ডিমনিটাইজেশানের দিনলিপি

দময়ন্তী এর ছবি
লিখেছেন দময়ন্তী (তারিখ: মঙ্গল, ১৪/০৩/২০১৭ - ১১:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৮ই নভেম্বর ২০১৬
বাড়ী ফিরতে ফিরতে প্রায় পৌনে আটটা, এর মধ্যেই দেখি অফিসের লীডারশিপ গ্রুপটায় লোকজন উত্তেজিত, কি না 'প্রধানমন্ত্রীজি ভাষণ দেনেওয়ালে হ্যাঁয় রাত আট বাজে টিভি পর'। ধ্যাত্তেরি, দিতে থাকুক, ভেবে গুরুত্ব দিই নি। ওবাবা সমানে টুংটাং মেসেজের ঝড়। খুলে দেখি সব ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট মাঝরাত থেকে বাতিল ব্লা ব্লা ব্লা। প্রথমেই মাথায় এল আর সিগনালে রবীন্দ্রসংগীত বাজানোর আদেশে আমরা কিনা পশ্চিমবঙ্গের ওনাকে মহম্মদ বিন তুঘলকের সাথে তুলনা করেছিলাম। তারপর আলমারীর ড্রয়ার হাঁটকে দেখলাম যা খুচরো আছে তাতে এক্ষুণি এটিএমে গিয়ে লাইন দিতে হবে না। যাক আপাতত নিশ্চিন্ত। শনিবারে দেখা যাবেখনে

৯ই নভেম্বর ২০১৬
অফিসে সকলেই যথেষ্ট উত্তেজিত। এমন একটা সাহসী পদক্ষেপ স্মরণকালের মধ্যে কোন প্রধানমন্ত্রীকে তো নিতে দেখা যায় নি, কালো টাকার যাকে বলে সব্বনাশ করে ছাড়বে এবারে। সমস্ত কালোটাকা লোকে বাধ্য হবে হয় ট্যাক্স দিয়ে জমা দিতে নয়ত লুকিয়ে নষ্ট করে ফেলতে। বিল্ডার প্রোমোটাররা এবার জব্দ হবে সেই নিয়েও খানিক খুশীভরা জল্পনা হল। বেলা বাড়তে খবর আসে মুম্বাইয়ের জাভেরি মার্কেটে লোকে হাজার টাকার নোট বদলে সাতশো আটশো টাকা নিয়ে ফেরত যাচ্ছে। সকলের মধ্যে বেশ একটা ‘দ্যাখ কেমন লাগে’ ভাব। চা খেতে গিয়ে একজন একটা পাঁচশোর নোট ভাঙিয়ে নিল, যে কটা চালিয়ে নেওয়া যায় আর কি।

১০ই নভেম্বর ২০১৬
এখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখছি। একজনের ইন্ডেন গ্যাস সিলিন্ডার এসে ফেরত চলে গেল। ৫৪৬ টাকা, তাও নাকি ৫০০র নোট নেবে না, ৫ টা একশো দিতে হবে। আবার এখানে রাস্তার পাশের সব্জির ঝুপড়িতে ৩০ টাকার সব্জির জন্যও কার্ড সোয়াইপ করানো যায় এমন দোকানও আছে। তার কালকে হুলিয়ে বিক্রী হয়েছে। অন্য যারা শুধু নোট নেয়, তারা ৫০০ নিচ্ছে না, ফলে লোক সব হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ঐ কার্ডওয়ালা দোকানে। যে সব ছেলে মেয়েগুলো চার পাঁচ বা ছয়জন করে এক একটা ফ্ল্যাটে শেয়ারে থাকে, তাদের অধিকাংশেরই ফ্রীজ নেই। প্রতিদিন অফিস থেকে আসার সময় তরকারি/ চিকেন নিয়ে আসে। তাতেই রাতের খাবার, পরেরদিন সকালের খাবার, খুব গুছানো বা হিসেবী কেউ হলে পরেরদিনের টিফিনও বানিয়ে নেয়। রোজের তরকারী কিনতে এখন কার্ডই ভরসা।
যে সব্জিওলাদের কার্ড নেবার ব্যবস্থা নেই তারা সকলেই বলে এখন নিয়ে গিয়ে দাম পরে দিতে। কেউ শোনে, বেশীরভাগই আগেভাগেই কিনে এনেছে কিম্বা অনলাইনে অর্ডার করে রেখেছে। কয়েকদিনের তো ব্যপার।

ইতিমদ্যে অবশ্য খবর এসে গেছে জাভেরি বাজারে যারা ৭০০ কিম্বা ৮০০ টাকায় ১০০০এর নোট দিয়েছে, তারা প্রায় সকলেই গরীব মিস্ত্রি, মজুর, যোগাড়ে কিম্বা ‘কামওয়ালি বাঈ’, সমস্ত জমানো টাকা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে যা হাতে পাওয়া যায় তাতেই ছেড়ে দিয়েছে। ‘হোতা হ্যায় বড়ে কুছ, আচ্ছে কুছ করনে কে লিয়েঁ কভী কভী অ্যায়সে ছোটেমোটে কুছ কুছ হো যাতে হ্যায় ইয়ার’(হয় হয়, বড় কিছু, ভাল কিছু করতে গেলে এরকম ছোটখাট অসুবিধে তো একটুআধটু হতেই পারে)

১২ই নভেম্বর ২০১৬
আমি কিনা হেঁটে হেঁটে আপিস যাই আসি আর শনি রোব্বারেই বাজার করে সব রান্নাবান্না করে রাখি, তাই আমার হপ্তার মধ্যে টাকাপয়সা বিশেষ লাগে না। এদিকে জুলাই না অগাস্টে একবার এটিএম থেকে মাসের প্রথমেই পুরো টাকাটা ১০০র নোটে পেয়েছিলাম। তো ১০০র নোট নিয়ে চলা মুশকিল ভেবে বাড়ীতেই রেখে দিয়েছিলাম। ঐ টুকটাক ইলেকট্রিক বা কলের মিস্ত্রি দিয়ে সারানো ইত্যাদি কাজ করাতে লাগে টাগে ভেবে। তা সে ছিল। আর এমাসের তোলা টাকারও খানিক ১০০য় চলে এসেছিল গত শনিবার কয়েকটা ৫০০ নানা কারণে ভাঙানোয়। মোটকথা সব মিলিয়ে আমার অন্তত মঙ্গলবারেই এটিএম দৌড়ানোর দরকার পড়ে নি।

তা আজ সকালে সওয়া দশটা নাগাদ যখন পাড়ার এটিএমের (যেটা আবার আমাদেরই আপিসের গায়ে) সামনে দিয়ে যাচ্ছি তখন দেখি IDBI এর ঝাঁপ ওঠানো। বুঝলাম টাকা এসেছে। ঘুরে এলাম সামনে, এসে দেখি গিজগিজ করছে গাদাগাদা লোক। আপিসের গেটের সিকিউরিটি কাকা বললেন ঢাইসো তক গিনা ...। হাল ছেড়ে আরেকটু এগিয়ে ফেজ-ট্যুতে ICICI এর সামনে গিয়ে দেখি অগুন্তি লোক। একজন কর্মী খোঁজ নিচ্ছিলেন কেউ ডিপোজিট ওনলি আছেন কিনা। তাড়াতাড়ি ওঁকে ধরে টুকুস করে ভিতরে গেলাম। হ্যাঁ অ্যাকাউন্ট থাকলেও এখানে জমা দিতে আইডি প্রুফের অরিজিনাল দেখবে এবং কপি জমা নেবে। ডিপোজিট স্লিপ ভরে দাঁড়ালামা জনা তিরিশেকের পেছনে। ফোটোকপির গায়ে বেশ করে অ্যাটেস্ট করে লিখে দিলাম এই কপি ওমুক নোটের অতগুলি টুকরা জমা দেবার কাজে ব্যবহৃত হইতেছে। আধঘন্টা বাদে জমা হল। মাঝে একজন এসে জিগ্যেস করছিলেন কার কার পঞ্চাশ হাজারের ওপরে জমা দেবার আছে। আমার হাতের ঐ কটি ৫০০র নোট দেখে হেসেই ফেললেন। জিগ্যেস করলেন এই কটার জন্য পরে আসলে হত না? বললাম দেখুন নোটগুলো তো মরেই গেছে, লাশগুলো ঘরে রেখে কি লাভ? বরঙ আপনাদের দিলে আপনারা ৫ কি ১০ পয়সা ইন্টারেস্ট তো দেবেন। একটু থতিয়ে হ্যাঁ তা তো দেবই বলতে বলতে পঞ্চাশ হাজারি লোকেদের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি থাকা পর্যন্ত তাদের মধ্যে মাত্র একজন বাইরে এসেছিলেন।

