নেগোসিয়্যাশন (পর্ব ২)

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: মঙ্গল, ০৩/০৪/২০১২ - ১০:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক,

রোদ ঝলমলে সকালে হোটেলের বারান্দায় বসে কাঠের রেলিঙে পা তোলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখে চা খাচ্ছি, পাশের রুম থেকে বন্ধু এসে ঘোষণা দিল, ‘কপালের নাম গোপাল’। কনটেক্সটটা বুঝার ব্যর্থ চেষ্টা এবং পরবর্তীতে তার ‘বঙ্গে’ যাওয়ার সহযাত্রী ‘কপাল’ ইত্যাদি দর্শণ শোনার পর জানা গেল এই সাত সকালে দুই নেপালি মেয়ে এসে উপস্থিত, গায়ে দেয়ার চাদর বিক্রী করবে। কাশ্মীরি শাল, পাশমিনা, আরও কী কী জানি। বন্ধুটি অবশ্য বেশ রুঢ়ভাবে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে, ‘কোঈ দরকার নেহি হ্যায়’।

তবে তার ক্ষোভের কারণও বুঝতে পারি। সে কঠিনভাবে বিশ্বাস করে ‘শপিং স্প্রি’ ভ্রমনের আনন্দ মাটি করে।

ঘটনাটা ছাত্রজীবনের শেষদিকের। আষাঢ়ের অন্ধকার করা দিনে আমাদের কয়জনের কক্সবাজার বেড়ানোর প্রস্তাবের বিপরীতে দার্জিলিঙ যাওয়ার কাউন্টার অফার নিয়ে আসল ‘ফাইনান্সে’ পড়া এই বন্ধুটি। এক্সেল শিটে খরচের বিস্তারিত হিসাব, যেটা আবার ‘কক্সবাজারের এস্টিমেট’ থেকে তার ভাষায় ‘সাবস্টেনশিয়্যালি লো’। অন্যান্য শক্ত সব যুক্তি দিয়ে সে বুঝাতে পেরেছিল দার্জিলিঙ বেড়ানোর পরিকল্পনাটা অপেক্ষাকৃত ভাল। অবশ্য আমার অলসতাকে টার্গেট করে চোঁখটিপে আশ্বস্ত করেছিল, ‘প্যাঁচপ্যাঁচে বৃষ্টিতে ঘুরাঘুরি সম্ভব না, ‘অক্সফোর্ড’ থেকে বই কেনা, বই পড়া, আড্ডা আর কাপে কাপে তোমার ‘অর্থোডক্স-মেশিনে-তৈরী-হ্যান্ড-পিকড-অরেঞ্জ-পিকো চা’। নেগোসিয়্যাশনের ভাষায় এর নাম ‘রিজনিং’- যুক্তি দিয়ে বুঝানো। পরে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

আগস্টের গোড়ার দিকের মুশল ধারে এক বৃষ্টির রাতে গিয়ে আমরা দার্জিলিং পৌছুলাম। সকালে দেখা গেল ঝরঝরে রোদ। এবং তারপরই এই নেপালি মেয়েদের আগমন। ‘প্রেমিক বন্ধুদের’ পছন্দ করা শালের দাম ৭০০ টাকা থেকে শুরু, আমার মতামত জানতে চাইলে বললাম ‘৪৫০ – ৫০০ রেঞ্জে’। কিন্তু আমাকে ‘নেগোসিয়্যাট’ করতে হলে ৬০০ টাকার নিচে বলা যাবে না। ‘সুন্দরী মেয়েদের’ সাথে ‘দর কষাকষি’ আমার পক্ষে সম্ভব না। ফলাফল, আমরা দুই বন্ধু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখি, চা খাই, পিছনে গিফট-নেয়ার-দায়বদ্ধ দুই বন্ধু নেগোসিয়্যাট করে... হালকা ভাবে আমার ফাইনান্সে পড়া বন্ধুর বদনামও শুনি। নেপালি মেয়েরা আশ্বস্ত করে এমন ‘লোকের’ প্রেমে কেউ পড়বে না। শেষমেশ প্রতিটি শাল ২২০ টাকায় ‘বিশাল জেতা’।

