে যে এটা তো কেন্দ্রিয় সরকারের প্রকল্প, রাজ্য সরকারের সাফল্য কোথায়। তিনি দুই স্তরে এটার জবাব দিয়েছেন। প্রথমত গ্রামে এর সফল প্রয়োগ (প্রকল্প থাকলেই তো আর দারিদ্র দূরীকরণ সম্ভব নয়!)। তিনি আমায় চ্যালেঞ্জ করেন পারলে কোন ভিক্ষুক দেখাতে। দ্বিতীয়ত, এই প্রকল্প গ্রামীণ, কিন্তু রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলাতে এর সফল প্রয়োগ করা হয়েছে (TUEP নামে)। তিনি এও নিশ্চিত করেন যে আগরতলা শহরে কোন ভিক্ষুক নেই। অবশ্য ব্যাপারটা বিস্তারিত যাচাই করার সুযোগ হয়নি আমার।

আরও কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কল্যাণ রাস্ট্রের আদলে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিংবা স্বাস্থ্য খাত এবং পরিসেবা। এটা নিয়ে পরে আলোচনা করব। উপরের সব কিছুই পুরোপুরি সরকারের দ্বারা বাস্তবায়িত।

অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বিরোধি দলের চোখে বামপন্থী সরকারের সমালোচনাটা দেখে নেই। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ থাকবে লেখার শেষে।
বামপন্থী সরকারের আরেকটা সাফল্য হল রাষ্ট্রে ধর্মাশ্রয়ী দল বিজেপির ফুটপ্রিন্ট নাই বললেই চলে, যদিও লোকজন যথেষ্ট ধার্মিক। বিরোধি দল বলতে কংগ্রেস।

১০ নভেম্বরে দুপুরে আমি বিলোনিয়া থেকে উদয়পুর হয়ে আগরতলায় আসি। সেই দুপুরেই রাহুল গান্ধী উদয়পুরে ‘বিরাট জনসভায়’ ভাষণ দিয়েছেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে রাহুল গান্ধীর এই সফর আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম, ‘ইয়োথ আইকন’ এবং ভারতের সম্ভাব্য ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রাহুল গান্ধী এরই মধ্যে বেশ শক্তিশালী একটা ইমেজ তৈরী করে নিয়েছেন। সুতরাং তিনি বামপন্থী রাজ্য সরকারের দূর্বলতা কীভাবে দেখেন জানার কৌতুহল ছিল। যার ফলে ১১ নভেম্বরের বাম-বিরোধী পত্রিকাগুলি ভাল করে পড়লাম।

রাহুলের ভাষণের মূল ফোকাস ছিল গরীব জনগনের উন্নয়ন। তবে তিনি বামপন্থী সরকারের যে সমালোচনাটুকু করলেন সেটা আমার কাছে কনভিন্সিং মনে হয়নি। সংক্ষেপে তিনি যা বলেছেন সেগুলি হল,’কমিউনিস্ট সরকার গরীবের কথা ভুলে গিয়েছে’, ‘এখন এরা বড় বড় বাড়ি বানায়/ক্যাডারদের টাকা দেয়’,’পরিকাঠামোর কাজ কিছুই করেনি’। ক্যাডারদের টাকা দেয়ার ব্যাপারটা জানিনা, তবে বাকিগুলির যে ভিত্তি নেই সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তবে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বামের কী চ্যালেঞ্জ আছে, তার একটা নিজেস্ব বিশ্লেষণ আছে, পরে আলোচনা করব।

তবে রাহুল গান্ধী বাম নিয়ে আরেকটা কথা বলেছেন, পত্রিকা থেকে সরাসরি তুলে দিলাম ‘‘রাহুল কমিউনিস্ট ইতিহাস এবং বর্তমান তুলে ধরে বলেন রুশ দিয়ে শুরু হয়েছিল। সেখানে শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি চীনে গিয়েছিলাম। চীনের কমিউনিস্ট জানতে চায় – হিন্দুস্থান কমিউনিস্টদের কী হল। আমরা তো বদলে গিয়েছি। কিন্তু ওরা এখনও ১৯৫০ সালে আটকে আছে। এদের বের করুন’।

দেশের এনজিও

প্রসঙ্গ পাল্টে এখন দেশের এনজিও নিয়ে একটু আলোচনা করি। আবার ফিরে আসব ত্রিপুরার রাজ্য সরকারে। ‘জাগোর’ কর্মসূচী নিয়ে লেখালেখির পর এক সহসচল প্রশ্ন রেখেছেন, ‘গ্রামে দেখেছি, মোল্লারা এনজিওর তীব্র বিপক্ষে। শহরে শিক্ষিত-সচেতন যাদের সাথে কথা হয়েছে তারাও। তাহলে এই বস্তুটার পক্ষে কী কী যুক্তি আছে?’