তো জমা হবার পর দেখলাম তোলার লাইনের জন্য আবার বাইরে গিয়ে লাইন দিতে হবে। কজন লোক আছে জিগ্যেস করে শুনলাম হোগা করিব পান ছেসো((হবে পাঁচ ছ'শো লোক)। বাপরে!! তাড়াতাড়ি বেরিয়ে ডি-মার্ট, শেহনাজ-ফিশ-সেন্টার, কাকা-হালওয়াই ইত্যাদিতে ঘুরে কার্ড দিয়ে সওদাপাতি করে ফিরলাম। রাস্তায় দেখি স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র, সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক ইত্যাদির সামনে পুরো হরিহরছত্রের মেলা লেগে গেছে। দিব্বি চা, বড়া-পাও ইত্যাদিও পাওয়া যাচ্ছে। ফেরার সময়েও দেখি সেই ICICI এর বাইরে একই পরিমাণ লোক। পাড়ার IDBI এর এটিএম ফাঁকা এবং খোলা দেখে উঁকি মারলাম।যে ল্যাঙপ্যাঙে বাচ্চা ছেলেটা বসে থাকে পাহারায় সে বলল আবার বিকেল পাঁচটায় টাকা আসবে। বেশ। এসে মোড়ের মাথায় কমার্শিয়াল মার্কেটে ঢুকে দেখি ৪-৫ টা অল্পবয়সী ছেলে আরেকটু দূরের প্যারাডাইস রেস্টুরেন্টের দিকে যাচ্ছে কারণ এখানকার রেস্টুরেন্ট এখনও কার্ড নেবার মেশিনের ব্যবস্থা করে উঠতে পারে নি। ওখানেই সব্জি, দুধ সব আবার কার্ড দিয়ে কিনে বাড়ী ঢুকলাম।

হাউসিং ক্যাম্পাসে ঢুকে দেখি বিরাট গোলমাল। মেইনটেনান্স কর্মীরা সব ধর্ণায় বসেছেন। ওদের মাসের বেতন হয় নি, আজ জোর দিয়ে চাওয়ায় ওদের ১০০০ আর ৫০০র নোট দিতে চেয়েছে অ্যাডমিন। এদিকে বাইরে একটা সবজির ঝুপড়িও ৫০০র নোট নেবে না, কারণ পাইকারেরাও নাকি অনেক টাকার না কিনলে ৫০০ নেয় না। ওপরে এসে দেখলাম আজকের জঞ্জালও তোলেন নি ওঁরা। খুবই স্বাভাবিক। কি করে এর সমাধান হল বা হবে বুঝছি না। শুনলাম কর্মীদের গতমাসের অর্ধেক বেতন ও দিওয়ালি বোনাসও বাকী। অনেকেই বিভিন্ন ঝুপড়িতে ভাড়া থাকেন, সেখানে ভাড়া বাকী পড়ে, মুদি দোকানে বাকী পড়ে, এখন এই নোটবন্দীর ফলে কেউই আর বাকী রাখতে চাইছে না। সকলেরই মনে আতঙ্ক পুরানো নোট হয়ত চালিয়ে দেবার চেষ্টা হবে। আর সত্যিই এতদিন বেতন বাকী রাখার কোনও যুক্তি নেই। ফ্ল্যাটমালিকরা প্রায় কেউই মেইনটেনেন্স চার্জ বাকী রাখেন না।

১৪ই নভেম্বর ২০১৬
আমার ডান পাশের ডেস্কের কলিগ শুনলাম দুদিনে ৭৫ হাজার করে ক্যাশ জমা দিয়েছে। আর উইকেন্ডে গিয়ে পাঁচ কাঠা জমি কিনে নিয়েছে! আরো কয়েক লাখ আছে ঘরে, সেটারও কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে, মারাঠী ভাষাটা শুনে মোটামুটি বুঝতে পারি বলে ঘটনাচক্রে শুনে ফেললাম আর কি, নাহলে আমার এমনিতে এগুলো জানার কথা নয়। প্রসঙ্গত এরা সকলেই কালোটাকা ও ঘরে জমিয়ে রাখা ক্যাশ টাকা নিয়ে বেশ উচ্চকন্ঠ ছিল ৯ তারিখ সকালে।

২০শে নভেম্বর ২০১৬
অফিসের বাউন্ডারি ওয়ালের গায়ের এটিএম দুটোতে কবে কখন টাকা আসে কে জানে, তবে কখনো না কখনো নিশ্চয় আসে। সারাদিনই কিছু লোক আর কিছু না হোক শুয়ে বসে থাকে, তাস টাস খেলে। কখন দেখি ঘুমায়ও টান টান হয়ে শুয়ে। আর যখন দেড় দুশো লোক লাইনে দাঁড়ায়, যার মধ্যে কিছু কোম্পানির কর্মীও আছে, তখন বুঝতে হবে টাকা এসেছে।

২৩শে নভেম্বর ২০১৬
অফিস আর বাড়ীর ঠিক মাঝামাঝি রাস্তার মোড়ে কমার্শিয়াল মার্কেটের চত্বরে এক ‘দার্জিলিং মোমো’র দোকান, দুপুর দুটোর পরে টেবিল পেতে দাঁড়ায়। আমাদের অফিস আর উল্টোদিকের টিসিএস থেকে অনেকে বিকেলের দিকে হেঁটে ওইখানে আসে মোমো খেতে। আসে বলা ঠিক হল না, আসত। এখন আর কেউ খুচরো ১৫ বা ৩০ টাকা ক্যাশে খরচ করতে রাজী নয়। মোমোওলা ছেলেটি পরিস্কার বাংলা বলে, আসামের ছেলে। ১৬ তারিখে সে আমাকে জিগ্যেস করেছে কার্ড সোয়াপিং মেশিন বসাতে গেলে কী কী লাগে, আমি মোটামুটি খবর নিয়ে বলে দিয়েছি। ওর দোকান পাকা নয়, ইলেকট্রিক কানেকশানও নেই, তাতে কি! পাশের যে পাকা দোকানে ফোটোকপি করানো থেকে টেনিস র‌্যাকেট সব পাওয়া যায় তার সাথে ‘সেটিংস’ হয়ে গেছে। মোমোওলার কার্ড পেমেন্ট ওখানে হবে।

৩রা ডিসেম্বর ২০১৬
গত দুই সপ্তাহ ধরে ইয়াহুতে বিল্ডারদের মেইল আসা যে কি পরিমাণ বেড়েছে বলার নয়। আজ ব্লকড/স্প্যাম আইডির লিস্ট খুলে দেখলাম গত দুই সপ্তাহে ৩৭টা নতুন ইমেইল যোগ করেছি, আর সব্কটাই বিল্ডার/প্রোমোটারদের।
ICICI ব্যাঙ্ক বড় ভাল। লাইনে দাঁড়ানো লোকেদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চা খাওয়ায়।
ICICI আউন্ধ এর এক অফিসার কী ভেবে কে জানে লাইন থেকে গুনে গুনে সমস্ত মহিলাকে নিয়ে গিয়ে আলাদা কাউন্টার থেকে টাকা তুলিয়ে দিলেন কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা বাকী শ'তিনেক পুরুষদের লাইন থেকে একটাও কটুকাটব্য বা তীর্যক বাক্য ভেসে এল না। বরং দিব্বি হাসিখুশী মুখে অ্যাঁকাব্যাঁকা লাইনটার মাঝ দিয়ে পথ করে দিলেন।

পেট্রোল পাম্পের কর্মীদের ৮ নভেম্বরের পর থেকে নাকি একেবারে সোনায় সোহাগা সিচুয়েশান। এক একজন সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত উপরি আয় করছে। শিবা, আমার গাড়ী চালাতে আসে মাঝেমাঝে রেগম এন্টারপ্রাইজ থেকে, বলল এই যে পেট্রল পাম্পে পাঁচশো আর হাজার নোট নেবার কথা, তা এইজন্য প্রচুর লোক এসে ভাগে ভাগে বাইকে দুই একশোর তেল ভরে ৫০০ বা ১০০০ এর নোট ভাঙিয়ে নিচ্ছে। আর এতে পাম্প কর্মীদের লাভ দুইদিকদিয়ে। এক তো ৫০০ হলে ১০০ আর ১০০০ হলে ২০০ ন্যুনতম কমিশান আর অন্যদিকে লোকটি যখন কমিশানের দরাদরি ও খুচরো বুঝে নিতে ব্যস্ত থাকে তখন শুন্যের কাঁটা নড়িয়ে দিয়ে ওইদিক থেকেও খানিকটা তেল মেরে নিচ্ছে। পাম্প মালিক কর্মীদের হিস্যা প্রতিদিন মিটিয়ে দিচ্ছে। বিশেষতঃ হাইওয়ের ধারের পাম্পগুলোর নোটবন্দীর পর থেকে আয় অনেক বেড়ে গেছে।