বিকালে সদলবলে ছাতা কিনতে গিয়ে এক দোকানের ডিসপ্লেতে রাখা সকালের কেনা একই চাদরের ট্যাগে দাম লেখা দেখি ১০০ টাকা। ফাইনান্স বন্ধুর অশালীন হাসির বিপরীতে ‘অগ্নিশপথ’ নেয়া হল, এই ‘ইয়ের’ দেশ কিচ্ছু কিনব না।

এই অবস্থাটাকে নেগোশিয়্যাশনের ভাষায় বলে ‘উইন-লুজ’ পরিস্থিতি। বিস্তারিত বলার আগে ‘সুন্দরী মেয়েদের সাথে দর কষাকষির’ ব্যাপারটা এখানে ফয়সালা করে নেই। জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞের উত্তর ছিল, ‘অন্য কোন কারণ বাদ দেও, ‘ফর দ্য সেক অভ হার প্ল্যাজার’ নেগোশিয়্যাট করতে হবে’। কী বলে? তিনি বুঝালেন, কোন মেয়ে যদি কোন কিছুর দাম বলে (তার ভাষ্য অনুযায়ী সবকিছুই নেগোশিয়্যাবল ), আর কেউ যদি ঝট করে কিনে ফেলে, মেয়েটা মনে মনে খুব কষ্ট পাবে। হায়রে, এই ‘বলদকে’ আরও বেশি দাম বলা উচিত ছিল। সুন্দরী মেয়ে ‘অন্যালজি’ হিসাবে বললাম। এটা নাকি প্রযোজ্য সবার জন্যই, সব ক্ষেত্রেই। বিশেষজ্ঞ আপ্তবাক্য বলেন, Paradoxically, a negotiator will be more satisfied with a somewhat worse deal that he’s had to fight for, rather than a better deal that came too easily. বিশেষজ্ঞের কাজ বিশেষজ্ঞ করেছে, বাণী দিয়েছে। মানতে হবে তার কোন মানে নেই।

ও আরেকটা ব্যাপার, ঐযে ৪৫০ – ৫০০ রেঞ্জের কথা বললাম, নেগোশিয়্যাশনের ক্ষেত্রে এটা কিন্তু বিপদজনক। ‘আমার বেতনের প্রত্যাশা ৮০,০০০ থেকে ১০০,০০০ টাকা’, কিন্তু চাকুরীদাতার কাছে শুধুই ৮০,০০০। খুব খেয়াল করে।

দুই,

উইন-উইন নাকি উইন-লুজ
পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে উইন-লুজ টেকনিক ছিল তুঙ্গে। তারপর ধীরে ধীরে উইন-উইনের দিকে ঝুকে পরে লোকজন। আশির দশকের গোড়ার দিকে রজার ফিশার, উইলিয়াম উরি এবং ব্রুস প্যাটনের বই ‘গেটিং টু ইয়েস’ উইন-উইনের জনপ্রিয়তাকে তুঙ্গে নিয়ে যায়।

উইন-উইন, যেখানে দুইপক্ষই লাভবান হয়, সেটাকে আবার অনেক নামেই বলা যায়। যেমন নন-জিরো-সাম (গেইম থিওরী), অথবা কওপারেটিভ গেইন (অপর পক্ষে কমপিটেটিভ গেম হল উইন-লুজ) অথবা ক্রিয়েটিং ভ্যালু এন্ড ক্লেইমিং ইট কিংবা ধরুন ফিক্সড পাই বনাম ভেরিয়্যাবল পাই। উইন-উইনের একটা ছোট্ট উদাহরণ দেয়া যায়। বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে, একটি প্রতিষ্ঠানের টাকা খরচ করতে হবে নয়ত বাজেট ল্যাপ্স হয়ে যাবে (একাউন্টেন্টদের জন্য টিপস – কিছু ক্ষেত্রে প্রভিশন করা যায় না), অন্যদিকে সাপ্লায়ারের (অন্য পক্ষের) এখনই কিছু টাকা দরকার। উইন উইন হল প্রথম পক্ষ এখনই টাকা দিয়ে দেবে, ডেলিভারী হবে পরে। কিন্তু মূল্যে কিছু ডিসকাউন্ট দেয়া হবে। সাপ্লায়ার যদি শর্ট-টার্ম লোনও নিত, একটা ইন্টারেস্ট দিতে হত। দুপক্ষই জয় হল।

