বাবা এক ক্লান্ত গাধা

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ আখতারুজ্জামান (তারিখ: শনি, ০৭/০৬/২০০৮ - ১১:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অফিস শেষ করে ক্লান্ত গাধার মতো হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরে আসি

ছেলেবেলায় বাবাকে দেখতাম প্রখর রোদের নিচে
হলুদ হাতলওয়ালা কাঠের ছাতা মাথায় বাড়ি ফিরছেন
মাটিতে দৃষ্টি রেখে, কী অনন্ত দুর্ভানায় ডুবে ডুবে হাঁটতেন
সারা দেহ ভিজে একাকার, এ্যাতো ঘাম!
ঘরে ঢুকতেই আমরা ক'ভাইবোন ঝাঁপিয়ে পড়তাম কোলে-
চকলেট কই? মিষ্টি কই? আজকে তো হাটবার ছিলো!
চৈত্রের মাঠের চেয়েও চৌচির একটা পাথর হাসি বাবা ছড়িয়ে দিতেন
তার নিরুপার কয়লা-কালো অক্ষম চেহারায়;
আমরা বিদ্রুপ করে মনে-করতে-চাই-না কথাগুলো বলতাম
বাবা দৃষ্টি ঘোরাতেন মায়ের মুখের দিকে,
মাও কেমন হঠাৎ জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলতেন
দু'জনার দু'টি বেদানর্ত অপরাধী দেহ বিপন্নতায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকতো
মনেহতো বেহশ্ত থেকে নিক্ষিপ্ত আদম-হাওয়ার দুটি উলঙ্গ শরীর
অনুশোচনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
আসমানের সব ফেরেশ্তাদের সামনে
আমরা প্রত্যাখ্যাত হয়ে আবার খেলায় হারিয়ে যেতাম
আমাদের সেই সব গ্রীস্মময় দিনগুলো অনেকটাই ছিলো
কলাপাতা-থির থির করা, না-বোঝা ভাষার কথাকলি
কালচে সবুজ শেওলায় ঢাকা পুকুরের জল
তালগাছের শুকনো পাতার শব্দে ভরা ঝন্ঝন্ বুক।

সেই সব দিনের দুর্বোধ্য শব্দেরা আজ ভাষা হয়ে ফিরে আসে
যন্ত্রণায় দগ্ধ হই, কিছুতেই মানে না মন, অশ্রুর সাগরে শুধু ভাসি
অফিস শেষ করে আমিও বাবার মতো হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরে আসি।


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

সেই সব দিনের দুর্বোধ্য শব্দেরা আজ ভাষা হয়ে ফিরে আসে
যন্ত্রণায় দগ্ধ হই, কিছুতেই মানে না মন, অশ্রুর সাগরে শুধু ভাসি
অফিস শেষ করে আমিও বাবার মতো হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরে আসি।

নিজেকে উজার করে লিখেছেন আপনার কথাগুলো!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

তীরুদা, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কবিতাটা লেখার সময় যে ঘোরের মধ্যে ছিলাম সে ঘোর এখনো কাটে নাই।

হিমু এর ছবি

খুব মন খারাপ হলো কেন যেন লেখাটা পড়ে। কিন্তু লিখেছেন অসাধারণ। আপনাকে অভিবাদন জানাই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আমারও মন খুব খারাপ। তবে আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত - নিম্নবিত্ত পরিবারের বাবা-মা'রা অনেক তীব্র বাস্তবতার মুখোমুখি হন। সেগুলো আমার কাছে বর্ণনাতীত মনেহয়।

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

অসাধারণ

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

সার্থক হলাম।

তারেক এর ছবি

অসাধারণ! কতটা হৃদয়ছেঁড়া অনুভূতির কথামালা... কতটা ?
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ধন্যবাদ তারেক ভাই। মনেহচ্ছে আপনার আকাশ মেঘলা করে ফেললাম!

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

অসাধারণ আখতার, আমি মুগ্ধ। তোমার বইয়ের চিন্তাভাবনা করছি। একটা ভালো ধরনের অনুষ্ঠান করে তোমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে হবে। সাহিত্যে একঘেয়েমির মড়ক ঘটাতে মোড়ক উন্মোচনের এই ব্যাপারটি না সেরে কোনো উপায় দেখছি না।
সামনের বইমেলায় কিন্তু অবশ্যই বই বেরোচ্ছে তোমার, সুতরাং এবার প্রস্তুত হ রে শয়তান!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

হা হা হা! আপনার কথা শুনে আমার স্বপ্ন আরো জোরদার হলো। আসলেই ভালো করে প্রস্তুতি নিতে হবে। নইলে পুরো ব্যাপারটাই উইপোকাদের জন্য বিশাল সুসংবাদ বয়ে আনতে পারে!

আসিফ মোহাম্মদ আদনান এর ছবি

আরো চাই! আমাদের প্রজন্মের জন্য খুবই দরকারী এই ধরনের অণু গল্পগুলো।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অনু তো দূরের কথা পরমানু গল্পও লেখা আসে না। যাই লিখি শেষমেষ লোকে কবিতা বলে... কী মুশকিল! আপনাকে ধন্যবাদ।

আকতার আহমেদ এর ছবি

অসাধারণ !
আর কিচ্ছু বলার নাই । শুধু এটা বলতেই লগইন করলাম !

