পূর্ব ইউরোপ ১৩ (বেরাতের শুভ্র জাদুইতিহাস, তিরানার বন্ধুরা)

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শনি, ২৭/০৯/২০১৪ - ১২:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

IMG_6769

সকালে অ্যাপোলোর রথ বেরোবার আগেই আমাদের গাড়ী চালু হয়ে যায়, যখন আমরা মাঝ সমুদ্দুরে তখন তার উদয় ঘটে বটে, ফলে আঁধার সমুদ্র কী করে সোনারাঙা এক উথালপাথাল বিশ্বে পরিণত হয় তা চাক্ষুষ করি আমরা মুগ্ধতার আবেশে ডুবে। গ্রীসের মূল ভূখণ্ড নেমেই রওনা হয়ে যাই আলবেনিয়ার দিকে। কাছেই সীমান্ত কিন্তু অলিম্পাসের দেবতারা আমাদের ইচ্ছেমত নাকানি-চুবানি খাওয়ালেন নিজ ডেরায় পেয়ে, পাহাড়ি রাস্তায় মাঝে মাঝে মেঘের ভিতরে , কখনও বা মেঘের উপর দিয়ে চলল আমাদের রথ। প্রায় একশ কিলোমিটার যাবার পর এক নির্জন গ্রাম পেরিয়ে চোখ পড়ল সীমান্তফাঁড়ি।

ALBANIA is a land where no one ever dies.

IMG_0051
(আলবেনিয়ার প্রতীক দুইমাথার ঈগল)

ভূমধ্যসাগরতীরের এক অজানা, অন্য ধরনের দেশ আলবেনিয়া। একসময় ছিল বেশি মাত্রায় কম্যুনিস্ট শাসিত, এরপর চলে গেল মোল্লাদের দখলে। অতিমাত্রায় রক্ষনশীল এই সমাজ, কিন্ত ইউরোপেরই দেশ। প্রথম দর্শনের বেশ ভাল লাগল পাহাড়ি, জলপাইবাগানময় দেশখানা। আমাদের দেশের কিষাণ-কিষাণীরা যেন ভুট্টার খড় গাদা করছে, সংগ্রহ করছে ডালিম বা আপেল, কাস্তে নিয়ে আগাছা পরিষ্কার করছে কেউ বা। গাধার গাড়ীর ব্যপক প্রচলন দেখা গেল। কিন্তু রাস্তাঘাটের অবস্থা খানিক বেশ ভাল, আবার মূল রাস্তা থেকে সরলেই এবড়ো থেবড়ো।

সেই এবড়ো থেবড়ো রাস্তা দিয়েই যেতে হল বিশ্বের বিস্ময় হাজার জানালার নগরী বেরাত দেখতে। নদীর পাড়ে চোখে পড়ল সেই হাজার জানালার সাদা সাদা বাড়ি, সবই অন্তত ৫০০ বছরের পুরনো। প্রায় ২০০০ বছর আগে গোড়াপত্তন করা হয়েছিল বেরাতের, নানা সাম্রাজ্য ভেঙেছে- গড়েছে সাদা পাথরের এই অপূর্ব জাদুশহর। এবং অন্তত সুখের কথা এখনো টিকে আছে তা।

IMG_6732

খুবই পিচ্ছিল, সারি সারি সাদা মর্মর জাতীয় পাথর বসানো ঢালু রাস্তা বেয়ে বেশ কসরত নিয়ে গাড়ী উপরে নিয়ে যাওয়া হল পিছলে যেতে যেতে। শীতের সকালে, বা বৃষ্টির পর মানুষ কিভাবে হাটে এই রাস্তায় কে জানে! দুর্গ ফটক পেরিয়ে অবাক হয়ে দেখি এ আসলে এক দুর্গ শহর!

IMG_6707

IMG_6709

এখনো ব্যবহৃত। সেখানে হোটেল- রেস্তোরাঁয় ভরা, এবং আপনি নামমাত্র মূল্যে (অনেক হোটেলের ভাড়া জনপ্রতি ৮ ইউরো মাত্র) এমন একটি প্রাচীন পরিবেশ, পাহাড়ের মাথায়, অদূরের তুষারঢাকা মাউন্ট তমোরির ছায়ায় নিজেকে আবিস্কার করবেন।

IMG_6768

অসাধারণ লাগল জায়গাটি, যেমন সুমসাম, তেমন রোমান্টিক, তেমনই সুন্দর। সামান্য রোদ উঠলেই আলো ঝলমল করে ঠিকরে যায় শুভ্র পাথরে। অলিগলি ঘুরে প্রাচীনতা অনুভবের সাথে দুইটা বিয়ের অনুষ্ঠান চাক্ষুষ করা হল। বলা হয় বেরাত হচ্ছে আলবেনিনায় পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণ, কথাটি মিথ্যা নয়।

10714866_10152479772844143_928091730_n

IMG_6750

এবার মূল রাস্তায় ফিরে সোজা রাজধানী তিরানার পথে। ভ্লোর শহরের মেয়ে অ্যামলা নেতসুউঁর সাথে পরিচয় বছর পাঁচেক হয়ে গেছে নেটের সুবাদ, কিন্তু দেখা হয় না কখনও। এখনই সে তিরানাই থাকে, নিজ থেকে দায়িত্ব নিয়ে হোস্টেল বুকিং থেকে শুরু করে শহর ঘুরাবার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। তিরানার শহর কেন্দ্রে জাতীর নায়ক ইস্কেন্দার বেগের ভাস্কর্যের সামনে অবস্থিত অপেরার সামনে দেখা হল অ্যামির সাথে-

IMG_0072

হোস্টেলেও যাওয়া হল সময়মত, গাড়ী পার্ক করতে যেয়ে সময় লাগল ঘণ্টা দেড়েক!

IMG_6793

ফলে আঁধারের তিরানাতেই ঘুরতে যেতে হল বাধ্য হয়ে। পথে যোগ দিল ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচিত বন্ধু এলমিরা ও তাঁর বোন লিসা। তারা আবার উদারপন্থী মুসলিম পরিবারের মেয়ে। শহরের ইতি-উতি ঘুরে রেডিও নামের এক পানশালায় নিয়ে গেল তারা।

IMG_0075

যার আদল অনেকটা কম্যুনিস্টশাসিত হজার আলবেনিয়ার মত। রাকি নামের স্থানীয় কড়া পানীয় পেটে যাওয়ার সাথে সাথে সিদ্ধান্ত হল সেখান থেকে যাওয়া হবে অন্য কোথায়। ফ্রাইড নাইট বলে কথা---

কাল আবার দেখা হবে

গতকালের গল্প


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ্‌ দারুণ ঘোরাঘুরি সেই সাথে সুন্দরী রমণী। আমি এখন বুঝতে পারলাম ছেলেরা আপনাকে কেন এত হিংসা করে। যাই হোক অনেক ভালো লেগেছে চলুক

ফাহিমা দিলশাদ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা, নেটের কি কেরামতি! তবে সবাই সেই কেরামতি জানেনা। পাহাড়ের মাথার রেস্টহাউস নাকি রেঁস্তোরা তা যা-ই হোক দারুণ লাগলো। হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি

দেখছি, পড়ছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।