উইন-উইনের কথা তখন আসে যখন ডিল পরবর্তী সম্পর্কটা গুরুত্বপূর্ন। অথবা ভবিষ্যত ডিলের সুযোগ থাকে। নেপালি মেয়েদের ক্ষেত্রে (আমি নিশ্চিত হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের যোগাযোগ আছে, এবং কর্তৃপক্ষ রাতেই কনফার্ম করেছে ‘শিকার এসেছে’) এটা ওয়ান-অফ ডিল। বাজারে গিয়ে দরদাম বুঝার আগেই শিকার ধরা। এবং খুব বড় লেভেলে চিন্তা না করলে অনেকটা ঠিকই আছে।

বাদ দেই এসব শক্ত কথাবার্তা। ইস্যু, ইন্টারেস্ট এবং পজিশনের আরেকটা মজার আলোচনায় আবার উইন-উইনে ফিরে আসা যাবে।

তিন,

ক্ষমতার মহড়া
নেগোশিয়্যাশনে আরেকটা মজার জিনিস হল, যেটাকে টেকনিক্যাল ভাষায় বলা যায় ‘পাওয়ার গ্যাম্বিট’। এই ‘পাওয়ার’ অনেক কিছু থেকে আসতে পারে। আচ্ছা, রাষ্ট্রিয় লেভেলে আমার পছন্দের ছোট্ট একটা নেগোশিয়্যাশনের উদাহরণ দেই।

দেশ তখন সদ্য স্বাধীন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফান্ডিং এজেন্সি ইউএস এইড যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের পূর্নগঠনে সাহায্যের হাত বাড়াতে চাইল। সরকারের সাথে বিস্তারিত আলোচনায় একটা প্রকল্প ঠিক হল। সিদ্ধান্ত হল, প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ড বই ছাপাবে এবং তা বিনামূল্যে ছাত্রদের মধ্যে বিতরণ করবে। এই জন্য যা ব্যয় হয় তা ইউএস এইড বহন করবে, এবং তা হবে ইউএস ডলারে। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাক্কারজনক ভুমিকার অধ্যায় পার হয়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র তখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত অর্থনীতির এই অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য এই সাহায্যটা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা ঠিক সময় বই পাবে এবং দেশ পাবে বৈদেশিক মুদ্রা।

বই ছাপানোর কাজ শেষ, বই বাঁধানোর আগে ইউএস এইডের কাছে থেকে টাকাটা পাওয়ার মডালিটি ঠিক করার জন্য মন্ত্রণালয়ে মিটিং ঠিক করা হল। যুক্তরাষ্ট্র যখন বুঝতে পারল শক্তির ব্যালেন্স তাদের দিকে, তখনই খেলাটা খেলল। টাকা কোন সমস্যা নয়,সব রেডি এবং খুব দ্রুতই দিয়ে দেয়া হবে, শুধু এইটা ছোট্ট শর্ত আছে। বোর্ডের প্রত্যেকটি বইয়ের প্রথম পাতায় যুক্তরাষ্ট্রের সেই বিখ্যাত করমর্দনের ছবি ছাপাতে হবে - দুই ‘বন্ধুপ্রতীম’ দেশের ‘বন্ধুত্বের’ প্রতীক হিসাবে।

এই শর্ত আগে দিলে বাংলাদেশ হয়ত রাজি হত না, কারণ স্বাধীনতা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে নিন্দিত ভুমিকা এবং ইউএস এইড যুক্তরাষ্ট্রের ফান্ডিং এজেন্সি। রাজনৈতিক ভাবে সেটা যে মেনে নেয়া সম্ভব না, সচিব জানালেন ইউএস এইডের কর্মকর্তাকে। বিপরীতে কর্মকর্তা টাকাটা যে এই শেষ মুহূর্তের শর্ত না মানলে দেয়া যাবে সেটা জানালেন। তিনি জানেন বাংলাদেশ সমস্যায় পড়ে গেছে। এদিকে বাঁধাইওয়ালারা শিক্ষামন্ত্রণালয় ঘেরাও করবে এমন অবস্থা। সচিব মন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে গেইম প্ল্যান ঠিক করলেন এবং ফিরে এসে ইউএস এইড কর্মকর্তাকে সরকারের অফিসিয়্যাল সিদ্ধান্ত জানালেন। - ঠিক আছে, অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থার জন্য যুক্তরাজ্য শেষমুহূর্তে শর্তজুড়ে দিয়ে ‘ব্ল্যাক-মেইল’ করছে। বাংলাদেশ এই শর্তে টাকা নিবে না। কিন্তু বাংলাদেশও একটা ছোট্ট শর্ত আছে। এই টাকা না নিলে ইউএস এইড এবং সেই কর্মকর্তাকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে (এবং নিশ্চিতভাবে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও কাভার করা হবে)। কর্মকর্তার হতভম্ব মুখের উপর তিনি মিটিং এর সমাপ্তি টানলেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র নিঃশর্ত টাকা দিয়ে দিয়েছিল।