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আকতার ভাই।

আরণ্যক সৌরভ (অচল) এর ছবি

তাব্ধা হয়্যা রইলাম।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

স্বাভাবিক হইলে বইলেন। আপনার জন্য আরেকটা লিখুম।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কবিতা খুব একটা বুঝি না। কিন্তু কিছু কিছু কবিতা আছে যা পড়া মাত্রই হৃদয়টা ছুঁয়ে যায়। সেই অনুভূতি থেকে বুঝতে পারি যে ওটা আসলেই ভাল কবিতা। আপনার কবিতাটা আমার সেই অনুভূতিকেও অতিক্রম করে গেছে! সত্যিই, খুবই ভাল লাগল। অসাধারণ! ৫ তারার বেশি কিছু থাকলে সেটাই দিতাম হাসি

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আপনার মন্তব্যও হৃদয় ছুঁয়ে গেলো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অতন্দ্র প্রহরী।

কনফুসিয়াস এর ছবি

ভাল লাগলো। খুব সুন্দর লিখেছেন।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

সময় নিয়ে পড়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। আপনি কেমন আছেন?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

অভিবাদন ভাই! এইটা হলো রচনা।

চৈত্রের মাঠের চেয়েও চৌচির একটা পাথর হাসি বাবা ছড়িয়ে দিতেন
তার নিরুপার কয়লা-কালো অক্ষম চেহারায়;
আমরা বিদ্রুপ করে মনে-করতে-চাই-না কথাগুলো বলতাম
বাবা দৃষ্টি ঘোরাতেন মায়ের মুখের দিকে,
মাও কেমন হঠাৎ জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলতেন
দু'জনার দু'টি বেদানর্ত অপরাধী দেহ বিপন্নতায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকতো
মনেহতো বেহশ্ত থেকে নিক্ষিপ্ত আদম-হাওয়ার দুটি উলঙ্গ শরীর
অনুশোচনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
আসমানের সব ফেরেশ্তাদের সামনে

ভয়ংকর! আজীবন টাকা টোকানো আমাদের বাবাদের জন্য শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য!!!
লেখাটা সবাইকে পড়ানোর কোনো ব্যবস্থা করা যায় না?
................................................................................
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে। আমাদের মা আজো লতাপাতা খায়, বাবা পথে পথে আধুলি কুড়ায়..

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ফারুক ভাই। আপনাদের সবার মন্তব্য পড়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। ভালো লাগছে। আরো অনেক লিখতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে - এমন সংকল্প জাগছে।
সবাইকে পড়ানোর জন্য কী আর করবো! পরবর্তীতে কোনো একটা পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো।

রেনেট এর ছবি

আখতার ভাই, আমি কবিতা তেমন পড়ি না। কবিতা পড়ার ও বোঝার মত যতটুকু বুদ্ধি দরকার, তা আমার নেই। তাই আপনার কবিতা ও খুব একটা পড়ার সাহস পাই না। আজকেরটা সাহস করে পড়লাম, এবং বেশ ভালো লাগলো।
লিখতে থাকুন! চলুক
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

দেখলেন তো! কবিতা পড়ার কিংবা বোঝার জন্য যা বুদ্ধি দরকার তা আপনার বেশ ভালোই আছে। ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। আশাকরি এর পর থেকে সাহস করে অন্যান্য লেখাগুলোও পড়বেন। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মধ্যবিত্ত সমাজের বাবাদের করুণ চিত্র কি অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আপনি !
ভালোলাগার পাশাপাশি মনও খারাপ হয়ে গেলো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আপনার মন খারাপ করিয়ে দেয়ার জন্য দুঃখিত। ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

দোস্ত আজ সারাটা দিন আমার বিষন্নতায় কাটলো তোর কবিতা পড়ে। দারুন কবিতা। অন্তরের অন্তস্থলে নাড়া দিয়ে গেল একেবারে।

কীর্তিনাশা

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

কী আর বলবো! কবিতাটা শেষ করার আগেই ঘরের সবাই টের পেয়ে গেলো something is wrong with me. তারপর আরো কত কী ঘটলো!
(এক একটা কবিতার জন্ম ইতিহাস নিয়ে এক একটা গল্প হতে পারে। )

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কিছু বলতে ইচ্ছা হইতাসে না।
-জুলিযান সিদ্দিকী

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

শিমুল, কীর্তিনাশা, জুলিযান আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আপনারা সময় নিয়ে পড়েছেন বলে অনেক কৃতজ্ঞতা।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

গতকালই পড়েছি
ভালই লেগেছে
কিন্তু নেট সমস্যা ছিল
তাই মন্তব্য দিতে
দেরি আর কি

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তাসনীম এর ছবি

অসাধারণ লাগলো। আগে কেন পড়িনি সেই আফসোস হচ্ছে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।