শিবার কাছেই শুনলাম, বারামতি এলাকায় ব্যাঙ্কের কিছু কর্মীও এই উপলক্ষ্যে কোটির অঙ্কে আয় করেছে। ব্যাঙ্কে টাকা এলেই তা চলে যেত বিশেষ কিছু লোকের কাছে, যে কারণে সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্কে গিয়ে অনেকসময়ই টাকা পান নি বা সামান্য দুই কিম্বা তিন হাজার পেয়েছেন। প্রসঙ্গত বারামতি হল শরদ পাওয়ারের খাস এলাকা। অনেকরকম গুজব শোনা গেছে ৮ই নভেম্বরের পরের কয়েকদিন এই অঞ্চলে। যেমন একটি লোককে দেখা গেছে বড় গাড়ি নিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে সমানে ঘুরতে, কোনও রাস্তার মোড়ে পুলিশ সন্দেহ করে থামালে দেখা গেছে গাড়ি ভর্তি শুধু হাজারের নোটের বান্ডিল। বলা বাহুল্য এই গল্পের নানা ভার্সান, প্রশ্ন করতে থাকলে গল্প একটু করে বদলে যায়। ব্যাঙ্ককর্মীদের কোটিপতি হবার খবর খুব সামান্য লোকই রাখে, তাই নিরুদ্দিষ্ট কালোটাকার গল্পরা কখনও বড় গাড়ি চড়ে ঘোরে কখনও বা শরদ পাওয়ারের ফার্ম হাউসের কুয়োর মধ্যে ভেসে ওঠে।

শিবাজীনগরের বড় মন্ডিতে টাল করে সব্জি ফেলে দিয়েছে পাইকার ও বিক্রেতারা। দিতে হয়েছে আসলে। পিরঙ্গুটের পাশের তিন চারটে গ্রামের বিনস আর টমাটো খেতের ফসল অনেকটাই তোলা সম্ভব হয় নি, কারণ ফসল তোলানর জন্য মজুরী দেবার নোট নেই। যতটা সম্ভব বাড়ীর লোকেরা মিলে তুলে ফেলবার পর বাকী ফসল মাঠেই শুকিয়েছে।

একটা বেশ কেতার বিউটি সালোনে আজ মাসের ৩ তারিখে একজনও খদ্দের নেই। ৬ জন কর্মী শুধু বসে আছে। প্রসঙ্গতঃ এই সালোনে সাধারণত ১ দিন আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে না গেলে ২ ঘন্টা পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়।

৭ই ডিসেম্বর ২০১৬
একমাস হল। এখনও টাকার যোগান নিয়মিত হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রথমে শুনলাম সাময়িক অসুবিধে কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে তিনদিন। তারপর হল আট - দশ দিন, তারপরে ২১ দিন, তারপরে ৫০ দিন। এখন শুনছি ৬ মাস লাগবে।

ওদিকে আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিৎ প্যাটেলের দেখা পাওয়া গেল টিভিতে, সেই নোটবন্দীর ঘোষণাও মোদীই করেছিলেন, তখনও উর্জিৎকে দেখা যায় নি, তার পরেও না। তবে ইন্টারেস্ট রেট কমল না। অর্থাৎ কালোটাকা সব সাদা হয়ে গিয়ে যে কম সুদে গাড়ী বাড়ী পাওয়ার কথা ছিল সেদিকেও ফক্কা। তবে হ্যাঁ ঋণের সুদ না কমলেও জমা টাকার ওপরে সুদ কিন্তু আগেই কমেছে। যে সব লোক পোস্ট অফিসের মাসিক আয় যোজনায় টাকা রেখে প্রতিমাসে তার সুদ তুলে সংসার চালান, তাঁদের শুধু যে আয় কমেছে তাইই নয়, পোস্ট অফিসে (সারা দেশেই) টাকার যোগান না থাকায় প্রায় কোনওরকম টাকা তুলতেই পারছেন না বহু লোক। যাঁরা টাকা পাচ্ছেন তাঁরাও যৎসামান্য।

১৩ই ডিসেম্বর ২০১৬
আজ কোন্নগর পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম রেভিনিউ স্ট্যাম্প কিনতে। বাইরে একজন দাঁড়ানো, কী প্রয়োজনে এসেছি তা রীতিমত জেরা করে তবে ঢুকতে দিলেন। কিনে বেরোনর পরে বিনয় কাকুর সাথে দেখা, আজ নিয়ে নবম দিন এসে ফিরে যাচ্ছেন এমাইএসের সুদ তুলতে, পোস্টাপিসে নাকি কোনরকম টাকাই আসছেনা। কথা বলতে বলতে আরও কজন জড়ো হলেন, কাউকে চিনি, কারো মুখ চিনি, কাউকে হয়ত একদমই চিনি না। অনেকেই ন্যুব্জদেহ, কেউ কেউ চলতে গেলে কাঁপছেন দেখলাম, দৃষ্টি অধিকাংশেরই ক্ষীণ। এই মানুষগুলি সারাজীবনের পরিশ্রমের সঞ্চয়টুকু তুলতে পারছেন না, কোনও খবরও কেউ দিতে পারছেন না কবে এঁরা টাকা পাবেন।

৩০শে ডিসেম্বর ২০১৬
কোন্নগর থেকে ফিরে দেখছি হাউসিঙের সামনের সব্জিওলাটা নেই। মাছওলা পেটিএমের ব্যবস্থা করে নিয়েছে। ওদিকের বাকি সব্জিওলাদের, যাবার আগেই দেখে গিয়েছিলাআম পেটিএম আর কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ট্র্যন্সফারএর ব্যবস্থা ছিল।দুজন লন্ড্রিওলা যারা পেটিএমের ব্যবস্থা করছিল/করেছে তারা আছে, বালাজি,যে ছেলেটি পেটিএম করতে পারে নি ক্যাশ নিয়ে ইস্ত্রি করছিল সে আর নেই। এই সব্জিওলা বা বালাজি কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না, বলতে পারল না। মোড়ের কমার্শিয়াল মার্কেটের মোমোওলা পেটিএমের ব্যবস্থা করেছে, কার্ড সোয়াপিঙ মেশিনের কথা এখুনি ভাবছে না বলল।

১৬ই জানুয়ারী ২০১৭
এমনিতে ডিমানির প্রথম থেকে সুশীলা আন্টি বেশ হাসিখুশী। আমাকেই ডিসেম্বর জানুয়ারী দুই মাসেই বেশ খান দুই করে দুই হাজারি নোট ভাঙিয়ে দিয়েছে, আরো সব অন্য অন্য বাড়ীতেও যার যার অসুবিধে ছিল আন্টি এনে দিয়েছে তাদের কাউকে দুই হাজার ভাঙিয়ে, কাউকে বা বেয়ারার চেক দিয়ে টাকা তুলে এনে। নিজের বাড়ীর জন্যও নাকি ১০০ টাকার নোটে দশ হাজার টাকা বের করে দিয়েছিল সেই দশই নভেম্বর ওর জমানো শাড়ীর ভাঁজ থেকে। ছেলে নাকি বলেছিল মাম্মি তুমিই তো সবচেয়ে বড়লোক দেখছি। চকচকে একশো টাকার নোট নাকি আলাদা করে সরিয়ে রাখত, সেই রেখে রেখেই দশ হাজার -- অন্তত সেই রকমই বলেছিল তখন।

