The Legends of Khasak

দময়ন্তী এর ছবি
লিখেছেন দময়ন্তী (তারিখ: রবি, ২৩/১১/২০০৮ - ৯:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হে পাঠক, আপনি "মাকোন্দো' চেনেন, দেখেছেন ম্যাজিক রিয়ালিজমের অনেক আঁকিবুকি ও জলছাপ ৷ হে অভিজ্ঞ পাঠক, আজ আপনাকে মাকোন্দো'র মতই এক প্রত্যন্ত ও বিচ্ছিন্ন জনপদ "খাসাক'এর পট দেখাতে চাই ৷

ও ভি ভিজয়নের "খাসাকিন্তে ইতিহাসম' মালয়ালম ভাষায় প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে৷ মনে রাখতে হবে মার্কেজের 'একশো বছরের নি:সঙ্গতা' সবে প্রকাশিত এবং সলমন রুশদীর "মধ্যরাত্রির সন্তান' তখনও ভুমিষ্ঠ হয় নি৷

কেরলের পালঘাট অঞ্চলের ছোট্ট গ্রাম খাসাক, যেখানে মিথ ও বাস্তব গলা জড়িয়ে চলে, সেই খাসাক ক্রমশ: সভ্যতার সংস্পর্শে বদলে যাওয়ার গল্প বলে এই বই ৷ খাসাকে পাশাপাশি দুটি জগতের সহাবস্থান লক্ষ করা যায় গোটা উপন্যাস জুড়েই ৷
১) আধুনিক "এনলাইটেন্ড' সমাজ, রবি যার প্রতিভু৷
২) একটি প্রাচীন মিথিক সমাজ, যা অতিলৌকিক- পরাবাস্তব৷
গোটা উপন্যাস জুড়ে এই দুটি সমাজের মধ্যে একটি জটিল, ঊভমুখী অন্ত:ক্রিয়া চলতে থাকে, এবং এই দুটি সমাজ একে অপরকে বদলে দিতে থাকে, গড়েপিটে নিতে থাকে নিজের মত করে৷ এই উপন্যাস যেন একধরণের যাত্রা'র কথা বলে, এই যাত্রা হয়তবা আধ্যাত্মিক, হয়ত বা তা নয়, নিছকই নিজেকে খুঁড়ে খুঁড়ে অস্তিত্বের মূলটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা --- সভ্যতার নির্মাণগুলিকে ভেঙে তার নীচে লুকিয়ে থাকা সত্ত্বাকে তুলে আনার প্রয়াস ৷৷৷

গোটা উপন্যাসের কোথায়ও সেই নির্দিষ্ট কাল-পর্বে কেরলের সামাজিক -রাজনৈতিক ঘটনাবলী প্রতিফলিত না হওয়া সত্ত্বেও (কেবলমাত্র কয়েক জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে কমিউনিস্ট পার্টির কথা এসেছে মাত্র), খাসাক এবং তার ব্যক্তি-দল-ধর্ম-সমাজের টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক বয়ান তৈরী হয় ৷ বহির্পৃথিবীর বাস্তবতাটাও এর মধ্য দিয়েই তীর্যকভাবে ফুটে ওঠে ৷ তা না হলে হয়ত এই উপন্যাসটিও আরো অনেক সোশ্যাল রিয়ালিস্টিক উপন্যাসের মত বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেত ৷

এইবারে উপন্যাসটি সম্পর্কে আমার ক্ষুদ্র একটি আপত্তির কথা জানাই ৷
উপন্যাসের ইংরিজী অনুবাদে হঠাত্ হঠাত্ আধ্যাত্মিকতার প্রকাশ একটু অস্বস্তি জাগায় ৷ আরো অস্বস্তি লাগে কারণ এখানে সবকিছুই ভীষণভাবে শারীরিক ৷ জন্ম-মৃত্যু-অসুখ সবকিছুই যেন শরীর ঘিরেই যেন বয়ান তৈরী হচ্ছে ৷ সেখানে নানাভাষায় ঐ অধ্যাত্মিকতার প্রবেশ যেন একটু আউট অব কনটেক্স্ট মনে হয়৷ আমার মালয়ালী বন্ধুর কাছে শুনেছি মূল বইয়ে যে আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে যে সংশয় ও সন্দেহের সুরটি ছিল ইংরিজি অনুবাদে তা অনেকটাই ধার হারিয়েছে , এমনকি ২-১ টি ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পাল্টি খেয়েছে ৷ মূল বই প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ আর লেখককৃত ইংরিজি অনুবাদ ১৯৯২ সালে ৷ সম্ভবত: এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ভিজয়নেব্র মনোজগতে অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকবে, যার প্রকাশ ঘটেছে অনুবাদে ৷