মজার ব্যাপার হল এই ‘শক্তি’ আসলও (রিয়াল) হতে পারে আবার পারসিভডডও হতে পারে। সেদিন এক পুরানো সহকর্মীর সাথে হঠাৎ করে দেখা। তার কাজের মধ্যে বিভিন্ন ‘স্টেকহোল্ডারের’ সাথে নেগোশিয়্যাশন করতে হয়। কথায় কথায় এনজিও জগতের এক ‘পাওয়ারফুল’ মহিলার কথা আসলো। সহকর্মী মজার উদাহরণ দিলেন।

হয়ত সকালে মিটিং, ‘তিনি’ কিছুটা দেড়ি করে তিনি আসলেন। এসেই শুরু, ‘আরে আর বইলেন না ভাই, গতকাল রাতে ‘ইয়ে’ ভাইয়ের (প্রধান মন্ত্রীর একজন অ্যাডভাইসর) বাসায় আড্ডা মারতে মারতে রাত এক’টা বেজে গেল’। আমার প্রাক্তন সহকর্মীও ‘কাউন্টার দেন’, ‘ও তাই বলেন। গতকাল মজেনার (বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যামবাসেডর) বাসায় আড্ডায় মনে হয়েছিল আপনি আসবেন’।

জানতে চাইলাম প্রাক্তন সহকর্মীর কাছে, আসলে গেছলেন নাকি মাজেনার বাসায়। ‘আরে রাখেন আপনার মাজিনা, বাসায় গেলে বাসার মাজিনার (নাকি মর্জিনা বলেছিলেন মনে নেই) জ্বালায়... আপনার ভাবীরে চিনেন তো...’।

শক্তির মহড়ার বোঝার জন্য আরেকটা ধারণাকে বুঝতে হবে, যেটাকে বলা হয় বেস্ট রিয়্যালিস্টিক অল্টারনেটিভ। (নেগোশিয়্যাশনের সাহিত্যে বলতে দেখি বেস্ট অল্টারনেটিভ ফর নেগোশিয়্যাটেড আগ্রিমেন্টভ বা BATNA)। মানে হল আপনি যে বিষয়ে/জিনিসের জন্য নেগোশিয়্যাট করছেন, তার বিকল্প কী আছে। ধরুন, আপনি রিকন্ডিশনড টয়োটা এলিয়ন কিনতে চাচ্ছেন, আপনি সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা দিতে তৈরী আছেন। আপনার অল্টারনেটিভ আছে ১৯ লক্ষ টাকায় ব্র্যান্ড নিউ নিসান। যত ভাল বিকল্প, ততই ক্ষমতা। কোন ডিলে ‘না’ বলতে পারা ক্ষমতার উদাহরণ। ক্ষমতার অনেক উৎস থাকতে পারে। নেগোশিয়্যাশনের আগে নিজের এবং অন্য পক্ষের ক্ষমতার একটা ‘এস্টিমেট’ করা জরুরী।