আমি আমার নিজেস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু জিনিস বিশ্লেষণ করব। প্রথমত আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা করি।

আয়-ব্যয়

ছাত্র থাকাকালীণ সময় থেকেই আমি একটা বিদেশী এনজিওর সাথে জড়িত ছিলাম। ব্যবস্থাপনার উচ্চপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে এবং ইন্টারন্যাল কন্ট্রোল/অডিটের দায়িত্বে থাকায় সুবাদে সেই এনজিওর কার্যকলাপ (আর্থিক ব্যবস্থাপনা সহ) নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ হয়েছিল। ৭/৮ বছর আগের সেই এনজিওর অভিজ্ঞতার আলোকে এবং পরবর্তীতে কমার্শিয়্যাল সেক্টেরের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি বিদেশি এনজিওর আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা খুবই উচ্চ পর্যায়ের। এর ‘মালিক’ বলে কোন কনসেপ্ট নেই এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সাধারনত ‘কান্ট্রি-ডাইরেক্টর’) হিসাবে প্রফেশন্যালরা আসেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। ফান্ডের স্বচ্ছতা ডোনার এবং সংশ্লিষ্ট এনজিওর হেড-কোয়ার্টার দ্বারা কয়েকটা লেভেলে নিশ্চিত করা হয়। যে কাজে টাকাটা ব্যয় হচ্ছে সেটার আউটপুট কী সে বিষয়ে প্রশ্ন করা যায়, তবে ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন করা কঠিন।

নব্বইএর দশকের মধ্য/শেষদিক থেকে বিদেশী এনজিওরা ‘সরাসরি বাস্তবায়নের (ডাইরেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন)’ বদলে ‘পার্টনারের মাধ্যমে বাস্তবায়নের (ইমপ্লিমেন্টেশ থ্রো পার্টনার)’ ধারণার দিকে ঝোঁকে পরে। এর মূল কথা হল ‘স্থানীয় এনজিওর’ মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন। অনেক স্থানীয় এনজিও গড়ে উঠল এবং এর সাথে এনজিওর ‘মালিক কাম নির্বাহী’ ধারণাটা গড়ে উঠল। এর একটা অংশ নিশ্চিতভাবেই ‘মুনাফার’ লোভে গড়ে উঠা এনজিও। প্রাক্তন সহকর্মীদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে ফ্রাস্ট্রেশনের কথা শুনেছি – স্থানীয় এনজিওর টাকা ‘নয়ছয়’ করার চেষ্টার।

এর মধ্যে স্থানীয় এনজিগুলোতে ‘ক্ষুদ্রঋণ’ প্রকল্প ‘মহামারী’ আকার ধারন করল। এই ক্ষুদ্রঋণের কোন কেন্দ্রিয় কন্ট্রোল কিংবা গাইডলাইন ছিল না, যে যার মত করে বাস্তবায়ন করা শুরু করল। কনভেনশন্যাল বাংকিংএ যে ঋণ দেয়া হয় তার একটা কস্ট অভ ফান্ড থাকে (সঞ্চয় এবং আমানতের উপর প্রদত্ত সুদ), সাধারনত ‘ক্ষুদ্রঋণের’ কস্ট অভ ফান্ড থাকে না (এইড)। নিবিড় তত্ত্ববধায়নের অভাবে সেখান থেকে অস্বচ্ছ মুনাফার সুযোগ গড়ে উঠল।

যদিও বিদেশী ফান্ড যে সব এনজিও গ্রহণ করে তাদের সরকারের এনজিও ব্যুরোর রেজিষ্ট্রেশন এবং রিপোর্টিং এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কিন্তু কিছু কিছু ফান্ড ‘অস্বচ্ছ’ কাজে ব্যয় হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক-ব্যবস্থাপনার এই অস্বচ্ছতা এবং প্রফিট-ওরিয়েন্টেশন শিক্ষিত শ্রেণীর কাছে এনজিওর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

অন্তর্কলহ এবং রাজনৈতিক অভিলাষ

এনজিওদের একটা অ্যাসোসিয়েশন ছিল/আছে, নাম অ্যাসোসিয়েশন অভ ডেভলাপমেন্ট এজেন্সিস ইন বাংলাদেশ (‘এডাব’) একসময় দেখা গেল নিজেদের মধ্যে অন্তর্কলহ শুরু হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ফেডারেশন অভ এনজিওস ইন বাংলাদেশ (‘এফএনবি’) নামে নতুন আরেকটা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। একসময় এই দুই প্রতিষ্ঠানের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার গুজব ছিল। এই দুইয়ের মধ্যে কে এনজিওদের ‘অথেনটিক রিপ্রেজেন্টেটিভ’ সেটা নিয়েও একসময় টানাপোড়েন চলেছে। এখন কী অবস্থা জানিনা।