শনিবার ছিল মকরসংক্রান্তি, সুশীলা আন্টি ছুটি নেয় প্রত্যেক বছরই। রবিবার আমার কাছে আসে সকাল দশটা নাগাদ। এই রবিবারে হঠাৎ পৌনে নটা নাগাদ এসে হাজির, চোখমুখ শুকনো, চোখের কোণে কালি, কিঞ্চিৎ উদভ্রান্ত হাবভাব। শনিবার মকরসংক্রান্তির দিনে কিছু পুরানো একটা ভাল শাড়ী তলা থেকে বের করে পরতে গিয়ে তার থেকে বেরিয়ে এসেছে পুরানো ৫০০ টাকার নোটে দশ হাজার টাকা। এবার বলল আসল কথাটা 'মেরা হাসব্যান্ড পীতা হ্যায়, উনকা হাথসে ছুপানেকে লিয়ে ম্যাঁয়নে চার সাল প্যহলে উধার জমা কিয়া। বিলকুল ইয়াদ নহীঁ থে। তব সোচে থে বেটি কি শাদি কি টাইম কুছ সোনে কা বানাকে দেঙ্গে সির্ফ মেরে তরফ সে, মেরি বেটি কে লিয়ে'।((আমার হাসব্যান্ডের মদের নেশা আছে। চার বছর আগে, ওর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমি ওখানে লুকিয়ে জমিয়ে রেখেছিলাম। তারপর বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। তখন ভেবেছিলাম মেয়ের বিয়ের সময় সোনার কিছু একটা বানিয়ে দেব, আমার মেয়ের জন্য আমার নিজের টাকা দিয়ে) এখন কী উপায়? আমি তো যতদূর জানি এখন আর কোনই উপায় নেই। সেটা বলব কীভাবে ভাবছি, তখন আন্টিই বলল সামনের ফ্ল্যাটের 'ভাইয়া' নাকি বলেছে শিবাজীনগরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ব্র্যাঞ্চ আছে। সেখানে সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে সোমবার সক্কাল সক্কাল যেতে, সঙ্গে ছেলে বা স্বামীকে না নিতে, তাহলে দুই নম্বরী ভাববে। ওখানে কাউকে দুই একশো টাকা দিয়ে ফর্ম ফিলাপ করিয়ে বদলে আনতে। আমি শুনে মনে মনে ভাবলাম এইসব তো কবেই বন্ধ হয়ে গেছে, মুখে কিছু আর বললাম না, যদি হয়ে যায়। অনেকসময় তো নিয়মের ফাঁক গলেও কিছু কিছু জিনিষ হয়েও যায়। কিন্তু নাঃ হয় নি। টাকা বদলানো যায় নি, কারণ তারিখ শেষ হয়ে গেছে ডিসেম্বরেই। আজ আন্টি এল কেমন একটা দিশাহারা ভাবে। আমি ঐ চাউনি চিনি, কত্তবার আয়নায় দেখেছি,। সব আশাগুলো যখন টুপ টুপ করে নিভে যায় তখন অমন দিশেহারা ফ্যালফ্যালে একটা চাউনি আসে।
এরপর টুকটাক কথাবার্তা হয়। "কাল আমি মোদীকে খুব গালি দিয়েছি, এতগুলো টাকা, দুপুরে একটুও না বসে একটা একটা করে বাড়ীতে কারো ঘর মোছা, দুই মাস করে কারো বাচ্চাকে তেল মাখানো, করে করে টাকাগুলো জমালাম ----" ছেলেরা বলেছে, ছেলেদের বাবাও বলেছে মোদী খুব ভাল কাজ করেছে। এমনি করেই সব লুকানো টাকা বেরিয়ে আসবে' বলতে বলতে মুখে ছায়া পড়ে খানিক টাকাগুলো নেই হয়ে যাওয়ায়, খানিক অহেতুক অপমানে। কী বলব ভেবে পাই না, আন্টি নিজেই আনমনা গলায় বলে কীভাবে যে টাকা রাখব, ছেলে বলেছে দু হাজারের নোটও যে কোনোদিন বন্ধ হবে। আমি বলি ব্যাঙ্কে রাখ না কেন আন্টি? ব্যাঙ্কে রাখলে তো এই টাকাগুলো তোমার যেতও না, হাসব্যান্ডেও নিতে পারত না। আন্টি কেমন নিরুপায় চোখে তাকিয়ে বলে ‘আমি যে একটা আখরও দিতে পারি না, সঙ্গে একটা লোক লাগবে। ব্যাঙ্ক কতদূর আমাদের গাঁও থেকে। কাঊকে নিয়ে গেলেই সব জানাজানি হয়ে যাবে যে’ আমি বলি ‘আমি নিয়ে যাব আন্টি’। আন্টি বলে তুমি তো এখানে ক'বছর থেকে তারপর চলে যাবে, তারপর? আমাদের গাঁয়ের থেকে কতদূর ব্যাঙ্ক। সেখানে যেতে গেলে কাউকে নিয়ে যেতে হয়, গাঁয়ের সবাই জেনে যাবে, হাসব্যান্ড তো সাংঘাতিক কান্ড করবে (কে জানে হয়ত মারবেও)। বলে ‘মেয়েরা এসে আমার কাছেই চুল কাটার জন্য দুই একটা কানের দুল কেনার জন্য টাকা চায়। ভাইদের কাছে চাইলে দেয়ও না, উলটে হয় হাসে নয় বকে। ব্যাঙ্কে রাখলে কী করে হবে আন্টি? ছোটেমোটে কাম কে লিয়ে ব্যঙ্ক যানা না মুমকিন হ্যায় আন্টি’। ((ছোটখাট কাজের জন্য ঘনঘন ব্যাঙ্ক যাওয়া সম্ভবই নয়)
ক্যাশলেস ভারতে সুশীলা আন্টিরা কী করবে তাহলে?

২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০১৭
বোম্বে, পুনে, নাসিক, আকোলা, নাগপুর, উলহাসনগর, সোলাপুর মিউনিসিপালিটির নির্বাচন ছিল ২২ তারিখ। আজ ফল প্রকাশিত হতে দেখা গেল, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা বোম্বে মিউনিসিপালিটি কোনওক্রমে বিজেপীর কাছাকাছি সিট পেয়েছে, বাকী সবকটাতেই বিজেপী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। শরদ পওয়ারের NCP তৃতীয় স্থানে হলেও কার্যত প্রায় ধুয়ে গেছে। আর সম্পূর্ণ ধুয়ে গেছে উদ্ধবের ভাই রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নভ্নির্মাণ সেনা। সেই রাজ ঠাকরে যে ২০০৮ এ সমস্ত বিহারী শ্রমিককে পুণে ও আশপাশ থেকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিল, এই সেদিন যে পাকিস্তানি আর্টিস্টকে সিনেমায় নেবার অপরাধে পরিচালকদের প্রায় মাথা কাটার নিদান হাঁকছিল।

তো, মোটামুটি দেখা যাচ্ছে নোটবন্দীর জন্য বিজেপীর ভোট বেড়েই গেছে। ভারতের অর্থনীতি অনেক ক্ষেত্রেই ঈর্ষাদ্বারা চালিত হয়। এক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। আমাদের কষ্ট হচ্ছে হোক, বড়লোকদের, প্রোমোটারদের তো জমা টাকা সব এবার কেমন চাপে পড়েছে না? নোটবন্দীর শুরুর দিকে ১০-১১ নভেম্বর নাগাদ সুশীলা আন্টির খুশী খুশী গলার আওয়াজ মনে পড়ে "শরদ পওয়ারকো তো পুরা লাগি হুই হ্যায়" বাংলা করলে অনেকটা মানে দাঁড়া শরদ পওয়ারের কেমন পেছনে বাঁশটা ঢুকেছে! সব কষ্ট সহ্য করে নেবার ঐটাই চালিকাশক্তি। অথচ কোনও বড়লোকের কিস্যু লাগে নি, সব যে যার সেটিংস ট্ড়িকঠাক করেই নিয়েছে। আর এমনিতেই কালোটাকা মানে তো আর এই ২০১৭ তে সত্যিই টাকা নয়, অন্য অনেক কিছু। ইতিমধ্যে এখানে অবশ্য এটিএমগুলোতে টাকার যোগান প্রায় ঠিকঠাক। ৫০০র নোট একটু কম, ২০০০র নোট একটু বেশী, কিন্তু কাজ ভালই চলে যায়। আর হ্যাঁ এটিএম অন, পেটিএম গন। এটিএমে টাকা আসতেই তরকারীর দোকানগুলোর পেটিএম নাম্বারের জায়গায় ডট ডট করে দিয়ে ক্যাশ টাকায় ফেরত। মাছওয়ালা, চিকেনওয়ালা অবশ্য পেটিএম নিচ্ছে।

১১ইমার্চ ২০১৭
আজ ছিল পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন। নোটবন্দী তথা ডিমনিটাইজেশানের সময় থেকে বিজেপী এবং বিরোধীরা একাগ্র হয়ে লক্ষস্থির করে এই রাজ্যকটির নির্বাচনের দিকে, বিশেষত উত্তরপ্রদেশ। ভারতের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিজেপী বিধানসভা দখল করতে পারলে প্রায় ধরে নেওয়াই যায় ২০১৯ এও লোকসভায় বিজেপীই আসছে। মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি ও মুলায়ম সিং যাদব ও পরবর্তীতে তস্য পুত্র অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি গত চোদ্দ পনেরো বছর বিজেপীকে ইউপির মসনদের দিকে ঘেঁষতে দেয় নি। এদিকে পাঞ্জাবে শোনা গেছিল কেজরিওয়ালের 'আপ' সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। ওদিকে মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রী ইবৈয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ইরম শর্মিলা চানু। গোয়া ও উত্তরাখন্ড ছিল বাকী দুটি রাজ্য।

