হায়রে পরিচয়, আমৃত্যু!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২২/০৬/২০০৭ - ২:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জহিরের পরিচয় কি? জহিরের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার জন্মের ইতিহাস, ধর্মীয় আচার পালন, দলীয় পরিচিতি, এলাকার পরিচিতি ছাপিয়ে চলে আসে তার নাম, দুর্ধর্ষ কুত্তা জহির।

এমনিতে জহির একজন ছাপোষা মানুষ। তার নামের পূর্বে এই উপাধি কিভাবে যোগ হলো, দুর্ধর্ষ কুত্তা জহির হয়ে গেল এর ইতিহাস খানিকটা বিচিত্র।

“সে-দিন জহির মুখ ফেরাতেই জমে গেল। ইয়া তাগড়া একটা কুকুর। ঠিক তার পায়ের কাছে, আরেকটু হলে চাপা দিয়েছিল আর কী! হুশ কুত্তা বলতে গিয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। কুকুরটার ঘাড়ে কে যেন কোপ দিয়েছে। শরীরে ছোপ ছোপ রক্ত। এখনও রক্ত ঝরছে। ইস-স কী বীভৎস! কুকুরটা সেই যে বসেছে উঠার নাম নেই। উঠে কোথাও হারিয়ে গেলে চলে গেলেই তো হয়। জহির এ যন্ত্রণা থেকে বেঁচে যেত।

জহির একজন হাফেজ সাহেবকে পাকড়াও করল। হাফেজ সাব দেখছেন।
হাফেজ সাহেব বিরক্ত হলেনঃ খেদান, খেদান এইডারে নাপাক জিনিষ।

হাফেজ সাব, কুত্তাডা একটু দেহেন না, আহ দেখেনই না, কোপ দিয়ে ঘাড়টা প্রায় আলগা করে ফেলছে।
হাফেজ সাহেব বিরক্তি গোপন না করেই এবার বললেনঃ দুর মিয়া, বেশি যন্ত্রণা করেন, এইডার একটু ধুলা আমার গায়ে লাগলে এই অবেলায় গোসল করতে হইব। হুশ-হুশ, থুবা আসতাগফিরুল্লা। এইডারে পশু হাসপাতালে দিয়া আসেন।

জহির এইবার রাগী গলায় বললঃ আপনে নিয়া যান না, টাকা যা লাগে আমি দিমু।
কি বেদাত কথাবার্তা আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ। নাফরমান বান্দা। হাফেজ সাহেব বলেই সোজা হাঁটা ধরলেন- ভুলেও পিছু ফিরে তাকালেন না।

পাশেই একজন মনোযোগ সহকারে কথাবার্তা শুনছিলেনঃ পশু হাসপাতালে নিলে চিকিৎসা হইত।
জহির আগ্রহী হলোঃ আপনি নিয়া যাইতে পারেন ভাই, যা খরচ লাগে আমি দিমু নে।
লোকটা অন্য দিকে তাকিয়ে দাঁত খোঁচাতে লাগল।

জহিরের বড় অস্থির লাগছে। আল্লাহর এ কি অবিচার- দেড় লক্ষ লোকের বাস এখানে। কুকুরটা তার ঘাড়েই কেন পরবে!

জহির বিমর্ষমুখে দাঁড়িয়ে আছে। ভাগ্যক্রমে একজন মানুষের ডাক্তারকে পেয়ে গেল। মুখ শুকিয়ে কুকুরটাকে দেখাল। মানুষের এই ডাক্তারের সঙ্গে জহিরের খানিকটা রসিকতার সম্পর্ক আছে। তিনি হা হা করে হেসে বললেনঃ ভাইরে আপনি তো বেশ লোক, যা হোক। শেষ পর্যন্ত কি কুত্তার ডাক্তার হতে বলছেন! হা হা হা।
হুম, সমস্যা, কুকুরটা তো আপনার পোষা না, জোর করে তো পশু হাসপাতালে নিতে পারবেন না। শেষে র‌্যাবীস-ট্যাবীস বাধিয়ে বসবেন। আচ্ছা এক কাজ করেন, সিরিঞ্জে করে ডেটল পানি দূর থেকে কুকুরটার ক্ষতস্থানে ছিটিয়ে দেন আর টেট্রাসাইক্লিন ক্যাপসূল চার-পাচটা খুলে পাউরুটির ভেতরে করে খাওয়াতে পারেন কিনা দেখুন।

জহিরের চিকিৎসা পদ্ধতিটা বেশ মনে ধরল। সম্ভব, এটা ওর পক্ষে সম্ভব। সিরিঞ্জে ডেটল পানি ভরে অন্য একজনকে দায়িত্ব দিল ছিটাবার জন্য। নিজে ক্যাপসূলে পাউডার ভরা পাউরুটির দায়িত্বে।

মানুষের হিংস্রতা নিয়ে কুকুরটির স্মৃতি যথেষ্ট ভারাক্রান্ত। প্রচুর কাঠখড় পোহাতে হলো পাউরুটি খাওয়াতে। দু-দিন এই চিকিৎসা চলল। পরে জহির ভুলেই গিয়েছিল কুকুরটির কথা।

ক-দিন পর তার এক বন্ধু বললঃ জহির রে, তোর গেষ্ট আসছে কয়েকজন বান্ধবী নিয়ে।
জহির দেখল, সেই তাগড়া কুকুরটা সঙ্গে বেশ কটা মহিলা কুকুর। আনন্দে জহিরের চোখে পানি চলে এল। বন্ধুরাও আড়ালে তাকে কুত্তা জহির ডাকা শুরু করল।"


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ভাল কিন্তু মোরালটাকে আরেট্টু টুইস্ট দিতে পারতেন। সেই হুজুরকে এট্টু ধোলাই দিলেও হইত।

====
মানুষ চেনা দায়!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর!অবশ্য অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ছাগোল প্রেম বিপজ্জনক।

তাগড়া কুকুরের সাথে অনেকগুলি মহিলা কুকুরের শানে নুযূলটা যদি একটু বুঝাতেন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ঝরাপাতা এর ছবি

হুমায়ুন আহমেদের 'আমাদের বিড়ালগুলো'র কথা মনে পড়ে গেলো। অনেকদিন পরে শুভ-র লেখা পড়লাম। ভালো লেগেছে। বলাইদার মন্তব্যটাও সেরকম।
_______________________________________
পোড়াতে পোড়াতে ছাই, ওড়াতে ওড়াতে চলে যাই . . .


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

সৌরভ এর ছবি

হুমম! কুত্তা জহির।

------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নজমুল আলবাব এর ছবি

শুভ এইটারে হঠাৎ গলাটিপে মেরে ফেলেছেন বলে মনে হচ্ছে। এইটা মনে হয় আরেকটু টানা যেত। বেশি তাড়াহুড়া করতে গিয়ে লেখাটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। আশাকরি সহনশীল মন নিয়ে মন্তব্যটা বিবেচনা করা হবে। শুভকামনা শুভ ভায়ের জন্য।

ভাস্কর এর ছবি

সেইরম হইছে!


বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।