উপন্যাসটি পড়তে পড়তে সময়ের বয়ে চলা অনুভব করা যায় --- সময় আপনমনে বয়ে যায় --- কে এলো, কে গেলো, কে বাঁচল আর কেইবা প্রবলভাবে বাঁচার চেষ্টা করেও পারল না --- তাতে সময়ের কিছু আসে যায় না৷ তার চোখ নাই, মুখ নাই, হাত পা কিছুই নাই --- শুধু গতি আছে , নিজস্ব গতি ৷ ক্ষুদ্র মানব আমরা সময়ের এক ক্ষুদ্র অংশে বাস করে ভাবি সময়্কে বেঁধেছি, পোষ মানিয়েছি --- সময় তা উপেক্ষা করে আপন গতিতে বয়ে যায়

সময়ের কাছে আমি প্রণত হই
আপনার কাছে আমি প্রণত হই, হে জ্ঞানী পাঠক

(পটদর্শন সমাপ্ত ৷)

The Legends of Khasak - O. V. Vijayan:: Penguin Books


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

এই বইয়ের কী বাঙলা অনুবাদ প্রকাশ হয়েছে? প্রকাশ হলে তাহলে পড়তে চাই।

দময়ন্তী এর ছবি

না পান্থ, বাংলা অনুবাদ এখনও প্রকাশিত হয় নি৷ "সাহিত্য আকাদেমী' বা অন্য কেউ এই নিয়ে কাজ করছেন বলেও শুনিনি৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

রিভিউটা ভাল লাগল। শেষ প্যারাটা মনে দাগ কাটলো খুব। কখনো পেলে পড়ব বইটা। তবে মূল বইয়ের সুর থেকে, যদি লেখক অনুবাদে আসলেই এভাবে সরে গিয়ে থাকেন, তাহলে তো এটা ভাল হলো না। এমনটা কেন করেছেন তিনি, কে জানে।
আচ্ছা, "দময়ন্তী" নামের অর্থ কী? আর আপনি এত কম লেখেন কেন? আরো নিয়মিত হবেন, আশা করি।


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

দময়ন্তী এর ছবি

ধন্যবাদ অ: প্র: ৷ লেখক কেন এটা করেছেন, তার কারণ আমার ধারণা ২২-২৩ বছর আগে তিনি যেরকম সংশয়ী ছিলেন, তা হয়ত বয়সের সাথে সাথে "বিশ্বাস' এ বদলে যায়৷ মুশকিল হল আসল লেখাটা পড়া আমার পক্ষে হয়ত কোনোদিনই সম্ভব হবে না ৷ খুব ভাল হত, যদি অন্য কেউ মালয়ালী থেকে ইংরাজীতে অনুবাদ করতেন৷

"দময়ন্তী' নামের অর্থ হল "দমন মুনির বরে জন্ম যাহার' ৷ বিদর্ভরাজা ও রাণী নাকি দমন ূষির বন্দনা করে দময়ন্তীকে কন্যারূপে লাভ করেন ৷ তাই অমন নাম৷

কম লিখি কারণ আমি একটু আলসে ৷ পড়তেই বেশী ভাললাগে৷ হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

নিচের একটা কমেন্টে দেখলাম আপনি নিজেই বইটা অনুবাদে হাত দিয়েছেন। আশা করব, কাজটা ভালভাবেই শেষ করতে পারবেন। বিশাল ধৈর্যের ব্যাপার- জানি, আপনিও নিজেকে আলসে বলে দাবী করছেন; আশা করব, খুব বেশিদিন অপেক্ষায় রাখবেন না। শুভকামনা রইল।

আপনার নামটা খুবই আনকমন, আর অনেক সুন্দর। হাসি


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

কীর্তিনাশা এর ছবি

চমৎকার রিভিউ। পড়ার আগ্রহ জাগলো আমারো।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

দময়ন্তী এর ছবি

ধন্যবাদ কীর্তিনাশা৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

সবজান্তা এর ছবি

ভালো লাগলো রিভিউটা। ভবিষ্যতে হাতে পেলে পড়ার আশা রাখি। এর কি বাংলা কোন অনুবাদ হয়েছে ?

আর একটা কথা, আপনার লেখাটা পড়তে যেতে ডান প্যানেলে তাকিয়ে দেখি আপনার গত লেখা ছিলো "এক কালি ছত্রী পে..." । লেখাটা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছিলো। আপনি লেখায় এত অনিয়মিত কেন ? এত লম্বা সময় পর আরেকটা লিখলেন !