তো, ফল বেরিয়ে গেছে। বিজেপী দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ইউপি এবং উত্তরাখন্ডে। পাঞ্জাবে কংগ্রেস নিরঙ্কুশ। গোয়া ও মণিপুরে কেউই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় নি, তবে কংগ্রেস কিছু আসনে এগিয়ে রয়েছে এই দুইটি রাজ্যেই। প্রথমে ইউপির কথাই একটু বলি। দেখাই যাচ্ছে লোকে নোটবন্দীর কষ্ট সহ্য করেও বিজেপীকে গ্রহণ করেছে, ঐ আমার কষ্ট হয় হোক, বড়লোকদের তো ফাটছে (সত্যি ফাটছে কিনা কে আর অত দেখতে যায়)। অন্য যেটা ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট সেটা হল ইউপিতে বিভিন্ন জাত ও ধর্মের লোকের সংখ্যা প্রচুর। এসসি, এসএসটি, ওবিসির অজস্র ভাগ এবং বেশ ভাল সংখ্যক মুসলমানের ভোট বিজেপী পেয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সেকুলারিজম ও লিবারেলিজমের নামে অল্প কিছু গোষ্ঠীকে পাইয়ে দেওয়া ব্যপারটাকে মানুষ ছুঁড়ে ফেলতে শুরু কারেছে। যেমন মুসলিম মহিলাদের দুটি সংগঠন ভোটের আগেপরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়েছেন মোদী সরকার যেহেতু তিন তালাক প্রথা রদ করার ব্যপারে সত্যিকারের সদিচ্ছা দেখেছে, তাঁরা মনে করেন বিজেপী এই ব্যপারে সিরিয়াস, তাই তাঁরা বিজেপীকেই ভোট দিয়েছেন ও দেবেন। তাঁরা সব মুসলিম মহিলাদেরই বিজেপীকে ভোট দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তো, এরকম অখিলেশের কাছে যে শ্রেণীগুলি সুবিধে পেয়ে আসছে, মোদী ও অমিত শাহ তাদের বিপক্ষ শ্রেণীদের টার্গেট করে বোঝাতে সফল হয়েছেন।ক্ষমতা পেয়ে গেলে বাকীদের হাতে আনা তো দুই টুসকি র ব্যপার।নোটবন্দী বা তজ্জনিত অসুবিধে এখানে ততবড় ফ্যাক্টর হয় নি। লোকে এখনও স্বপ্ন দেখছে যে উন্নতি হবে। আর একটা ব্যাপার গত কিছু নির্বাচন ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে সেটা হল লোকে আঞ্চলিক দলগুলোকে আর ভরসা করছে না। আর জাতীয় দল বলতে কংগ্রেসের হাল রাহুলকে না সরালে বদলানোর কোনও আশা তো দেখছি না।

যাগ্গে নির্বাচন নিয়ে বলতে গেলে আস্ত একটা পোস্টই দরকার। সে থাক। সংক্ষেপে এইটুকু বলার যে নোটবন্দীর ফলে মানুষের যে চুড়ান্ত দুর্ভোগ হয়েছে, মানুষ সেটা মেনে নিয়েছে এবং তার জন্য বিজেপীর কোনও দুর্ভোগ পোয়াতে হয় নি। অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়বে তা এক্ষুণি বলা মুশকিল। আঁখো দেখি হালে কিছু ক্ষেত্রে মন্দাই দেখছি। কিন্তু সে হয়ত শুধুই সীমিত ক্ষেত্রে। কিছু বছর গেলে ঠিক করে বোঝা যাবে হয়ত। আপাতত জিডিপি প্রোজেকশান ৭% রেখেছে সরকার, যেটা আবার বিভিন্ন্মহল থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে যে ইনফ্লেটেড। কাজেই আপাতত জল যথেষ্ট ঘোলা। কালোটাকা ধরা পড়বে বলে যা বলা হয়েছিল তার কোনও পরিস্কার হিসেব আসে নি। সীমান্ত থেকে চোরাচালান হয়ে আসা জাল টাকার যোগান বন্ধ হবে বলে বলা হয়েছিল, সেটাও হয় নি। এই চার মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২০০০ এর নোটে প্রচুর জাল টাকা উদ্ধার হয়েছে, কাজেই জালিয়াতরা যে ঝটাপট জাল করে ফেলেছে সে তো দেখাই যাচ্ছে। কাশ্মীরে সন্ত্রাস বন্ধ হবে এও বেশ ঘটা করে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাও হয় নি। এর মধ্যে একটি বড় ও বেশ কিছু খুচরো অ্যাটাক হয়েছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তান্ডবও অব্যাহত। কাজেই সবই যাকে বলে বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল। মাঝখান থেকে লোকের মনে এই ধার?ণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে দ্যাখো মোদীই একমাত্র লোক যে শুধু গরীব নয় বড়লোকদেরও সব টাকা কেড়ে নিয়ে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

আর যে কথাটা বলে শেষ করব সেটা হল ইরম শর্মিলা চানুর ৯১ ভোট পেয়ে হার । বিভিন্ন জায়গায় দেখছি অনেকেই খুব বিস্মিত দুঃখিত। তো, যেটা বলার সেটা হল, শর্মিলা তাঁর পরিবার ও নিকট একটি বৃত্তের কাছে এক কাল্ট ফিগার ছিলেন যাকে ভাঙিয়ে দেশ বিদেশের ডোনেশান পাওয়া যায় ও এক উচ্চ সম্মানের আসন পাওয়া যায়। উনি অনশন ভঙ্গ করার সাথে সাথেই ঐ বৃত্ত সেটি খোয়ায়। ফলে ওঁর পরিবার ও নিকটজনেরা প্রচন্ড বিরোধীতা করেছিলেন অনশন ভঙ্গ করার সিদ্ধান্তের।

এরপর ভোটে লড়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা তো বোধহয় মণিপুরের বহু লোকই করেছিল বা এরকম কিছু খবর দেখেছিলাম। এবার এই দীর্ঘ ১৬ বছরে শর্মিলা ও মণিপুরের জনগনের মধ্যে যোগসূত্র ছিল সেই লোকগুলো যাদের শর্মিলা অনশনে থাকলেই লাভ বেশী। কাজেই তাদের সৃষ্ট ইমেজেই মণিপুরে শর্মিলার ইমেজ মূলত। এর মধ্যে উনি নিজে কতটা কি জনসংযোগ করতে পেরেছেন আমার খুব সন্দেহ আছে। এছাড়া নব্বইয়ের দশক বা শুন্যের দশকে AFSPA যেমন জ্বলন্ত সমস্যা ছিল এখন তো আর তা নেই। মণিপুরে এখন মূল সমস্যা পাহাড়ের নাগাদের থেকে উপত্যকার স্বার্থ কে রক্ষা করবে? ক্লিয়ারলি মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি শর্মিলার থেকে কয়েকশো মাইল এগিয়ে থাকবেন এখানে। এই মুহূর্তে নাগা ভার্সেস মেইতেই জ্বলন্ত সমস্যা AFSPA কারো চিন্তাতেই নেই, কাজেই শর্মিলার হার অত্যন্ত দুঃখজন হলেও আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চৌদ্দ মাসেরও বেশি সময় পরে লিখলেন, ধন্যবাদ। গদ্য যথারীতি ঝরঝরে, গতিশীল। হিন্দীগুলো ব্রাকেটে বাংলা করে দিলে হিন্দী না-জানা পাঠকের একটু সুবিধা হয়।

সামান্য শুদ্ধিঃ
“এক তো ৫০০ হলে ১০০ আর ১০০০ হলে ২০০০ ন্যুনতম কমিশান আর অন্যদিকে লকটি যখন কমিশানের দরাদরি ো খুচরো বুঝে নিতে ব্যস্ত থাকে তখন শুন্যের কাঁটা নড়িয়ে দিয়ে ওইদিক থেকেও খানিকটা তেল মেরে নিচ্ছে। “ > এক তো ৫০০ হলে ১০০ আর ১,০০০ হলে ২০০ ন্যুনতম কমিশান আর অন্যদিকে লোকটি যখন কমিশানের দরাদরিতে খুচরো বুঝে নিতে ব্যস্ত থাকে তখন শূন্যের কাঁটা নড়িয়ে দিয়ে ওইদিক থেকেও খানিকটা তেল মেরে নিচ্ছে।