চার,

নেগোশিয়্যাশনের এক্সপার্টরা আবার ‘সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্টের’ ব্যাপারেও গুরুত্ব দেয়। থাক এসব, বরং ‘সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্টের’ একটা ‘লোকাল নলেজ’ শেয়ার করে লেখাটা শেষ করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা সহপাঠি ছিল, যদিও শুধু একটা সেমেস্টারেই তার সাথে ছিলাম। ক্লাশে অতি ভদ্র এক ছেলে হলেও একজন শিক্ষিকা তাকে অযথাই বেশ ‘খোঁচাতেন’। একদিন ‘সাকসেসফুল মিটিং’ শিক্ষার ক্লাশে দ্বন্দ্ব আছে এমন দুজনের বসার অবস্থান কেমন হওয়া উচিত এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অবধারিত ভাবে শিক্ষিকা নেতাকে ধরলেন, ‘নেতা, তোমাদের পার্টিতে তো দ্বন্দ্ব আছে এমন লোককে ডিল করতে হয়, মিটিঙে কীভাবে বসাও’? নেতা খুব লাজুক স্বরে উত্তর দিলেন, ‘ম্যাডাম, ধরন যে দুইজনে তো ‘ক্ল্যাস’ (clash) থাকতেই পারে, এইটা কোন সমস্যাই না। আমরা মিটিঙের আগে ধরেন যে দুইজনকে আলাদা আলাদা ডেকে নিয়ে একটু ‘টাইট’ দিয়ে দেই’। (সে অবশ্য ডান হতে চাবি ঘুরানোর মত টাইট দেওয়াটাও দেখিয়ে দেয়)।

ইন্টারেস্টিং ইনসাইট! আরেকদিন এটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

নেগোসিয়্যাশন (পর্ব ১)


মন্তব্য

a-k  এর ছবি

প্রথমে মনে হয়নি লেখাটা এত চমৎকার হবে। খুবই সাদামাটা ভাবেই শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত দারুণ ফিনিশিং। চমৎকার। নি:সন্দেহে আপনার লেখালেখির হাত ভাল।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

দুর্দান্ত এর ছবি

কারবারি কৌশলকে কিরকম সুন্দর দার্জিলিং-ব্লেন্ডের চায়ের মত গল্পে মুড়ে দিলেন। বেশ সুস্বাদু পরিবেশনা। 'বাটনা'র সাথে সাথে কিন্তু পলায়ন-ঘন্টা' (ওয়াকআওয়ে) টাও চিনে রাখা বেশ জরুরী।

দরকষাকষির মজা আরো কেচে যায় যদি দরকষাকষির মাঝপথে জানতে পারি অন্যদিকেএ বাঘের ওপর ঘোগ আছে। প্রতিপক্ষ যে দাম হাঁকছে তার ওপরওয়ালার সেই দাম পরিশোধের সামর্থ বা ইচ্ছে বা সুযোগ এর সবগুলো মজুদ আছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করে মাঠে নামাই উত্তম। নইলে তিস্তা-ট্রাঞ্জিট-মমতা কেসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ দুর্দান্ত।
ওয়াকআওয়ে (পলায়ন-ঘন্টা, ইন্টারেস্টিং বাংলা) নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু লিখব পরবর্তী পর্বে আশাকরি।
বাঘের উপর ঘোগের ধারণাটা ভাল লাগল – দেখি এটা নিয়ে আসব। সহজভাবে লেখা যায় কিনা দেখতে চাচ্ছি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

খুব ইন্টারিস্টিং!

‘আমার বেতনের প্রত্যাশা ৮০,০০০ থেকে ১০০,০০০ টাকা’, কিন্তু চাকুরীদাতার কাছে শুধুই ৮০,০০০।

জানা ছিলোনা।

আরেকটা ব্যাপার পড়িছিলাম। সেটা হলো এঙ্করিং এফেক্ট। যদি এক বিক্রেতা ৮০ টাকা চায় আর আরেক জন ১৮০ তাহলে দেখা যাবে ১৮০ ওয়ালার কাছে লোক কম দাম বলতে পারবে না। এবং শেষমেষ ১৮০টাকা-বিক্রেতা বেশী লাভ করবে।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।
রেঞ্জের ব্যাপারে নেগোসিয়্যাশনের থিওরী কিন্তু এই কথাই বলে। টেবিলের ওপাশের লোকটা যদি নেগোসিয়্যাটর হয়, নিশ্চিতভাবেই ‘লোয়ার রেঞ্জ’টাই শুনবে। এঙ্করিং এফেক্টাও মজার, বিশেষ করে ‘হু শ্যুড অফার ফার্স্টের’ সাথে এঙ্করিং এফেক্টের সম্পর্ক নিয়েও কিছু বলার ইচ্ছা আছে।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