আপনার থেকে দ্রুত আরো লেখা পাওয়ার আশায় থাকলাম...


অলমিতি বিস্তারেণ

দময়ন্তী এর ছবি

না সবজান্তা, কোন বাংলা অনুবাদ এখনও বেরোয় নি৷ আমার নিজের একটা অনুবাদ করার ইচ্ছে আছে ৷ শুরুও করেছিলাম৷ কিন্তু তারপর ---- ৷ আর একটা সমস্যা হল আমার মালয়ালী বন্ধুর কাছে শুনলাম কিছু কিছু মালয়ালী ফ্রেজ আছে আসল বইতে যা ইংরাজী অনুবাদে ধরা সম্ভব নয়৷ বরং অন্য কোন ভারতীয় ভাষায় সেই ফ্লেভারটা ধরা সম্ভব হতে পারে ৷ তো, সেইটা শুনে থেকে আরও ঘেঁটে গেল ৷ আশা করি বছর পাঁচেকের মধ্যে করে ফেলতে পারব ৷

আর আমি আসলে মোটামুটি প্রতিমাসে একটা লিখতে চেষ্টা করি ৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

পলাশ দত্ত এর ছবি

আপনি সকলের কাছে সময়ের কাছে প্রণীত হলেন বটে; কিন্তু আমি/আমরা? বইটা পড়বো কিভাবে??

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

দময়ন্তী এর ছবি

পেঙ্গুইনের বই ৷ ওদের বললে নিশ্চয় আনিয়ে দেবে ৷ আমার কাছে অবশ্য স্ক্যান করে এস্নিপ্সে তোলা আছে গোটা বইটা৷ তবে আমি পাবলিক শেয়ারে দিই না৷ আমাকে মেইল করলে শেয়ার করে দেবো৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বইটা পড়ার আগ্রহ রয়ে গেলো... ধন্যবাদ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দময়ন্তী এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

সময় আপনমনে বয়ে যায় --- কে এলো, কে গেলো, কে বাঁচল আর কেইবা প্রবলভাবে বাঁচার চেষ্টা করেও পারল না --- তাতে সময়ের কিছু আসে যায় না৷ তার চোখ নাই, মুখ নাই, হাত পা কিছুই নাই --- শুধু গতি আছে , নিজস্ব গতি ৷ ক্ষুদ্র মানব আমরা সময়ের এক ক্ষুদ্র অংশে বাস করে ভাবি সময়্কে বেঁধেছি, পোষ মানিয়েছি --- সময় তা উপেক্ষা করে আপন গতিতে বয়ে যায়

------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

দময়ন্তী এর ছবি

হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

স্নিগ্ধা এর ছবি

গোটা উপন্যাস জুড়ে এই দুটি সমাজের মধ্যে একটি জটিল, ঊভমুখী অন্ত:ক্রিয়া চলতে থাকে, এবং এই দুটি সমাজ একে অপরকে বদলে দিতে থাকে, গড়েপিটে নিতে থাকে নিজের মত করে৷

খুব কৌতুহল হচ্ছে পড়ার, দেখি হয়তো কখনও ......... হাসি

দময়ন্তী এর ছবি

স্নিগ্ধা,
অবশ্যই .............................. হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দ্রোহী এর ছবি

রিভিউটা পড়লাম। ভাল লেগেছে।

আপনার "এক কালি ছত্রী পে"তে দেয়া ছবিটা দীর্ঘদিন আমার ডেক্সটপের ওয়ালপেপার হিসেবে ঝুলে ছিল। আপনাকে না জানিয়েই, কোনরুপ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করেই মেরে দিয়েছিলাম। দেঁতো হাসি

ছবিটা মাথার ভেতর কোথায় গিয়ে যেন খোঁচা দেয়। যা মনে করতে চাই না, তাই মনে করিয়ে দেয়। মন খারাপ


কী ব্লগার? ডরাইলা?

দময়ন্তী এর ছবি

ঠিক আছে৷ কোন অসুবিধে নেই৷ হাসি

হ্যাঁ ছবিটা তোলার সময় তো তুলে নিয়েছি৷ এখন জানেন মাঝে মাঝেই মনে হয় আচ্ছা বাচ্চাগুলোর মুখ তো দেখলাম না!

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দ্রোহী এর ছবি

ছোট্টবেলায় যখন গ্রামে থাকতাম। আমি আর আমার বড়বোন ঠিক ওভাবে ছাতা ভাগাভাগি করে বৃষ্টির দিনে স্কুলে যেতাম।


কী ব্লগার? ডরাইলা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।