প্রসঙ্গ মুদ্রারহিতকরণঃ
নোট বাতিল করা বা শেষের কয়েকটা শূন্য কমিয়ে দেয়াতে আসলে কোন দেশে, কবে, কয়টা রাঘব বোয়াল ধরা খেয়েছে? সুইস ব্যাংকগুলো বা অন্য সব দেশে তাদের ভায়রা ভাই ব্যাংকগুলোতে সুশীলা আন্টিদের টাকা থাকে না। যাদের থাকে তাদের এসবে কিছু হয় না। বালিশ-তোষক-জাজিম-গদির ভেতরে যাদের নোটের বান্ডিল ছিল তাদের টাকাও সামান্য ‘লুব্রিকেশন’-এ ৫০০/২,০০০-এর নোটে পালটে গেছে। গরিব, হতদরিদ্র মানুষের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে বা ট্রানজেকশন দেখিয়ে বা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে এমনটা দেখিয়ে কতো টাকা পালটে গেছে তার কি কোন হিসেব আছে? এই যে পাঁচটা রাজ্যে ভোট হলো তাতে এক ইউপি’তে বিলিয়নের হিসেবে নগদ খরচ হয়েছে এর হিসেব কি কেউ দিয়েছে, নাকি নিয়েছে? মাঝখান থেকে সুশীলা আন্টিদের কষ্টের টাকা মার গেলো, সবজিওয়ালা বা বালাজি যথাসর্বস্ব হারিয়ে মুটে-মজুর হয়ে গেলো।

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ফ্যাসিবাদ কিছু দিন পর পর এক একটা সেনসেশন তৈরি করে, এক একটা হাইপ তোলে, এক একটা বিপ্লবের ডাক দেয়। এতে ক্ষমতাকাঠামো আর কর্তৃত্বকাঠামোর বাইরে থাকা সাধারণ মানুষই বলি হয়। তা বলি তাদেরই হবার কথা। ভোট দিয়ে বৃত্রাসুরকে তারাই ক্ষমতায় বসিয়েছিল, তার আগে তাকে খিচ্‌রী, ধোক্‌লা, হান্ডবো, থেপ্‌লা ইত্যাদি খাইয়ে ধর্মের ষাঁড়টি বানিয়েছিল। দোষ তাদের একার নয়, তবে কোপ্‌টা তাদের উপরেই পড়বে।

পুনশ্চঃ চেতন ভগত ধরনের কেউ ‘লভ্‌ ইন দ্য টাইম অভ ডিমনিটাইজেশন’ ধরনের রগ্‌রগে বই এখনো বাজারে ছাড়েনি!

প্রসঙ্গ সুদের হারঃ
এতোদিন ধারের টাকার ওপর সুদের হার বিয়োগ জমা টাকার ওপর সুদের হারের যে বিরাট ফারাক তার সাথে এই চার্জ ওই চার্জ মিলিয়ে ব্যাংকগুলো রমরমিয়ে চলেছে। ধার দেয়া টাকার যে অংশটুকু খেলাপী হলো বা অবলেপন হলো সেটার ধাক্কা সামলাতে জমা টাকার ওপর সুদ ক্রমাগত কমছে। ধারের ওপর সুদের হার কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকার তো বটেই তার সাথে বাইরের গুরুজনদেরও নানা প্রকার চাপ থাকে। তাছাড়া রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রে লুটেরাবৃত্তি থাকলে রাষ্ট্র চায় নাগরিকরা ছোট আকারে টাকা জমিয়ে না রেখে শেয়ার বাজারের সেকেন্ডারী মার্কেটের মতো ফাটকাবাজীতে নামুক। কোন ফর্মুলা না মেনে চলা, মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শেয়ার বাজারে আকছার 'কালো শুক্রবার' বা 'কালো সোমবার' নামানো হয়। এতে গরিবের পুঁজিপাটা নাই হয়ে যায়। ওদিকে উচ্চ সুদের হারের জন্য ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না বলে কান্নাকাটি করে। ফলাফল ব্যাংকে অলস টাকা। সেই টাকা ডিম পাড়ে না বলে জমা টাকার সুদের হার আরও কমে বা নানা প্রকার নতুন নতুন চার্জ যুক্ত হয়। রাষ্ট্রের রিজার্ভ বাড়ে বলে সরকার কলার ঝাঁকায়, কিন্তু টাকার নিচে চাকা না লাগলে কলার ঝাঁকুনি কোন ফল দেয় না। যে ব্যবসায়ীদের পার্টির জোর আছে তারা নানা প্রকার থোক বরাদ্দ পায় বা প্রণোদনার নামে কম হারের সুদ পায়। পোস্ট আপিসে বা ব্যাংকে টাকা জমিয়ে মাস শেষে সুদ তুলে চলার দিন শেষ। বিদ্যমান পেনশন স্কিমগুলো নয়, নতুন ধারার পেনশন ব্যবসা দরকার। যেখানে ব্যবসায়ের লাভ ভাগাভাগির ব্যাপার থাকবে আর বীমা কোম্পানী বিনিয়োগের ঝুঁকি শেয়ার করবে।

প্রসঙ্গ আঞ্চলিক দল বনাম জাতীয় দলঃ
আঞ্চলিক দলগুলোর বড় সমস্যা সেগুলো ক্যারিশমেটিক লিডারশীপের ওপর নির্ভরশীল। দলের ভেতর গণতন্ত্রের ঘাটতি, বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হতে না দেয়া, একক নেতৃত্বের চারপাশে দেয়াল তৈরি করা পলিটিক্যাল মাফিয়ার দল, আর মূলত সীমিত কিছু ইস্যুভিত্তিক রাজনীতি একসময় দুম্‌ করে আঞ্চলিক দলগুলোকে ‘নাই’ করে দেয়। নেতার শারিরীক বা রাজনৈতিক মৃত্যু, মাফিয়াদের ভিন্ন মৌচাকের সন্ধানলাভ, ইস্যু ফুরিয়ে যাওয়া – এগুলো আঞ্চলিক দলগুলোকে ‘নাই’ করার জন্য যথেষ্ট। ভারতের মতো বহুজাতিক-বহুভাষিক দেশে উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী আঞ্চলিক দলের বিকল্প নেই। কিন্তু বাইরের দুনিয়ায় চলতে গেলে দুয়েকটা জাতীয় দলও লাগে যারা ছাতা ধরার কাজটা করবে। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আর উগ্র জাতীয়তাবাদ এই শতকে আবারও মাথা তুলে দাঁড়ানোতে ভারতে সংঘ পরিবার ক্ষমতা কেন্দ্রে চলে যেতে পেরেছে। ভারতকে আরও কয়েকটা দশক ভাঙচুর আর ওঠানামার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

পুনশ্চঃ একটা শক্তিশালী, সেক্যুলার, প্রগতিশীল জাতীয় দল ভারতে অতি অবশ্য দরকার। তবে সেটা পাপ্পু আর তার মা-বোনদের দিয়ে হবে না। মাফলার ঝোলানো এনজিওবাজদের দিয়েও হবে না।

প্রসঙ্গ মণিপুর আর শর্মিলাঃ
মণিপুরের স্বাভাবিক রাজনীতি আর সশস্ত্র রাজনীতির অন্যতম ভিত্তি ছিল AFSPA, অহমীয়া, বাঙালী আর মুসলিম বিরোধীতা। গত কয়েক দশকে কেন্দ্র উত্তর ভারতে একটা নতুন ইস্যু সফলভাবে বাজারজাত করতে পেরেছে। সেটা হচ্ছে ‘বাংলাদেশী খেদাও’। ভীন রাজ্য থেকে কেউ এসেছে? ব্যাটা নিশ্চয়ই বাংলাদেশী! এই লোক বাংলায় কথা বলে? ব্যাটা অবশ্যই বাংলাদেশী! এ কি মুসলিম? ব্যাটা বাংলাদেশী না হয়ে আর যায় কোথা! ২০১৪ সালের ৫ই মার্চ ডিমাপুরের জেলখানা থেকে সৈয়দ ফরিদ খানকে বের করে পিটিয়ে মারার কথা মনে আছে! এই রকম সব ডামাডোলে মণিপুরে যেভাবেই হোক নাগা’রা সংখ্যায় বেড়েছে, শক্তি অর্জন করেছে, এবং এখন ক্ষমতা কেন্দ্রে চলে যেতে পারছে।

শর্মিলা যে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন সেটা রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করে দাবি আদায় করা উচিত ছিল। কারণ, বিষয়টা রাজনৈতিক। কিন্তু সুবিধাবাজরা সেই রাজনীতিটা হতে দেয়নি, বরং শর্মিলাকে ঘিরে একটা সেনসেশন তৈরি করে টাকা লুটেছে। শর্মিলা যখন বুঝেছেন বিষয়টাকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে হবে তখন তাঁর উচিত ছিল যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামা। তাছাড়া সংঘশক্তি ছাড়া রাজনীতির মাঠে একা লড়াই করা যায় না। পোত্তি শ্রীরামুলু অনশনে প্রাণ দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু তার সাথে সাথে রাজনৈতিক লড়াইটাও ছিল। এজন্য তাঁর প্রাণ বিসর্জনের এক বছরের মধ্যে দাবি আদায় হয়েছিল।