পড়ে খুব ভলো লাগলো। চলুক।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মাছের বাজারেও এই থিউরিটা চলতে দেখেছি। বড়লোকেরা অপেক্ষাকৃত সস্তায় দামী মাছ কিনতে পারে, কিন্তু গরীব মানুষকে মূল দামেই কিনতে হয় দরকষাকষির দুর্বলতার কারণেই। যার মানিব্যাগ যত মজবুত তার দর কষাকষির ক্ষমতাও তত শক্ত।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নৈষাদ এর ছবি

মাছ বাজারের ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং।
আমার আগের প্রতিষ্ঠানে চিটাগাঙের এক সহকর্মী ছিল, এখন প্রবাসী। সে মাছ বাজারে অন্য টেকনিক ব্যবহার করত। তার বিশাল এক মোবাইল সেট ছিল, মাছ দামদর করার আগে মোবাইলে চিটাগাং এর ভাষার অজানা কারো সাথে ঝাড়ি দিয়ে কথা বলত... এইটারে এতটার সময় থানায় নিয়ে আয়... সেকেন্ড অফিসার ফজলুকে বল ডলা দিতে... আমি বারোটায় আসব। তারপর মাছ-ওয়ালাকে ঝাড়ি, ‘ওই, কতরে’। মাছের দাম নাকি কমে যেত।

(তার বাসা ছিল তেজগাঁও থানার আশপাশ কোথাও, সিএনজি বেবিটেক্সিতে উঠেও ঝাড়ি দিত, ওই তেজগাঁও থানাত চল। কাজ হত নাকি মন খারাপ )

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

সেকেন্ড অফিসার ফজলুকে বল ডলা দিতে... গড়াগড়ি দিয়া হাসি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

খুব ভাল লাগল। দরদাম জিনিসটা বেশিরভাগ সময় হাওয়া-ভিত্তিক এইটা ধারণা ছিল। আজকে অন্য কিছু ইনসাইট পাইলাম।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ অনিন্দ্য। হাওয়া-ভিত্তিক ব্যাপার স্যাপার তো আছেই। এটা খুব সাধারন অবস্থার বর্ণনা।

স্যাম এর ছবি

দুই পর্বই পড়ে ফেললাম ! ভাল লাগল! কাল ডেভেলপার এর সাথে মিটিং চোখ টিপি - আপনার লিখা কাজে দিলে জানাব।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
আরে আগে বলবেনতো, সব ‘টিপসতো’ দেয়া হল না। যাক। ঐ পক্ষের প্রস্তাব শোনে আতকে উঠতে হবে কিন্তু (ফ্লিঞ্চিং)...’আরে কী বলেন...’। (যেন মনে হয় খুবই অপ্রত্যাশিত কিছু শোনলেন)। গুডলাক।

আশালতা এর ছবি

খুবই ইন্টারেস্টিং। কিন্তু দ্বিতীয় পর্ব আসতেই দুবছর লেগে গেলো। এর পরেরটা দেখে যেতে পারব তো ? চিন্তিত

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

নৈষাদ এর ছবি

অথবা বলা যায় পরের পর্বটা লিখে যেতে পারবেন তো? মন খারাপ
কী করব বলুন। অভ্যাস তো 'লেকচার' দেবার। লেখার কথা শোনলে জ্বর আসে।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন।

আশালতা এর ছবি

ছি ছি, ও কি কথা! বালাই ষাট। পারবেন্না কেন ? একশবার পারবেন। দুইশবার পারবেন।
অনেক অনেক ভালো থাকুন। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তানভীর এর ছবি

চলুক

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

তাসনীম এর ছবি

একসঙ্গে দুটো পর্বই পড়লাম। আগ্রহ নিয়ে শুরু করলাম। যদিও দুই পর্বের মধ্যে দুই বছর গ্যাপ। দারুণ লেগেছে - দুটো পর্বই।

নেগোশিয়েসন শুনলেই গডফাদার মুভির লাইন মনে পড়ে। ডন কর্লিয়নির উক্তি - "I'm gonna make him an offer he can't refuse"। লেখা দ্রুত ছাড়ার জন্য আপনাকেও এই রকম একটা অফার করতে হবে হাসি

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।
ইন্টারেস্টিং আপনি ডন কর্লিয়নির উক্তিটা উদ্ধৃত করলেন, এটা কিন্তু নেগোশিয়্যাশনের প্রশিক্ষণে রেফার করা হতে দেখেছি।

তানিম এহসান এর ছবি

ভালো লাগলো, কাজে দেবে হাসি

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।