এনজিওর বড় কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক অভিলাষও একসময় দেখা গেছে। রাজনীতি করার অধিকার সকলেরই আছে, কিন্তু প্রশ্ন উঠে যখন নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে এনজিওর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ব্যবহার করা হয়।

তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এনজিও কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক ইতিহাস বেশ করূণ। শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে প্রশিকার কাজী ফারুকের উদাহরণ দেয়া যায়, যিনি গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমানত হারিয়েছেন। ডঃ ইউনূসও একবার রাজনীতির আগুনে হাত পুড়িয়েছেন। এই ব্যাপারগুলোও গ্রহণযোগ্যতাকে নিম্নগামী করেছে বলে আমার ধারণা।

(চলবে)


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

পরের পর্বগুলো পড়তে চাই, শীঘ্রই!

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। লিখব আশাকরি।

তাপস শর্মা এর ছবি

নৈষাদ ভাই ত্রিপুরাতে এলেন আর একবার আওয়াজ দিলেন না মন খারাপ

যাকগে। লেখাটা খুবই ভালো লেগেছে। যদিও এখনও কিছু বলতে চাই না। লেখা চলুক, বলব নিশ্চয়ই। তবে এতটুকু বলতে পারি সাদা চোখে দেখা সব কিছুই সাদা হয়না।

ভালো থাকবেন। আপনাকে অসংখ্য শুভেচ্ছা।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
ঐ যে বললাম, নিঃশব্দে যোগাযোগহীন অবস্থায় কয়টা দিন কাটাতে চাইছিলাম। এমনকী ফোনও বন্ধ রেখেছি। ভাবিষ্যতে নিশ্চয়ই দেখা হবে।
পুরো সাদা চোখে অবশ্য দেখিনি। আমি শুধু রাহুল গান্ধীর সমালোচনাটা দিয়েছি, আমারটা এখনও বাকী। তবে যেমনটা বলেছি, কিছু ব্যাপার আমাকে মুগ্ধ করেছে।

তাপস শর্মা এর ছবি

তা অবশ্য ঠিক, কিছু জিনিষ এখানে আছে যা উন্নত দেশ গুলির পরিকাঠামোর চেয়েও ভালো। কিন্তু অনেক 'কিন্তু'ও আছে। যাই হোক আপনি নিজের অভিজ্ঞতা অবশ্যই লিখবেন জানি।

আর আরেকবার এই রকম কাম করলে ভালা অইত না কইয়া দিলাম। চুপচাপ আইবেন আর জাইবেন গা , এইডা কিন্তু মাইনা নিতাম না । বুঝছেন, আরেকবার আইবার আগেই একটা আওয়াজ লাগাইবেন, নইলে খবর আছে দেঁতো হাসি

কল্যাণF এর ছবি

নৈষাদ ভাই আপনার লেখা পড়ে মনে হল ত্রিপুরা রাজ্য সরকার সফল এবং সরকারি কর্মকান্ডে ত্রিপুরাবাসী সন্তুষ্ট। নাকি আমারি ভুল (মাথা চুল্কানি ইমো)? আপনি অবশ্য লেখার মাঝে বলেছেন আপনার পর্যবেক্ষণ থাকবে লেখার শেষে। যাই হোক পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

নৈষাদ এর ছবি

'সন্তুষ্ট'... একটা অংশ। বামের চ্যালেঞ্জটা টেক-স্যাভি 'ইয়াং জেনারেশনকে' নিয়ে।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আগরতলা গেছিলাম একবার। তেমন কিছু খেয়াল করতে পারি নাই, একটা জিনিস ছাড়া। ঐখানের মানুষজন খুব ভালো। আন্তরিক। লেখা ফলো করতেছি হাসি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নৈষাদ এর ছবি

আশাকরি সবকিছু ভাল ভাবে চলছে আপনার। দেশে আলোচনা মিস করি। ভাল থাকুন।

দময়ন্তী এর ছবি

সাগ্রহে নজর রাখব৷ আপনার এই পর্বটা দেখে মনে হচ্ছে অন্তত পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে ওখানের বাম সরকার অনেকটাই আলাদা৷ পশ্চিমবঙ্গে এনরেগা'র ব্যর্থতা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের একটু ভেতর দিকে গেলেই রাস্তার অবস্থা পুরো দু:স্বপ্ন৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নৈষাদ এর ছবি

পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকারের ব্যাপারে তেমন কিছু জানিনা। (ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল বেশ অনেকবারই পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া হয়েছে। এটাই নিওলিবারেলিজমের শক্তি মনে হয়... চোখ টিপি রাজনীতি ছাড়াও সময় কাটানোর অনেক ‘ইন্টারেস্টিং’ বিষয় আছে।)। পার্টি-সংশ্লিষ্টতা ইত্যাদি অভিযোগ থাকলেও আপাত আমার মনে হয়েছে এনরেগার বেশ ভাল প্রয়োগ হয়েছে।

হিমু এর ছবি

চলুক।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

দারুণ কৌতূহল অনুভব করছি। যদিও ত্রিপুরা প্রসঙ্গের সাথে এনজিও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সম্পর্ক ধরতে পারলামনা। অনুমান করে নিচ্ছি সম্পর্ক আছে, যা ক্রমশ: প্রকাশ্য। শিঘ্রই লেখা চাই।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ। সম্পর্কটা আসলে কিছু 'বেসিক' বিষয়ে সরকারের দায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। যেগুলির ব্যার্থতায় এনজিওকে এগিয়ে আসতে হয়।

রু (অতিথি) এর ছবি

আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আগরতলায় একবার গেছিলাম, ১৩/১৪ বছর আগে... নিশ্চয়ই সব পাল্টে গেছে হাসি
তখন বেশ ভালো লেগেছিলো...

লেখা আলোচনা ভালো লাগছে, চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ। আগরতলায় মাত্র ১৫/১৬ ঘন্টা ছিলাম (রাত সহ)। দূরের এলাকাগুলি একটু বেশি চুপচাপ।

নীলকান্ত এর ছবি

চলুক, পিছনে আছি।


অলস সময়

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ পলাশ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মাদুর কিন্তু অনেকদূর পর্যন্ত বিছিয়ে ফেলেছেন বস্‌। জমজমাট আলোচনা আশা করছি সামনে।

আমি যে অবস্থার (এক সপ্তাহের) স্বপ্ন দেখেছিলাম আপনি সেটা করে দেখিয়েছেন। অভিনন্দন!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।
(অটঃ আপনার/দুর্দান্তের আরেকটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের কল্যাণে হেমন্তের এই চমৎকার সন্ধ্যাগুলিতে মাঝে মাঝে অফিসের পর পায়ে হেঁটে বাসা পর্যন্ত অর্ধেক/পুরো রাস্থা যেতে চেষ্টা করি/যাই। যাওয়ার পথে কিছু পর্যবেক্ষণঃ

- মহাখালী থেকে ধানমন্ডি পর্যন্ত তিনটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আছে যেখানে পথচারীকে রাস্থা পারাপারের সময় গাড়ি কখনোই থামে না (icddr,b থেকে রেলক্রসিং, বিজয় স্বরণি থেকে চন্দ্রিমা উদ্যান এবং খেজুর বাগান ক্রসিং)। সুতরাং পথচারীদের অশালীন ভাবে দৌড়ে রাস্তা পার হতে হয়।

- বেশির ভাগ পথচারী - ‘ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থামবে তারপর রাস্থা পার হব’ - সে অপেক্ষা করে না।

- কিছু কিছু যায়গায় ইচ্ছামত ফুটপাথ প্রায় দখল হয়ে বসে আছে। আবার ফুটপাথের উপর মটর-বাইক আরোহীরা ‘মহা-আনন্দে’ এবং ‘ফুল-স্পীডে’ মটর-বাইক তুলে দেন।

- ঢাকা শহরের Modal Distribution of Trips (রেফঃ তানভীরের ব্লগ ঢাকায় নির্মিতব্য উড়াল সড়ক কি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে?) দেখা যাচ্ছে ৬২.৮২% এর ট্রিপের মাধ্যম হল ‘হাঁটা’। আবার সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ৫৮% মৃত্যু হয় পথচারীর।

- সড়ক দুর্ঘটনা/নিরাপদ সড়কে আলোচনায় দুটো গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারের ব্যাপারে তেমন আলোচনা দেখি নাঃ (১) পথচারীদের জন্য সরকারের দায়, (২) পথচারীদের ট্রাফিক আইন মেনে চলার ‘শিক্ষা’।

নীলকান্ত এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, নৈষাদ ভাই।

এই পারাপারের ক্রসফায়ারে পড়ে অনেক দুর্ঘটনা দেখেছি।
একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখবেন। রিকশা চালক চালানোর সময় কোনদিকে তাকিয়ে থাকে। অনেক ছোট ছোট না-জানতে পাওয়া দুর্ঘটনার কারণ এই বিষয়টি।


অলস সময়

সুপ্রিয় দেব শান্ত এর ছবি

পরের পর্বের অপেক্ষায় ......

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

চোখ রেখে গেলাম। সিরিজটা বেশ উপভোগ করবো বলে মনে হচ্ছে ...

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

তাসনীম এর ছবি

আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। চলুক।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।