পুনশ্চঃ গেরুয়া সমর্থন করা নাগা ক্রিশ্চান আর উত্তর ভারতীয় মুসলিম গ্রুপগুলোর নেতাদের কেউ কেউ এখন রাবড়ী-ক্ষীর খেতে পাবে বটে তবে বাকিদের কপালে ছোটবড় গোধ্‌রা, গুলবার্গ ইত্যাদি ইত্যাদি জোটে কিনা সেটা দেখার বিষয়।

দময়ন্তী এর ছবি

এইত্তো এইত্তো এই মন্তব্যটা ফিরে এসেছে আবার। এখন ইঁট পেতে যাই, পরে সময় করে উত্তর দেব। হাসি

কিন্তু কি অবস্থা। সচলে লোকজন নাই আর ভুতের উৎপাত। ঠিক দুক্কুরবেলা, ভুতে মারে ঢেলা। মন খারাপ

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দময়ন্তী এর ছবি

হুঁ ২০১৬তে কিস্যুই লিখতে পারি নি। গত সপ্তাহে দুমদাম করে একসাথে তিনখানা লিখে ফেললাম।

যাই হোক ঠিকঠাক করে আর হিন্দীর বাংলাগুলো দিয়ে দিলাম।

ভোটের জন্য নোটবন্দীটা তো মনে হচ্ছে মাস্টারস্ট্রোক ছিল। লোকটা সাহস করে প্রায় একার সিদ্ধান্তে মাঠে নেমেছে এবং সেটা নিজের অনুকুলে নিয়ে এসেছে। বিজেপীরও খুব টপব্রাস কিছু জানত আগে থেকে। যেমন কলকাতায় ঐ ৮ই নভেম্বর দুপুরেই বিজেপীর তরফে একটি রাস্ত্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তিনকোটি টাকা জমা করা হয়েছিল ১০০০র নোটে, কাগজে পাসবইয়ের ছবিও বেরিয়ে গেছিল। তো, এরা তো জানতই যে মাঝরাত থেকে ১০০০ র নোট বাতিল হচ্ছে।

যে কোনও রাজ্যের ভোট মানে প্রচুর কাঁচা টাকার খেলা। এইখানটায় ইউপিতে অন্য দলগুলো হঠাৎ নোটবন্দী হয়ে যাওয়ায় ভাল ধাক্কা খেয়েছে। উল্টোদিকে তাদের লম্ফঝম্পে লোকে বিশ্বাস করেছে যে দ্যাখো ওদের অনেক কালো টাকা তাই কান্নাকাটি করছে।

সুদের হার প্রসঙ্গে হ্যাঁ পুশ এখন ইক্যুইটি বেসড মার্কেটের দিকে। সেটা আমরা হয়ত আমাদের রিটায়ার্ড লাইফের জন্য ভাবতে পারি। কিন্তু সত্তরোর্র্ধ লোকেদের পক্ষে পরিস্থিতি দিন দিন প্রতিকূল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আপ প্রসঙ্গে অন্তত দিল্লীতে যে বিজেপীকে রুখেছে সেটাও একেবারে ফ্যালনা নয় বলেই মনে করি। গোয়াতে ওদের নিয়ে ভয় পেতে আমার বিজেপী কলিগদের দেখেছি। এখান থেকে বিজেপীর ছেলেপুলেরা গোয়া গেছিল ভোট করাতে। মহরাষ্ট্রে বসে বিজেপী, শিবসেনার বাইরে ইভিএম মেশিনে টিপবার জন্যও তো আরো এক আধটা বোতাম দরকার।

গোধরা ফোধরা তো অনেক দূর। মুজঃফরনগর এখনও অনেক টাটকা। এখনও অনেক লোক ঘরে ফিরতে পারে নি। কিন্তু তারপরেও বিজেপী ভোট পেয়েছে, কিছুটা হয়ত ভয়ে যে না দিলে কী হতে পারে সেই আশঙ্কায়।

উত্তরপূর্বে অ্যাক্টিভ মিলিটারি আউটফিট এখন অরুণাচল ছাড়া আর কোথাও খুব একটা নেই যতদূর জানি। অরুণাচলটা রাখতেই হবে, অন্যগুলো শুনেছি আস্তে আস্তে ডোরম্যান্ট করে দেবার প্ল্যান বা অলরেডি দেওয়া হয়েওছে। সেখানে শর্মিলাকে বর্তমান সমস্যাগুলো বুঝে তার সমাধানে এগোতে হবে, যদি রাজনৈতিক জীবন তৈরী করতে হয়।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতিথি লেখক এর ছবি

কেন্দ্রে যারাই থাকুক উত্তর-পূর্বের ক্ষেত্রে এখন পলিসি একটাই - ডিভাইড এন্ড রুল। বাংলাদেশী (আসলে ভারতীয় বাঙালী) বনাম অহমিয়া/বোড়ো/খাসি/ত্রিপুরা/মৈতৈ/মণিপুরী/নাগা/মিজো/কুকি ইত্যাদি তো সবচে' জোরালো ভাবে আছে তার সাথে মৈতৈ বনাম নাগা, খাসি বনাম গারো/হাজং, ন্যৈশি বনাম আদি, অও বনাম কন্যাক/লোথা/আঙ্গামী প্রভৃতি ছোট ছোট বিভাজনও আছে। এই দেখুন মণিপুরে কংগ্রেসীদের সাইজ করতে নাগা ইসাক-মুইভা সশস্ত্র গ্রুপটাকে ব্যবহার করে ভোট রিগিং করা হলো। অসমের নির্বাচনের সময় 'বাংলাদেশী খেদাও' ইস্যু তুলে এমন চেঁচামেচি জুড়ে দেয়া হলো যে তার ধাক্কায় গগৈ-মোহান্ত-আজমল ধুয়ে মুছে গিয়ে 'আচ্ছে দিন' চলে এলো। একই প্রকার ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি খাটিয়ে মণিপুরেও 'আচ্ছে দিন' এনে ফেলা গেলো। 'বাঙালীর নরকে দারোয়ান লাগে না' গল্পের কায়দায় এখন উত্তর-পূর্বে 'শান্তি' বজায় রাখতে আর ফৌজী ভাইদের লাগবে না, এরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি করে 'আচ্ছে দিন' টিকিয়ে রাখবে।

মুস্তাফিজ এর ছবি

হোগা করিব পান ছেসো।

এটার মানে কি "হবে হয়ত পাঁচ ছ'শো"?

...........................
Every Picture Tells a Story

দময়ন্তী এর ছবি

হ্যাঁ একদম হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দময়ন্তী এর ছবি

হে মহান মডুগণ, আরো একটা মস্ত মন্তব্য ছিল যে অতিথি প্রোফাইল থেকে, পয়েন্ট ধরে ধরে। বানানগুলো আর ভুলত্রুটিগুলো ঠিক করে একটু সময় নিয়ে বসে সেটার উত্তর দেব ভেবে রেখেছিলাম যে। সেটা কোথায় হাওয় হয়ে গেল, একটু দেখবেন প্লীজ।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মন মাঝি এর ছবি

এইখানে প্রথমেই একটা বিরাট এবং চমৎকার অতিথি মন্তব্য ছিল। গেল কোথায় বুঝতে পারছি না। অতিথিরা তো মন্তব্য এডিট / ডিলিট করতে পারেন না বলেই জানি! হাসি

****************************************

দময়ন্তী এর ছবি

এই এখন দেখছি আবার ফিরে এসেছে।

ক্কি ভুতুড়ে কান্ড দেখুন দিকি!

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইটা রাইখ্যা গেলাম...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

দময়ন্তী এর ছবি

??

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মানে, সময় নিয়ে পরে পড়ব!হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

শামীম এর ছবি

কাজের কাজ হল কি না সেটা বোঝা না গেলেও বোঝা গেল যে বেশ ভালরকম হ্যাপা গিয়েছে ...

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

দময়ন্তী এর ছবি

গিয়েছে তো বটেই, এখনও যাচ্ছে। কখন যে সব এটিএম শুন্য হয়ে যাবে, কেউ জানে না। এমনও দেখেছি জানেন, এটিএমে টাকা ভরার গাড়ী আসছে দেখে বাইকসমুহ পাঁই পাঁই করে ইউ টার্ন করে টাকার গাড়ীর পেছন পেছন চলতে শুরু করেছে। মানে লোকে এতটাই মরীয়া যে যেখানে গিয়ে টাকা ভরবে, সেখানেই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়বে যদি লাইন কম থাকে, কিছু পাওয়া যায়।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

মোদীজী যে যে সেক্টরকে টার্গেট করে এই যজ্ঞ শুরু করেছিলেন, তাদের মধ্যে একটি পক্ষের যে কোন কিছুই করা যাবে না সেট বোধ হয় সবাই জানতেন, মোদীও। তারা হলেন দেশের কেষ্টু বিষ্টু, তাদের টাকা পয়সার ক্লিন অংশ দেশে এবং অক্লিন অংশ বিদেশের নানা ব্যাংকে থাকে, ৫০০ হাজার টাকার নোট তারা ছুঁয়েও দেখেন না। সুশীলা আন্টি, সব্জিওয়ালা, কিংবা পেনশনভোগী বুড়ো মানুষেরা বেশ কয়েকমাস বেজায় ভুগলেও মোদীর টার্গেটকৃত একটি অংশ কিন্তু ধরা খেয়েছেন বলেই মনে হয়, যেমন জাল টাকার বড় কারবারীরা। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বাজার লক্ষ কোটি টাকার জাল নোটে সয়লাব করা হয়েছে, সে সবই এখন পানি হয়ে গেছে। আবার সমপরিমাণ টাকার প্লাবন ঘটানো দু-এক মাস বা বছরের কাজ নয়। আর এক অংশ হল রাজনৈতিক ফাটকাবাজ।তোলাবাজের দল, যাদের হাতে কোটি কোটি টাকা থাকে, যার প্রায় সবই কালো টাকা। ব্যাংকের লোকজনকে ম্যানেজ করে সেসব টাকার পুরোটাই জল থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে হয় না। মমতা দিদির যে ব্যাপক ক্ষোভ, তার আসল কারন নাকি এই যে, তাঁর দলের চ্যালা চামুন্ডাদের অনেকের টাকাই গভীর সলিলে সমাধিস্থ হয়ে গেছে।

দময়ন্তী এর ছবি

ছোটোখাট বিল্ডার প্রোমোটার মার খেয়েছে। হুন্ডির ব্যবসা ভাল ঝাড় খেয়েছিল। কারেন্সি কাউন্টারফেইট শুরুতে মানে ধরুন জানুয়ারী অবধি ভালই দমে ছিল। আস্তে আস্তে আবার ভাল কোয়ালিতির জালনোট পাকিস্তান থেকে আসতে শুরু করেছে।

হ্যাঁ মমব্যানের লাফালাফির সেটাই কারণ তো বটে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তো একবার বলেই ফেলেছিলেন নিয়মটা একদিন সকাল ন'টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত প্রত্যাহার করলেই 'জনগণের অনেক উপকার হবে'। দেঁতো হাসি বোঝাই গেছিল উনি সেটিংস সব করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু মোদীভাই দিদিভাইয়ের কথাটা রাখলেন না--- কি আর করা।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

হাসিব এর ছবি

লোকজন ভোট দেবার সময় এই দুর্গতির কথা গুরুত্ব দেয়নি। কেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

লোকজন ভোট দেবার সময় পুরনো কথাবার্তা কি বিশেষ মনে রাখে? যদি মনে রাখে তাহলে দেশে দেশে রাক্ষসেরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয় কী করে! আবার তাদেরই ভোটে রাক্ষস নির্বাচিত হয়ে যাবার পরের দিন থেকে লোকে রাক্ষসের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করে কেন?

দময়ন্তী এর ছবি

গুরুত্ব দেয় নি দুটো কারণে
১) এইরকম দড়াম করে কাজ করে ফেলায় লোকের মনে 'লৌহপুরুষ' ইমেজটা বেশ শক্তপোক্ত হয়েছে। ধরে নিয়েছে যে যা বলছে তা তো এক্সিকিউট করছে, তাহলে সামনে সত্যিই ভাল কিছু আছে।
২) আমার যত কষ্টই হোক ঐ পাড়ার মোড়ের বিল্ডার/প্রোমোটার বা কচিনেতার তো আরো বেশী ফাটছে। বেশ হয়েছে ব্যটার অনেক জমানো টাকা নির্ঘাৎ নষ্ট হচ্ছে - এই অ্যাপ্রিহেনশান।
এইসময় যে কিরকম গুজব ছড়িয়েছে ভাবতে পারবেন না। পশ্চিমবঙ্গে সব ডাক্তারদের নামে এমন গুজব ছড়িয়েছে যে তাঁদের টাকার শোকে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে, বা বাড়ীতে আইটি রেড হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি শেষে কেউ কেউ কাগজে রীতিমত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে বাধ্য হয়েছেন যে তাঁরা সুস্থ আছেন। এই গুজবগুলো সব লোকের উইশফুল থিংকিঙের ফল। হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মেঘলা মানুষ এর ছবি

কেউ কেউ কাগজে রীতিমত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে বাধ্য হয়েছেন যে তাঁরা সুস্থ আছেন।

-বলেন কি? বড়লোক ডাক্তার মরার গুজবের তো দেখি ভালোই কাটতি চোখ টিপি

আমাদের উপমহাদেশে, "বাপের ব‌্যাটা করে দেখিয়েছে!" এই জিনিসটার প্রতি একরকম মোহ আছে। বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ-কে অনেকে মিস করেছেন অনেকদিন এই কারণে।

শুভেচ্ছা হাসি

হাসিব এর ছবি

আমাদের উপমহাদেশে, "বাপের ব‌্যাটা করে দেখিয়েছে!" এই জিনিসটার প্রতি একরকম মোহ আছে।

সামরিক শাসনের মধ্যে থাকা বাংলাদেশ আর পাকিস্তানে এটা আছে। ইন্ডিয়ার বিবর্তন সামরিক বাহিনীর মধ্যে থেকে হয়নি। অতয়েব, রেজিমেন্টেশন পছন্দ করে বলে এরকম সমর্থন এটা এভাবে সহজে বলে সম্ভব না মনে হয়।

দময়ন্তী এর ছবি

সর্বত্রই কিছু লোক বোধহয় থাকেই যারা এই 'করে দেখিয়েছে' ব্যপারটা খুব পছন্দ করে। সেরকম লোক ভারতেও প্রচুর আছে। কাজেই তারা খুশী হয়েছে ও মুক্তকন্ঠে বলেছে এখনও বলছে।

কিন্তু অন্য আরেকটা ব্যপার হল এর আগে বেশ অনেকদিন মিলিজুলি সরকার চলার ফলে অনেক ন্যায্য সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে অনেকসময়ই সরকারকে খুব বুঝেশুনে মেপে পা ফেলতে হয়েছে। সেই সময়গুলোতে মোদী ও বিজেপীর আইটি সেল, আরএসএসের নগর বা গ্রামের শাখা সমানে লাগাতার প্রচার চালিয়ে গেছে যে ঐ সরকার দুর্বল, কোনও কাজের না, কোনও দরকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ইত্যাদি। সাধারণ মানুষ আগাগোড়া মনমোহন সিংকে সোনিয়া গান্ধীর পুতুল হিসেবে দেখে এসেছে, যে নিজে থেকে একটা কথাও বলতে পারে না। ফলতঃ ইন্দিরা গান্ধীর পর একজন নেতা যিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এরকম একটা ইমেজ নরেন্দ্র মোদীর তৈরী হয়েছে।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মেঘলা মানুষ এর ছবি

চলুক
হালে পপুলিস্টরা ভালো অবস্থানে আছে অনেক জায়গায়। এরকম একটা মনোভাব তৈরি করতে পারলে অনেক অন্যায্য কাজ করলেও, "তেমন কিছু না , ঠিকই তো আছে" বলে মনে করে একটা অংশ।

শুভেচ্ছা হাসি

হাসিব এর ছবি

পপুলিজম হালের বিষয় না। আগে লিবারেল ক্লাস পপুলিজম নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো। এখন পারছে না।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

বিস্তারিত বর্ণনাস‌হ চমৎকার লেখা। গুল্লি

AIB নামের যে ইউটিউব চ্যানেল আছে সেখানে দেখেছিলাম একটা ছোট ভিডিও,
"মিত্রোওঁ, মুঝে স্রিফ এক হাপ্তে সময় দিঝিয়ে"
"মিত্রোওঁ, মুঝে স্রিফ এক মাহিনে সময় দিঝিয়ে"
"মিত্রোওঁ, মুঝে স্রিফ ছে মাহিনে সময় দিঝিয়ে"
[বন্ধুগণ, আমাকে এক সপ্তাহ সময় দিন ]

ভিডিওটা শেষ হয়েছিল এভাবে: চা ওয়ালা সবসময় চা-ক্রেতাদের বক্তব্য সমর্থন করে আসছিল, তাই সবাই বেশ খুশি ছিল তার উপর। শেষেরবার যখন চা ওয়ালার কথা পছন্দ হয় নি, তখন ক্রেতার হুংকার, "চা বেচতেছিস, চা ব্যাচ। রাজনীতি নিয়ে তোর কি কাজ?"

দময়ন্তী এর ছবি

ধন্যবাদ।

ঐ ভিডিওটা পরে আরো একটু বেড়েছিল।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

এক লহমা এর ছবি

চমৎকার দিনলিপি, তার সাথে মূল্যবান সব মন্তব্য - জমাটি দলিল হল একখানা।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।